ছোট গল্প

  • থাডার

    থাডার

    ‘অ’পুত, অ’পুত এই ঠাডারের মইধ্যে ঘরত্তুন বাইর ন হইছ অ’পুত। আঁরত বাইশ ধরা লাইগদুনু। টেঁয়া-পইশে লাইগদুনু অ’পুত।’ মায়ের এই আকুতি শোনার সময় নেই আব্বাসের। সে পলিথিনের ব্যাগে সিগারেটের প্যাকেট, লাইটার আর টাকা ভরে কোমরে গুঁজতে ব্যস্ত। বাইরে মুষলধারায় বৃষ্টি পড়ছে। সঙ্গে বিজলি আর থেকে থেকে বজ্রপাতের বুক কাঁপানো আওয়াজ।  বৈশাখের দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেছে।…

  • গল্পপোষ্য

    গল্পপোষ্য

    আমি বেঁচে আছি এ নিয়ে অনেকে আপত্তি করে; কারা কারা করে তা নিয়ে কোনো তালিকা দেওয়ার ইচ্ছে আমার নেই। এবং তাদের কথায় আমার খুব রাগও হয় না। এদের মধ্যে কারো কারো আপত্তি বেশ যুক্তিপূর্ণ তবে মৃত্যু নিয়ে আলাদা করে আমি কম ভেবেছি। ভেবেছি, যেদিন খেলা সাঙ্গ হবে সেদিন তো আমার কিস্সু করার থাকবে না; কাজেই…

  • বিলাপ

    বিলাপ

    বড় রাস্তা থেকে নেমে ছোট রাস্তার দিকে পা বাড়ালো শিরিন। সে-মুহূর্তে মনে পড়ল তার মায়ের কথা। মা শরিফুন নাহার অফিসে যাওয়ার সময় চোখেমুখে আশঙ্কা নিয়ে বলেছেন, শিরিন তোর কি একটুও ভয়-ডর নেই? কাল তোকে বারবার বলেছি, কটা দিন ছুটি নে। বাসায় থাক। আর বের হবি না। এতে যদি তোর খারাপ লাগে তাহলে পাগলা পিরে চলে…

  • বিড়ালবৃত্তান্ত

    বিড়ালবৃত্তান্ত

    বিড়ালের নরম লোমে ঢাকা বিড়ালময় এই বাসায় আজ আবার নতুন করে এক বিপত্তি দেখা দিলো। বাসায় তুলকালাম কাণ্ড। একটা দুর্যোগ যেন। মেডিক্যাল কলেজে পড়ুয়া বাসার একমাত্র মেয়ে কাঁদছে; শিশুর মতো সে-কান্না। কাঁদছেন তার মা। তুলনায় বাসার ছেলেটি বিকারহীন; ছেলে মির্মির রহমানের মধ্যে একরকমের নীরবতা। এই ঘটনায় কিছুই যেন বলার নেই মির্মিরের; অনেকটা নির্ভার – নিজের…

  • বৃষ্টির ঘ্রাণ

    বৃষ্টির ঘ্রাণ

    ‘ওয়েটার’, আমি জোরে ডাক দিই। রেস্টুরেন্টে অন্য কেউ থাকলে নিশ্চয়ই মুখ ঘুরিয়ে এদিকে তাকাত। প্যান্টের এক পায়ের সঙ্গে অন্য পা ঘষা খাওয়ার শব্দ পেলাম। কেউ দ্রুত আসছে। গায়ে সস্তা পারফিউম।                 ‘ইয়েস স্যার, কী করতে পারি আপনার জন্য?’                 ‘এটা কী ওমলেট বানিয়েছে? পাচক জানে না, আমি দেশি ধনেপাতা খাই?’                 ‘ধনেপাতা দিয়েছে তো স্যার,…

  • পাহাড়ের ডাক

    পাহাড়ের ডাক

    রাত আড়াইটা। প্রধান সড়ক দিয়ে একটা মালবাহী ট্রাক আসে আর চলে যায়। এরপর দীর্ঘ নীরবতা। বসন্তের ফুরফুরে জ্যোৎস্নায় ফিনফিনে বাতাস বয়ে যায়। দুটো বিড়াল ঝগড়ায় মেতে ওঠে। ফের সব আগের মতো, নীরব। এমন নীরব ঘুমহীন রাত ইস্পাতের ফলার মতো বুকে বিঁধে অস্বস্তি দিতে থাকে। বালিশ উলটাসিধা করে, এপাশ-ওপাশ করেও আরামপদ একটা অবস্থান পাই না। ঘুম…

