কলেজ স্কোয়ার। কলকাতা।
গোত্রহীন এক পান্থনিবাস।
আহার-ব্যবস্থাবিহীন।
অনুজ-কবি মানিকের তবু এই ঠাঁই পছন্দের। কারণটা ধরে ফজল খুশি। কর্মীদের আহারে শামিল হলে ঘরোয়া খাবার মেলে। থালি সত্তর টাকা। খুব একটা বেশি কী? খাবারে আমিষ ও সবজির অনুপাত প্রায় হাসপাতাল-ব্যবস্থাপনার মতো। সবচেয়ে ভালো ডিমের ব্যঞ্জন। একজোড়া ডিম। এ কি রাজকীয় থেকে কিছু কম হলো! অনেকদিন ফজল একটা থালির নির্দেশ দিয়ে ভাগ করে নৈশ আহার সমাপ্ত করত। হতো স্বাস্থ্যসম্মত। সেই সঙ্গে ইকোনমিক। এসি রুমে পঁয়ত্রিশ টাকায় ডিনার। ভাবা যায়! এই ভাবা যায় কথাটা মানিক প্রায়ই উচ্চারণ করে থাকে। ওর জবানিতে মনে মনে উচ্চারণ করে ফজল।
করোনা-যুগ-পূর্ব ঘটনা।
একরাতে ফজল মানিককে বলে, তোমাদের কলকাতার কোনো সুন্দরী কবিকে আমন্ত্রণ জানাতে পার না, ওদের চিন্তাভাবনা জানা যেত!
উত্তর না দিয়ে মানিক মোবাইল তুলে নেয়।
বোতাম টিপে চলে। রিচেবল নয়। জবাব। পাঁচজনের পর সে ব্যর্থ গলায়, একজনকেও পেলাম না।
তোমার মূল টার্গেট কে ছিল?
লীনা।
ও তো ভালো কবি। সুন্দরীও বটে।
খুবই সপ্রতিভ। তবে আমাদের ঘরানার নয়।
মানিক বাম-ঘরানার কবি।
জলপাইগুড়িতে আমাদের বেশকিছু পরিচিত কবি আছে।
তোমাদের ঘরানার?
হ্যাঁ। ওদের কাউকে আনতে গেলে ট্রেন ভাড়া লাগবে। কবিদের কড়ি কোথায়!
যথার্থ।
রবি ঠাকুর হবার ভাগ্য ক’জনের হয়!
কিন্তু রবি ঠাকুরকে বাম ঘরানার বাইরেও রাখতে পারবে না।
তা ঠিক বলেছেন। তিনি বাম-ডান সব গিলে খেয়েছেন। দ্বন্দ্ববাদ ছিল তাঁর মধ্যে প্রবল। কালের মন্দিরা যে সদাই বাজে, ডাইনে বাঁয়ে … বাধা দিলে বাধবে লড়াই, মরতে হবে … দরাজ গলায় গেয়ে চলে মানিক। সংগীতে ওর ভালো দখল। আর বাংলা সাহিত্যের বড় কবি প্রায় সবাই সংগীতজ্ঞ ছিলেন। তার ধারা কেউ কেউ বহন করেন।
যেমন তুমি একজন।
মানিকের স্মিত হাসি।
লজ্জা দেবেন না দাদা।
মাথায় কাপড় নেই তো!
মানিকের হাসি দীর্ঘায়িত।
আচ্ছা, লীনা তো সাধারণত ডাকনাম। আগে কিছু নিশ্চয় আছে?
হবে। আমার মনে পড়ছে না।
ডিমেনশিয়া ধরেনি তো!
হতেও পারে। বাড়ি বানাতে গিয়ে যে চাপ পড়েছে! বাপের নামও ভুলে যেতে পারি।
বাড়ির কথা বলতেই ফজলের খানাকুল শহরের খেলার ময়দানের দৃশ্য ভেসে ওঠে। ময়দানের দক্ষিণ সীমান্তে মানিকের তিনতলা। ছিমছাম বাড়ি। মনের মতো স্থাপত্য ও রং। ডানাকাটা পরী। গেটের পাশে হলুদ জবাটা সারাবছর উজ্জ্বল। তবে পূজারিদের আক্রমণবহির্ভূত নয়। গৃহিণীর ক্ষোভ। এমনিতে বেচারী বড় অসুখ সামলে উঠেছে।
পরদিন মানিক পুনরায় দাদার ফরমায়েশ খেটে চলে। আর সৌভাগ্য লীনাকে প্রাপ্তি।
দাদার সঙ্গে কথা বলো।
হ্যালো, লীনা পুরো নামটা বলো তো!
