কেমন আছো নিউইয়র্ক

দুবছরের বেশি হয়েছে নিউইয়র্ক যাওয়া হয়নি, আর তার ফলে ওখানে থাকা ছেলে-মেয়ে-নাতি-নাতনি এবং অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা হয়নি। সুতরাং যাওয়ার দিন-তারিখ ঠিক হওয়ার পর থেকেই মনের মধ্যে একটা আনন্দ এবং উত্তেজনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। করোনার দাপট তখনো চলছে আর মার্কিন সরকার ইউরোপের নাগরিকদের সেদেশে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কী কী শর্ত পালন করতে হবে তাও ঘোষণা করেছে। তার প্রথমটি – অর্থাৎ দুই ডোজ টিকা, আমাদের (অর্থাৎ আমার ও আমার স্ত্রীর) মানা হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয়টির – যাত্রা শুরুর আগের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নেগেটিভ কোভিড টেস্টের – ব্যাপারে আগে থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় না। তাছাড়া এসবের প্রমাণ অনলাইনে দাখিল করতে হবে চেক-ইনের আগে। সবকিছু করার পর এয়ারলাইন জানালো, আমাদের ফ্লাইট বাতিল হয়ে গিয়েছে; একদিন পর যাবে। আমাদের জন্য তার অর্থ, কোভিড টেস্ট আবার করতে হবে। শুধু যে খরচা বাড়ল (সুইজারল্যান্ডে ভ্রমণের জন্য এই টেস্ট নিজের খরচে করতে হয় এবং তা অতি দুর্মূল্য) তাই নয়, আবার একদিন অনিশ্চয়তা।

নিউইয়র্ক পৌঁছে প্রথমেই জেনে নিলাম কোথায় কীভাবে কোভিডের পিসিআর টেস্ট করা যায়, কারণ আমরা নিজেরাই ঠিক করেছিলাম যে, পৌঁছার তিনদিনের মাথায় টেস্ট করিয়ে নেওয়া উচিত হবে। সকলেই নেগেটিভ হলে এক বাড়িতে স্বচ্ছন্দে থাকা যাবে। আর সে-প্রসঙ্গে জানলাম, আমেরিকায় যে-কেউ নিখরচায় টেস্ট করাতে পারে এবং ম্যানহাটনের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাম্যমাণ ইউনিটে সে-ব্যবস্থা আছে। বাস্তবেও দেখলাম যে, ছেলের বাসা অর্থাৎ যেখানে আমাদের প্রাথমিক ডেরা ছিল, সেখান থেকে হাঁটার দূরত্বেই একাধিক জায়গায় টেস্ট ইউনিট রয়েছে। যেখানে টেস্ট করাতে গেলাম সেখানে সেদিন কোনো লাইন ছিল না। আমাদের সুইস পরিচয়পত্র দেখিয়ে ই-মেইল অ্যাড্রেস দিয়ে স্যাম্পল দেওয়া গেল। যথাসময়ে ফল এসে গেল ই-মেইলে এবং নিশ্চিন্ত হওয়া গেল।

ফিরেছে প্রাণ আর জীবিকার সুযোগ

নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ হলেও নিউইয়র্ক পৌঁছেছিলাম এক রোদেলা বিকেলে। এয়ারপোর্ট থেকে ট্যাক্সি বেশ তাড়াতাড়িই শহরের কাছাকাছি পৌঁছে গেল; কিন্তু লিঙ্কন টানেল থেকে বের হয়ে ম্যানহাটনের ডাউনটাউনে ঢুকতেই পড়লাম বেশ ভিড়ে। অন্য সময় হলে বিরক্ত হতাম। কিন্তু এবারের অনুভূতি হলো একটু অন্যরকম। নিউইয়র্ক তাহলে তেমন বদলায়নি। তবে বেশকিছু বদল যে হয়েছে তা বুঝতে পারলাম দু-একদিনের মধ্যেই।

ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে প্রাথমিক খোঁজখবর পেলাম শহরের হাল-হকিকত সম্পর্কে। কী ধরনের জায়গায় যাওয়া ঠিক হবে না – সে-সম্পর্কে ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে একটা মোটা দাগের গাইডলাইন পাওয়া গেল। বুঝলাম যে, এই সফরে আমার প্রিয় বড় বড় মিউজিয়ামে যাওয়া যাবে না, যদিও সেগুলো ইদানীং খুলেছে। ঠিক তেমনি নিষিদ্ধ হলো বড় দোকানগুলোতে যাওয়া, বিশেষ করে বড়দিনের এবং নববর্ষের ছুটির ভিড়ের সময়টায়।

