মহীবুল আজিজ

  • ক্যাথারসিস এবং একটি সন্ধ্যা

    ক্যাথারসিস এবং একটি সন্ধ্যা

    অন্ধ্রের শ্রীধর ইধাপালাপ্পাকে দেখে ভাবনাটা এসেছিল। একখানা রঙিন পোস্টকার্ডের একদিকে তেলেগু ভাষায় লেখা ওর মায়ের চিঠি এবং অন্যদিকে বিশ^কর্মার মূর্তির ছবি। আমার জানা ছিল না পরদিনই বিশ^কর্মার পুজো, পূর্বদিন দেখেছিলাম মাঝারি সাইজের একটা ম্যারো কিনে এনেছিল সিটি সেন্টার থেকে। যাকে ঠিক চালকুমড়ো বলে তা এখানে এই ক্যামব্রিজে মেলা ভার। লন্ডনে গেলে বাংলাদেশি দোকানগুলিতে প্রচুরই মেলে…

  • বাংলায় ব্রিটিশ শিক্ষা-তৎপরতা এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান

    বাংলায় ব্রিটিশ শিক্ষা-তৎপরতা এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান

    মহীবুল আজিজ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের চার বছর বয়সে কলকাতা থেকে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয় – চার্লস লুসিংটনের দ্য হিস্ট্রি, ডিজাইন অ্যান্ড প্রেজেন্ট স্টেট অব দ্য রিলিজিয়াস, বেনেভোলেন্ট অ্যান্ড চ্যারিটেবল ইনস্টিটিউশন্স, ফাউন্ডেড বাই দ্য ব্রিটিশ ইন ক্যালকাটা অ্যান্ড ইট্স ভিসিনিটি। ততদিনে বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভূমি সংস্কারের পরিণতি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হয়ে জমিদারশ্রেণির প্রজন্মান্তর ঘটে গেছে। বস্তুত ভারতবর্ষে…

  • আনিসুজ্জামান : পরিমিতির প্রতীক

    আনিসুজ্জামান : পরিমিতির প্রতীক

    তখনো পর্যন্ত সামনাসামনি দেখা হয়নি, শুধু তাঁর স্বরূপের সন্ধানে পড়েছি। চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে সাহিত্যের স্নাতক শ্রেণির পাঠ্যে কাজে লাগাই আনিসুজ্জামান-রচিত গ্রন্থটি। চর্যাপদ, মধ্যযুগ, বাঙালি মুসলমান লেখকদের তথা বাংলাদেশের সৃজনশীল-মননশীল সাহিত্য ও সমাজের বিশ্লেষণে তাঁর লেখা গ্রন্থর্ভূত চারখানা প্রবন্ধ সত্যিকার অর্থেই ছিল দিকনির্দেশনামূলক। সেই বিখ্যাত লেখক টানা করিডোর ধরে হেঁটে যান ধ্যানী-মৌন এক ভঙ্গিতে আর আমরা…

  • কামিলা

    কামিলা

    যেদিন কামিলা লুন্ড এ-বাড়িতে এসে ঢোকে তখন তাকে দেখায় উজ্জ্বল আর প্রাণবন্ত। তার নামের শেষাংশ বিশ্বের একটি সেরা এয়ারপোর্ট সুইডেনের লুন্ডের কথা আমাদের মনে করিয়ে দেয় এবং আমরা সংগতভাবেই জিজ্ঞেস না করেও বুঝতে পারি ওর দেশ সুইডেন। সে যখন তার প্রিয় বান্ধবী স্পেনের ফিওনা ভেলভেডিয়ারের সঙ্গে উচ্ছলতা ছড়িয়ে গল্প করে তখন অক্টোবরের শীত-শীত দিনের বিষণ্ন…

  • ভালোবাসার মানুষ টনি মরিসন

    ভালোবাসার মানুষ টনি মরিসন

    ‘আমি কোনো গ্রাম বা কোনো সম্প্রদায় কিংবা আপনাদের জন্য লিখি না। কল্পনার নিতান্ত আত্মগত চর্চাও আমার কাজ নয়। আমার লেখালেখির কাজটাকে হতে হবে অবশ্যই রাজনৈতিক। এর অভিমুখ সেইটাই। সমালোচকদের মধ্যে আজকাল এমন একটা বাজে ধারণা চালু আছে, কোনো লেখায় রাজনৈতিক প্রভাব থাকলেই সেই লেখকের গায়ে কোনো না কোনোভাবে একটা দাগ লেগে গেল। আমার অনুভূতি ঠিক…

