নদী কারো নয়

\ ২৭ \   মকবুল হোসেনের ঘুম ভেঙে যায়। রাত এখন কত? নির্ণয় তার নাই। কোথায় সে আছে তারও কোনো নির্ণয় নাই। প্রথমে সে মনে করে চাটগাঁয়ে বোধহয় আছে, সার্কিট হাউসের কামরায়, চাটগাঁয় সে এসেছে একটা সাহিত্যসভায় যোগ দিতে। পরমুহূর্তেই ঘোরটা ভেঙে যায় – এই চাটগাঁ থেকে ফিরেই তো সে বুয়ার কাছে জানতে পেয়েছিলো তার মেয়ে প্রিয়লি ঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে। কিন্তু এই স্মৃতি প্রত্যাবর্তনে সে চমকে ওঠে না, ঘুমের ভেতরে ঝুলে পড়ে, যেন একটা বাদুড় উড়তে উড়তে এখন আবার বটগাছের ডালে স্থির হয়ে ঝুলে আছে। তারপর আবার তার চোখ খুলে যায়, তার তখন মনে হয় ঢাকায় তার নিজের ঘরেই সে আছে, কিন্তু না, টিমেটিমে আলোতেও জানালার পর্দাটি দেখে সে আবার চমকে ওঠে – এত রুচিহীন রং আর জংলাপাতার নকশায় তো তার ঘরের পর্দাটি নয়। অচিরে সে উঠে বসে।  বিছানার পাশেই হাতঘড়িটা খুলে রাখা, তুলে নিয়ে সময়টা দেখার বদলে সে অন্ধকারের ভেতরে চোখটাকে থিতু করে জানালার বাইরে তাকিয়ে রাতের গভীরতা বোঝার চেষ্টা করে। রাত সাঁ-সাঁ করে বয়ে চলেছে আর একটা সিঁ-সিঁ শব্দ হচ্ছে, চরাচরের ওপর দিয়ে বহে যাচ্ছে। কিন্তু কান পাততেই শব্দটা থেমে যায়। তারপর সামান্য বিরতি দিয়ে শব্দটা টিট্ টিট্ ধ্বনি করে ওঠে। তবে কি সেই পাখি? পাখি! পাখিটি! আবার এত রাতে!  মকবুল হোসেন জলেশ্বরী এসে পৌঁছুবার পর প্রথম ভোরে একটি পাখির ডাক শুনে ওঠে, এমন এক পাখি যার সঙ্গে অর্থাৎ কিনা যার ডাকশব্দের সঙ্গে তার পূর্বপরিচয় নাই। ভোরের নিস্তব্ধতা ভেঙে স্বর্গীয় একটি সুর, অমৃতের সূচিমুখ একটি রেখা, প্রবাহিত হতে থাকে। যেন উজ্জ্বল সোনালি রঙের চিকন একটি রেখা, জীবন্ত, চঞ্চল, ভোরের ধূসরতার বুক চিরে এগিয়ে চলেছে।… ইউটি টিট্ টিট্… হু হু পিইট্… পিট্ পিট্ সিউটি… গিইএ… পিট্!… তারপর ছোট্ট একটা শিস্, আবার প্রথম থেকে… ইউটি টিট্ টিট্। মনে পড়ে মকবুলের, সে ঘর থেকে বেরিয়ে ঝোপের ভেতরে চোখ পাঠিয়ে পাখিটিকে খুঁজেছিলো। তারপর সে দেখতে পায় পাখিটিকে – অচেনা সেই পাখি, সে নিরিখ করে দেখে, পাখির পালকের লাল রংটিকে তার মনে হয় আলতার জলে সিঁদুর গুলিয়ে পাখিটির বুকে বিধাতা মাখিয়ে দিয়েছেন। পাখিটির কপাল, কাঁধ ও গলা কুচকুচে কালো। ডানা গুটিয়ে আছে। ডানায় কালো রং। মকবুলের দেখাকালেই পাখিটি ডানা বিস্তার করে ঈষৎ। ডানার কয়েকটিতে তখন সিঁদুরের টকটকে লাল ম্যাজিকের মতো ফুটে ওঠে। এই নেই, এই আছে। টকটকে লাল বুকটা কী এক আবেগে ওঠানামা করছে। গলা ফুলিয়েছে, অথচ কোনো শব্দ করছে না। যেন এক গায়ক। গানের স্বরগ্রাম মনে মনে শানিয়ে নিচ্ছে। তারপর একটি হলুদ পাখি উড়ে এসে লাল পাখিটির পাশে বসে। কামরাঙার ডালে ভোরের প্রথম রোদ, রোদের ফালি, যেন সোনার তক্তা সটান বিছিয়ে আছে। পাখিটি যে উড়ে এসে বসে, কয়েকটি মুহূর্ত