নিরঞ্জন ঘোষালের অপেরা দলে যোগ দেওয়ার পরই নামটা পেয়েছিল সুরবালা। এ-নামের সঙ্গে মিলিয়ে পরে দলের নাম পাল্টে গেলে প্রথমে একটু কানাঘুষা ওঠে। কিন্তু ওসবে পাত্তা না দিয়ে সে-ই এখন ‘দ্য নিউ সুরঞ্জন অপেরা পার্টি’র প্রধান নায়িকা। থানাঘাটের জোড় তালগাছের নিচে অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে সেই সুরবালা। দাঁড়িয়ে ঠিক নয় – চোখে-মুখে রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে অপেক্ষা। ওর বিরক্তিকে তোয়াক্কা না করে ঘাটের কাছে ভিড় করছে কিছু মানুষ। যারা ওকে নায়িকারূপে চেনে দূর থেকে ওর জৌলুস দেখছে হাঁ করে, কেউবা চোখের লালসায় ভিমড়ি খেয়ে পড়ছে। অন্যদিন এসব খুব উপভোগ করলেও আজ সুরবালার কী যেন হয়েছে! ক্রমেই যেন অস্বস্তি বাড়ছে।
সুরবালার সঙ্গে ওর সখী মালতী। আর খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে ভুবন বাদ্যকার। এইমাত্র চুলে সিঁথি কেটে সেলুন থেকে বেরিয়ে এদিক-ওদিক কাকে যেন খুঁজছে সে – ওর পিঠে পুরনো একটা ব্যাগপাইপ। অপেরা দলের পালা ছিল তখলপুরে। এই তিনজন বাদে বাকি সদস্যরা সেখান থেকে এতক্ষণে রওনা হয়েছে বোধহয়। ওদের সঙ্গে থাকার কথা রসিকলালের – যে কি না নদীর ও-ধারের চর সোনারামপুর থেকে বায়না এনেছে। সেজেগুজে বেরিয়ে আসার সময় এমনটাই শুনে এসেছিল – অথচ রসিকলালকে ওরা কেউ চেনে না।
ভাদ্র শেষ হয়েছে কী হয়নি। মেঘের ভারে আকাশ অনেকখানি নিচু। সুরবালার পায়ের কাছে হাওয়ায় ফুঁসছে নবগঙ্গা নদী। নদীর চিতোনো-চওড়া বুক তবু হাঁ করে গিলে খেতে চাইছে মেঘের কালো আকাশটা। অনেকদিনের উপোসী মুখ হলে যেমন বুভুক্ষুর মতো চেহারা হয়, তেমনটা না হলেও যেন বৃষ্টি নামলেই শরীর আরো খলবল করে উঠবে। তেতে ওঠা জল আরেকটু শীতল-শান্ত হবে। ভাদ্রের এই তাতানো গরমে সুরবালাদেরও শরীর ঘামছে দরদর করে – যেন পুড়ে খাক্ করে দেবে সমস্ত দেহ, খসে পড়বে আলগা জৌলুস। উত্তরের কালো আকাশের দিকে তাকিয়ে সুরবালা তাই মনে মনে ভাবল, আকাশ কাঁপিয়ে বৃষ্টির ঢল নামুক, শীতল হোক সমস্ত চরাচর। ওদিকে হাওয়ার তোড়ে নদীর বুকে ওঠা ঢেউ ঘাটের কাছে এসে ভাঙছে ক্রমাগত। স্রোতের এমন দুলুনিতে প্রবলভাবে কাঁপছিল কোষা নৌকাগুলি। সেদিকে তাকিয়ে অপেক্ষার চোখে বারবার উদাস হয়ে যাচ্ছিল সুরবালা।
সোনাকান্দা হাটে নিরঞ্জন ঘোষালের কাছে হঠাৎ একদিন বায়না নিয়ে হাজির রসিকলাল। তখন কৃষ্ণযাত্রা শেষে সপ্তাহখানেক ধরে সুরঞ্জন অপেরা পার্টির জমজমাট পালা চলছিল তখলপুরের দেওয়ানবাড়িতে। নবগঙ্গার নদীচর পেরিয়ে তখলপুরের কাছেই নোনাচণ্ডী ঘাট আর ঘাট পেরোলেই ও-ধারে মস্ত বণিকবাড়ি। রসিকলাল সেই বিখ্যাত বণিকবাড়ির ম্যানেজার। নতুন বায়নার খবর আসতে না আসতেই নিরঞ্জন ঘোষাল একটা ছেলে পাঠিয়ে দ্রুত খবর দিয়েছিল দেওয়ানবাড়িতে। আর খবরটা গিয়ে যখন পৌঁছায় সুরবালাদের কাছে তখন সবকিছু গোছানো হয়ে গেছে।
নিরঞ্জন ঘোষাল বারবার বলে দিয়েছিল, শোনো রসিকলাল … খবর কিন্তু চোইলে গ্যাছে তখলপুরে। দলের সবাইরে নিয়ি তুমি তাড়াতাড়ি চোইলে যাবা থানাঘাটে। হঠাৎ কোইরে আকাশডা ডাইকছে। বড় নাও এনিছ তো?
