ছোট গল্প
-
অথৈ পরমানন্দ
কে এই অথৈ পরমানন্দ? তাঁকে নাকি দেখা যায় না। ছোঁয়া যায় না। তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায় না। আসলে তিনি কে? তবে কি তাঁর চোখ আকাশের মতো নীল? তাঁর কেশ কি ঝুরিবটের মতো কাঁধ পর্যন্ত নামানো? তাঁর গায়ের রং কি সমুদ্রের মতো গাঢ় নীল? পাহাড়ের মতো তিনি কি ঋজু ও বলিষ্ঠ? তাঁর কণ্ঠস্বর কি সুললিত,…
-
গল্পহীনতার রাতগুলি
প্রায়ই এমন ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন রাত্রিগুলি হাঁটতে থাকে। বড় বড় পাইপ … সড়ক থেকে অদূরে তার পাশেই ছাতাহীন জীর্ণ ঘর, এঁদো আঁশটে নর্দমার পাশেই শতছিন্ন কাপড় খাবলা খাওয়া মেঝেতে, তার ওপরই চিৎপাত পড়ে আছে গুগলু, পাশে কুকুরটা রাজকীয় হাই তুলছে, তার পাশেই একটা বাক্স, এর ভেতর থেকে সাপ এসে গুগলু যেনবা কোনো দেবতা তার কণ্ঠ পেঁচিয়ে মাঝেমধ্যে…
-
পথিক বনাম রাক্ষসরাস্তা
খাড়া! খাড়া! কেডা? কেডায় আমারে খাড়াইতে কয়? থপথপ করে হাঁটে ইসমাইল শেখ। মোটা থলথলে শরীরে হাঁটলে পথের ওপর পায়ের পদাঘাতে এক ধরনের বেঢপ শব্দ তৈরি হয়। মাঝবয়েসি ইসমাইল শেখ হাঁটছে আর আপনমনে বকে যাচ্ছে, মাগি তোরে আমি দেইখা লমু। কত্তো বড় সাহস তোর? আমার ঘরবাড়ি রাইখা তুই বাপের বাড়ি চইলা যাস? তোর পায়ের নলি যুদি…
-
অনন্ত বহে নিরবধি
ভাঙা পুকুর ঘাটটায় শ্যাওলা পড়ে গেছে। অর্ধেক তো নেবে গিয়েছিল গেল বর্ষাতেই। সমস্ত ঘরদোর ভেঙে আসছে। সামনের বর্ষাতে যা আছে তাও বোধহয় মিশে যাবে পুকুরপাড়ের সঙ্গে। সাত সকালে কিংবা মধ্য দুপুরে যখন-তখন ইটগুলো খসে খসে পড়ছে। কখন যে কার মাথায় গিয়ে লাগে, কখন কার করোটির ধার ভেঙে খুলির ভেতরে অনুপ্রবেশ করে – কে জানে! এক্ষুনি…
-
ধ্যানমগ্নতা
একা ঘরে কিংবা বাইরের নিরিবিলি পরিবেশে কে যেন প্রায়ই আমার সঙ্গে চুপিচুপি কথা বলে। বেশ মায়াজাগা কণ্ঠ, যদিও পুরোটাই বিভ্রম। যেমন আজো চুপ করে ঘরে বসে আছি। জানালা দিয়ে একফালি আলোয় অজস্র ধূলিকণা উড়ছে। অকস্মাৎ টের পাই কেমন খসখস শব্দ। বলি, ‘কে?’ – আমি। কী করছো? – ভাবছি। – কী? – জানি না, তবে ভাবনা…
-
অন্ধকার গভীরতর
মোটরবাইকে ওঠার আগেই কী ভেবে থমকে দাঁড়ালো শাহীন। মনে হলো, পেছন থেকে কেউ যেন ডাক দিলো। কোনো সিরিয়াস কাজে যাওয়ার আগে এভাবে পেছন দিয়ে কেউ ডাক দিক, সেটা একেবারেই পছন্দ নয় ওর। মেজাজটা একেবারেই খিঁচড়ে গেল। মাথায় হেলমেটটা গলানোর আগে ধীরে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে পেছন দিকে তাকালো। পরিচিত কাউকে তো দেখা যাচ্ছে না। তাহলে কি…
-
লন্ডনি মা
