হুজুরচোর

শেষ পর্যন্ত বাশেদ মোড়লের হেগে পানি খরচের কাঁসার বদনাটা চুরি গেছে। খবরটা কীভাবে ভোরের বাতাসে গোটা গ্রামেই ছড়িয়ে পড়ল। আর যে যেখানে ছিল, নিজের নিজের কামধান্ধা ফেলে সবাই প্রথমেই ছুটে এলো ওই বাশেদ মোড়লের দুয়ারে। হাজার হলেও গাঁয়ের মোড়ল বলে কথা!
মোড়লের দুয়ার-লাগোয়া বিশাল বৈঠক-বারান্দা। যেখানে সকাল-সন্ধ্যা নিয়ম করে দরবার বসে। গ্রামের নীতি নির্ধারণ হয়। পাড়াপড়শির ছোটখাটো ঝগড়াঝাঁটির মীমাংসা হয়। গরিবগুর্বো লোকের অভাব-অভিযোগ মেটে। ভোটের সময় নেতারা ভোটভিক্ষা করতে এসে এখানেই বসে। চা-পানি খায়। তা বাদেও গ্রামের জুমা মসজিদের উন্নতিকল্পে বছরে একবার ধর্মীয় জলসা কিংবা মোড়লের মা-বাপের স্মৃতিতে মিলাদ, আবার কখনো কখনো এমনি এমনি ধর্মচর্চার আসর বসে।
সবাই এসে দেখল এখন সেই বৈঠক-বারান্দাটা একেবারে খাঁ-খাঁ করছে। এমনকি মোড়লবাড়ির কোনো মুরগি কিংবা কোরবানির খাসি জোড়ারও দেখা নেই। ক-খানা বেঞ্চ আর মোড়লের বসার কাঠের চেয়ারটা শূন্য পড়ে আছে। তাহলে মোড়ল কোথায় গেল? এই সময় তো মোড়লের ওই চেয়ারে বসে থাকার কথা!
মুখে কেউ কিছু বলল না যদিও। সবাই মোড়লের অপেক্ষা করতে লাগল।
কিন্তু শুধু শুধু অপেক্ষা করবে কেন? মোড়লের বদনাটা কোথা থেকে চুরি গেছে? কীভাবে চুরি গেছে? এসব না জেনেই চোর কে হতে পারে, তা নিয়ে সবাই অনুমান করতে লাগল। এবং সবারই একজনের কথা বারবার করে মনে পড়তে লাগল। গ্রামেরই মানুষ সে। লোকে তাকে ‘হুজুরচোর’ বলে। কামধান্ধা কিছু করে না, খালি চুরি করার ধান্ধায় ঘুরে বেড়ায়। সে বলে যার যা পায় তা চুরি করে না। বেছে বেছে এমন জিনিস চুরি করে যে, যার জিনিস চুরি যায় সে ঘোর সংকটে পড়ে যায়। আর হুজুরচোর মনে করে, মাঝে মাঝে এমন চুরি না করলে নাকি তার সাংঘাতিক গুনাহ হয়। এমনই গুনাহ যে, দীর্ঘদিন চুরি না করলে নাকি তার শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড় হয়। আর তার মনে হয় আজরাইল ফেরেশতা নিশ্চিত তার জান কবজ করছে।
সেই হুজুরচোর আর কেউ নয়, পছিমপাড়ার হুজুর সেখ। যদিও তাকে আসল নামে কেউ চিনবে না। ‘হুজুরচোর’ বললেই চিনবে। তো, এখন সবার রাগ গিয়ে পড়ল ওই হুজুরচোরের ওপরেই। শালা টাকাপয়সা কিংবা ধনসম্পদ চুরি করে না। এমন জিনিস চুরি করে যা তার বা তার সংসারের কোনো কাজে লাগে না। তাহলে ওসব জিনিস চুরি করে তার কী লাভ হয় একমাত্র সে-ই জানে। অন্যেরা তা জানে না। অন্যেরা যা জানে তা হলো – মানুষকে বিপদে ফেলতে হুজুরচোরের মতো ওস্তাদ আর কেউ নেই। যে-সে বিপদ নয়, একেবারে ঘোর বিপদ!