মিউজিয়ামে না-ই বা গেলাম; কিন্তু আমার শপিং হবে কেমন করে? তাছাড়া দিনের বেলা সবাই যখন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়বে এবং বাচ্চারা স্কুলে চলে যাবে, তখন আমিও কি ল্যাপটপ নিয়ে বসে যাব ‘হোম অফিস’ করতে! সব প্রশ্নেরই জবাব তৈরি। শপিংয়ের জন্য অনলাইন অর্ডার দিয়ে দাও। শুধু খাওয়া-দাওয়া নয়, কাপড়-জামা-জুতা কী চাই তোমার বলো – সব আনিয়ে দিচ্ছি। আমার ল্যাপটপের ব্যাটারি বদল করতে হবে; জেনেভায় পাওয়া যাচ্ছিল না। দুদিনের মধ্যে এসে গেল বাড়িতে। আর বাইরে যেতে চাও? বাড়ি থেকে বের হয়ে এক মিনিট হাঁটলে সেন্ট্রাল পার্ক। ঠান্ডার ভয় থাকলে ভালো করে কাপড় পরে যাও। অন্যদিকে দু-মিনিট হাঁটলে লিঙ্কন সেন্টার আর পাঁচ-ছয় মিনিট হাঁটলে কলম্বাস সার্কেল। পেয়ে যাবে কফিশপ-রেস্তোরাঁ, যেখানে বাইরে বসে খাওয়া যাবে। ঠান্ডার ভয় নেই, কারণ হিটিংয়ের ব্যবস্থাও থাকবে।

নিউইয়র্ক পৌঁছার পরদিন সকালেই আমরা বেরিয়ে পড়লাম বাড়ি থেকে, উদ্দেশ্য একটু ঘুরে দেখা কেমন আছে আমাদের পরিচিত জায়গাগুলো। ৬৭ নম্বর স্ট্রিট থেকে ব্রডওয়ে ধরে কলম্বাস সার্কেলে যাওয়ার পথেই দেখালাম বেশকিছু দোকান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। নিউইয়র্ক শহরে যে-কোনো সময়ই ব্যবসাতে ক্ষতি হলে দোকান বন্ধ হয়ে যায়। সুতরাং কোনটি যে কোভিড মহামারির কারণে বন্ধ হয়েছে আর কোনটি এমনিতেই বন্ধ হতো, সেটা বলা দুষ্কর। কিন্তু আমার মনে প্রশ্ন ছিল, ছোটখাটো ব্যবসাগুলোর মধ্যে কারা বেঁচে আছে?

বড় রাস্তার ওপরেই ‘ব্রেড বেকারি’,  আমাদের প্রিয় বেকারি এবং কফিশপ। আনন্দিত হলাম দেখে যে, দোকানটি শুধু যে বেঁচে আছে তাই নয়, ভেতরে ক্রেতাও যথেষ্ট। তবে কয়েকটি পরিবর্তন সহজেই চোখে পড়ে গেল। দরজায় একজন দাঁড়িয়ে গুনে গুনে লোক ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছিল। একটা সংখ্যার পর বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তাছাড়া ভেতরে বসে কফি খাওয়ার জায়গাটা খালি করে ফেলা হয়েছে; শুধু বাইরে বসার ব্যবস্থা। তবে দোকানের বাইরের জায়গাটি বেশ চওড়া বারান্দার মতো এবং অনেক উঁচুতে ছাদ। অর্থাৎ খোলা আকাশের নিচে বসতে হচ্ছে না। আর টেবিলগুলোর পাশে স্ট্যান্ডে হিটার। ব্যবস্থাটা মন্দ নয়। আমরা যথেষ্ট গরম কাপড় পরেই গিয়েছিলাম। ভেতর থেকে কফি আর তাদের বিশেষ চকলেট দেওয়া ক্রোয়াসঁ কিনে নিয়ে এসে বসলাম হিটারের কাছে এক টেবিল নিয়ে।

আমার বিশেষ কৌতূহল (বলা যায়, চিন্তা) ছিল লিঙ্কন সেন্টারের সামনে ব্রডওয়ের পাশে যে ‘ফুডকোর্ট’ থেকে আমি মাঝে মাঝে খাবার কিনতাম তাকে নিয়ে। ম্যানহাটনের মানচিত্রে তৈরি খাবার বিক্রি করার এসব গাড়ি দৃষ্টি এড়াতে পারে না। বিশেষ করে অফিসপাড়ায় এবং পর্যটকদের যাওয়ার জায়গাগুলোতে অল্প দামে নানা রকম খাবার কেনা যায় ফুডকার্টগুলো থেকে। নিউইয়র্ক শহরে এরকম কয়েক হাজার গাড়ি রয়েছে, যাদের ব্যবসার ওপর নির্ভর করে কয়েক হাজার পরিবারের জীবন।