হোয়াইট চ্যাপেল মেট্রো স্টেশন থেকে দুটো রাস্তা পেরিয়েই জেসমিনদের অফিস। ব্রিটিশ স্বাস্থ্য দফতরের অধীনে এক বড় হাসপাতালের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওদের অফিসে ওরা যে ছয়জন অ-ডাক্তার কর্মচারী রয়েছে তাদের অফিসিয়াল নাম হচ্ছে ‘লিংক অফিসার’। ওদের কাজ হচ্ছে এশীয়, বিশেষ করে এই উপমহাদেশ, মানে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার কিছুটা পিছিয়ে পড়া যেসব পরিবার ইস্ট লন্ডনে রয়েছে,…
-
শেল্টার
হারিকেনের সলতে জোর করে জ্বালানো হচ্ছিল, কাচের অর্ধেকের বেশি কালিতে ভরা, যে-কোনো সময় তেলের অভাবে দপ করে নিভে যাবে। রাহেলার বুকে জমা ক্ষোভটা সলতের মতো কালিমাখা কাচের ভেতর তোলপাড় তুলে ওষ্ঠাগত হতে চায়। প্রতিবেশীর বাড়িতে আসতে ঝোপঝাড়ের সরুপথ, অন্যরাতে জোনাকি জ্বলে, আজ তারা কোথায় যেন লুকিয়ে আছে! পথে হোঁচট খেয়ে ভারী দেহ কোনোরকমে সামলেছে। তাই…
-
থাডার
‘অ’পুত, অ’পুত এই ঠাডারের মইধ্যে ঘরত্তুন বাইর ন হইছ অ’পুত। আঁরত বাইশ ধরা লাইগদুনু। টেঁয়া-পইশে লাইগদুনু অ’পুত।’ মায়ের এই আকুতি শোনার সময় নেই আব্বাসের। সে পলিথিনের ব্যাগে সিগারেটের প্যাকেট, লাইটার আর টাকা ভরে কোমরে গুঁজতে ব্যস্ত। বাইরে মুষলধারায় বৃষ্টি পড়ছে। সঙ্গে বিজলি আর থেকে থেকে বজ্রপাতের বুক কাঁপানো আওয়াজ। বৈশাখের দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেছে।…
-
গল্পপোষ্য
আমি বেঁচে আছি এ নিয়ে অনেকে আপত্তি করে; কারা কারা করে তা নিয়ে কোনো তালিকা দেওয়ার ইচ্ছে আমার নেই। এবং তাদের কথায় আমার খুব রাগও হয় না। এদের মধ্যে কারো কারো আপত্তি বেশ যুক্তিপূর্ণ তবে মৃত্যু নিয়ে আলাদা করে আমি কম ভেবেছি। ভেবেছি, যেদিন খেলা সাঙ্গ হবে সেদিন তো আমার কিস্সু করার থাকবে না; কাজেই…
-
বিলাপ
বড় রাস্তা থেকে নেমে ছোট রাস্তার দিকে পা বাড়ালো শিরিন। সে-মুহূর্তে মনে পড়ল তার মায়ের কথা। মা শরিফুন নাহার অফিসে যাওয়ার সময় চোখেমুখে আশঙ্কা নিয়ে বলেছেন, শিরিন তোর কি একটুও ভয়-ডর নেই? কাল তোকে বারবার বলেছি, কটা দিন ছুটি নে। বাসায় থাক। আর বের হবি না। এতে যদি তোর খারাপ লাগে তাহলে পাগলা পিরে চলে…
-
বিড়ালবৃত্তান্ত
বিড়ালের নরম লোমে ঢাকা বিড়ালময় এই বাসায় আজ আবার নতুন করে এক বিপত্তি দেখা দিলো। বাসায় তুলকালাম কাণ্ড। একটা দুর্যোগ যেন। মেডিক্যাল কলেজে পড়ুয়া বাসার একমাত্র মেয়ে কাঁদছে; শিশুর মতো সে-কান্না। কাঁদছেন তার মা। তুলনায় বাসার ছেলেটি বিকারহীন; ছেলে মির্মির রহমানের মধ্যে একরকমের নীরবতা। এই ঘটনায় কিছুই যেন বলার নেই মির্মিরের; অনেকটা নির্ভার – নিজের…