অ্যামেলিয়া

           ॥ ২৩ ॥

চারিদিকে অন্তহীন সবুজ। যতদূর চোখ যায় কেবল ভুট্টা, বিন, পালং, সেলেরি ক্ষেত। তার মধ্যে দিয়ে মসৃণ পথ। ক্ষেতখামার ভরা স্থানমাত্র যদি গ্রামাঞ্চল হয়, তবে, অমলিনী ভাবছে, আমেরিকা দেশটির কুর্নিশ প্রাপ্য। গ্রাম এখানে অবহেলিত নয়। সম্ভবত সকলেই নিজের দেশের গ্রামাঞ্চলের কথা ভাবছে, কারণ এই দিগন্তব্যাপী উৎকৃষ্ট ফসলের সম্ভার সবাইকে চুপ করিয়ে রেখেছে। গান শেষ হয়ে গেছে কখন। এই অপরূপ শ্যামলিমার সৌন্দর্যে মোহিত, কিছু বা বিষণ্ন, কেউ বা বিস্মিতও।

ক্ষেতের একেবারে প্রান্তে একটি কাঠের বাড়ির শীর্ষ দেখা যায়। জর্জ তার গমগমে স্বরে বলে উঠল, ‘তোমরা এমন চুপ করে গেলে যে। সবুজ এভাবেই সম্মোহিত করে দেয়, তাই না? আমি যখন প্রথম এসেছিলাম এখানে, আমার ঘোর লেগে গিয়েছিল।’

ইয়াকভ বলল, ‘তুমি আইওয়ার নও?’

‘আমি শিকাগোয় বড় হয়েছি। এখানে একটা স্কলারশিপ পেয়ে গেলাম। জানোই তো আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার খরচ বেশি। স্কলারশিপ জুটে গেলে তাই কেউ আর অন্য কিছু ভাবে না। অবশ্য দারুণ মেধাবীদের কথা আলাদা। স্কুলে আমার এক চাইনিজ বন্ধু ছিল, সে তিনটে কলেজে সুযোগ পেয়েছিল। কী সাংঘাতিক ব্যাপার বলো!’

মোলি বলল, ‘তুমি এখন কী পড়ছ?’

‘তুলনামূলক সাহিত্য। পিএইচ.ডি করার ইচ্ছে আছে, দেখি কতদূর কী হয়।’

‘নিশ্চয় হবে।’

‘ধন্যবাদ মোলি।’

মোলির মনের ভেতর কী চলেছে আমি জানি। একটু আগে সে গ্রামের এমন উন্নত পথঘাট দেখে নিজের দেশের জন্য দুঃখবোধ করছিল। তার ভাবতরঙ্গের মধ্যে দিয়ে আমিও দেখতে পেয়েছি ভারতবর্ষের অনুন্নত অবহেলিত গ্রামগুলি। জীবন সেখানে যাপন নয়, সংগ্রাম। কত গ্রাম বন্যায় ডুবে যায়, সর্বস্ব হারিয়ে আবার মাথা তুলে দাঁড়াবার যুদ্ধ করে। অধিকাংশ গ্রামের পথ মোটরগাড়ি চলার উপযুক্ত নয়। আজো মানবজীবনের অন্যতম সহায় গোরুর গাড়ি।

মোলি বড় নরম, বড়ই সংবেদী। অথচ বাইরে থেকে তাকে বেশ গম্ভীর বলেই মনে হয়। তার ব্যক্তিত্বের মধ্যে এমন সৌকুমার্য ও দৃঢ়তা আছে যে সবার মধ্যে তাকে আলাদা করে চোখে পড়ে। তাকে যত দেখি, ততই আমার ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা অকৃপণ বেড়ে ওঠে। পুঞ্জমেঘের মতো আকাশ ছেয়ে ফেলছে আমার প্রেম। কোনোদিন কি মোলিকে একথা বলে উঠতে পারব?

সে এখানে আসার পর প্রথম শুক্রবার ঘর পরিষ্কার করতে এলো যে ছেলেটি, সে চৈনিক, মোলি তাকে দেখে হাসল। জিজ্ঞেস করল নাম। ‘রবার্ট’, বলল ছেলেটি। মোলি বলল, ‘তুমি কোন দেশ থেকে এসেছ?’