মাত্র, ওর ভেতরেই তার উড়ন্ত তলভাগের চকচকে হলুদ রংটি চোখে পড়ে। বুকে, পেটে, গলায়, লেজে। এমন সে থুপথুপে রং, স্পর্শ করলেই আঙুলের ডগায় হলুদ লেগে যাবে। মকবুল উঠেছে আধকোশা নদীর পাড়ে সাইদুর রহমানের বাংলাবাড়িতে। বাড়ির কেয়ারটেকার ততক্ষণে সাড়া পেয়ে বেরিয়ে এসেছে, মকবুলের চোখ অনুসরণ করে সেও বিস্ময়াপন্ন চোখে তাকিয়ে থাকে পাখি দুটির দিকে, তারপর বলে – তাজ্জব!  দ্যাখেন, দ্যাখেন, সচরাচর না দেখা যায়, ওই দ্যাখেন তার মাদিও আসি গেইছে। জোড়ার টানে জোড়া গঠন হয়। আর মানুষের বেলায় কী হয়? জোড়া ভাঙিয়া পড়ে। রাতের এই গভীরকালে মকবুলের কানে ঠাস্ ঠাস্ করে কথাগুলো আছড়ে পড়ে – জোড়া ভাঙিয়া যায়! কথাটা মকবুলকে বুকের ভেতরে চিরে যায়। ছুরির ধারে ত্বক চিরে দিলেই চেরা জায়গাটা চোখের পলকে রক্তলাল রেখায় পরিণত হয়। মকবুলের চেতনা-ত্বকে কেয়ারটেকারের পর্যবেক্ষণটি – মানুষের জোড়া ভেঙে যায় – রক্তলাল রেখার জন্ম দিতে না দিতেই মিলিয়ে যায়। কারণ, সে নিজের বিষয়ে এত অধিক ভাবিত হবার অবকাশ এখন চায় না। সে বলে, তাহলে মাদির রংটা হয় হলুদ। লাল পাখির জোড়া! – হয়, হয়, লালের জোড়া হলুদ, হলুদের জোড়া লাল, দুয়ে মিলি স্বামী ইস্ত্রি। পাশাপাশি বসিলে য্যান তারা লালহলুদ ফুল ঝলমল ঝলমল করে। – হাঁ, কেয়ারটেকার সাহেব, এ-পাখি আমি আগে কখনো দেখি নাই। কী যেন নাম বললেন? – সাতসয়ালি! – মানে, এরা সওয়াল করে? সাতটা সওয়াল? তাই সাতসওয়ালি? – কেয়ারটেকার থতমত খেয়ে বলে, হ্যাঁ, হবার পারে! এত মুঁই ভাবিয়া দ্যাঁখো নাই। – মকবুল পাখি দুটির দিকে চোখ ফেরায়। এ কি! তার হৃদয় বসে যায়। সেতারের তার ছিঁড়ে যায়। পাখি দুটি নেই। পাখি দুটি ডালে নেই। পাখি দুটি আর কোথাও নেই। পাখি দুটি আকাশেও নেই। পাখি দুটি বুঝি কখনোই এখানে ছিলোই না। সবুজ পাতাগুলো হিলহিল করছে। কামরাঙার ডালে ভোরের আলো তেজি হয়ে সোনার কলমে সবুজ লিখতে শুরু করেছে। পাতায় পাতায় আলোর ছন্দ মেলাতে শুরু করেছে। মকবুল বলে, সাতসওয়ালি!  যে-পাখি সাতটা সওয়াল করে! সাতটি প্রশ্ন! কেয়ারটেকার তখন বলে, কী জানি! এত হামার জানা নাই। তবে সাতসওয়ালিও ঠিক ইয়ার নাম নয়, সাধারণভাবে মানুষজনে এই পাখিকে সহেলি পাখি কয়।  সহেলি! আকস্মিক এই বিদ্যুৎস্পর্শের জন্যে তৈরি ছিলো না মকবুল। এখন রাতের গভীর থেকে আবার সিঁ-সিঁ শব্দটি প্রবাহিত হতে থাকে, যেন একটি করাত চিরে যেতে থাকে কম্বলপুরু রাতের অন্ধকার। সে একটা প্রবল ধাক্কায় গড়িয়ে পড়ে যায়। বিকট রকমে বিস্মিত হয়। অথবা হয় না। কারণ, সে দেখেছে আকস্মিক যোগাযোগটি তার জীবনে বহুবার ঘটেছে। সহেলির সঙ্গে বিচ্ছেদটাও আকস্মিক যোগাযোগেরই। কদিন থেকেই সহেলি তার স্মৃতিপটে  বারবার ফিরে আসছে, সহেলি তো তাকে ফেলে চলে যায় নিউজিল্যান্ডে আর সে যে সহেলিকে মনের মধ্যে হত্যা করে চিরতরে ফেলে রাখবার