তুমার হালার পাছা ফুইলা পাউরুটি হইছে!
উলফতের মাথায় ঢোকে না, পাছা ফুলে কীভাবে পাউরুটি হয়? তাও আবার তার নিজের! উলফতের মেজাজটা খিচড়ে গেলেও সে বুঝতে সময় নিয়ে মাসুদকে বলল, হউরের পো, কথাবার্তি সাবধানে কইছ –
– তর লগে আবার কিয়ের সাবধানে কথা কমু?
– মাসুইদ্যা, কথা সাবধানে কইছ –
– সাবধানে না কইলে কি চুল ছিঁড়বি?
– চুল না, তর বেক বাল টাইনা ছিঁড়া ফালামু।
চুল ফেলার জন্য মাসুদকে আর পয়সা খরচ করে সেলুনে যেতে হবে না। বিনা পয়সায় উলফত তার উপকার করতে চাচ্ছে। উলফতের কথায় মাসুদ রেগে যাওয়ার বদলে খানিক পুলক অনুভব করে,
– হেরপর কী করবি?
– কম্বল বানামু।
– হেরপর?
– হেরপর হেই কম্বল সদরঘাটে লয়া লঞ্চে ভইরা তুরস্কে পাঠামু –
তুরস্কের কথা শুনে মাসুদ না হেসে পারে না। ছোটবেলায় মাসুদ বাপদাদা আর মহল্লার ময়-মুরুব্বিদের কাছে শুনেছে, তুরস্কের কারিগরদের বোনা কারুকার্যশোভিত কম্বল-কার্পেট দুনিয়াজোড়া বিখ্যাত। পুরান ঢাকার নবাবগো বাড়িঘর নাকি সেইসব জিনিসপাতি দিয়ে সাজানো থাকত। পঞ্চায়েতের সর্দারদের বাড়িঘরেও শোভা পেত সেসব।
মাসুদ উলফতকে বলল, তাইলে তর বাপদাদারা মাইনষের ওই জিনিস ছিঁড়া কম্বল বোনাইতো!
– হ, বোনাইতো। হেরা মইরা যাওনের আগে আমারে হেই বিদ্যা শিখায়া দিয়া গেছিল –
– যা, হাউয়ার পো, কম্বলের লগে আমার লাইগা একখান দস্তরখানাও বানাইছ। দস্তরখানায় বয়া ভাত খামুনে –
উলফত ওর দোকানের ভেতরে বসেছিল। মাসুদের কথা শুনে ওর বুকটা ছ্যাঁত করে জ্বলে উঠল। উলফতের মনে হলো কেউ বুঝি জোর করে তার গলায় বাংলা মদের পুরো বোতল ঢেলে দিয়েছে।
মাসুদের কথা বলার ধরন এরকমই। ওর এরকম উল্টাসিধা কথার জন্য আগেপরে দু-এক মহল্লার পোলাপাইনের কাছে সে
ঘাড়-চাপাটি খেয়েছে। তারপরও মাসুদের ঘাড়ের রগ সোজা হয়নি।
তাই বলে উলফতের সঙ্গেও মাসুদ এভাবে কথা বলবে! আশেপাশের পাড়ামহল্লার ছোটবড় সবাই জানে, কথার আগে হাত চলে উলফতের। মারদাঙ্গা স্বভাবের কারণে পারতপক্ষে কেউ উলফতের সঙ্গে পেজগি করে না। গ্যাঞ্জাম তো দূরের কথা। উলফতকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলে।
মাসুদ যে উলফতের সঙ্গে উল্টাসিধা কথা বলছে সেটা তো আর তার দোষ না। সব দোষ কার্তিক দয়ালের। সকাল এগারোটার দিকে দয়াগঞ্জে দয়ালের ঘরে গিয়েই যত পেজগি বাধিয়েছে মাসুদ। আগের দিন দয়ালই তাকে যেতে বলেছিল। মাসুদ গিয়ে দেখল দয়াল ঘরে নেই। দয়ালের বউ ঘরের দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে। দরজায় উল্কারানীকে ওরকম দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মাসুদের অঞ্জু ঘোষের নরম গরম সিনেমার কথা মনে পড়ে গেল। গত সপ্তাহে নাইট শোতে নাজ হলে সিনেমাটা দেখেছে। সিনেমার পোস্টারে করপোরেশনের লাইটপোস্টের খাম্বার মতো অঞ্জু ঘোষ দুই রান ফাঁক করে এমনভাবে দাঁড়িয়ে আছে যে, দেখলে মনে হবে তার পরনের টাইট প্যান্ট ছিঁড়ে রান-থোড়াসহ সবকিছু বের হয়ে আসবে। পোস্টারে অঞ্জুর এই ছবি দেখে মাসুদের মাথা চক্কর দিয়ে উঠেছিল। সিনেমা দেখে ঘরে ফেরার পুরোটা সময় মাসুদ গুনগুন করে গেয়েছে, ‘এই বৃষ্টি ভেজা রাতে তুমি চলে যেও না।’ রিকশাওলা মাসুদের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে থেকেছে। মাসুদ তখন নিজেকে ওয়াসিমের জায়গায় কল্পনা করতে করতে ঘরে ফিরেছে।
উল্কারানী দরজায় দাঁড়িয়ে মুখে মিহি হাসি ঝুলিয়ে বলল, দয়াল নাই তো কী হইছে – আমি আছি না?