  • বিশ্বনাগরিকের স্থানীয় সংকট

    বিশ্বনাগরিকের স্থানীয় সংকট

    ইনানি যখন জেটির কাছাকাছি এসে পৌঁছয়, তখন ন্যাভাল অ্যাভিনিউর দিকটা থেকে আসা কিছু ফ্লুরোসেন্ট, কিছু সোডিয়াম আর কিছু মার্কারির সম্মিলিত আলোক পুরো এলাকাটাকে একেবারে উদ্ভাসিত করে দিয়েছে। সল্টগোলা ক্রসিংয়ের দিক থেকেই হতে পারে একটা লং-ভেহিক্যাল গজরাতে গজরাতে চলে যায়। নভো কি রিজেন্ট কি বিমান যে-কোনো একটা পেস্নন আসেত্ম নেমে আসে রানওয়েতে। গতি এবং শব্দ মিলিয়ে…

  • আল মাহমুদের কবিতা : সত্তার ভারমুক্ততার ভাষ্য

    আল মাহমুদের কবিতা : সত্তার ভারমুক্ততার ভাষ্য

    সিক্স মেমোজ ফর দ্য নেঙট মিলেনিয়াম-সিরিজের বক্তৃতায় ইতালো ক্যালভিনো লিখেছিলেন, চার দশককালের লেখালেখির প্রেক্ষাপটে একটা কাজই তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে – সত্তার ভারমুক্তি। মানবসত্তার আয়তন প্রভূত ভারে আক্রান্ত। তার সেই ভারাক্রান্ত অবস্থান থেকে, তার সামগ্রিক পরিপার্শ্ব থেকে, এমনকি হয়তো তাকে নিয়ে গড়া সাহিত্যের কাঠামো এবং ভাষা থেকেও ভার সরিয়ে নেওয়ার কাজটাই তিনি করতে…

  • জীবনের ভোক্তা ও দর্শক

    মহীবুল আজিজ আমরা তখন টগবগে তারুণ্যে ফুটছি। মধ্য আশির সেই উত্তাল তাপে আমরা পুড়ে যাই শুধু। যুদ্ধ তখনো আমাদের কাছে পুরনো বিষয় নয় যেহেতু যুদ্ধই ছিল আমাদের পুরাণ। তৎকালে অব্যাখ্যেয় চেতনা নামক কোনো এক আচ্ছন্নতার ঘোরে একটু-একটু করে আমরা পড়তে শুরু করেছি। চারদিকে, রাস্তায়-রাস্তায় ফুটতে থাকে ফুল – অজস্র আর রক্তময়। মুক্তিযুদ্ধ আরো তীব্রতা নিয়ে…

  • ছেলেটা আসলে মরতোই

    মহীবুল আজিজ মরস না ক্যান তুই! তুই মরলে আমার হাড়টা জুড়াইতো। তুই মরলে তোর দাদার কবরের পাশে তোরে খাদায়া আইসা আমি দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তাম। আকাশে-বাতাসে ছোট-বড় ঢেউ তুলে যেতে-যেতে আমেনার এই কথার টুকরো-টাকরা এ-বাড়ি ও-বাড়ি হয়ে বাড়ির পেছনের এজমালি পুকুরটার ওপর দিয়ে বিলের দিকে চলে যায়। তখন প্রখর রোদের বিলে অন্যের ক্ষেতে কামলা-খাটা…

  • যুদ্ধের উপন্যাস : টিন ড্রাম

    মহীবুল আজিজ সাহিত্যতাত্ত্বিক মিখাইল বাখতিন তাঁর রচনায় বলেন, ১৯২০-এর দিকে উপন্যাস তার নিজের পথ নির্মাণ করতে সমর্থ  হয় এবং এরপর থেকে উপন্যাস তার সেই পথকেই অনুসরণ করে চলতে থাকে। এর আগে উপন্যাসে যত গল্প-চরিত্র-ঘটনাই থাকুক, এর কেন্দ্রীয় আবেগ ও পরিচর্যা  কবিতাক্রান্ত ছিল। কাজেই এই পথ করতে গিয়ে উপন্যাসকে বেরিয়ে আসতে হয়েছে কবিতার বলয় থেকে। এক…

  • লব্ধ ভিক্ষুকসমগ্র

    মহীবুল আজিজ শহরে হঠাৎই ভিক্ষুকহীনতা দেখা দিলে সাদি খুব বিপন্ন বোধ করতে লাগল, কারণ তার একশ একজন ভিক্ষুক দরকার। এখন একদিনে এত ভিক্ষুক সে কোথায় পায়! অথচ ভিক্ষুক না পেলে তার সমূহ সংকট। তার মায়ের মনোবাঞ্ছা থেকে যাবে অপূর্ণ এবং এর পরিণামে হয়তো তার এবং তাদের সকলের জীবনের ভবিতব্য হয়ে পড়বে কালগ্রস্থ। এমন অবলম্বনহীনতার বোধ…