সবার মনে পড়ে যায় সেবারের কথা। হুজুরচোর সেবার ফড়িং মুন্সির চশমাটা চুরি করে বেশ কিছুদিন ফড়িং মুন্সিকে অন্ধ করে রেখেছিল। যেদিন ধরা পড়ল, সবাই যখন তাকে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘হ্যাঁ বে হুজুর‌্যা তুই ফড়িং মুন্সির চশমা চুরি করতে গেলি কেনে?ত্ত্বি হুজুরচোর জবাব দিয়েছিল, ‘শালা মুন্সির লজর ভালো লয় খো – খুব খারাপ! হামি দেখ্যাছি হবে ল’পখরের পাড়ে বস্যা শালা বিটিছেল্যার উদাম গা দেখে।’
ফড়িং মুন্সি যে সময়-অসময়ে ল’পুকুর পাড়ে বসে থাকত, সবাই দেখতে পেত। কিন্তু সে যে ল’পুকুরে গোসল করতে আসা মেয়েমানুষের উদোম শরীর দেখার জন্য অমন বসে থাকত তা কে জানত? জেনেছিল হুজুরচোরের কথায়। আর একবার হুজুরচোর চুরি করেছিল সলিম ল্যাংড়ার সবসময়ের সঙ্গী সেই তেলপিছল লাঠিটা, যার ওপর ভর দিয়ে সলিম ল্যাংড়ার জীবন পিছলে পিছলে চলে। তার চলা দেখলে মানুষের মনে কষ্ট জাগে। কলিজায় দুঃখ বাজে। তাহলে কে করলে এমন কাজ? শালার মন বলে কি কিছু নাই? কলিজা বলে কি কিছু নাই? ধরা পড়লে শালার শরীর কেটেকুটে দেখবে সত্যিই মন বা কলিজা বলে কিছু আছে কি নেই। কিন্তু ওই লাঠিসহ হুজুরচোর যেদিন ধরা পড়ল, ধরা পড়ল মানে তার প্রতিবেশী গোলাপ সেখের বাড়ির মাটির ভাঙা দেয়াল ভাঙছিল গোপাল, ইটের গাঁথুনি তুলবে বলে। পাশে দাঁড়িয়ে হুজুরচোর তার সঙ্গে কী কথা বলছিল, তখনই হঠাৎ ওই ভাঙা দেয়াল থেকে একটা গহমা খরিস বেরিয়ে ফণা তুলে ফোঁস করে উঠেছিল। তা দেখে গোলাপ সেখ ভয় পেলেও হুজুরচোর ভয় পায়নি, সে ছুটে গেছিল নিজের বাড়ি আর সলিম ল্যাংড়ার ওই লাঠিটা সঙ্গে করে বেরিয়ে এসে সাপটাকে পিটিয়ে মেরেছিল। কোথায় ওরকম পাকা গহমা খরিস মারার জন্য বাহবা পাবে তা নয়, ততক্ষণে ওখানে যারা উপস্থিত হয়েছিল, সবাই বলে উঠেছিল, ‘ওইদ্যা বে সলিম ল্যাংড়ার ত্যালপিছল লাঠি। শালা হুজুরচোরই ওইট্যা চুরি কর‌্যাচ্ছিল তাহলে।’
সত্যি তাই। সাপটা মরে পড়ে থাকল গোপাল সেখের বাড়ির ভাঙা দেয়ালের চাঙড়ের ওপর, অন্যদিকে হজুরচোরকে সঙ্গে নিয়ে সবাই চলল বাশেদ মোড়লের বাড়ির দিকে।
বাশেদ মোড়ল বিচারক হিসেবে খুব ন্যায্য। সবাই যখন ভাবছে আজ আর হুজুরচোরের রেহাই নাই। সলিম ল্যাংড়ার মতো মানুষটাকেও যে অমন কষ্ট দেয় তার রেহাই না পাওয়ায় উচিত। ঠিক তখনই বাশেদ মোড়ল জিজ্ঞেস করে বসে, ‘হ্যাঁ রে হুজুর – তা সলিমের লাঠিটা তুই চুরি করতে গেলি কেনে? জানিস না ওইট্যা সলিমের একখান পা।’ ধরা পড়েও হুজুরচোরের হায়াশরম কিছুই নাই। বাশেদ মোড়লের উত্তরে সে বলে ওঠে, ‘জানবো না কেনে মুড়োলচাছা – খুব জানি। কিন্তুক আপনারা জানেন কি যে, ওই লাঠি দিয়ে সলিম আর কী করে?’
