জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধান্জলি
-
দেশাত্মবোধের বিশ্বগত রূপ শিল্পী জয়নুল আবেদিন
মৃণাল ঘোষ অবিভক্ত ভারতে ১৯৪০-এর দশকে প্রতিষ্ঠাপ্রাপ্ত শিল্পীদের মধ্যে জয়নুল আবেদিন (১৯১৪-৭৬) ছিলেন এক অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। চল্লিশের প্রতিনিধি-স্থানীয় শিল্পীদের প্রায় সকলেই ১৯৪৩-এর মন্বন্তর দ্বারা আলোড়িত হয়েছিলেন। সেই করুণ বাস্তবতা অনেককেই শিল্পসৃজনে উদ্বুদ্ধ করেছে। সেই প্রতিবাদী প্রকল্পে জয়নুল আবেদিন এক স্বতন্ত্র পরিসর তৈরি করে আজো সকলের মনে মন্বন্তরের প্রধান এক শিল্পী হিসেবে উজ্জ্বল হয়ে আছেন। আজ…
-
চিত্রশিল্পে তাঁর বাঙালিয়ানা
রবিউল হুসাইন বাংলাদেশের চিত্রশিল্পে জয়নুল আবেদিন স্বরবর্ণের ব্যঞ্জনায় চিহ্নিত। একটি ভাষা-নির্মাণে যেমন স্বরবর্ণের প্রাথমিক ব্যবহার ও অবশ্যম্ভাবিতা উপযুক্ত, অতিশয় গঠনমূলক, তেমনি জয়নুল আবেদিন। সদ্য বিভক্ত মুসলিম জনগোষ্ঠী ধর্মীয় কুসংস্কারে আকণ্ঠ নিমজ্জিত, যখন অন্যান্য দেশে তার, বিশেষ করে চিত্রশিল্পে বিন্দুমাত্র অমনোযোগ নেই, সেই সময়ে এই উজ্জ্বল আবির্ভাব খুবই প্রয়োজনীয় এবং তাই তিনি এদেশের মানুষ ও শিল্পীদের…
-
জয়নুল আবেদিনের স্মৃতি
তাঁর সমস্ত সত্তার গভীরে লোকজ নন্দনতত্ত্ব বাসা বেঁধেছিল। এটাই ছিল তাঁর অর্জন এবং উৎস দানের।
-
আমার দেখা জয়নুল আবেদিন
বিজন চৌধুরী জয়নুল আবেদিন সাহেবের সঙ্গে আমার পরিচয় হয় কলকাতার সরকারি আর্ট স্কুলে। তখন দেশ ভাগ হয়নি। ১৯৪৫ সালে আমি প্রথমবর্ষে আর্ট স্কুলে ভর্তি হই এবং শিক্ষক হিসেবে তাঁকে পাই। আর্ট স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগেও আমরা অনেকে তাঁকে নামে চিনতাম। ১৩৫০-এর দুর্ভিক্ষের বাস্তব রূপ চিত্রিত করে তিনি কলকাতা শহরে তখন আলোচিত ব্যক্তিত্ব। শহরের রাস্তায় অন্নের…
-
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন উত্তরসূরির চোখে
মুর্তজা বশীর জয়নুল আবেদিনের যে-ছবিগুলো আমার কাছে সবসময় একটা আবেদন রেখেছে, সেটা হলো দুর্ভিক্ষের ছবি। তার পরের ছবিগুলো দু-একটি ছাড়া আমাকে তেমনভাবে আকর্ষণ করতে পারেনি। প্রথমেই জানতে হবে যে, জয়নুল আবেদিন দুর্ভিক্ষের ছবি কেন আঁকলেন। জয়নুল আবেদিন গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষ, জেলে, জেলেনি, কিষান-কিষানি ও খেটে-খাওয়া জনগোষ্ঠী, তাদের তিনি গভীরভাবে ভালোবাসতেন। তাদের দুঃখ-দুর্দশা, তাদের বেদনায় তাঁর…
-
শিল্পকলার পুরোধা জয়নুল
বুলবন ওসমান চলচ্চিত্রের রোলটি খুব দ্রুত ধাবমান। এই তো সেদিন ১৯৭৬ সালে জয়নুলের প্রয়াণ। আজ তা ৩৮ বছরের প্রাচীন। কোথা দিয়ে কালের এই যাত্রা? ধারণা করার আগেই তা দিগন্তে মিলিয়ে যাচ্ছে। সময়কে ধরার কোনো কৌশল বা হাতিয়ার আবিষ্কৃত হয়নি। ভেবে অবাক লাগে এই তো সেই ১৯৬৬ সালে ঢাকা চারুকলায় শিক্ষকতায় নিয়োগ পেলাম। হাতটি বাড়িয়ে দিয়েছিলেন…
