কামনা-বাসনায় পীড়িত নারীর উপাখ্যান : অ্যানি এর্নো

২০২২ সালের ৬ই অক্টোবর : খুব ভোরবেলা সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। আগে থেকে জল্পনা-কল্পনা চলছিল কার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে এবার। আততায়ীর হাতে সদ্য আক্রান্ত সালমান রুশদি (১৯৪৭-), নাকি জাপানের জাদুবাস্তবতার জাদুকর হারুকি মুরাকামি (১৯৪৯)? কিন্তু না, ২০০৮ সালে লে-ক্লেজিও, ২০১৪ সালে মদিয়ানোর পর এবার আবার ফ্রান্সের পালা। লেখিকার নাম অ্যানি এর্নো, বয়স ৮২।

লে-ক্লেজিও ছিলেন ফরাসিভাষী জগতের বাইরে সম্পূর্ণ অপরিচিত, মদিয়ানোও ছিলেন প্রায় অপরিচিত, কিন্তু ইয়োরোপে আমেরিকায় এর্নোর রচনাবলি জনপ্রিয় না হলেও নিদেনপক্ষে পরিচিত। গত তিরিশ বছরে তাঁর অন্তত পনেরোটি বই ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়াতে আমাদের ছোট মফস্বল শহরের গ্রন্থাগারে পাওয়া যাবে তাঁর বেশ কয়েকটি বই।

অ্যানি এর্নোর কুমারী নাম অ্যানি দেচুসনি, জন্ম ১লা সেপ্টেম্বর, ১৯৪০, ফ্রান্সের নরম্যান্ডি শহরের নিকটে লিলবন অঞ্চলে; শৈশব কাটে আরেকটি দূরের ছোট শহর ‘ইভেতো’তে। বাবা সংসার চালাতেন মুদির দোকান আর কফির পানশালার মাধ্যমে, সেখানে ভিড় করতেন স্থানীয় কলকারখানার শ্রমিকেরা।

১৯৬০ সালে তিনি লন্ডনে যান লেখাপড়ার জন্যে এবং সেখানে একটি পরিবারে ‘ও পেয়ার’ (বাচ্চাদের দেখাশোনার বিনিময়ে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা)-এর কাজ নেন। সেই সময়ের অভিজ্ঞতা অনেক বছর পরে তাঁর একটি আত্মজৈবনিক উপন্যাসের উপাদান হবে : ২০১৬ সালে প্রকাশিত একটি মেয়ের কাহিনী; মূল ফরাসিতে Mémoire de fille, A Girl’s Story নামে ইংরেজি অনুবাদ – ২০২০ সালে। এই উপন্যাসে রয়েছে তাঁর বয়ঃসন্ধির সময়ে প্রথম যৌনসম্পর্কের অভিজ্ঞতা। সেখানে আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলির স্মরণ ও পুনর্গঠন; আর তার সঙ্গে নিজস্ব গভীর অনুভূতির বিভাজন ও বিশ্লেষণ। তাঁর কৈশোর কেটেছে রক্ষণশীল পরিবারে অন্য লিঙ্গের সমবয়সী মানুষের অপরিচয়ে। ‘এইচ’ নামে এক যুবকের জন্য আকর্ষণ বোধ করেন তিনি, ছেলেটির চোখমুখ নাকি জনপ্রিয় অভিনেতা মার্লোন ব্রান্ডোর মতো – অন্য কেউ কখনো তাঁর প্রতি এমন উত্তাল আর নির্মম দৃষ্টিতে তাকায়নি। একটি নাচের পার্টিতে দুজনের দেখা হয়, তারপর তিনি ছেলেটির পিছন পিছন তার কক্ষে গিয়ে উপস্থিত হন। তারপর যা ঘটে তাকে কি ‘সিডাক্শন’ বলা যেতে পারে? ‘she feels his sex prod at her belly through her jeans. … There is no difference between what she does and what happens to her.’ এবং তার একটু পরে অমোঘ ভবিষ্যদ্বাণীর মতো, ‘a thick jet of sperm explodes in her face, gushing all the way into her nostrils.’ ব্যক্তিগত অনুভূতির ইতিহাসই সত্যিকারের ইতিহাস। তাঁর বর্ণনা ডাক্তারের দেখা রোগীর উপসর্গের মতো – নিরাবেগ বিশ্লেষণ। লিখে কী লাভ যদি তিনি অনুভবের নরম মাটি খুঁড়ে নতুন কিছু আবিষ্কার না করতে পারেন?

ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে এসে তিনি লেখাপড়া চালিয়ে যান প্রথমে রুয়ান এবং তারপরে বোর্দো বিশ্ববিদ্যালয়ে, প্রথমে বিদ্যালয়-শিক্ষিকার সার্টিফিকেট অর্জন করেন এবং পরে ১৯৭১ সালে আধুনিক সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। বছর ছয়েক স্কুলে শিক্ষকতার পরে তিনি ‘সি-এন-ই-ডি’ অর্থাৎ ফ্রান্সের দূর-শিক্ষার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তেইশ বছর অধ্যাপনা করেন।

১৯৭৪ সালে শূন্য আলমারি (ফরাসিতেLes Armoires vides, ইংরেজি অনুবাদে Cleaned Out), আত্মজৈবনিক উপন্যাস লিখে তাঁর সাহিত্যজীবনের সূচনা। তিন বছর পরে দ্বিতীয় উপন্যাস ওরা যা বলছে তাই করো, না হলে (ফরাসিতে Ce qu’ils disent ou rien, ইংরেজি তর্জমায় Do What They Say or Else)।

১৯৮১ সালে তৃতীয় উপন্যাস তুষারাবৃত নারী (ফরাসিতে La Femme gelée, ইংরেজি ভাষান্তরে A Frozen Woman)। তরুণী বধূর প্রথম মা হিসেবে তাঁর জীবনযাপনের কাহিনি। এখানে তিনি আত্মসমালোচনায় মুখর : কীভাবে তাঁর বৌদ্ধিক ও সাহিত্যিক অনুপ্রেরণাগুলির দিকে তিনি নজর দিতে অপারগ এবং পুরুষতান্ত্রিক বুর্জোয়া সমাজব্যবস্থা বেড়ি পরিয়ে দেয় উচ্চাশাসম্পন্ন নারীদের পায়ে। কয়েক মুহূর্তের ফুরসত পেলেই তিনি আপন মনে কাঁদেন, ‘How could I ever have thought to find fulfilment in this?’ তিনি কলেজে শিক্ষা দেন, বাড়িতে সংসারের, স্বামীর, পুত্রের দেখাশোনা করেন। লেখার সময় নেই বলেই তীব্র মনোবেদনায় এবং গভীর অবসাদে ভোগেন, ‘I will never sink lower than that’। কিন্তু তার মধ্যেই একের পর এক নতুন সৃষ্টির হুল্লোড়। নিজের জীবন এবং বীজের জীবন তাঁর সাহিত্যের উপাদান। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম এবং অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে তাঁর বিপন্ন মেয়েবেলা; অল্পবয়সে বিবাহবহির্ভূত গর্ভধারণ ও গর্ভপাত (তখনো ফ্রান্সে গর্ভপাত বেআইনি); নিজের আঁতের কথা আর পরিবেশের প্রভাব : এর মধ্যেই পথ কেটে চলেছে তাঁর সাহিত্যস্রোত।

আমেরিকায় সত্তরের দশক পর্যন্ত গর্ভপাত ছিল বেআইনি; কিন্তু গর্ভপাত ঘটত অন্ধকার গলিতে, রাতের অন্ধকারে, হাতুড়েদের হাতে কিংবা কোট হ্যাঙ্গার ব্যবহার করে। অনেক মার্কিন নারীর অকালমৃত্যু হয়েছে এই অন্যায় আইনের জন্যে। ১৯৭৩ সালের ২২শে জানুয়ারি মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট তাঁদের ঐতিহাসিক ‘রো বনাম ওয়েড’ মামলার সিদ্ধান্তে আমেরিকায় গর্ভপাত আইনসংগত বলে ঘোষণা করেন। নারীমুক্তির ইতিহাসে এটি একটি উজ্জ্বল দিন। কিন্তু সেইসঙ্গে আমেরিকার ধর্মান্ধ ও পুরুষতন্ত্রী রাজনীতিকরা শুরু করে তার প্রবল বিরোধিতা। প্রায় পাঁচ দশক পরে সফল হয় তারা। ২০২২ সালের ২৮শে জুন ‘ডবস বনাম জ্যাকসন’ মামলার রায়ে এখন আমেরিকায় গর্ভপাত আবার বেআইনি। মার্কিন সন্তান ধারণক্ষম নারীদের জরায়ু এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে। এর্নো খুব সম্ভবত প্রথম নোবেলজয়ী, যিনি বেআইনি গর্ভপাত করাতে বাধ্য হয়েছিলেন। নোবেল কমিটি কি এই পুরস্কারের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানালেন মার্কিন রক্ষণশীল, উগ্র দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে?