বাশেদ মোড়ল জানতে চায়, ‘কী করে?’
‘রোজ রাইতে ওই লাঠি দিয়েই সলিম অর বহুকে উধোম পিটায়।’
বাশেদ মোড়ল তো বাশেদ মোড়ল – আর যারা সেখানে উপস্থিত ছিল, সবাই অবাক না হয়ে পারে না। লাঠি ব্যাগোর যার ছতর উঠে না, এক ইঞ্চি নড়ে না, সে কিনা সেই লাঠিতেই বউ পেটায়! কারো বিশ্বাস হয় না।
বাশেদ মোড়লেরও বিশ্বাস হয় না। অগত্যা ডাক পড়ে সলিম ল্যাংড়ার বউ রাবিয়া বিবির। তৎক্ষণাৎ রাবিয়া বিবি এসে হাজির হয়। বাশেদ মোড়ল তাকে জিজ্ঞেস করে সলিমের মারের কথা। রাবিয়া বিবি কোনো উত্তর করতে পারে না; কিন্তু এমনভাবে ডুকরে কেঁদে ওঠে যে, সবাই বুঝে যায় হুজুরচোর মিথ্যা কিছু বলেনি।
তাহলে আজকের বদনা চুরির পেছনে বাশেদ মোড়লের কোনো কীর্তি ফাঁস হবে না তো? সেই ভয়েই কি মোড়ল বাড়ির বাইরে আসছে না? ভিড়ের কারো কারো এমন মনে হয়। কেউ কেউ ভাবে, বাইরে বের হ্যাবে কী – বদনা ব্যাগোর বাশেদ মোড়লের লিশ্চয় হাগা-মুতা সব বন্ধ। আবার কেউ কেউ ভাবে, হাগা-মুতা বন্ধ হবে কেনে? মোড়লের বাড়িতে কি একটাই বদনা?
সঙ্গে সঙ্গে আরো কারো কারো মনে হয়, তাই তো! মোড়লের বাড়িতে একটা বদনা থাকবে কেন? অত বড় বাড়ি! কত লোক! তাছাড়া মোড়লের টাকাপয়সার অভাব আছে নাকি? দিব্যি বহাল তবিয়তে আছে মোড়ল। দ্যাখ গা – এতক্ষণে নিশ্চয় নতুন বদনা সিন্দুক থেকে বের করে হাগা-মুতা-গোসুল সব সেরে ফেলেছে মোড়ল।
বাইরে সবাই যখন এসব ভাবছে, মোড়ল নিজের ঘরেই ফাঁপরে পড়ে ছটফট করছে। এর পেছনে অবশ্য একটা গল্প আছে। সেই গল্প মোড়ল ছাড়া আর কেউ জানে না। সেই গল্পটিকেই সে স্মরণ করছে আর হুজুরচোরকে মনে মনে গাল পাড়ছে। শালা চুরি করার আর কিছু পেলি না!
