আইনস্টাইন এবং অবিস্মরণীয় কোয়ান্টাম-বিতর্ক

আইনস্টাইন কি সবসময়েই নির্ভুল ছিলেন? পদার্থবিজ্ঞানের যুগান্তকারী গবেষণায়, নতুন ধারণাসৃষ্টির বিস্ময়কর প্রতিভায়, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শান্তি-আন্দোলনের একনিষ্ঠ সংগ্রামে এবং এমনকী দুইবার জার্মান জাতীয়তা পরিত্যাগ করার ব্যাপারেও আইনস্টাইন কি সবসময়ে ঠিক ছিলেন? প্রশ্নহীন শৃঙ্খলাপূজারী জার্মান জাতির অতি অনুগত একজন হওয়া গতানুগতিকতাবিরোধী আইনস্টাইনের পক্ষে যে অসম্ভব ছিল, একথা সহজেই বলা চলে। অন্যদিকে ইহুদি রাষ্ট্র স্থাপনের ব্যাপারে তিনি যে প্যালেস্টাইনি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সমঝোতাপূর্ণ সহযোগিতার মাধ্যমেই অগ্রসর হতে চাইতেন, এবং তা মানবদরদী আইনস্টাইনের পক্ষেই সম্ভব ছিল, একথাও ইতিহাস অকুণ্ঠভাবে স্বীকার করতে বাধ্য। তবু জার্মান জাতির হাতে অসংখ্য ইহুদি নিহত হয়েছে, তাঁরই আবিষ্কৃত শক্তি-ভরের সমীকরণ ব্যবহার করে তৈরি করা আণবিক বোমার প্রচণ্ডতায় অসংখ্য জাপানি নাগরিক নিহত হয়েছে এবং তাঁরই জাতিগোষ্ঠীর হাতে অগণিত প্যালেস্টাইনি নর-নারী শিশু-বৃদ্ধ নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটছে –
এ-সবই বলা যায় আইনস্টাইনের প্রতি মনুষ্যজাতির চরম দায়বদ্ধহীনতা। তবে একথা অবশ্যই সত্য যে, পৃথিবীতে একজনই আইনস্টাইন জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং তিনি এখনো মনুষ্যজাতির সব প্রাগ্রসর বৈজ্ঞানিক প্রয়াসের মূল প্রেরণাদায়ক শক্তি।

পদার্থবিজ্ঞানের পথিকৃৎ গবেষণায় আইনস্টাইন কতটা অব্যর্থ লক্ষ্যভেদী তীরন্দাজ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন, তার সুন্দর নিদর্শন হলো ১৯০৫ সালে প্রকাশিত তাঁর তিনটি প্রবন্ধ। এর একটি প্রবন্ধে আইনস্টাইন তথাকথিত ব্রাউনীয় গতির প্রতিভাসে সম্ভাবনাভিত্তিক গণনা ব্যবহার করে পরমাণুর আকৃতি সম্বন্ধে এক দ্ব্যর্থহীন প্রমাণ উপস্থাপন করেন এমন একসময়ে যখন অনেক বিজ্ঞানী মনে করতেন যে, পরমাণুর ধারণাটিই আসলে রসায়নবিজ্ঞানে হিসাব করার একটি সুবিধাজনক উপায় মাত্র, পরমাণু বলে আসলে কিছুই নেই। পরমাণুর অস্তিত্ব সম্বন্ধে আইনস্টাইনের একসময়ে ব্যাপকভাবে উদ্ধৃত পিএইচ ডি থিসিসে প্রকাশিত নিখুঁত গণনা এখনো বহুল আলোচিত একটি অতুলনীয় গবেষণাকর্ম।

১৯০৫ সালের দ্বিতীয় প্রবন্ধে আইনস্টাইন ম্যাক্স প্ল্যাংক কর্তৃক সদ্য আবিষ্কৃত কোয়ান্টাম তত্ত্বের একটি অভিনব সার্থক প্রয়োগ করে এই কোয়ান্টাম-ধারণাকেই সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করে দিলেন। ধাতুর পাতের ওপর আলো নিক্ষেপ করলে ইলেকট্রন-কণা নির্গত হয় এবং এই আলোক-বিদ্যুৎ প্রতিভাসের সঠিক ব্যাখ্যা হলো, আলোকে ফোটন-কণা হিসেবে গ্রহণ করা যাতে ফোটন ধাতুর পরমাণুকে ধাক্কা দিয়ে ইলেকট্রন নিঃসৃত করতে পারে। একথাই আইনস্টাইন তাঁর আলোক-বিদ্যুতের ওপর দ্বিতীয় প্রবন্ধে সুন্দরভাবে তথ্য এবং তত্ত্বসহ ব্যাখ্যা করলেন, যার জন্য তিনি নোবেল পুরস্কারে বিভূষিত হন বহুকাল পরে, ১৯২১ সালে।