উল্কারানী বলে কি!
– দয়ালে কই গেছে?
– মীরহাজিরবাগে গেছে। আপনে যে আইবেন কইছে। আহেন, দয়ালে ফিরতে দেরি করব না –
উল্কারানী আগের মতো টানটান ভঙ্গি নিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে। তাকে ঠিক পোস্টারের অঞ্জু ঘোষের মতো দেখাচ্ছে।
– দেইখো কইলাম –
মাসুদের কথায় উল্কা হেসে ফেলে। দয়াল বেশ ভালো করেই জানে, সে ঘরে না থাকলে মাঝেমধ্যে তার পরিচিত দু-চারজন ঢুঁ মারে। মেথরপট্টি থেকে সস্তা দামের মদ ঘরে এনে রাখে দয়াল। তাতে সময়ে-অসময়ে মাসুদের মতো অতিঘনিষ্ঠ দু-চারজন এলে অভাব-অনটনের সংসারে দু-চার পয়সা আয়-রোজগার হয় তার।
অনেকটা সময় কাটিয়ে দুপুরের দিকে দয়ালের ঘর থেকে বেরিয়েছে মাসুদ। উল্কা আজ ইচ্ছে করেই মাসুদকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বেশিই খাইয়ে দিয়েছে। মাসুদ খেতে চায়নি। গ্লাস এগিয়ে দেওয়ার সময় উল্কার আঁচল স্থানচ্যুত হলে মাসুদ লজ্জা পাওয়ার ছল করে, খালি পেটে এত খাইলে মাথাউথা খারাপ হয়া যাইব। পরে রাস্তাঘাটে পইড়া থাকুম – উল্কার চোখ মাসুদের ছল ভালোই ধরতে পারে, ফলে সে আঁচল ঠিক না করে মাসুদের দিকে গ্লাস এগিয়ে দিতে দিতে বলে, ভাই যে কী কন! আমগো দয়াল পুরা দুই বোতল শেষ কইরা খিস্তিখেউড় কইরা আমারে কী কয় জানেন? কথাটা বলে উল্কা মাসুদের দিকে তাকিয়ে থাকে ফিরতি উত্তরের আশায়।
মাসুদ উল্কার দিকে তাকিয়েছিল চোখ বড় বড় করে। আচমকা উল্কা তার দিকে তাকালে সে অপ্রস্তুত হয় খানিকটা,
– দয়ালে কী কয়?
উল্কা আগের মতো মাসুদের দিকে তাকিয়ে বলে,
– দয়ালে কয়, আমি কী অঙ্গা-বোঙ্গা মদখোর নি! আমার বাপ আছিল মধু কার্তিক – হালারে এই মহল্লার কে না চিনে?
