বাংলা কাব্য-রূপান্তর : অসীম সাহা
একাদশ সর্গ
একদিন সেজেগুঁজে সেই হৃষিকেশ।
কুঞ্জবনমাঝে এসে করিলো প্রবেশ ॥
এই কুঞ্জে এসে সেই মহাব্রজরাজে।
পুনরায় চলে গেলো নিজে তার কাজে ॥
চোখে দেখা যায় না, সেই প্রথম রাতে।
সে-সময়ে গেলো দূতি রাধার সাক্ষাতে ॥
সারা অঙ্গে পরে রাধা নানা আভরণ।
কৃষ্ণের দুঃখ তাতে হইলো নিবারণ ॥
অতি আনন্দিত মনে রতির ইচ্ছায়।
হাস্য-কৌতুকে সখি খুশিতে গান গায় ॥
সে-সময়ে সখিগণ বলে রাধিকাকে।
কৃষ্ণ-অভিসারে গিয়ে তৃপ্ত করো তাকে ॥
গীত
রাগ : বসন্ত। তাল : যতি
চলো চলো চলো যাই শ্রীহরির কাছে।
কাতর কথায় হরি অনেক মিনতি করি
দুই পায়ে করিয়া প্রণতি।
অশোকবনের মাঝে ব্যস্ত হয়ে রতিকাজে
রয়ে গেলো সেখানে সম্প্রতি ॥
তোমার জঘন-ভার স্তনযুগ স্ফীত, আর
ধীরে তাকে তুমি করো জয়।
তোমার ও পদদ্বয় নূপুরেতে মণিময়
হংসগতি মানে পরাজয় ॥
মোহিত ধ্বনির সুর কৃষ্ণের বাণী মধুর
শুনে তুমি প্রীত করো তাকে।
অনিবার্য মোর বাণ ত্যাগ করো ত্যেজ-মান
কামসুখ বুঝে নাও ফাঁকে ॥
বাতাসের চঞ্চলতা দূর করে বলো কথা
সাথি করো কুঞ্জ-লতাপাতা।
এটা বুঝে যাতায়াতে ভাসছে তোমার সাথে
সখি তুমি যাও দ্রুত সেথা ॥
কামের তরঙ্গ হতে স্তনচূড়া হয়ে তাতে
রতিরঙ্গ করো হরিসাথে।
স্তনভার আপনার তাতে সুখ হোক তার
জলাধার খুঁজে নিও তাতে ॥
রতির উত্তাল রঙ্গে করো নিজ সখিসঙ্গে
রতিতে স্বাধীন তুমি নও।
কঙ্কণের তালবাদ্য বাজাও যতোটা সাধ্য
লাজ-লজ্জা ত্যাগ করে লও ॥
হাত রেখে সখিহাতে চলো তুমি তার সাথে
পাঁচনখে নিয়ে কামবাণ।
উচ্চরবে ধ্বনি তুলে আহ্বান করো মূলে
বনমাঝে চাও সেই স্থান ॥
রাজার নন্দিনী হয়ে সখি-সেনাগণ লয়ে
বনে তুমি পাও নিন্দা যতো।
কবি জয়দেব কয় গিয়ে করো যুদ্ধজয়
দেখো কৃষ্ণের সাহস কতো ॥
সখিরা বুঝিয়ে বলে তাকে পুনর্বার।
কৃষ্ণের বিশেষ গুণ যতো আছে আর ॥
শোনো সখি, উদ্বিগ্ন হয়ে তোমার হরি।
চিন্তায় আকুল হয়ে বলে, প্রণাম করি ॥
সেই রাধা কাছে এসে রাধাকে না দেখে।
দেখো সে কামের কথা বলে একে একে ॥
পাগলিনী হয়ে রাধা করে আলিঙ্গন।
প্রীত হয়ে তার সঙ্গে করে সে রমণ ॥
তমালের বনমাঝে ঘন অন্ধঘরে।