ওই ১৯০৫ সালেই আইনস্টাইনের ‘অ্যানাস মিরাবিলিস’ – অলোকসামান্য বছরে – তিনি বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্বের ওপর যে-প্রবন্ধটি প্রকাশিত করেন, বলা যায়, সেখান থেকেই আধুনিক যুগের আধুনিক বিজ্ঞানের শুরু – আণবিক যুগের, ট্র্যানজিস্টরের  যুগের, লেজার যুগের শুরু এবং আরো হাজার বস্তুর উৎপাদনের ও ব্যবহারের শুরু, যা মানুষের জীবনকে সুখী, সমৃদ্ধ ও সার্থক করার ব্যাপারে অকল্পনীয় ভূমিকা রেখে চলেছে গত একশ বছর ধরে।

আইনস্টাইন একবার বলেছিলেন, ‘এটা বলা যায় না যে, আমি খুবই বুদ্ধিমান। আসলে আমি অনেক সময়ে কোনো সমস্যা নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে চিন্তা করতে অভ্যস্ত।’ এই দীর্ঘকাল ধরে চিন্তা করার বহু পরিচয় আমরা তাঁর পদার্থবিজ্ঞানে পাই, তবে তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বোধহয় কোয়ান্টাম বলবিদ্যার প্রকৃত তাৎপর্য সম্বন্ধে তাঁর আজীবন অন্বেষণ এবং সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব সৃষ্টির জন্য সাত-আট বছরের একক অনন্যসাধারণ হার্কিউলিয়ান প্রচেষ্টা। সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব সৃষ্টির পরেও ১৯১৭ সালে প্রকাশিত একটি মৌলিক প্রবন্ধে – যার শিরোনাম ছিল ‘কসমোলজিসে বেট্রাকটুঙ্গেন’ – আইনস্টাইন এমন এক জনমানবহীন জগতে পা দিলেন যেখানে আগে কেউ পা দেয়নি, যেখানে আপেক্ষিক তত্ত্বের শুরু, বিশ্বেরও শুরু। এ-সময়ে আইনস্টাইন বিশ্বাস করতেন যে, বিশ্ব শুধু তারকা দিয়েই ভর্তি, অসংখ্য ছায়াপথের কথা তখনো মানুষ শোনেনি, ভাবতে শেখেনি। কার্টিস এবং শেপলি – এই দুই বিজ্ঞানীর মধ্যে কুণ্ডলীকৃত ছায়াপথ নিয়ে ঐতিহাসিক বিতর্ক শুরু হয়েছিল গত শতাব্দীর বিশের দশকের দিকে। শেপলি বিশ্বাস করতেন, একটি মাত্র দ্বীপবিশ্ব রয়েছে যাকে বলি আমাদের ছায়াপথ বা মিল্কিওয়ে (আকাশগঙ্গা) এবং তাঁর ধারণা ছিল যে, সব কুণ্ডলীকৃত নীহারিকা আসলে আমাদের ছায়াপথের অভ্যন্তরে কোনো অস্বচ্ছ বস্তুমাত্র। কার্টিস এবং তাঁর পূর্বে দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট মনে করতেন, এগুলো আমাদের বিশ্বের মতোই দ্বীপবিশ্ব। এই বিতর্ক, বলা যায়, কোপারনিকাস-বিপ্লবের শেষ অধ্যায় – ভূকেন্দ্রিক (বা আকাশগঙ্গা-কেন্দ্রিক) ধারণার বিরুদ্ধে শেষ সংগ্রাম। আমাদের মতো দেশে এই ধরনের অ্যানথ্রোপোমরফিক ধারণার আজকাল প্রবল আধিপত্য বিশেষ করে মৌলবাদে বিশ্বাসী তথাকথিত বিজ্ঞানীমহলে, কিন্তু সুবৃহৎ দূরবীক্ষণ তৈরির পর এডউইন হাব্ল যে-প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গিয়েছেন, তা অনেকেই জানে না, বা জানলেও বিশ্বাস করে না। কুণ্ডলীকৃত নীহারিকা আসলে আমাদের ছায়াপথের মতোই ভিন্ন ভিন্ন ছায়াপথ এবং বিশ্ব এইসব গ্যালাক্সি দিয়েই পরিপূর্ণ। এইসব ছায়াপথই – তারকাগুলি নয় – মহাবিশ্বের মৌলিক নির্মাণসামগ্রী এবং এ-ধরনের দৃশ্যমান অথবা ভবিষ্যতে দৃশ্যমান হবে এমন গ্যালাক্সির সংখ্যা বোধহয় হাজার কোটি বা তারও বেশি। এই ছায়াপথরাজির বিশাল বিশ্বে আমাদের ছায়াপথের একপাশে ঘূর্ণায়মান অকিঞ্চিৎকর এক সৌরমণ্ডলের ততোধিক তাৎপর্যহীন একটি গ্রহের মানুষ আমরা, এই চিন্তা মানুষকে তার যথার্থ অবস্থান সম্বন্ধে সচেতন করে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।