১৯৯২ সালে তিনি লেখেন অকপট কামনা, (মূল ফরাসিতে Simple Passion), ২০০৩ সালে তার ইংরেজি অনুবাদ হয় ঝরসঢ়ষব চধংংরড়হ নামে। দুই সন্তানের বিবাহবিচ্ছিন্না মায়ের অবৈধ প্রেমের কাহিনি। পুরুষটির নাম ‘এ’, বয়েসে তাঁর থেকে ছোট, বিবাহিত, বিদেশি, কিন্তু তার সম্পর্কে তিনি জানেন না বিশেষ কিছু। প্রেম সমাপ্ত হলে তিনি আপন মনে ভাবেন, ‘I am amazed that I did not ask more questions. Nor will I ever know what I meant to him…. He was, in every sense of the word, the shadow lover.’ ‘এ’ জানতো যে, তিনি একজন লেখক এবং সে একান্ত অনুরোধ জানিয়েছিল তাকে নিয়ে না লিখতে। সেজন্যে তাকে সহজে চিনতে পারা যাবে এমন কোনো তথ্য তিনি এই নভেলায় দেননি। কিন্তু বইটি ফরাসি বেস্টসেলারের তালিকায় ছিল প্রায় ছয় মাস।

২০০৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর ঐতিহাসিক স্মৃতিকথা বছরগুলি (ফরাসিতে Les Années, ইংরেজি অনুবাদে The Years), অনেক সমালোচকের মতে তাঁর তখন পর্যন্ত শ্রেষ্ঠ রচনা। তাঁর আগের গ্রন্থগুলি উত্তম পুরুষে রচিত হলেও এই বইটি প্রথম পুরুষে (ফরাসিতে ‘elle’, ইংরেজিতে ‘she’); দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ফরাসি সমাজের টানাপড়েন, ওঠানামা ও ঘাত-প্রতিঘাতের গভীর অবলোকন। সেখানে বাস করেন এক নারী, তাঁর চারপাশে পরিবর্তনশীল সমাজ। বইটি সেই বছরের ফ্রাঁসোয়া মরিয়াক সাহিত্য পুরস্কার এবং মার্গারিত দুরাস পুরস্কার পায়। ইংরেজি অনুবাদটি আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারের অন্তিম তালিকায় স্থান পেয়েছিল ২০১৯ সালে। যদিও শেষ পর্যন্ত পুরস্কারটি পায় অন্য একটি গ্রন্থ। এর্নো পেয়ে যান সে-বছরের ‘অনুবাদে নারীদের রচিত শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ’-এর ওয়ারউইক পুরস্কার।

তাঁর বিয়ে হয়েছিল ফিলিপে এর্নোর সঙ্গে; তাঁদের দুটি সন্তান এরিক এবং ডেভিড। আশির দশকের সূচনায় তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে।

২০১৮ সালে তিনি ইতালির ‘প্রেমিও হেমিংওয়ে’ সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন।

অবশেষে এসে হাজির হয় ২০২২ সালের অক্টোবর মাস : পৃথিবীর সাহিত্যের সেরা শিরোপা, নোবেল পুরস্কার, ‘for the courage and clinical acuity with which she uncovers the roots, estrangements and collective restraints of personal memoryÕ. তিনি ১৬ নম্বর ফরাসি লেখক এবং প্রথম ফরাসি লেখিকা যিনি নোবেল পুরস্কার পেলেন।

