অসম্মতির পাল্টা শক্তি ও একটি খসড়ার পটভূমি

ঢাকার বেঙ্গল গ্যালারিতে ‘অসম্মতির মানচিত্র’ প্রদর্শনীতে যে-উপাদানসমূহ একত্রিত হয়ে একটি প্রস্তাবকে সামনে হাজির করেছে, সেটি এ-অঞ্চলের মানুষের ঔপনিবেশিক অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরে। ইতিহাসের আলোকে বর্তমানকে ব্যবচ্ছেদ করা এবং একটি প্রাতিষ্ঠানিক আঙ্গিকে আধুনিকতা/ ঔপনিবেশিকতাকে বিশ্লেষণাত্মক উপায়ে দেখার একটি প্রয়াসও বলা যায়। শিল্পী নিজেই এখানে একটি আধার।

যৌবনে শিল্পী ঢালী আল মামুন ও তাঁর প্রজন্ম বাংলাদেশে দেখেছেন সামরিক শাসন। আবার এই প্রজন্মের বালকবেলার স্মৃতিতে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ। তার কিছুকাল পূর্বে দাপ্তরিকভাবে দেশভাগের মধ্য দিয়ে অবসান ঘটেছিল প্রায় দুশো বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের। অর্থাৎ দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে যুবক বয়সে সবকিছুকে প্রশ্ন করে সংপ্রশ্ন উত্থাপনের সেই সময়ে গুরুজনদের অপ্রিয় বা কিছুটা আদববর্জিত তরুণদের গ্রুপ ছিল ‘সময় গ্রুপ’। এই গ্রুপের একজন প্রথাবিরোধী শিল্পী হিসেবে নিজের সঙ্গে সমাজের সকল সম্পর্ককে প্রশ্ন করেছেন, অতৃপ্তি নিয়ে খুঁজেছেন জীবন বাস্তবতার সঙ্গে শিল্পের প্রাসঙ্গিকতা। এভাবে শিল্পী ঢালী আল মামুনের আবির্ভাব আশির দশকে। এই আবির্ভাবের সঙ্গে মনোজগতে প্রোথিত ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শ্রেণিহীন সমাজের স্বপ্ন। সময় গ্রুপসহ সে-সময়ের অগ্রসর ও সৃজনশীল চিন্তার অনেকেই ইতিহাসকে পাঠ করে একটি অগ্রসর ভাষা খোঁজার তাড়নায় নানা মাধ্যমে কাজ করেছেন। সেই তাড়নায় ঢালী আল মামুন ক্রমাগত কাজ করে গেছেন ইতিহাস নিয়ে, আধুনিকতার তথাকথিত রূপ নিয়ে। অদ্ভুত অদৃশ্য এক হীনম্মন্যতার বা আত্মবিশ^াসহীনতার কারণ খুঁজতে গিয়ে ঔপনিবেশিকতার মুখোশ উন্মোচনে ব্যাপৃত হয়েছেন বহু বছর ধরে। কখনো ব্যঙ্গ করেছেন, কখনো মেলোড্রামাটিক হয়েছেন, ঔপনিবেশিকতার আন্তর্জাতিক চরিত্র যে সর্বত্র একই, তা বিধৃত করেছেন।

