‘বাংলা ১৩১১ সনে, প্রকাশিত হয়েছিল ছোট একটি বই, বইটির উৎসর্গপত্রে লেখা ছিল পরম শ্রদ্ধাভাজন কবিবর শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়, শ্রীকরকমলেষু। রবীন্দ্রনাথের চেয়ে আট বছরের ছোট এই সাহিত্যসেবীর নাম দীনেন্দ্রকুমার রায়।’১ বইটির নাম পল্লীচিত্র, এটি প্রকাশিত হয় কলকাতার কলেজ স্ট্রিট মার্কেটের রায় অ্যান্ড রায় চৌধুরী প্রকাশনী থেকে, কিন্তু ভূমিকার উপান্তে লেখকের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছিল মেহেরপুর, নদীয়া। দীনেন্দ্রকুমার রায়ের (১৮৬৯-১৯৪৩) নামের সঙ্গে যারা পরিচিত, তারা তাঁকে বন্দিনী রাজনন্দিনী কিংবা অজয় সিংহের কুঠির মতো ডিটেকটিভ সিরিজের রচয়িতা কিংবা গোয়েন্দা কাহিনি মিস্টার ব্লেকের স্রষ্টা হিসেবেই চেনেন। ডিটেকটিভ রবার্ট ব্লেক এককালে বিপুল পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে, রবার্ট ব্লেক রহস্য সিরিজের ভাষা, কাহিনি, পরিকল্পনা, শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনা পরম্পরা, উৎকণ্ঠা-বিস্তার এতটাই মর্মভেদী ও মনকাড়া ছিল যে, দীনেন্দ্রকুমার রায় রহস্যরস পিপাসু পাঠকসমাজ এমনকি অনুসন্ধিৎসু সমালোচকদের কাছে গৃহীত ও আদৃত হন রহস্যকাহিনির রচয়িতা হিসেবে। কিন্তু এটা তাঁর আসল পরিচয় নয়, এটা তাঁর অপেক্ষাকৃত গৌণ পরিচয়-চিহ্ন। তিনি ছিলেন দিগন্তবিস্তারী প্রতিভাসম্পন্ন বহুপ্রসূ গদ্যশিল্পী, প্রাবন্ধিক ও সংবাদপত্রসেবী। পল্লীবিষয়ক মননশীল রচনার জন্য তিনি ‘রবীন্দ্রনাথের দক্ষিণ পাণির প্রসন্ন আশীর্বাদ লাভে সমর্থ হয়েছিলেন।’ দীনেন্দ্রকুমারের পল্লীচিত্র অনেক বছর ধরে (পশ্চিমবঙ্গের) বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা শেখার আদর্শ পুস্তকগুলির অন্যতম ছিল। প্রকাশক ও মুদ্রক হিসেবে প্রকাশনাশিল্পের সমৃদ্ধি ও বিস্তারে জীবনের একটি বড়ো সময় অতিবাহিত করেছেন তিনি। ‘পাঁচকড়ি দের অনুসরণে দীনেন্দ্রকুমারও বসিয়েছিলেন নিজস্ব ছাপাখানা। তাঁর রহস্য-লহরী সিরিজের ১০৮-নং বই বন্দিনী রাজনন্দিনী ছাপা হয় তাঁরই নিজস্ব ছাপাখানায়, যার ঠিকানা ছিল ২-এ অক্রুর দত্ত লেন, কলকাতা। মুদ্রক ও প্রকাশক ছিলেন দীনেন্দ্রকুমার রায়ের পুত্র দিব্যেন্দ্রকুমার রায়।’২ বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী এই লেখক সাহিত্যিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক তৎপরতার জন্য রবীন্দ্র-ভগিনী স্বর্ণকুমারী দেবী, রজনীকান্ত সেন, কাঙাল হরিনাথ মজুমদার, জলধর সেন, সুরেশচন্দ্র সমাজপতি প্রমুখ সাহিত্যসেবীর নিবিড় স্নেহসান্নিধ্য লাভ করেন। ইতিহাসের ছায়া অবলম্বনে রচিত প্রথম আলো উপন্যাসে কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নিখুঁতভাবে বর্ণনা করেছেন দীনেন্দ্রকুমার রায়ের ব্যক্তিজীবনের একটি বিশেষ দিক। তিনি লিখেছেন, দীনেন্দ্রকুমার রায় এক দরিদ্র বাঙালি লেখক, কলকাতার কল-কোলাহল ও সাহিত্য পরিবেশ ছেড়ে এই নিস্তরঙ্গ বরোদায় এসে পড়ে থাকার কোনো বাসনা তার ছিল না। কিন্তু পেটের জ্বালা বড় জ্বালা। বাংলা গল্প-প্রবন্ধাদি লিখে পয়সা পাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়ে গৃহশিক্ষকতার কাজ নিতে হয়েছে। এমন ছাত্র পাওয়াও অবশ্য ভাগ্যের কথা। ছাত্রটি মাস্টারের থেকে অনেক বেশি জ্ঞানী এবং স্বয়ং একজন অধ্যাপক। বরোদা রাজ কলেজে ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে এর মধ্যেই অরবিন্দর বেশ নাম ছড়িয়েছে। ছাত্র হিসেবে অরবিন্দ যে শুধু মনোযোগী তা-ই নয়, অতি খুঁতখুঁতে। বাংলা তার মাতৃভাষা হলেও শৈশব থেকেই মাতৃসঙ্গ বঞ্চিত, এই ভাষাতে সে কথা বলতেও পারে না। কিন্তু এখন সে উত্তমরূপে বাংলা শেখার জন্য বদ্ধপরিকর। একখানি বাংলা বই ধরে ধরে সে প্রতিটি শব্দের অর্থ বুঝে নিতে চায়।৩
প্রথম আলো উপন্যাসে এভাবেই অরবিন্দের গৃহশিক্ষক, সাহিত্যিক দীনেন্দ্রকুমার রায়ের উজ্জ্বল উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এই বিশাল উপন্যাসে তৎকালীন সমাজবাস্তবতা বোঝানোর জন্য রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের ধর্ম-আন্দোলন, পেশাদারি থিয়েটার মঞ্চে গিরিশ ঘোষের নটী বিনোদিনীর অবদান, ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ, অরবিন্দের সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন, হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে ভেদবুদ্ধি, রবীন্দ্রনাথের কবিজীবনের নানা রূপান্তরের কথা যেমন লিখেছেন, তেমনি