কুড়ি-কুড়ি সালের লকডাউনের ফলে অনেক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সাময়িকভাবে হলেও বন্ধ হয়ে যায়। সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় হোটেল এবং রেস্তোরাঁগুলো। লকডাউন তুলে নেওয়ার পরও অবস্থা স্বাভাবিক হয়নি, কারণ একদিকে পর্যটক আসা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, অন্যদিকে শহরের মানুষও রেস্তোরাঁয় যাওয়া কমিয়ে দিয়েছিল। নিউইয়র্ক, বিশেষ করে ম্যানহাটনের অর্থনীতির একটা বড় অংশ জুড়ে আছে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক এবং প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান। তারা সহজেই তাদের কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করার সুযোগ দিয়েছিল। ফলে অফিসপাড়াগুলো খালি হয়ে যায়। আর অফিসে লোক না এলে দুপুরে রেস্তোরাঁগুলোতে খাবে কে?

শুধু রেস্তোরাঁ নয়, ফুডকোর্টগুলোর ব্যবসাও পর্যটক আর অফিসকর্মীদের ওপর নির্ভরশীল। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে পড়েছিলাম যে, এদের অনেকেরই ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। সে-কারণেই ভাবছিলাম ফিরে গিয়ে আমার সেই গাড়ির লোক দুটিকে আর দেখব কি না।

বাড়ি ফেরার পথে দূর থেকেই দেখলাম যথাস্থানে সেই গাড়ি,  যার গায়ে লেখা তার নাম : ‘দ্য কাসবা’। শুধু আমিই যে তাদের দেখে উৎফুল্ল তাই নয়, মনে হলো ওরাও আমাকে দেখে আনন্দিত। খদ্দের দেখলে বিক্রেতা আনন্দিত হতেই পারে। তবে তারা তার চাইতে একটু বেশি উৎসাহ নিয়ে আমাকে সম্ভাষণ জানাল। তাদের ইংরেজি একটু ভাঙা ভাঙা; তাই তেমন আলাপ জমে না। কিন্তু বুঝলাম যে, আমি বেঁচে আছি দেখে ওরা আনন্দ প্রকাশ করছে। প্রতিদিন তাদের গাড়ি থেকে খাবার না কিনলেও যাওয়া-আসার পথে আমি লক্ষ করি ব্যবসা কেমন চলছে। আগে দুপুরে লাঞ্চের সময় হতেই সেখানে লম্বা লাইন হতো; কিন্তু এখন আর সেরকম লাইন দেখি না। একজন-দুজন করে ক্রেতা আসে-যায়। আমি যাওয়া-আসার পথে ওদের দিকে তাকালে ওরা হাত তুলে ‘হাই’ বলে। আগে তারা এতো ব্যস্ত থাকত যে, তাদের সে-সময় হতো না।

তবে সব এলাকায় একভাবে ঘটছে না পুনরুজ্জীবন। হারলেমে গিয়ে দেখলাম, বন্ধ হয়ে যাওয়া দোকানপাটের সংখ্যা অনেক বেশি। রাস্তায় ভবঘুরে ধরনের মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। খবরের কাগজে পড়েছিলাম যে, নিউইয়র্ক শহরের বেকারত্বের হার দেশের গড়ের চাইতে প্রায় দ্বিগুণ; কিন্তু শহরের বিভিন্ন এলাকার মধ্যেও নিশ্চয় অনেক পার্থক্য আছে।

নিউইয়র্কের নাড়ি কেমন চলছে তা বুঝতে হলে যেতে হবে টাইমস স্কোয়ার। তার আশেপাশে ব্রডওয়ের নামকরা থিয়েটারগুলো। সেখানেই বছরের শেষদিন মাঝরাতে আবাহন  জানানো হয় নতুন বছরকে। তবে সে-জায়গা সবসময়ই  টুরিস্টদের পদচারণায় মুখর থাকে; কিন্তু ২০২০ সালের মার্চ থেকেই নিথর হয়ে গিয়েছিল গোটা এলাকা, সে-খবর সকলেরই জানা। তবে ২০২১-এর ৮ই নভেম্বর থেকে ইউরোপের নাগরিকদের জন্য দরজা খোলার পর থেকে প্রাণ ফিরে আসে সেখানে। এক রোদেলা সকালে সেটি ছিল আমাদের গন্তব্য। ৬৭ নম্বর রাস্তা থেকে ব্রডওয়ে ধরে হেঁটে গেলে কুড়ি-পঁচিশ মিনিটের দূরত্ব।