গল্পটা হলো একজন ইমানদার ব্যক্তির। কোনো ধর্মীয় জলসায় কোনো বক্তার মুখে শুনেছিল। তো, গল্পের সেই ইমানদার ব্যক্তি সারাজীবন একটা মাটির বদনায় নেয়ে-খেয়ে-হেগে মরণকালে এসে পৌঁছেছেন। হঠাৎ একদিন তাঁর সেই মাটির বদনাটা হাত থেকে পড়ে ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। আর তাতেই সেই ব্যক্তি একেবারে দিশেহারা হয়ে পড়েন। কাঁদতে শুরু করেন। আর একটা নতুন বদনা যে সে কিনতে পারবেন না – তা নয়, দশটা বদনা কেনার সামর্থ্য দিয়েছেন আল্লাহ তাঁকে। কিন্তু নতুন বদনা হলে তিনি ওই নতুন বদনার সামনে আবার বেইজ্জত হবেন কীভাবে? জ্ঞান হয়ে একমাত্র বেইজ্জত হয়েছিলেন ওই মাটির বদনাটার কাছে। আর পরে বেইজ্জত হয়েছিলেন বিবি শাকুরার কাছে। যদিও বিবি শাকুরা সেই কবেই জান্নাতবাসী হয়েছে। তখনো তাঁর বয়স ছিল। লোকে বলেছিল আরেকটা বিয়ে করতে। কিন্তু তৃতীয় আর কারো সামনে বেইজ্জত হওয়ার ভয়ে তিনি আর বিয়ে করেননি। কেননা, তাঁর আব্বা তাঁকে বলেছিলেন, ‘আর যাই করিস বাপ – জীবনে কখনো বেইজ্জত হইস না। ইচ্ছা করলে মানুষ ধনসম্পদের অধিকারী হয় না। তবে ইচ্ছা করলে মানুষ নিজের চরিত্র ধরে রেখে চরিত্রবান হতে পারে। কারণ আর কিছুই নয়, আল্লাহ চরিত্রবানদের পছন করেন। আল্লাহ সেটা আশা করেন তাঁর প্রিয় উম্মতদের কাছে। তাই কোনো কিছু হওয়ার আগে একজন ভালো মানুষ হওয়াটা খুব জরুরি।’
এই মুহূর্তে গল্পের সেই ইমানদার ব্যক্তি যেন বাশেদ মোড়ল নিজে। কিন্তু সে ওই ব্যক্তির মতো দিশেহারা হয়ে পড়তে পারছে না, আল্লাহর কাছে কাঁদা তো অনেক দূরের ব্যাপার। গাঁয়ের মোড়ল বলে কথা! সে যদি দিশেহারা হয়ে পড়ে তাহলে তার মোড়লগিরির সম্মান থাকবে কোথায়? আর যদি কাঁদে, লোকে বলবে কী? তার বাড়ির দুয়ারে যে তখন রীতিমতো মেলা জমে গেছে। নিজের ঘরে বসেই সেটা টের পাচ্ছে মোড়ল। এরপরও সে যদি নিজের ঘরে বসে থাকে তাহলে তাকে নিয়ে গ্রামে নতুন গল্প তৈরি হবে। লোকের মুখে মুখে ফিরবে সেই গল্প। না, সে এমনটা চায় না।
অগত্যা বাশেদ মোড়ল নিজের ঘর ছেড়ে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে বৈঠক-বারান্দায় না এসে পারল না। আর তাকে দেখে সবাই হইহই করে উঠল। শালা হুজুরচোর কুন সাহসে আপনার বদনা চুরি করে? আপনি বুলেন মুড়োলভাই – শালা যেখানেই থাকুক, যেই শালাকে ধর‌্যা থ্যাঁথলাবো! কেউ কেউ বলল, আপনি বুললে শালাকে বিনা জানাজায় পুঁতেই ফেলবো। খালি আপনি একবার অর্ডার দিয়ে দেখেন!