টেনে এনেছেন খ্যাতিমান লেখক দীনেন্দ্রকুমার রায়ের প্রসঙ্গ। ত্রিপুরার মহারাজা রাধাকিশোর মাণিক্য, রবীন্দ্রনাথ, রামকৃষ্ণদেব, বিবেকানন্দের মতো দীনেন্দ্রকুমারও এ-উপন্যাসে একটি জীবন্ত চরিত্র। কথাশিল্পী, প্রাবন্ধিক, সংবাদ-সাময়িকপত্র সম্পাদক, ডিটেকটিভ উপন্যাসের প্রণেতা ও অনুবাদক হিসেবে তৎকালীন বাঙালি বিদ্বৎসমাজে দীনেন্দ্রকুমার রায়ের প্রভাব-পরিচিতি-গ্রহণযোগ্যতা যেমন ছিল, তেমনি জনপ্রিয়তাও ছিল উল্লেখ করার মতো। কিন্তু একালে তিনি প্রায় বিস্মৃত একটি নাম। বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাহিত্যিক পরিমণ্ডলে তাঁর পরিচিতি নেই বললেই চলে। অথচ দীনেন্দ্রকুমারের পল্লীচিত্র পড়ে অভিভূত হয়ে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘ইহা আমাদের এই তরুপল্লব মর্ম্মরিত ছায়াময় বাংলাদেশের হৃদয়ের মধ্য হইতে আনন্দ ও শান্তি বহন করিয়া আনিয়া আমাকে উপহার দিয়াছে।’৪
নাট্যাচার্য গিরিশচন্দ্র ঘোষ, জলধর সেন, সুরেশচন্দ্র সমাজপতিসহ সেকালের প্রথিতযশা সাহিত্য-ব্যক্তিত্বরা বইটির ভূয়সী প্রশংসা করেন। তৎকালীন যুগের সমাজের, সাহিত্যের, রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের, জ্ঞান-বিজ্ঞানের, সুস্থ-মনোরঞ্জনের অক্লান্ত কর্মী ছিলেন দীনেন্দ্রকুমার। সুরেশচন্দ্র সমাজপতি তাঁকে ‘বঙ্গভূমির সৌন্দর্য-লক্ষ্মীর চিত্র-উপাসক’ হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন, ‘বাঙ্গালার পল্লীশ্রীর অনেক চিত্র ও পল্লীবাসীর বিবিধ সুখ দুঃখের বহুকাহিনি এই ভাবুক ভক্তের ঐন্দ্রজালিক তুলিকার স্পর্শে সমুদ্ভাসিত ও সাহিত্যভাণ্ডারের চিরন্তন সম্পদে পরিণত হইয়াছে।’৫
দুই
বাংলার সামাজিক ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ইংরেজরা আসার আগে বাংলার গ্রামগুলি ছিল বেশ সচ্ছল ও স্বনির্ভর। তখন গ্রামে সুখ-শান্তি-স্বাচ্ছন্দ্য ছিল, মানুষের মধ্যে ছিল সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি-সহবত। সারা বছর জুড়ে গ্রামে গ্রামে চলত নানা ধরনের পালা-পার্বণ-নৃত্য-গীত, আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব। ‘গ্রামে নিজ নিজ ক্ষেতে উপযুক্ত চাষ হত। ধেনু দ্বারা গৃহ ছিল পবিত্র। গৃহকর্তা ছিল অতিথিবৎসল। গৃহিণীদের ছিল না অতিথিসেবায় ক্লান্তি। চণ্ডীমণ্ডপে বসত আসর, আঙিনায় চলতো রামায়ণ পাঠ, চলতো কথকতা।’৬ বাড়ি বাড়ি উৎসব যেন লেগেই থাকত। বিভিন্ন গ্রামে ছিল যাত্রার দল, কবিগানের দল, জারিগানের দল, অষ্টক গানের দল। উৎসব, পালা-পার্বণের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন স্থানীয় জমিদার ও গ্রামীণ এলিটরা। দুর্গোৎসব ও কালীপূজায় বারোয়ারিতলায় বসত কবিগান ও যাত্রার আসর। মহররম উপলক্ষে হতো জারিগান, লাঠিখেলা এবং মেলা। প্রায় গ্রামেই ছিল সৌখিন যাত্রাদল। জমিদারবাড়িতে যাত্রা কিংবা পালাগানের মহড়া বসত। রামায়ণ গান ও পদাবলী কীর্তনের প্রতি মুসলমান চাষিদেরও আগ্রহ ছিল। জ্যোৎস্না রাতে খোলা আকাশের নিচে বসে গ্রামের মানুষ মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে সারারাত ধরে পালাগান শুনত। গান শুনেই তারা শিখত ধর্ম ও জীবনের কথা। কিন্তু চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথার বিষাক্ত নিশ্বাসে পুড়ে ছাই হতে থাকে বাংলাদেশের ‘শাশ^ত গ্রাম’-এর সেই সৌন্দর্য-সুষমা। ভেঙে পড়ে তার চিরায়ত সমাজকাঠামো, সাংস্কৃতিক পরম্পরা ও শিক্ষাব্যবস্থা, বংশগত বৃত্তি হারিয়ে মানুষ অভাব-আকাল, মূল্যবোধজনিত অবক্ষয়সহ নানা অসংগতির মুখোমুখি হয়। সেইসঙ্গে নগরায়নের চোখ-ধাঁধানো আলোয় গ্রামের মানুষের চোখ ধাঁধিয়ে যায়। যন্ত্রদানব ও শিল্পায়নের উদ্ধত পদাঘাতে তছনছ হয় গ্রামের মানুষের জীবনচর্যা, সংস্কৃতি, ধর্ম-দর্শন ও বিশ্বাস-মূল্যবোধ। নাগরিক জীবনের আলো-আঁধারিতে প্রলুব্ধ হয়ে মানুষ পিঁপড়ের মতো শহরে এসে ভিড় জমাতে থাকে। সর্বস্ব খুইয়ে করুণ স্মৃতি নিয়ে বিমর্ষ হয়ে পড়ে থাকে বাংলার হাজারো গ্রাম। দীনেন্দ্রকুমার রায় অত্যন্ত দরদ দিয়ে সেইসব বেদনাপীড়িত গ্রাম ও গ্রামজীবনের করুণ স্মৃতি তথা সুখ-দুঃখ, মিলন-বিরহ, উৎসব-উদ্যাপনের রূপপ্রতিমা অঙ্কন করেছেন তাঁর পল্লিবিষয়ক নানা গ্রন্থে।