সে বলল, ‘চিন থেকে। তবে আমি আমেরিকায় জন্মেছি। তুমি কোন দেশ থেকে এসেছ?’

‘ইন্ডিয়া।’

‘ইন্ডিয়া, আমি জানি এই দেশের নাম। অনেক চৈনিক রূপকথায় তোমাদের দেশের কথা আছে। আমি কি তোমার নাম জানতে পারি?’

‘নিশ্চয়। আমাকে মোলি বলে ডেকো।’

‘ধন্যবাদ মোলি। তোমার সঙ্গে আরো কিছুক্ষণ কথা বলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু আমাকে কাজ সেরে ক্লাসে যেতে হবে।’

‘ওঃ, আমি দুঃখিত। তোমায় দেরি করিয়ে দিলাম। তুমি  এখানকার ছাত্র? কী পড়ো?’

‘পলিটিক্যাল সায়েন্স। আমি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মোলি। এখানে পার্টটাইম ক্লিনিং জব করি।’ সে হাসল। ভ্যাকুয়াম যন্ত্রে ঘরের কার্পেট পরিষ্কার করল, বিছানার চাদর ইত্যাদি বদলে দিলো, বাথরুম পরিষ্কার করে হাসিমুখে বলল, ‘এখানে আমার কাজ শেষ। আবার দেখা হবে।’

মোলি তার দিকে একটি কুড়ি ডলারের নোট এগিয়ে দিলো। খুশিতে ঝিকমিকিয়ে উঠল রবার্ট। অনেকবার ধন্যবাদ দিলো সে। তার খুশি মোলিকেও স্পর্শ করল, আমি দেখলাম। সে অভিভূত। সে ভাবছে, ভারতের কোনো ছাত্র বা ছাত্রী কি এমন মেথর-ঝাড়ুদারের কাজ করে লেখাপড়া চালানোর কথা ভাবতে পারবে?

এ-কাজ করতে হচ্ছে বলে রবার্টের মধ্যে কোনো লজ্জা নেই, মালিন্য নেই। সে কফিমেকার থেকে কফি ঢালতে ঢালতে আবেগবশে দিয়ে ফেলা কুড়ি ডলারের কথা ভাবতে লাগল। প্রতি শুক্রবার ঘর পরিষ্কারের জন্য কেউ না কেউ আসবে, তার পক্ষে কি প্রতিবার টিপস দেওয়া সম্ভব? সে দোটানায় পড়ে গেল। একজন কলেজপড়ুয়া যখন নিজের খরচ চালাবার জন্য অন্যের শৌচাগার সাফ করে, তাকে কি দু-তিন ডলার এগিয়ে দেওয়া যায়?

কফির কাপ হাতে সে বাথরুম পরিদর্শনে গেল। আমিও তার সঙ্গে সঙ্গে রইলাম। মোলি অবাক হয়ে দেখতে লাগল রবার্টের কাজ। কয়েকদিনের ব্যবহারে বাথটাবে হালকা হলুদ সর পড়েছে, রবার্ট তা ঘষে তোলেনি। বাথটাবের পর্দায় জলের ছোপ মুছে দেয়নি, কমোডেও হলুদ ছোপ। মোলি দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ছেলেটা এভাবে ফাঁকি দিলো? মনের ভেতর যে শ্রদ্ধাবিমণ্ডিত আবেগ তৈরি হয়েছিল, তা পরিণত হলো তিক্ততায়। অবিশ্বাসে। তার দেশে বেশির ভাগ লোক নিজের কাজের প্রতি দায়িত্বশীল নয়। এখানে সে এমনটা আশা করেনি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করে বলে তার বিরক্তি এলো বেশি, কুড়ি ডলার দিয়েছে বলে নিজেকে তার ভারী বোকা লাগছে। সে ভাবছে, আপিসে নালিশ করবে কি না। কিন্তু একজন ছাত্রকে হেনস্থা করতেও তার মন চাইল না। হয়তো ছেলেটি চাকরি খোয়াবে। খুব প্রয়োজন না হলে এই কাজ নেবে কেন? অবশেষে সে সিদ্ধান্ত নিল, কাউকেই সে টিপস দেবে না, কারো সঙ্গেই সে আলাপচারিতা শুরু করবে না।

