‘তোর আসবার দরকার ছিল না’, মৈত্রেয়ী বললেন।

‘আরে ঠিকাছে।’

‘এই তোর এক রোগ। বছরের এই সময়টায় আসি, একটু নিজের মতো ঘুরবো বলে …’

‘তো কী হলো?’

‘তুই খাচ্ছিলি, খাচ্ছিলি। আমি বেরুবো শুনেই আধচিবানো খাবার কোনোমতে গিলে …’ 

‘আচ্ছা বাবা, ঠিকাছে’, বাঁ গাল থেকে ডান গালে চুইংগামটা পাঠিয়ে দীপ আপস করে নেয়, ‘আমারও দরকার আছে, তাই যাচ্ছি, তোমার জন্য নয়।’

এই ‘ঠিকাছে’ কথাটা মৈত্রেয়ীর অসহ্য লাগে। কেন? ‘ঠিক আছে’ বলা যায় না? মৈত্রেয়ী চাপা বিরক্তি উগরে দিলেন,

– ‘সে আমি জানি। আসলে মিতালির দিদি, চিঙ্কি তোকে নতুন কিছু পাওয়া যায় কি না দেখতে বলেছে। তা না হলে তুই বড় আমার সঙ্গে যাচ্ছিস?’

মৈত্রেয়ীর রাগ পড়ে না। নিজের মতো ঘোরার উপায় নেই। সঙ্গে যাবে আর সারা সময় ফোনে পৃথিবীর লোকের সঙ্গে কথা বলবে, গান শুনবে। রাস্তাঘাটে বেহুঁশের গান শোনা আর গাড়ির হর্ন শুনতে না পাওয়া যে কী বাহাদুরি তা আর বলে বোঝাবার নয়। চট করে ছেলের দিকে তাকিয়ে নেন। ঘন নীল গেঞ্জি, বুকে চকচকে কমলা রঙে লেখা ‘হু নিডস সিøপ?’ জিন্সের প্যান্ট, বুকের ওপর বাম দিক থেকে ডান দিকে যাওয়া চওড়া হাতলের ব্যাগ-কাম-বস্তা, মাথায় সোজা দাঁড়ানো বুনো ঘাসচুল, পায়ে সাদা-কালো নর্থস্টার। মৈত্রেয়ীর পরবর্তী প্রজন্ম। নারীজীবনের পূর্ণতা। অর্থনীতির অনার্স। বন্ধুবান্ধবীদের আড্ডায় এক ভরভরন্ত অশান্ত যৌবন।

পাশাপাশি আরো অনেক মানুষজন হাঁটে। পৌষের বিকেল, ভুবনডাঙ্গার মাঠে নরম আলো। 

– ‘ওই দ্যাখ জয়শ্রীরা’, মৈত্রেয়ী চেনামুখ পেয়ে যান। এগিয়ে গেলেন, ‘তোরা কতক্ষণ? ঘোরা শেষ?’

– ‘না গো , দারুণ সব ব্যাগ এসেছে, দেখতেও ভালো লাগে। ওই অসীমই স্টল দিয়েছে। এবার শাড়ি করেছে বটে প্রণতিরা। বাটিক আর অ্যাপ্লিকের কম্বিনেশন …। আর মাটির গয়না …। ঝুম্পি তো পাগল একেবারে, বুঝলে না …’

মৈত্রেয়ী সব শুনছিলেন না বোধহয়। বহুদিন হয়ে গেছে এক্সক্লুসিভ শাড়ি আর জিনিসের জন্য দৌড়ে বাজার করার পালা শেষ। এখন আর অনেক কিছু কিনতে ঠিক আসেন না। আসেন একটা ভরাট মেলা অনুভব করতে। 

এখন যা সওদা করেন, তার চেয়ে অনেক বেশি পরিচয়ের ওম মেখে ঘরে ফেরেন।

‘ও তাই!’ মৈত্রেয়ীর মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে।

 নিরুত্তাপ গলা শুনে জয়শ্রীরও উৎসাহে ভাটা পড়ে গিয়েছিল, ‘চলি গো। তোমরা এগোও।’