দীনেন্দ্রকুমারকৃত পল্লীচিত্র, পল্লীবৈচিত্র্য, পল্লীকথা, পল্লীবধূ প্রভৃতি গ্রন্থ মূলত চিরায়ত বাংলার রূপপ্রতিমার আবেগঘন বর্ণনা। ইংরেজ শাসনে বিপর্যস্ত বাঙালি জাতি তার হৃত গৌরব ফিরে পেতে এক ধরনের আবেগ ও অন্তর্গত তাগিদ অনুভব করছিল, সেই আবেগ ও তাগিদ থেকেই আমরা ফিরে যেতে চেয়েছিলাম পিতামহ-প্রপিতামহের স্নেহছায়াবিজড়িত উদ্বেগহীন পল্লীর কাছে। পল্লীকে জানা ও জানাবার জন্য নানা ধরনের উদ্যোগও গ্রহণ করা হচ্ছিল তখন। দীনেন্দ্রকুমারের পল্লিবিষয়ক রচনাগুলিও সেই ভেতরের তাগিদ ও শিকড়ের কাছে ফিরে যাওয়ার আকুতি ও আবেগ থেকে রচিত। পল্লীবিষয়ক রচনার পাশাপাশি সেকালের স্মৃতিও একটি অনবদ্য গ্রন্থ। এই অনবদ্য স্মৃতি আলেখ্যে খুঁজে পাওয়া যায় উনিশ শতক থেকে বিশ শতকের চল্লিশের দশক পর্যন্ত কালখণ্ডের অবিভক্ত বাংলা ও বাঙালির যাপিত জীবনের জলছবি। ফলে এটি কেবল তাঁর ব্যক্তিজীবনের স্মৃতি আলেখ্য না-হয়ে হয়ে ওঠে বঙ্গীয় জনজীবনের সামাজিক ইতিবৃত্ত।
তিন
দীনেন্দ্রকুমারের জন্ম ১৮৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে আগস্ট অবিভক্ত নদীয়া জেলার মেহেরপুরের এক সম্ভ্রান্ত তিলি বংশে। তাঁর পিতা ব্রজনাথ রায় ছিলেন সাহিত্যসেবী, পেশাগত সূত্রে কৃষ্ণনগরে বসবাস করতেন। কর্মসূত্রে কৃষ্ণনগরে অবস্থানকালে কৃষ্ণনগরের উচ্চশিক্ষিত অভিজাতদের সান্নিধ্য লাভ করেন। ‘তাঁর কৃষ্ণনগরের বন্ধু-বান্ধবেরা সকলেই ইংরেজি ভাষায় সুশিক্ষিত ছিলেন। এমনকি কৃষ্ণনগরে থাকার সময় ব্রজনাথ হিন্দুধর্মের গোঁড়ামি থেকেও বহুলাংশে মুক্ত ছিলেন, আকৃষ্ট হয়েছিলেন ব্রাহ্মধর্মের দিকে।’৭ ব্রজনাথবাবু কৃষ্ণনগরে ব্রাহ্মসমাজের প্রবল প্রভাবে প্রভাবান্বিত হয়ে এমন ব্রাহ্মভাবাপন্ন হয়েছিলেন যে, এক পর্যায়ে হিন্দুসমাজের রীতিনীতি ও কৃত্যাচারের প্রতি আস্থাহীন হয়ে তিনি নিরাকার পরমব্রহ্মের উপাসনা শুরু করে দেন। দীনেন্দ্র-পিতা ব্রজনাথ রায় ভালো ইংরেজি জানতেন, কাজ করতেন কৃষ্ণনগরের প্রভাবশালী জমিদারি সেরেস্তায়, কিন্তু অর্থোপার্জনে তেমন সফল হননি। ফলে ‘নাটোরের প্রাতঃস্মরণীয়া মহারাণী ভবানীর স্বাক্ষরিত’ স্বীকৃতি ও দানপত্রপ্রাপ্ত রায় পরিবারের বিত্তবৈভবের জৌলুস দীনেন্দ্রের জন্মকাল থেকেই ক্রমশ কমতে থাকে। জীবন-জীবিকার তাগিদে ব্রজনাথ ও তাঁর ভাইবর্গকে জমিদারি সেরেস্তায় অথবা রাজ এস্টেটের চাকরির দ্বারস্থ হতে হয়। দীনেন্দ্রকুমারের জন্ম মেহেরপুরের ‘সুখশান্তিপূর্ণ, ছায়াশীতল, শ্যামল বক্ষে’ হলেও শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হয় বাবার কর্মস্থল কৃষ্ণনগরে।
কৃষ্ণনগর কলেজে অধ্যয়নকালে সহপাঠী ও শহরের ঘনিষ্ঠজনদের মধ্যে পেয়ে যান অল্পবিস্তর সাহিত্যচর্চার অনুকূল আবহাওয়া ও পরিবেশ। সাহিত্য নিয়ে মেতে ওঠেন এবং এই মেতে ওঠাটা একপর্যায়ে মাতামাতিতে পরিণত হয় যে, বাধ্য হয়ে কাকা যদুনাথ রায় তাঁকে পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল হাইস্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন, সেখান থেকে তিনি এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। দীনেন্দ্রকুমারের কাকা ছিলেন বাংলাভাষায় সুপণ্ডিত, বিদ্যোৎসাহী এবং মহিষাদল রাজ-এস্টেটের কৃতবিদ্য ম্যানেজার। এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কৃষ্ণনগর ফিরে কৃষ্ণনগর কলেজে ভর্তি হন; কিন্তু পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখে মহিষাদল রাজ স্কুলে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। মহিষাদলে সহকর্মী হিসেবে সাহচর্য লাভ করেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক জলধর সেনের (১৮৬০-১৯৩৯)। সাহিত্যিক জলধর সেনের সাহচর্য ও স্নেহসান্নিধ্য প্রাপ্তিকে জীবনের পরম সৌভাগ্য হিসেবে বর্ণনা করেছেন দীনেন্দ্রকুমার তাঁর সেকালের স্মৃতি গ্রন্থে। তিনি বলেন, ‘সুপ্রসিদ্ধ সাহিত্যিক রায় বাহাদুর শ্রীযুক্ত জলধর সেন মহাশয় সাহিত্য সমাজে খ্যাতি লাভ করিয়া রায় বাহাদুর হইবার পূর্ব হইতে আমি তাঁহার সহিত পরিচিত হইবার সৌভাগ্য লাভ করিয়াছি।’৮ কাকার বাসায় জলধর সেন ও দীনেন্দ্রকুমার একই সঙ্গে বসবাসের দৌলতে দুজনে পেয়ে যান সাহিত্যচর্চার অফুরন্ত সুযোগ। মহিষাদলে খুব বেশিদিন থিতু হতে পারেননি দীনেন্দ্রকুমার। নিদারুণ অর্থকষ্ট ও জীবন-জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে মহিষাদল ত্যাগ করে তাঁকে রাজশাহী চলে আসতে হয়। জেলা জজের কর্মচারী হিসেবে কর্মজীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয়। অর্থকষ্টের কারণে সেখানেও তিন বছরের বেশি স্থায়ী হতে পারেননি। তবে রাজশাহী অবস্থানকালে নাটোরের মহারাজা সাহিত্যসেবী জগদিন্দ্রনাথ রায়, প্রখ্যাত ঐতিহাসিক-লেখক অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যদুনাথ সরকার, কবি রজনীকান্ত সেন, রবীন্দ্র-বন্ধু লোকেন্দ্রনাথ পালিতের সাক্ষাৎ ও সান্নিধ্য লাভ করেন। দীনেন্দ্রকুমার সেকালের স্মৃতি গ্রন্থে যদুনাথ সরকার সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। তাঁর কাছে যদুনাথ ছিলেন “দ্যুতিমান মধ্যমণি’ – যার উজ্জ্বল প্রভায় আজ বাঙ্গলা, বিহার, উড়িষ্যা গৌরবদীপ্ত।’ ম্যাজিস্ট্রেট লোকেন্দ্রনাথ পালিতের আতিথ্য গ্রহণ করে রবীন্দ্রনাথও মাঝেমধ্যে রাজশাহীতে আসতেন। রাজশাহীতে লোকেন্দ্রনাথের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে।