টাইমস স্কোয়ার এবং তার আশেপাশের এলাকা সত্যিই ছিল প্রাণবন্ত। থিয়েটারগুলোতে বিলবোর্ড দেখে বোঝা গেল যে, তারা আবার শো শুরু করেছে। অনেকদিন এসব শো বন্ধ থাকাতে শুধু যে ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে তাই নয়, এর সঙ্গে জড়িত শিল্পী ও কলাকুশলীসহ বহু মানুষের জীবিকা বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। তবে কয়েকদিন পরই করোনা ভাইরাস আক্রমণ চালালো ওমিক্রনের রূপ ধরে। ফলে আবার আতঙ্কের ঢেউ, আবার কিছু কিছু বন্ধ।

কারা টুরিস্ট আর কারা স্থানীয় লোক – তা না বোঝা গেলেও মানুষের চলাফেরা দেখে আন্দাজ করা যাচ্ছিল যে, অনেকেই টুরিস্ট। এক চত্বরে এক অর্ধ-উলঙ্গ লোক গিটার হাতে গান গাওয়ার ভঙ্গি করছিল। সারা গায়ে উল্কি আঁকা সেই লোকটির সঙ্গে ছবি তোলার জন্য মানুষের (নারীসহ) অভাব ছিল না।

বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার পাশে ফুডকার্ট থেকে বিক্রি হচ্ছিল বিভিন্ন ধরনের খাবার। তাদের পাশ দিয়ে যেতে যেতে কেউ কেউ বলছিল, ‘ওয়েলকাম ব্যাক।’ বোঝা গেল যে ওই গাড়িগুলো মাত্রই ফিরেছে তাদের ব্যবসায়। একটিতে পাওয়া যাচ্ছিল ‘চুরো’। মিষ্টান্ন জাতীয় এই খাবারের আদি জায়গা স্পেন এবং পর্তুগাল। পরে মেক্সিকো হয়ে এসেছে মার্কিন মুলুকে। ডোনাটের মতো এর মূল উপাদান ময়দা এবং ডিম। তবে গোল করে না বানিয়ে নেকলেসের আকৃতি দেওয়া হয়। আর কেউ চাইলে নিতে পারে গরম করা মধুর সঙ্গে চকলেট সস এবং বাদামের গুঁড়োয় ডুবিয়ে অত্যন্ত মজাদার করে বানানো চুরো। যদিও আমার স্ত্রী নিলেন শুধু কফি, আমি নিলাম কফির সঙ্গে এই মিষ্টি চুরো। চত্বরে লোহার চেয়ার-টেবিল পাতা ছিল (ম্যানহাটনের অনেক জায়গায়ই সাধারণের বসার জন্য এরকম চেয়ার-টেবিল রাখা আছে)। তেমন ভিড় ছিল না বলে একটি খালি টেবিল পেয়ে গেলাম। রোদ ছিল ভালো। সুতরাং একটু ঠান্ডা থাকলেও রোদে বসে কফি আর মিষ্টি চুরো খাওয়ার কথা ভোলার নয়।

রেস্তোরাঁয় বাইরে বসে

করোনা মহামারিতে মানুষ ঘরকে ভয় করতে শুরু করেছে, কারণ এই ভাইরাস ঘরের ভেতরে (অর্থাৎ বাতাস চলাচল করতে পারে না – এরকম বদ্ধ জায়গায়) মানুষকে আক্রমণ করার শক্তি পায় বেশি। পৃথিবীর সর্বত্রই বার-রেস্তোরাঁ, সিনেমা-থিয়েটার, নাইট ক্লাব ইত্যাদি জায়গায় জনসমাগম হয় বেশি। তাই লকডাউন ব্যবস্থা তুলে নেওয়ার পর পর্যায়ক্রমে এসব জায়গা খোলা হয়। রেস্তোরাঁগুলোকে প্রথমেই পুরোপুরি খোলার অনুমতি না দিয়ে বলা হলো বাইরে খাবার সার্ভ করার ব্যবস্থা করতে।