বারবারই  চেনামুখ  নজরে পড়ছিল। দীপের এবং মৈত্রেয়ীর। দীপের গলায় চাপা সুর খেলে যাচ্ছিল, ‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে … ।’ প্রথম পৌষের হাওয়ায় দীপের এলোমেলো চুল দোল খায়। শেষ বিকেলের মিঠে আলোয় দীপের গালে সোনালি রঙের দাড়ি, সব মানুষ ছাড়িয়ে দূরে ছড়িয়ে যাওয়া স্বপ্নালু চোখ দীপকে একটা অন্যজগতের মানুষ করে দিচ্ছিল। এ যেন ছোটবেলার গোলগাল দীপ নয়, যে মায়ের বালিশের নিচে হাতটা গুঁজে ঘুমিয়ে পড়তো।

কিনব না ভেবেও অনেক কিছু কেনা হয়ে যায়। দীপ শক্ত অভিভাবকের মতো মায়ের দরদস্তুর সামলাবার চেষ্টা করে। মৈত্রেয়ীর বেশ মজাই লাগে ওর এই পাকামি। চলতে চলতে হঠাৎ পথের পাশের একটা দস্তাওয়ালার বেসাতিতে চোখ পড়ে। কেমন স্নিগ্ধ সাদা রঙের গয়নাগুলো!

‘বাহ্ , বেশ তো গয়নাগুলো, দেখ দীপ -’ 

অন্যমনস্ক দীপ কানের কাছে ফিসফিস করে, ‘ওই দেখো মা বেনফিসের দোকান।’

চোখ তুলে এত ভিড়ে মৈত্রেয়ী কিছু ঠাহর করতে পারলেন না। চোখটা আটকে গেছে নতুন গয়নায়। চেনা-পরিচিত অল্পবয়সী অনেক মুখ ভেসে ওঠে। তিনি দ্রুত কয়েকটা জিনিস বেছে নেন।

– ‘কত হে?’

– ‘পঞ্চাশ টাকা।’

– ‘ঠকবে তুমি মা, কুড়ি টাকা থেকে শুরু করো’, দীপ কাঁধ ছুঁয়ে ফিসফিস করে।

বহুক্ষণ থেকে ঘুরছেন। দম্ভথলিকা চাইছে একটু দরদস্তুর হোক, ক্লান্তি তা চাইছে না। এই দুইয়ের মাঝে মৈত্রেয়ী মন্থর। দীপের কথা দোকানিটার কানে গিয়েছিল। সে বললে, ‘না, মা, পঞ্চাশটা  টাকা দিন। কী আর লাভ হয় এই বেচে?’

দীপ একটু বকে দিলো লোকটাকে, ‘এই মাল তৈরি করতে তোমার খরচ কত হয়েছে? খুব বেশি হলে পনেরো টাকা। পঁয়ত্রিশ টাকা লাভ করতে চাও, মগের মুল্লুক নাকি?’

– ‘না বাবু, এই  দেখুন, এই মাল …’ পাশ ফিরে কালো জাবদা একটা ব্যাগ থেকে দস্তার পাত বের করে লোকটা।

কী যে বলছে ওরা, কোনো কথা মৈত্রেয়ীর কানে যাচ্ছে না। কালো বড় ব্যাগটা ছুঁয়ে চোখ চলে যাচ্ছে পেছনে। ময়লা-ছেঁড়া মাদুরের এক কোণে বসে আছে লোকটা, পরনে কয়েক প্রস্থ জামা, প্রতিটি জামা ছেঁড়া, ফলে হরেদরে হয়তো একটাই জামা গায়ে। সামনে কাগজ বিছিয়ে সে সওদা সাজিয়েছে। মাদুরের বেশিরভাগটা জুড়ে কিছু কালিপড়া বাসন-কোসন, হাঁড়ি, কড়াই, একটি পোঁটলায় বোধহয় জামাকাপড়। জামাকাপড়ের গা-ঘেঁষে বসে আছে ঘরণী, পাশে আধভাঙা স্টোভ, কোলে কৃষ্ণকায় শিশু, মায়ের বুকে মুখ দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। মৈত্রেয়ীর দিকে চোখ পড়তেই কৃষ্ণা রমণীটি কি অনুনয়ের দৃষ্টিতে তাকালো?