অবস্থা বেগতিক দেখে বাশেদ মোড়লের চোখ কপালে ওঠে। আগের কাল আর নেই যে, যা খুশি করা যাবে! এখন রাজনীতি অন্যরকম। কী থেকে কী হয়ে যায় বলা খুব মুশকিল। পুলিশ-আইন-আদালত বাদেও সিন্ডিকেট রাজত্ব! হুজুরচোর কোন সিন্ডিকেটের সদস্য কে জানে! না, ওই বয়সে আর ওসব ঝঞ্ঝাটে পড়তে চায় না সে। তাই সবাইকে বলল, কে হামার বদনা চুরি কর‌্যাছে হামি ঠিক জানি না। তবে তুমরা যখুন হুজুরচোরের কথা বুলছো – যাও তাকে ধরে লিয়ে এসো। কিন্তু খবরদার – কেহু অকে মারধর করবা না।
বাশেদ মোড়লের হুকুম পেয়ে সবাই ছুটল হুজুরচোরকে ধরে আনতে। শালা কোন মতলবে মোড়লের বদনা চুরি করেছে, আগে সেটা জানা খুব জরুরি।

দুই
শেষ পর্যন্ত বদনাসহ হুজুরচোরকে ধরে আনা হলো বাশেদ মোড়লের দরবারে। তখন দুপুর গড়িয়ে তেপহর। মসজিদে জোহরের নামাজের আজান পড়ছে। বাশেদ মোড়ল বৈঠক-বারান্দায় নিজের চেয়ারে বসে আছে। বাড়ির অন্দর থেকে দু-তিনবার ডাক এসেছে। সাড়া দেয়নি। বাড়ির ডাকে সাড়া দেবে কী, বদনা ব্যাগোর হাগা-মুতার ডাকেই এখন পর্যন্ত সাড়া দিতে পারেনি। শুধু গল্পের সেই ইমানদার ব্যক্তির কথা মনে পড়েছে তার। কখনো কখনো হুজুরচোরের কথাও। সত্যিই যদি হুজুরচোর তার বদনাটা চুরি করে থাকে তাহলে তাকে মেরে ফেললেও রাগ মিটবে না। কিন্তু সে নিজেই সবাইকে নির্দেশ দিয়েছে কেউ যেন কিছু না বলে। কিছু না করে। শুধু ধরে আনে।
সবাই সেটাই করেছে। হুজুরচোরকে ধরে এনেছে। হুজুরচোর নিজের বুকের কাছে ধরে আছে বদনাটাকে। এভাবে বুকে নিয়েই নাকি শুয়ে ছিল চামাবেড়ার জঙ্গলে দুব্বা ঘাসের বিছানায়।
কিন্তু অত চকচক করছে কেন বদনাটা? খটকা লাগে বাশেদ মোড়লের। এটা তার সেই বদনাটাই তো? হ্যাঁ, তারই। ওই তো নলের গোড়ায় ঝালের দাগ। ক-বছর আগে হাত থেকে পড়ে গিয়ে নলটা খসে গেছিল। বাড়ির মাহিন্দার নেষেরকে পাঠিয়ে বাজারে লালচাঁদের দোকান থেকে ঝাল করিয়ে এনেছিল। তখনো এমন ঝকঝকে-তকতকে হয়েছিল একবার। এবার হুজুরচোরের হাতে পড়ে দ্বিতীয়বার। কিন্তু হুজুরচোর সেটা করল কী করে? বাশেদ মোড়ল সব ভুলে তাকে জিজ্ঞেস করল, ‘হ্যাঁ রে হুজুর – তোর হাতে পড়ে বদনাটা তো বেশ ঝকমক করছে।’ হুজুরচোর গদগদ হয়ে বলল, ‘কেনে করবে না মুড়োলচাছা – পাকা ত্যাঁতোল দিয়ে মেজাছি যে!’
বাশেদ মোড়ল বলল, ‘বেশ কর‌্যাছিস। তা হ্যাঁ রে হুজুর – এটা কী হলো? আর কিছু পেলি না, শ্যাষ পর্যন্ত তুই হামার হাগার বদনাটাই চুরি করলি?’
হুজুরচোর কোনো ভনিতা না করে বদনাটাকে কোনোরকম বগলে আটকে হাতজোড় করে বলল, ‘মুড়োলচাছা – না করে উপায় ছিল না।’
বাশেদ মোড়ল অবাক না হয়ে পারল না। জিজ্ঞেস করল, ‘কেনে – উপায় ছিল না কেনে?’ হুজুরচোর বলল, ‘মুড়োলচাছা – হামি পানি খাবার লেইগ্যা একটা টিনের বদনা পাই না। আর আপনি হেগে কাঁসার বদনাতে পানি খরচ করেন, সহ্য হোছিল না চাছা …’