  • বোবা টি

    বোবা টি

    হাজি মোহাম্মাদ ত্বকীউল্লাহ তরফদার হাসি হাসি মুখ করে বসে আছেন। তার পাশে সাদা কাচের মগে কফি রাখা। ১৯ ডিগ্রি এসির বাতাসে তা অনেক আগেই ঠান্ডা হয়ে গেছে। সেই অখাদ্য ঠান্ডা কফিই তিনি স্মিতহাস্যে পান করছেন।  ‘তো স্যার, যে ডেটা আপনাকে দেখালাম, তাতে এটা পরিষ্কার যে, গত ছয় বছরের মধ্যে শিরীষপুর উপজেলায় হেন কোনো নির্বাচন হয়…

  • মাটির পুতুল

    মাটির পুতুল

    এক শেষ পর্যন্ত গাঁয়ের মাতব্বর পাঁচজনের বৈঠকেও এই সাব্যস্ত হল বিয়েটা তা’হলে করেই ফেলুক আমিন, যা কেলেঙ্কারী হবার হয়েছে। সর্দার গহর আলী মেম্বারও মাথা নেড়ে সায় দিল ওদের মতামতে – না কইরাই তা উপায়ডা কি কও। ছিঃ ছিঃ আমিন্যাডা যে এই রকম কাণ্ড করব বুঝছিলাম না। আকবর আলী ডাবাটা মুখ থেকে নামিয়ে বল্লো, কিন্তুক তোমরা…

  • কাশফুল এবং একটি নদীর গল্প

    কাশফুল এবং একটি নদীর গল্প

    এক পরিণতি ওসমান পড়ার পর একগাল হেসে বললো, ফিল গুড স্টোরি। কিন্তু খাবে না। কে খাবে না? আমি বুঝতে না পেরে তার দিকে তাকাই। ওসমান চেয়ারের পিছনে হেলান দিয়ে বললো, কে আবার? যাদের খাবার। পাঠক। কেন খাবে না? আমি ভ্রু কুঁচকে তাকাই তার দিকে। ওসমান আগের মতোই  মুচকি  হাসতে হাসতে বললো, ফিল গুড, বাট ফ্যান্টাসি।…

  • সেগুনবাগিচার কাঁচাবাজার ও ভাণ্ডারী

    সেগুনবাগিচার কাঁচাবাজার ও ভাণ্ডারী

    পশ্চিম গগনে সূর্য। মা’কে সঙ্গে নিয়ে নিজের আবাস বিক্রি করে সেগুনবাগিচায় ফ্ল্যাটে উঠতে হলো ফজলকে। ফার্নিচার খুব সামান্য। ভাণ্ডার বই-পুস্তকের। একটা কামরায় সব বই ঢেলে রাখল। পরে র‌্যাক তৈরি করে সাজাবে। রান্নাঘরে কোনো তাক নেই। ফলে মিস্ত্রিকে ডাক দিতে হবে অচিরে। রাস্তার পাশে পশ্চিমদিকের কামরা, তার শয়নকক্ষ, অথচ সকালটা কি নীরব। পাখ-পাখালির ডাক নেই। নেই…

  • একটি সোনার দুল

    একটি সোনার দুল

    এরকম হবার কথা ছিল না, কিন্তু কখন যে মানুষের কী হবে, তা  কি কেউ বলতে পারে? নইলে আজ যখন হানুফা বেগম বাজারে যাচ্ছিল তার ছোট ছেলেটির হাত ধরে, তখনো সে ভাবেনি তার কপালে এই নতিজা লেখা আছে। হানুফা বেগমের বাজার খুব সংক্ষিপ্ত ছিল। শাশুড়ির বায়না অনুযায়ী কিছু চুঁইঝাল আর ছোট মাছ। চুঁইঝাল এই এলাকায় বেশ…

  • কাপুরুষ 

    কাপুরুষ 

    চন্দন ট্রেন থেকে নেমেছে ভোর পাঁচটায়। শীতের ভোর পাঁচটা মানে ঘরের বিছানায় গভীর রাত। স্টেশনটাকে দেখে তাই মনে হচ্ছে। যাত্রী নামিয়ে ট্রেন চলে যাওয়া মাত্র স্টেশনে নেমে এলো নীরবতা। এতো কুয়াশা নেমেছে যে, স্টেশনের লাইটগুলি যেন ঘোলাটে চোখে ভূতের মতো দাঁড়িয়ে আছে। অস্বচ্ছ ঘোলাটে একটা পরিত্যক্ত ভৌতিক স্টেশনের মতো লাগছে। এতো শীত করছে যে কান-মাথা…