উল্কা আগের মতো সারামুখে হাসিটা ধরে রেখে বলল, মদোত্তিরা এরকমই। নিজের বাপেরে কয় হালা – বলে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে। উল্কা ঠিক শ্যামল বরণের নয়, আবার অতটা কালোও নয়; কিন্তু সে যখন হেসে ওঠে তখন তাকে অনেকের চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর লাগে।
দুই
দয়াগঞ্জের মোড় থেকে মেথরপট্টির দিকে যেতে হাতের বাঁদিকে ঝুপড়ি মতন কয়েক ঘর। মেথরপট্টির ভেতরে মধু কার্তিকের ছোট্ট দুই রুমে দুই বউ, তিন ছেলে, দুই মেয়ে আর নাতিনাতকরদের নিয়ে থাকার মতো জায়গার সংকুলান হচ্ছিল না। ভাইদের সঙ্গে বনিবনাও হচ্ছিল না দয়ালের। প্রতিদিন ঝগড়া-ফ্যাসাদ, হাতাহাতি করতে ইচ্ছে করে না তার। ছোট্ট খুপরির মতো ঘরে বউয়ের সঙ্গে যখন-তখন একান্তে সময় কাটানোও যায় না। দয়াল সব ভেবে আলাদা হয়ে দয়াগঞ্জের রেল সেতুর কাছে এক রুমের ঘর নিয়েছে। উল্কার অভিযোগ অবশ্য ভিন্ন, কার্তিকের বড় ভাই রঘু সময়ে-অসময়ে তার দিকে এমনভাবে তাকায়, যেন তখনই তাকে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। একদিন স্নান সেরে গোসলখানা থেকে বের হওয়ার সময় রঘু উল্কাকে জড়িয়ে ধরে বুকজোড়ায় এমন দলাইমলাই করেছিল যে, তাতে তার বুকের মাপ দুই ইঞ্চি বেড়ে গিয়েছিল। রঘুর তাকানো থেকে শুরু করে সবকিছুই উল্কার অপছন্দ। বউয়ের কথায় কার্তিক গা করেনি। তবে বউকে নিয়ে সে আলাদা থাকতে চেয়েছে। ক্যাচালের ভেতর থাকতে ইচ্ছে করে না তার।
দেশ স্বাধীনের আগের কথা।
মেথরপট্টির তেলেগু পাড়ায় একসময় মধু কার্তিকের ঘরে বাংলা মদ বিক্রি হতো। হাক্কার দোকান থেকে একটু দূরে মধুর ঘর। মধু কার্তিকের ঘরে তখন দুই বউ। পঁয়ষট্টির পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের পরের বছর মধু কার্তিক বৃদ্ধ বাবাকে দেখতে বিহারে গিয়ে সাহালির প্রেমে পড়ে তাকে বিয়ে করে বউ নিয়ে দেশে ফিরেছিল। মেয়েটা বাংলা বলতে না পারলেও অল্পদিনে সবার কথাবার্তা, মতিগতি বুঝে গিয়েছিল।
রূপে-গুণে সাহালি ছিল মেথরপট্টির সব বউঝিদের সেরা। সাহালিকে বিয়ে করে নিয়ে আসার পর মধু কার্তিকের কপাল যেন খুলে গিয়েছিল। ঘরে লোকজনের আসা-যাওয়া আগের চেয়ে বেড়ে গিয়ে ব্যবসাটা জমে উঠল। মধুর দিনকাল ভালোই যাচ্ছিল।
এক সন্ধ্যায় ঘটল বিপত্তি। মধু কার্তিক সব দিনের মতো ঘরের বাইরের খাটিয়ায় শুয়ে ছিল। প্রচণ্ড গরমও নেমে এসেছিল সেদিন। সন্ধ্যা অতিক্রান্ত সময়ে গরমে যখন মধুর জান জেরবার, ঠিক সে মুহূর্তে মেথরপট্টির সামনে বাজখাই গলার আওয়াজ তুলে বিবর্ণ রঙের বেবি স্কুটার এসে থামল। স্কুটার থামার সঙ্গে সঙ্গে পেছনের সিট থেকে দুজন লাফ দিয়ে নেমে দাঁড়াল। মিনিটের মধ্যে আকবর বাদশা স্কুটার থেকে নামল। তার শরীর সাপের ফণার মতো লকলক করে কাঁপছে। আকবর বাদশার পেটে বিদেশি মাল পড়লে তার মেজাজ উত্তুরে হাওয়া পেয়ে দোলায়মান ধইঞ্চা পাতার মতো ফুরফুরে হয়। আকবর বাদশা নেমে মধু কার্তিককে দেখেও না দেখার ভান করল।
সে কি আজ মধু কার্তিককে দেখতে এসেছে? তাহলে কেন মধুর দিকে তাকাবে?
আকবর বাদশার হাবভাব ভালো লাগেনি মধুর কাছে। প্রথমে দুজন তারপর আকবরকে ওভাবে স্কুটার থেকে নামতে দেখে মধু ভেতরে ভেতরে ঘাবড়ে গেলেও পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করে। মধু চট করে খাটিয়া থেকে উঠে গিয়ে বলল,
– আকবর ভাই, কী হইছে?