দীনেন্দ্রকুমার আশৈশব সাহিত্য-অনুরাগী। খুব সম্ভবত উত্তরাধিকারসূত্রেই প্রাপ্ত হন এই আগ্রহ ও অনুরাগ। তাঁর বাবা ব্রজনাথ রায় ছিলেন কবি ও সাহিত্যব্রতী, যা পূর্বেই উল্লেখ করেছি। তিনি আকিঞ্চনের মনের কথা নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। দশ বছর বয়সে দীনেন্দ্রকুমার সাক্ষাৎ লাভ করেন কবি-নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সঙ্গে। ‘সেই সময় কবিবর দ্বিজেন্দ্রলাল একবার মেহেরপুরে বেড়াইতে গিয়েছিলেন।’ উল্লেখ্য যে, মেহেরপুরে ডিএল রায়ের কবিতাবিষয়ক বক্তৃতা শুনে দীনেন্দ্রকুমারের মধ্যে কবিতা তথা সাহিত্যপ্রীতি জন্মায়। দ্বিজেন্দ্রলালের বড় ভাই রাজেন্দ্রলাল রায় সে-সময় (১৮৭৯) মেহেরপুর কোর্টের হেডক্লার্ক ছিলেন।
ভৈরব-তীরবর্তী থানাপাড়ার দক্ষিণে মুখার্জি জমিদারদের নিভৃত বাংলোয় রাজেন্দ্রবাবু সপরিবারে বাস করতেন। আত্মীয়তা ও সাহিত্যচর্চার সূত্রে কুমারখালীর কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের (১৮৩৩-১৮৯৬) সঙ্গেও দীনেন্দ্রকুমারের সখ্য-সম্পর্ক হয়েছিল। তিনি ‘হরিনাথের কাছ থেকে সাহিত্য ছাড়াও সাংবাদিকতা এবং সাময়িকপত্র পরিচালনায়ও দীক্ষা পেয়েছিলেন।’৯ মাত্র উনিশ বছর বয়সে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত ভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম রচনা ‘একটি কুসুমের মর্ম্মকথা’। তিনি যখন লিখতে শুরু করেছেন, তখন বাংলা সাহিত্য প্রবেশ করেছে স্বর্ণযুগে। রবীন্দ্রনাথ প্রায় পূর্ণমাত্রায় নিজেকে মেলে ধরেছেন। প্রকাশিত হয়েছে বউ-ঠাকুরানীর হাট ও রাজর্ষির মতো উপন্যাস, নাটক ও কাব্যগ্রন্থ। গিরিশ ঘোষ, অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফি, নটী বিনোদিনীদের অভিনয়কুশলতায় কলকাতার রঙ্গালয়ে জমে উঠেছে থিয়েটারচর্চার আবহ। সেই সময়বৃত্তে বঙ্গীয় সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্রে কৃষ্ণনগরেরও নামডাক ছিল, কৃষ্ণনগর কলেজে অধ্যয়নকালে ঘনিষ্ঠতা লাভ করেন তৎকালীন অবিভক্ত বঙ্গদেশের বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব ব্যারিস্টার মনোমোহন ঘোষের পরিবারসহ বাংলার শ্রেষ্ঠ মনীষীদের সঙ্গে। পরবর্তী সময়ে ঘনিষ্ঠতা হয় সুরেশচন্দ্র সমাজপতি, রজনীকান্ত সেন ও শিবচন্দ্র বিদ্যার্ণব প্রমুখের সঙ্গে। রাজশাহীর ‘প্রবাস’ জীবনে অকৃত্রিম বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন কান্তকবি রজনীকান্ত সেন। দীনেন্দ্রকুমার ভারতবর্ষ (অগ্রহায়ণ ১৩২৪ সংখ্যা) পত্রিকায় ‘কবি রজনীকান্ত’ শীর্ষক স্মৃতিকথায় লেখেন : ‘পূজার ছুটির পর তিনি বাড়ী হইতে রাজশাহীতে ফিরিয়া যাইতেছিলেন, আমিও ছুটির শেষে রাজশাহী যাইতেছিলাম … স্টিমারে উঠিয়া দেখি, স্টিমারের ডেকের উপর একখানি শতরঞ্চি বিছাইয়া রজনীকান্ত আড্ডা জমাইয়া লইয়াছে। তাহার গল্প আরম্ভ হইয়াছে।’১০
দীনেন্দ্রকুমার যে কত অনুভূতিসম্পন্ন ও প্রতিভাধর লেখক ছিলেন তা বারিদবরণ ঘোষকৃত ‘দীনেন্দ্রকুমার রায় : জীবন ও সাধনা’ শীর্ষক প্রবন্ধটি পাঠ করলে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। তিনি লিখেছেন, ‘দীনেন্দ্রকুমার ছিলেন আশ্চর্য স্মৃতিকথার মহান ভাণ্ডারী।’ তিনি আরো লেখেন, ‘মাসিক বসুমতী পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত তাঁর সেকালের স্মৃতি (১৩৩৯-৪৩) এক মহামূল্যবান স্মৃতিচারণা। এটি আশু গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হলে সেকালের যুগ ও জীবনের একটি বিশ্বাসযোগ্য দলিল আমাদের করায়ত্ত হতে পারবে।’
বলা যেতে পারে, সেই কথা ভেবে কলকাতার আনন্দ পাবলিশার্স সেকালের স্মৃতি (১৯৮৮) গ্রন্থটি একালের পাঠকদের জন্য গ্রন্থাকারে পুনঃপ্রকাশ করে। শুধু সেকালের স্মৃতিই নয়, আনন্দ পাবলিশার্স দীনেন্দ্রকুমারের রচনা সমগ্র (২০০৪) পুনঃপ্রকাশ করেছে। গ্রন্থের ভূমিকায় কবি জয় গোস্বামী লিখেছেন, ‘এই রচনাগুলির ধমনীতে যে রক্তস্রোত বয়ে চলেছে তা এই এক শতাব্দীকাল পেরিয়ে এসেও জীবন্ত রয়েছে। কারণ তার মধ্যে আছে স্নেহ করুণার সঞ্জীবনী। সকলকে নিয়ে, সমস্ত পড়শী, প্রতিবেশীকে সঙ্গে জড়িয়ে যে বেঁচে থাকা, তারই উদ্ভাসন আছে এই সব রচনায়।’১১
