2004

  • সিংহের নিয়ম

    সিংহের নিয়ম

    যুবকবয়সে রবীন্দ্রনাথ পদ্মার পাড়ে দাঁড়াতেন, দেখতেন নিসর্গের বিস্তৃতি; পরিণত বয়সে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে খোয়াইর পাড়ে দাঁড়াতেন, দেখতেন নিসর্গের রুক্ষ-কঠিন শ্রী  এবং দুক্ষেত্রেই ভাবতেন মানুষ প্রকৃতির বদলে কী তৈরি করেছে – এই ভাবনা তাঁর মধ্যে একটি অপ্রিয় বোধ জাগাত। এই বদল, বদলে দেওয়া তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। এই বিচার থেকে তিনি কখনো সরে যাননি। পদ্মার পাড়ে…

  • সাম্রাজ্যবাদ ও রবীন্দ্রনাথ

    সাম্রাজ্যবাদ ও রবীন্দ্রনাথ

    সাম্রাজ্যবাদ কি আকাশটাকেও বন্দি করে ফেলছে? উত্তরে বলতে হয় ‘হ্যাঁ’। অন্তত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ যে সে-পথেই এগোচ্ছে তার প্রমাণ সুস্পষ্ট। ভাষাবিদ-বুদ্ধিজীবী নোয়াম চমস্কি তাঁর ‘Dominance and its Dilemmas’ প্রবন্ধে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ কীভাবে আকাশ-দখল করে সমগ্র পৃথিবীর উপর তার আধিপত্য স্থায়ী করার চেষ্টা করছে তা আলোচনা করেছেন। (ফ্রন্টলাইন, ২১ নভেম্বর ২০০৩) ঘটতে থাকা বিভিন্ন ঘটনা বিচার করে…

  • রবীন্দ্র-সম্পাদিত বঙ্গদর্শনে হেদায়েতউল্লার প্রবন্ধ

    রবীন্দ্র-সম্পাদিত বঙ্গদর্শনে হেদায়েতউল্লার প্রবন্ধ

    রচনা-পরিচয় : ভূঁইয়া ইকবাল বিশ শতকের প্রথমার্ধের কথাসাহিত্যিক ও ভাবুক প্রাবন্ধিক মোহাম্মদ হেদায়েতুল্লাহ্ (১৮৮০-১৯৪৬) সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সাক্ষাৎ-পরিচয় ঘটেছিল বঙ্গভঙ্গ-আন্দোলনকালে। হেদায়েতুল্লাহ্ নেকনজর ও তাজিয়া (১৩৪৩) নামে দুটি উপন্যাস এবং প্রদীপ ও চেরাগ (১৩৩২/৩৩) গল্পসংকলন প্রকাশ করেছিলেন। তিনি সৈয়দ এমদাদ আলী-সম্পাদিত নবনূর (১৯০৩-০৭) পত্রিকা প্রকাশনায় অন্যতম উদ্যোক্তা। বঙ্গদর্শন (নবপর্যায়), নবনূর, সওগাত, মোহাম্মদী ও প্রবাসী প্রভৃতি সাময়িকপত্রে তাঁর…

  • দুরকম চলা

    দুরকম চলা

    অরুণাংশু আজ বিকেলে চা খেতে ডেকেছে। আকস্মিক এই আহ্বান এমন-কিছু আপত্তিজনক নয়, তবু আমার ব্রহ্মতালুতে আগুন ধরে গেল। এর কার্যকারণ বিশ্লেষণ করতে বসে, আমার উষ্মার সপক্ষে, একাধিক যুক্তি খুঁজে পেলাম। প্রথমত, কেমব্রিজ থেকে দু-পাতা ইংরেজি পড়ে এসে ঝলমলিয়ে ‘ফাইভ-ও-ক্লক টি’-র জন্য আমাকে ই-মেইলে নেমন্তন্ন করতে গেল কেন? চায়ের সঙ্গে টা থাকবে কিনা সেটাই বা কী…

  • সুধীন্দ্রনাথ দত্তের অপ্রকাশিত ছোটগল্প

    সুধীন্দ্রনাথ দত্তের অপ্রকাশিত ছোটগল্প

    রচনা-পরিচয় স্বপন মজুমদার সুধীন্দ্রনাথ দত্ত (১৯০১-৬০) গল্প লিখেছিলেন বেশ কয়েকটি, যদিও প্রকাশ করেননি একটিও। ১৯২৪-এর গোড়ার দিকে তিনটি গল্প পাওয়া যায় তাঁর খসড়া-খাতায় (এরই একটি Ñ ‘দুকূলহারা’- সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে কলকাতার বিভাব পত্রিকার বইমেলা সংখ্যায় [২৫:২, ফেব্রুয়ারি ২০০৪])। এই গল্পগুলির সংস্কার বা পরিমার্জনের পরিচয় আছে তাঁর পরবর্তীকালের পাণ্ডুলেখের মধ্যে। গল্প লেখার এই উৎসাহ সাময়িক উত্তেজনা…