– কী হইছে বুঝবার পাও না? আকবর বাদশা জড়িয়ে যাওয়া গলায় উত্তর করে।
মধু তখনো কিছু বুঝে উঠতে পারে না। আকবরের ঈশারা পেল কি পেল না বোঝা গেল না, তার সঙ্গে আসা দুজন দ্রুত মধুর ঘরে ঢুকে পড়ল। সাহালি ঘরের কোনায় শুয়ে ছিল। মুহূর্তের মধ্যে তারা তাকে জোর করে বিছানা থেকে তুলে ঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে বাইরে নিয়ে এলো। ঘর থেকে সাহালিকে টেনেহিঁচড়ে বের করার সময় দুজনের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়েছিল ফলে সাহালির শরীরে শাড়িটা বাদুড় ঝোলার মতো কোনোমতে ঝুলে ছিল। ঢিলেঢালা ব্লাউজের হাতার এক জায়গা ছিঁড়ে গেছে। দুপুরের পর খাওয়া-দাওয়া করে গোসল করে ব্লাউজের নিচে কিছু না পরায় থলথল করছিল বুকজোড়া। ব্লাউজের ভেতর দিয়ে তার স্তনের বেশিরভাগ বেরিয়ে আসতে চাইছিল।
সাহালিকে ওরকমভাবে তুলে আনতে দেখে আকবর বাদশা চুকচুক করে বলে উঠল,
– তগোরে কি কইছিলাম অরে ইমুন কইরা ধইরা আনতে? অরে স্কুটারে উঠা –
সাহালিকে স্কুটারে ঢোকাতে কষ্ট হচ্ছিল দুজনের। দেহাতি গড়নের সাহালি হাত-পা ছুড়ছিল আর চিৎকার করে মধুকে বলছিল, অরা আমারে তুইলা লয়া যাইতাছে। তুমি অগোরে কিচ্ছু কইবা না?
গরমে মধু কার্তিকের মাথা এমনিতেই ঠিক ছিল না। বিকেলের দিকে চোলাই খেয়ে মাথা আরো খিচড়ে ছিল। আজকাল মধুর যেন কি হয়েছে, তার শুধু শৈশবের কথা মনে পড়ে। বিহারের এক অজগ্রামে জন্ম। জন্মের সাত-আট বছরের সময় বাবা মথুরাম কার্তিক মধুকে নিয়ে চলে এসেছিল ঢাকায়।
মেথরপট্টিতে পাশাপাশি লেগে থাকা ছোট ছোট খুপরিঘরে মধুর মন বসত না। আসার কয়েক মাস পর্যন্ত বাবাকে সে আবার নানির কাছে বিহারে রেখে আসতে বলেছিল। মথুরাম শান্ত গলায় ছেলেকে বলেছে, বিহারে খালি অভাব আর অভাব। এর চেয়ে ঢাকাই ভালো –
মথুরামের কথায় মধু বুঝে গিয়েছিল তার আর বিহারে ফিরে যাওয়া হবে না। মেথরপট্টির একদিকে দয়াগঞ্জের খাল, বিস্তীর্ণ জলা-জংলা জায়গা আর একদিকে স্বামীবাগ – হরদেও গ্লাস ফ্যাক্টরি – টিকাটুলী। তখন দয়াগঞ্জের ওপর দিয়ে দাপিয়ে ট্রেন চলত। পাশের ফুলবাড়িয়ায় ছিল মস্ত ট্রেন স্টেশন। দিনরাত মানুষজন গিজগিজ করত। দিন-রাত ট্রেন এসে থামত স্টেশনে। ফুলবাড়িয়া, বাংলাবাজার, গেণ্ডারিয়া, দীননাথ সেন রোড, সূত্রাপুর, ফরাশগঞ্জ, নারিন্দা, ওয়ারী, রমনায় ছিল ঢাকা শহরের যত রইস আদমিদের বসবাস।
কয়েকদিন ধরে মধুর ভেতরে শৈশবের স্মৃতিতে ফিরে যাওয়ার রোগটা জেঁকে বসেছে। সকাল-দুপুর-বিকেল-সন্ধ্যায় খাটিয়ায় শুয়ে-বসে চোখ বুজে বুজে মধু পুরনো দিনে ফিরে যায়। মেথরপট্টির আশেপাশের ঘরের লোকজন মধুর এরকম ব্যবহারে কিছু বলে না। মধু যে আউরা স্বভাবের, তা সবারই জানা।
এতক্ষণ মধু কিছু বলেনি। শুধু দেখেছে আকবর বাদশা আর তার সঙ্গে দুজনের কাজকাম। আশেপাশের ঘর থেকে ভয়ে কেউ বের হয়ে আসেনি। চারদিকের ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ।
অরা আমারে তুইলা লয়া যাইতাছে – সাহালির এই কথাটা মুহূর্তে মধুকে জাগিয়ে তোলে। বিহারে গিয়ে সাহালির প্রেমে পড়ে মধু যখন তাকে বিয়ে করার কথা বলেছিল, তখন সাহালি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করলে মধু রেগে গিয়ে সাহালিকে বলেছিল, আমারে বিয়া না করলে আমি তুমারে বিহার থিকা তুইলা ঢাকায় নিয়া যামু – মধু খাটিয়া থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আকবর বাদশাকে বলল, – সাহালিরে কই লয়া যাইতাছেন?
– আমার বাইত্তে – আকবর বাদশা বলল।
– আমার বউরে আপনের বাইত্তে লয়া যাইবেন ক্যান?