ইউরোপে গ্রীষ্মকালে রেস্তোরাঁর বাইরে ফুটপাতে টেবিল-চেয়ার পেতে খাওয়ার ব্যবস্থা সবসময়ই চালু ছিল। এখন সেটি প্রায় নিয়মে পরিণত হয়েছে। নিউইয়র্কে এরকম রীতি থাকলেও এবার গিয়ে দেখলাম সেখানে বিরাট পরিবর্তন। অনেক রেস্তোরাঁতেই বাইরে ফুটপাত বা রাস্তার কিনারে গাড়ি পার্ক করার জায়গায় অস্থায়ী ধরনের স্থাপনা তৈরি করে বসার ব্যবস্থা। কোনো কোনোটাতে হিটিংয়ের ভালো ব্যবস্থা। তবে এলাকা এবং রেস্তোরাঁর স্তরভেদে এসব ব্যবস্থায় বেশ লক্ষণীয় তফাৎ। উঁচুমানের রেস্তোরাঁগুলোর স্থাপনার মানও সেরকম। বিভিন্নভাবে সাজানো। সাধারণ আলোর বদলে রীতিমতো আলোকসজ্জা; কিন্তু হারলেমে আমার প্রিয় কফিশপ প্যাতিসারি দেজ অ্যামবাসাদের বাইরে দরিদ্র ধরনের একটি চালাঘর। পাশ থেকে ঢোকা বাতাস ঠেকানোর ব্যবস্থাও নেই। আবার সে-অঞ্চলেরই অন্য এক রেস্তোরাঁয় পেলাম ছোট ছোট সম্পূর্ণ আলাদা কেবিনের মতো জায়গা। টেবিলের ওপর থেকে ঝোলানো হিটার। বাইরে বেশ ঠান্ডা থাকলেও সেখানে বসে ব্রান্চ খেতে কোনো অসুবিধেই হলো না।

নতুন আর পুরনো : লিটল আইল্যান্ড এবং

চেলসি মার্কেট

ম্যানহাটনের বাসিন্দা এবং পর্যটকদের জন্য সুসংবাদ এবং নতুন আকর্ষণ লিটল আইল্যান্ড। গত বছরের অর্থাৎ ২০২১ সালের মাঝামাঝি নাগাদ খুলেছে এটি। হাডসন নদীর পাড়ের অনেকখানি জুড়ে হাডসন রিভার পার্ক। ডাউনটাউনের দিকে ১৪ নম্বর স্ট্রিটের কাছে নদীর পাড় থেকে সামান্য ভেতরে পানির মধ্যে পিলার বানিয়ে তার ওপর  গড়ে তোলা হয়েছে একটি কৃত্রিম দ্বীপ। বলা যায়, পুরো দ্বীপটিই পিলারের ওপর। এলাকায় ছোট হলেও তার মধ্যেই কিছু জায়গা উঁচু টিলার মতো এবং কিছুটা সমতল। সিঁড়ি দিয়ে টিলাগুলোর ওপরে উঠে নদীর দৃশ্য দেখার সুন্দর ব্যবস্থা। অনেক ধরনের গাছগাছালি দিয়ে সবুজ করা হয়েছে দ্বীপটিকে। গ্রীষ্মকালে করা হয় ফুলের বাগান। এক জায়গায় সুন্দর একটি অ্যাম্পিথিয়েটার, কয়েকশো লোক বসে অনুষ্ঠান দেখতে পারবে – এমনভাবে তৈরি গ্যালারি। একপাশে একটি খোলা চত্বর, যেখানে আইসক্রিম আর কফির কিয়স্ক। মাঝখানে বসে খাওয়ার জন্য চেয়ার এবং ছোট ছোট গোল টেবিল। অবশ্য কোভিড মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে ফুডকার্টগুলো বন্ধ ছিল। সবমিলিয়ে জনসাধারণের জন্য খোলা জায়গায় কিছুটা সময় কাটানোর ভালো ব্যবস্থা।

কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করলেই আমার কফি এবং কিছু খেতে হয়; কিন্তু লিটল আইল্যান্ডে তার কোনো সুযোগ না দেখে আমরা বেরিয়ে পড়লাম সেখান থেকে। মেয়েজামাই বলল, কাছেই চেলসি মার্কেট, যেখানে খাওয়া-দাওয়া-কফি সবই পাওয়া যাবে। এই জায়গাটির কথা আমি আগেও শুনেছি, সুতরাং উৎসাহের সঙ্গে প্রস্তাব সমর্থন করলাম। আমরা ছিলাম ওয়েস্ট সাইড হাইওয়েতে চৌদ্দ নম্বর স্ট্রিটের কাছে আর চেলসি মার্কেট নয় এবং দশ নম্বর অ্যাভিনিউর মধ্যে পনেরো নম্বর স্ট্রিটলাগোয়া। কয়েক মিনিট হেঁটেই আমরা পৌঁছে গেলাম সেখানে।