– আপনার সেডা ভাবতি হবিনে। আমি কিছু টাকা দিয়ি যাচ্ছি … আগাম … বায়নার সুমান …
চওড়া হাসি জমা রেখে রসিকলাল বেরিয়ে এসেছিল অপেরা পার্টির অফিস থেকে। মুখের প্রসন্নতা আলো ছড়ালেও ভেতরে দুশ্চিন্তা ভর করে আকাশের সঙ্গিন অবস্থা দেখে। অন্ধকারটা যেন ক্রমেই ঘনিয়ে আসছে।
সুরবালা তাকিয়ে দেখল, তখলপুরের দিকে ঘন আঁধি নেমেছে। বজ্রবিদ্যুৎ এফোঁড়-ওফোঁড় করছে আকাশ। গাছে গাছে চাবুক পেটানো দমকা হাওয়াও বইছে। রসিকলালসহ গোটা দলটার জন্যে ওরা অপেক্ষা করে আছে সেই দুপুর থেকে। কথা ছিল থানাঘাট থেকে ওদের তুলে নেবে নৌকায়। অথচ সেই রসিকলালের এখন দেখা নেই।
সুরবালার গায়ে পেঁচানো জর্জেটের লাল শাড়ি। আঁচল আর পাড়ে সোনালি জরি-চুমকির ভারী কাজে বেশ জবরজং অবস্থা। গরমে ঘামে ভিজে গলার নিচে পাউডারের সাদা ছোপ ছোপ দাগ। ওদিকে মুখের মেকাপও গলতে শুরু করেছে ততক্ষণে।
ভুবন বাদ্যকার জিলাপির দোকানের ছেলেটাকে এক-দুবার প্যাঁ-পোঁ বাঁশি শুনিয়ে এখন দিব্যি জিলাপি খাচ্ছে। তাই দেখে মালতী দৌড়ে এসে একবার জিজ্ঞেস করল, দিদি, জিলাপি খাবা? গরম গরম রেশমি জিলাপি ক্যাবলি কড়াই থেকে উঠাইছে দেহিছ? কাগজে মুইড়ে কয়েকখানা এইনি দি?
– যা, এইহান থেকে …। এমনিতি কাইল রাইতে ঘুম হয়নি। দুদিন পর গেলি ইরাম কী ক্ষতি হইতো? খেঁকিয়ে ওঠে সুরবালা।
– সেডা তোমার প্রাণের নাগর নিরঞ্জন দাদারে বইলতি পারতা … আমার উপরে চ্যাত দেহাও ক্যান? মালতী ঠেস মেরে শুনিয়ে দেয় কথাগুলি।
– এই ছেড়ি, ঠাস কইরে চড় খাবি। কে রে নাগর? মুখে যা আইসবে তাই কওয়া লাগবে?
– … তাইলে আজকেই আবার যাওয়া লাগছে ক্যান আমাগের? ক্যান ইরাম উতলা হইছো?
– এইহানে বইসে এত কথা না কইয়ে ভুবনরে ডেকি দে। ও গিয়ি না হয় খোঁজ করুক।
– ভুবনরে তো খানিক আগেও দ্যাকলাম দাঁড়িয়ে জিলাপি খাচ্ছে। গেল কনে ছেড়াডা?
– আবার গিয়ি দ্যাক কী করতিছে? নইলে আমি কিন্তু ভ্যান ডেইকি উইঠে পড়ব।
– কোনদিকে যাবা দিদি? ভ্যানে কইরে নদী পার হবা নাকি? মালতীর চোখেমুখে বাঁকা হাসির ঝিলিক। … ও তুমি তো যাবা সোনাকান্দা হাটে। তা যাবাই তো, এখন গেলি নিরঞ্জন দাদারে ঠিক পাবা কিন্তু …
– কথা বাড়াস না ছেড়ি। ভুবন কনে গিয়িছে খুঁইজি দ্যাখ। আসবার সুমায় তো ঠিকই কইল সে রসিকলালরে চেনে। এহন আবার কোন চুলোয় গিয়ে মইরেছে ছেড়াডা?
