বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর

  • পাহাড়ের স্তব্ধতা

    পাহাড়ের স্তব্ধতা

    বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর আমার চারপাশে পাহাড়ের স্তব্ধতা। এই স্তব্ধতা কেউ ভেঙে দিক আমি চাই না। সকালবেলা, রোদ যখন গাছের পাতা রঙিন করে। আমি এক কাপ কালো কফি নিয়ে গরুর ঘণ্টার পিছু পিছু পাহাড়ের ঢালে চলে আসি। আমাকে ঘিরে ধরে পাহাড়ের স্তব্ধতা, কিন্তু পাহাড়ের মধ্যে নানা শব্দ আছে, সে সকল শব্দ কখনো পাখির ডাক। সে সকল…

  • এতো ঐশ্বর্য কেন

    বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর   তোমার দুই স্তনের সীমামেত্ম এতো ঐশ্বর্য কেন আমি দেখি আর ভাবি বিধাতা এতো ঐশ্বর্য কেন দিয়েছেন,   এক সময় ভাবতাম আঠারো হচ্ছে মহাকাব্য এখন নববুইতে পৌঁছে ভাবি মহাকাব্য কোনো কাজে লাগে না,   আমি যত মহাকাব্যের কথা ভাবি নিজেকে ঘৃণা করি আমি ভাষা ভুলে যাচ্ছি শব্দ ভুলে যাচ্ছি দুই স্তনের সীমান্ত…

  • শেষ ট্রেন

    শেষ ট্রেন

    আমি বৃষ্টির কথা ভাবি : বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টি অনেকটা দুঃখের মতো আমাকে জড়িয়ে রাখে। আমি বৃষ্টির কথা ভাবতে ভাবতে দুঃখের কথা ভাবতে থাকি। দিনগুলো বদলে যায়, বদলায় না দুঃখ। অজ্ঞতার চেয়ে বেশি অন্ধকার কোথাও নেই। শেক্সপিয়র থেকে শিখেছি। হয়তো দুঃখের বদল হয় না। যে-দিনগুলো হারিয়ে যায় সেই দিনগুলোই বেঁচে থাকে। মানুষ খারাপ কাজ করে,…

  • আসলে আমরা সবাই শ্লেভ

    আসলে আমরা সবাই শ্লেভ

    বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর   তুমি জানো কেন তোমাকে এখানে এনেছি? না। তোমার পেছনে দেখো একটা মাটির ঘর। মাটির ঘর? এখানে আমি জন্মেছি, এই মাটির বাড়িতে। বিল ঘুরে দাঁড়ায়, তারপর হাঁটা শুরু করে। আমিও পেছন পেছন হাঁটি। দুজনকে বিকেল ঘিরে ধরে। চারপাশে গাছপালা নিথর। পায়ের নিচে পাতার শব্দ। বিলের সঙ্গে আমার ভাব সম্পর্ক বিয়ে, এসবই আসেত্ম…

  • ওঠো, আমার নাওয়ে ওঠো

    বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর   ওঠো, আমার নাওয়ে ওঠো আমরা অনেকদূর যাব পদ্মা পেরিয়ে মেঘনা পেরিয়ে।   সারারাত নাওয়ে বাতি জ্বলবে ঝড় এলে বাদাম নামিয়ে দেব তুমি আমার পাশে গুটিসুটি হয়ে বসে থাকবে আর মাটির চুলায় ভাত বসিয়ে দেবে।   ওঠো, আমার নাওয়ে ওঠো আমরা অনেকদূর যাব অনেক অনেক নদী পেরিয়ে ছোটবড়ো নদী পেরিয়ে তোমার গলা…

  • বুর্জোয়ারা নিপাত যাক

    বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর   দেখতে তো প্রাচীন লাগে না। কত বয়স হবে? ষাট পঁয়ষট্টি।   সবই তো শেষ হয়। মৃত্যু আসে। পায়ে পায়ে চুপিচুপি। জানো তো চেনাজানা কত লোক মরে গেছে। সবকিছুর শেষ হয়। তুমি আর আমি রোজ একসঙ্গে কাটাচ্ছি। এবং রাত। আগামীকাল আমাদের চেনাজানার দু-বছর হবে।   ভালোবাসা যখন মরে যায় তখন কী থাকে?…