মোলির জন্য আমার কষ্ট হচ্ছিল। কষ্ট হচ্ছিল, কারণ ভালোবাসা ছাড়া, প্রেম ছাড়া তাকে জাগতিক কিছুই দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। কোটি ডলারের অধিকারী আমি, সব রেখে এসেছি নশ্বর ভুবনে। ভালোবাসা জানব বলে আল্লাহর করুণায়, আব্বাজানের আশীর্বাদে কবর থেকে উঠে এসেছি আমি। সময় মাত্র তিন মাস। একটি একটি করে চলে যাচ্ছে দিন। যাকে আশ্রয় করে পাচ্ছি আকাক্সিক্ষত প্রেমের স্বর্গীয় স্বাদ, সে আমারই সামনে কুড়ি ডলারের কথা ভেবে হিসেবি হয়ে পড়ছে, আমি কিছুই করতে পারছি না। কষ্ট আমার নিজের জন্যও হচ্ছিল। প্রেম অক্ষম ও অসহায় হলে তার যন্ত্রণা হয় গাঢ়তর। স্বল্প সময়ে এই প্রেমবোধি উপলব্ধি করতে গেলে হয়তো যন্ত্রণাই উপযুক্ত পথ।

মোলির জন্য আমার কষ্ট হচ্ছিল তার আবেগ ও সহৃদয়তা আহত হলো বলে। আমি তার কফিতে কফি হয়ে লেগে রইলাম ঠোঁটের পাতায় চুম্বনের মতো। সে তা জানে না। জানবে না।

পরের শুক্রবার কী হয় দেখার জন্য আমি কৌতূহলী, মোলির ঘরে গেলাম। গোলগাল, সরল শান্ত গম্ভীর মুখ এক ছাত্রী এলো সুইপার হয়ে। মোলি তাকে দেখে ভদ্রতার ‘হাই’ বলল শুধু। মেয়েটি তার অনুমতি নিয়ে গোমড়ামুখে কাজ করতে লাগল। সে সাদা আমেরিকান।

কাজ শেষ করে সে বাথরুমের বাইরে এসে দাঁড়াতে মোলি বলল, ‘প্লিজ ওয়েট ফর আ মোমেন্ট।’ সে বাথরুম পর্যবেক্ষণ করে খুশি হলো দেখে যে, মেয়েটি বাথটাব ও পর্দা ঝকঝকে করে তুলেছে। সে কমোডে নজর দিলো। না। এই মেয়েও কমোড ব্রাশ করেনি। টয়লেট বোল ব্রাশ না করলে এরপর সে ওই কমোড আর ব্যবহার করতে পারবে না। সে মেয়েটিকে বলল, ‘আমি তোমার নাম জানতে পারি?’

‘জেনি।’ বলল মেয়েটি। মোলি লক্ষ করল, জেনির ব্যবহৃতব্য জিনিসগুলির মধ্যে কমোডমার্জনী নেই। সে বলল, ‘জেনি, তুমি কি আমাকে একটি কমোডমার্জনী দিতে পারো?’

জেনি বলল, ‘তুমি কি কমোড পরিষ্কার করাতে চাও?’

‘ঠিক ধরেছ। এর আগের সপ্তাহে যে এসেছিল সে কিছুই পরিষ্কার করেনি। তুমি অনেকখানি করেছ, তাই তোমাকে ধন্যবাদ। আমার মনে হচ্ছে কমোড পরিষ্কার করতে তোমাদের ঘেন্না হয়। তো, আমি নিজেই কাজটি করে নিতে চাই।’

মেয়েটি সরু গলায় বলল, ‘না না, তুমি করবে কেন? আমি ব্রাশ এনে করে দিচ্ছি।’

‘তোমার সঙ্গে ব্রাশ নেই কেন?’

