ছোট গল্প

  • রোহিঙ্গা জাতক

    রোহিঙ্গা জাতক

    কোনো এক বর্ষণমুখর সকাল। শ্রাবন্তী নগরে ঋষি আনন্দের আশ্রমে তরুণ শ্রমণদের ভিড় ঠেলে একজন আগন্তুক সামনে এগিয়ে যেতে চাইল। তার পিঠে দড়ি দিয়ে বাঁধা একটা সোলার প্যানেল, এক হাতে আরএফএল কোম্পানির একটা বালতি, তার ভেতরে কাপড়ে জড়ানো একটা রাজহাঁস। হাঁসটা ভাঙা গলায় গাঁক গাঁক করে উপস্থিতি জানান দিলে আনন্দ ধ্যান ভেঙে তাকান। চোখের ইশারায় শ্রমণদের…

  • রঘুদা

    রঘুদা

    আমার নাম আরএনসি। লোকে আমাকে আরএনসিবাবু বলে ডাকে। – আরএনসি মানে? – রঘুনাথ চৌধুরী। পদবি জমিদারের, আসলে স্ট্রিট বেগার। একসময়ের জমিদারের উত্তরাধিকারীরা স্ট্রিট বেগার হবেন না? – কেন? স্ট্রিট বেগার হবেন কেন? – ওঁরা তো লুটেরা ছিলেন। পাপ ছিল অনেক। পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবে না পরের জেনারেশন? – সব জমিদার তো লোভী-পাপী ছিলেন না! – অধিকাংশই…

  • কাজলা দিদি

    কাজলা দিদি

    স্বপন কথাটা মাঝেমধ্যেই বলে। বর্ষা থেকে হেমন্ত পর্যন্ত বলে না সাধারণত। আমাদের তো কখনো মনে পড়ে না। ওর পড়ে।  বেশি পড়ে শুকনোর সময়। শীতকালে খালপাড়ের দিকে মুখ-করা বাড়ির পুব-দক্ষিণ কোনার ঘরখানার ভেতরে কি বারান্দায় বসে থাকলে স্বপনের মনে পড়ে। তখন একটানা বলে চলে সে। চোখ থাকে খালপাড়ের দিকে। তবে সবচেয়ে বেশি বলে দুপুরের খাওয়ার পরে…

  • সেইসব পলায়নের গল্প 

    সেইসব পলায়নের গল্প 

    দশ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে পান আপনি? – এরকম একটা প্রশ্ন করা হয়েছিল আমাকে, ইন্টারভিউ বোর্ডে, অনেক বছর আগে। আমি তখন তরুণ ছিলাম, প্রথমবারের মতো চাকরির চেষ্টা করতে গিয়ে মুখোমুখি হয়েছিলাম সেই ইন্টারভিউ বোর্ডের। সেখানে যারা ছিলেন সবাই মিলে যেন পণ করেছিলেন – কোনো অবস্থাতেই হাসবেন না। গম্ভীর-ভীতিকর সেই পরিবেশে প্রশ্নটি ছিল আমার কাছে…

  • মৃত্যুযাত্রা

    মৃত্যুযাত্রা

    চাঁদটাকে মাঠের ঠিক মাঝখানে এভাবে গা এলিয়ে শুয়ে থাকতে দেখে সে এতটাই ধাক্কা খায় যে, তার তেমন অবাক হওয়ার কথাও আর মনে থাকে না। এতক্ষণ সে আকাশে চাঁদের অবস্থান দেখে দেখে দিক ঠিক করে পথ চলছিল। এই তো মাত্র কয়েক মুহূর্ত আগে সিগারেট ধরানোর জন্য চাঁদ আর রাস্তা থেকে চোখ সরিয়ে দেশলাইয়ের জ্বলন্ত কাঠিটার দিকে…

  • পরগাছা, অথবা অগ্নিস্রোতের ঢেউ

    পরগাছা, অথবা অগ্নিস্রোতের ঢেউ

    দুপাশের ঝাঁক ঝাঁক প্রকৃতি উদ্ভ্রান্ত হয়ে পেছনদিকে পালাচ্ছে। গাড়িটা ছুটে চলছে। মুরাদের এই এক স্বভাব, নিজের মরদাঙ্গি দেখাতে প্রায়ই বেপরোয়া হয়ে পড়ে। এই স্বভাব এমনই তার রক্তে-মাংসে মিশে থাকে, ওমরের মনে হয়, অন্ধকারে একা থাকলেও সে যে-কোনোভাবে বেপরোয়া হয়ে কিছু একটা করে দেয়ালের সঙ্গে কষে ধাক্কা খায়। নইলে প্রায়ই তার মাথা ফাটা, হাত ফাটা থাকে…

