কবিতা
-
ছাতা মাথায়
শাফিনূর শাফিন গলায় কাঁটা আটকালে তার অসিত্মত্ব টের পাওয়া যায় প্রতিবার ঢোঁক গেলার সময় কিংবা পায়ে কাঁটা বিঁধলে যে সূক্ষ্ম বিভেদ খচখচ করে জানায়, আমাদেরও ছিল নির্মল প্রসারিত হাসিমুখ তোমার গোলাপ পরিত্যক্ত দিনে রেফ-হরফের মতো বৃষ্টিতে ভিজছে তুমি ও তোমার বর্তমান প্রেমিকা…
-
বউবাজার
মুয়িন পারভেজ একটা বউবাজার আছে জানি শহরে কোথাও বউবাজারের কথা বলেছিল আহমদ ছফা আমাদের ছফা ভাই। চাকরিতে নেই তার খেদ শুধু বাড়ি যেতে হবে – এই ছিল দাবি একদফা সারাদিন ছোটাছুটি; ‘মাথাটা লাটিম হয়ে আছে’, বলে, ‘টেনশনে আছি’, তাই ‘টেনশন ছফা’ নাম চালু হয়ে গেছে তার। বাড়ি যায় বৃহস্পতিবার ফিরে এসে নানা গল্পে খুঁটে খায়…
-
বিরহ
জয়িতা শিল্পী বিরহের অশ্রম্ন ঝরে অবিরত শূন্যতায় হাহাকার বুকে চাপা কষ্ট। তোমার প্রস্থানে নিঃস্ব হতে থাকে প্রাণ ট্রেনের ঝিক ঝিক ঝিক ঝিক আওয়াজ… রেল-পুলিশ সবুজ পতাকা নাড়িয়ে বাঁশিতে ফুঁ দেয় সেইসঙ্গে দুলতে দুলতে বিদায় সমান্তরাল লাইন ধরে, নিয়ে যায় মুঠো মুঠো প্রেম, গাঢ় চুম্বন! ভালোবাসার হাতছানি তাই আবারো ফিরে আসে বিরহের অবসানে হৃদয়ের আলিঙ্গনে।…
-
কৈশোরক
সুদীপ্ত একটা কিছু লিখবো ভাবি, আবার ভাবি লিখবো না… কার কাছে কার হাঁড়ির খবর, কার সাথে কার মুখচেনা। মাথার ওপর ফ্যান ঘুরে যায়, মুখের শোভা হিন্দিচুল… ফেব্রম্নয়ারি বছরজুড়েই, প্রথম গোলাপ… প্রথম ভুল… বর্ষা এবার চিরস্থায়ী, পৌষ কবে আর দেয় আভাস? সোজা রাস্তায় অনেক চলা, শর্টকাটে তাই সর্বনাশ… খাতার পাতায় চোখের ছবি,…
-
অভয়াশ্রম
মেহেদী ইকবাল অচেনা বিবর্ত থেকে বিষাদের অমত্মঃহীন স্রোত অসহায় ভেসে থাকা বিপন্ন প্রজাতির ঝাঁক! কুমিরের কথা থাক, ভিন্ন সে বৈরী প্রজাতি। বরং মৎস্যের কথা বলি, আছে মৎস্যভুক অজস্র বোয়াল! এসব থাকবে না কিছু, স্বসিত্মর নেওয়া যাবে দম এই স্বপ্নে বেঁচে থাকা, হয়তোবা যাবে দেখা কাঙিক্ষত অভয়াশ্রম!
-
দুধের বিড়াল
রাহমান ওয়াহিদ কে যে হঠাৎ ভুতুড়ে পায়ে নীল দিঘিতে হাঁটতে থাকে ছলকে ওঠে জলের কাঁপন রং-বদলের শ্যামল বাঁকে। পাখোয়াজের ভিন্ আওয়াজে কে যে কখন কণ্ঠ তোলে শোবার বালিশ হারিয়ে হঠাৎ সুর বেহাগের নেশায় দোলে। কে তাহলে দুধের বিড়াল মন ভুলিয়ে মাখন তোলে?