মালতী একটু এগিয়ে গিয়ে দেখল জিলাপির দোকানের কাছেই সেলুনের ভেতরে এবার বগল চাঁছাচ্ছে ভুবন। লেপটানো চুলে টেরি কেটেছে। চাপকলে মুখ ধুয়ে এসে মুখে পাউডার মেখেছে। মনে হচ্ছে সে এবার অপেরা দলের নায়কের পার্ট করবে। আবার কোন ফাঁকে মনে হয় দাঁড়ি-গোঁফ চেঁছে একটু পরিপাটিও হয়ে নিয়েছিল। ফ্যাকাশে মাকুন্দার মতো চেহারা এখন। মালতীকে দেখতে পেয়ে তড়িঘড়ি ভেতর থেকে বের হয়ে এসে দাঁড়াল সে।
– কী রে মালতী? আমায় খুঁজছিলি?
– না, আমি তোমায় খুঁজছি না … যে খোঁজার সে-ই খুঁইজছে। মুখ বেঁকিয়ে ব্যঙ্গ করে জবাব দিলো মালতী।
– দিদি কনে? আমায় আবার গাইলমন্দ কইরছে না তো?
– গাইলমন্দ আবার কী কইরবে? তোর মতো হাঁদারামরে বইকলে জগৎ শুদ্ধ হয় নাকি?
– এই তুই আমারে কটু কথা কয়েছিস। আমি কিন্তু নালিশ দিব।
– ফালতু প্যাঁচাল রাখ … রসিকলাল না ফসিকলাল …
তোর ওই বায়নাদার … মানুষডা এসিছে? আর কতক্ষণ ইরাম সাজ নিয়ি ঠাঠা রইদের মধ্যি বইসে অপেক্ষা করব?
– দাঁড়া … আমি থানার আশপাশডা একটু খুঁইজে দেহি। তখলপুরে পালা শুরুর পর এক-দুবার দেহিছিলাম। সন্ধ্যার আলো-আন্ধারে এক-আধবার কতাও হয়েছিল। লম্বা ঢ্যাঙা – ছুঁচোর মতোন মুখখান। দেকলি চিনতে পারবনে।
– যা … এহন ঘাটের কাছে গিয়ি খুঁইজে দেইহে আয়। নাও বান্ধা আছে তো? সুরবালাদি খুব অস্থির হয়ে উইঠছে।
মধু গায়েনের সঙ্গে সুরবালা একদিন হঠাৎ উদয় হয়েছিল সোনাকান্দা হাটে। আগে কখনো অপেরা দলে কাজ করেনি সে। অভিনয়ও তেমন জানত না। শুধু পরিচিত ওই গায়েনের সঙ্গে হাটে-বাজারে ঘুরে গান গাইত। কিন্তু নিরঞ্জন ঘোষালের যেন জহুরীর চোখ। পথে-ঘাটে গান গাইতে দেখে চট করে টোপ ফেলেছিল সে। সেই ফাঁদেই সুরবালা এখনো বন্দি। অল্পদিনেই ওর মধুকণ্ঠ আর রূপের জাদুতে মোহিত হয়ে গেল পুরো দল। সুরবালার কল্যাণে দলের ভাগ্যই ফিরে গেল। যে-কোনো উৎসব-পার্বণে এখন টানা পালা করে ফিরছে ওদের দলটা। আশপাশের অঞ্চলে সুরঞ্জন অপেরা পার্টির যে খ্যাতি তা এক সুরবালারই কারণে।
সুরবালাকেও এ-তল্লাটে এখন অনেকেই চেনে। ভরদুপুরে রোদে একা বসে থাকতে দেখে কে যেন খাতির করে একটা ভাঙা ছাতা মাথার ওপর দিয়ে গেছে। আশপাশে বড় গাছ নেই, তালগাছে কি আর ছায়া হয়? বাজারের হই-হট্টগোলে গরমটাও যেন উসকাচ্ছে। বুক থেকে কাপড় সরিয়ে আঁচলের কোনা দিয়ে হাওয়া করতে চাইল কয়েকবার। মেঘের কারণে আবহাওয়াটাও কেমন গুমোট। মনে হয় এখনই ঝড় উঠবে।
ঘাটের উটকো ভিড়ের মধ্যে সুরবালার চোখ দুটো মালতী আর ভুবনকে অনেকক্ষণ ধরে খুঁজল। কিন্তু ওরা একসঙ্গে