  • আমি মৃত্যুর কথা ভাবি

    বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর মৃত্যুর সঙ্গে বসবাস সহজ নয়। মৃত্যু একটা অপার্থিব অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতা প্রত্যহ ঘটে না। এই অভিজ্ঞতার বাস্তবতা যত বেশি এড়িয়ে থাকা যায়, তত জীবনযাপন স্বাভাবিক থাকে। বিকেলে ঘুরে বেড়ানো আমার নেশা। ভালোই লাগে গাছপালার মধ্যে ঘুরে বেড়াতে। একদিন আমি বেড়িয়ে ফিরেছি। আকাশ কালো হয়ে উঠেছে। হয়তো তুষার পড়বে। আমার গন্তব্যে পা ফেলার…

  • বিমূর্ত শিল্পে পরিব্রাজনা

    বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর সৈয়দ ইকবালের কাজে অ্যানালিটিক্যাল কিউবিজমের প্রভাব স্পষ্ট। তিনি এই পদ্ধতিতে ভলিউম বিশদ করেছেন, একই সঙ্গে ভলিউম যুক্ত করেছেন শক্তভাবে ছবির ফ্ল্যাট জমিনের সঙ্গে। এই পদ্ধতি তিনি ধার করেছেন তিন বিখ্যাত ফরাসির কাছ থেকে : পিকাসো, ব্র্যাক এবং নেজের থেকে। পরে তিনি নিজের মতো এই পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। অবজেক্টের কন্টুর আস্তে আস্তে লয়…

  • ইতিহাসের যমজ ভাইবোন

    বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর তোমার কথাটা মনে পড়ে : মরে গেলে তোমার পাশে আমাকে শুয়ে থাকতে দিও। এ হচ্ছে এক ধরনের দোয়া : ভাষা থেকে এই শব্দ কটি আলাদা করা, একটা দীর্ঘ সম্পর্ক কখনো যেন শেষ না হয়। এই সম্পর্ক থেকে বাড়িঘর হয়, গাছপালা হয়, সন্তান-সন্ততি হয়। সেজন্য মরে যাবার পরও তোমার পাশে শুয়ে থাকতে চাই।…

  • কাইয়ুম চৌধুরীর কল্পনাকুশলতা

    বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর কাইয়ুম চৌধুরীর কাছে নিসর্গ ব্যক্তিগত নিসর্গ, ব্যক্তিগত ঈশ্বরের মতো। এই বোধ তাঁকে বিশ্বস্ত করেছে ব্যক্তিগত নিসর্গের বাস্তবতার কাছে। ব্যক্তিগত নিসর্গের বোধ তাঁকে দর্শনের দিক থেকে তুষ্ট করেছে। এই নিসর্গ একটি জীবন্ত বাস্তবতা, যে-বাস্তবতা তাঁর প্রাত্যহিক জীবনের অভিজ্ঞতার মধ্যে বারবার ঘুরে ঘুরে এসেছে। জীবনযাপনের যন্ত্রণা, ব্যর্থতা, উদ্বেগ তাঁর ব্যক্তিগত; কিন্তু এই যন্ত্রণা, ব্যর্থতা,…

  • চাষাভুসো মানুষের স্বপ্ন

    বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর আমার বাবা অদ্ভুত, নম্র স্বভাবের চাঁদে পাওয়া মানুষ। চাঁদ উঠলে বাবা বাইরে চলে যেতেন, একা একা মাঠে ঘুরতেন, আর কবিতা বানাতেন। বাতাস উঠলেও তাই, বাবা বাতাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৌড়–তেন, আর কবিতা বানাতেন। বাবা অদ্ভুত স্বভাবের মানুষ। বাড়ির সামনে, রাস্তার পাশে, সুপারির বাতা দিয়ে তৈরি নামাজের স্থান। বাড়ি থেকে দূরে গাছগাছালি নেই,…

  • এই কবিতাটা কতোভাবে লিখি

    বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর লিরিক কবিতার অন্তর্ঘাতী চরিত্র নিয়ে আমরা কথা বলতে বলতে মধ্যরাত পার করি, কিংবা কফি খেতে খেতে আমরা জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের নিরাপত্তার অসম্ভব খিদের কথা বলতে বলতে ভোরবেলায় পৌঁছে যাই, কিংবা সুরাইয়া তোমার কি মনে আছে গুন্টার গ্রাসের কথা, কলকাতা থেকে ঢাকায় এসেছিলেন একদিনের সফরে, তাঁকে আমরা ধরে এনেছিলাম আমাদের সেন্টারে, তাঁর মুখে টিন…