কোপারনিকাসের বিপ্লবের বহু পরেও, এমনকী ঊনবিংশ শতাব্দীতেও, বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন একটি চিরন্তন বিশ্বের ছবিতে, যে-বিশ্ব সবসময়েই বিদ্যমান, অনন্তকাল ধরে অস্তিত্বশীল, যেখানে মানুষ রয়েছে এক কেন্দ্রীয় ভূমিকায়। কিন্তু ১৯০৫ সালে আইনস্টাইন যখন সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব সৃষ্টি করলেন এবং অভিকর্ষকে তার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত করলেন, তখন তাঁর তীক্ষ্ন দৃষ্টি থেকে এই প্রশ্ন এড়িয়ে গেল না যে, আকর্ষণী বল সবকিছুই আকর্ষণ করে, গাছের ফলকে মাটির দিকে টেনে নামায়, ধূমকেতুকে সূর্যের চারদিকে ঘোরায়, তাহলে বিশ্বের সব বস্তু চূড়ান্তভাবে আকর্ষিত হয়ে চুপসিয়ে একটি পিণ্ড হয়ে যায় না কেন? অভিকর্ষ বলের অস্তিত্বই আমাদের বলে দেয়, এ-ধরনের বল চিরন্তন অপরিবর্তী বলের ধারণার সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যহীন। কিন্তু আইনস্টাইন একটি চুপসানো বিশ্বের ধারণায়ও বিশ্বাস করতেন না, কেননা তাঁর কথামতো, ‘এ-ধরনের সম্ভাবনায় বিশ্বাস করা হবে একটা পাগলামি।’

আড়াই শ বছর আগে অভিকর্ষ তত্ত্বের স্রষ্টা আইজাক নিউটনও একই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তিনিও একটি চিরন্তন বিশ্বের ছবিতে বিশ্বাস করতেন, কিন্তু তিনিও জানতেন যে, অভিকর্ষ বলই একসময়ে সবকিছুকে চুপসিয়ে পিণ্ডবৎ করে ফেলবে। এই সমস্যার নিউটনীয় সমাধান ছিল ঈশ্বরের অস্তিত্ব, যে-ঈশ্বর সব বস্তুকে নিজের নিজের জায়গায় রেখে দিয়েছেন এবং তাঁর মহাবৈশ্বিক দায়িত্ব হিসেবে তিনিই মাঝে মাঝে সবকিছুর অবস্থান নেড়েচেড়ে ঠিকঠাক করে দেন।