জন্যে নাসরিনকে খুঁজে নেয়, সেই নাসরিনের কথা – নাসরিন এখন মৃত – একবারও মনে পড়ছে না। কিংবা একবার মাত্র। একটিবার নাসরিনের নামটা যেন শুকনো পাতার মতো উড়তে উড়তে পায়ের কাছে খসে পড়েছে। নাসরিন, যার সঙ্গে তার বিবাহিত জীবন। যে-নাসরিন তার মেয়ে প্রিয়লি চাঁদকে গর্ভে ধরেছে। সেই নাসরিন! আহ্ নাসরিন! নাসরিনকেও সে কবর দিয়ে এসেছে। সত্যিকার কবর। মাটি খুঁড়ে। মাটিচাপা দিয়ে। কবরের বুকে কাঠগোলাপের চারা লাগিয়ে। এখন সেই কাঠগোলাপ গাছটিতে ফুল ধরেছে। জলেশ্বরীতে আসবার আগে সে দেখে এসেছে। শাদা পুরু পাপড়ি, তার গোলাপি পাড়। ভেতরটায় হলুদের ছোপ। আর সুগন্ধ। কী গাঢ় সুগন্ধ। নাসরিন কী গাঢ় সুগন্ধই না বিস্তার করে ছিলো তার জীবনে। সেই সুগন্ধে তার চারপাশে যে থেকে থেকেই গলিত গন্ধ উঠতো, চাপা পড়ে যায়। সে ভুলে যায়। কিন্তু ইতিহাস ভোলে না।  ইতিহাস! রাতের গভীরে একটানা সিঁ-সিঁ শব্দ। যেন কেউ কাঁদছে! দেশভাগ! সাতচল্লিশ সাল! চোদ্দই আগস্ট! একটা দেশ এভাবে দুই খন্ড হয়ে গেলো ইংরেজের লাল একটা পেনসিলের দাগে? মাথার ভেতরে সিঁ-সিঁ শব্দটা প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে পড়ে। শব্দটা কে করে? কান্নার মতো – কে কাঁদে? যেন এক নারী। মকবুলেরই কি মা? ঔপন্যাসিক মকবুল হোসেনের কানের ভেতরে মায়ের কান্নাজড়ানো কণ্ঠস্বর ফুঁপিয়ে ওঠে – মকবুল, তোর বাবা এই বর্ডার কখনোই মেনে নিতে পারেন নাই। একই ধুলোমাটি। একই ঘাস। ঘাস চিরে দাগ পড়ে গেছে। মানুষের পায়ে পায়ে। ফিতের মতো বিছিয়ে আছে। কোথায় এর ছিন্নতা! ওই! ওই তো! হাঁটুসমান উঁচু পিলার। ছোট্ট পিরামিড যেন। খেলনার পিরামিড। মাথাটা ভোঁতা। ওপরে লোহার চাকতি বসানো। চাকতির ওপরটা যোগচিহ্নের মতো অগভীর রেখায় খোদিত। যোগচিহ্নের খাড়া মাথায় লেখা ইন্ডিয়া, নিচের দিকে পাক – অর্থাৎ পাকিস্তান। আর যোগচিহ্নটার ভূমি-সমান্তরাল খাদে সুতো ধরে পরের পিলারে টেনে ধরলেই হয়ে গেলো সীমান্তরেখা। নিষেধের অদৃশ্য বেড়া। নিষেধ! অপর দেশ! একটি যৌবন অতিক্রম করে এসেছে, মকবুল এই দেশভাগের কান্নাটিকে অনুভব যে করে না তা নয়, তার হৃদয় ঝুরে ঝুরে পড়ে, কিন্তু মানুষের সাধ্য কী ছিলো দেশভাগ রহিত করা? যারা পারতো, যারা তখন ভারতবাসীর ভাগ্যবিধাতা ছিলো – সেই জিন্নাহ সেই জওহরলাল সেই গান্ধী – তারা তাদের চোখের সমুখেই দেশটিকে ভাগ হতে দিয়েছে, মানুষের শরীরের ছুরির আঘাত রক্ত ঝরায়, দেশ যখন ভাগ হয় তখন মাটি থেকে ঝলকে ঝলকে রক্ত ঝরে নাই! ঝরেছিলো মানুষেরই – পাঞ্জাবে, পাঞ্জাবের পাকিস্তান খন্ড থেকে ট্রেনের পর ট্রেনভর্তি হিন্দুর লাশ এসেছিলো ভারতে, আর পাঞ্জাবের ভারত খন্ড থেকে ট্রেনের পর ট্রেন মুসলমানের লাশ এসেছিলো পাকিস্তানে। এ না হয় মকবুল বোঝে, কিন্তু আজো মকবুল বুঝে ওঠে নাই কেন নারীর-ভালোবাসা-না-পাওয়া রক্ত না ঝরিয়ে দিগন্তধবনিত একটা হাহাকার