– অরে আমি শাদি করুম –
এ-কথা শুনে মধু হুংকার ছেড়ে খাটিয়া থেকে উঠে গিয়ে আকবর বাদশাকে জাপটে ধরে ফেলল। হঠাৎ করে মধুর এরকম তেড়ে এসে তাকে জাপটে ধরার আলামতকে আকবর বাদশা ভালোভাবে নিতে পারল না। সে ভয় পেয়ে মধুকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। আকবরের ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে গেল। পড়ে গিয়ে সময় নিল না মধু। মুহূর্তে দাঁড়িয়ে পড়ল। ততক্ষণে আকবর সতর্ক ভঙ্গিতে কোমর থেকে বের করে আনল মাছ আকৃতির নকশা করা ড্যাগার। চকচক করছে ড্যাগারের অগ্রভাগ। আকবরের সঙ্গের দুজনের হাতেও শানানো ছুরি ঝলমল করছে। সাহালির অর্ধেক শরীর স্কুটারের ভেতরে – অর্ধেক বাইরে।
মধু সাহালির কাছে যাওয়ার আগেই আকবর মধুকে পেছন থেকে ছুরি দিয়ে আঘাত করল। সাহালিকে ধরে রাখা অল্পবয়েসি ছেলেটাকে সে এক ধাক্কায় ফেলে দিয়ে স্কুটার থেকে বেরিয়ে মধুর কাছে এসে দাঁড়াল। সাহালির পড়নে শাড়ি নেই। পেটিকোট আর ব্লাউজের সাহালিকে অচেনা লাগছে মধুর কাছে। সাহালি মধুকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে আকবর বাদশার দিকে তাকিয়ে একদলা থুথু ছুড়ে মারে।
– ওস্তাদ, দেখছেন, দেখছেন, মাগির কত্ত বড় সাহস?
আকবর বাদশা ছেলেটার কথা শুনে হেসে দেয়,
– এল্লাইগাই তো সাহালি আমার দিলে পোঁচ মারছে –
সাহালি আকবর বাদশাকে কথা বলার সুযোগ দিলো না। সে প্রায় বাজপাখির মতো ছোঁ মেরে তার হাত থেকে টান দিয়ে ড্যাগারটা নিয়ে নিল। ঘটনা যে এত দ্রুত ঘটবে আকবর বুঝে উঠতে পারেনি।
আকবর চিৎকার দিয়ে সঙ্গের দুজনকে বলে উঠল, চুদির ভাই তগোরে কি বাল ছিরণের লাইগা আনছি? পাড় দিয়া দুইটারেই মাইরা ফালা –
আকবরের হুকুম পেয়ে ছেলে দুটো ছুরি নিয়ে উদ্যত ভঙ্গিতে মধুর ওপর চড়াও হলো। সাহালি দু-হাত দিয়ে বাধা দিতে থাকলে আকবর বাদশার রাগ চড়ে গেল। সে সাহালির পেটে ড্যাগারের পুরোটা ঢুকিয়ে লাথি দিয়ে সাহালিকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিলো।
– হায় হায় ওস্তাদ, এইটা কী করলেন?
– যে মানুষরে আমি পামু না, অরে মাইরা ফালানই বালা। স্কুটার চালু কর – বলে আকবর বাদশা ব্যস্ত হয়ে ওঠে।
তিন
বিকট স্বরে স্কুটারের ইঞ্জিন সক্রিয় হয়ে উঠল। সন্ধ্যারাতের ম্লান অন্ধকারে স্কুটারের ভটভট শব্দ হাওয়ায় মিলিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল আকবর বাদশা। মেথরপট্টির মধু কার্তিকের ঘরের সামনে তিন মাসের পোয়াতি সাহালি ছটফট করতে করতে মরে গেল।
মধু থানা পুলিশ করেনি। দেশের অবস্থাও তখন ভালো না। মেথরপট্টির সবাই মধুকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে বলেছে, নির্বাচনে জিতেও বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানিরা ক্ষমতা দেয়নি। ৭ই মার্চের ভাষণের পর দেশে আইনকানুন নেই। এই অবস্থায় থানা পুলিশ করলে শুধু মধুর ক্ষতি হবে না, পুরো মহল্লার ক্ষতি হবে।
মধু সবার দিকে তাকিয়ে কিছু বলেনি। কী বলবে!