হাতে পঞ্চাশ টাকার নোটটা কেমন যেন যন্ত্রচালিতের মতো লোকটার দিকে বাড়িয়ে দিলেন মৈত্রেয়ী। 

ফেরার পথে দীপ একেবারে চুপচাপ হাঁটছিল।

– ‘কী রে, কথা বলছিস না?’

– ‘কথা বলার কী আছে? তোমার ব্যাপার তুমিই তো ভালো বোঝো।’

– ‘শোন, লোকটা …’

– ‘আমার শোনার কিছু নেই’, কান চাপা দেওয়ার ভঙ্গি করে দীপ, ‘তোমাকে পুরো মুরগি করে ছেড়ে দিলো। আর আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম, এই তো হলো ছবিটা।’ 

– ‘আরে, দামটাই কি বড় কথা …’

– ‘না, দামটা কথা নয়। ওর থেকে অনেক বেশি ঘ্যাম জিনিস অন্য দোকানে ছিল, তার জন্য নয় বেশি দাম দিতে।’

– ‘তার মানে তুই বলছিস যে চটকবাহার সাজানো দোকানে বেশি দাম দিলেই হতো। তখন ঠকা হতো না। আর এই বেচারা কাগজ পেতে সওদা নিয়ে বসেছে বলে এ-টাকাটা পুরোই ঠকা হলো?’

– ‘কী আশ্চর্য, ভালো জিনিস হলে দাম দেবো না? ওর জিনিসের কোয়ালিটি ডেফিনিটলি সুবিধার হবে না। তোমার  ওই পুরো টাকাটাই জলে গেল।’

‘দেখ, লোকটা একটা ছেঁড়া মাদুরের ওপর গোটা সংসারটা নিয়ে বসে আছে।  লোকটা এই টাকায় হয়তো একটা সস্তার চাদর কিনবে, বা দু-বেলা পেট ভরে খাবে, বা …’

‘আচ্ছা মা, তুমি জানো, আমাদের দেশের গরিবরা কীভাবে দেশি চোলাই কিনে খায়? তাদের বেসিক নিড থাকে না? তবু তারা গাঁজাভাং খাবেই। তুমি কী করে জানলে যে লোকটা …’

‘আমি জানি, তুই জানিস না। তোরা জানিস না। তোদের দেখবার চোখও নেই। আমরা কত জিনিস কিনছি, যা না কিনলেও চলে। অথচ এই টাকাটা ওর কাছে অনেক।’

 ‘তোমাদের মতো নরম মাটি না পেলে ওদের চলবে কী করে বলো? এই মেলায় কত লোক কত ধান্ধায় এসেছে, খবর রাখো?’

‘ছিঃ , দীপ’, মৈত্রেয়ী দারুণ উত্তেজিত হয়ে উঠলেন, ‘চাইবার আগেই প্রয়োজনের জিনিস পেতে অভ্যস্ত তোরা, সুতরাং এসব সহমর্মিতা তোদের থেকে আশা করা বৃথা। তবে জানবি, এই বিশ্বাস যতই পৃথিবী থেকে উবে যাচ্ছে, ততই পৃথিবী নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

মেলাটা ছাড়িয়ে অনেকটা চলে এসেছেন কি? এত নির্জনতা কেন? দীপের সঙ্গে তার মাঝে মাঝেই এরকম বাকবিতণ্ডা লেগে যায়। তাতে কারোরই কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে না, তবু কাজ সারা হলে মৈত্রেয়ী যখন একা হন, তখন কেমন এক বিষণ্নতা তাকে গ্রাস করে। আজো তাই  হলো। 