চার
দীনেন্দ্র-জীবনের এক বর্ণাঢ্য অধ্যায়ের সূচনা হয় গুজরাটের বরোদায় এক মহান মানুষের প্রীতিসান্নিধ্যে। রবীন্দ্রনাথের সুপারিশে তিনি এখানে অরবিন্দ ঘোষের (১৮৭২-১৯৫০) বাংলা গৃহশিক্ষক হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ও তাঁর জনপ্রিয় উপন্যাস প্রথম আলোয় এসব ঘটনা বর্ণনা করেছেন। ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস বা আইসিএস পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়ে অরবিন্দ দেশে ফিরে (১৮৯৩) তদানীন্তন দেশীয় রাজা বরোদার মহারাজের চাকরি গ্রহণ করেন। ইংরেজি ও ইউরোপের অন্যান্য ভাষায় সুপণ্ডিত হলেও বাংলা ভাষার ওপর তাঁর তেমন দখল ছিল না। বরোদায় অরবিন্দকে বাংলাভাষা শেখানোর দায়িত্ব নেন দীনেন্দ্রকুমার। অরবিন্দের গৃহশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনকাল দীনেন্দ্রের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, সেটা তিনি বর্ণনা করেছেন তাঁর সেকালের স্মৃতি গ্রন্থে। মাত্র সাত বছর বয়স থেকে বিলেতে অবস্থানের কারণে অরবিন্দ ভালো বাংলা শিখতে পারেননি। কিন্তু বাংলা ভাষা-সাহিত্য, সংস্কৃতি, বাঙালির ঐতিহ্যের প্রতি ছিল তাঁর অপরিমেয় অনুরাগ। তিনি ও তার অভিভাবকেরা আগ্রহসহকারে এমন একজন দক্ষ বাংলা শিক্ষকের খোঁজ করছিলেন, যিনি হবেন বাংলা ভাষার সুপণ্ডিত। অবশেষে রবীন্দ্রনাথের সুপারিশে দীনেন্দ্রকুমারকে বাংলা শিক্ষকের দায়িত্বভার প্রদান করা হয়, দায়িত্ব পেয়ে দু-বছর বরোদায় অবস্থান করেন। অরবিন্দের স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত চারিত্রিক দৃঢ়তা, হৃদয়ের প্রসারিত সৌন্দর্য, সহজ ‘সাদাসিধে জীবনযাপন’ এবং ‘প্লেইন লিভিং হাই থিংকিং’-এর মতো মহৎ আদর্শে দীনেন্দ্রকুমার গভীরভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘অরবিন্দ আজন্ম সন্ন্যাসী। বাল্যকাল হইতে প্রায় পঁচিশ বৎসর বয়স পর্যন্ত তাহাকে ইংল্যান্ডে বাস করিতে হইয়াছিল। কিন্তু বিলাস লালসা তাঁহাকে স্পর্শ করিতে পারে নাই … আমি দুই বৎসরের অধিককাল তাহার বঙ্গভাষার শিক্ষকরূপে তাহার সহিত একত্রে বাস করিয়াছি। কিন্তু কোনোদিন তাহাকে মূল্যবান পরিচ্ছদ ব্যবহার করিতে দেখি নাই।’১২
বরোদা-পর্বের শেষ পর্যায়ে সাহিত্যিক হিসেবে দীনেন্দ্রকুমারের সুখ্যাতি বাঙালি বুদ্ধিজীবী ও পাঠকসমাজে ছড়িয়ে পড়ে। এ-সময় প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক বসুমতী (১০ ভাদ্র ১৩০৩) পত্রিকা। সম্পাদক জলধর সেনের আহ্বানে বরোদা ছেড়ে দীনেন্দ্রকুমার বসুমতী পত্রিকায় যোগদান করেন সাংবাদিক হিসেবে। সাহিত্যসাধনা ও সাংবাদিকতা হয়ে ওঠে তাঁর ধ্যানজ্ঞান ও জীবিকার অবলম্বন। ভুবনমোহন মুখোপাধ্যায়, ক্ষেত্রমোহন গুপ্ত, সুরেশচন্দ্র সমাজপতি প্রমুখ খ্যাতিমান সাংবাদিকের প্রীতিসান্নিধ্যে রপ্ত করেন সাংবাদিকতার কলাকৌশল। স্বীয় প্রতিভাগুণে দীনেন্দ্রকুমার একপর্যায়ে বসুমতী পত্রিকার সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত হন। বসুমতীতে দু-হাত ভরে তিনি লিখতে থাকেন সৃজনশীল, মননশীলসহ নানা সব ফরমায়েসি লেখা, বসুমতীর পাতায় তাঁর এত লেখা মুদ্রিত হয়েছে যে, এগুলোর অধিকাংশই অগ্রন্থিত রয়েছে অদ্যাবধি। প্রেতপুরী, কথাশিল্পীর হত্যা রহস্য, প্রলয়ের আলো উপন্যাস বসুমতীতে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে। নন্দন কানন নামে একটি মাসিক পত্রিকার সম্পাদনার সঙ্গেও তিনি সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। এতে প্রকাশিত হয় তাঁর রহস্য লহরী, এই রহস্য সিরিজ তাঁকে পরিয়ে দেয় বিপুল খ্যাতির মুকুট। রহস্য কাহিনির বা ডিটেকটিভ উপন্যাসের লেখক হিসেবে তাঁর প্রভাব-পরিচিতির পেছনে পত্রিকাটির উল্লেখনীয় ভূমিকা রয়েছে, যা বলাই বাহুল্য। তারপরও বলতে হয়, এই পরিচয় কোনোভাবেই তাঁর মুখ্য পরিচয় নয় বরং খুবই গৌণ পরিচয়। কিন্তু কোনো কোনো সাহিত্য-সমালোচক অপেক্ষাকৃত গৌণ পরিচয়কে প্রধান করতে গিয়ে তাঁর সত্যিকার পরিচয়টাই ঢেকে দিয়েছেন। পল্লীচিত্র (৮ই ডিসেম্বর ১৯৮১) পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কে তাই আচার্য সুকুমার সেন বলেন, ‘এখন যারা দীনেন্দ্রকুমার রায়ের নাম শ্রুত আছেন; তাঁরা জানেন তাঁকে রহস্যলহরী সিরিজের গ্রন্থকর্তারূপে, মিষ্টার ব্লেকের স্রষ্টা রূপে। কেউ কেউ তাকে ‘মেয়ে বোম্বেটে’, ‘জাল মোহান্ত’ অথবা ‘পিশাচ পুরোহিত’ ইত্যাদি গ্রন্থের লেখক বা অনুবাদক রূপে জানেন।’ মৃত্যুর (২৭শে জুন, ১৯৪৩) পরও দীনেন্দ্রকুমার এক শ্রেণির পাঠকের কাছে লঘুরসের রচয়িতা হিসেবেই চিহ্নিত আছেন। অথচ এসব লেখা বা অনুবাদ তাঁর সৃষ্টিকর্মের আসল দিক নয়। তাঁর শ্রেষ্ঠ কীর্তি উনিশ শতকের গ্রামবাংলাকে নিয়ে লেখা রচনাবলি। উনিশ শতকের গ্রামবাংলার মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, উৎসব-পার্বণ নিয়ে রচিত তাঁর পল্লীচিত্র (১৩১১), পল্লীবৈচিত্র্য (১৩১২), পল্লীকথা (১৩২৪) প্রভৃতি পল্লিবিষয়ক রচনাবলি তাঁর সাহিত্যিক জীবনের এক অনন্য কীর্তি। পল্লীচিত্র গ্রন্থে উনিশ শতকের মধ্যবঙ্গের বিভিন্ন বর্ধিষ্ণু গ্রাম বিশেষত নদীয়ার মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়ার জনজীবনের নানা রঙিন ছবি আঁকা হয়েছে। উনিশ শতকের গ্রাম মানে বারো মাসে তেরো পার্বণ, নানা ধরনের পালা-পার্বণ, ধর্মীয় আচার-আমোদ-উৎসবে গ্রামবাসী মেতে থাকত। গ্রামে গ্রামে অনুষ্ঠিত হতো রথযাত্রা, স্নানযাত্রার মেলা, বৈশাখ সংক্রান্তি, নন্দন উৎসব, চড়ক, গাজন উৎসব। পাঠকসমাদৃত এ-গ্রন্থের পাতায় পাতায় আঁকা হয়েছে সেকালের সৌহার্দ্য-সম্প্রীতিমুখর গ্রাম আর আনন্দ-উৎসবময় জনজীবনের নানা খণ্ডচিত্র। দীনেন্দ্রকুমার রায় পল্লীচিত্রে সেকালের পল্লীজীবনের যে-বর্ণনা দিয়েছেন তাতে আবেগের আতিসয্য কিংবা বাড়াবাড়ি নেই। আছে প্রতিদিনের ঘটে-যাওয়া সাধারণ ঘটনা অসাধারণভাবে তুলে ধরার আন্তরিক প্রয়াস। পল্লীচিত্র অনেক বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাভাষা শেখার পাঠ্যগুলির অন্যতম ছিল। অথচ নিজ দেশ বাংলাদেশে তিনি কেবল উপেক্ষিতই নয়, একেবারে বিস্মৃত ও অবজ্ঞাত। মনে কেবল প্রশ্ন জাগে, কার দোষে বাংলাদেশের পাঠককুল তাঁকে ভুলে গেলেন? কার অভিশাপে তিনি বিস্মৃত হলেন? কেন তিনি অবজ্ঞা, অবহেলা ও উদাসীনতার শিকার হলেন? সত্যি বলতে কী, বাংলাদেশের কোনো গবেষণা-প্রতিষ্ঠান কিংবা সাহিত্যবোদ্ধা সাহিত্যের এই নিবেদিতপ্রাণ মানুষটির সাহিত্যসম্ভার এবং সেগুলির শিল্প-সৌকর্য সম্পর্কে খোঁজ করার প্রয়োজনীয়তাই অনুভব করেননি। অথচ তিনি ছিলেন জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সুস্থ-রুচির সাহিত্যচর্চার নিরলস কর্মী। ‘দীনেন্দ্রকুমারের সাহিত্যকর্মের যেদিকটি আমাদের সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে, তা হলো মানবিক মূল্যবোধগুলির প্রতি তাঁর আস্থা। রহস্য-উপন্যাসই হোক আর পল্লিচিত্রই হোক, তাঁর সামাজিক মনটি সব রচনায়ই পাওয়া যাবে। তাঁর মানবিক মূল্যবোধের আরেক দিকে আছে স্বাভাবিক সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতি তীব্র আগ্রহ।’১৩
পাঁচ
পল্লীচিত্রের মতো পল্লীবৈচিত্র্যে (১৩১২) বাংলার পল্লি অঞ্চলের নানাদিক বর্ণনা করা হয়েছে। বইয়ের ভূমিকায় লেখক বলেছেন, ‘পল্লীচিত্রে পল্লী সমাজের বিশেষত্ব সম্বন্ধে যে সকল কথা বলিতে পারি নাই সেই সকল কথাই আলোচনা করিলাম।’ বইটি উৎসর্গ করেন ‘বঙ্গজননীর সুসন্তান ও বঙ্গ সাহিত্যবৎসল’ ত্রিপুরার মহারাজা রাধাকিশোর মাণিক্যকে, ভূমিকা লেখেন সাহিত্যিক জলধর সেন। গ্রন্থভুক্ত এগারোটি প্রবন্ধের বিষয়বস্তু বাংলাদেশের বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠান। দীনেন্দ্রকুমার রায়ের সমকালে অর্থাৎ উনিশ শতক থেকে বিশ শতকের চল্লিশ দশক পর্যন্ত কালখণ্ডের অবিভক্ত বাংলার প্রায় সব গ্রামে কার্ত্তিক থেকে চৈত্র পর্যন্ত যেসব সামাজিক ও লৌকিক উৎসব এবং ধর্মানুষ্ঠান চলত তারই আবেগঘন বর্ণনা ‘পল্লীবৈচিত্র্য’।
প্রথম প্রবন্ধ ‘কালীপূজা’। এখন কালীপূজা দুর্গাপূজার মতোই সর্বজনীন রূপ লাভ করেছে, কিন্তু অষ্টাদশ শতকে শক্তির আরাধনায় ডাকাতরা কালীপূজার আয়োজন করত। দীনেন্দ্রকুমার কালীপূজা সম্পর্কে যে-বর্ণনা দিয়েছেন তার যথেষ্ট ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে। বইয়ের অন্যান্য প্রবন্ধ যথাক্রমে – ‘ভ্রাতৃদ্বিতীয়া’, ‘কার্তিকের লড়াই’, ‘নবান্ন পোষলা’, ‘পৌষ সংক্রান্তি’, ‘উত্তরায়ন মেলা’, ‘শ্রী পঞ্চমী’, ‘শীতল ষষ্ঠী’, ‘দোলযাত্রা ও চড়ক’। গ্রন্থের ষষ্ঠ প্রবন্ধ হলো পৌষ সংক্রান্তি। ‘পৌষ মাসকে পল্লী রমণীগণ লক্ষ্মী মাস বলিয়া মনে করেন। কোন রমণী পৌষ মাসে স্বামীগৃহ হইতে পিতৃগৃহে বা পিতৃগৃহ হইতে স্বামীগৃহে গমন করে না।’১৪
