আদম সুরত

আমগো লুকমানের চোখগুলি আছিল ক্যামুন কালা ডাঙ্গর। আর শইল্যের রংডা আছিল ঠিক বগার মতোন সাদা। মাডি দিয়া খেললেও কুনোদিন কালি লাগত না শইল্যের মইধ্যে। তুই হেই রং পাইছোসরে মাইয়া …

কী যে কও দাদি, যেই মানুষডার চেহারা ঠিকমতোন মনে নাই, কুনোদিন দেহিও নাই তার রং বগার মতোন না কালা কাউয়া এইসব মিলাই ক্যামনে? এইসব আন্দাজি কতা বাদ দ্যাওসে এইবার।

দৌলতির কণ্ঠে নিষেধ থাকলেও মনে চাপা আনন্দভরা অবিশ্বাসের সুর। তবু আরো কিছু শোনার বাহানা করে উসকে দেয় নবীতুননেসাকে। অন্য সব রাতের মতো বুড়ির গল্পও যেন ফুরাতে চায় না।

বাপরে, দেখছোনি। এদ্দুরা মাইয়া ক্যামুন ফাল পারে। আন্দাজি কতা না রে বইন। খালি শইলডা না, লুকমানের মনের মইধ্যেও ছিল খালি মায়া আর মায়া। ভাত খাওনের সময় জরা বানায়া ভাত খাইতো। এক জরা খাইতো, আর এক জরা ছিডাইয়া দিত কাউয়ারে। আদর কইরা যখন ডাক দিত মুরগা আইয়া কড়কড়াইয়া বইতো অর পায়ের কাছে। আমার সহজ-সরল পুলা লুকমান – ঠিক য্যান আমগো সুলেমান নবী।

দাদি তুমার কতার কুনো আগামাথা নাই। এইসব আজব কতা কিছুই বুঝি না। এইবার খেমা দ্যাও।

নবীতুননেসা থেমে যান। আদর করে বুকে টানতে গিয়েও মিছিমিছি রাগ করে ঠেলে দেন দৌলতিকে।

থাক, তোর বুঝন লাগতো না। উপরে তাকাইয়া চুপ কইরা খালি আসমান দ্যাখ। বেশুমার তারা ছড়াইয়া রইছে আসমানে – ওইহানে মাইনষের সুরত নিয়া যে খাড়াইয়া রইছে হেইডা একবার দ্যাখ। মনে হয় ওইডা বুঝি আমগো লুকমান।

দরদমাখা ঘোরলাগা কণ্ঠ মুহূর্তে থমকে যায় নবীতুননেসার। বাতাসের ফিসফিসানির মধ্যে জাঁতায় পেষা চাপা একটা আবেগরুদ্ধ ঘরঘরানি ওঠে কোথাও। সে-আওয়াজ ওঠে আসলে তার বুকে। উঠোনের পাটিতে চিত হয়ে শুয়ে চোখজোড়া রাতের আসমানে ঠেলে দিয়ে বিড়বিড় করে আরো কী সব যেন বলে ওঠেন নবীতুননেসা!

আশ্বিনের জোছনাধোয়া রাত। ঘরের পেছনের চালতা গাছের ওপর দিয়ে চাঁদের মুখটা দেখা গেল রথখোলা মাঠের পুবে। ঝকমকে আলোয় থইথই শূন্য প্রান্তর, ধূপকাশি খালের বুক। ধামসোনা গাঁয়ের সব কালি ধুয়ে দিয়ে সে-আলো হেসে উঠলো নবীতুননেসার জনশূন্য ঘর-উঠোনে। এ-আলো এতটাই স্বচ্ছ যে এক লহমায় পরিশুদ্ধ করে দিতে পারে মানুষের অন্তরের ভেতরটা। তাই তো দৌলতি ঠিক বুঝতে পারে নবীতুননেসার উতলা মনের ছন্নছাড়া এসব গল্প। শুনতে শুনতে বাতাসের শোঁ-শোঁ আওয়াজের মধ্যে নিশ্চুপ তাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে – যেদিকে আঙুল উঁচিয়ে ইঙ্গিত করে কী যেন প্রায়শ দেখাতে চান নবীতুননেসা।

কী ওটা? কী আছে ওখানে? মানুষের আকার নিয়ে কে পাহারা দেয় অমন অথই শূন্যতায়? অসীম আসমানের দুনিয়ায় কেবল অগুনতি তারার শতকোটি সমুদ্র আর গহিন কালো গহ্বর ছাড়া আর কীইবা থাকতে পারে সেখানে!