কেন! অংশটা কি খারাপ শোনাচ্ছে?
তা নয়।
বলব। পরে।
ঠিক আছে।
আমি কো দিন-পনেরো হলো ঢাকা ঘুরে এলাম। উঠেছিলাম রহিমদার বাসায়।
এবার ঢাকায় তোমার ফজলদার ওখানে আমন্ত্রণ থাকল।
তথাস্তু। চলে আসুন একদিন। আমি পাশেই থাকি। সূর্য সেন স্ট্রিট।
এ তো ঢিল ছোড়া দূরত্ব।
কত ভালো, উবার ধরতে হবে না।
দেখি। মনে হয় সম্ভব হবে না।
আজই আস্তানা ত্যাগপূর্বক স্বগ্রামযাত্রা। ওখানের কাজ সমাপ্ত করে সরাসরি নেতাজি সুভাষ।
ঠিক আছে কথা দিলাম।
লীনার সঙ্গে আর কথোপকথন হয় না ফজলের। পুরো নামটাও জানা হয়নি। অবশ্য রহিমের কাছ থেকে যে-কোনো সময় জেনে নিতে পারবে। তাড়া নেই।
প্রত্যাবর্তন।
ঢাকা।
লীনার কথা স্মরণ।
ট্যাবটা বেশ পুরনো। ভ্রাতুষ্পুত্রের অনুদান। দামি। কিন্তু সময় ক্ষয় করেছে সবকিছু। একটা ভয়েস মেসেজ পাঠায় ফজল : সবকিছু জানালাম। এবার তোমার অভিপ্রায় যুক্ত হবে কি না। তারিখটা ১৪ই ফেব্রুয়ারি ২০১৮ – সময় বেলা এগারোটা।
১৪ই ফেব্রুয়ারি একটা নতুন অ্যানড্রয়েড ফোন ক্রয়। তা-ও জানায়।
: নতুন মোবাইল ক্রয়। তথ্য দান। সংবাদ নিশ্চয় সংগৃহীত।
বছরখানেক পরের কথা।
রাত : ১১টা ৪৭ মি.।
এতদিন কথা বলেনি? ভাবতে থাকে ফজল। কেমন করে তিলোত্তমাকে বিস্মরিত! ফোন। রিচেবল নয়।
পরদিন উত্তর। লিখিত তথ্য –
: খাচ্ছিলাম। ভালো থাকুন। পরে কথা হবে।
কাল : ১৫ই ফেব্রুয়ারি ২০১৯, দুপুর ১-৩০ মিনিট।
চক্ষুগোচর হলে ফজল নোট করে – প্রায় ৩৭ মিনিট ধরে কথা। কী এত বলেছে? আজ স্মরণে আসে না।
এটা সে-দিনের ঘটনা।
এরপর ১৭ই ফেব্রুয়ারি। তখনো লীনার পুরো নাম অজানা। বেলা একটা থেকে পরপর তিনবার সংযোগচেষ্টা। ব্যর্থ।
ফজলের স্বর-সংযোগ।
হুম। তোমার অক্ষিগোলক খুব ডেঞ্জারাস। আবার দুটো তিল। নাকের নিচে আর চিবুকে। এক রেখায়। চক্ষু সঞ্চারণে সবল রেখা দ্রুতগতি। আসলে দুষ্টুমি আছে …
১৭ই ফেব্রুয়ারি পরপর চারবার যোগাযোগ করেও সংযোগ মেলেনি।
বাধ্য হয়ে ফজল আবার স্বর-সংযোগে।
লীনা। তুমি অকস্মাৎ লীন। কখনো কখনো সঙ্গ – আবার নিবাক-ব্রত।
একই তারিখ। রাত ১১টা ৫৭ মিনিট। বারোটা বাজবে। অধীর ফজল লীনাকে আবার স্বর-সংবাদ দানের প্রচেষ্টা।
বললে, হে মহীয়সী নারী, অনেক চেষ্টা করে হারি। পড়ি তোমার কবিতাখানি – ফেসবুকে। জানাব মতামত … হলো না হলো না সফল … বিফলতা … শুধুই বিফল …
যোগাযোগ লীনার ২৩শে ফেব্রুয়ারি।
প্রিন্টমাধ্যম : পরে কখনো কথা হবে আবারো। ঘনঘন কথা হলে কথা বলার টান কমে যায়। ভালো থাকবেন। আমার অকৃত্রিম ভালোবাসা ও শুভকামনা রইলো অফুরান …
২৪ ফেব্রুয়ারি প্রিন্টমাধ্যমে ফজল জানায় : তোমার কণ্ঠ বড় শুনতে ইচ্ছা হয় … বেশ কটা ফটো সেভ করেছি। আরামবাগ চলো … অনেক কথা আছে … এমন দূরে থেকো না।
২৭-২৮ ফেব্রুয়ারি গেল কল অ্যাগেইন বার্তায়।
শেষে ছাপা বার্তা : কালি ও কলমে লেখা দাও না কেন?