নদীর পাড় থেকে চেলসি মার্কেটের এলাকাটি মিটপ্যাকিং ডিস্ট্রিক্ট নামে পরিচিত, কারণ এককালে (ঊনবিংশ শতকে এবং বিংশ শতকের গোড়ার দিকে) সেখানে ছিল পশু জবাইয়ের জায়গা আর কাঁচা মাংসের পাইকারি দোকান। কালক্রমে,  বিশেষ করে সুপারমার্কেট জাতীয় আধুনিক দোকান চালু হওয়ার পর থেকে, এই ব্যবসাটির ধরন বদলে যায় এবং অনেক দোকান বন্ধ হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন আসে পুরো এলাকাটির চেহারাতেও। সেখানে এখন দেখা যায় আধুনিক (বিশেষ করে দামি জিনিসপত্রের) দোকানপাট, হোটেল, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি আর রয়েছে চেলসি মার্কেট।

ঊনবিংশ শতকের শেষের দিকে গোড়াপত্তন হয়েছিল চেলসি মার্কেটের। জায়গাটাতে তখন বেশ কয়েকটি ছোট রুটি আর বিস্কিট তৈরির কারখানা ছিল। সে-ধরনের অনেক কারখানাকে একত্র করে গড়ে ওঠে নাবিস্কো বিস্কিট আর রুটির কোম্পানি। কিন্তু আজকের চেলসি মার্কেট একটা ব্লকের পুরো দোতলা জুড়ে। আর কী নেই সেখানে! কাঁচা মাছ-মাংস আর সবজি-ফলের দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন বুটিক আর নানা ধরনের রেস্তোরাঁ। ফাস্ট ফুড, বসে খাবার রেস্তোরাঁ, সবই আছে। ইতালিয়ান, ফ্রেঞ্চ, জাপানি, থাই, মেক্সিকান – কত ধরনের রেস্তোরাঁ যে রয়েছে! দালানটির মালিক এখন গুগলের প্রতিষ্ঠাতা অ্যালফাবেট কোম্পানি। তার বেশ খানিকটাতে গুগলের একটি অফিসও রয়েছে।

আমাদের দরকার ছিল চট করে একটু হালকা লাঞ্চ খেয়ে নেওয়া। তাছাড়া ভেতরে না বসে খাবার নিয়ে বাইরে বসে খেতে চেয়েছিলাম। সুতরাং সিদ্ধান্ত হলো পিৎজা খাওয়ার। তবে ফুড হলে ঢুকে দেখলাম সর্বত্রই প্রচণ্ড ভিড়। অথচ দিনটা কিন্তু উইকএন্ড ছিল না। বুঝতে পারলাম, টুরিস্টরা আবার ফিরেছে। ব্যবসা – বিশেষ করে রেস্তোরাঁগুলো  – ভালো চলছে দেখে আমি খুশিই হলাম। কিন্তু সে-সময় নিউইয়র্কে কোভিডের সংক্রমণ আবার বাড়ছিল এবং চারদিকে ওমিক্রন নামের নতুন রূপটিকে নিয়ে ভীতির সঞ্চার হয়েছিল। সুতরাং ব্যবসা ভালো হলো কি না তার চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল কীভাবে সেখান থেকে তাড়াতাড়ি বের হওয়া যায়।

মূল ভবনের পাশের রাস্তার গাড়ি পার্কিংয়ের বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে ছিল বাইরে বসে খাওয়ার অস্থায়ী স্থাপনা। বেশ সুন্দর করে বানানো; প্রতিটি টেবিলের জন্য ছোট ছোট কেবিনের মতো জায়গা আর মাথার ওপর ঝুলন্ত হিটার। একদিক খোলা আর অন্যদিকে প্লাস্টিকের মতো জিনিস দিয়ে বাতাস ঠেকানোর ব্যবস্থা। সৌভাগ্যবশত আমরা একটি কেবিন খালি পেয়ে গিয়েছিলাম। সুতরাং আমাদের লাঞ্চ এবং কফি খাওয়া নির্বিঘ্নেই সমাধা হয়েছিল।