দৌলতি জানে, মানুষ মরে গেলে বা হারিয়ে গেলে বাসিন্দা হয় সেই সাত আসমানের জমিনে। তার প্রাণটুকু বাতাসের পিঠে চাবুক মেরে ঘোড়ার মতো সওয়ার হয় মেঘের চরাচরে। বাতাসের কুণ্ডলী হয়ে যায় শূন্যরথের ঘোড়া। এমন কত গল্প শুনেছে! আর এতদিন এই বুঝটাই তো দিয়ে আসছিলেন নবীতুননেসা। কিন্তু আজকাল যে আজব কথাগুলি শুনছে তার মানেটাইবা কী? আর নবীতুননেসার কথায় মনে মনে এটাও ভাবছে, একদিন ঠিকঠাক পথঘাট চিনে ওই রথখোলা মাঠের ধুধু চরাচরে নামতে পারবে তো সেই সাদা ঘোড়া?

ভাবতে না ভাবতেই নবীতুননেসা হঠাৎ চমকে দেন। বুঝলি রে মাইয়া, আশ্বিনের জোছনা রাইতে আসমানের গাঙ্গে যখন চান্দের আলো চিকচিক করে, তার মইধ্যে তারার বুটি যখন ঝকমকাইয়া হাসে তখন আসমান থেইক্যা নাইম্যা আসে মস্ত সেই তেজী ঘোড়া। মাথা থেইক্যা ঘাড় পর্যন্ত নামানো দুধসাদা ঝালর। তার কালা চোখ দুইডায় বেজায় মায়া। ওই যে রথখোলার মাঠডা আছে না, হেইখানে দপদপাইয়া নাইম্যা আসে। তারপর আমগো গেরাম থেইক্যা চইলা যায় দূরদেশের অন্য কুনো গেরামে। খলবলাইন্যা জোছনার মইধ্যে আমি সব দেখতে পাইরে দৌলতি। অনেক দূর থেইক্যাও শুনতে পাই তার পায়ের আওয়াজ।

দৌলতির মনে আচমকা ধাক্কা লাগে। ছেলের শোকে তার দাদি কি সত্যি সত্যি পাগল হয়ে গেলেন? নবীতুননেসা যখন ঘোরের মধ্যে আসমান থেকে নেমে আসা ঘোড়ার সঙ্গে দূর-বহুদূর চলে যান আর তাঁর বুকের মধ্যে ঘোড়ার খুরের শব্দ ঠকঠক করে বাজে তখনই দৌলতি খুব করে ভাবতে চেষ্টা করে তার বাপ লোকমানের চেহারা। যে চেহারা কখনো মনের মধ্যে খোদাই করা ছিল না তা কল্পনা করতে গিয়ে অসহায়ত্বে কেমন ক্লান্ত হয়ে পড়ে দৌলতি। অদৃশ্য ঘোড়ার পিছু পিছু একটা ভাঙা ভাঙা নামের ডাক উঠোন পেরিয়ে ছুটে যায় সেই দূরের অন্য কোনোখানে। রথখোলার মাঠ পেরিয়ে শেষে আরো দূরের কোনো মাঠের দিকে, মঠের কাছে। একসময় আবেশ কাটিয়ে সম্বিত ফিরে এলে আরো ঘন হয়ে লেপ্টে থাকে দাদির বুকের কাছে। নবীতুননেসার অস্থিরতা আজকাল তার কাছেও এসেছে। তবু সকরুণ চোখে তাকিয়ে দেখে দাদির অস্থির মুখ।

আর কী দেহো দাদি? হেই ঘোড়া কি খালি রথখোলার মাঠেই দাপাইয়া বেড়ায়? আমগো উডানের কাছ দিয়া যাইবার সময় কি আমগো ডাক দিয়া গেছে কুনোদিন? আইচ্ছা দাদি, আমগোরে নিয়া কি একবার সাত আসমানে যাইতে পারে না? কী, চুপ কইরা রইছো ক্যান? আমারে তাড়াতাড়ি কও।

দৌলতি বোঝে, নবীতুননেসার গল্প এরপর শেষ হয়ে যাবে। ওদের উঠোনের পাশ দিয়ে ধূপকাশির খাল ডিঙিয়ে রথখোলার মাঠের শেষে গিয়ে থেমে যাবে খুরের শব্দ। মাইজপাড়ার মঠের কাছে শেষ হবে সেই ঘোড়ার কাল্পনিক গন্তব্য। তবু কাহিনির এ- পর্যায়ে নবীতুননেসার করুণ মুখ আবারো প্রসন্ন হয়ে উঠবে হঠাৎ। সেটা দেখার অপেক্ষায় আশ্বিনের হিমছড়ানো রাতে নবীতুননেসার গলা জড়িয়ে বুকের ওম ভাগ করে নেয় দৌলতি।