সাহালি মরে যাওয়ার পর মধু কার্তিক যেন কেমন হয়ে গেল। সংসারে মন নেই। লালনের আখড়ায় যায়। কেরানীগঞ্জের মেলায় যায়। মাইজভাণ্ডারের ওরশে যায়। লোকনাথের আশ্রমে যায়। শহরের বাইরে যেতে না পারলে মধুকে স্বামীবাগ, দয়াগঞ্জ, সূত্রাপুরের মন্দিরে দেখা যায়। দয়াগঞ্জের শেষে খালের উল্টো পাশে ছোট ছেলে দয়ালের ওখানে দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে মধুর। দয়াল কার্তিকের ঘরে বাচ্চাকাচ্চা নেই। উল্কারানীকে দেখে মাঝে মাঝে মধু কার্তিকের সাহালির কথা মনে পড়ে।
চার
দয়াল ঘরে নেই তাই মাসুদ ঢুকতে চায়নি। আসলেই কি দয়ালের ঘরে ঢুকতে চায়নি মাসুদ? পরে আমু নে – বলে মাসুদ ঘুরে দাঁড়াতেই পেছন থেকে উল্কারানী খানিকটা অভিমানের গলায়ই বলল, দয়ালে না থাকলে কি ঘরে আওন যায় না?
কারণে-অকারণে মাসুদ আজকাল দয়ালের ঘরে ঘন ঘন ঢুঁ মারে। বিয়ের দশ বছরেও পেটে বাচ্চা না আসায় উল্কারানীর রূপ যেন দিন দিন ধারাল হচ্ছে। উল্কার নেশায় পেয়েছে মাসুদকে। দিনের বেশিরভাগ সময় দয়ালের সঙ্গে তার ঘরেই পড়ে থাকে সে। দয়ালও কিছু বলে না মাসুদকে। দয়াল বলে, মাসুদভাই, কাম-কাইজ ফালায়া আমার এইখানে পইড়া থাকলে হইব?
– হইব, হইব – মাসুদ মনে মনে বলে।
দুপুর পর্যন্ত মাসুদ দয়ালের ঘরে ছিল। অন্যদিনের চেয়ে আজ উল্কা তার গা-ঘেঁষে বসেছে। তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ব্যবহার করেছে। যত্নআত্তি করেছে। মাসুদের সঙ্গে কথা বলার সময়, গ্লাসে মদ ঢেলে দেওয়ার সময় উল্কার বুক থেকে শাড়ির আঁচল সরে গেছে, তাতেও তার কোনো খেয়াল ছিল না। দয়ালের ঘর থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে আসার সময় উল্কা আচমকা মাসুদকে জড়িয়ে ধরে বলল, আপনি এত ডরান ক্যান? একটা বাচ্চার লাইগা দয়ালে রাইতের বেলা কান্দে – বলে উল্কা মাসুদকে আরো ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে ধরে।
মাসুদ আর দেরি করেনি। সে উল্কাকে পাশ কাটিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। দয়ালের ঘর থেকে বের হয়ে মাসুদ বুঝতে পারল, তার মাথাটা ঘুরছে। হাঁটতে গিয়ে সে টের পায় তার পা লেগে-লেগে আসছে।
মাসুদ দেরি না করে রিকশায় উঠে বসল। দুপুরের রোদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তার মেজাজও চড়তে থাকে। মহল্লায় ফিরে যাওয়ার আগে উলফতের দোকানের দিকে যাবে মাসুদ।
পাঁচ
– মাসুদ কথাবার্তা হুঁশ কইরা কইছ কইলাম –
গৌড়ীয় মঠ মন্দিরের কাছে তিন রাস্তার পাশে উলফতের দোকান। পান বিক্রি করে শেষ করতে পারে না। পানের সঙ্গে সিগারেটও চলে বেশ। সকাল থেকে মাঝরাত পর্যন্ত উলফতের দোকানে বেচাকেনা হয়। উলফতের দোকান থেকে ভজহরি সাহা স্ট্রিটের গলির শেষ মাথা গিয়ে পড়েছে নারিন্দার তিন রাস্তার মোড়ে। একটা রাস্তা বাঁদিকে বাঁক নিয়ে চলে গেছে খ্রিষ্টান কবরস্থান হয়ে রাজধানী মার্কেট, আগে যেখানে ছিল হরদেও গ্ল্যাস ফ্যাক্টরি। উলফতের দোকানের আশেপাশে শাহ সাহেব বাড়ি, নারিন্দা ফাঁড়ি, শরৎগুপ্ত রোড, বসুবাজার লেন, মনির হোসেন লেন, ঋষিপাড়া, খ্রিষ্টান কবরস্থান, ওয়ারী, বনগ্রাম, ভজহরি সাহা স্ট্রিট, যোগীনগর – উলফতের দোকানের আশেপাশে।
দুপুরের তেরছা রোদ মাসুদের ওপর এসে পড়েছে। সে ঠিকমতো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না, টলছে। চোখ জোড়া কোটর থেকে লাফিয়ে বের হয়ে আসতে চাইছে মাসুদের। উলফতের দোকানের সঙ্গে ঘেঁষে সে দাঁড়িয়ে থাকে।
– মাসুদ সইরা খাড়া –
– ক্যালা, এই রাস্তা কি তর বাপে করপোরেশন থিক্কা লিজ লইছে?
