2015
-
চতুর্দশপদী বিভ্রমের হাসি
নওশাদ জামিল মাঝেমাঝে এরকম হয় উদ্ভ্রামত্ম হয়ে ঘুরেফিরে ঘরে ফিরি, চলে আসি একা পথ ভুলে। শৈত্যপ্রবাহের সঙ্গে মিলেমিশে উড়ে গেছে সেইসব পাখি – চুপি-চুপি তাদের ডানায় ভেসে ভেসে ঘরে ফিরি – কোথায় সে ঘর? দূর শূন্যে ঝুলে আছে ঘর পৃথিবীর এই ক্ষুধা – শামিত্ম ময়ূরশয্যার স্মৃতি – যেন সবকিছু বিভ্রমের হাসি সব ফেলে…
-
জীবন একটি রঙিন ছড়া
শারমিন সুলতানা রীনা বহতা এক নদীর মতো যাচ্ছে জীবন কেটে কেউবা আছে মহাসুখে কেউবা মরে খেটে। পাঁচতারকা হোটেলে বয় আনন্দেরই ঢেউ না খেয়ে যে ধুঁকছে মানুষ দেখছে না তা কেউ। কারো বাগান জুড়ে ফোটে রঙিন কত ফুল কেউ অকালে যাচ্ছে ঝরে পায় না খুঁজে কূল। বাঁচার জন্য চলছে কেবল জীবনযুদ্ধ খেলা উপরে উঠতে কারো…
-
তুমি আসোনি
আহম্মেদ হোসেন রাজু তুমি আসবে বলে বৃষ্টি এসেছিল না বলে এসেছিল শনশন পাখির ঝড়, ক্যাকটাস কন্যার সাথে হয়েছিল কথা বাতাসে মিশেছিল শিমুলের রেণুকা। নদীতে ছিল মিতালি ঢেউ, আখের ক্ষেতে জ্বলেছিল জোনাকির দানা, ঝাঁক ধরে এসেছিল স্বপ্নশালিক জমেছিল অফুরমত্ম অবসর সময়, একঠায় দাঁড়িয়ে ছিল দুরমত্ম বিকেল পুকুরপাড়ের তালগাছটাও ছিল নির্বাক দাঁড়িয়ে। দূর মসজিদ থেকে ভেসে…
-
চলে যাওয়া কত সুন্দর
নাসরীন নঈম চলে যাওয়ার জন্য আমি প্রতিদিন প্রস্ত্তত হয়েই থাকি যা কিছু জমিয়েছিলাম এতদিন ধরে কাকে কোনটা দেব লিখে রাখি। মন খারাপের বাঁশি একবারও বাজে না আমার এ-মনে শুধু মনে হয় অনেক তো হলো এবার চলে যাই সঙ্গোপনে। সংসারের বিষপাত্র আর অনেক বেশি নিঃসঙ্গতা মনের ভেতরে মাটি খুঁড়ে সুড়ঙ্গ তৈরি করছে দ্বিতীয়…
-
ঝলমলে রোদগুলো হারিয়ে যাচ্ছে
শিউল মনজুর শীতের কুয়াশায় প্রবেশ করছে বেদনাসিক্ত রোদ। ধীরে-ধীরে মরে যাচ্ছে সবুজপাতা। জড় পদার্থ হয়ে যাচ্ছে বৃক্ষগুলো। কোনো-কোনো বাড়ির দরজা জানালা লেগে যাচ্ছে দ্রম্নত। আজ তোমার হাত ছুঁয়ে দেখি, ভীষণ ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছো তুমি আর তোমার পাপড়ির মতো কোমল আঙুলগুলো ধুলোবালির মতো খসখস শব্দে যেন খুব বেশি বিরক্ত। লক্ষ করি নতুন কেনা কার্ডিগানে প্রবেশ…
-
বিবিক্তা
সাহানা মাহবুব শরীরে নদীর গাঢ় ঘ্রাণ! সাঁতরে বেড়ানো শ্যাওলার মতো শেকড়হীন ভেসে চলি মিঠে স্রোত থেকে নোনা স্রোতে! মাছেদের ভাবলেশহীন চাহনি আর গাঙচিলদের মেছো ঠোঁটের ক্রূর হাসিতে মাজাঘঁষা জীবন আমার; কেবল পুরনো আমিতে ফিরতে ইচ্ছে করে তখন – যখন ভোরের নদীতে আলো নামে একমুঠো রাত ঠেলে।