-
একজন মৃত প্রেমিক বলছে
তমিজ উদ্দীন লোদী ভালো বাসতে বাসতে মরে যাবার কথা থাকলেও তুমি মরে যাওনি বরং আমি চলে যাবার পর তুমি আবারো প্রেমে জড়িয়েছো তুমি আবারো বলছো ভালো বাসতে বাসতে মরে যাবে! এখানে শূন্যতা যদিও, তবে কোনো হাহাকার নেই। এখানে অবয়বহীনতা, তবে কোনো দুর্বোধ্যতা নেই। এখানে ধূসর যদিও, তবে কোনো অবিমৃষ্যকারিতা নেই। প্রবহমান সরল…
-
ঘর
আসমা বীথি হররোজ ঘুমঘোরে হাবিজাবি কত কী যে দেখি কেপটাউনের উল্লুক ডিসি হিলের পার্কে ঘোরে বারান্দার টবে আধফোটা লিলি, যদি খেয়ে ফেলে ভয়ে ভয়ে কেটে যায় পাখি ঘুম, চোখ খুলে রাখি অরুন্ধতি বলেছিল, বেঁচে দেখি শেষ একবার সেই এক সুদূর শহরে তার সংশয়-সংসার একদিন তারা বোনে যারা খোলা আকাশের ঘরে নিশ্চয়তার ছাদ পেলে যে কেন…
-
চেয়ারপুরাণ
সাইদুল ইসলাম চেয়ারের হাতলে বসা ওগো নীল মাছি কার চোখ থেকে পালিয়ে এলে তুমি বানে আটকে গেছে চাকা; ওড়ার সাধ সে-ও তো ছিঁড়েছে শিশুর দুরন্ত আঙুল পথে-প্রান্তরে মুগ্ধ দৃশ্যের ভেতর জুড়ে দিয়েছ কেবল নিজের কথা বাতাসে ভাসছে আজ বিলাপের সুরে প্রাচীন চেয়ার বারান্দার রোদে হয়ে গেছে কালচে নড়বড়ে ওগো নীল মাছি…
-
স্বপ্নময়
শুভাশিস সিনহা স্বপ্নময় বলে যারা ডাকে, তাদের কখনো আমি দেখি নাই তারা প্রত্যেকেই থোকা থোকা অন্ধকার, ভারি ভারি নিশ্বাসের কালে পাশে থাকে, কেবলই গোঙায়, নখে বা আঁচড় কাটে, আমি সারা অঙ্গ ক্ষত নিয়ে জ্বলি দূর মিথ্যাকাশ, নীল প্রহেলিকা আমারই রক্তের স্বাদ ঠোঁটে নিয়ে পরীরা মাটিতে নামে, ডাকে হাত বাড়িয়ে বনে, তাদের জিভের নিচে শুয়ে…
-
আশ্চর্য তোমার মুখমণ্ডল
খালেদ হোসাইন তুমি বললে, আপনার মগজ বরফ দিয়ে গড়া। আমি বললাম, অসম্ভব নয়। মাঝেমধ্যে সেই শৈত্য আমাকে অসাড় করে রাখে। অসারও। কিন্তু আপনার হৃদয়টা একটা জীবন্ত আগ্নেয়গিরি। তুমি বললে। আমি বললাম, অসম্ভব নয়। মাঝেমধ্যে অনুভব করি, আমি ভস্ম হয়ে আছি। আলতো বাতাসে উড়ে যাচ্ছি দূরে, দিগ্বিদিক। এটা আপনার বাড়াবাড়ি। তুমি বললে। আমি…
-
সূচিশিল্প
যশোধরা রায়চৌধুরী উদাসীবালা দাসী। স্বামীকে ভালোবেসে করেন সূচিশিল্প, স্বর্গপ্রত্যাশী। ‘সতীর সুখ সই-লো কেমন করে কই-লো।’ ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে।’ শুনে, আপিস থেকে ফেরার পথে ধর্মতলা মোড়ে স্বামী থামেন, কিনে আনেন ব্রাউন পেপার মুড়ে বিলিতি দোকান থেকে সোনামুখী সূচ তিনটি, গুনে… পাতলা জিরিজিরি নরম টেঁকসই মলমল। এবং সায়েবদোকান থেকে ডিজাইন বইগুলি। পাতলা তেলশোষা…