বসে থাকে অপেক্ষায় কৃষ্ণসখাতরে ॥
আকুল হয় হরি শুধু এই চিন্তায়।
চারদিকে তোমাকে শুধু দেখতে চায় ॥
পুলকিত হয়ে দেখে আনন্দিত হয়।
হঠাৎ ফের কৃষ্ণ হয় বিষাদময় ॥
রাধা এলো ভেবে কৃষ্ণ উঠে চলে যায়।
কেবল মূর্ছা যায় না, দেখে সে তোমায় ॥
অতএব যেতে তুমি ইচ্ছা করো প্রিয়।
যাবার জন্যে রাত্রি ভালোই দেখে নিও ॥
অন্ধকারে যোগ্য সাজ করে তুমি লও।
কালো কালো অলংকারে সুসজ্জিত হও ॥
দুই চোখ কাজল দিয়ে রঞ্জিত করো।
তমালগাছের ফুলে কান দুটি ভরো ॥
নীলপদ্ম ফুলমালা মাথাতেই রাখো।
কস্তুরীর পাতা দিয়ে স্তন তুমি ঢাকো ॥
শোনো সখি, চারদিকে শুধু অন্ধকার।
প্রতি অঙ্গ দিয়ে তুমি ধরো অঙ্গ তার ॥
নীলরঙের আচ্ছাদন সুন্দর খুব।
প্রিয় স্থানে যেতে সে যে হয়ে থাকে চুপ ॥
যেই ধূর্তগণ করে নারীকে বঞ্চনা।
অভিসারে তাদের কাছে জাগে কামনা ॥
তাদেরকে সুখ দেয় এই অন্ধকার।
কার কাছে কখনো বা করো অভিসার ॥
অতএব কুঞ্জে যেতে করো না গো দেরি।
কৃষ্ণের নিকটে যেতে দম্ভ দাও ছাড়ি ॥
এ-কথা শুনেই রাধা করে অভিসার।
তাতে আলোকিত হলো ঘন অন্ধকার ॥
মঞ্জরির সঙ্গে এলো তমালের দল।
তা থেকে নীলবর্ণ অন্ধকার সকল ॥
তোর উঁচু স্তন আর নিতম্ব যে ভারী।
সে জন্যে চলতে না পারিস তাড়াতাড়ি ॥
এমনই অঙ্গ দেখে কৃষ্ণ বহুদিন।
হৃদয়ে রাখতে তোকে হলো সে-সঙিন ॥
কামদেব থেকে সে যে, হইলো উত্তপ্ত।
বহুশ্রমে এই তাপে হয়ে গেলো রপ্ত ॥
অমৃতে ভরা দেখি রাধার ওষ্ঠাধর।
মনে হয়, পান করে পূর্ণ দামোদর ॥
অকস্মাৎ কৃষ্ণবক্ষে তুমি ছুটে যাও।
হাসিতে অমৃতভরে সুখী করে দাও ॥
যদি বলো, অভিপ্রায় – জানি না কিছুই।
কী করে কৃষ্ণের কোলে আমি গিয়ে শুই ॥
মনে পড়ে, এই লজ্জা যখন আমার।
সাবধানে সমাধান করি সব তার ॥
তোমার আবেশটুকু যেন মহাধন।
তাকে কেন দাসসম করেছে সে জন ॥
তোমার পাদপদ্ম ছুঁয়েছে যেই জন।
এইজনে কেন দাও মান অকারণ ॥
এসব সখির কথা শুনে সেই রাধা।
উচ্ছ্বসিত প্রাণে তবু পেলো খুব বাধা ॥
তবুও বিধ্বস্ত মনে আনন্দিত হয়ে।
মণিসম নূপুর তার দু’পায়ে দিয়ে ॥
গোবিন্দে দেখতে যায় সরল দু’চোখে।
প্রবেশ করলো রাধিকা নিকুঞ্জলোকে ॥
গীত
রাগ : বরাড়ী। তাল : যতি