-
উফশীধানে মুড়ি ভাজে বঙ্গললনা
সেলিম মাহমুদ উফশী ধানের ২৮ জাত দিয়ে মুড়ি ভাজে বঙ্গললনা প্রাইম-টাইমে বিবাহোত্তর রং-তামাশা বরের আছে হিলিস্ন-দিলিস্নর ভ্রমণ তালিকা ‘মেরে আঙ্গেনে মে তুম হারা কিয়া কাম…’ আমরা ভাই এসব ভাষ্যের নিরীহ দর্শক সময় গড়ায় ‘রাডো’ ঘড়ির কাঁটায়-কাঁটায় করপোরেট ক্যালেন্ডারের পাতায় পাতায় ১১তম দিবসে করাতকলে ফেসিয়াল ১২-তে দুর্ধর্ষ কোনো বনদস্যুর বাহুলগ্না আর গোলাপ, কাঠগোলাপ…
-
দাম্পত্য
সোহেল মাজহার ঘোড়া ছুটে আসছে দিগমত্ম কাঁপিয়ে তার পায়ের নিচে সরষের হলুদ রেণু দিগমত্ম কি তবে হলুদ হয়ে গেল? তবে কি দিগমেত্মর রং চুরি করে আজো এক বদ্ধ মাতাল বাড়ি ফিরে বউকে পেটায়, শেষে নিজেই চোখের জল মুছে দেওয়ার ছলে রক্ত ও লবণের ফারাক ভুলে শেষ রাতে মাটির কলসি থেকে একপাত্র জল খেয়ে আর…
-
সিদ্ধার্থ
চাণক্য বাড়ৈ এই যাত্রা সমাধির দিকে – ধ্যানমগ্ন থেকে এইখানে কিছুটা মৃত্যুর অভিনয় করা যাক – ভুলে যাওয়া যাক সেই মুহূর্তটিকে, যখন জ্বলমত্ম চিতায় একখ- – সমিধ কাঠ তুলে দিতে গিয়ে জীবনের দাম সবচেয়ে বেশি মনে হয়েছিল – আহা অবিনাশী গান, বাঁশির শরীরে সাতটি ফোঁড়ের বেদনা গেঁথে দিয়ে, তুমি, এতখানি মধুর হয়েছ –…
-
একসাথে পথে যেতে যেতে
জরিনা আখতার ঝুলো বারান্দায় শীত-রোদের খেলা পাশাপাশি দুটো বেতের চেয়ার, টবে ক্যাকটাস এই যে দুজন তরম্নণ-তরম্নণী বসে আছে পরস্পরের জন্য কম্পিত হৃদয়ে – আজ থেকে দশ বিশ তিরিশ চলিস্নশ অথবা পঞ্চাশ বছর পর এরকমই আন্দোলিত হবে দুজনের হৃদয় পরস্পরের জন্য! নাকি এই তপ্ত হৃদয় নির্ভেজাল ভালোবাসা কিছুই থাকবে না আর – শীত-রোদ হয়তো সেভাবেই খেলা…
-
অনির্বাণ দীপ
মাহবুব সাদিক অমলিন কোনো এক পস্নুত প্রত্যুষে কেউ চেতনায় দিয়েছিল জ্বেলে এক অনির্বাণ দীপ – হয়তো তা ছিলো কোনো প্রাকৃত মুক্তার মতো দ্যুতিগর্ভ জ্বলজ্বলে কিছু – নাকি তাও ছিল ভোরের রোদের নিচে কচুপাতার আধারে জমা হিরের বিভ্রম! বাসত্মবের ভূত বলে শীতরাতে জমে-থাকা টলমলে শিশিরের জল! জানি সেই মৃদু দীপশিখা চেতনার জলে শুশুকের মতো ঘাই…
-
একে শূন্যে দশ
মোহাম্মদ সাদিক বৃক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বৃক্ষমানব নন এই জীবনে কোনো কিছুই চায় না যে তার মন জানার চেয়ে না জানাটাই নিজের কাছে পুণ্য ডাইনে বাঁয়ে যেদিক তাকান সবকিছুই শূন্য পথ ছিলো না পথের ওপর পথের ছবি দেখে তিন পৃথিবীর সবাই এসে নিজের নামটি লেখে এক পথিকের তিনটি মাথা তিন ভুবনে থাকে সব…