খাওয়া সেরে দীপ ফোনটা হাতে তুলেছে। কিন্তু ঘোরাঘুরিতে হোটেলে ফিরে বোধহয় ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল সে। মশারির মধ্যে ঢুকে পড়ে বলল, ‘আমায় একটু জল দাও না।’

জল খেয়ে আরামের আওয়াজ করল। তারপর ফোন পাশে রেখে বালিশে মাথা রাখলো। লেপের নিচে দীপের নড়াচড়ার কোনো আভাস পাওয়া গেল না। গায়ে চাদরটা ভালো করে জড়িয়ে মৈত্রেয়ী বারান্দায় এলেন। কয়েক হাজার পাখি এই অন্ধকারে গাছগুলোতে একেবারে চুপচাপ হয়তো ঘুমিয়ে আছে। ওরা বোধহয় একে অপরকে মানুষের চেয়ে অনেক বেশি বিশ্বাস করে।

আধুনিক প্রযুক্তি দীপদের কত বেশি এগিয়ে দিচ্ছে আরো সাফল্যের দিকে, এটাই কাম্য। অথচ বিশ্বাস কই? কী ভয়াবহ চোরাবালি বুকে লুকিয়ে পথ হাঁটছে ওরা, মৈত্রেয়ী শিউরে উঠলেন! সবাই বলে, দীপের চেহারা মায়ের মতো। অথচ এই মনটার ছিটেফোঁটাও তিনি ওর মধ্যে চারিয়ে দিতে পারেননি। এই অনিবার্য গোপন ক্ষরণে মৈত্রেয়ী একটু একটু করে বিষণ্ন হয়ে যান। 

 দীপ জানে না, লোকটাকে টাকা দেওয়ার সময়ে মৈত্রেয়ী একেবারে অন্য প্রান্ত থেকে ভাবনার সুতো ছেড়েছিলেন।  কমদামে  গয়নাগুলো পেলেও বাকি টাকার কত দাম তাঁর কাছে? টুকটাক জিনিস, ঝোলানো ব্যাগ, ঘর সাজানোর কিছু, নিদেন বেনফিসের দোকান – এসব ছাড়িয়ে টাকাটা কি তিনি বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারবেন? পরিস্থিতি নঞর্থক রায় দিলো। অথচ টাকাটা এই লোকটাকে দিলে এই খরচের বোধহয় একটা অর্থ হবে, এইসব ভেবেই তিনি টাকাটা – যাক, এসব মূল্যবোধের চিন্তা করে দীপদের না বোঝার কথা ভেবে নিজের শরীর ক্ষয় হবে শুধু, অথচ কিছু করতে পারবেন না। এসব হয়তো তার প্রজন্মেই শেষ।  

পরদিন ফেরবার তাড়া। গতরাতের ঘটনার বিন্দুমাত্রও দীপের মনে দাগ কেটেছে বলে মনে হয় না। এরা নিজের আবর্তে ঘুরতে ভালোবাসে। নিজের কথা চিন্তা না করে সব দান করো – এ-কথা তো মৈত্রেয়ীও ভাবতে পারেন না। তাই বলে নিজের ক্ষতি না করে অপরকে একটু সাহায্য করা – ভাবা কি যায় না? 

পুরনো কথা মনে রাখবেন না ভেবে মৈত্রেয়ী স্বাভাবিক হতে চাইলেন,

– ‘মেলা ঘোরা হলো তোর?’

