মধ্যরাতের এমন আকাশ আগে কখনো দেখিনি। কেমন যেন তারকাখচিত হিংস্র আবর্ত নিয়ে কেঁপে কেঁপে দুলছে। একে তো মধ্যরাতের নীরবতা, তার ওপর দৃষ্টিবিভ্রম। সময়ের কি নিদারুণ উপহাস! স্থির মাংসপিণ্ডের মতো তাকিয়ে তাকিয়ে মনে হলো, আমার চিন্তার জগতে গড়িয়ে পড়ছে অজস্র রক্তফোঁটা। নিশ্বাস বন্ধ করে প্রাণপণ শক্তিতে যেন দৌড়াচ্ছি। কোথায়? জানি না।
একবিংশ শতাব্দীতে অনেকেই হয়তো নিজেদের গন্তব্য জানে না। জানলেও বোঝে না, অনন্ত পথপরিক্রমায় আত্মমগ্ন সময়ের গ্লানি নিয়ে শুধুই পথ ভাঙছে। ওই যে অদূরে ধূলিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে একটি কুকুর, সে মনুষ্যবিহীন রাস্তার স্বস্তিটুকু বুঝেছে বলেই হয়তো এমনটি করছে। হাতের সামনে একটি ঢিল পেলে ওর দিকে ছুড়ে মারতাম। মনুষ্য শক্তির অন্যায্য হিংস্রতার বাইরে আমি তো আর মহামানব নই। মোবাইল বাজছে। এত রাতে কার কল, ধরার ইচ্ছে জাগল না মোটেও, কেমন একটা মনোপীড়ন নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি।
অথচ দিনের বেলাটা কাটে পুরো অন্যরকম। ব্যতিব্যস্ততার ভেতর সূর্যালোকের সঙ্গে নানারকম শব্দসমষ্টি, অন্যান্য মানুষের মতোই ব্যাকরণহীন জীবন টলতে থাকে কখনো ব্যবসায়, কখনো লেনাদেনা কিংবা ভোগবিলাসের আধুনিকতায়। মধ্যাহ্নে, ডাইনিংয়ে খেতে বসলে স্ত্রী আর সেরকম ভ্রু কুঁচকে তাকায় না। সে জানে, আমি খেতে বসলে গোগ্রাসে গিলি। কোনো কাজেই স্থিরতা নেই, কারণ পরের সময়টাকে মনে হয় আরো মূল্যবান। কখনো যদি অযৌক্তিক ধাঁধা আমার আড়ম্বরপূর্ণ ক্রমঃপ্রসারিত গতিকে থামিয়ে দেয়! তবু একদিন গলায় খাবার আটকে খ্যাঁকখ্যাঁক করতেই স্ত্রী ক্ষণিক বিচলিত হয়ে গ্লাসটা এগিয়ে স্বাভাবিকভাবেই বলে, তোমার থামা উচিত।
গলায় পানির শেষটুকু গিলে বোকার মতো বলি, হুম?
তোমার বোঝা উচিত।
কী?
আর কিছু বলে না। নীরবে মাথা গুঁজে খেতে থাকে। আহা, অনুচ্চারিত মুখের কী গভীর দ্যোতনা! মন একটু মোচড় দিলেও ফের শুরু করি নিজের অনুভবের সঙ্গে নিজের বোঝাপড়া। উঁচু উঁচু ভবনের আড়ালে সূর্যটা হেলে পড়লে চরম বিরক্তি লাগে। কেমন যেন প্রাণহীন অসাড় লাগে। স্ত্রীর বিদ্বেষপ্রসূত কথাগুলি দু-কানে ঝড় তোলে তখন, কিছুটা ক্ষেপে গিয়ে বলেছিল, তুমি আমার অপ্রাপ্তির দহন। বর নামের নপুংসক ছাড়া কিছুই নও।
কেন?
নিজেকেই প্রশ্ন করো।
করেছি।
উত্তর পেলে?
