সুব্রত বড়ুয়া
-
আনিসুজ্জামান-জীবনকথা
একত্রিশ ১৯৯৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর মামাতো বোন হালিমার মৃত্যুকালে আনিসুজ্জামান ছিলেন কলকাতায়। অবশ্য তার আগেই হালিমাকে শেষ দেখা দেখে গিয়েছিলেন তিনি হাসপাতালে। সে-সময় ‘কী যেন সে বলতে চেয়েছিল আমাকে’ – সে-কথা আনিসুজ্জামান আর জানতে পারেননি। বিপুলা পৃথিবীতে তিনি লিখেছেন, ‘১৯৭৫ সালের পরে, বিশেষ করে জীবনের শেষ দিকে, দেশ সম্পর্কে তার উদ্বেগ অনেক বেড়ে যায়, কবিতায়…
-
আনিসুজ্জামান-জীবনকথা
ত্রিশ ১৯৯৯ সালের জানুয়ারিতে কলকাতা বইমেলার ‘থিম কান্ট্রি’ ছিল বাংলাদেশ। বইমেলা উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর সঙ্গে ও সে-উপলক্ষে সরকারি খরচে গিয়েছিলেন লেখক, সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিক ও আমলাদের বিরাট এক দল। স্বাভাবিকভাবেই কলকাতার ডেপুটি হাইকমিশনের পক্ষে সবার থাকা-খাওয়ার সুষ্ঠু ব্যবস্থা করা সম্ভব ছিল না। শুধু প্রধানমন্ত্রীর সহচর যাঁরা ছিলেন তাঁদেরই আবাসন ও অন্যান্য…
-
আনিসুজ্জামান-জীবনকথা
আটাশ সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতা গ্রহণের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ‘বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে সৃজনশীলতা, গতিময়তা, জবাবদিহিতা ও শৃঙ্খলা আনয়ন এবং এ দুটি প্রতিষ্ঠানের অধিকতর স্বায়ত্তশাসন প্রদানের নীতিমালা-সংক্রান্ত বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নের উদ্দেশ্য’ অবসরপ্রাপ্ত সচিব, সংগীতশিল্পী ও ক্রীড়াবিদ মোহাম্মদ আসাফ্উদ্দৌলাহ্কে চেয়ারম্যান নিযুক্ত করে একটি কমিশন গঠন করে।…
-
আনিসুজ্জামান-জীবনকথা
চব্বিশ ১৯৯১ সালের ২৮শে ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ঘোষণা করে যে, অধ্যাপক গোলাম আযম তাদের সংগঠনের আমির নির্বাচিত হয়েছেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ঠিক আগে আগেই গোলাম আযম পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন। পাকিস্তানি পাসপোর্ট ও বাংলাদেশি ভিসা নিয়ে ১৯৭৮ সালের ১১ই জুলাই তিনি বাংলাদেশে আসেন তাঁর অসুস্থ মাকে দেখতে। সেই থেকে তিনি এদেশে থেকে যান এবং জামায়াতে…
-
আনিসুজ্জামান-জীবনকথা
কুড়ি ১৯৮৬ সালের ২২শে সেপ্টেম্বর আনিসুজ্জামান তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্ল্যাটে উঠেছিলেন। তার আগে স্বামীবাগে থাকতে দুটি কাজ শেষ করেছিলেন তিনি। দুটিই ছিল বাংলা একাডেমির কাজ। এর মধ্যে একটি ছিল মুনীর চৌধুরী রচনাবলীর ভূমিকা লেখা আর দ্বিতীয়টি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস প্রথম খণ্ডের সম্পাদনা। বিপুলা পৃথিবীতে তিনি লিখেছেন : ‘মনজুরে মওলার অন্তহীন দাবি না থাকলে…
-
আনিসুজ্জামান-জীবনকথা
(তৃতীয় কিস্তি) চৌদ্দ চট্টগ্রামে আসার পর প্রথমদিকে গবেষণার কাজে নিজেকে বিশেষভাবে নিয়োজিত রাখার সুযোগ আনিসুজ্জামান তেমন একটা পাননি। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার জন্যে প্রবন্ধ লিখতে গিয়ে যথেষ্ট শ্রম ও সময় দিয়েছিলেন। যথাসময়ে সেটি শেষ করতে পারেননি। তাঁর নিজের কথায় (এই সময়ে) ‘অন্যের বইয়ের ভূমিকা লিখেছি, স্মারকগ্রন্থের জন্যে প্রবন্ধ লিখেছি, খানিক গবেষণামূলক-খানিক সাধারণ-পাঠযোগ্য শ্রদ্ধাঞ্জলি লিখেছি মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র মৃত্যুতে।…
-
আনিসুজ্জামান-জীবনকথা
(দ্বিতীয় কিস্তি) সাত ১৯৬৯ সালের জুন মাসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছিলেন আনিসুজ্জামান। দীর্ঘ ষোলো বছর পর ১৯৮৫ সালের আগস্ট মাসে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এসেছিলেন তিনি। তাঁর এই দীর্ঘ ষোলো বছর চট্টগ্রামে অবস্থান নিয়ে প্রাবন্ধিক-গবেষক আবুল মোমেন তাঁর একটি স্মৃতিচারণমূলক রচনায় লিখেছেন : ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য অনেকের যোগদানের চেয়ে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের যুক্ত হওয়ার তাৎপর্য ছিল…
-
আনিসুজ্জামান-জীবনকথা
এক ‘আনিসুজ্জামান ছিলেন একাধারে প্রবাদপ্রতিম শিক্ষক, অভিনিবিষ্ট গবেষক এবং অসাধারণ রকমের সংস্কৃতিসচেতন। এই তিন গুণের যে-কোনো একটিই একজন মানুষের জীবনকে চরিতার্থতা দেবার জন্য যথেষ্ট; তাদের একত্রযোগ তো একান্ত বিরল ঘটনা। আনিসুজ্জামানের ক্ষেত্রে এই বিরল ঘটনাটাই ঘটেছে। একজন ভালো শিক্ষক যে উচ্চমানের গবেষক হবেন, এমন কোনো নিয়ম নেই; আবার সার্থক গবেষকদের ক্ষেত্রেও দেখা যায় যে তাঁরা…
-
হারানো সিঁড়ির চাবির খোঁজে আবুল হাসনাত
অক্টোবরের (২০২০) একত্রিশ তারিখেও জানতাম আবুল হাসনাত তাঁর অসুস্থতা কাটিয়ে উঠেছেন এবং দু-চার দিনের মধ্যে বাড়ি ফিরে যাবেন। মার্চের শেষ সপ্তাহে ধানমন্ডির ১৫ নম্বরের কালি ও কলম অফিস থেকে বেরুনোর পর আবুল হাসনাতের সঙ্গে আমার আর দেখা হয়নি, যদিও মাঝে-মধ্যেই ফোনে আলাপ হতো এবং পত্রিকা নিয়ে নানা কাজকর্মের বিষয়ে আমরা কথা বলতাম। আবুল হাসনাত তো…