– ‘দুটো জিনিস বাকি রয়ে গেল, দেখি আজ যাবার আগে … ’ দীপ আরামের হাই তোলে।

গত সন্ধ্যার কথা ভেবে মৈত্রেয়ীর একটু খারাপ লাগছিল। ছেলেটাকে বেশি রকমের কড়া কথা বলা হয়ে গেছে বোধহয়, ওদেরও কিছু বলবার থাকতে পারে। সারারাত ঘুমের পর ভোরের হাওয়া মৃদু প্রলেপ দিয়ে গিয়েছিল। মৈত্রেয়ী দ্রব হচ্ছিলেন। কিন্তু দস্তাওয়ালার অভাবের ছবিটি তাকে আনমনা করে দিচ্ছিল। একসময় মনে হলো,  তিনি তো কিছু অন্যায় কথা বলেননি। মূল্যবোধকে একদম বিসর্জন দিলে তাঁরই বা থাকবে কী?  তিনি নিজের মধ্যে ফিরলেন।

দুপুরের ট্রেনটা ধরতে হবে। সুটকেস গুছিয়ে নেমে এলেন দুজনে। অন্যদিন হলে দীপ এই তাড়াতাড়ি বেরোনো নিয়ে দারুণ অশান্তি করতো। মৈত্রেয়ী ভাবলেন, ছেলের বোধহয় একটু খারাপ লেগেছে গতকালের ব্যাপার। তাই আজ মায়ের মন রাখতে এই সহযোগিতা। হঠাৎ দীপ বলল, ‘মা, তুমি স্টেশনের দিকে এগোও, আমি একটা কাজ সেরে আসছি।’

ও, তাহলে এই ব্যাপার!  ঠিক ঝামেলা রাখবেই শেষ মুহূর্তে! আর সহ্য হয় না মৈত্রেয়ীর, তবু দাঁতে দাঁত চেপে রাগ আটকান তিনি, – ‘দেখিস, দেরি করবি না তো? ইস্, আগে বেরোলেই পারতি, এতক্ষণে কেনা হয়ে যেত। সারা সকাল আলসেমি করে কাটালি।’

– ‘আরে, এত টেনশন করো না। ট্রেন কোনোভাবেই মিস হবে না। আমি পৌঁছে যাবো ঠিক।’

উত্তরের জন্য মাথাব্যথা নেই। চলে যায়। ঠান্ডা বাতাসে গা ভাসিয়ে …। 

রোদ নেই, মেঘলা।  ধীরেসুস্থে রিকশা নেন মৈত্রেয়ী। রিকশায় উঠবার আগে আরো মিনিটসাতেক গল্প করেন হোটেলের লোকটির সঙ্গে। অনেকবার এসেছেন, চেনা মুখ। কুশলবিনিময় করে এগোলেন তিনি। 

রিকশাওয়ালাকে বললেন, বেশি তাড়াতাড়ি যাবার দরকার নেই। মেলার মাঠের পাশ দিয়ে যাবার সময় চেনা দোকানগুলি চোখে পড়তে লাগল।  কোথাও ছেলেটাকে দেখা যায় কি? তাহলে বাকি পথটা একসঙ্গে যাওয়া যায়। মৈত্রেয়ী কৌতূহলী চোখে দেখতে লাগলেন। এই ঠিক দুপুরে এক-দুই ঘণ্টা লোকজন একটু কম থাকে। চারপাশে নজর করতে করতে চেনা পাঞ্জাবিটায় চোখ আটকে গেল। সাদা জিন্সের প্যান্টের ওপর মেটে পাঞ্জাবি কোমর পর্যন্ত নুইয়ে কী যেন কিনছে। ওই দস্তাওয়ালা না? হ্যাঁ, দস্তাওয়ালাই তো! দুজনেই হাসছে। দীপের হাত থেকে টাকা নিয়ে অনেকটা ঘাড় হেলিয়ে কী যেন বলছে লোকটা। কাগজে মোড়া সওদা হাতে তুলে নিচ্ছে দীপ। স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়েই তুলছে। বিগত সন্ধ্যায় হাজার বিজলিবাতি মেলার মাঠটার অন্ধকার ঘোচাতে পারেনি। আজ মেঘলা দুপুরে ভুবনডাঙ্গার মাঠ আলোয় আলো হয়ে গেছে, মৈত্রেয়ী দু-চোখ ভরে দেখলেন।