নিরুপমা রহমান
-
আধুনিকায়ন আর বিশ্বায়নের প্রাপ্তি, নাকি খেসারত : বাঙালির নদী আর গানের সহমরণ
আজন্ম ঢাকা শহরে বেড়ে ওঠা এই আমি শহুরে জনপদের বাইরে নদী-প্রকৃতিকে জানবার চেষ্টা করেছি বইয়ের পাতায়, গানের বাণী আর সুরে। কিন্তু মানসচক্ষুতে তার উপলব্ধি গড়ে ওঠার পাশাপাশি চর্মচক্ষুতে দেখবার সুযোগ না ঘটলে ‘দেখা’ দর্শন হয়ে ওঠে না। স্কুলে যাওয়ারও বহু আগে কবে যে প্রথম ‘পদ্মার ঢেউ রে’ গানটি কিংবদন্তি শিল্পী ফেরদৌসী রহমানের কণ্ঠে শুনেছিলাম মনে…
-
বাঙালির সংস্কৃতি ভাবনার শেকড়ের সন্ধানে
‘বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল’ এর থেকে জীবনের নির্যাস নিয়ে; এই ভূখণ্ডে গড়ে-ওঠা আবহমান সংস্কৃতির উদ্দীপনাকে প্রাণে ধারণ করে; ‘আ-মরি বাংলা ভাষা’য় মুখের বুলি ফুটিয়ে; ‘জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়’ যে জাতিকে দেখে ‘এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়’ – তা হলাম আমরা এই বাঙালিরা। বাঙালিকে বুঝতে হলে জানতে হবে তার…
-
হেঁসেল থেকে হৃদয় : বাঙালির স্বাদ আর সাধের মেলবন্ধন
প্রখ্যাত লেখক শিবরাম চক্রবর্তী তাঁর লেখায় নিজের জীবনের দুটি মাত্র লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন – ‘খাই আর শুই’। সাহস করে কিংবা লজ্জা ভেঙে মুখে না বললেও শিবরাম চক্রবর্তীর মতো ‘খাই আর শুই’ লক্ষ্য নিয়ে চলা বাঙালির সংখ্যা নেহায়েত কম হবে বলে বোধ করি না। আমরা খেতে বসে ‘ভাতঘুম’ দেওয়ার কল্পনায় উদ্বেলিত হই আবার ‘ভাতঘুম’ দিয়ে উঠে…
-
আমার নজরুল, আমার গানের বুলবুলি
জগৎজোড়া লোকের কাছে ‘ঝাঁকড়া চুলের বাবড়ি দোলানো’ বিদ্রোহী কবি তিনি, আবার সেই প্রবল দ্রোহের কবিই বাঙালির ‘দুখু মিয়া’। ‘চির-বিদ্রোহী বীর’ এই কবি নিজেই বলেছেন ‘চির-উন্নত শির’ তাঁর। এমন প্রবলতর জানান যখন দিয়ে যাচ্ছেন কবিতার ছত্রে ছত্রে, সেই কবিই আবার সেই একই কবিতায় বলছেন, ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণ-তূর্য’। আর এই নিরন্তর…
-
আমার অভিবাসী বাঙালিয়ানায় সুরের অনুষঙ্গ
প্রায় কুড়ি বছর আগে যখন চিরচেনা ঢাকা শহরের নিজস্ব গণ্ডি ছেড়ে হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে অজানা-অচেনা মেলবোর্ন শহরে এসেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর শিক্ষালাভের স্বপ্ন নিয়ে, তখন কি জানতাম একদিন এই শহর আমার নিজের শহর হবে, এই দেশ আমার বাসভূম হবে? আত্মীয়-বন্ধু তো দুরস্ত, একটি মানুষকেও চিনতাম না এই শহরে। এতো বছর পর যখন ফিরে তাকাই, তখন…
-
অভিবাসী বাঙালিজীবন : আত্তীকরণ-সংশ্লেষণ-অভিযোজন
বাংলায় ‘ঘরকুনো’ শব্দটাতে একধরনের নেতিবাচক ব্যঞ্জনা রয়েছে। আর তাতে বোধকরি অবাক হওয়ারও তেমন কিছু নেই। ‘পায়ের তলায় সর্ষে’ প্রবচনের মাঝে লুকিয়ে থাকা নিখাদ বাঙালিয়ানাতেই বাঙালির ‘থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে/ দেখবো এবার জগৎটাকে’ অন্তরমহল প্রকাশমান। বাঙালি বরাবরই ভ্রমণপিপাসু। তার দেশান্তরে গমন বা বিশ্বযাত্রার ইতিহাসও খুব নতুন নয়। সেই কোন প্রাচীনকালে মনসামঙ্গল কাব্যে চাঁদ সওদাগরের দেখা মেলে।…
-
‘ষোলো আনা’ বাঙালির গল্প
গপ্পোবাজ বাঙালির জীবনে আর যা কিছুর অভাব থাক, গল্পের অভাব নেই। আর গল্পের অভাব হবেই বা কেন – আমাদের স্বপ্নবিলাসী মন ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখে। তাই তো গপ্পোবাজ টেনিদা বা কাঠিমামা আমাদের এতো প্রিয়। কী নেই আমাদের গল্পে – দেশ, দশ, বিশ্ব থেকে মহাবিশ্ব। গল্পে আমরা দেশোদ্ধার করি, গল্পে আমরা রাজা-উজির পরাস্ত…