কোথায় যে গায়েব হয়ে গেছে! দুজনের সারাদিন খোঁচাখুঁচি থাকলেও ওদের ভাব-ভালোবাসা ঠিকই আঁচ করতে পারে সুরবালা। এমন ভাবতে ভাবতে অল্প দূরে একটা মনোহারি বিতানের সামনে ওর চোখ যেন হঠাৎ আটকে গেল। এক লম্বা সুঠাম পুরুষ জ¦লজ¦লে চোখে দূর থেকে ওকে নিখুঁতভাবে দেখছে। অনেকক্ষণ ধরে বোধহয় চোখ দুটো খুঁজছিল সুরবালাকে – দেখছে নয়, ঠিক যেন মাপছে। অপরিচিত আগন্তুকের এমন তীক্ষ্ণ চাহনির মধ্যে আশ্চর্য কী যেন আছে! সেটা ভেবে সুরবালার শরীরের ভেতরে এক শীতল স্রোত তিরতির করে বয়ে গেল।
মানুষটা খুব অদ্ভুত। সুরবালার চোখ তাই ঘুরেফিরে সেই দোকানের কাছটায় ঠোকর খাচ্ছে বারবার। দাঁড়াশ সাপের মতো চিকন লম্বা লাল-কালো ডোরাকাটা মাফলার গলায় ঝুলিয়ে দোকানের ভেতর এখন অপেক্ষা করছে মানুষটা। গায়ে ঘি-রঙা লম্বা হাতা কুর্তা আর পরনে নকশাপাড়ের সাদা ধবধবে লুঙ্গি। বেশভূষায় যথেষ্ট শৌখিন। ভাদ্রমাসের এমন গরমে যেখানে সমগ্র চরাচর তেতে-পুড়ে যাচ্ছে তখন ওই রঙিন মাফলারের মাজেজা কী তা কেবল মানুষটাই জানে। বাতাস পাক খাচ্ছে থেমে থেমে। তখলপুর থেকে ঘন মেঘ ধেয়ে আসছে এদিকে। চারদিক যখন প্রবল ঝড়ের আশঙ্কায় ভীত আর কোথাও বাজ পড়ে কেঁপে উঠছে মাঠ, তখন আগন্তুকের মনে যেন অবিরাম ফুর্তি, মুখে ফুরফুরে হাসি। এমন বিপদের মধ্যেও পানমুখে গরুর মতো জাবর কাটছে নিশ্চিন্তে। হঠাৎ জামার বাঁ-হাতার আস্তিন সরিয়ে ঘড়ির কাঁটা দেখল একবার। মানুষটা কি কারো জন্যে অপেক্ষা করছে, নাকি সুরবালাকে দেখবে বলে স্থিরচোখে তাকিয়ে আছে থানাঘাটের দিকে!
সুরবালা একবার ভাবল, রসিকলাল নয় তো! পরক্ষণেই চিন্তাটা উড়িয়ে দিয়ে আশ^স্ত করল মনকে যে, রসিকলাল হলে সে তো এগিয়েই আসত। তাছাড়া সুরবালাকে যারা চেনে তারা ওর রূপের জৌলুসের কাছে কাবু হয়েই কাছ ঘেঁষে। বয়স দেড়-কুড়ির ওপরে হলেও কে বলবে অত? বুকের কাপড় হঠাৎ খসে পড়লে এখনো লোকের লোভাতুর চোখগুলি ওর বুকের কাছে ঘুরঘুর করে। মানুষগুলি যাত্রাপালার মেয়েদের মনে করে মনোরঞ্জনের পুতুল – যেন চাইলে হাত বাড়িয়ে খপ্ করে এখনই জাপটে ধরে ফেলা যাবে ওদের। সুরবালার জীবনে এমনটা অনেকবারই ঘটেছে। ও নিজে থেকে এসব আশকারা দিতে চায়নি। কিন্তু ওই যে দোকানের সামনে দাঁড়ানো মানুষটা – যে কি না চোখের তীর গেঁথে ওকে বিদ্ধ করছে – সে কী চাইছে সুরবালার কাছে?
ঝড়ের আগে থমকে গেছে বাতাস। গরমে আঁইঢাঁই প্রাণ। মানুষজনের চোখকে উপেক্ষা করে আজ ইচ্ছে করেই বুকের কাপড় খসিয়ে ফেলে থানাঘাটের জোড়া তালগাছের নিচে চুপচাপ বসে রইল সুরবালা। বাজারের তুমুল কোলাহলের মধ্যে সংকোচ ঝেড়ে ভাবল, যে দেখে দেখুক … ওর শরীর থেকে তখন একটু একটু করে খসে পড়ছে জমকালো রূপের বাহার, মুখ থেকে সরে যাচ্ছে অন্য মুখোশ। ঋতুর দহন ওর শরীরের সমস্ত আগুনকে তামাদি করে যে রূপ ঠাওর করে দিচ্ছে সেখানে সুরবালার ভয় আছে। রূপের সেই ফাঁকি আড়াল করে কেন জানি সুরবালাও মুগ্ধ চোখে সেই আগন্তুককে দেখছে। ওর মনের ভেতর আনন্দের যে ঘণ্টাধ্বনি হঠাৎ বেজে উঠছে এমন আগে কোনোদিন হয়নি। মনে হচ্ছে, ওই দূরদেখা আগন্তুককে কোথায় যেন দেখেছে। বাজারের এই ভিড় ছাড়িয়ে অন্য কোনো ভিড়ে।
