মেহেদী ইকবাল

কবে কখন যে ভূমিষ্ঠ হয়েছিলাম। শুনেছি বৃষ্টি ছিল সেই রাতে
কেউ হয়তো দিয়েছিল আজান, বৃষ্টি আর হাওয়া দাঁড়িয়েছিল পথরোধ করে
হয়তো বেশিদূর পারেনি যেতে আগমনী বার্তা আমার।
শুনেছি, আমার বাবা তখন ছিলেন রাজবন্দি ময়মনসিংহ কারাগারে
ইনটিউশনে তিনি কি শুনেছিলেন আমার ওয়া-ওয়া কান্নার ধ্বনি?
এরপর মায়ের কোল ছেড়ে আস্তেধীরে হাঁটতে শিখেছি, হাঁটতে হাঁটতে এতটা পথ
কত দৃশ্যের সাক্ষী হয়েছি আমি, চোখের সামনে কত বড় বড় মিছিল
পোস্টারে বঙ্গবন্ধুর ছবি, মুক্তিযুদ্ধ, পথেঘাটে দেখেছি কত লাশ!
কত মায়ের অশ্রু, নির্বাক কত জননীকে বসে থাকতে দেখেছি পথের পাশে, কোনো গাছের নিচে।
মুক্ত স্বদেশে দেখেছি কত না স্বপ্নের ঘুড়ি! আবার বেদনায় দেখেছি মৃত্যু
একমুঠো ভাত আর একফোঁটা দুধের জন্য কত না আহাজারি!
স্কাউট ছিলাম আমি, ভোকেশনালে বানিয়েছি রুটি লঙ্গরখানার, দেখেছি হাড়-জিরজিরে নিরন্ন মানুষের লাইন
সেই স্মৃতি মনে হলে আজো ভিজে আসে চোখ। কত সম্পদ রয়েছে এই দুনিয়াতে, কত অপচয়
তবু মানুষ কষ্ট পায়, ধুঁকে ধুঁকে মরে যায় খাদ্যের অভাবে!

এরপর দীর্ঘ সেই কালরাত, সিঁড়িতে পড়ে ছিল লাশ বঙ্গবন্ধুর
দেখেছি ঘড়ঘড় শব্দ করে কী করে আসে নেমে জলপাইগাড়ি
চকের লিখন মনে করে কেউ এসে মুছে দিতে চায় সব ডাস্টার দিয়ে
হায়! ইতিহাস কি ঠুনকো এত, সে কি আর কোনোকালে বশ্যতা মেনেছে কারো?
আজ হেঁটে হেঁটে এতটা পথ মাঝে মাঝে ভাবি এইসব, আর দেখি
কখন যে এসে গেছি অতি নিকটে মায়াভরা সেই নদীর!

যে-নদীর মায়া ছেড়ে কী করে যাবো আমি ওইপারে?