অ্যালবার্ট আইনস্টাইন বিশ্বকে ঠিকঠাক করার ব্যাপারে ঈশ্বরকে টেনে আনার পক্ষপাতী ছিলেন না, কেননা তিনি বিশ্বাস করতেন যে, একটি কার্যকারণসম্মত যুক্তিগ্রাহ্য বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকবেই। সুতরাং সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বকে এমনভাবে বিনির্মাণ করতে হবে যাতে এ-সমস্যা থাকে না এবং ঠিক এই কারণেই তত্ত্বে প্রয়োজন একটি বিপরীত অভিকর্ষ বলের, যা হবে বিকর্ষণধর্মী। এ-ধরনের বিপরীত অভিকর্ষ বলের কোনো অস্তিত্ব আমরা দেখি না, কিন্তু এর প্রয়োজন ছিল অনন্তকাল ধরে বিশ্বকে টিকিয়ে রাখার একটি মৌলিক দাবির জন্যেই। অবশ্যই এ-ধরনের সমাধান গ্রহণ করতে অনেকেই প্রস্তুত ছিলেন না এবং তাই ১৯২০ সালেই প্রস্তাব করা হলো যে, বিশ্ব আসলে মোটেই চিরন্তন কিছু নয়, এর আদি আছে, অন্তও আছে এবং তাই এই বিশ্ব অতীতে একসময়ে সৃষ্টি হয়েছে একথা মেনে নিতেই হবে, ঈশ্বরে বিশ্বাস করা হোক বা না-হোক। সুতরাং পদার্থবিজ্ঞানীরা সৃষ্টি করলেন মহাবিস্ফোরণ-তত্ত্ব – এমন একটা সর্বব্যাপী বিশাল বিস্ফোরণ যার ফলে আদিম এক অতি ক্ষুদ্র অতি উত্তপ্ত অতি ঘন শক্তির পুঞ্জ বিস্ফোরিত হয়ে আজকের এই বিশ্ব সৃষ্টি করেছে। প্রাথমিক মহাবিস্ফোরণ-তত্ত্বে স্থিতিশীলতার কোনো বিপরীত অভিকর্ষ বলের প্রয়োজন হয় না।

মহাবিস্ফোরণ-তত্ত্বের অন্যতম প্রবর্তক ছিলেন জর্জেস লেমাইটার যিনি একাধারে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী এবং অন্যদিকে একজন সক্রিয় ধর্মযাজক। তাই অনেকে মনে করতেন যে, এই তত্ত্ব হলো বিজ্ঞানে ঈশ্বরকে প্রচ্ছন্নভাবে টেনে আনার একটি সুন্দর প্রচেষ্টা। আইনস্টাইন স্বয়ং লেমাইটারের ধর্মীয় পটভূমি সম্বন্ধে মোটেও স্পর্শকাতর ছিলেন না, কিন্তু তবু লেমাইটারের তত্ত্বকে ‘অসহনীয়’ বলতে তিনি দ্বিধা করেননি। এর ফলেই হয়তো প্রথমদিকে বিশ্বসৃষ্টি-গবেষণা কিছুটা পিছনে পড়ে যায়।

কিন্তু ১৯২০ সালের মধ্যেই আইনস্টাইন তাঁর ভুল বুঝতে পারলেন। এই সময়েই মাউন্ট উইলসন মানমন্দিরে কর্মরত এডউইন হাব্ল প্রমাণ করেছেন যে, বিশ্বের ছায়াপথগুলি পরস্পরের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, যেন একটি মহাবৈশ্বিক বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্টি হয়ে তারা এখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাচ্ছে চতুর্দিকে।

এই মহাবিস্ফোরণ-তত্ত্বই আধুনিক জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের মূল পটভূমি বা প্যারাডাইম এবং এর প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়, আদি বিশ্বে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম ইত্যাদি মৌলিক পদার্থের কেন্দ্রীয়-সংশ্লেষণ যার পরীক্ষণলব্ধ মানের সঙ্গে তাত্ত্বিক মানের সুন্দর মিল পাওয়া যায়। আরেকটি প্রমাণ হলো ২.৭ ডিগ্রি কেলভিন তাপমাত্রার মাইক্রোতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণের উপস্থিতি, যা নিঃসন্দেহে সৃষ্টি-মূহূর্তের প্রথম ক্ষণটিকেই চিহ্নিত করে।

প্রসারণশীল বিশ্ব-ধারণার প্রতিষ্ঠালাভের পরই আইনস্টাইন স্বীকার করে নিয়েছিলেন যে, বিশ্বসৃষ্টি-তত্ত্বে একসময়ে তিনি যে-মহাজাগতিক ধ্রুবক প্রবর্তন করেছিলেন এবং যার প্রয়োজন ছিল বিশ্বকে প্রচলিত ধ্যানধারণা-অনুসারে স্থাণু করা, তা আসলেই তাঁর একটি বিরাট ভুল। ১৯৩১ সালে আইনস্টাইন যখন মাউন্ট উইলসন মানমন্দিরে এডউইন হাব্লের সঙ্গে দেখা করেন, তখনই তিনি স্বীকার করলেন যে, স্থাণু বিশ্বের ধারণা খুল – বিশ্ব আসলে প্রসারণশীল।