শ্রীরাধিকা মুগ্ধ হয়ে হরিরূপে হাসে।
সহাস্য মুখে কামকেলি চেয়ে কৃষ্ণ রতির লোভে ভাসে ॥
বৃকভানুকন্যা দেখে বিকশিত হয় শ্রীকৃষ্ণের অঙ্গ।
যেন চাঁদ দেখে স্তনে লাগলো শিহরণ, তুঙ্গ-তরঙ্গ ॥
সুদীর্ঘ মুক্তার হার নির্মল, বাঁধা রাধার ঊরুমাঝে।
যেন যমুনাজলের পর সুললিত ঢেউ শুধু বাজে ॥
শ্যামলবরণ কোমরে তাহার হলুদবরণ বাস।
যেন নীল পদ্মফুল বাঁধন দিলো রাধার কটিপাশ ॥
সহজ কটাক্ষে মনোহরণ করে সে সূর্যরতিরাগে।
প্রস্ফুটিত পদ্মে পাখি গুনগুন করে জলাশয়ে জাগে ॥
মুখপদ্মসম যেন ফুল নেয় সূর্যের উজ্জ্বল শোভা।
ঈষৎ হাস্যে ঠোঁট উল্লাস করে রাধারতিরসলোভা ॥
জলস্রোতে যেন চাঁদের আলো, তেমনি ফুল খোঁপামাঝে।
অন্ধকার হতে দারুণ ঝলকে দেহে কাঁটা দেয় লাজে ॥
মণির কিরণ দেয় উজ্জ্বল দেহে দেয় সুন্দর সাজ।
জয়দেবের ভণিতায় সুন্দরী ত্যাগ করো সব লাজ।
গিরিধারিসাথে রতিকেলি করো, কুঞ্জনিকেতন-মাঝ ॥
ইদানীং সেই প্রিয়াকে দেখার সময়।
আনন্দে রাধার চোখ হয় অশ্রুময় ॥
চোখের কোনা থেকে দৃষ্টিটাকে সরিয়ে।
কানেও পৌঁছে যায় নৈঃশব্দ্যতে হারিয়ে ॥
পারে না যেতে, কেবল অশ্রু ঝরে পড়ে।
সেই অশ্রু চোখ বেয়ে ঝরো ঝরো ঝরে ॥
খুব বেশি পরিশ্রমে শুধু ঘাম ঝরে।
কৃষ্ণকে দেখে সুখে চোখে জল পড়ে ॥
সেইখানে বাসগৃহ ফুলেল শয্যায়।
কৃষ্ণ চুপে বসে আছে রতির আশায় ॥
শয্যার কাছে গিয়ে রাধার অভিসার।
প্রিয় মুখ দেখে রাধা চায় বারবার ॥
রাধার সঙ্গেতে ছিলো যেই সখিগণ।
কৌতুকে রাধাকে নিয়ে হাসে সারাক্ষণ ॥
কান চুলকানো-ছলে হাসি বন্ধ করে।
বাইরে বের হয় তারা, থাকে না ঘরে ॥
খুশি হয়ে রাধা একা থাকে কুঞ্জঘরে।
অপলক কৃষ্ণমুখে চেয়ে মন ভরে ॥
চোখের ইশারাবাণ করে সে নিক্ষেপ।
অমন সুন্দর মুখে বিলায় প্রলেপ ॥
দেখে রাধা সে-মুখ, রতি করতে চায়।
লজ্জাযুক্ত রাধিকার লজ্জা দূরে যায় ॥
দ্বাদশ সর্গ
সুপ্রীতপীতাম্বর
চলে গেলো সখিরা, রাধা আধো শরমে।
পল্লব-শেষে চায়, প্রীতি তার মরমে ॥
লালসা মনে তার যেন ফুটে উঠিল।
হরি দেখে হাসিমুখে প্রিয়াকে কহিল ॥
গীতি
রাগ : বিভাস তাল : একতাল
কচি পাতা-শেষে পদ্মসম পা দুখানি
ও রাধিকা, কেন এনে পাতো না?