নিজেকে সামলে নিয়ে নরম গলায় বলে, তারপরে কী হইলো হেইডা তাড়াতাড়ি কও দাদি।

আরে, অত অস্থির ক্যারে? খাড়া কইতাছি। গলাডা শুকাইয়া আসতাছে। পানির তিয়াস লাগছে মনে হয়। আইচ্ছা, তারপর হুন … হেই ঘোড়ার লাগাম ধইরা পিঠে কে বইসা থাকে জানোস, তোর বাপ। আমগো লুকমান। আজ এতডি বছর পরেও ঠিক আগের মতোনই অর চেহারা। একদিন আমারে দেইখা পাশ কাডাইয়া ক্যামুন উডানের ধার দিয়া চইলা গেল। পিছন ফিরা একবারও তাকাইলো না। আর আইলোও না।

দৌলতির চোখগুলি তখন আনন্দে চকমক করে। সঙ্গে সঙ্গে অনিশ্চয়তার এক কালো ছায়াও নামে চোখে। জন্মের পর থেকে আজ কতগুলি বছর কেটে গেছে। বাপকে সে যতটুকু দেখেছিল তা এখন অনেকটাই ঝাপসা। সে-মুখের আদল কিংবা শরীরের মাপ পুরোটাই বিলীন হয়ে গেছে। এখন যতটা নিজে ভাবছে কিংবা দেখছে-শুনছে সবটাই দাদি নবীতুননেসার চোখ দিয়ে। তাই তো বুড়ি যখন বলেন, ‘তুই মাইয়া হইছোস ঠিক তোর বাপের মতোন’, শুনে দৌলতির আনন্দ হয় খুব। সেই আনন্দ খানখান হয়ে ভেঙেও যায় হঠাৎ যখন দূরের মাঠে খুরের শব্দের সঙ্গে সঙ্গে আশাটাও মিলিয়ে যায়।

দৌলতি জানে, ওর বাপ কোনোদিন আসবে না। তবু নবীতুননেসার কথায় কল্পনার আশ্চর্য সেই তেজী ঘোড়ার পেছন পেছন সওয়ার হয়ে অচেনা পথে ছুটতে তার ভালোই লাগে। ছুটতে ছুটতে আকাশের সব পথ ঠাওর করে তার চোখগুলি একসময় নেমে আসে অন্ধকার উঠোনের কোনায় কোনায়। তারপর সেখান থেকে পালাতে পালাতে উঠোনের গাছগাছালির ফাঁক দিয়ে রথখোলার বিস্তীর্ণ সীমানার কাছে গিয়ে আটকে যায়। ওখানে উঁচু পুরনো মঠ – মঠের চূড়ায় সোনারঙা বিজয়-দণ্ড। আরো আছে জোড়া শিমুল গাছ, টিয়া পাখির সবুজ ঝাঁক। টিয়ার ডাকের মতো দৌলতির মন ট্যাঁ ট্যাঁ করে ডেকে উঠে জয়ের আনন্দে মঠের মাথার বিজয়-দণ্ডের ওপর দিয়ে সাত আসমানের ওপর পাক খেয়ে কোথায় জানি চলে যায়।

নবীতুননেসার পুরনো আশার ক্ষয়-ধরা চোখে যে-মানুষটার ছায়া, সে-ছায়া দৌলতির চোখে আকার পায় ভিন্ন এক মানুষের। কিন্তু কেউ জানে না সে-ছায়া একই মানুষের কি না! কখনো ঝাপসা আলোয় হয়তো দৌলতির অস্থির চোখ দুটো দেখা যায় না, কিন্তু তার চোখের তারার কল্পনায় ঠিক ধরা দেয় কোনো অদেখা-অজানা মানুষের সুঠাম কোনো সুরত। যে কি না অপার বিশ্বাসে দূর থেকেও আগলে রাখে তাদের। নবীতুননেসার কথায় সে-সুরত যখনই আকার ধরতে শুরু করে আবার তা হুস করে উড়েও যায় মুহূর্তে অবিশ্বাস অনিশ্চয়তার খেলায়। দৌলতি এর মানে বোঝে না। কল্পনার সে তেজী ঘোড়ার খুরের ঠকঠক শব্দে কী আশ্বাস, নির্ভরতা, না অজানা শঙ্কা মেশানো আছে, তাও ঠিকমতো অনুমান করতে পারে না দৌলতি।

আশ্বিন শুরু হয়ে চলে গেল অনেকগুলি দিন। রাত গভীরে আকাশে কুয়াশার পাতলা সুড়ঙ্গ হয় যখন পাতায়-ডালে-ডালে বিন্দু বিন্দু হিম জমে। ধামসোনার উঠোন-ঘর-প্রান্তরজুড়ে কুয়াশার সঙ্গে কেমন রহস্য জমে ভয়ের। বাড়ির পেছনের ছনগাছের ঝোপে যেখানে কুরুয়া পাখি ভয়ের সুর ধরে গমগম করে ডাকে সেখানে কোনো কোনোদিন খসখসে অচেনা শব্দও শুনতে পান নবীতুননেসা। ওটা কি কোনো পায়ের শব্দ? নাকি ঘোড়ার খুরের থেমে যাওয়া আওয়াজ? পাহারাশেষে সেই আগন্তুক নেমে এলো বুঝি সাত আসমান থেকে? পিঠের ওপর বসে থাকা সেই মানুষটা কি নবীতুননেসার কল্পনায় থাকা সুলেমান নবী? সেই কি তাঁর ফিরে আসা লোকমান?