সুরবালা খেয়াল করল ভুবন কোত্থেকে উদয় হয়ে ওই অচেনা আগন্তুকের সঙ্গে আলাপ জুড়ে দিয়েছে। মনে হয় মানুষটা ওর অনেকদিনের চেনা। ওরা এখন দাঁড়িয়ে আছে জিলাপি-ভাজা দোকানটার সামনে। মালতীও সেখানে। তবে কি রসিকলাল এলো? তারপর ওদের দুজনকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে দেখে মুখ তুলে একটু চমকাল সুরবালা। লোকটার ইশারায় জিলাপির দোকানের ছেলেটা টিনের ছোট্ট প্লেটে কয়েকখানা জিলাপি আর গরম নিমকি সাজিয়ে ছুটে এলো গাছতলায়। সঙ্গে টলটলে এক গেলাস জল। খুব জোরে বাতাস উঠেছে। নদীর ওপর মেঘ আরো ঘন হয়ে নামছে।
ছেলেটা প্লেট আর গেলাসখানা দুই হাতে ধরে সামনে দাঁড়িয়ে বলল, এই নাও দিদি, নিমকি-জিলাপি খেয়ি নাও। ওই মানুষটা তোমারে দিতে বলিছে। আমিও তোমারে চিনি। অনেক আগে সোনাকান্দা হাটে একবার তোমার পালা দেহিছিলাম।
সুরবালার মনে মনে গৌরব হয় – যখন দেখল মালতী ওর দিকে তাকিয়ে মুখটিপে এগিয়ে আসছে। ও এটাও জানে, এখনই ঠেস দিয়ে দুটো কটু কথা শুনিয়ে দেবে।
– দেহিছ তো দিদি … যেহানেই যাও তোমার নাগরের অভাব নেই। ওই সারেংয়ের বেটাও তোমার রূপে মইজেছে। তোমার ছায়া খুঁইজে খুঁইজে ঠিক এহানেও আসিছে।
– কী আবোল-তাবোল বকছিস মালতী? ঠাস কইরে এবার চড় খাবি।
– কী ব্যাপার গো দিদি? আকাশে মেঘ জইমল, চাইরদিকে কিরাম ঠান্ডা বাতাসও দাপাচ্ছে, তাও তোমার মেজাজ চইড়ে আছে? পাশ থেকে ভুবন বুঝ দিয়ে যেন সুরবালাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।
– ওইডা কে রে ভুবন? বাজপাখির দিষ্টি দিয়ি গিলে খাবে য্যান! ঠিক চিনতি পারছি না তো!
– আরে … ওডা তো মস্তু সারেং। তখলপুরের পশ্চিমে যে নোনাচণ্ডী ঘাট ওহানে থাহে। শুনিছি ইস্টিমার চালায়। তখলপুরে যে কয়দিন আমাগের পালা চলিছে প্রায়দিনই তো দেকতি এসিছে। এলেই খালি তোমারে দেকতি চায়!
সুরবালার মনে মোহ বা মায়ার মতো একটা উষ্ণ কিছু হানা দিলো মুহূর্তে। বুকের ভেতরটা কেমন দপদপ করে উঠল। কী চায় মস্তু সারেং? সুরবালার অন্তরঙ্গতা, নাকি সখ্য? চাইলে ও নিখাদ প্রেমও দিতে পারে। কিন্তু নিরঞ্জন ঘোষালের কাছে যে দায়ের হিসাব জমা আছে তা সে মেটাবে কী দিয়ে? ভুবন যেন আরো অনেককিছু মনে করার চেষ্টা করে যাচ্ছিল তখন।
– … ক্যান দিদি? সেইদিন রাইতের বেলা হঠাৎ বিজলি বাতি গিয়ি চাইরদিক যখন আন্ধারে ডুইবা গেল তোমার দরজার কাছে একজন লোক চুুপচাপ খাড়াইয়া ছিল … তোমার মনে নাই?
– কী জানি?
– তুমি ভয়ে চিৎকার দিতেই হারিকেন নিয়া আইসা দেহি ইস্টিমারঘাটার ওই সারেং … তুমি তো তারে দেইহাই ভূতের মতোন চমকাইলা …
ভুবনের কথায় সুরবালার যেন ওই লোকটার মুখ মনে পড়ছে এখন। পালার ফাঁকেই পরপর আরো দুদিন ভিড়ের মধ্যে আলোতেও সেই আগন্তুকের ছায়া দেখেছিল ও। মানুষটার চোখে ঠিক লালসা নয়, যেন অন্যকিছু দেখেছিল সুরবালা।
– … এই নাও দিদি পান … মস্তু সারেং তোমার জন্যে পাঠিয়েছে। খয়ের-জর্দা-চুন সবই আছে … এই পান মুখ মিষ্টি কইরলেও মাথা ঘুরাতি পারে। তবু পানডা মুখে দিয়ি বইসো। ঠোঁটখান লাল হবে।
সুরবালা হাত বাড়িয়ে টেনে নিল পান। তার আগে ঢকঢক করে জল খেয়ে নিল কিছুটা। পান খেয়ে মাথা ঘুরালে সমস্যা নেই, কিন্তু উদ্বেগ বাড়ছে অন্য কারণে। ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে টুপটাপ বৃষ্টি নেমেছে। নবগঙ্গার জল কেমন ফুঁসছে। শোঁ-শোঁ আওয়াজ উঠছে ঘাটের কাছে। হঠাৎ দমকা বাতাস ছোটায় পান হাতে দিয়ে ছেলেটা ছুটল ওর দোকানের কাছে। কিন্তু সেদিকে চোখ যেতেই লক্ষ করে দেখল, পান পাঠিয়ে লোকটা গায়েব হয়ে গেছে। ও চারদিকে খুঁজল। আশ্চর্য! কোথাও নেই।
সুরবালাকে হঠাৎ অস্থির হয়ে উঠতে দেখে ভুবন বলল, ইরাম বাতাস ছুটলি নাওয়ে কইরি যাওয়া মুশকিল হবে আমাগের। আমি দেহি এসিছি সোনারামপুরের বণিকদের নাও বাঁধা আছে ঘাটে। কিন্তু মাঝি-মাল্লা সব সইটকে পইড়েছে। কী কইরবে গো দিদি?
সুরবালার কেমন মেজাজ বিগড়ে ওঠে। … আমরা তবে এতদূর বেয়ি এই ঘাটে বইসে আছি ক্যান? ইরাম তামাশা সহ্য হয় না।
– খবর নিয়ি জানলাম, নিরঞ্জন দাদা দুদিন পরেই যাবেন। আর ঝড়ের আশংকায় রসিকলালসহ সবাই থেইকে গেছে তখলপুরে।
– তুই এত কতা জানলি কোইত্থে রে ভুবন?
– ওই সারেংয়ের বেটার মুখ থেইকেই জানলাম সবকিছু। এই ঝড়ের মধ্যি আমরা কনে যাব দিদি?
সারেংয়ের কথা ওঠায় আবারো এদিক-ওদিক চারদিকে তাকিয়ে কী যেন খুঁজল সুরবালা। না, সেই চোখের তীর ছোড়া আগন্তুককে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।
সুরবালার ততক্ষণে কপাল থেকে গালে ঘাম নামছে গড়িয়ে। পালা দেখাতে গিয়ে এমন অনিশ্চয়তা কিংবা বিপদের আশংকা আগেও কয়েকবার ঘটেছিল। গেলাসে থাকা বাকি জলটা হাতের তালুতে নিয়ে ছিটকে দিলো মুখের দিকে। ক্রমে জেদ বাড়ছে। মনে মনে ভাবছে, ও কোথাও যাবে না। সপ্তাহখানেক ধরে তখলপুরে আছে। গতকাল রাতেও পালা শেষ হতে দেরি হলো অনেক। ঘুমোবার সময় পায়নি। বিশ্রাম নেওয়া হয়নি ঠিকমতো। সুরবালা চেয়েছিল আরো দুটো দিন পরে যেতে। কিন্তু দলের অধিকারী ওর কথা কানেই তুলল না। বায়না ফসকে গেলে চিত্তরঞ্জনের অপেরা তা লুফে নেবে। অধিকারী এমনটাই শুনেছে। তাছাড়া সামনে পূজারও বেশি বাকি নেই।
সুরবালার চোখের কাজল লেপটে আছে। মুখের পাউডার গলে গেছে। ঠোঁটের রং মুছে হয়েছে ফ্যাকাশে। গায়ের সস্তা প্রসাধন ও পাউডারের তীব্র গন্ধ ঘামের সঙ্গে মিশে যে উৎকট গন্ধ তৈরি করেছে তা নিজের কাছেই এখন অসহ্য ঠেকছে ওর। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও রঙের মুখোশ চাপানো সুরবালার নিজেকে নিয়ে সামান্য বড়াই হলো। ও যদি যাত্রাদলের মেয়ে না হতো তাহলে কি ওই ছেলেটা অমন করে বলতো … আহা, কী সুন্দর করেই না বলল … আমি তোমারে দেহিছি দিদি। ইচ্ছে হয়েছিল একবার ছেলেটাকে আদর করে পাশে এনে বসায়, গাল টিপে আদর করে দেয় …। না, অন্য চিন্তাও আজ ভাবাচ্ছে। ও যদি সুরবালা না-ই হতো তবে কি ওই অচেনা আগন্তুক অমন মরিয়া হয়ে … আরে কোথায় গেল মানুষটা?