মাসুদ ঠ্যাটা মালেকের মতো দাঁড়িয়ে থাকে।
মাসুদ যে দয়ালের ঘর থেকে বাংলা খেয়ে এসে এরকম উল্টাসিধা কথা বলছে, সেটা উলফত বুঝতে পারে। মাসুদের ওপর আগে থেকে তার মেজাজ খারাপ ছিল। সেই মেজাজ এখন আরো বেজায় রকমের চড়ে আছে। মাসুদের কত বড় বুকের পাটা!
উলফতকে বলে কি না, তার নাকি হোগা ফুলে পাউরুটি হয়েছে!
চোদনায় কয় কী? মাসুদ কি দয়ালের ঘরে উল্কার সঙ্গে ‘আয় মন প্যাঁচ খাই’ খেলে এসেছে! মাসুদ উল্কার ওপর চড়ে স্বর্গসুখ পাক আর দয়ালের বাড়িতে মদ খেয়ে দশ মাসের পোয়াতির মতো পেট বানাক, তাতে উলফতের কী এসে যায়?
মাসুদের জায়গায় অন্য কেউ হলে এতক্ষণে উলফত দোকানের ভেতর থেকেই বসিয়ে দিত ফ্লাইংকিক। তারপর কিল, ঘুসি, থাপ্পড়। শুধু ‘বাচপান কি দোস’ বলে সে মাসুদের গায়ে হাত তোলেনি। কিন্তু তাই বলে সীমা-পরিসীমার একটা সীমান্তরেখা থাকবে তো? মাসুদ সেই রেখা অতিক্রম করে ফেলেছে।
উলফতের সামনে দুজন পানের কাস্টমার ছিল। সে তাদের বিদায় করে দিয়ে দোকান থেকে রাস্তায় নেমে এলো। মাসুদ দাঁড়িয়ে আছে। উলফতের দিকে তাকিয়ে সে কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই উলফত একটা ঘুসি মেরে দেয় মাসুদের নাকে। প্রচণ্ড জোরে এসে পড়ে ঘুসিটা। কিছু বুঝে ওঠার আগে ঘুসিটা নাক বরাবর এসে পড়ায় মাসুদ নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পেরে এক কাত হয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। হাত থেকে ছিটকে নোকিয়ার কমদামি মোবাইলটা ড্রেনে পড়ে যায়।
মাসুদকে ঘুষিটা মেরে উলফত দাঁড়িয়ে থাকে। দুপুরের পর এদিকে তেমন একটা ভিড় থাকে না। এলাকার মানুষজন কাজ ছাড়া খুব একটা বের হয় না।
উলফতের ঘুসি খেয়ে মাসুদের এরকম আঁতকা রাস্তায় পড়ে যাওয়া দেখে করিম মিয়া দৌড়ে আসে,
– উলফতভাই করছেন কী, করছেন কী? মাসুদ মিয়ার খোমাউমা দেহি ভচকায়া দিছেন –
– অর কত বড় কইলজা? আমারে কয় আমার নাকি হোগা ফুইলা পাউরুটি হয়া গেছে।
– থাউক বাই মদোত্তির কথাবার্তা কানে লয়েন না।
করিম মিয়া পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করে। মহল্লার গলিতে এধরনের ঘটনা খুব একটা ঘটে না।
মাসুদ রাস্তায় পড়ে গোঙাতে গোঙাতে করিম মিয়াকে হুঙ্কার ছাড়ে,
– মাঙ্গের পো চাঙ্গারি, কি কইলি? আমি মদোত্তি?
করিম মিয়া অসহায় দৃষ্টিতে উলফতের দিকে তাকায়। উলফত করিম মিয়াকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভঙ্গি করে মাসুদকে বলল,
– তুই করিম মিয়ারে বকাবাজি করছ ক্যালা?