নাহ্।
ওর অবজ্ঞাসূচক নীরব হাসির সঙ্গে আমার ভাবজাগতিক হৃদয় স্পষ্টতা হারায়, সতেজতা হারায়, কেমন একটা মগজপ্রসূত অন্ধকার এসে দৃষ্টির সীমানাকে সংকুচিত করে। ক্রমঃসঞ্চারিত আবেগে কেবলই ছন্দ ভাঙার খেলা। কেমন একটা দৈন্যে নিঃশেষ হতে হতে মনে হয়, হয়তো এখানেই প্রাণের স্পন্দন, নইলে বৈষয়িক পরিবেশে এত কৌতূহলদীপ্ত সত্যাসত্যের খেলা কেন? ভাবছি, কাল সকালেই নির্জন কোনো শূন্যভূমিতে পা বাড়াব। যেখানে পিছুটানহীন ঐশ্বরিক আলোয় স্বর্ণকিরণ খেলা করে।
ফের মোবাইল বাজে। মনিটরে তাকিয়ে চমকে উঠি। স্ত্রী বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। ক্ষীণ স্বরে বলি, হ্যালো।
বউ কই?
ঘুমুচ্ছে।
একটু আসতে পারবে?
কোথায়?
সিটি হসপিটাল।
সে কী, কেন?
বর স্ট্রোক করেছে, এই শহরে তো তুমি ছাড়া নির্ভর করার মতো কেউ নেই।
চুপ করে থাকি, ঘরের নীলচে আলোয় চোখের চারপাশটা কাঁপছে। রাত প্রায় ২টায় এ কেমন অনাকাক্সিক্ষত আহ্বান বুঝতে পারি না। মানবিক প্রশ্নে মন সটান, রাস্তার নীরবতা জামার আস্তিন ধরে যেন টানছে। বহ্নি ইতস্তত মায়াজাগা কণ্ঠে ফের বলে, আসতে পারবে?
হ্যাঁ আসছি।
স্ত্রীকে কি ডেকে তুলব, কারচুপি কিংবা কৌশল দুটোই কেমন পাপবিদ্ধ রুচিহীন প্রশ্নবাণে নিজেকে জর্জরিত করছে। দ্রুত টি-শার্টের সঙ্গে প্যান্টটা কোমর পর্যন্ত তুলে বলি, শুনছ –
সব শুনেছি।
হুম!
ঘাড় নিচু করে কয়েক সেকেন্ডের অন্তর্ঘাত। একটু বিষময় হলেও মুহূর্তেই আত্মগত বোধের বিপরীত দরজা প্রসারিত করে বলি, যাচ্ছি তবে।
আমিও কি আসব?
সরল প্রশ্ন, ভেতরে ধাক্কা লাগে। তীর্যক বাঁকা ঠোঁট নাকি সত্যি সত্যি মনের সরলতা? আমতা আমতা করে
বলি, না না, তুমি ঘুমুচ্ছ, ঘুমাও। আমি এখনই ফিরব।
পরে ফিরলেও সমস্যা নেই।
কী?
এবার ও চিৎ হয়ে শুয়ে বেশ মলিন স্বরে বলে, একটা স্ট্রোকের ধাক্কা, কখন কী হয় বলা তো যায় না। ওকে একটা ইনসিকিউরড সিচুয়েশনে রেখে দ্রুত আসার দরকার কী।
ভুল শুনছি না তো, সামনে-পেছনে ঘরের আবদ্ধ বাতাসের ঘূর্ণি শুরু হলো কি? দেয়ালগুলি ভূকম্পন ছাড়াই যেন খসে পড়ছে। তাবৎ বিশ্বাস থেকে একটি সূত্রই চাই, যা বোধগম্যহীন সুন্দর। গোপন সম্পর্কের পুলক থেকে অনেকেই আড়ালে ফিসফিস করে কথা বলে, মস্তি মস্তি ঢং-এ গা নাচায়, যা আমার কাছে বরাবরই সুখের কদর্য মেকি রূপ ছাড়া কিছুই মনে হয় না। তবু নিজের কাছে নিজের খটকা লাগে। স্ত্রীর কাছে সম্পর্কের গোপনীয়তায় নিজেকে পাপবিদ্ধ অথর্ব ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবেই বলি, শোনো, বহ্নির বিষয়টা তোমাকে বলা হয়নি কারণ –