যেমন, ঢালীর ছবির বিষয়বস্তু, অঙ্কনরীতি ও উপকরণ  এবং গবেষণাকে একটি ‘আত্মপরিচয়’ (বৃহৎ অর্থে  জাতীয়তাবাদী?) ও ‘আত্মসত্তা’র অন্বেষণমূলক প্রকল্প রূপে চিহ্নিত করা যায়। গোলাকার ক্যানভাসে যে ড্রইং ও পেইন্টিংগুলি আঁকা হয়েছে সেগুলিতে রয়েছে মানুষ, কঙ্কাল, প্রাণী, জাহাজ, নদী, গাছ, নদীপথ, ঔপনিবেশিক সৈনিক ইত্যাদি, যা আঁকা হয়েছে চায়ের রং ব্যবহার করে। চায়ের লিকার দিয়ে রং তৈরি, ইন্ডিগো রং ও চায়ের গুঁড়ো দিয়ে দেয়াল নির্মাণ করে গ্যালারির ভেতরে একটি আবহ তৈরি করেছেন শিল্পী। ব্যবহার করেছেন শব্দ। ‘যাহাতে নাহি মাদকতা দোষ, কিন্তু পান করে চিত্ত পরিতোষ; ইহা জীবনীশক্তির উদ্দীপক।’ এরকম বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে চা-কে জনপ্রিয় পানীয় হিসেবে আমাদের জীবনে প্রবেশ করানোর উদ্দেশ্য নিঃসন্দেহে ব্যবসায়িক প্রসার। তাই চায়ের ব্যবসায়িক ইতিহাসে কিছুটা আলোকপাত অপ্রাসঙ্গিক হবে না। ১৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে চীনে বাণিজ্যিকভাবে চায়ের উৎপাদন শুরু হয়। এই চায়ের বড় ক্রেতা হিসেবে আবির্ভূত হয় ব্রিটিশরা। ইংরেজরা স্বর্ণের বিনিময়ে চীনের কাছ থেকে চা আমদানি করে এবং এতে করে ইংল্যান্ডের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতিসাধিত হয়। এই ক্ষতি রোধ করতে ব্রিটিশ সরকার তাদের কোম্পানির মাধ্যমে ভারতে নীল চাষের মতো জোরজবরদস্তিমূলকভাবে কৃষকদের দিয়ে আফিম চাষ শুরু করে এবং চীনকে বাধ্য করে এই আফিমের বিনিময়ে চা রপ্তানি করতে। অপিয়াম যুদ্ধ, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ব্রিটিশ টি রবারি – ইত্যাদি নানা ঘটনার ক্রমে আসামে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তত্ত্বাবধানে পরীক্ষামূলকভাবে চায়ের আবাদ শুরু হয় ১৮৩৭ সালে। ১৮৫৪ সালে বাংলাদেশের সিলেটের মালিনীছড়ায় প্রথম বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে চা-বাগান প্রতিষ্ঠা করা হয়। চা-কে জনজীবনে প্রবেশ করাতে সফল হলেও ১৮৫৯-৬২ অবধি চলা নীল বিদ্রোহ ব্রিটিশদের কাঁপিয়ে দিয়েছিল। ঔপনিবেশিক শাসন সবসময় ক্ষমতার জোরজবরদস্তিমূলক আচরণ। যে-মানচিত্র শাসকের শাসন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য নানা ঘটনায় বারবার রূপ বদলেছে, তাতে তো নিঃসন্দেহে এদেশের জনগণের সম্মতি থাকার কথা নয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে উল্লেখ্য, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠের যে-রাজনীতি, তার সঙ্গে সম্মতি-অসম্মতির সম্পর্কের যে দোদুল্যমানতা, তাকে সূত্রবদ্ধ করাই যায়।

 শিল্পীর মতে, তাঁর কাজে নান্দনিকতার ব্যাপারে কোনো একনিষ্ঠতা নেই, কোনো আরোপিত আঙ্গিক নেই। কিন্তু দেখা যায়, ক্যানভাসের গোল কাঠামোতে – সেটি একটি কাঠামোই বটে – আছে সুচিন্তিত নান্দনিক পরিশীলন; তাঁর স্থান বিভাজন, বিন্যাস কোলাহলপূর্ণ নয়, বিবমিষাপূর্ণ নয়, তাঁর প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও, যেটি শিল্পীর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার একটি সূত্র বা মধ্যবিত্ততার নান্দনিক পরিমার্জন। নানা প্রাসঙ্গিক রেফারেন্স এই প্রদর্শনীর গবেষণাকে তুলে ধরেছে। যেমন, নকশীকাঁথা বুননের যে প্রক্রিয়া, সেখানে নারীদের গোল হয়ে বসে প্রাত্যহিক জীবনের নানা গল্পের সমাহারে সম্মিলিত হয়ে কাজ করার সংস্কৃতিই মূল শক্তি। আবার মুকুটগুলিতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতীকের ব্যবহার, জামদানির ব্যবহার আরো গভীরে ইতিহাসকে দেখার প্রয়াস। এই রেফারেন্সগুলি অনেক সময়ই অনুবর্তিতা প্রকাশ করে, যদিও শিল্পীর ভাষ্যমতে (গ্যালারি থেকে দেওয়া লিফলেটে উল্লিখিত), তিনি কোনোকিছুর একনিষ্ঠ অনুবর্তী হতে চাননি। অবশ্য ঢালী আল মামুনের বৃহদায়তন কাঠামো নির্মাণ, বস্তু নির্বাচন (উপাদানগত), বস্তুতে গতি দেওয়ার  প্রয়াস যেন ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে আঙ্গিক ও উপাদানগত নিরীক্ষায় বিশিষ্টতা আনার চেষ্টা, যা সামগ্রিকভাবে একটি প্রস্তাব হয়ে উঠেছে। এটি সরাসরি প্রশ্ন করে ইতিহাস ও বর্তমান-এর প্রপঞ্চকে, প্রজ্ঞাপনকে। বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার নিরিখে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, জীবনযাত্রা, সংস্কৃতির ওপর উপনিবেশ-উত্তর প্রভাব, ইতিহাসের পুনঃপাঠ,  এই একবিংশ শতকের বাস্তবতায় এর গতিবিধি কোথায়, তা ভাবনায় চলে আসে।

