আনন্দ-বিষাদ আর নিমগ্নতার কবিতা

‘কবিতার দরজায় কড়া নেড়ে চলেছি’ – এইসব অনুভব-এর একটি কবিতা (‘আনন্দের ভৌগোলিক অবস্থান’) এই কটি কথা দিয়ে শুরু হয়েছে। শেষ হয়েছে দুটি পঙ্ক্তি দিয়ে, যাদের সঙ্গে শুরুর কড়ানাড়ার একটা গভীর যোগসূত্র আছে : ‘নিঃসঙ্গ সময়ের আবর্তে খুঁজি/আনন্দের ভৌগোলিক অবস্থান।’ কড়া যে আহাদুজ্জামান মোহাম্মদ আলী ভুল ঠিকানায় এসে নাড়েননি, তা এই বইতে সংকলিত কবিতাগুলি পড়লে বোঝা যায়। আরো বোঝা যায় সময়টা তাঁর খুবই নিঃসঙ্গ, কিন্তু নিঃসঙ্গতায় পীড়িত হতে হতেও তিনি আনন্দকে খুঁজেছেন, জীবনানন্দকে, যার ভূগোলটা যদিও খুঁজে পাওয়া কঠিন। কবিতাটির শেষ ও শুরুর মাঝখানে ‘গোধূলির মøান আলো’ উঁকি দেয়, ‘বিষণ্নতার ছায়া’ সর্বত্র বিছিয়ে থাকে, এবং আনন্দের গান গাওয়ার দিন যে কবে শেষ হয়েছে, সেই কথাটাও কবি অকপটে জানান। একটা যে বিষণ্ন ছবি তিনি আঁকেন জীবনের, সময়ের, তার অন্তে আনন্দের প্রকাশ ঘটুক, তিনি তা চান। যে মেজাজটা এই চাওয়া-পাওয়ার,

আনন্দ-বিষাদের দ্বন্দ্বে প্রকাশ পায়, তাকে রোমান্টিক বললে অত্যুক্তি হবে না, যদিও রোমান্টিকতাকে এই যুগ সন্দেহ করে, বাস্তবের কঠিন সব আঘাতের সময় তা অপ্রকৃত হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এইসব অনুভব-এর প্রায় শ’খানেক কবিতা পড়লে, তাদের ভাব ও ভাবনার জগৎটায় ঘুরে বেড়ালে দেখা যাবে, রোমান্টিক মেজাজটাকেই তারা প্রাধান্য দেয়, যদিও মাঝে

মধ্যে কিছু কবিতায় বাস্তবতার বোধগুলি প্রবল। ইংরেজ রোমান্টিক কবি পার্সি বিশ শেলি (১৭৯২-১৮২২) একটি কবিতায় লিখেছিলেন, ‘আমাদের মধুরতম গানগুলি সেই, যা সবচেয়ে দুঃখের চিন্তাগুলি বলে।’ আনন্দ-বিষাদের সমীকরণটা মেলাতে শেলি চেষ্টা করেছেন, রোমান্টিক অন্যান্য কবি করেছেন। আহাদুজ্জামানও করেছেন। সত্যিকার যারা রোমান্টিক, তারা এই চেষ্টাটাকেই গুরুত্ব দেন, প্রাপ্তিটা অনেক দূরের বলে। কিন্তু যখন সমীকরণটা তাদের হাতে ধরা দেয়, যার স্থায়িত্ব এতই অল্পসময়ের যে শুধু অনুভবেই তার স্পর্শ থেকে যায়, একটা গভীর জীবনসত্য হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তারপর মিলিয়ে যায়। এই মুহূর্তটা এপিফ্যানির। এর সন্ধানে কবিরা দিনরাত কাটিয়ে দেন।