আশ্বিনের রাতদুপুরে তাই নবীতুননেসার কী জানি হয়! হিমবাতাসেও বুকটা হুহু করে, চোখ দুটোতেও জ্বালা ধরে ভয়ানক। তাই হঠাৎ কখনো উঠোনের পাটিতে ধড়মড়িয়ে জেগে উঠে দৌলতিকে বুকের কাছে আরো লেপটে ধরেন, যেন কেউ কেড়ে নিতে না পারে!

দুই

নবীতুননেসার জীবনে আর কোনো গল্প নেই। বহু বছর আগে যে-গল্পটা অন্যভাবে শুরু হতে পারতো তা আজ বহুবিবর্ণ মলিন এক রূপকথা। সেসব দিনের কথা আজো মনে পড়লে কেবল শূন্যতাই বাড়ে, হাহাকার ওঠে বুকে।

একদিন রাতে লোকমান নবীতুননেসার কাছে গিয়ে বলে, আম্মা আমি বিদেশ যামু। এই দেশের কাম-কাজ আর ভালো লাগে না।

নবীতুননেসার চোখ কপালে ওঠে। ওমা, তুই এডি কী কস লুকমান? বাড়িতে আছে কেডা তুই আর আমি ছাড়া? আর এত্তগুলি ট্যাকা কেডা দিব তোরে?

তোমার চিন্তা আমি কইরা রাখছি। কোহিনূররে বাড়িত নিয়া আমু।

মাইজপাড়ায় যাতায়াতের সুবাদে কোহিনূরের সঙ্গে আলাপ-পরিচয়। সেখান থেকে একটু ভাব-ভালোবাসাও হয়েছিল লোকমানের। এ-কথা সেভাবে জানতেন না নবীতুননেসা।

তোর ব্যাপারডি কী একবার খোলাসা কইরা ক দেহি আমারে? তোরে এত ট্যাকা দিব কেডা? আমার তো শুইন্যা কিছুই ভালো লাগতাছে না।

সব ব্যবস্থা করব ইব্রাহিম্যা। কোহিনূরের মামতো ভাই। আমি খালি খালপাড়ের জমিডি বেচমু। মেলা ট্যাকার দরকার এহন।

লোকমানের মুখে জবাব প্রস্তুত ছিল একেবারে। চটজলদি উত্তরে নবীতুননেসা বাকশূন্য। বিদেশ যাওয়ার কথা সেই শুরু, সেই শেষ। পরের ছয় মাসের মধ্যে দ্রুত সবকিছুর পাকা বন্দোবস্ত করে রথখোলা মাঠের খাল-লাগোয়া পাঁচ গণ্ডা ভিটি জমি বিক্রি করে খেজুরবাগানে কাজের ভিসা নিয়ে ওমানে পাড়ি দিয়েছিল লোকমান।

নবীতুননেসার প্রথমে ইচ্ছে ছিল না মোটেও। নির্ঝঞ্ঝাট একা বাড়ি। জমি-জিরেত আছে। লোকমানের বাপ একেবারে অভাবে রেখে যায়নি। এদিকে আশপাশে আর কোনো ভিটা বা বাড়ি নেই। জনশূন্য ধুধু মাঠের মধ্যে একা মরে পড়ে থাকলেও দেখার কেউ নেই। কিন্তু লোকমানকে কিছুতেই বোঝানো গেল না। তার চোখে তখন কত স্বপ্ন, আশা আর বিত্ত-বৈভবের বিস্তর আকাক্সক্ষা! সবকিছুর মধ্যে জ্বলজ্বল করে উজ্জ্বল এক হীরকখণ্ডের মতো একা জ্বলে উঠছিল কোহিনূর। তাই নবীতুননেসার ইচ্ছের বিরুদ্ধে মাইজপাড়ার ইব্রাহিমের শলাপরামর্শেই এক রাতে ঘরে এনে তুলেছিল কোহিনূরকে। তার অল্প কদিন বাদেই পাড়ি দিয়েছিল ওই মরুর দেশে।

