ছোট গল্প

  • একটি অন্যরকম প্রতিশোধ

    সাইফুর রহমান প্রস্তাবটি এলো হঠাৎ করেই। ওটার জন্য বোধ করি আমি মোটেও প্রস্ত্তত ছিলাম না। প্রফেসর ফিলিপ থমাসের ই-মেইলটি পেয়ে আমি সত্যি বেশ খানিকটা অবাক হলাম বইকি? কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে এতগুলো ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট থাকতে উনি কেন আমাকে বেছে নিতে গেলেন? কেনই-বা আমাকে ওনার এতটা আত্মপ্রত্যয়ী ও যোগ্য বলে মনে হলো? আমি স্বভাবে কিছুটা বর্ণচোরা…

  • কাঁটাতার

    শচীন দাশ হাতের মুঠোয় আগুনটা রেখে বিড়ি একটা ধরাবার চেষ্টা করেছিল নাজিবুল। এই সময়েই কে ওকে ডাকল। আড়চোখে তাকাতেই নাজিবুলের চোখে পড়ল রহিমুদ্দি। নাজিবুল বিরক্ত হয়। আজ হাওয়া মারছে খুব। তার ওপর বর্ষার বিড়ি। ভেতরের মাল-মশলায় কখন যে হাওয়া ঢুকে গিয়েছে ধরালেও তাই ধরে না। তিন-চারটে কাঠি নষ্ট হওয়ার পর আবারও যখন ধরাতে যাবে ওই…

  • অক্টোবরের সমুদ্রে মাছেরা, দিহান ও আমি

    হাসান অরিন্দম আমরা যেখানে রাতে অবস্থান করছিলাম – সেই চারতলা ভবনটা, সমুদ্রসৈকত সেখান থেকে বড়জোর ১২০ মিটার দূরে। আমাদের বেশিরভাগেরই এই প্রথম সমুদ্র-অবগাহন। অক্টোবর মাসের জ্যোৎস্না ছিল সত্যিই চন্দ্রাহত হওয়ার মতো। আমরা রাত ৯টা পর্যন্ত নেচে-গেয়ে সৈকতেই কাটিয়ে দিলাম। আমাদের বৃত্তাকার আড্ডার মাঝে কাঠের আগুন জ্বালিয়ে নিয়েছিলাম। সমুদ্রের উন্মাতাল ঢেউ, আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ, আর আমাদের…

  • রুপোর চামচ

    তিলোত্তমা মজুমদার বড় সংস্থার বড়মাপের কর্মকর্তা। সংসারে কোনো কিছুর অভাব তো নেই-ই, বরং নানা সামগ্রীর আধিক্য চোখে ধাঁধা লাগিয়ে দেয়। তবু, বিমানে পরিবেশিত খাবারের থালা থেকে তিনি তুলে নিলেন কারুকার্যময় চামচখানি। ঠান্ডা মালাই খাওয়ার জন্য দিয়েছিল। রুপোর চামচ। সত্যিই রুপোর নাকি? লোকে তো তাই বলে। এই বিমানে আইসক্রিম খাওয়ার চামচটি রুপোর। এদিক-ওদিক তাকিয়ে তিনি সেটি…

  • ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন

    নুরুল করিম নাসিম বাইরে যে প্রবল ধারায় অবিশ্রান্ত বৃষ্টিপাত হচ্ছে এ-কথাটা আমরা কেউ বুঝতে পারেনি। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই রেস্তোরাঁয় বসে এতক্ষণ আমরা তুমুল আড্ডায় মেতে উঠেছিলাম। দিনটি ছিল ছুটির, শুক্রবার। বাইরে পৃথিবীর অবস্থা কী করে বুঝবো আমরা? ভারি চমৎকার পর্দায় জানালাগুলো কাচ দিয়ে এমনভাবে ঢাকা যে বাইরের দৃশ্য দেখা যায় না, শব্দ শ্রুতিগোচর হওয়ার কোনো…

  • দইয়ের সরবত ও অন্যকিছু

    আফসার আমেদ কখন যে কোন গানটা মন থেকে গলায় উঠে আসবে, তা ভেবে-চিন্তে হয় না। আপনা-আপনিই আসে। বিশেষত রবীন্দ্রসংগীত। অন্য গান যে গুনগুনিয়ে ওঠে না তা নয়। তার ভালো থাকা তাতে একটু আরাম পায়। গানটা নিয়ে থাকে। সেটা মনোময়ই জানে। রণিতা তার ভালো থাকাটা টের পায়। মনোময়ের ভালো থাকা রণিতা হয়তো ভালোবাসে। কে জানে, সত্যিই…