সংগ্রাম, সাফল্য আর হতাশার গল্প 

আমার নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস বজায় রাখার জন্য সেন্ট্রাল পার্কের চাইতে ভালো জায়গা আর নেই, বিশেষ করে কেউ যদি শব্দদূষণ এড়াতে চায়। এবার আরো বেশি উৎসাহ ছিল সেখানে যাওয়ার জন্য, কারণ ২০২০ সালে কোভিডের প্রথম ঢেউয়ের সময় শুনেছিলাম যে, হাসপাতালে রোগীদের জায়গা দেওয়া যাবে কি না সন্দেহ দেখা দেওয়াতে সেন্ট্রাল পার্কে তড়িঘড়ি অস্থায়ী হাসপাতালের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, যদিও শেষ পর্যন্ত সেসব বেড নাকি ব্যবহার করতে হয়নি। আমার ছেলে অবশ্য বলেছিল, এখন সেসবের কোনো চিহ্ন পাবে না। আসলেও তাই।

পার্কে গিয়ে দেখলাম সেখানকার চিত্র প্রায় আগেকার মতোই। টুরিস্ট নিয়ে ঘোড়ার গাড়ি আর রিকশা চলছে। হাঁটার এবং জগিংয়ের মানুষও নেহায়েত কম নয়। তবে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ বলে জনসমাগম স্বাভাবিকভাবেই গ্রীষ্মের চাইতে কম। আমার প্রিয় মাঠ শিপ মেডোর গেট বন্ধ। সেখানে নোটিশ লাগানো, রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য পুরো শীতকাল সে-জায়গা বন্ধ থাকবে। তবে ছয় ইঞ্চির বেশি বরফ পড়লে বরফে খেলার জন্য মাঠ খুলে দেওয়া হবে।

 মাঠ পেরিয়ে একটু ভেতরে গেলে আমাদের প্রিয় কফিশপ ‘ল্য পাঁ কুতিদিয়াঁ’। তার চত্বরে খোলা জায়গায় চেয়ার-টেবিল পাতা। শেষ শরতের নরম রোদে জায়গাটি খুব আকর্ষণীয় লাগলো। আমরা বসে গেলাম কফি খাওয়ার জন্য। সার্ভ করতে এলো বাঙালি ছেলে সোহরাব (আসল নাম নয়)। আমাদের দুজনকে বাংলায় কথা বলতে শুনে বলল, সেও বাঙালি। কোভিডের প্রথম ঢেউয়ের সময়ের কথা জিজ্ঞেস করলাম। জানালো যে, সে সুস্থ ছিল। কফিশপ বন্ধ থাকার সময় সরকারি সহায়তা পেয়েছে বলে কাজ না থাকলেও অসুবিধে হয়নি।

সেন্ট্রাল পার্কের বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় ফুডকোর্ট, যেগুলোর মেন্যু প্রায় একই রকম। পাওয়া যায় মিষ্টি সিরাপে ভাজা বিভিন্ন রকমের বাদাম, হট ডগ, কোমল পানীয় ইত্যাদি। হাঁটতে হাঁটতে এরকম একটি গাড়ির সামনে থামলাম। এক তরুণ চালাচ্ছেন সে-দোকান। আমি ওঁর দিকে তাকিয়ে সোজা বাংলায় জিজ্ঞেস করলাম, আপনি বাঙালি? আমার অনুমান সঠিক ছিল। হাসিমুখে এগিয়ে এলেন তরুণ। আমি তিন ডলারে এক প্যাকেট বাদাম কিনলাম। আলাপে জানলাম, প্রায় পনেরো বছর হয় এদেশে এসেছেন। পরে দেশে ফিরে গিয়ে বিয়ে করেছেন এবং স্ত্রীকেও নিয়ে এসেছেন। দেশে যাওয়ার সময় ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে ঋণ করেছিলেন মায়ের জন্য সোনার গহনা কিনতে। সে-ঋণ তিনি ঠিকমতো শোধ করেছেন। ২০২০ সালে কোভিডের কারণে বেশ কয়েক মাস দোকান বন্ধ রেখেছিলেন। সরকারি সহায়তা পেয়েছিলেন বলে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি নিয়ে কাজ শুরু করতে হয়নি। তাঁর স্ত্রীরও আছে একটি ছোট ব্যবসা এবং তিনিও পেয়েছেন সহায়তা। সবমিলিয়ে ভালোই ছিলেন, বললেন তিনি।