১৪ই মার্চ যোগাযোগ। কথন : দেখো দাদা, আমি বোহেমিয়ান মানুষ। কখন কী করি, কোথায় থাকি সবই অনিশ্চিত ও অনিয়ন্ত্রিত। কবে আসবেন কলকাতা? লিখে জানান। মেসেঞ্জারে কল রিসিভ করা যাচ্ছে না। একটা প্রবলেম হচ্ছে, লিখে জানান। কলকাতা এলে ফোন করবেন। আমার নম্বর : ৯৮ … এটাই আমার মোবাইল নম্বর।
ঠিক আছে। লিখিত পেলাম যখন আর তো ধাঁধা থাকল না।
ঠিক আছে দাদা। আপনাকে সময় দিতে না পারার জন্যে দুঃখিত।
সরিটা যন্ত্রের ঘাড়ে পড়ে, তোমার নয়।
কাব্যের লাইন হয়ে গেল যে!
কবির সঙ্গ।
নমস্কার।
নমস্কার।
১৪ এপ্রিল। বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ। যাকে আমি অনেকদিন ছেলেবেলায় একলা বৈশাখ বলতাম। আমার একমাত্র ভাগনা দেখি মামাকে অনুসরণ। শতভাগ। পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর রিপোর্ট হাতে মায়ের সামনে ছুটে গিয়ে বলে, মা, মা, আমি এক ম হয়েছি।
গলা ফাটিয়ে ফজলের হাস্য। তুই অমিত, সত্যি আমার ভাগ্না।
মামার ভাগ তো ভাগনা পাবেই, যোগ করে অমিতের মাতাজি।
দ্বৈতহাস্য।
শুধু অভাগীদার ভাগনা। হাসিতে ভাগ না নিয়ে মুখ কাঁচুমাঁচু।
সে হাস্যরসবঞ্চিত। ছোট হবার দায়।
অনেক ফটোগ্রাফ ফজলের মোবাইলে জমা হলো। কবিদের মধ্যে নজরকাড়া লীনা। ওর আদর্শ বাঙালি অবয়ব সবার মধ্যমণিই বটে।
ফজল লীনার প্রতিকৃতি বড় করে ফুলফ্রেমে ধরে একটা ছবি নেয়। আঁচিলগুলো খুবই জ্বলজ্বলে। অনেকক্ষণ চেয়ে থাকে। সময় যেন স্থির। মহাবিশ্ব স্থির নয়। তবু সময় কখনো কখনো স্থির হয়ে যায়। একদৃষ্টে অবলোকন। ভাবে, এমন মায়াময় যার মুখমণ্ডল তার গুণগ্রাহীর তো অভাব নেই, তবে কেন বোহেমিয়ানপনা! অঙ্কটা মেলাতে পারে না। মাথায় ঘুরপাক।
বাংলা পঞ্জিকা বাংলাদেশ আর পশ্চিমবাংলায় অনেক পর্বে দিনের তফাৎ ঘটে। হাসি পায় ফজলের। বেশ তো! বাংলা শুধু ভাগ হয়নি, হয়েছে পঞ্জিকাও। এ-এক মজার বিষয়। কেউ এটা নিয়ে তেমন নজর করে না। কোথাও আলোচনাও শোনেনি। হয়তো হয়, তার কর্ণগোচর হয়নি।
ঢাকায় পহেলা বৈশাখের আকর্ষণ ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। যার কর্মকাণ্ড তৈরি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে। রমনা পার্কের প্রান্তে মানুষ অপেক্ষা করে কখন শোভাযাত্রার দেখা পাবে। এটা না দেখা পর্যন্ত কারো তৃপ্তি নেই। পহেলা বৈশাখ পালনের মজাটাই সমাপ্ত হবে না। এরপর সারাদিন চারুকলার অঙ্গন লোকে লোকারণ্য। আর মাথায় ও গলায় ফুলের মালাশোভিত তরুণীদের মেলা। শিল্প-পসরা নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের স্টলেও উপচেপড়া ভিড়। এত সস্তায় ছবি ও অন্যান্য শিল্পকলার ছোট ছোট নমুনা রুচিকর মননের প্রতিফলনের প্রতিভূ। ঘর সাজাবার অনন্য উপাচার।