  • মুল্লুকতাজ

    কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর তখনো অঘ্রানের শীত-শীত বিকাল শেষ হয় নাই – আমন ধানকাটার মৌসুম লেগেছে; ইরিধান, সরিষা, গোল আলু, মিষ্টি আলু, খেসারি ডাল রোপণের সিজনেই আবদুল কুদ্দুস আবারো বিভ্রান্ত হয়; – এর কারণ হচ্ছে, মুল্লুকতাজের যেই ছবিগুলো খুঁজছে, তা সে পাচ্ছেই না। তার সামনে তাইজুল মিয়া ওরফে মুল্লুকতাজের বিস্তৃত একটা জীবন আছে – সেখানে স্কুল-কলেজে পড়াশোনা…

  • দেহতরী

    মণীশ রায়   কার বিয়ে হচ্ছে আজ? শীতের ঘোলা আকাশজুড়ে কে ছড়াচ্ছে রঙিন আতশবাজির ফুলকি? কার মনে এতো আনন্দ? অথচ পাশের ঘর থেকে একটু পরপর ভেসে আসছে মায়ের কণ্ঠের বিলাপধ্বনি। অমিয় বুঝতে পারে না, এসব বিলাপ কিংবা কান্নাগুলো সত্যি সত্যি হৃদয়-নিংড়ানো কিনা। ওর মা পরমা কি সত্যি সত্যি ভালোবাসতেন ওর বাবাকে? সে খাটের পাখনার ওপর…

  • চলার পথে, চলতে চলতে

    মোহাম্মদ আযাদ রেলওয়ে স্টেশনে আজ অনেক ভিড় লেগে আছে। টিকিটগুলো তিনদিন আগেই শেষ। এখন কেবল স্ট্যান্ডিং টিকিট। সেটিও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। ছুটির দিন ভোরবেলা এমনটি হওয়াই স্বাভাবিক। স্টেশনে দাঁড়িয়ে অনিকের মনে হলো, প্রতিদিনের জীবন যেন জীবনকেই তুড়ি বাজিয়ে মেতে উঠছে সময়ের ধাঁধায়, যেখানে নির্দিষ্ট কোনো বাঁধন নেই। গাড়ি ছাড়তে এখনো দশ মিনিট বাকি। সোজা…

  • জড়ুলের দাগটা

    পলাশ পাত্র থানায় মেসেজ আসার পর বিভিন্ন জায়গার মানুষ কল্যাণীর মর্গে এসেছে। মুখে কোপ, চোখ খুবলানো, অর্ধেক মাথা কোপানো দেহগুলো দেখে শিউরে ওঠার মতো অবস্থা। নোংরা ময়লা ভরা। কারো-বা রক্তাক্ত মুখ-চোখে কাদাভর্তি। অন্যগুলোর মতো  নাক-ঠোঁটফাটা দেহটা দেখেও সকলে একই আচরণ করল। সবংয়ের সুমিতা দেহটার কাছে গিয়ে স্থির হয়ে গেল। মর্গের ভেতর শায়িত লাশগুলো থেকে উৎকট…

  • পাগল, কোকিল ও পলাশ ফুল

    বিশ্বজিৎ চৌধুরী শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে ভিজেছে বেশ কিছুটা সময় ধরে। সারা গায়ে সাবান মেখেছে। ধারাজলে সেই সাবানের সবটুকু ফেনা শরীর বেয়ে নেমে যাওয়ার পর কল বন্ধ করে সরে এলো শাওয়ারের নিচ থেকে। এতক্ষণ যে গুনগুন গানটা পানির শব্দে হারিয়ে যাচ্ছিল, সেটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে এবার। বাথরুমে ঢোকার আগে কোনো একটা টিভি চ্যানেলে গান শুনেছিল। সেই…

  • মৃত্যুময় এ-জীবনে

    ইকবাল আজিজ এখন এই বৃদ্ধ বয়সে অধ্যাপক মাসুদ যে-শহরে এসেছেন, সেখানে তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে। এ-শহরের পুরনো নড়বড়ে বাড়িঘর, আঁকাবাঁকা রাস্তা, গলি, স্টেশন, সদর হাসপাতাল, সিনেমাহল, সোনাদীঘির মোড় – এসব স্থির হয়ে আছে তার মনে সেই কবে থেকে। তবে শহরের সমাজজীবনের বাইরের দিকটা অনেক বদলে গেছে। শৈশবে তিনি এ-শহরে যে-লোকটিকে দেখেছিলেন ঘোড়ার গাড়ি টমটম…