এই গল্পে আরো একটি বাঁক ঘটেছে সাম্প্রতিক এক ঘটনায়। অভিকর্ষ যেহেতু সবকিছু পরস্পরের দিকে টানে তাই মহাবিস্ফোরণের ফলে বর্তমানের প্রসারণের হার একসময়ে কমে যেতে শুরু করবে এবং ধীরে ধীরে মন্দনহার বৃদ্ধি পাবে, যার ফলে এখনকার অপস্রিয়মাণ সব ছায়াপথ আবার পরস্পরের দিকে আকৃষ্ট হবে। কিন্তু ১৯৯৮ সালে জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানীরা মন্দনগতি মাপনের সময়ে আশ্চর্য হয়ে দেখলেন যে, বাস্তবিকপক্ষে বিশ্ব এক ত্বরণগতিসম্পন্ন বিশ্ব, যার ত্বরণহার বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেই স্বীকার করতে হয়।

এর যৌক্তিক ব্যাখ্যা কী? উত্তর হলো, ওই বিপরীত অভিকর্ষ বল। আধুনিক জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানীরা এই বিকর্ষণী প্রক্রিয়াকে বলেন কৃষ্ণশক্তি বা ডার্ক ম্যাটার, যার সঠিক ব্যাখ্যা এখনো আমাদের জানা নেই। মনে রাখা দরকার যে, এই ধরনের বলই আইনস্টাইন চিন্তা করেছিলেন তাঁর মহাজাগতিক ধ্রুবকের মাধ্যমে। সুতরাং আইনস্টাইন ভুল করেছিলেন, তা বলার সময় এখনো আসেনি। বিশ্বসৃষ্টি-তত্ত্বে মহাজাগতিক ধ্রুবকের বা এই ধরনের অন্যকিছুর বাস্তবিকই প্রয়োজন আছে কিনা তা ভবিষ্যৎই বলে দেবে।

কিন্তু যে-ব্যাপারে আইনস্টাইনের উনবেহাগেন বা অস্বাচ্ছন্দ্য কখনো দূর হয়নি, তা হলো কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের সম্ভাবনাভিত্তিক ব্যাখ্যা, যে-তত্ত্বসৃষ্টির ব্যাপারে তাঁর অবদানও অন্য কারো তুলনায় কম নয়। সম্ভাবনাভিত্তিক এই প্রচলিত কোপেনহাগেন ব্যাখ্যার আজীবন বিরোধিতা করেছেন আইনস্টাইন এবং এই তথাকথিত ‘সম্ভাবনা’ সম্বন্ধে তাঁর বিখ্যাত উক্তি ছিল, ‘ঈশ্বর পাশা খেলেন না।’ নীলস্ বোর, ম্যাক্স বর্ন, ভারনার হাইসেনবার্গ এবং আরো অনেক প্রথম সারির পদার্থবিজ্ঞানী এই বিতর্কে অংশগ্রহণ করেছেন, তবু ইতিহাসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিতর্কটি বোর-আইনস্টাইন বিতর্ক নামেই সুপরিচিত। হাইসেনবার্গের অনিশ্চয়তার নীতি এবং তার উপরে নীলস্ বোরের দার্শনিক ব্যাখ্যা, এটাই আইনস্টাইন শেষ মুর্হূত পর্যন্ত বুঝতে চেষ্টা করেছেন এবং নিজেই বলেছেন, ‘সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব নয়, কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের সমস্যা নিয়েই আমি অন্তত একশ গুণ বেশি সময় ব্যয় করেছি।’ এই ধরনের মুক্তবুদ্ধির নিবেদিতপ্রাণ প্রচেষ্টা পদার্থবিজ্ঞান ছাড়া অন্য কোনো মননশীল প্রচেষ্টায় দেখা যায় বলে আমার মনে হয় না এবং কোনো পর্যায়েই তিনি মামুলি পূর্বসংস্কার দিয়ে পরিচালিত হননি, সব পদার্থবিজ্ঞানীর জন্যে যা আদর্শস্থানীয়। তিনি বলেছেন, ‘কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান বিস্ময়করভাবে সার্থক কিন্তু আমার অন্তরের অন্তর্নিহিত বাণী বলে যে, এটি এখনো সত্যিকারের তত্ত্বটি নয়। তত্ত্ব অনেক কিছুই দিয়েছে, কিন্তু বাস্তবিকপক্ষে তা আমাদের সেই ‘প্রাচীন ব্যক্তি’র মূল রহস্যের ধারেকাছেও নিয়ে আসে না। অন্তত আমি এখনো সুনিশ্চিত যে “সেই তিনি’ পাশা খেলছেন না।’ অগভীরভাবে বিচার করে একথাটি আইনস্টাইনের চিন্তাধারার নির্যাস মনে করলে তাঁর অবস্থানের যৌক্তিক দৃঢ়তা এবং ব্যাপকতা সম্বন্ধে কোনো ধারণাই করা যায় না। ১৯২০ সাল থেকে আইনস্টাইন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জগতের সম্ভাবনাভিত্তিক বা স্টোকাস্টিক প্রকৃতি সম্বন্ধে চিন্তা করেছেন এবং ১৯২০ সালেই তিনি লিখেছেন, ‘কার্যকারণের ওই ব্যাপারটা আমাকে যথেষ্ট কষ্ট দিয়েছে। সম্পূর্ণ কার্যকারণ ভিত্তিতে কি কোয়ান্টাম শোষণ এবং নিঃসরণ বোঝা যাবে, না সম্ভাবনাভিত্তিক কিছু অবশিষ্ট থেকে যাবে? আমি স্বীকার করছি, ঠিক এই ব্যাপারে আমার বিশ্বাসের সাহসিকতা আমি হারিয়ে ফেলি। কিন্তু নির্ভেজাল কার্যকারণ বাদ দিতে হলে অন্তত আমি অসুখী হব।’