রোমান্টিক কবিরা একটা যুগের সৃষ্টি, যে যুগটা সহজ-সরল গ্রামীণ জীবনকে অধীনস্ত করা নগরভিত্তিক, যান্ত্রিক, বস্তুকেন্দ্রিক আরেকটি প্রবল যুগের উত্থানের সময়ের, স্বল্পকালের। কিন্তু তারা ঠিক সেই যুগেরই নন, তারা সব যুগেই আছেন। যখনি বস্তুর পীড়নে কল্পনা বাধাগ্রস্ত হয়, নগরের দন্ত-নখরে অরণ্য ছিন্নভিন্ন হয়, একাকিত্ব, নৈঃসঙ্গ্যে মানুষ পীড়িত হয়, রোমান্টিক কবিরা হারিয়ে যাওয়া সেই সময়ের, সংযুক্তির অনুভবগুলি তুলে ধরেন। তাঁরা বিষাদে ক্লিষ্ট হন, কিন্তু আনন্দকে খোঁজেন – আনন্দ যে আছে, অন্তত সেই কথাটা ঘোষণা করেন। আর অন্তর্মুখী, আত্মসন্ধানী, নিমগ্ন। তাঁরা প্রেমকে, সৌন্দর্যকে, সৌন্দর্যের নানা স্পর্শকে ভাষা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁদের ভাষায় অনাবশ্যক জটিলতা নেই, আছে প্রকাশের আকুলতা; তাঁদের উপমা-উৎপ্রেক্ষায় বিমূর্ততা নেই, আছে অনুভবের তীব্রতা। তাঁরা মৃত্যুকে নিয়ে ভাবেন; শূন্যতা-অপূর্ণতা-নিঃসঙ্গতা  তাঁদের নিত্যসঙ্গী, কিন্তু তাঁরা চোখ রাখেন অসীমে, অথবা দূরে কোথাও। আহাদুজ্জামানের কবিতার ভুবনটা এই বর্ণনার কাছাকাছি। তিনি জানান, ‘অন্তহীন পথ পরিক্রমায়/ আনন্দের সাথে দুঃখের দেখা হয়/ সখ্য হয় না কখনো’ (দুঃখ); ‘ভুলে যাই সব ব্যর্থতা বঞ্চনা আর/ শোক তাপ হানা দিনের কথা,/ রাতের গভীরতায় রোমাঞ্চ লাগে,/ সৃষ্টি হয় অতীন্দ্রিয় আত্মীয়তা’ (অতিন্দ্রীয় আত্মীয়তা), ‘তোমার চোখ মৃত্যুর স্বপ্ন দেখে,/ তোমার চোখ বেলাশেষের গানে কথা বলে’ (রশ্মি), ‘শোক রূপান্তরিত হয় কবির ছন্দময় শ্বাসে,/ কবি দৃপ্ত উচ্চারণ করেন গভীর বিশ্বাসে’ (শোকময় শ্লোক), ‘কবি ঘুরে ঘুরে একা এই কাজ করে,/ তবু বৃক্ষ-পাখি-ফুল যদি আনন্দ ফিরে পায়’ (কবি ঘুরে মরে)। এই কবিতাগুলিতে এবং আরো অনেক কবিতায় আহাদুজ্জামান দুঃখ-আনন্দ, শোক-তাপ-রোমাঞ্চ ইত্যাদির মতো অনেক বৈপরীত্যকে মেলাতে চান; কিন্তু তাঁকে স্বীকার করতে হয়, তা হয়তো সম্ভব নয়, অথবা সম্ভব শুধু অনুভবে। কিন্তু তাঁর স্বপ্নগুলিকে শব্দে প্রকাশ করার প্রয়াসের মতো (‘সখ্যের সম্ভাবনা’) চেষ্টাটাই জরুরি, কারণ যতক্ষণ এই চেষ্টাটা তিনি করে যান, তিনি জানেন, তিনি তাঁর অনুভবের কাছে বিশ^স্ত থাকেন। এই বিশ^স্ততা একজন কবির জন্য জরুরি।