  • বৈকালিক ভ্রমণ

    বৈকালিক ভ্রমণ

    ছেলে যখন গাঁয়ে পৌঁছায়, তখন বৈকালিক ভ্রমণের সময় একেবারে ফুরিয়ে যায়নি। সবে পশ্চিমাকাশে থোক থোক লালিমা লেগেছে, গরু, বকরি রওনা দিয়েছে যার যার গোয়ালের উদ্দেশে। ছেলের মরহুম বাবা বৈকালিক ভ্রমণে বেরোতেন বাদ আসর। গোল টুপি ফুঁ দিয়ে বলের মতো ফুলিয়ে মাথায় চেপে চেপে বসাতেন। তারপর দরজার পাল্লা থেকে টেনে নিতেন বেতের হাতছড়ি। ব্যাগ হাতে ঘরে…

  • স্বপ্ন দেখবার আগে কী ঘটেছিল

    স্বপ্ন দেখবার আগে কী ঘটেছিল

    আকাশের চাঁদটা অর্ধেক কাপড় কাচা সাবানের মতো। কালো পটে সাদা সাবানটা ভাসছে। রাত কত হয়েছে? বেশি তো হবার কথা নয়। শ্যামলী সিনেমা হল থেকে লোকজন বেরোচ্ছে ছবি দেখে। রাস্তার পশ্চিম পাশে ভিড়। আমি দাঁড়িয়ে আছি পুবপাশে। এখানে ভিড় নাই। তবে মোড়ের দোকানটার পাশেই দুটো রাস্তা, ইংরেজি ভি-র মতো দুটি দিকে গেছে বেঁকে। একটা রাস্তা গেছে…

  • একিলিস হিল

    একিলিস হিল

    রাজিক একিলিসের নাম প্রথম শোনে তার বন্ধু হাসনাইন কাদিরের মুখে। হাসনাইন কাদিরের কাছে সে গিয়েছিল টাকা ধার করতে। টাকা ধার পেল না বটে, কারণ হাসনাইনের নিজেরই নাকি নেই। তবে রাজিক একিলিসের কথা শুনল। হাসনাইন কাদির লেখালেখি করে। তাকে দেশের লোকজন চেনে। সে অনেক পুরস্কারও পেয়েছে। প্রায়ই তাকে বিভিন্ন টেলিভিশনেও দেখা যায়, তার বইয়ের সংখ্যাও অনেক।…

  • জীবনের ঘরে মৃত্যু

    জীবনের ঘরে মৃত্যু

    ভোরের একপশলা বৃষ্টির পানি তখনো শুকায়নি, দীর্ণ হেয় জনপদে পুরো জেগে ওঠেনি কোলাহল, পাড়াগাঁর হাটের পসরা টানা ভ্যানগাড়িগুলো সারিসারি দাঁড়ানো, ছাপরা দোকান থেকে বাইরে ছুড়ে ফেলা পচা টক-মিষ্টির টুকরো ধরতে কাকের ঠোঁট-নখের বেজায় পাখসাট, ঠিক তখন বাতাসে আত্মনাশের খারাপ খবরটি ঘরের দরজার ফাঁকফোকর দিয়ে ঢুকে জনে জনে চাউর হয় – কাল রাতে অল্পবয়সী স্বামী-স্ত্রী গলায়…

  • হিসাব

    হিসাব

    দুবাই থেকে ছ-সাত ঘণ্টা উড়ে ফ্রাঙ্কফুর্ট নেমে ট্যাক্সিতে হোটেলে যেতে যেতে ড. তানজিম হাসানের মনে হলো, এরকম বিষণ্ণ শহর সে কখনো দেখেনি। ফেব্রুয়ারি মাস শেষের পথে, কিন্তু শীত প্রচণ্ড । সকাল থেকে তুষার ঝরেছে। এখন বেলা এগারোটা। রাস্তায় এক ফোঁটা রোদ নেই, আলো ফুটেছে, তবে আঁধারের শর্ত মেনে। দুদিকের দালানগুল মাথায় তুষার মেখে ভূতের মতো…

  • চিত্রাঙ্গদা নয় কেউ

    চিত্রাঙ্গদা নয় কেউ

    এই যে দুটি ছোট্ট বলের মতো মাংসপি- দেখছো, এগুলোই তোমার ওভারি। তোমার শরীরে মেয়েদের হরমোন এস্ট্রোজেন আর প্রজেস্টারোন বানাতো এগুলো। অর্থাৎ এই ছোট্ট বল দুটিই প্রধানত তোমাকে এতো বছর ধরে মেয়ে করে রেখেছিল। সন্তান তৈরির জন্যে মেয়েদের যে ডিম্বাণুর দরকার হয়, সেটাও আসে এই ওভারি থেকেই।’ ডাক্তার এই কঠিন কঠিন শব্দগুলো যতটা সম্ভব ধীরে ধীরে…