মরুর দেশের খেজুরবাগান। প্রথম প্রথম রুজি-রোজগার একেবারে মন্দ ছিল না। নবীতুননেসার জন্যে ভালোই টাকাপয়সা পাঠাতো লোকমান। সব এনে কোহিনূরের হাতে দিয়ে যেতো ইব্রাহিম। আরো কত খবর নিয়ে আসতো লোকমানের। নবীতুননেসা শুনতো আর চোখ দিয়ে পানি পড়তো ঝরঝর করে। ইব্রাহিমের মুখ থেকে তবু লোকমান আর মরুর গল্প শুনে যেতো চুপচাপ।

নবীতুননেসার ভিটায় দিন দিন যাতায়াত বেড়ে গেল ইব্রাহিমের। এসেই হানা দিতো কোহিনূরের ঘরে। আত্মীয়-কুটুম বলে কিছুই বলতো না নবীতুননেসা। যে চোখ একদিন পরম ভরসা আর বিশ্বাস নিয়ে তাকিয়েছিল ইব্রাহিমের দিকে সেটাও যেন বদলে যেতে শুরু করলো আস্তে আস্তে। কোহিনূরের কাছে তখন লোকমান হয়ে গেল দূরের মানুষ। আর নিজের আপনজন হয়ে উঠলো ইব্রাহিম। নবীতুননেসার মনে এটা-সেটা উঁকি দিলেও চুপ করে রইলেন শুধু লোকমানের কথা ভেবে। 

নবীতুননেসার বেশি সময় লাগেনি ইব্রাহিমকে চিনতে। দিনে দিনে তার আসল চেহারা বেরিয়ে এলো সবার সামনে। আগের মতো এখন আর নতুন কোনো খবর পান না তার মুখ থেকে। শুধু খবর আসে ইব্রাহিম আর কোহিনূরের গোপন সম্পর্কের। সেসব কথা বাড়ি বয়ে কানে এলে নবীতুননেসার না শুনে কোনো উপায় থাকে না। খালের ধারের যে-জমি বিক্রি করেছিল বশির মণ্ডলের কাছে সেখানে কাজে লেগেছিল তারই দুই ছেলে দয়াল আর নিজাম। জমির আগাছা সাফ করতে গিয়ে দুজনে কথা বলছিল নবীতুননেসাকে ইঙ্গিত করে।

দয়াল বলে, চাচি এক্কেরে সহজ-সরল ভালা মানুষ। লুকমানের সাথে যে মাইজপাড়ার ইব্রাহিম্যার কোহিনূররে নিয়া গণ্ডগোল চাচির চোখে হেই আলামত মনে হয় এহনও ধরা পড়ে নাই। ইব্রাহিম্যা যে কীসের লাইগা ঘন ঘন আহে চাচি এহনও বুঝতাছে না। দোকানে বইলে নানান কতা ঘাঁডাঘাঁডি হয়।

মাটির ঢেলা ভাঙতে গিয়ে শুকনো মরা ডাল দিয়ে বিড়বিড়িয়ে গায়ে ওঠা চ্যালা মারে নিজাম। বিরক্তি নিয়ে বলে, হুইনলাম অনেকদিন হইলো লুকমাইন্যার কুনো খবর নাই। হে নাকি নিজেই বাড়ির এইসব অশান্তি শুইন্যা খবর দেওয়া বন্ধ কইরছে। চাচিও আইজকাল খালি আবোল-তাবোল বকে।

ছোটভাইয়ের কাণ্ড দেখে দয়াল চিল্লিয়ে ওঠে। আরে, ইডি মারস কিত্তি? ইডি কামড়ায় না। যেডি পুটকি ওপরের দিকে দিয়া হাঁডে হেডির মইধ্যে বিষ। ইব্রাহিম্যারে দেহস না ট্যাকার গরমে কেমুন পুটকি উঁচা কইরা হাঁডে। লুকমাইন্যা যে-ট্যাকা পাঠায় সব হুনছি অর পেডেই গেছে। ওর দুই দিক দিয়াই লাভ। সাপও মইরলো আবার লাডিও ভাইঙলো না।

দূর থেকে ছন ঝোপের কাছে নবীতুননেসাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হঠাৎ চুপ হয়ে যায় দুজন। কথা শুনে নবীতুননেসাও বাড়ির দিকে এগোন। বেশ কিছুদিন বাদে ইব্রাহিম এসে কোহিনূরের কাছে খবর দেয় লোকমান বাড়ি আসছে। ওমানে কথা হয়েছে তার সঙ্গে। এবার এলে মাসখানেকের ছুটি নিয়েই আসবে।