ও ইশারায় থামিয়ে দেয়। মুখে মুচকি হাসি। খোঁচা কিংবা উপহাসের চেয়ে বরং একটি সরল মন কিংবা একটি সরল সমীকরণ যেন দেখতে পাচ্ছি ওর ঠোঁটে। এত কাঠখোট্টা স্বল্পভাষী গম্ভীর বউ অকস্মাৎ যেন অবেলায় সূর্যোদয় ঘটাচ্ছে। ফের মোবাইল বাজে। ওর দিকে তাকাতেই বললো, যাও।
রাস্তায় নেমে দাঁড়ালাম। মাঝরাতে আবাসিক পল্লির রাস্তাগুলিতে প্রকট নীরবতা। একটা সিএনজি অটোরিকশার জন্য হেঁটে হেঁটে তিন রাস্তার মোড়ে যেতে হবে। তবু এত রাতে পাওয়া যায় কি না –
ক্রমশ এগোচ্ছি, দুটো বিপরীতমুখী সম্পর্কের ভাবনায় পা কেমন শিথিল হয়ে আসে। স্ত্রীর আচমকা এমন মানবিক আচরণ রহস্যজনিত ধোঁয়াশার মতো মনে হলেও রাস্তায় নেমে পিছুটানের অবকাশ নেই। সিএনজিচালিত অটোরিকশা পাওয়া যাচ্ছে না। বেচারি বহ্নি অচেনা শহরে হাসপাতালের বারান্দায় ধুঁকে ধুঁকে অপেক্ষা করছে। মোবাইল করে অবাক হলাম, মোবাইল বন্ধ।
একজন চা-বিক্রেতাকে পাওয়া গেল। ফ্লাস্ক নিয়ে কাছে এসে বলল, খাইবেন?
দে।
পনেরো টাকা।
তবু দে।
ময়মনসিংহ রোডের ট্রাকগুলি তিন রাস্তার মোড়ে এসে বাঁক নিচ্ছে। ট্রাফিককে মনে হলো ঘুমে কাতর, তবু সটান হয়ে বাঁশি ফুঁকছে। চায়ে চুমুক দিয়ে ফের মোবাইল করলাম। কেন যে এরকম সিচুয়েশনে মোবাইল বন্ধ করে রেখেছে –
বহ্নির অসহায় মুখটা কল্পজগতে ভীষণ টোকা দিচ্ছে। সেই যে প্রপেনসিটিতে প্রথম পরিচয়, এরপর কথা কিংবা দেখার পর্ব অনেকটাই বিস্তৃত, যদিও গোপন। প্রপেনসিটির ভেতর ক্যাফেতে প্রায়ই আনমনে বসে কফি খেতাম। চাকরির সূত্রে ওর বর এখানে বদলি হয়ে আসে। ইচ্ছের বিপরীতে অন্যরকম প্রাপ্তির দোলায় দেহ-মনে সঞ্চারিত কি যে উদ্দীপক দহন! তবু একদিন বহ্নিকে বলেছি, আমাদের হাত সম্ভবত অনির্দিষ্টের দিকে।
বহ্নি দুষ্টুমি করে বলেছে, কী জানি, আমার হাত তো দেখছি গুটানো।
এরপর দৃষ্টিবদলের ঘোর থেকে সহসাই সচকিত হয়ে, দমবন্ধ হতাশার একক অনুভূতির ভেতর দেখতে পাই স্ত্রীর মুখ। যেন আমাদের দুজনার মাঝে বহমান স্রোতে সাঁতরে, অতিশয় ক্ষোভে জলভাঙা শব্দ তুলছে। একদিকে বহ্নি, অন্যদিকে স্ত্রী, আবেগের খরস্রোতা জলে মনকে একবার জাগিয়ে তুলছে আবার ডোবাচ্ছে।
চড়া ভাড়ায় একটা সিএনজিচালিত অটোরিকশা পাওয়া গেল। দ্রুত হাসপাতালের গেট পেরিয়ে ইমার্জেন্সি ইউনিটে খবর নিতেই বলল, পেশেন্ট তো একটু আগে মারা গেছে।
এখন কোথায়?
