June

  • স্বর্ণা

    আমি কি জানি সোনা নয় আমার চাই পরশপাথর শুধু জানি খনিতে আছে রাশি রাশি সোনা, তাই – খনির পাতালপুরী থেকে তোমাকে পেতে আমি কত যে, কতবার যে জীবন দিই; আকরিক থেকে শোধনে সাধনে তোমাকে তোমার সম্পন্ন মহিমায় পেতে কত যে ঘাম ঝরাই, এভাবে ঘাম রক্ত ঝরাতে ঝরাতে ঝরাতে ঝরাতে এক স্বর্ণদেবীতে আমার বিশ্বাস ঠাঁই খোঁজে…

  • অবশেষের সুখ

    অস্পষ্ট গতর হাতড়ে মানিক খোঁজস রে বেআক্কেল! ঘোমটায় লুকানো শরীরের ভেতরের শরীর। অহন ধুতরা ফুলের বিষ সারাদেহে! কই গেল চন্দনের বাসনা? তুইও খোঁজস, আমিও খুঁজি! সাধের বৈকুণ্ঠ অহন হাবিয়া-দোজখ! একগাছি কাচের চুড়ি বিক্রি করায় বাইদানির আট বেহেশতের সুখ। আমার তখন সুখ ছিল তোর বাসি বিছানায় গড়াগড়ি করায়! অবশেষে সুখ শেষ দরজায় খিল দিয়া মরণ-কান্দন কান্দে!

  • এপার ওপার

    অনতিদূরেই গঙ্গা – হাওড়ার হাত ধরে পদ্মার হাওয়া বয়ে যায় মেঘনার মোহনায় ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ! চলে যায় দূর দেশে দেশে। ট্রামলাইনের রেখা ধার করে পার্কসার্কাস উত্তর চব্বিশ পরগণা ধরে একদিন পৌঁছে যাবে খুলনায় কোনো এক মুখর বর্ষায়! মনে তবু প্রশ্ন জেগে রয় – রেল গেদে কেন বেঁধে দেবে পথ কতদূর যাবে – হরিদাস, রফিকুল?…

  • মাউথঅর্গান

    আত্মজার হাতে ফেলে আসা এক মুঠো শৈশব। যা ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। হেমন্তের সবুজ ধানগাছে যখন ঢেউ খেলতো বাতাস। সুরসমেত নিজেকে ভাসিয়ে নিতাম এক প্রান্ত থেকে সীমানার অপর প্রান্তে। সুর আর আমার মধ্যে দীর্ঘ বিরতি। শহুরে জীবন। কোলাহলে মোড়ানো নিজের মধ্যে নিজেকে খুঁজি। এক আলোকোজ্জ্বল বিকেলে মায়ের কোলে চড়ে সেই এক মুঠো শৈশব পুনরায় ফিরে এসেছে।…

  • আকাশবিহারী চোখ

    যদি মা বেঁচে থাকতেন তবে শুধাতাম, মা গো, জন্মেই কি চোখ তুলে তাকিয়েছিলাম ওই আকাশে? নইলে আজো কেন চেয়ে থাকি সেদিকেই। জীবন রয়েছে যদি জীবনের চাহিদাকে এড়িয়ে যাবার নয় – সকলেই চোখ রাখে ক্যালকুলেটারে, ঘড়িতে, ক্যালেন্ডারে, টাকা-পয়সায়, সোনা-দানায়, বাড়ি ও গাড়িতে তখনো আমার চোখ পড়ে রয় গ্রহে-গ্রহান্তরে, নক্ষত্র থেকে নক্ষত্রে, ছায়াপথে …! যা কিছু পাওয়ার…

  • অথচ নিরামিষ

    আকাশ কখনো কখনো মেঘে ঢাকে গুড়ুম গুড়ুম শব্দ হয় ভয় হয় বজ্রাঘাতে যদি ভেঙে যায়                       অনাগত স্বপ্ন। কোথায় রোদের চাতাল? পাখিডাকা ভোর প্রতীক্ষায় থাকি তার যদি স্নান শেষে জলে ঢাকে প্রেম আঁধারে লুকোবে না মুখ। অথচ সুদখোর চর্বি খেতে খেতে নিরামিষের ডালা রাখে                     চরায় ঠেলে …

  • কুতুবিয়া গার্ডেনের খাসমহলে

    কুতুবিয়া গার্ডেনের খাসমহলে

    মরক্কোর মারাকেশ নগরীর জেমা এল ফিনা নামক পর্যটকনন্দিত বিরাট এক চকে ঘোরাফেরা করতে গিয়ে দেখা হয় অস্ট্রেলিয়া থেকে আগত পর্যটক ব্রিয়নার সঙ্গে। এই তরুণীর সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হয় কাসাব্লাংকায়। একই হোটেলে আমরা বসবাস করেছি সপ্তাদিন। মেয়েটি তার ভ্রমণভিত্তিক অভিজ্ঞতা দিয়ে একটি রেডিও চ্যানেলের জন্য নিয়মিত প্রতিবেদন তৈরি করে আসছে। যেহেতু আমি একই বিষয়ে আগ্রহী,…