নবীতুননেসার অসুখের কথা শুনে শেষমেশ চার বছরের মাথায় বাড়ি এসেছিল লোকমান। দেড় মাসের ছুটি নিয়ে এলেও এই লোকমান যেন আগের মতো নয়। আগের সে দাপিয়ে বেড়ানো তেজী ঘোড়াটি আর নেই। কোনো কিছুতে আর মন টেকে না তার। যে কোহিনূরকে এত শখ করে আহ্লাদ দিয়ে বাড়ি এনে তুলেছিল তার সঙ্গেও খিটমিট লেগে থাকে প্রতিদিন। এদিকে ইব্রাহিমের কাছ থেকে ধার-কর্জ করে যে টাকা নিয়েছিল লোকমান সুযোগ বুঝে তা শোধ দেওয়ার জন্যও ক্রমাগত চাপ দিয়ে যাচ্ছিল সে। তাছাড়া ইব্রাহিমের মাধ্যমে সমস্ত লেনদেন হলেও বাড়িতে পাঠানো টাকার কোনো হিসাব দিতে পারে না কোহিনূর।

একদিন সকালে তুলকালাম কাণ্ড বেধে গেল ইব্রাহিমকে নিয়ে। আত্মীয়তার সুবাদে ওর আসা-যাওয়ার কথা বিদেশ বসেই জানতো লোকমান। কিন্তু একমাস বাড়ি থাকার পর যখন জানলো কোহিনূর মা হবে আর এ নিয়ে বাজার থেকে ফিরলো দুই কান ভারী করে, সেই রাতেই হাত তুললো কোহিনূরের গায়ে। এমন হুজ্জত-হাঙ্গামার দুদিন পর কাউকে কিছু না বলে আবার ফিরে গিয়েছিল ওমানে। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মাঝামাঝি নিজেকে ঝুলিয়ে রেখে বাড়ির মানুষগুলির সঙ্গে যাবতীয় হিসাব অনিষ্পন্ন রেখে সেই যে লোকমান ফিরে গেল আর বাড়ি আসেনি কোনোদিন।

ওমান ফিরে যাওয়ার আট মাসের মাথায় দৌলতির যখন জন্ম হলো তখনো খুব একটা খুশি হতে পারেনি লোকমান। নবীতুননেসা অবশ্য ভেবেছিলেন, একদিন মেয়ের মুখ দেখলে নিশ্চয় লোকমানের মন গলে যাবে, সকল রাগ-ক্ষোভ পানি হয়ে যাবে। কিন্তু দিন দিন বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দিলো লোকমান। ওর মনের পাথর টলানোর কোনো সুযোগই আর কেউ কোনোদিন পেল না।

পরের বছর তিনেক পর্যন্ত যোগাযোগ ছিল বাড়ির সঙ্গে, নবীতুননেসার সঙ্গে। দৌলতির বয়স যখন চার তখনই দুঃসংবাদ এলো একদিন বাড়িতে। খেজুরবাগানে কাজ করতে গিয়ে দড়ি ছিঁড়ে গাছ থেকে পড়ে কোমর ভেঙেছে লোকমানের। তারপর মাসখানেক হাসপাতালে থাকার পর কী যে হলো আর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি লোকমানের।

তিন

অনেকদিন কেটে গেছে। আজকাল কেমন মুষড়ে পড়েছেন নবীতুননেসা। পুরনো সেসব গল্প এখন আর টানে না তাঁকে। তাঁর অবর্তমানে দৌলতিকে নিয়ে চিন্তাটা বড় বেশি উসকে উঠছে দিন দিন। দৌলতির যখন ছয় বছর বয়স হলো মামার বাড়িতেই গলায় দড়ি দিয়েছিল কোহিনূর। তার কিছুদিনের মধ্যে আদম পাচারের মামলা আর জাল-জালিয়াতিতে ফেঁসে গিয়েছিল ইব্রাহিম। সবাই জানে, দশ বছরের জেল হয়েছে তার। সাজা খাটছে জেলার কারাগারে। কিন্তু সেসব কিছু ঘটার আগে কঠিন সত্যটা নবীতুননেসাকে ঠিকই জানিয়ে দিয়েছিল কোহিনূর। তারপর থেকে যেন আরো বেশি করে আঁকড়ে ধরতে চাইছে দৌলতিকে।

একটা গল্প কওসে দাদি, আজকাল দৌলতির এমন আবদারে নবীতুননেসা আরো চুপসে যান। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলেন, সাত আসমানের দিকে চাইয়া দ্যাখরে মাইয়া। ওই যে আসমানের থালভরা তারা ওর মইধ্যে আদম সুরতডাও আছে। তার কোনো নড়ন-চড়ন নাই। চুপচাপ ওইখান থেইক্যা আমগোরে পাহারা দিতাছে। তোর কোনো ডর নাইরে বইন।