কার্যকারণতত্ত্ব বাদ দিয়ে সম্ভাবনার কিছু অবশিষ্ট বা রেসিড্যু আইনস্টাইন কখনোই গ্রহণ করতে রাজি ছিলেন না, কেননা তিনি এবং শ্রডিঞ্জার দুজনই স্থান-কালের পটভূমিতে নিশ্চয়তা বজায় রাখা বিজ্ঞানের একটি মৌলিক দাবি বলেই স্বীকার করতেন। মাক্স বর্নের কাছে আইনস্টাইন লিখেছেন,

পদার্থবিজ্ঞানে আমার দৃষ্টিভঙ্গির সপক্ষে এমন কিছু আমি হয়তো বলতে পারব না, যা আপনার কাছে আদৌ যুক্তিসংগত বলে মনে হবে। অবশ্য আমি স্বীকার করি যে, পরিসংখ্যানভিত্তিক বক্তব্যের পেছনে যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে, যা আপনিই প্রথম পরিষ্কারভাবে প্রচলিত পদ্ধতির কাঠামোর মধ্যেই প্রয়োজনীয় বলে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। কিন্তু এটা ঠিক আমি মেনে নিতে পারি না, কেননা এই তত্ত্ব সেই ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় যে, পদার্থবিজ্ঞান দেশ ও কালের বাস্তবতার একটি প্রতিকৃতি, যা দূরবর্তী অলীক প্রভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।

কোয়ান্টাম বলবিদ্যার বিজয়ের মুহূর্তে আইনস্টাইনের পক্ষে এই তত্ত্ব-ব্যাখ্যাকে সন্দেহ করা এমন একটি ঘটনা, যার উদাহরণ বিজ্ঞানের ইতিহাসে আর নেই – এর আগেও না, এর পরেও না। যে-বিজ্ঞানী এই বৈপ্লবিক তত্ত্বসৃষ্টির পিছনে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন, তাঁর পক্ষে এই তত্ত্বকেই অস্বীকার করার ঘটনা  ঘটে তখনই যখন তত্ত্বের ব্যাখ্যা সকলের পক্ষে গ্রহণযোগ্য বলে স্বীকৃতি পাচ্ছে। কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের ওপর এই ‘আক্রমণ’, বলা যায়, পদার্থবিজ্ঞানের অন্তরাত্মা অধিকারেরই সংগ্রাম, কেননা এখানে মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো কার্যকারণের নীতির সর্বকালীন এবং সর্বস্থানিক প্রয়োগযোগ্যতা। বিষয়মুখী বাস্তবতার উপর সন্দেহাতীত বিশ্বাস এবং ‘সেই প্রাচীন ব্যক্তি’টির গুপ্ত কথা সম্বন্ধে সত্যিকারের জ্ঞান অর্জন। আইনস্টাইন একবার লিখেছিলেন,