দেখে কোমল পা মন মানে পরাজয়
মেনে নিয়ে হবে যতো যাতনা।
ধুয়া – ক্ষণতরে গো,
অনুগত নারায়ণে করো হে ভজনা
ওগো রাধিকা।
এই দুটি হাত দিয়ে তোমার চরণ ছুঁয়ে
দূর করি সব পথশ্রান্তি
কিছুটা সময় তুমি পায়ের নূপর করো
শুয়ে আমি কতো পাবো শান্তি।
ওই রত্নরাজি থেকে গলিত অমৃতসম
ঝরুক কথা প্রীতি ছড়িয়ে
বিরহের মতো বাধা দিতেছে বসন তার
দেবো তা স্তন হতে সরিয়ে।
দুর্লভ ঐ স্তন, তুমুল আনন্দে
আলিঙ্গনে পেতে চায়, ধনী
এসো স্তনভারে দাও পিষে বুক
মনতাপ ঘুচাও এখনি।
তোমার ওষ্ঠধার দাও দাসে, ভামিনী
এ মৃতদেহে নব প্রাণ পাইবো।
তোমাতে মগ্ন এই মন-প্রাণ কামিনী
এমন জ্বালা আর কতো সইবো।
চন্দ্রমুখী, মুখর করো মোর রসনা
তোমার পদ অনুসারী সে
শ্রুতি বিফল হয় ললনার কান্নায়
ক্লান্তি দূর হবে তার শেষে।
আকুল করলে মোরে বিফলে রাগ করিয়া
লাজে চোখ তাই আধো মিলিত
আর কেন রাখো বাধা, আমারে ভালোবাসিয়া
চিত্তসুখ করো তুমি নিশ্চিত।
হরির আনন্দভরা গাথা কবি লিখিল
রসিকের চিত্ত অতি প্রীতিরসে ভরিল।
গাঢ় আলিঙ্গনে প্রীত দেহ হলো রোমাঞ্চিত
চলে এলো রাধা তার বুকে বুক বাঁধিতে।
কোলে নিতে এ কী বাধা বুজে আসে আঁখিপাতা
প্রিয়ামুখ দেখবার সুখটুকু সাধিতে।
দুঠোঁটের সুধাপানে রঙ্গকথা বাধা আনে
সুখখেলা শেষ হয় আনন্দের কারণে।
বাধাগুলো সুখ আনে মৈথুনের অবসানে
বাধা ছাড়া সুখ হয় জীবনে ও মরণে?
রাধিকা হাতের ডোরে হরিকে বাঁধিয়া জোরে
স্তনভারে কৃষ্ণের পিষলেন বক্ষ।
হাত দিয়ে চুল টেনে ঠোঁটেতে দুঠোঁট এনে
রমণেতে সুধাপান কৃষ্ণের লক্ষ্য।
কৃষ্ণঅঙ্গে সুখ দিয়ে সুন্দর জঘন নিয়ে
ঘন ঘন ঘাই মেরে করে রতি-দ্বন্দ্ব।
কামের কী নারী-গতি আঘাতেই সুখ অতি
পেলেন হরি তাতে পরম আনন্দ।
হরিকে করতে জয় আজ রতি-যুদ্ধে।
উঠলেন রাধা তার বক্ষের ঊর্ধ্বে।
ঘন ঘন আঘাতে নিতম্ব হয় শান্ত।
কাঁপে বুক, হাত দুটি শিথিল ও ক্লান্ত।
বুজে এলো চোখ, মেয়ে রতি করে তবু।
পুরুষের কাজে নারী পটু হয় কভু?৩
আঁখি-পাতা পড়ে ভেঙে গালও উঠলো রেঙে
কাতর চিৎকারে হেলে পড়া দুঠোঁটে
দাঁতের শুভ্র ফুল যেন হেসে ওঠে।
শ্বাসে কাঁপে দুই স্তন হরির বুকের ধন
শিহরিত সুখে রাধা ঐ পড়ে এলায়ে।
চুম্বন করে হরি মুখ তার হেলায়ে।৪
নখাঘাতে স্তন হয় পাটল বরণ
ঘুমচোখে ফিকে বর্ণ হইলো নয়ন।
ধোয়া হয় নাই ঠোঁট, ত্রস্ত চুল তার।
সরে গেছে মালা, কোমরের অলংকার।
সকালে দেখিবামাত্র এই পঞ্চশর।
বিঁধলো সে বাণ এসে হরির অন্তর।৫
শিথিল চুলের গুচ্ছ, এলানো যে কেশ;
সাদা ঘামের ফোঁটা, ঝলসে তার গালে।
চুমুতে দুঠোঁটে ক্ষত, ক্লান্ত অনুজ্জ্বল;
স্খলিত অলংকার কোমরেরই তলে।
মর্দিত স্তনের রূপ মøান করে হার
স্তন ও নিতম্ব ঢেকে করে;