একজন রোমান্টিক কবির ব্যক্তিসত্তা তাঁর কবিতাসত্তার প্রকাশের পেছনে একটা বড় ভূমিকা রাখে। আহাদুজ্জামানের ব্যক্তিসত্তাও নানা কবিতার প্রত্যক্ষে-পরোক্ষে ছায়া ফেলে। তাঁর একটা বড় পরিচয়, তিনি সাংবাদিকতার অধ্যাপক, মিডিয়াকে তিনি তাত্ত্বিক আর প্রায়োগিক দুই মাত্রাতেই ঘনিষ্ঠভাবে চেনেন। ব্যক্তিজীবনে একাকিত্ব এখন তাঁর সঙ্গী, কিন্তু তাঁর কবিসত্তা একে সহনীয় করেছে তাঁকে কবিতার পথে পরিব্রাজক করে। সাংবাদিকতার অধ্যাপক হিসেবে তিনি পৃথিবীটাকে বাস্তবের রংহীন কাচ দিয়েই দেখেন, দারিদ্র্য থেকে বর্ণবাদ অনেক বিষয় তাঁকে উত্তেজিত করে। কোভিড মহামারির দুটি বছরের অকল্পনীয় দুর্দশার সময় সকলের মতো পার করে তাঁর মনে হয়েছে এই সময়টা আতঙ্কের। ‘এক সাংবাদিকের চিঠিতে’ তিনি আরো বিস্তারে আতঙ্কের এই সময়টার বর্ণনা দেন। আমরা বুঝি, তাঁর ব্যক্তিসত্তাটি কখনো মানুষের দুর্দশায় কাতর হয়, কখনো একটি শিশুর মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ হয়। কিন্তু তাঁর কোনো কবিতায় পৃথিবী বদলানোর ডাক নেই; পথে নামার, দুঃস্বপ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ক্ষমতার, প্রতিষ্ঠানের অথবা ব্যক্তির কাছে হিসাব দাবি করার উল্লেখ নেই। অর্থাৎ সমকালের স্খলন-পতন নিয়ে তিনি চিন্তা অথবা কাজের সক্রিয়তাকে প্রধান করেননি। তিনি সেই মেজাজের কবি নন। তিনি যা করেন, পতিত সময়ের একটা ব্যবচ্ছেদ করেন, নিরুত্তাপ নিস্পৃহতায়।

একসময় ভাবতাম চে’র মৃত্যু তাকে মৃত্যুঞ্জয় করে দেয়,

মিছিলে মিছিলে সহস্র হাত উত্তোলিত হয়,

প্রতিবাদে প্রতিধ্বনিময় হয় বিদ্রোহী বাতাস

. . .               . . .               . . .

সেই দীপ্ত দৃষ্টি এখন দূরীভূত হয়েছে দৃশ্যপট থেকে

নড়বড়ে সাঁকো ধরে সামান্য পথও এগোনো যাচ্ছে না

(চমৎকার চিত্র)

কবির মতে, এই পিছিয়ে পড়া, এই আত্মসমর্পণ করার মূল কারণ ‘কর্পোরেট ব্যবসার’, অর্থাৎ পুঁজিবাদের বিকাশ। এর প্রভাবে চে’ এখন মানুষের বিপ্লবী চেতনায় না থেকে ‘ফ্যাশনের বস্ত্র সজ্জা’র অংশ হয়ে গেছেন। এই বিচলন কবিকে নিশ্চয় ক্ষুব্ধ করেছে, কিন্তু তিনি একে হয়তো পুঁজির বিকাশের এক স্বাভাবিক পরিণতি বলে ধরে নিয়েছেন। কবিতার শিরোনামটিতে বক্রোক্তি এবং আয়রনির প্রকাশ ঘটেছে। কিন্তু তিনি এর বাইরে আরেকটা বিপ্লবের ডাক দেননি। ক্ষোভের কোনো উচ্চকিত প্রকাশ ঘটাননি। কোনো কোনো কবিতায় তিনি একজন সাংবাদিকের মতো যা দেখেছেন, তার একটা বর্ণনা করে যান :

বর্ণবাদী, বুটের দর্প দেখল

‘সভ্যতম’ দেশের মানুষ,

লুটিয়ে পড়া কৃষ্ণাঙ্গের ঘাড় চেপে ধরে

শে^তাঙ্গের নির্মম হাঁটু।

. . .               . . .               . . .     