ছলছল চোখে দাদির মুখের দিকে চেয়ে থাকে দৌলতি। বুকের গভীর কষ্ট ঠেলে ঠেলে ছলকে আসে নবীতুননেসার, বলেন, সম্পর্ক বড় মিছা। বিশ্বাসও হাওয়াই মিডাইর মতোন। দেহোস না মাইনষে ক্যামুন চোখ উল্টাইয়া কথা কয়। মাইনষের সুরত এমন বদলাইয়া যায় ক্যান কইতে পারোস? মানুষ বদলাইয়া যায় ঠিক, কিন্তু আদম সুরত বদলায় না।

দৌলতি এখন অনেক কিছুই বুঝতে পারে। নবীতুননেসা আগে সুলেমান নবীর যে কিস্সা শোনাতেন কিংবা সেই তেজী ঘোড়ার খুরের আওয়াজ ওঠা গল্প, তা মাইজপাড়ার মঠের কাছে রথখোলার মাঠে নয়। সে দপদপানি আসলে উঠতো নবীতুননেসার বুকে, বুকের শূন্য জমিনে। নবীতুননেসার কথায় তাই নিজের মতো করেই বুঝে নিয়েছে নিজের জীবনের ভাগ্য ও পরিণতিকে। বাপকে চোখে দেখেনি কোনোদিন, মায়ের ছবিও মনে পড়ে আবছা কুয়াশার মতো। পরম নির্ভরতার জায়গা যে নবীতুননেসার মায়াভরা কোল আর এ-বাড়ির ঘর-উঠোন – এটা দৌলতি জানে।

ধূপকাশি খালের পর থেকেই শুরু বিস্তীর্ণ রথখোলা মাঠের। সেই মাঠ এখন আর ধুধু বিরান নেই। মাঠের পশ্চিমে ভূষণ্ডির মতো দাঁড়িয়ে যে জোড়া শিমুলগাছ সেখানেই উঁচু রথখোলা মঠ। নবীতুননেসার উঠোন থেকে দাঁড়িয়ে গাছপালার ফাঁক দিয়ে দূরের সেই মঠের চূড়া দেখা যায় কোনোমতে। আরো দেখা যায় দূরে মিশে যাওয়া কালো সড়কের চিহ্ন হালকা দাগের মতো।

নবীতুননেসা কেন দৌলতিও সেদিন গল্প শুনেছিল, জমিদারের লোকজন এককালে ঘোড়া ছুটিয়ে ইচ্ছেমতো দাপিয়ে বেড়াতো ধামসোনার চরাচর জুড়ে। সে-শব্দে শিমুলের ডাল আর মঠের খোড়ল থেকে ট্যাঁ ট্যাঁ করে উড়ে যেতো সবুজ টিয়ার ঝাঁক। স্কুলে যাওয়ার পথে দৌলতি এখনো মাঝেমধ্যে অমন করে উড়ে যেতে দেখে সেই টিয়ার ঝাঁককে।

একদিন স্কুল থেকে ফিরে কী যেন দেখে হঠাৎ চিৎকার করে ডেকে ওঠে দৌলতি। বলে, হুনছ দাদি। কয়দিন ধইরা দেহি মাইজপাড়ার মঠের মইধ্যে পাগল কিসিমের একটা লোক আইয়া বইয়া থাকে। ক্যামুন আলাভোলা চোখ। বাড়িত ফিরনের সময় খালি চাইয়া থাকে আমার দিকে। কী চায় বেডা কে জানে!

নবীতুননেসার শঙ্কা বাড়ে। বলেন, খবরদার বইন কাছে যাইস না। পাগল-টাগল হইবো মনে হয়। কুনদিন না জানি কুন বিপদ ঘইটা যায়।

আরে না দাদি, আমি কই অন্য কতা। তুমি তো আর তোমার পুতেরে এহন দেহো না। হেই ঘোড়া মনে হয় রথখোলার মাডে আইয়া নামছে। ক্যান, তুমি কুনো ঠকঠক আওয়াজ পাও নাই? বলেই দৌলতি খিলখিল করে হাসে।

আমার রক্ত হিম হইয়া যায় আর তুই মাইয়া হাসোস? কাইল থেইক্যা আর স্কুলে যাওয়ার দরকার নাই।

হুনো দাদি, রথখোলার মঠের ভেতরে যে বেডা আইছে হেইডা তোমার লুকমান কি না যাও গিয়া একবার দেইখা আসো।

নারে ছেড়ি। কী আবোল-তাবোল কথা কস? এদ্দিন বাদে লুকমান কোত্থেইক্যা আইব? আমার মন কইতাছে হেই বেডা অন্য কেউ? তোর মার কথাই মনে হয় …

চুপ হইয়া গেলা ক্যান দাদি? মা’র কী কতা আমারে কও। হেইদিন ইস্কুল থেইক্যা আসনের সময় আমারে হাত ইশারা কইরা ডাকছিল। ক্যামুন আউলা-ঝাউলা মানুষ। তার চেহারা দেখলে ডর করে।