‘কমোড ক্লিনিং বাধ্যতামূলক নয়। অনেক গেস্ট আমাদের বাথরুমে ঢুকতেও দিতে চায় না। কেউ যদি কমোড ক্লিনিং করতে বলে, সুপারভাইজারের কাছ থেকে ক্লিনিং ব্রাশ, লিকুইড সব নিয়ে আসি।’

সে দ্রুত পায়ে গিয়ে তার জিনিসপত্র নিয়ে এলো। কাজ সারা হলে মোলি দেখল, জেনি সবকিছু ঝকঝকে করে তুলেছে। সে একটি কুড়ি ডলারের নোট জেনির দিকে এগিয়ে দিয়ে হাসল। জেনি হাসল প্রায় না-হাসার মতো। আমি মেয়েটিকে ভালো করে দেখলাম। মনে হলো, তার মনে অনেক দুঃখ জমে আছে। সে হাসতে ভুলে গেছে। সে নোট হাতে নিয়ে এদিক-ওদিক দেখে দ্রুত সেটি পকেটে চালান করে দিলো। চাপা স্বরে বলল, ‘ধন্যবাদ।’

‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ো?’

মেয়েটি নীরবে মাথা নাড়ল।

‘কী পড়ো?’

‘বায়োইনফরমেটিক্স ফার্স্ট ইয়ার।’

‘উইশ ইউ আ গ্র্যান্ড সাকসেস জেনি।’

‘থ্যাঙ্কস ম্যাম।’ এবার জেনি হাসল বড় করে। মুখখানা লাল হয়ে উঠল তার। মোলি বলল, ‘হাতে সময় থাকলে একসঙ্গে কফি খেতে পারি আমরা।’

জেনি বিস্মিত চোখে তাকাল। খানিক দ্বিধা করে বলল, ‘বেশ।’

‘বোসো।’ মোলি কফি বসিয়ে বলল, ‘জেনি, আমাকে তুমি মোলি বলে ডাকতে পারো।’

‘হাই মোলি। কফি পান করতে বলার জন্য ধন্যবাদ। তুমি কি কবি?’

‘আমি কবিতা লিখি। তবে এখানে আমি এসেছি একজন গদ্যকার হিসেবে। আমার দেশ ইন্ডিয়া।’

‘ইন্ডিয়া? এ নাম আমি কখনো শুনিনি। এটা কি আফ্রিকার কোনো দেশ?’

‘না। আমরা এশীয়।’

মোলি কফি ঢালছে। জেনি বলল, ‘তাহলে এশীয়রাও আফ্রিকীয়দের মতো কালো?’

মোলি হেসে ফেলল। কফির কাপ এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘এশীয়দের কেউ কেউ ব্রাউন বলে। তোমাদের চোখে সবাই কালো।’

‘তা হবে।’

‘এবার তুমি কিছু বলো জেনি। আমি কোন দূর দেশ থেকে এসেছি তোমাদের দেশে। আমাকে জানাও তোমার দেশের কথা।’

‘আমি যে খুব জানি তা নয়। তুমি ইন্টারনেট খুঁজলেই এদেশের তথ্য পেয়ে যাবে।’

‘তা ঠিক। তাহলে তোমার কথা বলো। সেটা তো আর ইন্টারনেট থেকে পাবো না।’

জেনি হাসল না। বরং বিষণ্নমুখে বলল, ‘আমার কথা কেউ কখনো জানতে চায়নি। তাই আমি নিজেও জানি না ‘আমার কথা’ বলতে ঠিক কী বোঝায়। তবু চেষ্টা করছি। আমি বায়োইনফরমেটিক্স কেন পড়ছি জানো? এতে তাড়াতাড়ি কাজ পাওয়া যায়। আমি স্বাধীন হতে চাই।’

‘আমরা সবাই তাই চাই জেনি। তবে কি জানো, আমাদের পরাধীনতার শেকল এতই গভীরে যে সারাজীবন যুদ্ধ করেও তার শেষ দেখা যায় না।’

‘তার মানে?’

‘তুমি ঠিক পথেই আছ জেনি। তুমি সফল হও।’

‘ধন্যবাদ মোলি। তোমার কফি খুব ভালো হয়েছে।’

‘ধন্যবাদ।’

‘আচ্ছা, ইন্ডিয়ানরা কী ভাষায় কথা বলে? ইংলিশ?’