  • আমিনুল ইসলাম : পথিকৃৎ এবং নিরীক্ষাধর্মী শিল্পী

    আমিনুল ইসলাম : পথিকৃৎ এবং নিরীক্ষাধর্মী শিল্পী

    শিল্পী আমিনুল ইসলামের জন্ম ১৯৩১ সালে, তিনি পরলোকগমন করেন ২০১১ সালে। দীর্ঘ জীবনের অধিকারী হয়েছিলেন তিনি। সংখ্যায় বেশি না হলেও নানা দৃষ্টিতে দেখে, বিভিন্ন মানদণ্ডে তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনের মূল্যায়ন করা হয়েছে। এই সংক্ষিপ্ত লেখায় আশি বছরের জীবন স্মরণ করা হয়েছে তাঁর জীবদ্দশায় অর্জিত সাফল্যের নিরিখে। প্রথমত, তিনি বাংলাদেশের চিত্রকলায় আধুনিকতার অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন। বলা যায়,…

  • বাংলার বুদ্ধের খোঁজে ওপিএসজি

    বাংলার বুদ্ধের খোঁজে ওপিএসজি

    ‘ওরিয়েন্টাল পেইন্টিং স্টাডি গ্রুপ’ বা ‘ওপিএসজি’ ঢাকার আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে মে ২০২৩ সালের গত ৩রা থেকে ১৫ই মে পর্যন্ত ১৩ দিনব্যাপী ‘দুঃখ থেকে মুক্তি : বাংলার বুদ্ধ’ শিরোনামে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করে। এই প্রদর্শনীর আয়োজকদের উদ্দেশ্যটা কী, তাঁদের ইশতাহারে স্পষ্ট করে বলা আছে। ২০০৯ সালে গঠিত ‘ওরিয়েন্টাল পেইন্টিং স্টাডি গ্রুপ’-এর আয়োজন দর্শককে আহ্বান করে সচেতনতার সঙ্গে…

  • আ উওম্যান ইজ আ উওম্যান : ডিম, ডিম্বনিষেক ও জুইসঁস

    আ উওম্যান ইজ আ উওম্যান : ডিম, ডিম্বনিষেক ও জুইসঁস

    জঁ লুক গদারের মুক্তি পাওয়া দ্বিতীয় ছবি উন ফাম এ তাঁ ফাম (১৯৬১) বা ‘নারী হলো নারী’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উল্টো একটি গান গেয়েছেন। ‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে, ওগো বিদেশিনী’ বাণীর বিপরীতে গদার যেন বলতে চান, নারী বিদেশিনী তো বটেই, তাই তাকে চেনা সহজ কাজ নয়, অন্তত পুরুষের জন্য তো নয়ই। আপাতদৃষ্টিতে এই ছবিটি সংগীতময়…

  • জলের অক্ষরে লেখা   

    জলের অক্ষরে লেখা   

    পর্ব : ১৫ অংশু আর অবন্তির দেখা হলো পরের দিন, অংশুর অফিসে। অবন্তি বেশ গম্ভীর, মনে হচ্ছে কোনোকিছু নিয়ে খুব চিন্তিত। সবসময় যে হাসি-আনন্দ-উচ্ছলতায় মেতে থাকে, তার এই গাম্ভীর্য মোটেই ভালো লাগছে না। অংশু বললো, কী হয়েছে তোর? – কই কিছু হয়নি তো! – তাহলে এরকম ঝিম মেরে আছিস কেন? – মাথার ভেতরে সব জট…

  • সুখ

    সুখ

    প্রতিবারের মতো এবারো ট্রেন থেকে নেমে খানিকক্ষণ দাঁড়াল রানা। ধীরপায়ে রাস্তার মোড়ের বটগাছটার কাছে এলো। পাশেই রিকশাস্ট্যান্ড। রিকশাওয়ালাগুলি যাত্রী ধরার জন্য হুটোপাটি করছে। কেউ আবার তুমুল দরদাম জুড়েছে। ওদিকে তাকিয়ে রানা মনে মনে হাসল। পুরনো স্মৃতি ডানা ঝাপটাল। স্টেশন চত্বরজুড়ে সযত্নে লালিত নানা রঙের বোগেনভেলিয়া। গন্ধ নয়, রং ছড়াচ্ছে তারা। রং দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মনের…