লাশ নিয়ে চলে গেছে।
ওহ্।
একটু শীত-শীত, তবু ঘাড় কপাল ঘামছে। হাত নিশপিশ করছে। তখনই কল এলো বহ্নির, বলল, তুমি কি এসেছিলে?
আমি হসপিটালেই দাঁড়িয়ে আছি।
কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে, চলে যাও। আমি অ্যাম্বুলেন্সে করে ওকে দেশের বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি।
আমিও কি আসব?
আমরা তো অনেকটা পথ চলে এসেছি।
ওহ্।
হাসপাতাল থেকে নিজের বাসা চার কিলোর মতো পথ। পা ফেলতে গিয়ে মনে হলো, আমি যেন কেমন একটা গন্তব্য দেখতে পাচ্ছি, যা দুর্বোধ্য। শেষরাতের হিম-হিম অনুভূতি নিয়ে বেঁচে থাকার সেই দুর্বোধ্য গন্তব্যে দেখা যাচ্ছে অজস্র ফাটল, যেখানে সম্পর্কজনিত অজস্র প্রশ্নের জটিল আবর্তে শরীর টলছে। দেহকেন্দ্রিক ভাবজগৎ মোচড় দিয়ে, প্রকৃতির নির্জনতা শব্দসুরের ফোঁপানিতে কতদূর কতপথ অতিক্রম করবে বুঝি না।
মনে পড়ে ছেলেবেলায় গ্রামে, ভাব কিংবা ভক্তের রসিক নীলচান মামার মুখ। বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও তামাকে গড়গড় টান দিয়ে ভরাট গলায় একমনে গাইত, ‘মনের সুধা যায় না ভুলা আসে রসিকজন … ভুল করলে পাইবা না তার সাক্ষাৎ দর্শন।’
বাড়ির বউ-ঝিরা দাঁড়িয়ে তার পাগলামো ঢংয়ে কণ্ঠের গান উপভোগ করত। আমিও নীলচান মামুর সামনে বসে পড়তাম। তামাকপোড়া গন্ধ নাকে এলেও বাচ্চাবয়সের কৌতূহলে মাথা ঝুঁকিয়ে ঝুঁকিয়ে বলতাম, তুমি অনেক বড় বাউল মামু। সে ঝট করে চোখ রাঙিয়ে বলত, বাউল কী রে ব্যাটা, ক বাউলের বাপ।
বলেই বুড়োটে গলায় গানের লম্বা টান দিয়ে শরীরে কয়েকটা ঝাঁকুনি দিত। মেটে চুলগুলি মনে হতো আঠার মতো জট লেগে আছে। নীলচান মামু কখনো সংসার করেনি। তবে সংসারপ্রেমী ছিল। বউ-ঝিদের দেখেই গলা হেঁকে বলত, ‘মা গো মা, ভুলে গা তো ঝুলে গা। সংসার সাজাও তুমি ভক্তিরস দিয়া, আমি অধম নীলচান মর্ম বুঝলাম না।’
ভাবনা চটকে অকস্মাৎ স্ত্রীর কল এলো, কী অবস্থা এখন?
কার?
কার মানে, কার জন্যে গিয়েছ?
ওহ বহ্নির বর, মারা গেছে।
কিছুক্ষণ চুপ করে বলল, তুমি কী করছ?
কিছু না।
ফের কিছুক্ষণ চুপ করে কেটে দেয়। কানের সামনে টুংটাং ঘণ্টা বাজিয়ে একজন রিকশাচালক বলল, সাব যাইবেননি?