আমি একথা চিন্তাও করতে পারি না যে, একটি ইলেকট্রন, যার উপর আলোকরশ্মি ফেলা হয়েছে, সে তার মুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা-অনুসারেই পছন্দ করতে পারে কোন সময়ে এবং কোন দিকে সে লাফ দিয়ে যাবে। এটাই যদি সত্যি হয় তাহলে পদার্থবিজ্ঞানী না হয়ে একজন মুচি বা এমনকী কোনো জুয়াখেলার প্রতিষ্ঠানে একজন কর্মচারী হওয়াই আমার পক্ষে উচিত ছিল।

আইনস্টাইন-বোর এই ঐতিহাসিক বিতর্কের প্রথম পর্যায়ে আইনস্টাইন অনিশ্চয়তার নীতি বরবাদ করার জন্য কিছু মনসপরীক্ষণ বা গেডানকেন এক্সপেরিমেন্টের প্রস্তাব করেছিলেন, যা দিয়ে প্রমাণিত হবে যে, দুটি আইনানুগ সংশ্লিষ্ট চলকের – যেমন ভরবেগ এবং অবস্থানের – মান নির্ভুলভাবে একই সঙ্গে নির্ধারণ করা সম্ভব। কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান-অনুসারে এটা অসম্ভব, যার ফলে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয় ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্রের জগতে। আইনস্টাইনের এসব প্রস্তাবিত পরীক্ষণের ত্রুটি নীলস্ বোর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে হাজির করেছিলেন এমনকী সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব ব্যবহার করেই এবং তাই তিরিশের দশকে এবং এর পরের দিনগুলিতে নীলস্ বোরকেই এই বিতর্কে বিজয়ী বলে মনে করা হতে লাগল।

বিতর্কের দ্বিতীয় পর্যায়ে ম্যাক্স বর্নের সম্ভাবনাভিত্তিক ব্যাখ্যা কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করা শুরু করেছে এবং আইনস্টাইন নিজে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে, দুটি আইনানুগ চলকের মান যুগপৎ নির্ধারণ অসম্ভব। কিন্তু গোঁড়া কোপেনহাগেন মতাদর্শীদের মতো তিনি একথাও মানতে রাজি ছিলেন না যে, এ-ধরনের চলকের মান যে আদৌ আছে তা আমরা চিন্তা করতেও পারব না। অর্থাৎ পদার্থবিজ্ঞানে সম্ভাবনার উপস্থিত হওয়ার ফলে তার জ্ঞানতাত্ত্বিক চরিত্রই এখন হুমকির সম্মুখীন হয়ে গেল। তত্ত্বের এই নন-এপিসটেমিক বা জ্ঞানতত্ত্ব-বহির্ভূত প্রকৃতি আইনস্টাইন মোটেই বিশ্বাস করতেন না এবং এ-কারণেই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আলোচনায় (১৯৩০ সালের ১৪ জুলাই) আইনস্টাইন বলেছিলেন, আমি প্রমাণ করতে পারব না যে, বৈজ্ঞানিক সত্য ‘সত্য’ হিসেবেই নিতে হবে, যা মনুষ্যপ্রজাতিনিরপেক্ষ। কিন্তু আমি এটা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, জ্যামিতির পিথাগোরীয় উপপাদ্য এমন কিছু বলে যা বাস্তবিক সত্য, মানুষের অস্তিত্বনিরপেক্ষভাবেই তা সত্য। যাই হোক মানবনিরপেক্ষ বাস্তবতা যদি সত্যিই থাকে, তাহলে এই বাস্তবতাসাপেক্ষে সত্যও আছে এবং প্রথমটি না থাকলে দ্বিতীয়টিরও অস্তিত্ব থাকে না।

এই ধরনের মানবনিরপেক্ষ বাস্তবতা আইনস্টাইন বিশ্বাস করতেন বলেই তাঁর চোখে কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান এখনো ঠিক সম্পূর্ণ নয়। এই তত্ত্ব অবশ্যই সার্থক – তুলনাহীনভাবে সার্থক – কিন্তু আইনস্টাইনের দৃষ্টিভঙ্গিতে এই তত্ত্ব এখনো সম্পূর্ণ সর্বাঙ্গসুন্দর নয়। তিনি লিখেছেন, বিগত প্রজন্মের পদার্থবিজ্ঞানীদের অর্জন সম্বন্ধে আমার সীমাহীন শ্রদ্ধা রয়েছে, যে-অর্জনের নাম হলো কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান। আমি জানি যে, এই তত্ত্ব বাস্তবতার এক স্তরের গভীর সত্য প্রকাশ করে, কিন্তু আমি এটাও বিশ্বাস করি যে, এর জন্য পরিসংখ্যানভিত্তিক যে-নীতিসমূহ প্রয়োজন তা-ই একসময়ে এই তত্ত্বকে সেকেলে করে দেবে।