আরেকদিন বাদাম ভাজা কিনতে গিয়ে যাঁর সঙ্গে আলাপ হলো তাঁর নাম সুবল (আসল নাম নয়)। তিনিও আমেরিকায় এসেছেন প্রায় কুড়ি বছর আগে। তবে তার আগে তিনি গিয়েছিলেন দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান হয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক দ্বীপে, যার নাম আমি এর আগে শুনিনি। গুয়ামের কাছে সে-দ্বীপ। সেখানে বসবাসের সুবাদে আসতে পেরেছেন আমেরিকায়। প্রকৃত অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি। অর্থ ব্যয় হয়েছে অনেক। তবে সব ভালো যার শেষ ভালো। এখন তাঁর আমেরিকার পাসপোর্ট আছে। জীবনে এসেছে সচ্ছলতা এবং স্থিতিশীলতা। বছরে ন-মাস ফুডকোর্টের খাবার বিক্রির কাজ করেন। শীতের তিন মাস খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে এ-কাজ করা যায় না। তখন উবার-ট্যাক্সি চালান। শুনে মনে হলো, বেশ ভালো ব্যবস্থা। ২০২০ সালে কোভিড মহামারির সংকটের সময় তিনিও পেয়েছেন সরকারি সহায়তা। স্ত্রী ও মেয়ে নিয়ে সুখী সংসার তাঁর।

বড় ছেলের নির্দেশ, সাবওয়ে বা বাস যতটা সম্ভব পরিহার করতে। হাঁটতে না পারলে নাও উবার বা রাস্তার হলুদ ট্যাক্সি। মেয়ের বাসা থেকে একদিন রাতে ফিরছিলাম উবার ট্যাক্সিতে। আমরা দুজন নিজেদের মধ্যে বাংলায় কথা বলছিলাম। সেটা শুনে গাড়ির চালক তাঁর যথাযথ বিনয় বজায় রেখেই জানালেন যে, তিনিও বাঙালি। অনেক বছর হয়ে গিয়েছে এদেশে। মোটামুটি সেটেলড। ভাইকে এনে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। এখন সে-ভাই নামকরা ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক মরগান স্ট্যানলিতে চাকরি করেন। মানবসম্পদে বিনিয়োগ এবং তা থেকে ভালো ফল, এর চাইতে সুবিবেচনার কাজ আর কী হতে পারে!

তবে অভিবাসনের অ্যাডভেঞ্চার আর সংগ্রামে সবাই একরকম সাফল্য অর্জন করতে পারে না। হারলেমের ১২৫ নম্বর স্ট্রিটের সাবওয়ে স্টেশনের কাছে ফল কিনতে গিয়ে যাঁর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল তিনি সোজা বললেন, সে-জায়গায় দোকান চালানো তাঁর পছন্দ নয়। (কারণ বুঝতে আমার অসুবিধে হয়নি।) কিন্তু আর কোনো উপায় নেই বলে চালিয়ে যাচ্ছেন। বুঝতে পারলাম, সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে এসে যতটা উদ্যোগী হতে হয়, সেরকম তিনি হতে পারছেন না। সব মানুষ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সফল হয় না।

জীবন সাফল্যের বা সংগ্রামের হোক, বাঙালি কিন্তু তার স্বভাবসুলভ সৌজন্য এবং বদান্যতা ভোলে না। হলুদ ট্যাক্সির চালক টিপ নিতে চান না – এরকম অভিজ্ঞতা বেশ কয়েকবার হয়েছে (পেছনে বসে স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে থাকলে চালক জেনে যান যে আমরা বাঙালি), যদিও নিউইয়র্কে টিপ প্রায় বাধ্যতামূলক। ১২০ নম্বর স্ট্রিটের কাছে আমস্টারডাম অ্যাভিনিউর ওপর এক ডানকিন ডোনাটের দোকানে কিছু কিনতে ঢুকলেন আমার স্ত্রী। মাস্ক পরতে হবে বলে আমি বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। তিনি এসে জানালেন যে, বিক্রয়কর্মী বাংলাদেশের এক তরুণ। তাঁকে প্রায় জোর করেই বাড়তি কয়েকটি জিনিস বাক্সে দিয়ে দিয়েছেন, তাঁর পক্ষ থেকে গিফট, এই বলে। ফল কিনতে গেলে কোনো কোনো দোকানি নিজেই বলেন, আজকের পেঁপে ভালো না; কালকে টাটকা পেঁপে আসবে। ছটা কলা কিনলে একটা কলা বেশি দেবেন কেউ কেউ। সেন্ট্রাল পার্কের বাদাম ভাজার ফুডকোর্টের সুবল তিন ডলারের বাদামের প্যাকেট দুই ডলারে দিতে চেয়েছিলেন (প্রায় জোর করেই তাঁকে তিন ডলার দিতে হয়েছিল)। সৌজন্য প্রকাশে সংগ্রামী মানুষগুলোও কিন্তু পিছপা নন। ৎ

সব ছবি লেখকের সৌজন্যে