প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বিপর্যয় না থাকায় পৌষ মাস থেকেই বাংলার গ্রামগুলো উৎসবমুখর হয়ে উঠত। গ্রামের মানুষ পৌষ মাসে শীতের নিমন্ত্রণে পাড়ায় পাড়ায় আয়োজন করতো যাত্রাপালা, কীর্তন, সার্কাস, নাচ-গান, মাদার পীরের গান, মানিক পীরের গান ইত্যাদি। পৌষ মাসের শেষ দিবসে উনিশ শতকের গ্রাম বাংলায় অনুষ্ঠিত হতো পৌষ সংক্রান্তি। ‘৩০ পৌষ রাত্রি প্রভাত হইতে না হইতেই পল্লীবাসী … শ্রমজীবীগণের ছেলেরা আনকোরা ধুতি চাদরে সজ্জিত হইয়া দলে দলে ভিক্ষায় বাহির হইত। এ তাদের সখের ভিক্ষা।’১৫ পৌষ সংক্রান্তি উৎসব প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে পৌষ মাসে মানিক পীরের গান আজো গ্রামবাংলায় হয়, যা সেকালেও হতো। সেকালে মুসলমান শ্রমজীবীগণ টুপি মাথায় দিয়ে গলায় রুমাাল বেঁধে মানিক পীরের গান গাইতে গাইতে ঢোল বাজাতে বাজাতে দলে দলে গৃহস্থ গৃহে উপস্থিত হতো। পৌষ সংক্রান্তি উৎসবের কৃত্যাচারগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ইতিহাস ব্যাখ্যা করা যায়। কারণ এসব কৃত্যাচার ও অনুষ্ঠানের গভীরে লুকিয়ে আছে আমাদের ইতিহাস ও সমাজতত্ত্বের নানা অজানা দিক।
ডিটেকটিভ উপন্যাস রচয়িতা হিসেবে খ্যাত দীনেন্দ্রকুমারের সাহিত্যবোধ ও সৃজনশীলতার স্বাক্ষর রয়েছে তাঁর নানা ছোটগল্পে। এসব ছোটগল্পে পল্লীবাসীর সুখ-দুঃখ, আশা-আকাক্সক্ষা ও বেদনার নানা উজ্জ্বল চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। তাঁর গল্পগুলোতে রয়েছে হত্যার রহস্য, ভৌতিক পরিবেশ, হাস্যরস এবং তাঁর প্রিয় প্রসঙ্গ পল্লীজীবন। সামান্য ঘটনা যে অসামান্য হয়ে উঠতে পারে, তার স্বাক্ষর রয়েছে তাঁর গল্পের বর্ণনা ও বুনটে। শিশির কুমার দাস তাঁর বাংলা ছোটগল্প (প্রথম প্রকাশ অক্টোবর ১৯৬৩, কলকাতা) গ্রন্থে দীনেন্দ্রকুমারের গল্প সম্পর্কে বলেছেন, ‘তাঁর সৃষ্টি অতি সহানুভূতিশীল। অনেক পরিমাণে তিনি বাস্তবানুগ, খুঁটিনাটি তথ্যের প্রতি তাঁর আসক্তি, অত্যধিক ভাবালুতা তাঁর দোষ। কিন্তু বর্ণনায় তিনি অনেক ক্ষেত্রে শরৎচন্দ্রের শুধু পূর্বসূরিই নয়, শরৎচন্দ্রের চেয়ে উৎকৃষ্ট।’১৬ তবে শরৎচন্দ্রের পল্লীচিন্তা ও দীনেন্দ্রকুমারের পল্লীচিন্তার মধ্যে মিলের চেয়ে অমিলই বেশি। তবুও পল্লিই তাঁর চিন্তাবিশ্ব ও গল্পের প্রধান প্রসঙ্গ। ‘আগমনী’, ‘পরিত্যক্ত’, ‘প্রত্যাখ্যান’, ‘বিজয়ার মিলন’ প্রভৃতি পল্লীবিষয়ক গল্প বিশ শতকের পাঠকমহলে দারুণভাবে সমাদৃত হয়েছে। শিশিরকুমার আরো বলেছেন, ‘দীনেন্দ্রকুমারের ঘটনাগুলি অতি তুচ্ছ ও অতিসাধারণ। এ বিষয়ে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পূর্বসূরি তিনি। বিভূতিভূষণের পল্লীজীবনের ঘটনাগুলিতে যেমন অতি তুচ্ছ ঘটনাকে আশ্রয় করে গভীর অনুভূতি ব্যক্ত হয়েছে তেমনি দীনেন্দ্রকুমারের।’ বাংলাদেশের পল্লিগ্রাম নিয়ে তিনি যে ভাবনাচিন্তা করেছিলেন তা তাঁর ছোটগল্প ও পল্লীবিষয়ক রচনাতে প্রকাশিত হয়েছে। প্রবাসী পত্রিকায় (ফাল্গুন ১৩৪০ সংখ্যা) প্রিয়রঞ্জন সেন বাংলা সাহিত্যের একশটি ভালো বইয়ের যে-তালিকা প্রণয়ন করেছিলেন তাতে দীনেন্দ্রকুমারের পল্লীচিত্র বইটি স্থান পেয়েছে। পল্লীবৈচিত্র্য (১৩১২), পল্লীবধূ (১৩২৩), পল্লীচরিত্র (১৩২৩), পল্লীকথা (১৩২৪) প্রভৃতি গ্রন্থও পাঠকসমাজে সমাদৃত হয়েছে। জলধর সেন, পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়েরও বহু পল্লিবিষয়ক রচনা রয়েছে। কিন্তু সেইসব রচনা তেমন স্বাভাবিক, সুন্দর ও সুস্বাদু ছিল না। কারণ দীনেন্দ্রকুমার যতটা পল্লীবাংলাকে আপন ভাবতে পেরেছিলেন তাঁরা ততোটা পারেননি। সুরেশচন্দ্র সমাজপতির জনপ্রিয় সাহিত্য পত্রিকাতে দীনেন্দ্রকুমারের অধিকাংশ পল্লীবিষয়ক রচনাবলি প্রকাশিত হয়েছে। সুরেশ সব সময় দীনেন্দ্রকুমারের রহস্যলহরী বা রহস্যকাহিনির চেয়ে পল্লীবিষয়ক ও মননশীল রচনা প্রকাশে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। রবীন্দ্রনাথও তাঁর পল্লীবিষয়ক রচনা প্রকাশে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন।
ছয়