বর্ণবাদী ক্রূরতার কাছে

হার মানে করোনার ক্রূরতা . . .

(হার মানে করোনা)

কবিতাটি ২০২২ সালের ২৫শে মে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা শহরে জর্জ ফ্লয়েড নামে এক কালো লোকের গলার পেছনটা হাঁটুতে চেপে ধরে ডেরেক শভিন নামে এক পুলিশকর্তার তাঁকে মেরে ফেলার ছবি তুলে ধরে; কিন্তু এর প্রতিবাদে সারা যুক্তরাষ্ট্রে এবং বিশে^ যে এক অভূতপূর্ব আন্দোলন শুরু হলো, যাকে ব্ল্যাক লাইভস মেটার বা বিএলএম নামে অভিহিত করা হলো, তার উল্লেখ নেই, কারণ কবির কাছে ঘটনাটাই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মনুষ্যত্বের চূড়ান্ত অবনমনকেই ফুটিয়ে তোলে। এমনিভাবে, আরেকটি কবিতায় তিনি লিখেছেন, কিভাবে সারা শহর জুড়ে ভয় ছড়িয়ে পড়ছে, যে ভয় মানুষের মুখে মুখে বিস্তার লাভ করে ক্রমশ ডালপালা বিস্তার করছে। একসময় কবি লিখলেন :

অদ্ভুত উদাসীনতায় শঙ্কাকুল হয়ে আছি আমরা

কেবলি ভয়ের কথা বলে বাড়িয়ে চলেছি ভয়;

অথচ ভয়ের আবহ থেকে মুক্তির

আবশ্যক আয়োজন নেই, মানসিক প্রস্তুতি নেই …

(ভয়)

এই নিস্পৃহতা কি এজন্য যে, ভয়কে – তা এর উৎপত্তি যেখান থেকেই হোক, এবং এর প্রকাশ যাই হোক – আমরা স্বাভাবিক বলে মেনে নিয়েছি? এই কবিতাতেও তিনি কোনো সমাধান দেননি, অথবা যাকে মিডিয়ার ভাষায় বলে ‘ফলোআপ’, সেদিকে যাননি। কারণটা কি এই যে, কবি যে অনুভূতিগুলির প্রকাশ ঘটিয়েছেন এই কবিতার বইটিতে, সেগুলি অন্তর্মুখী, বহির্মুখী নয়? বাইরেটা যতই কষ্টকর, উত্তেজক অথবা আকীর্ণ হোক না কেন, তিনি এর স্বরূপটা, এবং হয়তো উৎপত্তিটাও, জানেন বলেই নিজের কাছেই এর একটা ব্যাখ্যা চান। হয়তো সেই ব্যাখ্যা তাঁকে এর অন্তে নিয়ে যাবে।

কবি হিসেবে আহাদুজ্জামান তাঁর কণ্ঠকে উচ্চকিত হতে দেননি। পাঠককে সম্পৃক্ত করে কোনো মিলিত উচ্চারণ তিনি দেননি। তিনি বরং অনেক কবিতায় আত্মকথনে, নিজের সঙ্গে কথোপকথনে লিপ্ত হয়েছেন। অনেক কবিতাই কিছু গাঢ় অনুভূতি থেকে উৎপন্ন। বাস্তবের আঘাত তাঁকে বিচলিত করেছে। কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত নিজের অনুভূতিরই দ্বারস্থ হয়েছেন। কখনো সান্ত্বনা খুঁজেছেন, কখনো একটা বিকল্প দিয়েছেন। তিনি জানেন, ‘অনিশ্চিত সময় অতিক্রম করছি আমরা -/ পৃথিবীর প্রান্ত থেকে প্রান্তে ছড়িয়ে যাচ্ছে শঙ্কা,/ আমরা জানি মৃত্যুর সাথে অবস্থান করি আমরা’ – কিন্তু শেষ পর্যন্ত :