হয়ে যায়। খ্যাতি কিংবা অর্থ ভোলাতে পারে না প্রেমের বিচ্ছেদ-কষ্ট। ধূপের মতো ধিকিধিকি জ্বলে। একটি উপন্যাসই তো মকবুল হোসেন লিখেছিলো ‘ধিকি ধিকি জ্বলে’ নামে। সেই তখন, যখন প্রিয়লি আর তার কাছে নেই। মেয়েকে মন থেকে মুছে ফেলবার জন্যেই কি মকবুলের ওই উপন্যাস লেখা প্রেমিকাকে নিয়ে? সহেলিকে সে মনে করে ভোলে নাই, আসলেই কিন্তু ভুলেছে। সহেলিকে তার এখন মনে পড়ে, যেন তারই উপন্যাসের একটি চরিত্র, তারই লেখা, তারই সৃজন; অতএব তার জন্যে মনে কোনো ব্যক্তিগত ব্যথা কষ্ট নাই। আর, প্রিয়লিকে সে মনে করেছিলো ভুলেছে, কিন্তু ভোলে নাই। প্রিয়লি তার শিল্প থেকে ভূমিষ্ঠ হয় নাই। সে তার রক্তেরই লোহিত কণিকার। রক্তের টান বলে গ্রামীণ যে কথা আছে, সত্যসত্যই তা প্রাচীনের গল্পকথা নয়। যতদিন  আকাশে চাঁদ আছে, পৃথিবীর জলভাগ সেই চাঁদের টানে জোয়ারে স্ফীত হবেই, ভাটায় নেমে যাবেই। প্রিয়লিও ভুলে থাকতে পারে নাই। সমূহ তো এই, জলেশ্ব^রী আসবার ঠিক আগেই প্রিয়লির ফোন এসেছিলো। হঠাৎ ফোন। তখন মকবুলের রক্তের ভেতরে সে কী লোহিত উচ্ছ্বাস! তারপর সারাপথ। জলেশ্বরীর দিকে দীর্ঘ পথ। তার জন্মগ্রামের দিকে পথ। তার পিতার জন্ম যৌবন কর্মজীবন এবং মৃত্যুর সেই ভূগোলবিন্দুর দিকে ঢাকা থেকে ট্রেন। ফেরিতে যমুনা পার। যমুনার রুপালি চেহারা। কিন্তু শীর্ণ। অনাহারী যুবতীর মতো ক্ষীণ, কিন্তু একদা পূর্ণিমার স্মৃতিদ্যুতিময় এখনো। প্রিয়লির ফোন পেয়ে যেন একটা সোনার দরোজা খুলে গিয়েছিলো অকস্মাৎ, কিন্তু প্রিয়লি তার কথা শেষ করতে পারে নাই, ফোন তার হাত থেকে নিশ্চয় কেড়ে নেয় সেই যার সঙ্গে সে বাবার বাড়ি ছেড়ে অজানায় চলে গেছে। ফোনটা কেটে যাবার সঙ্গে সঙ্গে খুলে যাওয়া সেই সোনার দরোজাটি ঠাস্ করে বন্ধ হয়ে যায়। ঠাস্ ঠাস্ শব্দটা আর থামে না। খট্ খট্। রেলের শব্দ। খট্ খট্ খট্ খট্। এনজিনের শব্দ। সারাপথ। ঢাকা থেকে জলেশ্বরী। জলেশ্বরীতে পাখির সেই ডাক। সহেলি পাখি। ইউটি টিট্ টিট্। সাতসওয়ালি পাখি। পিট্ পিট্ সিউটি পিট্! সেই সাতটি প্রশ্ন কী হতে পারে? রাতের গভীর থেকে জেগে উঠে মকবুল হোসেন বাংলাবাড়ির বারান্দায় এসে দাঁড়ায়।  নাসরিনকে নিয়ে সে যে একবার জলেশ্বরীতে এসেছিলো, তখন ছিলো শীত। তীব্র শীত। নিপুণ যোদ্ধার মতো তলোয়ারের সাঁই-সাঁই শব্দ তুলে শীতবিক্রম কেটে চলেছে জলেশ্বরীর শরীর। বরফের কুচি পড়ছে রক্তের বদলে। রাতে আগুন জ্বালতে হয়েছিলো ঘরে। – আহ, নাসরিন, অত কাছে না, শাড়িতে আগুন ধরে যাবে। নাসরিন শোনে না। – তুমি কি মরতে চাও?  – নাসরিন হাসে। – হাসছো কেন? – একটা কথা তোমাকে জিগ্যেস করবো। – করো। – এখন না। রাতে। – বেশ, রাতেই জিগ্যেস কোরো। এখন আগুন থেকে সরে বোসো তো। নইলে আমি আগুন নিভিয়ে দেবো। নাসরিন হঠাৎ বলেছিলো, মরতে আমার খুব ইচ্ছে করে! কথাটা ব্যাখ্যা করে নাই সে। শীত তার যায় নাই। এত তীব্র শীতের সঙ্গে নাসরিনের পরিচয় নাই। মকবুলের আছে, তার জন্ম তো জলেশ্বরীতেই। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়ে ঠান্ডা ইয়োরোপের দেশ থেকে গোরা সোলজারের দল যে জলেশ্বরীতে এসেছিলো, ঈশ্বর বুঝি শ্বেতাঙ্গদের একটু বেশিই পছন্দ করেন, তিনি সেই বছরগুলোতে শীতও খুব জাঁকিয়ে নামিয়ে জলেশ্বরীতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন যাতে গোরাদের কষ্ট না হয় যে বিদেশে অচিন আবহাওয়ায় পড়ে আছি! যুদ্ধটা থেমে যায়, গোরারা চোখের পলকে উধাও হয়ে যায়, মানুষেরা অন্নাভাবের ভেতরে খাবি খায়, নদীর বাঁক বদলায়, নদী পাড় ভাঙতে থাকে, ভারত-পাকিস্তান হয়, সীমান্ত একবার এইদিকে পড়ে, আবার ওই দিকে, তারপর কোন দিকে? – মানুষেরা আর ঠাহর করতে পারে না। ঘাসের বুকে, ধানের ক্ষেতে, নদীর পানিতে, রাষ্ট্রসীমান্তের দাগ ফোটে না। একই সূর্য দুইদিকে। একই নদী দুই দেশে। নদী তবু এক দেশ থেকে আরেক দেশে প্রবেশ করতে পায়, সূর্যের আলো একই সঙ্গে উভয় দেশে। নাসরিনকে নিয়ে বর্ডার পর্যন্ত গিয়েছিলো মকবুল। নাসরিন কখনো সীমান্তরেখা দেখে নাই। সীমান্তে সেই হরিষাল গ্রামে মাজারে আসে মানুষ। ভারত থেকেও সীমান্ত পেরিয়ে আসে। রাতের অন্ধকারে আসে। দিনের আলোতেও ঝাঁপাঝাঁপি করে আসে। বিশেষ করে ওরসের সময়। জীবিত সৈনিকের চেয়ে মৃত পীর কারো কারো কাছে শক্তিমান। তখন কী একটা বোঝাপড়া হয় দুই দেশের সীমান্তপ্রহরীদের ভেতরে, তারা ওরসের জন্যে পাহারা শিথিল করে। এই মাজারে মানত করলে বন্ধ্যা নারী সন্তানবতী হয় বলে প্রচার আছে। মকবুল বলে, এখানের বটগাছে পীরের নামে লাল সুতা বাঁধার দরকার নাই তোমার, তুমি দুই সন্তানের জননী। কিন্তু মকবুল জানে নাই, জানা তার উচিত ছিলো লেখক হিসেবে, যে, বন্ধ্যত্ব কেবল গর্ভের নয়, চিন্তার ক্ষেত্রেও আছে। কাজেই সে ধারণা করে নাই যে, তার ওপরে নাসরিনের ভরসা নাই। সীমান্তের সেই মাজারে কুটির ভাড়া পাওয়া যায়। আগত মানুষেরা সেখানে রাত্রিযাপন করে। শনে ছাওয়া ঘর। বাঁশের বেড়া। মাটির মেঝে। শীতের হাওয়া হুহু করে ঢোকে। লাল শালুর নেংটি পরা, দড়ি পাকানো শরীর, নেশায় রক্তচক্ষু, মাজারের এক সেবক মানুষ ঘরের ভেতরে লোহার কড়াইয়ে আগুন এনে রেখে যায়। হাত তাপাতে তাপাতে নাসরিন বলে, একটা কথার সত্যি জবাব দিবা। – হাঁ, দেবো। কও। – আমি মরে গেলে কি তুমি আবার বিবাহ করবা? – আরে! কী বলো তুমি! – চমকাইও না, সত্য কও। করবা! – না। – গাও ছুঁয়ে কও। হা হা করে হেসে ওঠে মকবুল। – হাসো ক্যান? – শোনো তবে, রবীন্দ্রনাথের এক গল্পে আছে – চাঁদের আলোয় ফুটফুট করে পৃথিবী, জমিদারবাবুকে প্রশ্ন করে তার স্ত্রী, একদিন, সেই কথা চাঁদের আলোর ভেতরে, অন্য এক নারীর শরীরে তখন জমিদারবাবু, পদ্মার চরে, মাঝরাতে, জোছনার রাতে, মাথার ওপরে একসার পাখি উড়ে যায়, মশারির চালে জোছনা পড়ে, ঘড়ির টকটক শব্দ হয়, ও কে, ও কে, ও কে, ঘড়ির কাঁটা কংকালের আঙুলের মতো তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে ইঙ্গিত করে, একদিন প্রথম স্ত্রী, রোগে তার বাঁচার আশা নাই, জিগ্যাস করেছিলো, তুমি কি আবার বিবাহ করবে? কিংবা জিগ্যাসা হয়তো করে নাই। গল্পে হয়তো নাই। নাকি আমিই ভুলে যাচ্ছি? মুমূর্ষু নারীর, খুব ভালো বাসলে নারীর ওই রকমই তো জিগ্যাস করার কথা স্বামীকে। নাসরিন, তুমিও জিগ্যাস করলে। না, আমি আর বিয়ে করবো না। কথাটা কি সত্য বলেছিলো মকবুল হোসেন? নাসরিনের মৃত্যুর পর সে কি আর কোনো নারীদেহ ছুঁয়ে দেখে নাই? ঔপন্যাসিক মকবুল হোসেন স্মরণ করে ওঠে নাসরিনের মৃত্যুর মাস ছয়েক পরেই যারা তার শয্যায় আসে। অথবা সে আনে। সেইসকল নারী আর সেইসকল বিকেল কিংবা সবে সন্ধ্যা অতিক্রান্ত সেইসকল রাত যখন সে বস্ত্র খুলে সঙ্গত হয়েছে কোনো অভিনেত্রী অথবা অভিনয়ে আসতে ইচ্ছুক তরুণী কিংবা তারই উপন্যাস-মোহিত কোনো পাঠিকার সঙ্গে। অনেকের সঙ্গেই তো! একবার তো তারই মেয়ে প্রিয়লির এক বান্ধবীর সঙ্গে। সেই রমণ এখনো মনে পড়লে তাকে ভাঙচুর করে ছাড়ে। মেয়েটির সেই প্রথম। আর, প্রবেশপথেই সেটি টের পেয়ে তখনই তার ক্ষীণ অনুতাপ হয়েছিলো। অনুতাপটি এখনো মাঝেমাঝেই মকবুল হোসেনকে খোঁচায়। কিন্তু মেয়েটির চেহারা তার মনে পড়ে না আর। আর কখনো দেখাও হয় নাই তার সঙ্গে। প্রিয়লি কি জেনে গিয়েছিলো? আর, তাই কি সে বাবার ওপর ঘৃণায় বাড়ি ছেড়ে চলে যায়? প্রিয়লির বান্ধবী মেয়েটি ঘোর অনিচ্ছুক ছিলো, আবার কৌতূহলও ছিলো তার। মেয়েদের ওই বয়সে এমন দোটান হয়েই থাকে। ওই দোটান নিয়েই তো কয়েকটি উপন্যাসও লিখে ফেলেছে মকবুল হোসেন, নিজের জীবনে প্রত্যক্ষ করবার আগেই। সে ছিলো একাকী ফ্ল্যাটে। প্রিয়লি গিয়েছিলো ধানমন্ডিতে তার মামাতো বোনের সঙ্গে রাতে থাকবে বলে। আর মেয়েটি এসেছিলো প্রিয়লিরই খোঁজে। এসে একেবারে হাতে যেন স্বর্গ পায়। অমন বিখ্যাত একজন লেখককে একা পাওয়া! এমন সুযোগ কেউ ছাড়ে? – আপনি গল্প লেখেন কী করে? – কেন, কলম দিয়ে! – যাহ্। এটা একটা উত্তর! আপনি আমাকে খুব ছোট্ট ভাবছেন! – কী, তুমি ছোট নও? – নইই তো!। – প্রমাণ চাই। – প্রমাণ? – এই যেমন ধরো, তুমি কাউকে চুমো খেয়েছো? বলো! তাহলেই বুঝবো বড় হয়েছো। সেই এক কথা থেকে কথা গড়ালো কোথায়! এখন বড় ধিক্কার হয়। মকবুল হোসেনের মাথায় কী ভূত চেপেছিলো তখন? মেয়েটিকে সে সুরা পান করিয়েছিলো। – তুমি যদি ছোট্টটি নও, তাহলে এক চুমুক তো খেতে পারবেই। আর ওতেই সহজসাধ্য হয়েছিলো সব। মাতাল মেয়েটিকে কোলে তুলে বিছানায় গিয়েছিলো সে। কিন্তু তারপর, মকবুল হোসেন উঠে যখন গেলাশে চুমুক দিচ্ছে নিক্ষেপের প্রশান্তিতে, হঠাৎ তখন মেয়েটির কী কান্না। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে। সদ্য এলোমেলো বিছানার ওপরে। কোলের ভেতরে মাথা গুটিয়ে। মাতৃগর্ভে ভ্রূণের মতো। অবিকল তখন যেন প্রিয়লি। খেদে বিদীর্ণ হয়ে গিয়েছিলো মকবুল হোসেন। তারপর মেয়েটি হঠাৎ করেই ছাড়া পাওয়া স্প্রিংয়ের মতো লাফিয়ে উঠে দড়াম করে দরোজা খুলে চলে গিয়েছিলো। মকবুল পেছন পেছন গিয়েছিলো। না, মেয়েটি লিফ্টের জন্যে অপেক্ষা করে নাই। দৌড়ে নেমে গিয়েছিলো। ঈশ্বর কতটাই না দয়ালু। মেয়েটি আর কখনোই তার পর থেকে মকবুলের ফ্ল্যাটে আসে নাই। বড় উৎকণ্ঠিত ছিলো সে কয়েকটা সপ্তাহ। প্রিয়লির মুখের দিকে তাকাতে পারে নাই। অথবা পেরেছিলো, কিন্তু সপাং চাবুক পিঠের ওপর পড়েছে, মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সে। তারপর অকস্মাৎ একদিন দেখে, সে ভুলে গিয়েছে। মেয়েটির চেহারা পর্যন্ত। তখন প্রিয়লির অ্যালবাম তালাশ করে দেখেছে। দেখে কী লাভ হতো সে জানে না। আবার কী আকাঙ্ক্ষা হতো তার? আরো একবার মেয়েটিকে সে কল্পনায় রমণ করে উঠতো?  না, কোনো ছবিতেই মেয়েটি ছিলো না। অথবা ছিলো, মকবুলের চোখে ধরা পড়ে নাই। কেবল দুধ মেশানো একটা ঘ্রাণ সে স্মরণ করতে পারে মেয়েটির। নাসরিনকে সে যে কথা দিয়েছিলো তার মৃত্যুর পর আবার বিয়ে করবে না, সেই সত্যটাকে ধরে রাখতেই কি তার সঙ্গত-নারীদের সে ভুলে যেতে থাকে একের পর এক? যেন, এসব কিছুই নয়! যেন, নাসরিনকে দেওয়া তার বাক্য আছে এখনো অটুট! এবং এসবের পরেও! এবং পরেও, এই এখন অবধি!     না, তাদের কারো চেহারাই আলাদা করে আর মনে পড়ে না তার। ভবিষ্যতেও পড়বে না। তার চেতনাসূত্র এমনই। এমনকি কী কী সুধাবাক্য রচনা করে সে ক্ষণিকের সঙ্গিনীকে তুষ্ট করে তার সঙ্গে সঙ্গত হয়েছিলো নিরালা ঘরে, তাও মনে পড়ে না। মনেও সে রাখে না। কেবল ছায়া-ছায়া অভিভাবটি রয়ে যায় স্মৃতিপটে। অস্পষ্ট সব মূর্তি। ভোরের কিংবা সন্ধ্যার ভেতরে দেখা দেখা যেন ছবি। দূর থেকে। যেন এ সকলের সঙ্গে তার কোনো ব্যক্তিগত বিচরণ ছিলো না। তবে, হ্যাঁ তবে, আকাঙ্ক্ষাটি সে ভোলে নাই। মাংসের ক্ষুধা নিবৃত্তিটির সুখটুকু মন থেকে তার মুছে যায় নাই। তারই তাড়নায় সে এখন তাপিয়ে ওঠে। তার শরীরের ভেতরে সে সঞ্চরণ অনুভব করে। নারীমাংস – হ্যাঁ মাংসই বটে – তাকে আলোড়িত করতে থাকে। সে যদি এখন অবকাশ পেতো, তাহলে দেখতে পেতো, নাসরিনের স্মৃতি এখন তার কাছে দেহমাংসের নয়, বরং সেইসব মুহূর্তের যখন তারা বন্ধুর মতো পরস্পরের সঙ্গে গ্রথিত ও দিবস পালনরত। নাসরিন তার স্মৃতিতে কোনো অর্থেই দেহ নয়, যে-দেহ থেকে মনির ও প্রিয়লি ভূমিষ্ঠ হয় তারই ঔরসে। নাসরিন এখন এক উপস্থিতি। ছায়ার মতো। অবিরাম অনুসরণ যে করে। অনুক্ষণ যে লগ্ন হয়ে থাকে প্রিয় কবিতার পঙ্ক্তির মতো। মৃত্যুর মুখে দাঁড়ায়ে বলিব তুমি আছো আমি আছি। রবীন্দ্রনাথের মতো এই একটি পঙ্ক্তিও যদি সে লিখতে পারতো। নাসরিন চলে গেছে, কিন্তু তাকে এমত খেদযুক্ত করে রেখে গেছে যে, তার কলমে এত প্রতিভা নাই। বিবাহিত জীবন