সুরবালার প্রচ্ছন্ন এক অভিমান হলো আগন্তুকের ওপর। কিন্তু মনে মনে রাগটা চড়ে উঠল নিরঞ্জন ঘোষাল কিংবা ওই
না-চেনা বায়নাদারের ওপর। এখন মনে হচ্ছে, ওই মস্তু সারেংয়ের সঙ্গে বসে সমস্ত দিন কাটিয়ে দেয় এই থানাঘাটে। তাছাড়া ভাদ্রের আকাশ হঠাৎ যেভাবে বেঁকে বসল তাতে নৌকায় করে তখলপুরেইবা কীভাবে যাবে!
রসিকলালের ওপর জমে ওঠা সমস্ত ক্রোধ মালতীর ওপর ঝাড়তে গিয়ে দেখল এসবে ওর ভ্রুক্ষেপ নেই মোটে। সে ভুবনকে সঙ্গী বানিয়ে মেতে আছে ফুর্তিতে। এদিকে দুপুর গড়িয়ে সন্ধে নামতে চলল। নৌকায় ফিরে গেলেও অনেকটা সময় লাগবে। পেটে ভারী কিছু পড়েনি। তাই মালতীর পাশাপাশি খেঁকিয়ে উঠল ভুবনের ওপরও।
আর কতক্ষণ বইসে থাকব রে মালতী? তোর নাগর গেল কনে? মিনসেডা যেহেতু আসেনি রং মেইখে দাঁড়ি রইলি ক্যান? ফিরে যাওয়ার একখান ব্যবস্থা কর।
মালতীর মুখে নিশ্চিন্তের হাসি। আরে দিদি … অত ব্যস্ত হইলি চলে? খিদে লাইগলে গরম গরম আরো নিমকি-জিলাপি খাও। সারেংয়ের বেটা তো আশপাশেই ঘুরঘুর কইরছে। দাঁড়াও, ভুবনরে পাঠিয়িছি। সে মাঝিদের খুঁজতি গিয়িছে।
– তোর কতা শুইনলে গায়ে জ¦ালা ধরে মালতী। সব কতায় খোঁচা না দিলে তোর চলে না …
– না গো দিদি, সত্যি বইলছি … আমারও খুব খিদে পাইছে। হোটেলে দেহিছি কই মাছ ভাজতে। গন্ধে কিরাম ভুরভুর কইরছে চাইরপাশ। আমাগের যেতে তো দেরিই হবে!
– তুই এহনও সং সেজি আছিস ক্যানরে ক তো? বাজারে কে তোরে দেইখছে? আমার মুখের যে কী ছিরি হয়িছে তা কিডা জানে!
– আমার কাছে ছুটো আয়না আছে। দাঁড়াও, তোমায় বেইর কইরে দিচ্ছি।
– আমার আয়না লাগবিনে। ভাবছি মুখখান একেবারে ধুইয়েই নিব।
– তোমার যা বুঝ-বিবেচনা আমি তার কী করব? এই
ঝড়-বাদলার মধ্যি আমারও এহন আর মন টাইনছে না। না গেইলে তো নিরঞ্জন দাদা আবার রাগ কইরবে। আয়না খুঁজতে গিয়ে উত্তর দিলো মালতী।
সুরবালা এবার চুপচাপ উঠে দাঁড়াল। কিছুক্ষণ আগে যে আগন্তুকের নাম জানল – যার নাম কি না মস্তু সারেং এবং যে বাজারের তুমুল কোলাহলের ফাঁকে সুরবালাকে চোখের তীরে বিদ্ধ করে মনটাকে কাবু করেছে, নোনাচণ্ডী ঘাটের সেই সারেংইবা গেল কোথায়? ওদিকে তালগাছের নিচে ছোট আয়নায় মুখ রেখে তখন নিবিষ্ট মনে নিজেকে দেখছে মালতী। লিপস্টিক ঘষে ঠোঁটজোড়া আরো রঙিন করল সে। তারপর আড়চোখে তাকিয়ে দেখল সুরবালা নেমে যাচ্ছে ঘাটের দিকে।
কয়েকটা টঙের পর বাঁধানো সিঁড়িঘাট নেমে গেছে নবগঙ্গার জলে। ঘোলাটে জল। সেই জলে মুখ ধুয়ে এসে মালতীর কাছ থেকে আয়না চেয়ে নিল সুরবালা। ছোট্ট আয়নায় যে মুখ ভেসে উঠল সে এক অপরিচিত মুখের ছবি। মুখোশহীন সে-মুখটাকে সুরবালা চেনে না। তবু গম্ভীর মুখে সামনে তাকাতেই দেখল ভুবনের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে মস্তু সারেং। সুরবালার মনটা ঝলমল করে উঠল। আরো জানল, অপেরা দলের ভক্ত সে। তার চেয়েও বেশি বুঝি নায়িকার।