১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধের পর বক্সারের যুদ্ধ হয়েছিল ১৭৬৪ খ্রিষ্টাব্দে। বাংলার নবাব মির কাশিম, অযোধ্যার নবাব সুজা উদ-দৌলা ও মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের মিলিত বাহিনী ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে যুদ্ধে হেরে যায়। এই যুদ্ধের ফলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে মোগল সম্রাট শাহ আলমের কাছ থেকে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করে। এই যুদ্ধের ঐতিহাসিক গুরুত্বকে আমলে নিয়ে শিল্পী দুটো পেইন্টিং করেছেন, যেখানে কার্টোগ্রাফির মাধ্যমে ভৌগোলিক সীমানাকে তুলে ধরেছেন। ম্যাপের পেছন থেকে নির্গত আলো রেখায় উৎকীর্ণ হয়েছে, যার সামনে মিলেছে একটি রেললাইনের আদল। রেললাইনের ওপর উপবিষ্ট কুকুরসদৃশ প্রাণীর যে-অবয়ব, সেটিতে রয়েছে রূপান্তরধর্মিতা। কোম্পানি আমলে পলাশীর  ও বক্সারের যুদ্ধের কূটনৈতিক চালে  লর্ড ক্লাইভের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। ক্লাইভ এ-উপমহাদেশে আসেন কেবলই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক পুঁচকে এজেন্ট হিসেবে, ব্রিটিশ সরকারের কেউ হিসেবে নয়, কিন্তু চলে যাওয়ার সময় ছিলেন একজন মাল্টি-মিলিয়নিয়ার!

ঢালীর শিল্পভাষা এমনই নির্মম ও অশিষ্ট এবং তথাকথিত আধুনিকতার আঙ্গিকে অভব্য যে, ক্লাইভকে ঔপনিবেশিক শাসকের একজন হিসেবে এনেছেন কুকুরের মুখের আদলে, কুকুরের বিশেষ ভঙ্গির মাধ্যমে টেরিটরিয়ালিজম নিয়ে কথা বলেছেন, যা এখন নয়া-উপনিবেশবাদ বা সাম্রাজ্যবাদেরও চরিত্র।

তপন চক্রবর্তী তাঁর নয়া ঔপনিবেশিকতাবাদ : শোষণের স্বরূপ গ্রন্থে বলেছেন – ‘… এই সংকটের হাত থেকে বাঁচার পথ খুঁজতে গিয়ে এ-যুগে সাম্রাজ্যবাদ যে নীতি গ্রহণ করলো তাকেই বলা হয় নয়া ঔপনিবেশিকতা।’ 

কিন্তু ঢালী আল মামুন একজন দৃশ্যশিল্পী, ইতিহাসবেত্তা নন, দার্শনিক কিংবা কোনো রাজনৈতিককর্মীও নন। অথবা, হয়তো একজন শিল্পীর মধ্যে অনেক পেশার কিছু আবশ্যকতার একটা সম্মিলন ঘটে। ঢালির ক্ষেত্রে হয়তো তা-ই হয়েছে। কিছু দৃশ্যমান উপাদানকে সংকলিত করে তিনি একটি ভাবনাকে প্রকাশ করেছেন সমাজের কাছে, মানুষের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতায় তা কীভাবে নাড়া দেবে সেটি সময়সাপেক্ষ। কারণ, শিল্প একা সমাজ পরিবর্তন করতে পারে না, এটিকে একটি জ্ঞানের অনুষঙ্গ হিসেবে দেখাই শ্রেয়। আর  অতীতে যেখানে শিল্প রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোকে নাড়িয়েছে, সেখানে আগে থেকেই সমাজ পরিবর্তনের কিছু বাস্তবিক ক্ষেত্র প্রস্তুত ছিল। ‘অসম্মতির মানচিত্র’ একটি ভাবনার আঙ্গিকে প্রবেশ করে মানুষের মননে, চেতনায় ও জ্ঞানে। যে-দৃষ্টিভঙ্গি এই ইতিহাসকে সমালোচনা করছে, সেখানে কি পাশ্চাত্যে আধুনিক যুক্তিবাদিতাকে গ্রহণ করেই শিল্প অনুশীলনরত নয়?