চায় সুন্দরী রাধা লজ্জায় বারবার
এই চিন্তা কৃষ্ণের অন্তরে।
এই চিন্তা হরিপ্রাণে, রাধা থাকে ক্লান্তা;
মাধব তখন ডাকে আদরে শ্রীকান্তা।
গীতি
রাগ : রামকিরি। তাল : যতি
ওগো যদুনন্দন সুশীতল চন্দন
মেশাও দু’স্তন আমার বুকের সঙ্গে
মৃগমদে চিহ্নিত স্তন করো উন্নত
পল্লব সংযুক্ত হবে মঙ্গলের অঙ্গে।
ধুয়া – বনে পাই অনঙ্গ প্রীতিও বিবিধ
যদুর ছেলেকে বলে রাধিকা;
মৌমাছির গুঞ্জন দুই চোখে অঞ্জন
চুম্বনে মুছে গেছে কতোবার
স্বামী-রতি তিরসম আহা, কী যে মনোরম
উজ্জ্বল কাজলে ভুষা করো তার।
হরিণের মতো দৃষ্টি চোখে ঢেউ হয় সৃষ্টি
কামরস হোক শ্রুতিমূলে;
মনে এই সাধ করি আজ তুমি ওহে হরি
সাজিয়ে দাও গো তারে দুলে।
নির্মল ফুলেরা মোর মুখে মৌমাছির ঘোর
এলোমেলো চুল তার ভাসছে;
সরিয়ে সে ফুল হরি বেঁধে দাও খোঁপা করি’
তা না হলে সখিগণ হাসছে।
কপাল হইতে মুছি শ্রমজল আঁকো, শুচি
ললিত তিলক অতি যতনে;
সোনার চাঁদেতে যেন তিলক শোভা পায় যেন
ফুটবে অপূর্ব রূপ বদনে।
চুলগুলো গেছে খুলে বাঁধিয়া সাজাও ফুল
হরিণীপাখাসম চুল, জানো তো?
কামদেব-পাখা ধরি চমরটি অনুকরি
চিকুরের চুল বাঁধো প্রাণও তো।
আমার সরস ঘন জঘনেতে আভরণ
দাও মণি-মেখলে ও বসনে;
হাতিরন্ধ্রে রতি করি তেমনি সুন্দর হরি
জয়দেব বলে পাপ-নাশনে।
রাধার কথায় প্রীত হইলো হরির চিত
করলেন তৈয়ারি যতনে;
স্তনে ও গালের মাঝে এঁকে পাতা স্নিগ্ধ সাজে
কাঞ্চি আঁকলেন ঘন জঘনে।
বলয় পরিয়ে হাতে দিলেন নূপুর পা’তে
ফুলমালা খোঁপার সে-বাঁধনে।
অনন্ত-নাগের ফণা তৈরি করে বিছানার পর,
হরির শরীরী আলো ফণিমণি আলোতে ভাস্বর।
শত শত চোখ যেন লক্ষ্মীরূপ দেখিবার তরে,
অনন্ত শয্যায় বিশ্ব, রক্ষা করো প্রভু তুমি নরে।
‘ক্ষীরের সাগরতীরে হে সুন্দরী হয়ে স্বয়ংবর
মোরে দিলে বরমাল্য, হরির কী ব্যথিত অন্তর।
করলেন বিষপান’, লক্ষ্মী তাহা শুনে হরিমুখে,
এনে করে পূর্বকথা, আনমনা হইলো সে-সুখে।
অবসর পেয়ে হরি সরাইয়া বুকের আঁচল,
দেখলেন স্তনপদ্ম, তিনি সবে করেন মঙ্গল।
শিখিতে পণ্ডিতগণ নৃত্য-গীত-কলা,
কাব্যশিল্প, আদিরস, ভক্তিও অচলা
হরিভক্ত সুধী জয়দেব বিরচিত
গীতগোবিন্দ গ্রন্থটি পড়বে নিশ্চিত।
শৃঙ্গাররসযুক্ত এই কবিতাগুচ্ছ,
থাকতে জগৎমাঝে
রসেতে কি মধু আছে
শর্করা, কাঁকর, দ্রাক্ষা তো তুচ্ছ।
জলসম ক্ষীর যতো
অমৃত হইলো হতো
সকলকে নিয়ে কাঁদো হাহা রব করিয়া;
হে বকুল, রসাতলে যাও তুমি চলিয়া।
পিতা মোর ভোজদেব, বামা যে মা আমার;
জয়দেব নাম মোর, কবি এ-কবিতার।
আমার বন্ধু পরাশর গায় মৃদুমন্দে;
গীতগোবিন্দ গীত হয় গীতমধুছন্দে।
ইতি সুপ্রীতিপীতাম্বর (সমাপ্ত)
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.