আইনস্টাইনের এই প্রেরণাতেই পরে অনেকে কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের ভৌত বর্ণনার সম্ভাবনাভিত্তিক অংশটি নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং এখনো করেন, যাঁদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ডেভিড বহ্ম। তাঁর লুক্কায়িত চলকরাশির তত্ত্ব এবং সে-সম্বন্ধে জন বেলের পর্যালোচনা এই তত্ত্বকে এখন এমন পর্যায়ে নিয়ে এসেছে যে, এখানে এখন অন্তত প্রাগ্রসর পরীক্ষণ করাও সম্ভবপর হয়েছে। এ-পর্যন্ত পরীক্ষণভিত্তিক রায় কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের পক্ষেই গিয়েছে।

জ্ঞানতাত্ত্বিক বিতর্কের তৃতীয় পর্যায়ে আইনস্টাইন তাঁর দুজন সহকর্মী বরিস পডোলস্কি ও নাথান রোজেনের সঙ্গে একটি মনসপরীক্ষণের প্রস্তাব করেন, যা আজকাল ‘ইপিআর কূটাভাস’ নামে পরিচিত। ইপিআর প্যারাডক্স এবং তার বিরুদ্ধে নীলস্ বোরের প্রতিক্রিয়া নিয়ে বেশির ভাগ বিজ্ঞানীই মাথা ঘামান না। কিন্তু একথা সত্য যে, এই আলোচনার মাধ্যমেই আমরা আজকাল কোয়ান্টাম নন-লোকালিটি বা অস্থানিকতা সম্বন্ধে সচেতন হয়েছি। সুতরাং কোয়ান্টাম-বিতর্কে আইনস্টাইন পরাজিত হয়েছিলেন, একথা মোটেই বলা যাবে না। তিনি পরাজিত হয়েছিলেন প্রকৃতির এক নিগূঢ় কারসাজিতে, যাকে আমরা অস্থানিকতা বলেছি। এটাই বোধহয় আইনস্টাইনের মহত্তম অর্জন, কেননা এভাবেই আমরা বাস্তবতার সেই দিকটির প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে বাধ্য হলাম, যা আমরা পূর্বে কল্পনাও করিনি। এই কোয়ান্টাম অস্থানিকতাই এখন বৈজ্ঞানিক গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু।

আইনস্টাইনের শেষ জীবনে অনিশ্চয়তার তত্ত্ব আর তাঁকে উদ্বিগ্ন করত না, এমনকী ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্রের জগতে বাস্তবতার অবোধগম্যতাও তাঁকে চিন্তান্বিত করত না। যা তাঁকে ব্যাকুল করত তা হলো এই যে, তত্ত্বকে যদি সম্পূর্ণ ধরে নেওয়া হয়, তাহলে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্রের জগতে বাস্তবতার নিম্নতম শর্তও অস্বীকার করা হয়। এতবড় মূল্য দিতে তিনি কখনো প্রস্তুত ছিলেন না।

সুতরাং আইনস্টাইনকে আমাদের সেই অতি প্রাচীন প্রাজ্ঞজনের অতি কাছাকাছি একজনই বোধহয় বলা ভালো। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি আশাকরি কোনো একজন আবির্ভূত হবেন যিনি অধিকতর বাস্তব উপায়টি আবিষ্কার করবেন অথবা আরো বেশি বোধগম্য এক ক্ষেত্র দেখাবেন, যা আমার ভাগ্যে আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি।’

কিন্তু অ্যালবার্ট আইনস্টাইন যা আবিষ্কার করে গিয়েছেন তা-ই মানুষকে অনন্তকাল ধরে আলোকবর্তিকা হয়ে পথ দেখাবে।

এ-বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনার জন্য দেখুন :

১. বিজ্ঞান ও দর্শন, এ. এম. হারুন অর রশীদ, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ১৯৯১।

২. কোয়ান্টাম মেকানিক্স, এ. এম. হারুন অর রশীদ, দ্বিতীয় সংস্করণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, ২০০৪।

* এই লেখাটি কালি ও কলমের দ্বিতীয় বর্ষ চতুর্থ সংখ্যায় (মে ২০০৫/ জ্যৈষ্ঠ ১৪১২) প্রকাশিত।