২৮শে এপ্রিল। লীনার ফটো-স্থানান্তর। এটা আমার ভবন। নাম : সাঁঝবাতি। তিনতলা। কাউকে ভাড়া দিইনি। হাত-পা ছড়িয়ে, পাঠাগার বানিয়ে … অতিথিশালা নিয়ে সবটাই ব্যবহার করি।
ফজল খুশি। অতিথিভবন আছে জেনে। যেহেতু সে বদলি দিতে পারবে তাই লোভের সংশয় পাত্তা পায় না। মনে মনে ভেবে চলে লীনার উপস্থিতি। কীভাবে সবকিছু সাজাবে। কী করবে। কোথায় কোথায় বেড়াবে। মাথায় সব চিন্তা গিজগিজ।
পরদিন রাতে তথ্য। বেশকিছু চিত্র প্রেরিত।
ফজল ট্যাব চিত্রায়িত করে। একটায় পাহাড়-শীর্ষে লীনা। দ্বিতীয়টি হেলানবৃক্ষে লীনার শায়িতচিত্র। পাশে তথ্য : কুমায়ুন।
চকিতে ফজলের মাথায় কুমায়ুনের মানুষখেকো বাঘ পুস্তকটি ভেসে ওঠে। জিম করবেটের লেখা। বেশ নামি বই।
সে কমেন্টে দুষ্টুমি করে লেখে : কুমায়ুনের বাঘিনি।
পরদিন উত্তর। বেশ দীর্ঘ। দাদা, আপনি যা বলেছেন তাতে অনেকে উৎসাহিত বোধ করে প্রচুর কমেন্ট পাঠাচ্ছে।
তার মনোকষ্টের আরো অনেক কথা।
ফজল উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকে। বুঝতে পারে আজকের মোবাইল ব্যবহারকারীদের কাছে জিম করবেট অচেনা। ম্যান ইটার্স অব কুমায়ুন হয়তো খুব কম লোকের পড়া। সে আসলে কাল-পাত্র না বুঝেই কমেন্ট করেছে। ভালো হয়নি। জবাব দিলে আরো ঘাঁটাঘাঁটি হবে। নীরবে সহ্য করাই শ্রেয়। সব অভিযোগ মাথা পেতে নিল।
বেশ কিছুদিন নীরবতা।
পক্ষকাল পর।
তথ্য : কয়েকটা ছবি পাঠালাম। ঘরের। ভবনের নাম : সাঁঝবাতি।
তিনতলা ভবনটি আলোকসজ্জিত।
ফজলের কমেন্ট : সাঁঝবাতি, জ্বলে সারারাতি।
উত্তর : না, সারারাতি জ্বলে না। প্রদর্শনীর জন্যে সব বাতি জ্বালান। সাঁঝবাতি আসলেই সাঁঝবাতি। সন্ধ্যাদীপ জ্বেলে নেভান হয়। সময়মতো। প্রতিদিন। নির্ভুল কর্ম। বিদ্যুৎ বাঁচানর জন্যে নয়। স্বভাব। রীতি। প্রথা। জীবনধারা। সংস্কৃতি। কালচার।
অনুধাবনকৃত।
বেশ কয়েকদিন বিরতি।
ফজল লীনার চিত্র দেখেও সংযত। বলেইছে বেশি কথা বললে টান কমে যায়। অবশ্য ফজল মনে করে টান বাড়ে। এই দ্বন্দ্ব চিরকালীন। জগৎ দ্বন্দ্বময়। দিবারাত, জন্মমৃত্যুর মতো। বাড়া-কমা জোয়ার-ভাটা। উদাহরণ অতিকথন। সাহিত্য কখনো অতিকথন দাবি করে। কখনো করে না। অতিকথনের রাজা রবি ঠাকুর। আর মীর মশাররফ হোসেন। শান্তিনিকেতন, শান্তিপুর আর কুষ্টিয়া সবই লাগালাগি। বা গালাগালি।
বেশ কয়েকদিন বিরতি।
মনে রাখার মতো খুঁটিনাটি তেমন কিছু নেই।
হঠাৎ একদিন সন্ধ্যারাতে ফেসবুক দেখতে দেখতে একটা তথ্য ফজলের নজর কাড়ে। রাজশাহীর একজন মেয়ে পোস্ট দিয়েছে : দিদি এ-তুমি কী করলে? কেমন করে করলে? আমাকে তোমার কাছে নিয়ে চলো! আমি এ-জগতে থাকতে চাই না। তুমি যেখানে নেই, আমি থাকব কী করে?