ভুবন এসেই তাড়া দিলো ওদের … কনে গেলে দিদি? বিপদ একটা অবিশ্যি হয়িছে। মাঝি-মাল্লারা কেউ আর রাজি হচ্ছে না নাও বাইতে … তবে সারেংয়ের সঙ্গে কোষা নাও আছে। কইল, আমাগের তখলপুরে নামি দিয়ি যাবে।
ভুবনের সঙ্গে স্বর মেলায় সারেং … ভয় নেই, আমি ঝড়ের মধ্যিও ভালো নাও বাইতে জানি। এই জলের ওপর ভেইসে ভেইসেই তো জীবন পার কইরে দিলাম। তোমরা নেমি আইসো তাড়াতাড়ি।
আকাশ দেখে সুরবালার মনে বেশ শংকা জেগেছিল আগেই। কে বলবে এখন বিকেল – যেন ভর সন্ধে নেমেছে নবগঙ্গার দু-তীরে। ভাদ্র মাসে নদীর চেহারা এমনই টইটম্বুর থাকে। হঠাৎ মেঘের আনাগোনা আর বাতাসের ঝাপটায় নদীর বুক থেকে
শোঁ-শোঁ আওয়াজ আসছে। সুরবালা, মালতী আর ভুবন কাপড়ের বোঁচকা পিঠে তুলে মস্তু সারেংকে অনুসরণ করে ঘাটের দিকে নেমে গেল যখন, থানাঘাটের দোকানগুলিতে তখন আলো জ্বলছে।
নদী প্রবলবেগে ফুঁসছে। কালো স্রোতে কোথাও কোথাও পাক দিয়ে উঠছে ঘূর্ণি। সেই পাক খাওয়া জলে বারবার খেই হারাচ্ছে সারেংয়ের নৌকা। নৌকা খুব দুলছে। আগা গলুইয়ে বসে সাবধানে বৈঠা চালাচ্ছে মস্তু সারেং। তার গা-ঘেঁষে পা ছড়িয়ে বসে ভয়ে জড়োসড়ো সুরবালা। ভুবনের হাতে লগি। সতর্কে ওর গা-ঘেঁষে বসে আছে মালতী। সকলের মুখে আল্লাহ-ভগবানের নাম। সন্ধের অন্ধকারে চারজন বিপন্ন মানুষকে নিয়ে ঘূর্ণিস্রোতের মধ্যে ভেসে চলছে নৌকা।
মস্তু সারেং বলল, নদীর ইরাম কালরূপ কত দেহিছি। তবু আমি সামলে নিতি জানি। কোনো ভয় নেই। শুনিছি এই জলের তলায় যহনই বিপদ উইজে আসে সব সাইমলে দেয় খোয়াজ খিজির। তিনি জলের ফেরেশতা, কেউবা কয় দেবতা। ভয় নেই … আল্লা-ভগবানরে এহন ডাকেন আপনেরা …
থানাঘাট পেছনে ফেলে শ্রীকোলের শ্মশানঘাট ডানে রেখে নৌকা যখন আরো দূরে এগিয়ে গেল হঠাৎ চারদিক কাঁপিয়ে ঝড় উঠল প্রবল বেগে। ঢেউ আর বাতাসের ধাক্কায় মুহূর্তে কাত হয়ে পড়ল সারেংয়ের নাও।
নদীর কিনার থেকে কেউ কেউ দেখল মাঝনদীতে কলার মোচার মতো একখানা কোষা নৌকা ডুবে যাচ্ছে যেন! ঢেউয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভুবন প্রাণপণে সাঁতার কাটছে তীরের দিকে। মালতী ভাসছে আবার ডুবছে। সুরবালা তেমন সাঁতার জানে না। পাক খাওয়া কালোস্রোতের ভেতরে ওর লাল শাড়িটা আরো পেঁচিয়ে ওকে টেনে নিতে লাগল নিচে। সুরবালার দম ফুরিয়ে আসছে। ডুবতে ডুবতে একবার মনে হলো, কেউ যেন ওর পা দুটোকে শুধু নিচের দিকে টানছে। একটা ভারী পাথর গায়ে চেপে বসে ওকে যেন কোন অতলে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
ঝড়ের মধ্যেও দূর থেকে মানুষজনের শোর উঠছে। কিন্তু সুরবালা যেন টের পেল জলের তলায় কে যেন ওকে হাতড়ে খুঁজে প্রবলভাবে আঁকড়ে ধরতে চাইছে। একটা মানুষ … তার সুঠাম দুটো হাত কিংবা গলায় ডোরাকাটা লাল মাফলার আর চোখগুলি কেমন জীবন্ত। ও যত ডুবে যেতে লাগল সেই হাতগুলি ওকে টেনে তুলতে চাইছে ওপরে। জ্ঞান হারানোর আগে শুধু মনে করতে পারল, কেউ ওকে ফিসফিস করে বলছে, ভয় নেই … এই জলে খোয়াজ-খিজির থাকে …
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.