দুই

ইংরেজি অনুবাদে নোবেলজয়ী অ্যানি এর্নোর সদ্য প্রকাশিত গ্রন্থের নাম গেটিং লস্ট। প্রকাশিত হয়েছে গত সেপ্টেম্বর মাসে। ৪৮ বছর বয়সে লেখিকার নতুন করে প্রেমে পড়ার সমসাময়িক ডায়েরি। তাঁর সেই প্রেমিক বয়সে অনেক ছোট, বিবাহিত এবং এক অন্য দেশের নাগরিক। নাম দেননি, কেবল তার পদবির আদ্যক্ষর ‘এস’। (অকপট কামনা গ্রন্থে তার নাম ছিল ‘এ’।) মূল ফরাসি গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০০১ সালে, কিন্তু এতদিন ইংরেজি অনুবাদ হয়নি। এখন বইটি গরম পিঠার (হট  কেকের) মতো বিক্রি হবে।

প্রেমিকের বয়স উত্তর-তিরিশ, কিন্তু দেখলে মনে হবে অনেক কম। সেই তারুণ্য কেবল চেহারাতে নয়, তার কথাবার্তায় ও ব্যবহারে সংস্কৃতি আর পরিশীলনের অভাবেও। চারিত্রিক কোনো দৃঢ়তাও তার নেই। লেখিকা জানেন যে, ছেলেটি প্যারিসে তার কাজ শেষ করে দেশে ফিরে যাবে, তিনি সেই ফেরার তারিখটিও জানেন, কিন্তু তাতে কোনো অসুবিধে নেই। তার কারণ ছেলেটির রতিক্রিয়ায় দক্ষতা। এক আশ্লেষমুখর রজনী পার করে তিনি লিখছেন, ‘কাল রাতে যা ঘটেছে, তাতে আমার আর কামসূত্র খুলে দেখার প্রয়োজন নেই।’ অন্য এক মুহূর্তে তিনি জানান, ‘আমি একাধারে তার মাতা এবং তার গণিকা।’

এই সম্পর্ক চলাকালে তিনি নিয়মিত দিনলিপি লিখে রাখতেন এবং একটি নভেলাও লিখেছিলেন। এক দশক পেরিয়ে সেই দিনলিপিগুলির নতুন পাঠে তাঁর উপলব্ধি হয় যে, অকপট কামনা বইটিতে তিনি যা লিখেছেন, তার বাইরেও আরো অনেক ‘গভীর সত্য’ লুকিয়ে রয়েছে, যা অদগ্ধ, অপরিশীলিত, অপরিণত অথচ মুখর, তীব্র আর অন্ধকারময়, এবং যার থেকে তাঁর মুক্তি নেই। তিনি সেই গভীর সত্যকে প্রকাশ্যে তুলে ধরবেন, যা হবে জীবনের প্রতি তাঁর অর্ঘ্য, নৈবেদ্য, উৎসর্গ আর আত্মসমীক্ষা। দ্বিতীয় গ্রন্থটি আকারে প্রথম গ্রন্থের প্রায় চারগুণ।

এখন তিনি আর গ্রাহ্য করেন না, তাঁর নাগরের পরিচয় যদি কেউ শনাক্ত করতে পারেন। দেশে ফিরে যাওয়ার পর সে আর কোনোরকম যোগাযোগ রাখেনি, একটা পিকচার পোস্টকার্ডও নয়। তিনি জানেন না মানুষটি জীবিত অথবা মৃত। তাঁর দীর্ঘজীবনে যে নানান পুরুষের আনাগোনা ঘটেছে তাঁর মানসজগতে ও শয্যায় তাদের মধ্যে একটি বিষয়ে অমোঘ মিল তিনি লক্ষ করেছেন – তারা সবাই চিরকালের মতো হারিয়ে গেছে তাঁর জীবন থেকে; আর তিনি সম্পর্কগুলির নিবিড় অন্তরঙ্গতার পরে তাঁর বিচ্ছেদ-যন্ত্রণার অনেক ধাপ পেরিয়ে, এখন উপনীত হয়েছেন অন্তিম পর্যায়ে, যার নাম নির্মম, নির্লিপ্ত, অনাসক্ত ‘ঔদাসীন্য’।