‘হ্যাঁ, ইংলিশ আমরা বলি। তবে আমাদের দেশে অনেক ভাষা।’

‘সবাই সবার ভাষা বোঝে?’

‘না। দুটি ভাষা মোটের ওপর সবাই বুঝতে পারে। হিন্দি আর ইংলিশ।’

‘একটা কথা জিজ্ঞেস করব? কিছু মনে করবে না?’

‘না, করব না। বলো।’

‘তুমি কি আমাকে নিয়ে গল্প লিখবে?’

‘তা তো জানি না। যদি লিখি, তোমার ভালো লাগবে?’

‘আমার খুব ইচ্ছা কোনো শিল্পী আমাকে দেখে ছবি আঁকুক। কিন্তু কেউ আমায় পছন্দই করল না। আমি এমনকী আর্ট স্কুলে মডেল হওয়ার চেষ্টাও করেছি। পাত্তা পাইনি। মা আমাকে ডাকত লাভলি ডল। সে-কথা শুনে শুনে আমার ধারণা হলো, আমি একেবারে বার্বি পুতুলের মতো সুন্দর। কিন্তু ব্রেন্ড আমার ভুল ভেঙে দিলো।’

‘ব্রেন্ড?’

‘ব্রেন্ডন। আই প্রোপসড হিম তো বি মাই বয়ফ্রেন্ড। কিন্তু ও আমাকে এড়িয়ে গেল। ও বলেছিল, সবাই জন্মেই সুন্দর হয়ে ওঠে না। যাদের রূপ কম, তাদের নিজেকে ঘষেমেজে আকর্ষণীয় করে তুলতে হয়। তুমিও তাই করছ না কেন।’ জেনির চোখে জল এলো। মুখ লুকোতে সে কফির কাপে চুমুক দিলো। মোলি বলল, ‘আমার তোমাকে সুন্দর আর মিষ্টি এক মেয়ে বলেই মনে হচ্ছে। খানিকটা বাড়তি মেদ আছে। সে তো তুমি চাইলেই ঝরিয়ে ফেলতে পারো।’

‘সত্যি বলছ?’

‘আমি তোমায় এতটুকুও মিথ্যে বলছি না।’

‘মেদ ঝরিয়ে ফেললে কি ব্রেন্ড আমাকে লাইক করবে?’

‘করতেও পারে। সে না করলেও আর কেউ করবে। জেনি, যারা রূপ দেখে সঙ্গী বেছে নেয়, তারা কি খুব নির্ভরযোগ্য?’

‘না। একেবারেই না। আমার মাও তাই বলে। আচ্ছা, তুমি কি আমাকে নিয়ে গল্প লিখবে? আমি আগে কখনো কোনো লেখককে কাছ থেকে দেখিনি। আজ তোমার সঙ্গে কথা বলতে বলতে মনে হলো, কেউ ছবি না আঁকলেও ক্ষতি কী, কেউ তো আমাকে নিয়ে গল্প লিখতে পারে।’

‘বেশ, ধরো যদি লিখি, আমার বাংলায় লেখা গল্প তো তুমি পড়তে পারবে না। তাহলে?’

‘তুমি আমাকে ইংলিশ অনুবাদ করে দিও।’

মোলি সম্মত হলো, জেনির গল্প সে লিখবে। যতটুকু জেনেছে, তাই দিয়েই। জেনি আবার মোলির কাছে আসবে বলে গেছে।

এখন ডেনদের বার্নে যেতে যেতে তার রবার্ট ও জেনির

কথা মনে পড়ছে, তারাও এই জর্জের মতো একই পথের অভিযাত্রী। জর্জ কালো মানুষ। সে অ্যাফ্রো-আমেরিকান। ভিন্ন মহাদেশের,

ভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের তিনজন একইভাবে যাপন করছে তাদের ছাত্রজীবন।

ইয়াকভ বলে উঠল, ‘জর্জ, খিদে পেয়ে গেল যে। আর কতদূর?’

‘ওই তো, ওই যে বাড়িটা, আর তিন মিনিটের মধ্যে আমরা পৌঁছে যাব।’ (চলবে)