নিয়ে সে একটি উপন্যাস রচনার প্রেরণা মাঝেমাঝেই পায়, স্ত্রী সাহচর্যের অনুপুঙ্খ সে ধরে রাখতে চায় শব্দে শব্দে, কিন্তু প্রেরণাটি প্রেরণাই থেকে যায়। দিনের পর দিন অতিক্রান্ত হয়। বইয়ের পর বই সে লিখে ওঠে। নাসরিনকে নিয়ে লেখা তার হয়ে ওঠে না। খেদ হয়। তখন সে নিজেকে চোখ ঠেরে বোঝায়, লিখলে সে বড় ন্যাকা উপন্যাস হতো! এই ঝোঁকে এমনও পরিবর্তন আসে তার লেখায় যে, অতঃপর আর কোনো উপন্যাসেই বিবাহিত নারী চরিত্র লিখে উঠতে পারে না। তবে, পরিবর্তনের আরো একটি ঘটে, মাঝেমাঝেই তার উপন্যাসে প্রিয়লির বান্ধবী সেই মেয়েটি, ভ্রূণের আকারে গোল হয়ে ফুঁপিয়ে ওঠা মেয়েটি অতর্কিতে হানা দিতে থাকে। মনোরঞ্জক উপন্যাসে নায়িকারা কখনো কাঁদে না, তা তো নয়। তখন মেয়েটির কথা মনে পড়ে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে মকবুল হোসেন নদীর দিকে তাকায়, তাকিয়ে থাকে, গভীর রাতের নির্জনতার ভারে পৃথিবী এখন অচেনা, আধকোশার বুক মসৃণ কাচের মতো। আকাশে চাঁদ নাই, কিন্তু লক্ষ তারা সেখানে। তারই কি আলো? নাকি অলৌকিক এই বিভা,  যে-বিভা যৌবনে নারীর মুখে দেখা যায়, অন্ধকারেও মুখের ছবি ফুটে থাকে। নদী নিশ্চয় নারীর মতো। অন্ধকারেও নারীর মুখ ভুল হয় না। অন্ধকারেও নারীর মুখ কাচের পিঠে আঁকা ছবির মতো ফুটে ওঠে। তবে, এই দেখার জ্যোতি যে দেখে তার চোখের তারায় থাকে। চোখের আলোয় দেখা বোধহয় একেই বলে! আধকোশা নদীর দিকে মকবুল হোসেন চোখের আলো ফেলে তাকিয়ে থাকে অনেকটা সময়। হঠাৎ আবার সিঁ-সিঁ শব্দটি হতে থাকে। নদী বেগ ফিরে পায়। অন্ধকারে চ্ছলচ্ছল করে আধকোশা। নদীর মতো নারী। শুধু নারী কেন? নর নারী সবাই। মানুষমাত্রেই নদীর মতো। নদীর সঙ্গে মানুষের তুলনা করেছিলেন টলস্টয়। লিও টলস্টয়। আহ্, মকবুল, তুমি শুধু যুবক যুবতীর লাগে-ভাঙে টানে-ঠেলে প্রেমকাহিনী লিখেই জীবন কাটালে! জনপ্রিয়তার রথে চড়ে নিজের আত্মাটিকে সেই রথের চাকায় পিষে চলেছো হে! আত্মা এবং উচ্চাশা। যৌবনের সেই দিনগুলো। টলস্টয়ের মতো উপন্যাস লিখতে চেয়েছিলে। তাঁর পুনরুত্থান নামে উপন্যাসখানা কতবার না পড়েছ তুমি! সেখানেই তো আছে, মানুষ নদীর মতো। কোথাও নদী সংকীর্ণ, কোথাও সে দিগন্তবিস্তৃত। কখনো সে শীর্ণ, শুকিয়ে যাওয়া খাল। কখনো বা বর্ষায় ভৈরবীর মতো উদ্দাম উত্তাল। খলখল করে হেসে চলেছে দক্ষিণের দিকে। কখনো পাড় ভাঙছে। কখনো রচনা করছে চর, মানুষের জন্যে আবাদের জন্যে বসতের জন্যে নতুন জমি। রাতের অন্ধকারে আধকোশা দীপ্তিমান – নক্ষত্রের আলোয় কি মকবুলেরই চোখের আলোয়। মকবুলের হঠাৎ মনে পড়ে সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ্র কথা, তাঁর কাঁদো নদী কাঁদো উপন্যাসটির কথা – ওই উপন্যাসেই তো মকবুল পড়েছে – নদী কাঁদে। কান পাতলে শোনা যায়। এই সিঁ-সিঁ শব্দ তবে আধকোশারই কান্না। গভীর রাতে নদীই তবে কাঁদছে। (চলবে)