-
আমার দেখা জয়নুল
রফিকুন নবী শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে একটা দিক প্রধান হয়ে মনে আসে। তা হলো তাঁর শিল্পী হওয়া সত্ত্বেও ছবি আঁকার নান্দনিক ভাবনার পাশাপাশি আরো অনেক দিকে মনোযোগী হওয়া। মানবিক অনুভূতি, এবং ভাবনা-চিন্তাপ্রসূত বিষয়াদিকে ছবিতে উপস্থিত করা, সংস্কারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া, নান্দনিকভাবে দেশের মানুষকে রুচিবান করে তোলা, দেশের কল্যাণের প্রয়োজনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, শিল্পকলার…
-
আত্মপরিচয় সন্ধানে লোকায়ত জীবনের পর্যবেক্ষণ
সাইমন জাকারিয়া প্রথমেই স্বীকার করে নেওয়া ভালো যে, আমি কোনো চিত্রশিল্পী নই, এমনকি চিত্র-সমালোচক বা চিত্র-বিশ্লেষকও নই। তারপরও বাংলাদেশের লোকায়ত জীবনের নিবিড় পর্যবেক্ষক হিসেবে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের চিত্রকলা নিয়ে কিছু কথা বলবার এক ধরনের বিনয়ী অধিকার আমারও আছে। কারণ, জয়নুল আবেদিনের চিত্রশিল্পকলার বৈচিত্র্যময় ভান্ডারের মধ্যে একদিকে যেমন তাঁর সমসাময়িক কালের প্রতিচিত্র তথা সময়-সমাজ-রাজনীতি ও অর্থনীতির…
-
দুর্ভিক্ষ ও জয়নুল
আবুল হাসনাত শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই। আচার্যের বহুমুখীন সৃজন ও কর্মধারা এদেশের শিল্প-আন্দোলনকে কতভাবে যে সঞ্জীবিত করেছে এ বলে বোধকরি শেষ করা যাবে না। তাঁকে নিয়ে তর্ক, আলোচনা ও শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের সময় আমরা তাঁর সৃজনে দুর্ভিক্ষের চিত্রমালার অবিনাশী রেখা নিয়েই সাধারণত আলোচনা করি। কিন্তু তিনি তাঁর সৃষ্টিবৈচিত্র্যের বৈভব দ্বারা প্রতিনিয়ত আমাদের প্রাণিত…
-
শম্ভু মিত্র : জন্মশতবর্ষে
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায় বাংলা নাটকের ইতিহাসে ১৯৫৪ সালটি বিশেষভাবে চিহ্নিত হয়ে আছে বহুরূপী নাট্যসংস্থা-প্রযোজিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রক্তকরবী মঞ্চায়নের জন্য। মাত্র ছ-বছরের নাট্যদল, যদিও তাঁদের প্রারম্ভিক প্রযোজনাগুলিও ছিল যথেষ্ট সম্ভ্রম আদায় করা ও একইসঙ্গে সমীহ করার মতো। দলে ছিলেন মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের মতো প্রবীণ নাট্যব্যক্তিত্ব, শিশিরকুমার ভাদুড়ীর সীতা নাটকে বাল্মীকির ভূমিকায় অভিনয়সূত্রে যাঁর চিরস্থায়ী নামই হয়ে যায় ‘মহর্ষি’।…
-
শম্ভু মিত্র
আবুল হাসনাত বাংলা নাটকে আধুনিকতার পথ নির্মাণ ও সৃজনে বহুমাত্রিকতা এবং ঐতিহ্যভাবনার কথা যখন ওঠে তখন খুব শ্রদ্ধাভরে আমরা শম্ভু মিত্রকে (১৯১৫-৯৭) স্মরণ করি। কত ভাবেই না তিনি বাংলা নাট্যমঞ্চকে করে তুলেছিলেন ঐতিহ্যিক প্রবাহের সঙ্গে ঐশ্বর্যবান ও আধুনিক। মঞ্চে প্রাণশক্তিসঞ্চারে নবধারার প্রবর্তক তিনি। বহুরূপী ও তাঁর নির্দেশিত নাটক বোধে নবীন ও দীপ্তিতে উজ্জ্বল; বাংলা মঞ্চধারায়…