স্বাধীনতা-উত্তরকালে সমাজজীবনে রাজনীতির বিশিষ্টতা ব্যাপৃত হয়েছে যেখান থেকে, সেখান থেকে মুকুট, শতাব্দীর আখ্যান (অ্যানিমেশন), কাঠের নৃপতি (কাইনেটিক স্কাল্পচার) –  প্রতিটি বস্তুর সৃজন হয়েছে।  যখন তরুণ সমাজের মধ্যে রাজনীতি-বিতৃষ্ণা, তখন এই প্রদর্শনী আরো সম্ভাবনা নির্মাণ করে যে, ইতিহাস ও রাজনীতির বিশ্লেষণ, জীবনকে আরো  উপযোগিতা দান করবে। 

ঢাকার অন্যতম শিল্প-পরিচর্যাকারী প্রতিষ্ঠান, বেঙ্গল শিল্পালয়ে হওয়া বিশ্লেষণাত্মক এই প্রদর্শনীর নাটকীয়তা, নান্দনিকতা, ভারী বস্তুর সমাবেশ, মশলার ব্যবহার, পাতলা কাগজ বা নীল রঙের যোজনা দেখেছেন মূলত ঢাকা শহরের একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর মানুষ। বাকি রইল বাংলাদেশের কোটি জনপদ!

সে-আমলে নিম্নবর্গীয় মানুষের হাতের তৈরি তালপাতার সেপাই নাম নিয়েছে কাঠের নৃপতি শিরোনামে, কোম্পানির   সৈনিকদের ব্যঙ্গ করতে যার জন্ম, সেই তালপাতার সেপাইকে নতুনভাবে রূপ দিয়ে ঢালী আল মামুন ভুলে-না-যাওয়া ইতিহাসের প্রতি ইঙ্গিত দিলেন ব্যঙ্গাত্মক ও খেলার ছলে। এই ছল-ই এই প্রদর্শনীর নান্দনিক চালিকাশক্তি।

 আমরা জানি যে, ঔপনিবেশিকতার কাজ হলো উপনিবেশায়নকে টিকিয়ে রাখা। এটি সুপ্ত থাকে বইপুস্তকে, বিদ্যায়তনিক তৎপরতায়, সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তিতে, প্রাত্যহিক বোঝাপড়ায়, সাধারণের আত্মভাবনায় ও উচ্চাকাক্সক্ষায় এবং অন্যান্য আধুনিক জীবন যাপনের পরিপ্রেক্ষিতে। এখান থেকে নিস্তারের উপায় আছে কি না সেটা দেখার চেষ্টা ঢালীর কাজের উদ্দেশ্য হতে পারে, অথবা নাও পারে, বরং ঐতিহাসিকের প্রেক্ষাপটে এর উপস্থিতিকে চিহ্নিতকরণ, কিছু জরুরি প্রসঙ্গ উত্থাপন ও সমাধানের জন্য মানুষের চেতনায় তৎপরতা তৈরি করা যায়। ঢালী বলেছেন যে, তিনি সরাসরি কোনো চিন্তাকে চাপিয়ে দিতে চান না। কোনো ভালো বা মন্দকেও নয়। দর্শক পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে প্রদর্শনী দেখবেন। স্বাধীনতা – আদতে কেমন তার রূপ – যাকে পাওয়ার জন্য কোটি কোটি দেশপ্রেমিক জীবন দিয়েছেন, শিল্পী-সাহিত্যিকরা খোঁজ করেছেন যুগ-যুগান্তর ধরে? একজন শিল্পীর কাজ কী? শিল্পী তাঁর সৃষ্ট কর্ম দিয়ে সাধারণকে প্রভাবান্বিত করার ক্ষমতা রাখেন। মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন।

শিল্পী আপন ভৌগোলিক পরিবেশে লালিত সংস্কৃতির একজন একনিষ্ঠ কর্মী।

সম্প্রতি পরলোকগত উপমহাদেশের বিখ্যাত ইতিহাসবিদ রণজিৎ গুহের নামটি উচ্চারিত হতে পারে, যিনি গত শতাব্দীর আশির দশকে ‘সাব-অলটার্ন স্টাডিজ’ নামে যে প্রকল্প শুরু করেছিলেন, সেটি বিশ^জুড়ে আজ সমাদৃত, বিতর্কিত-সমালোচিত এবং ইতিহাস পঠনের একটি প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি হিসেবে গৃহীত।

এদেশের প্রেক্ষাপটকে গুহর মতো এই অঞ্চলের ইতিহাসবিদ যেভাবে ক্রিটিক্যালি দেখেন, সেটা ঢালীও দেখতে চেয়েছেন। কিন্তু জ্ঞান তো তরঙ্গের মতো প্রবাহিত হয়ে মানব প্রজাতিকে অগ্রসর করে চলেছে। স্থানিক বাস্তবতার সঙ্গে প্রাসঙ্গিকতা খোঁজার তাগিদে নির্দ্বিধায় অসম্মতি জ্ঞাপন করে চলাই একজন অগ্রসরচিন্তার মানুষের নিরন্তর প্রেরণা।

বেঙ্গল শিল্পালয়ে গত ২৭শে জানুয়ারি থেকে ৮ই এপ্রিল পর্যন্ত চলেছে ঢালী আল মামুনের ÔAtlas of DissentÕ (‘অসম্মতির মানচিত্র’) প্রদর্শনী।