হাসান হাফিজ

  • ভাঙাপোড়া জোড়া পঙ্ক্তি

    হাসান হাফিজ ১. ডুবে যাচ্ছি কবিতা-শব্দের খনি, কাব্যলক্ষ্মী পাতালে তোমার জানি না সামনে আছে কী প্রচণ্ড বাধাবিঘ্ন শত্রু পারাবার ২. শব্দের পিপাসা তীব্র, এত ঘন, আগে তা জানিনি কোনোদিন বিলম্বে জেনেছি, তবু স্বীকার করছি তার মাদকতা সুদমুক্ত                                                           ঋণ ৩. যেতে সে চেয়েছে যাক, গিয়ে যদি সুখী হয় আপত্তি কিসের আমার সান্নিধ্য হয়তো ওর কাছে…

  • দরিয়া-গল্প

    এই দরিয়া ওই দরিয়া  মধ্যিখানে তুমি চারদিকেতে অকূল পাথার নাই পালানোর ভূমি জলের তলে অল্প আঁধার ডুবলে উপায় কি! নাই রে উপায় নাই রে পাগল বনে যাই রে এক দরিয়া তোমার যদি  অন্য সাগর আমি কোনখানেতে থামি কোনখানে জল ঘূর্ণিমায়া কুহকভরা পাতালচুমুক সেচতে সেচতে থামি  সাগর তুমি সাগর প্রকৃতিলীন বসুন্ধরার আর্তনাদেই জাগর রাত পোহালে একাকিত্বের…

  • কবি-সম্পাদকের প্রয়াণে শোকপঙক্তি

    (সম্পাদক আবুল হাসনাত ও কবি মাহমুদ আল জামান। একই বৃন্তে যুগল কুসুম) ধ্যানেজ্ঞানে কায়মনে আজীবন ছিলে তুমি নিঃসঙ্গ উদ্ভিদ ব্রতী ছিলে সম্পাদনে, একেলা নির্জন কবি তপস্যামগন, নিভৃতিপ্রিয়তা ছিল চিরসঙ্গী যেন শান্ত নিঃশব্দ ঘুঙুর হয়তো কোনো বহতা নদীর নাম, মর্মরিত দোলায়িত হাওয়ার বেহালাছড়ে বেজে উঠছে তোমার না-থাকা, আকস্মিক মৃত্যুর ছোবল এত ভয়াবহ কেন হয় কেন এই…

  • দীপ্র বাতিঘর তুমি

    পতাকায় মিশে গেছে পবিত্র রক্তের ধারা এই দায় মোচনের পূর্ণতা অর্জন করা সম্ভবপর নয়, লাল সূর্য সে-কারণে এত গাঢ় উচ্চকিত লাল ফেনিল সাগরে আছে দেশচেতনার ঢেউ আবেগে উত্তাল পলিমাটি জনপদ ভোর নদী মাঝি নাও হালট লাঙল দোয়েলের মগ্ন শিস, শাপলার উচ্ছ্বসিত ফোটা স্বপ্নে ও প্রত্যয়ে ঋজু সবকিছু হতে পারলো কীভাবে কেমন, অঙ্গীকারে স্বপ্নে ও সংগ্রামে…

  • নিবৃত্তির কোথায় সাকিন

    হাসান হাফিজ   পাহাড় প্রান্তর কেন ডাক দিচ্ছে উতরোল? এই ডাকে প্রণয়ের ভাত নুন লাবণ্য রয়েছে, উপেক্ষা কীভাবে করি? চাইলেও সম্ভবপর নয়। জাগতিক গ্লানির গ-ূষ ভাপ ইতিউতি ছলাকলা অস্বীকার করা যায় না। আষ্টেপৃষ্ঠে ছেঁকে ধরে তারা। বলছিলাম প্রণয়ের কথা। পরিণয় হবে না জেনেও কেন আর্তি দীর্ঘশ্বাস? চুঁইয়ে চুঁইয়ে রক্তের ক্ষরণ? নির্যাস জীবনমধু অনেক তো পান…

  • সন্নিধান : অনন্ত খনিজ

    হাসান হাফিজ   সুরলোকে আলোর মূর্ছনা আছে আত্মলয়ও আছে এ বন্দিশ কোনোদিনই ফুরাবার নয় রাগমালা ভুল (?) করে তোমাতে মজেছি, ভজন সাধন সিদ্ধি সে-কারণে হলো না হলো না! ধ্রম্নপদ সংগীতে আছে অনন্ত খনিজ সূক্ষ্ম মিহি অন্তরীণ বেদনাদহন ঐশিতার ধীরলয় ওঠানামা তান মর্মের মরমে পশে নতুন চরের মতো সুরলোক আবিষ্কার করি, মৃত্যুস্বাদ করি পান তারিয়ে তারিয়ে…