না।
ও চলে যাওয়ার পর এলোমেলোভাবে পা ফেলতে থাকি। একদিকে মৃত বরের পাশে বহ্নির কাঁদো-কাঁদো গম্ভীর মুখ, আবার সংসারে স্ত্রীর দায়িত্বপূর্ণ একনিষ্ঠতা। কেমন একটা অযাচিত ছকে আটকে, হয়তো আত্মোপলব্ধি নয়তো মনভোলা সম্পর্কের সর্বনাশ যেন অন্তঃকরণকে গ্রাস করছে। স্ত্রীর আড়ালে বহ্নি, আবার বহ্নির বাহুলগ্ন আত্মতুষ্টির মেকি সুখে, সময়ের গ্যাপে গ্যাপে উজবুক হয়ে ঠকিয়েছি স্ত্রীকে, এমনকি বহ্নিকেও। চোরা ফাঁদের অতলে হাত বাড়িয়ে আর যাই হোক আমি তো নীলচান মামুর মতো সরল সাহসী হতে পারিনি। অনাথের মতো হাতের ইশারায় ছক বদল করছি। একটি থেকে অন্যরকম, আবার আরেকটি, সঞ্চারিত মনের শক্তিতে একটি আদর্শিক পথ পাওয়া আদৌ কি সম্ভব! বুঝি না – ফের মনে পড়ে নীলচান মামুর মুখ। জীবনের শেষ সময়টা ছিল চরম তাচ্ছিল্যে ভরা। শুকনো লিকলিকে দেহটা নিয়ে মাটি-ফাটা দুপুরে একমুঠো তামাকের জন্য বাজারে যাওয়ার পথে দেখা হলে উচ্চৈঃস্বরে বলতাম, মামু!
সেও ক্ষীণ স্বস্তিতে পাল্টা রস লাগিয়ে বলত, মা-মু।
গান করেন একটা।
এতদিনে গান গাওয়ার সক্ষমতা হারিয়ে ফেললেও দুষ্টুমি করে বলত, কী গান, ভাবের গান?
আপনের ইচ্ছা।
অক্ষম কণ্ঠস্বর নিয়ে ক্ষীণ হাসত। হাসিটাও ছিল রুগ্ণ। ভাঙা দাঁতের সঙ্গে কুঞ্চিত মাঢ়ির যেন অপ্রতুল বোঝাপড়া, ভীষণ কান্না পেতো আমার। মুখ লুকিয়ে দ্রুত চলে আসতাম।
স্ত্রীর কল এলো, তুমি কি বাসায় আসছ?
কেন?
আমার ভীষণ ভয় করছে।
ভয়!
হ্যাঁ, সত্যি, শরীর কেমন শিউরে শিউরে যাচ্ছে। দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছি, এসো না প্লিজ – আসছি।
নিকটের মসজিদ থেকে ফজরের আজান শুরু হলো। কেমন একটা গতি এসে যায়। সকালে হাঁটাচলা করা লোকগুলির মতো আমিও দ্রুত পা ফেলতে থাকি। বহ্নিকে আরেকটিবার কল করব কি? এখন ওর যা মানসিক অবস্থা, কল না করাই ভালো। আকস্মিক বজ্রপাতের মতো কার কখন যে কী হয়ে যায় – শেষ দেখাটি ছিল একটু নাটকীয়তায় ভরা। দুজন দুপাশে দীর্ঘক্ষণ চুপ করে ছিলাম। সাদা সাদা মেঘ-ভাসা আকাশ থেকে যেন গড়িয়ে পড়ছিল রাশি-শূন্যতা। মেহগনির পাতাগুলি নড়ছিল মৃদুমন্দ হাওয়ায়। দুজন দুপাশে থাকলেও দূরতম কোনো ইচ্ছের অবাধ্যতায় টের পাচ্ছিলাম, আমরা যেনবা স্তব্ধ পৌরাণিক গল্পের চরিত্র। উভয়ের আদর্শিক টান আছে বলেই নীরবতায় চলছে শিল্প-শিল্প টানাপড়েন। বয়স বেড়েছে বলেই হয়তো বয়সের সীমানায় দুটি নিথর প্রাণ সময়ের যোগ-বিয়োগে দেখতে পাচ্ছে অজস্র গরমিল।
একসময় ও কাছে এসে বলে, কী হয়েছে …
বুঝি না …
শোনামাত্র ও ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে।
কাঁদছ কেন?
জানি না!
বাসার কাছে আসতেই ঘোর কেটে যায়। মোবাইল ঘেঁটে বহ্নির নম্বরটা কয়েকবার দেখে ডিলিট করে দিলাম। ঘরের খোলা দরজায় ঠেস দিয়ে স্ত্রী উদাসভাবে পুবের আকাশটার দিকে তাকিয়ে আছে। নিশ্চল আনমনা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকি।
ভীষণ ভালো লাগছে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.