দীনেন্দ্রকুমার রায় জীবনের একটি বড় অংশ অতিবাহিত করেন কৃষ্ণনগর, রাজশাহী, মেদিনীপুর, বরোদা, কলকাতাসহ ভারতবর্ষের বিভিন্ন শহর-মহানগরে। কিন্তু তাঁর জন্মস্থান ‘মেহেরপুর’ নামক বর্ধিষ্ণু গ্রামটির কথা কখনো বিস্মৃত হননি। সময়-সুযোগ পেলেই ছুটে আসতেন মেহেরপুরে, কর্মসূত্রে কলকাতার মহানাগরিক হয়েও মনেপ্রাণে তিনি ছিলেন গ্রামের মানুষ। জীবনের শেষদিকে বসবাসের জন্য ‘রিক্তহস্ত নিরবলম্বন’ হয়ে মেহেরপুরেই ফিরে আসেন। ১৯৪৩ সালের ২৭শে জুন তাঁর জীবনাবসান হয়। মৃত্যুর পর নিজগ্রাম মেহেরপুর কিংবা কলকাতার সাহিত্যিক পরিমণ্ডলে তাঁর স্মৃতিরক্ষায় কোনো সামাজিক বা প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা যায় না। যে বসুমতী পত্রিকার জন্য তিনি তাঁর সাহিত্যিক জীবনের সোনালি অধ্যায় উৎসর্গ করেছিলেন, সেই বসুমতীও তাঁর স্মৃতিরক্ষায় তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেনি বা করতে পারেনি। তাঁর মৃত্যুর পর প্রায় আটটি দশক পার হয়েছে, কিন্তু দীনেন্দ্রকুমারের সাহিত্যপ্রতিভার যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি। অথচ সাহিত্যসাধক হিসেবে তিনি ছিলেন দিগন্তবিস্তারী প্রতিভার অধিকারী। দীনেন্দ্রকুমারের সুনিপুণ তুলির স্পর্শে ছোট ছোট ঘাট-পুকুর, দিঘি, ছায়া সুনিবিড় পল্লি, ছোট পার্বণ-উৎসবের মতো সামান্য বিষয়আশয়ও অসামান্য হয়ে উঠেছে। ‘পল্লীর তুচ্ছ ঘটনা কতো হৃদয়গ্রহী ও মমত্বে পরিপূর্ণ হতে পারে, পেন-ইঙ্কের স্কেচের মতো কতো তার ডিটেইলের কাজ হতে পারে, তা দীনেন্দ্রকুমার কথায় এঁকে প্রমাণ করেছেন। এদিক দিয়ে তিনি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অগ্রজ।’১৭ কোন ধরনের জীবন একদিন আমাদের ছিল, কোন ধরনের শ্যামল ছায়া, জ্যোৎস্না রাত, রোদ-বৃষ্টি পেরিয়ে আজ আমরা এতদূর এসেছি, তা তাঁর লেখা থেকে জানতে পারি। আমরা আমাদের দেশের অতীতকে, পিতামহ-প্রপিতামহদের উদ্বেগহীন, আনন্দময় জীবনের সঙ্গে যদি নিজেদের যোগসূত্র স্থাপন করতে চাই, তাহলে দীনেন্দ্রকুমারের স্মৃতিকথন, গল্প, পল্লিবিষয়ক রচনা, আত্মজীবনীর পাঠ গ্রহণ করতেই হবে। যাঁদের গবেষণার আগ্রহ রয়েছে তাঁরা হয়তো তাঁর রচনা থেকে একাধিক অভিসন্দর্ভের রসদ পেতে পারেন। নিখাদ বাঙালি আত্মপরিচয়ের সন্ধান পেতে, আনন্দময় ও উৎসবমুখর বাংলাদেশকে আবিষ্কার করতে এ-যুগের নির্বিশেষ পাঠককে অবশ্যই দীনেন্দ্রকুমারের কাছে যেতে হবে। রাজনৈতিক উত্থান-পতনে বাংলাভাষার ভূগোল বদলেছে, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির অভিঘাতে বদলেছে বাঙালির জীবন-জীবিকা, বিশ্বাস ও মূল্যবোধ। বিশ্বায়ন ও নগরায়নের অপ্রতিরোধ্য আক্রমণে লুপ্ত, অপহৃত ও বিধ্বস্ত হয়েছে বাংলাদেশের শাশ্বত গ্রামের নীলিমা ও সৌন্দর্য। কিন্তু এই ঐশ্বর্যহীন, বিধ্বস্ত পল্লি যে একদিন প্রাণরসের আধার ছিল, মুখর থাকত উৎসব-আনন্দে, সম্প্রীতিতে তা দীনেন্দ্রকুমার রায়ের রসমণ্ডিত পল্লিবিষয়ক রচনা পাঠ করলেই কেবল আমরা জানতে পারি।
তথ্যসূত্র
১. দীনেন্দ্রকুমার রায় : রচনাসমগ্র, কলকাতা, জানুয়ারি ২০০৪, ভূমিকা-১।
২. আসজাদুল কিবরিয়া : ‘কাজীদার, সেবা প্রকাশনী’, প্রথম আলো, ১৯শে জানুয়ারি ২০২৪।
৩. সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় : প্রথম আলো, দ্বিতীয় খণ্ড, কলকাতা, জুলাই ১৯৯৭, পৃ ৪৩৩।
৪. শতঞ্জীব রাহা : কথাচিত্রকর দীনেন্দ্রকুমার রায়, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯, পৃ ৯২।
৫. উদ্ধৃত : প্রকাশকের নিবেদন, সেকালের স্মৃতি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রা. লিমিটেড, কলকাতা, ১৯৮৮।
৬. মনি বর্ধন : বাংলার লোকনৃত্য ও গীতিবৈচিত্র্য, কলকাতা, সেপ্টেম্বর ২০০৪, পৃ অ-৯।
৭. শতঞ্জীব রাহা : কথাচিত্রকর দীনেন্দ্রকুমার রায়, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯, পৃ ১৬।
৮. দীনেন্দ্রকুমার রায় : সেকালের স্মৃতি, রচনাসমগ্র, পৃ ৩৭১।
৯. শতঞ্জীব রাহা : ব্রাত্য বুদ্ধিজীবী হরিনাথ মজুমদার।
১০. দীনেন্দ্রকুমার রায় : ‘কবি রজনীকান্ত’, ভারতবর্ষ পত্রিকা, অগ্রহায়ণ ১৩২৪ সংখ্যা।
১১. দীনেন্দ্রকুমার রায় : ‘ভূমিকা’, রচনাসমগ্র। কলকাতা, জানুয়ারি ২০০৪। ভূমিকা-১।
১২. দীনেন্দ্রকুমার রায় : সেকালের স্মৃতি, রচনাসমগ্র, পৃ ৩০০।
১৩. শতঞ্জীব রাহা : কথাচিত্রকর দীনেন্দ্রকুমার রায়, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯, প্রথম সংস্করণের কথামুখ।
১৪. দীনেন্দ্রকুমার রায় : পৌষ সংক্রান্তি, পল্লীবৈচিত্র্য, রচনাসমগ্র, পৃ ১৫১।
১৫. দীনেন্দ্রকুমার রায় : পৌষ সংক্রান্তি, পল্লীবৈচিত্র্য, দ্বি-স, কলকাতা, আশি^ন ১৩৯৬, পৃ ১৫১।
১৬. শিশির কুমার দাস : বাংলা ছোটগল্প, প্রথম প্রকাশ, কলকাতা, অক্টোবর ১৯৬৩, পৃ ১১২।
১৭. বারিদবরণ ঘোষ : ‘দীনেন্দ্রকুমার রায় : জীবন ও সাধনা’, পল্লীবৈচিত্র্য, প্রথম আনন্দ সংস্করণ, জ্যৈষ্ঠ ১৩৮৯।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.