  • স্বপ্নাবসান

    স্বপ্নাবসান

    অ্যাটর্নি অফিসের আবহাওয়ায়, ভাবভঙ্গি, আসবাবপত্র বা অভ্যাগতবৃন্দের মধ্যে এমন কিছু নেই যার সংস্পর্শে জেগে উঠতে পারে মেদুর-করুণ সুদূর অতীতের ছবি। দেবতাদের স্বাধিকারবোধ সম্ভবত খুব বেশি। একের আসরে অপরে আসতে চান না, বিশেষত আইনের অধিষ্ঠাত্রীর মন্দিরে স্বপ্ন-দেবীর আগমন অত্যন্ত বিরল। কিন্তু আজকে আমার ভাগ্যবিধাতা অন্যরূপ অভিরুচি করেছেন। এই চিরাভ্যস্ত আবেষ্টনে ও প্রতিবেশেও যে-স্মৃতি বাঁধা কর্মে অন্যমনা…

  • অশ্রু ও আগুনের নদী

    অশ্রু ও আগুনের নদী

    ‘হায় আল্লাহ…’ ‘চুপ কর হারামজাদা! তোর জিব আমি কেটে নেব।’  লোকটির লুঙ্গির সঙ্গে গোঁজা চল্লিশ হাজার টাকা টান দিয়ে কেড়ে নিল ইউসুফ। ‘হায় খোদা, আমার এক জোড়া গরু বেচার টাকা। আমার সর্বস্ব, আমি পথের ভিখিরি হয়ে যাব’ Ñ বলতে বলতে কাশেম ফুঁপিয়ে কেঁদে কেঁদে ইউসুফের হাত আঁকড়ে ধরল। সাপের মতো পেঁচিয়ে। নাছোড়বান্দা হয়ে। ইউসুফের পিস্তল…

  • কোকিল ডেকে যায়

    কোকিল ডেকে যায়

    মধু ভোরবেলা উঠে বউকে বলে, ‘বিদায় দে।’ মদিনা স্বামীর হাত ধরে কয়, ‘আজ লয়। কাল যাইয়ো।’ কড়ুই গাছের ডালে কোকিল ডেকে ওঠে। বসন্তের ভোরে কোকিলের ডাকের কী মানে হয় মধু জানে না। সে ফের শুয়ে পড়ে। আরামে নিদ্রা যায়। পরদিন ভোরে মধু আবার বউয়ের কাছে বিদায় চায়। বউ আবার বলে, আজ লয়, কাল। মধু সুবোধ…

  • ‘শিল্পীর দায়িত্ব সততার সঙ্গে তাঁর সময়কে ধরে রাখা। সততা শিল্পের বড় বিষয়।’ – মনিরুল ইসলাম

    ‘শিল্পীর দায়িত্ব সততার সঙ্গে তাঁর সময়কে ধরে রাখা। সততা শিল্পের বড় বিষয়।’ – মনিরুল ইসলাম

    সাক্ষাৎকার গ্রহণ : রফি হক সালটা সম্ভবত উনিশশ চুরান্নব্বই। তুখোড় আবেগের বয়েস তখন আমাদের। আমরা বলতে – আহমেদ নাজীর, রশীদ আমীন, মোস্তাফা জামান আর আমি। মাথার ওপর ছাতা মেলে আছেন রোকেয়া সুলতানা। ‘Dhaka Print Makers’ নামে একটি ছাপচিত্রের দল গঠন করেছি। চোখের মণিতে জ্বলজ্বলে স্বপ্ন আমাদের। বতিচেল্লির ‘venus’-এর পাখায় ভর করে আসে আবেগী কল্পনা। দূর……

  • নিবেদন

    নিবেদন

    সেদিন একটি ছয় বছরের বালক আমাকে প্রশ্ন করল, ‘আচ্ছা, বনমানুষদের গায়ের রং কীরকম ছিল?’ চটজলদি উত্তর দিতে গিয়ে আমি বাঁদর, হনুমান, শিম্পাঞ্জি এবং গরিলাদের পাশাপাশি ওরাং ওটাংদের চেহারাও মনে করার চেষ্টা করলাম। এদের শরীরের চামড়া দেখা যায় না। পুরোটাই লোমে ঢাকা। কারো লোম কালচে, কারো ব্রাউন। এদের যদি বনমানুষ বলা না যায় তাহলে এরাই বনমানুষের…

  • নক্ষত্রের সন্তান

    নক্ষত্রের সন্তান

    মানুষের শরীরের বেশির ভাগই পানি, যদি পানিটুকু আলাদা করা যেত তাহলে দেখা যেত পায়ের তলা থেকে বুক পর্যন্ত পুরোটুকুই পানি। পানিকে আমরা পানি হিসেবেই দেখে অভ্যস্ত, যদিও আসলে সেটি হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন পরমাণু দিয়ে তৈরি। পরমাণুর সংখ্যা দিয়ে হিসাব করলে মানুষের শরীরে সবচেয়ে বেশি রয়েছে হাইড্রোজেনের পরমাণু, কিন্তু হাইড্রোজেন যেহেতু সবচেয়ে হালকা পরমাণু তাই সংখ্যায়…

  • কালঘুম

    এতোদিন আমাকে নিয়ে কারো কোনো উদ্বেগ-ই ছিল না। পরিবারের একটা প্রায়ান্ধ মানুষ কোথায় কীভাবে আছে এ-নিয়ে কেউ ভাবতো না। কারণ ছেলে-মেয়েদের ধারণা ছিল আব্বা ঘরের যেখানেই থাকুন বই নিয়েই আছেন                সজাগ। কেবল আহার-বিহারের সময় স্ত্রী একটু তাগাদা দিতেন বলতেন ওঠ… যেন একটা পাথরকে ঠেলে গড়িয়ে নাইতে নিয়ে যাচ্ছেন। আমার খাওয়া হয়ে গেলে এ-বাড়ির…