আবুল হাসনাত  : কালের স্বপ্নজন

আবুল হাসনাত ছিলেন প্রগতিচিন্তার নিরলস বাহক – কেউ কেউ 

বলেন প্রজ্ঞাবানের পাঠরুচির নির্মাতা। কবিদের ভাবনা বলে –

স্বরূপের অনুসন্ধান ও মনোগঠনের পরিচ্ছন্ন এক ভাবধারা, আবুল

হাসনাত জীবনজিজ্ঞাসার তাগিদে তৎপর ছিলেন। হাসনাত 

বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার ক্ষেত্র প্রসারিত করে, গতি সচল চরিত্র মাধুর্যের

নানান ‘উচ্চতা’ নিজস্ব উৎসাহে বিরতিহীনভাবে অব্যাহত 

রেখেছিলেন। 

সৃষ্টির মানবিক বোধের মর্মবাণী প্রতিফলিত। শিল্প-সাধনায় আবুল

হাসনাত স্থির প্রত্যয়ের পথে জাগরণের ইঙ্গিতময়ী আলো; মুক্ত 

সম্পর্কের সীমান্তবিহীন কিচিরমিচির। পরহিতব্রতী আবুল হাসনাতের

মননশীলতা ভিন্নধারায় তৃপ্তি ছিল, বিনম্র শ্রদ্ধা প্রকাশ ছিল। নিয়মের

অঙ্গনে কোনো শূন্যস্থান অপূর্ণ রাখেননি, কিংবা প্রতিটি মুহূর্ত নিয়মের

ভুবনডাঙ্গা’য় কৃতিত্বের পরিমাপ করেছিলেন। সৃষ্টির মধ্যেও উৎকর্ষের রেখায়

স্পর্শ ছিল, যাতে উল্লিখিত হাল-হকিকতের কোনো প্রকার আপস না হয়। 

ধৈর্যশীল ব্যক্তিত্ব শিল্পলেখক অনুসরণের সৌষ্ঠবেও দৃষ্টিকাড়া ছিল;

পারস্পরিক সৌহার্দ্য যেন ভাষার বিশেষ ব্যঞ্জনা। কোনো কোনো মানসযাত্রা

দৃঢ় নেতৃত্বের নিদর্শন। … রোদ্দুরে উদ্বেলিত রেনেসাঁসের ‘জামতলা’য়

নাগরিক আহ্লাদ দেখে বুঝে নেয় – ওই রেনেসাঁসই আবুল হাসনাত … 

যার ঘুমহীন ঘুমের ভেতরে আলৌকিক কালের গোপন স্বপ্ন হাসে। তা যদি হয়

সবিতা হালদারের চিঠি পড়ে, নদীর আকুলতা নিয়ে কবিরা ছন্দের মাধুরী

ঝরাবে বা কেন? 

নদীতে  – নিসর্গে নতুন দীপ্তি মিনতি করে। ফলে, জীবনানন্দ দাশের পাঞ্জাবির

ঝুলে স্পন্দমান আবুল হাসনাতকে আপন করতে হলে কবিদের কিন্তু অবলোকন –

ও অনুধাবনে থাকতে হবে, ধানসিঁড়ি নদীর উপমাও দেখতে হবে। জীবন আবহে

হাঁটতে থাকা বনলতা সেনকে জিজ্ঞাসা করতে হবে বিশ্বাস ও বোধের সমুদ্রের ঢেউ 

কী আবুল হাসনাত? 

কবিরা আজ মানুষের ভিড়ে, প্রসারিত বেলাভূমিতে জন্মতিথির মাতৃভাষা খুঁজবে। আহা! 

বাক্সময় অথচ নীরব উপলব্ধির স্বপ্নগুলো ক্লান্ত নয় তো?