থাক ভালা হইছে। আর মাঠ পার হইয়া স্কুলে যাওনের কাম নাই।

দৌলতি এবার বলে, হেইদিন মাইনষের পায়ের আওয়াজ পাইয়া মঠের চূড়া থেইকা টিয়া পাখির ঝাঁক য্যান ট্যাঁ ট্যাঁ কইরা ছুটল। টিয়া পাখির মতোন শেষমেশ আমিও ছুটলাম বাড়ির দিকে। তবে মানুষটা পাগল হইলেও তার চোখ ক্যামুন ঠান্ডা।

নবীতুননেসার বয়স সত্তর পেরিয়েছে। এ-বয়সে নিজের জীবনে যে কত কাহিনি, কতরকম কিস্সার আবাদ করেছেন সব কি আর মুখ ফুটে বলা যায়! নিজের বিশ্বাস-অবিশ্বাস, সত্য-মিথ্যাটাকেও ভালো-মন্দের বিচারে মাপতে হয় নতুন করে। ধামসোনা গাঁয়ের এ-পোড়ো বাড়িতে মানুষ আর কজন? দৌলতি, গাছগাছালির ছায়া আর পাখপাখালির অবিরাম বুলি ছাড়া চারদিকের সব কেমন যেন সুনসান, স্থির। দিনরাত যে আওয়াজ ওঠে সেটাও বাতাসের সঙ্গে গাছপালার নেচে ওঠা পাতা-ডালের। সেইসঙ্গে ওঠে ঢিপ ঢিপ বুকের কাঁপুনি।

পুবের উঠোন ছাড়িয়ে কয়েক কদমের মধ্যে যে নিচু জমি সেখানে দমধরা কালো পানিতে হাঁটুসমান জংলা। চৈত্রের খররোদে তেতে-পুড়ে কচু ঝোপের পাতাগুলি সব পোড়াটে হলদে – যেন কুটুমপাখির মস্ত ডানা। কচু-কলমির দঙ্গলের ফাঁকে ফাঁকে হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো বেগুনি ফুল ফোটে ঠিক, কিন্তু নির্বিষ ঢোঁড়ার নিঃশব্দ চলন দেখেও আজকাল ভয় পান নবীতুননেসা।

পানাপচা সেই নিচু জলা পেরিয়ে গেলে ধূপকাশির লম্বা খাল। ওখানে একটা বাঁশের মাচা আছে। একদিন বিকেলে তার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলেন পাগলা কিসিমের সেই মানুষটাকে। উঠোনের গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে নবীতুননেসাকে ডেকে দেখিয়েছিল দৌলতি। নবীতুননেসার চিনতে ভুল হয়নি। হ্যাঁ, অবিকল সেই সুরত।

সেদিন রাতে দৌলতিকে বুকে জড়িয়ে উঠোনে পাটি পেতে শুয়ে ছিলেন নবীতুননেসা। ফুরফুরে বাতাস বইছে। অনেক দূরের মঠের কাছ থেকে টিয়া পাখির ঝাঁকের ট্যাঁ-ট্যাঁ আওয়াজ উঠছে সজোরে। একটা দপদপানি উঠছে বুঝি রথখোলার মাঠের মধ্যে। শোঁ-শোঁ বাতাসের সঙ্গে ঘরের পেছনের ছনগাছের ঝোপে মচমচে-খসখসে আওয়াজ উঠলো থেমে থেমে। এদিকে চৈত্রের চরাচরজুড়ে ধবল জোছনার বাধাহীন ছোটাছুটি। একটা মানুষের ছায়া আস্তে আস্তে এগিয়ে এসে কেমন থমকে গেল নবীতুননেসার ঘরের কোণে। শরীর পায় না ছায়াটা, তাই বোঝাও যায় না ঠিকমতো।

নবীতুননেসার মন বলছে কে এসেছে। কোহিনূর যেমনটি বলেছিল, আম্মা, একদিন হে আইব দৌলতির কাছে। সমস্ত বুঝ আপনার। আমার কিছু কওনের নাই।

ঘরের কোণে কেডা? কেডা খাড়াইয়া রইছোস? ছায়া দেখা যায় কিন্তু রাও করোস না ক্যারে? চেঁচিয়ে ওঠেন নবীতুননেসা।

ধামসোনা আর রথখোলার মাঠ ছাপিয়ে চৈত্রের বাতাসের দপদপানি ছোটে ঘোড়ার খুরের শব্দের মতো। বাতাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জোছনার খলবলানি ওঠে অবিরাম। আসমানের আদম সুরত নিচে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু জোছনার আলোয় উঠোনের কোনায় কোনো সুরত দেখা যায় না। সেদিক থেকে কেবল ভাঙা ভাঙা ডাক আসে, চাচি … আমি … ইব্রাহিম …।