এ-ধরনের বিলাপের সঙ্গে ফজল খুব একটা পরিচিত নয়। সাধারণত পুত্র-কন্যা-বিয়োগ হলে মানুষ এ-ধরনের কাতর বিলাপে ব্যস্ত হয়। মেয়েটি যে খুব ঘনিষ্ঠ এবং অল্পবয়সী বুঝতে পারে ফজল।
সে অনেকক্ষণ উদাস বা কলকাতা কালচার মোতাবেক বিন্দাস্ বিন্দাস্ হয়ে যায়। কে হতে পারে? হাজার প্রশ্ন।
শেষে কলকাতায় ফোন। মানিকের আশ্রয়।
আচ্ছা, বলত কলকাতায় কি কোনো কবি মারা গেছেন? তৃতীয় ব্যক্তির সম্বোধনে ছেড়ে দেয়।
হ্যাঁ, দাদা, একজন কবি আত্মহত্যা করেছেন।
কে?
লীনা।
আসল নাম বা পুরো নামটা বলো না?
আমি জাস্ট শুনেছি। খুব একটা ভালোভাবে শোনা নয় …
বুঝেছি। নামটা পুরোটা এখনো জানা হলো না। বেচারা মহাশূন্যে হারিয়ে গেল!
একদিন না একদিন পুরো নাম জানবেন।
এখন আর তেমন আগ্রহ নেই।
জীবন তৈরি হয় মানুষের কাজে লাগবে বলে। নিজের কাজে লাগবে বলে। কাজহীন জীবন কেনই বা বাঁচবে। এ-জীবন, এ-মৃত্যু আসলে এক বিলাসিতা।
ফজল মানিকের কথার কোনো প্রত্যুত্তর খুঁজে পেল না।
তাদের ফোন-সংযোগের ছিন্নতা ঘটে।
বছরখানেক পর।
ফজল মেসেঞ্জারের ভার কমানোর জন্য পুরো ফোন ঘেঁটে চলছিল। একেবারে শেষের দিকে একটি প্রতিমূর্তি তাকে আকর্ষণ করে এবং চমকে দেবার মতো করে।
সে লীনার মূর্তির শুধু পরিলেখ দেখতে পেল। কোনো বিশদ-রেখাহীন। শুধুই একটা আউটলাইন। ধূসর থেকে ধূসরতর।
মনটা খারাপ হয়। সময় কেমন করে সবকিছু ধূসর করে তোলে তার নমুনা অবলোকন।
হঠাৎ সে ভাবে, আচ্ছা, যেসব কথোপকথন রেকর্ড হয়ে আছে টুকে নিলে হয় না? স্মৃতিটা ধরা থাকে!
মনে মনে স্থির করে সব টুকে রাখবে। বেশ কয়েকবার সবটা দেখে চলে।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ট্যাবটা বন্ধ করে।
পরদিন সকালেই টেবিলে কাগজপত্র নিয়ে বসে।
ট্যাবটা খুলে মেসেঞ্জারের তালিকা ঘেঁটে চলে। শেষ পর্যন্ত দেখে লীনার অস্তিত্ব পেল না। পুনরায় পর্যালোচনা। এবারও একই ফল। নিষ্ফলতা।
নির্বাক। সময়ক্ষেপণ।
ভাবে, কাল যদি তথ্যগুলো টুকে নিত!
তবে কি ভাগ্যচক্র তার সঙ্গে রসিকতা করল?
পুরো ব্যাপারটা জানার জন্যে সে এক লেখক ভ্রাতুষ্পুত্রকে ফোন করে। বলে, আচ্ছা, মেসেঞ্জারে কারো তথ্য কি সবসময় থাকে?
যদি মুছে না ফেলে কোনোপক্ষ তাহলে থাকে।
গতকাল আমি একজনের তথ্য দেখলাম। আজ ঢুকতে গিয়ে দেখি নেই। তাহলে যাদের তথ্য তারা ওটা গুটিয়ে নিয়েছেন। ওটা আর পাওয়া যাবে না।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.