  • নির্বাসন দিচ্ছো দাও

    হাসান হাফিজ   আদিভাষা শরীরেরই শুধুমাত্র নয়। চৈতন্যেরও একই ভাষা। মনেরও তাহলে? এই কথা পুনরম্নক্তি দোষে দুষ্ট, তাও যাই বলে নিরঞ্জন প্রভু জানে, তোমারই তপস্যা আমি করছি আড়ালে   এই পঙ্ক্তি রচনায় উপবাসে তোমারই উপমা মনে-মনে যাচ্ঞা করে শর্তহীন ক্ষমা জানি না করবে কি-না সুন্দরী পরমা   না-ই করো দুঃখ নাই এ-কথা জানাই বিরহের প্রস্তাবনা…

  • দেখে নিয়ো

    হাসান হাফিজ   চিন্তা নিয়ে পড়েছি বিপাকে। মগজে সে ঘূর্ণিঢেউ তোলে, নেচে যায় ছন্দোহীন, উথালি-পাথালি জ্বরে তৈরি করে শরীরে কাঁপুনি রিখটার স্কেলে যার মাত্রা বড়ো বেশি এভাবেই হতে থাকে জীবনীশক্তির ক্ষয় কমে আসে আয়ু, চারিদিকে অশান্তির বায়ু বেয়াড়া সে-রক্তচাপ বাড়তে বাড়তে আশা ছাড়তে হয়। জীবনের, সমৃদ্ধির। নদী ভাঙে তীর। ভাঙতে ভাঙতে নিরাশ্রয় ফুরিয়ে শূন্যতা ছোঁয়…

  • দুটি কবিতা

    হাসান হাফিজ   দীর্ঘ হও লানত বর্ষণ করো   ‘পিপাসা’ শব্দটি আমি আক্রোশে ও ভালোবেসে ছিন্নভিন্ন করে ফেলি, পেতে চাই ঈষদুষ্ণ জল কিন্তু এই প্রচেষ্টা নিষ্ফল, মরীচিকা ভ্রম শুধু দীর্ঘ হয়, মোহনীয় নয় এর কোনো গূঢ় অর্থ মরতবা রয়েছে নিশ্চয় আমি এই প্রচেষ্টা জীবনীশক্তি সহিষ্ণুতা ক্ষয় করে করে আরো নিঃস্ব ভারাতুর হই তারপরও বেগানা প্রান্তর…

  • বাংলাদেশে চারুকলার ৫০ বছর শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর স্মৃতিচারণ

    হাসান হাফিজ তার মৃত্যুতে বাংলাদেশের চারুকলার জগৎ অনেকটাই এতিম হয়ে গেছে বলা চলে। আমাদের গ্রেট মাস্টারদের অন্যতম ছিলেন মহান এই শিল্পী। প্রগতির লড়াইয়ে তিনি সবসময় ছিলেন অগ্রসেনানী। জাতির মননে তিনি জারিত করে চলেছিলেন নান্দনিকতার চেতনা, রুচি ও সৌন্দর্যবোধ। এই দেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও মননের অঙ্গনে তিনি ছিলেন অভিভাবকপ্রতিম ব্যক্তিত্ব। রীতিমতো একটি প্রতিষ্ঠান। ৮২ বছর…

  • পিপাসা ও পরম্পরা

    হাসান হাফিজ   পলেস্তারা খসে পড়ছে ঝুরঝুর গোপনে ধরেছে ক্ষয়, নড়বড়ে ভিতর-কাঠামো ঘুণপোকা শব্দ তোলে কিরি-কিরি অবিশ্রাম গর্ত খুঁড়ে চলে… স্রোতস্বিনী নদী ছিল অহংকৃত বহমান তন্বীদেহ ছন্দেলয়ে সাবলীল কথা কইতো মূর্ছনায় ছলোছল আকাশে উড্ডীন মৃদু মেঘমালা নম্রতা নিঝুম কষ্টে হতো আরো একা সেই নদী তলপেটে অসহবিসহ ব্যথা অনুতাপ কর্কট রোগের ক্লান্তি দুঃখধস বুকে নিয়ে সহ্য…

  • দুটি কবিতা

    হাসান হাফিজ     ডুবে গেছে কুসুমিত চাঁদ   অনুরাগ কী সূক্ষ্ম কোনো ব্যথা? সুনিপুণ লতিয়ে সে ওঠে ভালোবেসে আষ্টেপৃষ্ঠে নিজেকে জড়ায় জাগরণ ভিন্ন কোনো গত্যন্তর নাই যে-ভুবনে ঘুমের বন্দর দূরে অত্যন্ত সুদূরে এ জীবনে ধারেকাছে পৌঁছানো দুষ্কর। অনুরাগে হয়তো কোনো লুকোনো চুরোনো পাপ স্মৃতিভ্রষ্ট ভাপও কিছু সংমিশ্রিত আছে ভালোবাসা পুণ্য জলে তাতে শুদ্ধ পরিস্রুত…