আরও আলো চাই ভুবনে, আরও আয়োজন চাই,

শঙ্কা নিয়ে শঙ্কা নয় – সীমাবদ্ধতা নয়

নিঃশঙ্কচিত্তে মেঘমুক্ত আকাশের দিকে তাকাতে চাই,

তোমার হাত ধরে অনেক দূর চলতে চাই।

(শঙ্কার ভিন্ন মাত্রা)

বাস্তব পৃথিবীর শঙ্কা ও সীমাবদ্ধতা সমাধান পায় প্রেমে। কবিতাটি এই বইয়ের অনেকগুলি অনুভূতিকে একটা সুতায় গেঁথে একটা সমীকরণের দিকে তাদের নিয়ে যায়। বলা যায়, বাইরের পৃথিবী এবং ভেতরের ভুবন – কবি যে দুই মাত্রায় বিচরণ করেন, তাদের একটা সন্নিপাত, সীমিত হলেও, পাঠক লক্ষ করল।

তবে, একথা অনস্বীকার্য যে আহাদুজ্জামান তাঁর নিমগ্ন, অনুভূতিপ্রবণ মনের কাছেই বেশি বিশ^স্ত, রোমান্টিক কবিদের ক্ষেত্রে যা হয়। তাঁর কবিতায় প্রেমের প্রকাশ বিচিত্র – প্রেম থাকে প্রেমিকার রূপকে ধারণ করে অথবা তার অনুপস্থিতিতেও, এমনকি তার নামহীনতায়। অনেক কবিতা পড়ে মনে হতে পারে, তিনি প্রেমকে শুধু কল্পনায় অনুভব করছেন, সুতরাং প্রেমিকাকেও। আবার কোনো কোনো কবিতায় প্রেম শারীরিক একটা অবয়ব নিয়ে আসে, চমৎকার কিছু চিত্রকল্পে প্রকাশিত হয় :

বৃষ্টির ফোঁটা তোমার মুখে

বিন্দু বিন্দু জমে ছিল,

ভেজা চুল তোমার কপোলে

নেমেছিল রেখা হয়ে,

আকাশ থেকে নেমেছে যেন

এক খণ্ড মেঘ আমার ঘরে

                             (জলসিক্ততা)

‘অক্ষমতা’ কবিতায় প্রেমকে ছুঁয়ে দেখতে না পারার কষ্ট আছে, ‘উদ্ভাস’ কবিতায় আছে প্রেমিকার সঙ্গে বিচ্ছেদের কথা। ‘তোমার সঙ্গে শেষ দেখা হল বিমান টার্মিনালে’, ‘উদ্ভাস’ কবিতাটি এভাবে শুরু হয়। এবং পাঠক জানতে পারেন, কবি অনেক কথাই তার সঙ্গে বলতে পারেননি। এখন, স্মৃতিতে সেই বিচ্ছেদের মুহূর্তে ফিরে গিয়ে তাঁর মনে হয়, যেসব কথা সেদিন বলা হয়নি, সেগুলি যেন স্পন্দমান হচ্ছে।

যদিও কবিকে ‘বিরলপ্রজ’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে বইটির ভিতরের ফ্ল্যাপে, তিনি যে প্রতিদিন লিখতে চেষ্টা করেন, একটি কবিতায় তা জানা যায়। আমরা দেখতে পাই, কবি হিসেবেই যেন নিজেকে দেখতে তাঁর পছন্দ। ‘প্রতিটি কবিতা জন্ম নেয় দহন থেকে’, তিনি জানান (আর কতটা ক্ষরণ প্রয়োজন) এবং কবিতার শেষে এসে বলেন, ‘আমি দেখতে চাই তোমার তৃপ্তির জন্য আর কতটা ক্ষরণ প্রয়োজন।’

এইসব অনুভব-এর একটা বড় গুণ এর পরিমিতিবোধ। অযথা একটি শব্দও কবি ব্যবহার করেননি; অতিশয়োক্তি নেই, অতিকথন নেই। কবিতাগুলি নিটোল, যেন প্রতিটি একটি জীবন্ত ছবি।

এইসব অনুভব এক পুরনো কবির নতুন আবির্ভাবের একটি চমৎকার স্মারক।