‘এস’-এর বাড়ি মস্কো, তিনি ফ্রান্সে রাশিয়ার ডিপ্লোম্যাট। কিন্তু গর্বাচভকে তাঁর একদম পছন্দ নয়, তিনি পুরোপুরি ব্রেজনেভপন্থী এবং স্তালিনের পূজারি। একবার এর্নো এবং ফরাসি লেখকদের একটি প্রতিনিধি দল গিয়েছিলেন রাশিয়া পরিদর্শনে। ‘এস’ ফ্রান্সে রুশ দূতাবাসের এক তরুণ ‘এপারেটচিক’, তাঁদের সঙ্গে ছিলেন গাইড হিসেবে। দেশে ফেরার আগে লেনিনগ্রাদ শহরের একটি হোটেলে তাঁরা অন্তিম নিশীথটি একসঙ্গে কাটান। সম্পর্ক ঘনীভূত হয় ফ্রান্সে প্রত্যাবর্তনের পর।

কৃষ্ণ থাকে প্যারিসে আর তাঁর রাধা থাকেন ৪০ কিলোমিটার দূরের শহরতলিতে। ফোন করার উপায় নেই তাঁর বাড়িতে অথবা তাঁর কর্মস্থল সোভিয়েত দূতাবাসে। তিনি ফোনের পাশে অপেক্ষা করে থাকেন, যেদিন ফোন আসে সেদিনই ‘এস’ এসে উপস্থিত হন, কয়েক ঘণ্টা থাকেন এবং কর্মসমাপনে ফিরে যান। খুব সংক্ষেপে, ‘He fucks, he drinks vodka, he talks about Stalin.’ সঙ্গমের তুঙ্গমুহূর্তেও পরা থাকে তার পায়ের মোজা। যখন দিনের পর দিন ফোন আসে না, তিনি পথে বেরিয়ে ভিখিরিদের পয়সা দিয়ে কামনা করেন যেন ফোন আসে সেইদিন। দূতাবাসের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গিয়ে তাঁর পরিচয় হয় ‘এস’-এর স্ত্রীর সঙ্গে, সেও দূতাবাসের কর্মী; তিনি লক্ষ করেন, সেই মেয়েটির মধ্যে সৌন্দর্য, লাবণ্য আর পরিশীলনের অভাব।

এভাবে ২৪০ পৃষ্ঠাজুড়ে বছরখানেকের শারীরিক প্রেম। সেই সময় অ্যানি প্রায় কিছুই লেখেননি। যা সময় পেয়েছেন তখন রুশ ভাষা শিখেছেন এবং নতুন করে ‘আনা কারেনিনা’ পড়েছেন। এমন বই লিখতে সাহস এবং শক্তিশালী শিরদাঁড়া লাগে। ‘এস’ যখন দেশে ফিরে যান, অ্যানি ভেবেছিলেন তিনি আর বাঁচবেন না। তিনি ভুগতেন এক অনামী আতঙ্কে : আসন্ন প্রৌঢ়ত্ব, মৃত্যুভাবনা, সম্পর্কচ্ছেদ, অজানা অসুখ, অথবা উন্মাদ হয়ে যাওয়ার ভয়। কিন্তু তিনি বেঁচেছেন, জীবনের নানান জটিলতাকে জয় করে নিমগ্ন থেকেছেন সাহিত্যে আর তিন দশক পেরিয়ে নোবেল পুরস্কার পেলেন।

সুপাঠ্য এবং সুখপাঠ্য। ভøাদিমির পুতিন কি বইটি পড়েছেন? পড়লে তাঁর কী প্রতিক্রিয়া হবে কে জানে? তাঁর মতে, গর্বাচভের শাসনের সময়ে ঘটেছিল রাশিয়ার বিপর্যয়। গর্বাচভের দূতাবাসের কর্মীর অ-ডিপ্লোম্যাটিক আচরণে কি তাঁর সেই ধারণাই বদ্ধমূল হবে?

পৃথিবীজোড়া নারীমুক্তির এবং যৌন স্বাধীনতার আন্দোলন ঘটেছে লেখিকার চোখের সামনে, যদিও তিনি তার সক্রিয় সদস্য ছিলেন না। নারীর যৌনকামনা লুকিয়ে রাখার বিষয় নয়, তার উচ্ছ্বসিত অথচ শিল্পিত প্রকাশ চাই। প্রার্থনা করব অ্যানি আরো অনেক দিন বাঁচুন এবং ভালো লিখুন।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার : এই নিবন্ধের কিছু তথ্য আমি সংগ্রহ করেছি মার্কিন সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র থেকে। ৎ

ছবি : ইন্টারনেট