– করিমরে পরে খিচামু। অহন তর হিসাব আমি লিমু – বলে উলফতকে হুমকি দেয় মাসুদ।
– তোর হিসাবের উপরে আমি খাড়ায়া মুতি – বলে উলফত লুঙ্গিটাকে ভালো করে গিট্টু দেয়। ঘুসি দেওয়ার সময় উলফতের লুঙ্গির গিট্টুটা হালকা হয়ে গিয়েছিল। উলফত হাঁপাতে হাঁপাতে শার্টের পকেট থেকে বলিউড সিগারেটের প্যাকেট বের করল। অনেকক্ষণ ধরে সিগারেটের তিয়াস পেয়েছিল তার। সিগারেট ধরিয়ে লম্বা করে টান দিলো।
– তর ধন দিয়া তুই খাড়ায়া মুতবি না বয়া মুতবি জানে কার বালে। উলফইত্যা, তরে আমি এমতে এমতে ছাইড়া দিমু না –
ছয়
মাসুদের নাকের অগ্রভাগ রক্ত জমে শক্ত হয়ে আছে। টলতে টলতে উঠে দাঁড়াল সে। করিম মিয়া অসহায়ের মতো এগিয়ে গিয়ে মাসুদকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিতে গেলে মাসুদ তেলেবেগুনে খেপে যায়,
– হউরের পো, আমি কি লুলা নি যে একলা একলা উঠবার পারুম না?
– দেখছেন ভাই কী কয়? আমি বলে হউরের পো –
– হ, তুই তো তর বইনরে অর লগে বিয়া দিছছ?
– আমার বইনরে কোন দুঃখে হের লগে বিয়া দিমু?
– অয় নিজের ঘরেই ঠিকমতন কামউম করবার পারে না – বলে উলফত হাসতে থাকে।
উলফত যখন মাসুদের দিকে তাকিয়ে হাসছিল, তখন সেখানে হোসনে আরা এসে রাস্তার ওপরে দাঁড়ায়। হোসনে আরা মাসুদের তিন বছরের ছোট। কিন্তু হোসনে আরাকে দেখলে যে কেউ মনে করবে মাসুদই বুঝি ওর ছোট। মাসুদকে ওভাবে রাস্তায় পড়ে
থাকতে দেখে সে কাঁপতে থাকে,
– উলফতভাই আপনে থাকতে আমার ভাইরে কোন হালায় মারছে – বলতে বলতে হোসনে আরা মাসুদের বুকের ওপরে ঝুঁকে পড়ে। ভাইকে রক্তাক্ত দেখে সে কাঁদছে।
বোনকে কাঁদতে দেখে মাসুদ গোঙাতে গোঙাতে বলল,
– বইন, তুই কান্দছ ক্যালা?
মাসুদের কথা শুনে হোসনে আরা এবার ফুঁসে ওঠে,
– কোন কুত্তার বাচ্চায় তুমারে মারছে?
মাসুদ উলফতের দিকে তাকিয়ে হোসনে আরাকে ধমক দেয়,
– তর বাপে আমারে মারছে।
– হায় হায় – কয় কী? আমার বাপে মরছে কুনকালে –
– তুই চোপা বন করবি?
– আমি আবার চোপা করলাম কই?
– আবারও চোপা করছ? থাপড়ায়া কানশাপট্টি লাল কইরা ফালামু –
মাসুদের কি মাথা খারাপ হয়ে গেল? হোসনে আরা ভয় পেয়ে যায়।
– ভাইজান, আপনের কী হইছে? হুদা কামে বাকোয়াজ পারেন কিল্লাইগা –
দুপুর রোদের তীব্রতায় চারদিক ফালা ফালা হয়ে যাচ্ছে। উলফত সেই তীব্রতা সহ্য করতে পারে না। চলে যাওয়ার আগে সে হোসনে আরাকে বলল, মাসুদরে ঘরে লয়া যা – ওর
মাথাউথা বিগড়ায়া গেছে।
চারদিকের সবকিছু কেমন অস্পষ্ট লাগতে শুরু করে মাসুদের। উলফতকেও আবছা আবছা লাগছে। মাসুদ রাস্তায় পড়ে থাকে – তার আর উঠতে ইচ্ছে করছে না। তার পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে চিকন ড্রেন। দিনমান মহল্লার বাসাবাড়ির ময়লা পানি, গু-মুত বয়ে যায়। মাসুদ আবছা নয়নে দেখতে পেল সেই ড্রেনের ময়লা পানিতে ছোট্ট হলুদ রঙের প্লাস্টিকের একটা প্লেন আটকে আছে। প্লেনের বাঁদিকের ডানাটা ভাঙা। মাসুদের দৃষ্টি যখন ম্লান থেকে ম্লানতর হয়ে যাচ্ছিল, তখন সে দেখতে পেল, ভাঙা ডানার প্লেনটা ড্রেন থেকে ধীরে ধীরে উড়তে শুরু করে দয়াগঞ্জের দিকে যেতে শুরু করল।
উল্কারানীর বাচ্চা হলে মাসুদ তাকে এরকম একটা খেলনা প্লেন কিনে দেবে – ভাবতে ভাবতে মাসুদ নিস্তব্ধ হয়ে যায়।
দুপুরবেলার প্রখর রোদেরা তখন নারিন্দা রোডে পৃথিবীর সেরা নকশা আঁকায় ব্যস্ত।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.