মনি হায়দার
-
পথিক বনাম রাক্ষসরাস্তা
খাড়া! খাড়া! কেডা? কেডায় আমারে খাড়াইতে কয়? থপথপ করে হাঁটে ইসমাইল শেখ। মোটা থলথলে শরীরে হাঁটলে পথের ওপর পায়ের পদাঘাতে এক ধরনের বেঢপ শব্দ তৈরি হয়। মাঝবয়েসি ইসমাইল শেখ হাঁটছে আর আপনমনে বকে যাচ্ছে, মাগি তোরে আমি দেইখা লমু। কত্তো বড় সাহস তোর? আমার ঘরবাড়ি রাইখা তুই বাপের বাড়ি চইলা যাস? তোর পায়ের নলি যুদি…
-
শূন্য মাঠের রেফারি
একটাও বাদ দেবে না, সব – সব আনবে কিন্তু – হাতে লম্বা একটা ফর্দ ধরিয়ে হুঁশিয়ার করে দেয় মর্জিনা বেগম। জানে স্বামী আবু কালাম বেভুলা ধরনের মানুষ। জীবনে ঠিকঠাক বাজার করতে পারলো না বা শিখলো না। অনেক সময়ে মর্জিনা বেগমের প্রশ্ন জাগে, এই বেভুলা মানুষটা আমার লগে মশকরা করে? নাইলে অফিস-আদালত, বন্ধু-বান্ধব, রাস্তাঘাটের এত ভজঘট…
-
বাসনার তেল ও সোনামুখী নদী
একটা বাসনার তেল আইনেন, মেলা দিন অইচে চুলে কোনো তেল দেই না, চুলগুলা জট বাইন্দা যায়, আঁচড়াইতে গেলে চুল ছিঁইড়া যায় – সামনের ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে আবদার জানায় জরিনা। পানমুখে পিক ফেলতে ফেলতে উঠোনে নামে জহির আলী, এক কাঁধে মাছ ধরার জাল আর এক কাঁধে বৈঠা। স্ত্রীর আবদারে ফিরে তাকায়। জরিনা তাকিয়ে আছে। জহির মুখে…
-
খুনের অধ্যবসায়
বালিশচাপা দিয়ে খুন করলে কেমন হয়? সিদ্ধান্তটা সঙ্গে সঙ্গে বাতিল করে দেন সামিনা মাহতাব, নাহ্ – খুব সহজে মরে যাবে লোকটা। যদি খুনই করি, একটু যদি কষ্ট না পায়, রক্ত বের না হয়, সেটা সত্যিকারের খুন হতে পারে না। সুতরাং মাহবুব মাহতাবকে খুন করতে হলে অন্য পথে এগোতে হবে, কিন্তু কী সেই পথ? ছয়-সাত মাস…
-
মালিবাগ মোড়ের গল্প
আপনি কে? আমার পিছনে পিছনে হাঁটছেন কেন? বিরক্তির সঙ্গে প্রশ্ন করে কেশবতী। আমি লক্ষ করেছি কয়েকদিন ধরে আপনি আমার পিছু নিচ্ছেন। কেন? চেনেন আমাকে? হঠাৎ একসঙ্গে এতো প্রশ্নের মুখোমুখি হবে, বুঝতে পারেনি সৈকত হালিম। বিব্রত মুখে একবার কেশবতীর চোখের দিকে আর একবার মাটির দিকে দৃষ্টি রাখে। গলি পার হয়ে চৌরাস্তার মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে ওরা। আকাশে…
-
অন্ধকার রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছেন বাকীবিল্লাহ
সবই ঠিক আছে এই ফ্ল্যাটের, শুধু একটা … মুখে মাংস আটকে যাওয়ায় বাক্যটা শেষ করতে পারেন না বাকীবিল্লাহ। অমরাবতী হোম লিমিটেডের মালিক আহমেদ মকবুল তাকিয়ে আছেন বাকীবিল্লার দিকে। তিনি কী সমস্যা খুঁজে পেয়েছেন, জানার জন্য মুখিয়ে আছেন। মনে মনে বিরক্তির এক শেষ। কিন্তু মুখে হালকা হাসি ঝুলিয়ে রাখছেন। ক্রেতা লক্ষ্মী। কিনতে এলে নিজের রুচি আর…
-
আহীর আলমের বাম পা
আর ইকটু ইকটু …শরীরের নিচের অংশ খাটের ওপর রেখে কোমরের ওপরের অংশ শূন্যে ভাসিয়ে পাশের টেবিলের ওপর থেকে পানির গ্লাসটা ধরার চেষ্টা করছেন আহীর আলম। বাঁ হাতে মাথার কাছের খাটের বাতা ধরে ঝুঁকে ডান হাত বাড়াচ্ছেন পানির গ্লাসটা ধরার জন্য। বারবার চেষ্টা করছেন; কিন্তু হাফ ইঞ্চির জন্য জলভরা জগটা পাচ্ছেন না নাগালে। চেষ্টা করে নাগালে…
-
উজানগাঁওয়ের অমরনাথ
স্যার? সকালে হাসপাতালের ফোন দেখেই বাবুলনাথ রায়ের বুকটা কেঁপে ওঠে। কোনো দুঃসংবাদ? অবশ্য রাতে বাবা অমরনাথ রায়কে ভালোই দেখে এসেছে। অফিসে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাবুলনাথ। প্যান্ট-শার্ট পরা শেষ। টাইটা বাঁধার জন্য স্ত্রী পাপিয়ার সামনে মাত্র দাঁড়িয়েছে, পকেটে রাখা মোবাইল বেজে ওঠে। পাপিয়াকে অপেক্ষা করতে বলে বাবুলনাথ মোবাইল হাতে নেয়। হাসপাতালের সিনিয়র সিস্টার অমৃতা আহমেদের ফোন…