মাসুদ পথিক

  • সমালোচক

    ‘শূন্য’ এক ফুলের নাম অথবা ‘মন’ এক ভুলের নাম এই দুটি স্ত্রীর স্বামী যিনি তিনি ভেজা বেড়াল, তিনি কবি চাল নুন আর বাজারের থলে হাতে এঘর ওঘর করে না-করে ফুল ও ভুলের নিচে চাপা পড়ে মারা গেলেন তবুও তার বিপুল অমরত্বের অনুপ্রাস ঘিরে ব্যর্থতার সংসার, সফল সমাজ বাড়-বাড়ন্ত দুয়োরানি সুয়োরানির শ্রুতি ও মিথ আর আঙিনার…

  • কানাবিল ও লাঙল

    যে জমিনে, চাষ করি আমি, তার মালিক এক কানাবিল। সে বিভিন্ন সময়, ভিন্ন রূপে আসেন, জমিন দর্শনে। কানাবিলের বুকে, অফুরন্ত বক ওড়ে, আর জলচর পাখালি। আমার ছেলে অঋব, ও আমি রূপা আমন বুনতে বুনতে দেখি যে, জমির মালিক প্রাতঃভ্রমণে এসেছে। অঋব হাসতে হাসতে প্রশ্ন করে, বাবা এই নারীটা এমন হিংসুটে! জলের রেডিও বাজায় কেন? আমি…

  • বনচড়ুই, মা, অনর্থ

    মা তাওয়ায় রুটি সেঁকে দেন, আমরা খাই তিন ভাইবোন বসেছি কুনাঘরের দাওয়ায় কিছু বনচড়ুই উড়ে এসে বসেছে উঠানে প্রতিযোগীর মতো ধরতে যাই, আর আমরা উড়ে যাই গমক্ষেতের সম্ভাব্য হাওয়ায় আমরা ক্লান্ত হই একে অপরের কুৎসায় রটনায় মা হৃদপিণ্ড ভেজে দেন তাওয়ায় আমরা রক্তাক্ত হতে হতে খাই মায়ের হৃদপিণ্ড খেতে খেতে আমরাও বাবা মা হয়ে যাই…

  • আমাদের ধানজন্ম

    আমার ভেতরে আমি বুনেছি আউশ ধান প্রেম, তুমি খুঁজে পেলে ইতিহাসের ঘ্রাণ ইরি’রা বাহিরে করছে কোলাহল, আর বেঁচে যাওয়ার পূর্বে করি আত্মচিৎকার যদিও, ছেড়ে যায় পাখি, দূরে যায় প্রিয়জন বাজারে বিক্রি হয় সব তার – হাইব্রিড মন পাখির ঠোঁটে ধান, আদতে লাশ, অশ্রু বর্ধিত; অশ্রুতে ডুবে গিয়ে ভেসে ওঠা – আসলে আমরা মৃত এবং দীর্ঘ…

  • হিংসুক ও নিন্দুক

    মাসুদ পথিক আর, আমি জলে নামলাম, কুমির ও মাছেরা করলো তাড়া আমি আকাশে উড়লাম, পাখিরা করলো সীমানাছাড়া ফেসবুকে ঢুকলাম, নিন্দুকেরা বললো, এটা আমাদের পাড়া আমি শূন্যতায় ঢুকলাম, দেন, স্বজনেরা আমাকে করলো ঘরছাড়া ইদানীং, তাছাড়া লোকে আমার কবরের পাশ দিয়ে যেতে যেতে বলে, কাপুরুষেরাই কেবল যায় অকালে মারা

  • বাবা ২

    মাসুদ পথিক   অথচ আমার বাবা ছিলেন নক্ষত্র-ব্যবসায়ী,   তিনি আমার খেলার জন্য কত তারকা নিয়ে আসতেন, আর মার্জারি।   দিগন্তের কিনারায় আমাদের বাংলোবাড়িটি কারো চোখেই পড়েনি?   বন্দুকধারীরা জানাল বাবা একজন ইয়াবা-ব্যবসায়ী! হায়! এখন আমি আমরা শোক রান্না করে খাই। আর শোক বিক্রি করি, এ-পাড়ায় ও-পাড়ায়।   ফলে উপচে পড়েছে সহস্র বছরের ক্রেতারা। তারাও…

  • জলিধান

    মাসুদ পথিক   আগাছার বিপরীতে যে হারানো শস্যের বিহবল মুখ তার নাম জলি, জলি চাষার মেজো মেয়ে   আমি চুপিচুপি দেখেছি তার মনোলোভা বুক পুষেছি তার গোপন অসুখ   ওগো ধান, ওরে জলি তুই মাঠের শেষ গান তবে কে আঙিনা মাড়িয়ে নিয়ে যায় তোর সোনা রূপ   আমি আজ মূক, আমি নয়তো মাঠের বিষণ্ণ মুখ

  • বিবাহিত শিক্ষয়িত্রী

    মাসুদ পথিক   এই যে ভূগোল, অতিসুন্দর! ক্লাশের পেছন থেকে দেখতে বিবাহিত শিক্ষয়িত্রীর গলায় দ’মগ্ন, বর্ণমালা একী! নেই কোনো প্রসাধন যার বাহিরে, ভেতরে একরোখা আলো   হ্যাঁ, ভূগোল ক্লাশে থাকে রহস্য টিলা, দুটি অক্ষরের কোমলভারা দুঃখ ঊরুসন্ধির বারান্দায় আমি ফেল করা ছাত্র এক, আর বন্ধুরা লুকিয়ে তাকিয়ে থেকে থেকে আলোতে গেছে মারা, পালিত লাশের উজ্জ্বলতায়…

  • ভূমিহীন চাষা

    মাসুদ পথিক   এই যে মাথায় বয়ে নেওয়া ধানের বোঝা আর সারিবদ্ধ চাষার সামনে দোলাচল আগামী যা আজ আর হয় না দেখা   আহা রে, বিরান করে মাঠ, চলে যায় চাষা অবসর-আক্রান্ত ক্ষেতে পড়ে থাকে, কূট – অংক ও পাখি আর কতো না অচেনা ক্ষুণ্ণিবালা কুড়ায় ঝরাধান   আমি ওদের শিশুকাল হতে চিনি অথবা চিনি…