ফড়িংয়ের গান : ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকার পদ্য

ভাষান্তর : কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়

স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধের শহিদ কবি ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকার এক বিস্ময়কর ধারা ছিল লোককাব্যকে শিশুতোষ ছড়ার সঙ্গে যুক্ত করার। আর এসবের তলদেশে থাকতো নিরেট বাস্তব এবং প্রবল জীবন। এখানে ফড়িংয়ের গান সংকলনে পাচ্ছি আমরা কবিতার বই ঠিক নয়, একটি সংকলন। যৌবনে লোরকা সহযোগী ছিলেন গ্রানাডা এলাকার খ্যাতিমান সুরকার ম্যানুয়েল দ ফালা’র। জীবনে সবকিছুর-সকলের সৌন্দর্যে বিশ্বাস করতেন লোরকা – এক করতে চেয়েছেন জিপ্সি, আরব, ইহুদি, খ্রিষ্টান – তাবতদের। সবার সমাবেশ হবে, উৎসব! এই ফড়িংয়ের গানেও ফালার সুরে যুক্ত করেছেন তিনি নিজের, লোকগীতির, আরব, জিপসি আর ইহুদি স্প্যানিয়ার্ডদের বাণী।

– ভাষান্তরকারী

কর্দোবা

দূর … নিঃসঙ্গ

কালো ঘোড়া, বড় চাঁদ,

আমার জিনের পাশে বাঁধা থলিতে জলপাই।

পথ জানলেও

কখনোই তো পৌঁছুবো না কর্দোবায়।

সমতলভূমি পেরিয়ে, ঝড়ো বাতাস পেরিয়ে

কালো ঘোড়া, লাল চাঁদ।

কর্দোবার চুড়ো থেকে

মৃত্যু আমায় দেখে।

আ – আ – ই – কী দীর্ঘ পথ!

যায়, আমার সাহসী অশ^!

আ – আ – মৃত্যু, যা অপেক্ষা করে আছে

আমি কর্দোবা পেঁৗঁছা পর্যন্ত!

কর্দোবা।

দূর … নিঃসঙ্গ

ট্রিনিই ট্রিনিই

ট্রিনিই ট্রিনিই

শুকনো এবং সবুজ।

সুন্দর মুখের মেয়েটি

বাইরে কুড়োচ্ছে জলপাই।

বাতাস, উঁচু চুড়োর প্রেমিক,

তার কোমর ধরেছে পেঁচিয়ে।

লম্বা কালো কোট

আর অভিনব নীল-সবুজ স্যুট-পরা

আন্দালুসিয়ার চার অশ^ারোহী

পাশ দিয়ে গেল ছুটে।

‘কর্দোবায় এসো, হে তরুণী।’

মেয়েটি শোনে না।

কমলা রঙের স্যুট-পরা

পুরনো রুপোর তরবারিবাহী

সরু কোমরের তিন ষাঁড়-লড়াকু ছেলে

পাশ দিয়ে গেল ছুটে।

‘সোভিল্লায় এসো, হে তরুণী।’

মেয়েটি শুনতে পায় না।

যখন বেলা পড়ে এলো

মøান রক্তবর্ণে, বিষণ্ন আলোয়,

মুন-ন্যারটল এবং গোলাপ নিয়ে

ছুটে গেল একজন যুবক।

‘গ্রানাদায় এসো, হে তরুণী।’

মেয়েটি শুনতে পায় না।

সুন্দর মুখের মেয়েটি

জলপাই কুড়িয়েই চলেছে,

বাতাসের ধূসর বাহু

তার কোমর রয়েছে পেঁচিয়ে।

ট্রিনিই ট্রিনিই

শুকনো এবং সবুজ।

প্রণয়প্রার্থীটি

প্রণয়প্রার্থী আমার,

তরুণ প্রণয়প্রার্থী আমার,

তোমার ঘরে তারা পোড়ায় সুগন্ধ গুল্ম।

তুমি আসো কি যাও,

একটি চাবি দিয়ে আমি তালাবদ্ধ করি দরজা।

একটি রিবনে-বাঁধা

উৎকৃষ্ট এক রুপোর চাবি দিয়ে।

সে রিবনে উৎকীর্ণ :

‘আমার হৃদয় দূরবাসী।’

আমার রাস্তার চারধারে ঘুরঘুর করতে থেকো না।

একে দক্ষিনা বাতাসের হাতে সম্পূর্ণ ছেড়ে দাও।

প্রণয়প্রার্থী আমার,

তরুণ প্রণয়প্রার্থী আমার,

তোমার ঘরে তারা পোড়ায় সুগন্ধ গুল্ম।

পায়চারিরত আদেলিনা

সাগরের কমলা নেই।

সেভিয়েরও নেই ভালোবাসা।

এবং তিনটি

চাঁদের পাশে সাঁতরালো একটি মাছ।

জল ঘুমোয় এক ঘণ্টা

এবং সাদা সমুদ্র একশ ঘণ্টা।

গিন্নি মহিলা ছিল

মৃত, বৃক্ষ শাখায়

সন্ন্যাসিনী

গান গাইলো মৌসম্বি বনে।

মেয়েটি

গেল পাইনগাছটি ছাড়িয়ে শঙ্কু-অবধি।

আর পাইন গাছটি খুঁজলো

কাঁপা সুরটির মুখ।

তবে, নাইটিঙ্গেল

কেঁদে ছড়ালো তার ব্যথা চারদিকে।

এবং আমিও,

কারণ, একটি পাতা ঝরলো

এবং দুটি

এবং তিনটি।

এবং একটি স্ফটিক-শীর্ষ

এবং একটি কাগজের বেহালা,

এবং বরফ হারাতে পারতো পৃথিবীকে

একের পরিবর্তে এক

দুইয়ের পরিবর্তে দুই

এবং তিনের পরিবর্তে তিন।

আহা, অদৃশ্য মাংসের কঠিন গজদন্ত।

আহা, ভোরের পিঁপড়েবিহীন উপসাগর।

পত্রপল্লবের প্রেরণাসহ,

নারীদের দীর্ঘশ^াসসহ,

ব্যাঙের ডাকসহ,

এবং হলুদ ধরার মধু।

একটি ছায়ামূর্তি আসবে

ভূষিত শিরোমাল্যে।

আকাশ হবে বাতাসের জন্যে

দেয়ালের মতো শক্ত

এবং ছিন্ন শাখারা

তার সাথে যাবে নেচে-নেচে।

এক এক্কে এক

চাঁদের চারদিকে,

দুই এক্কে দুই

সূর্যের চারদিকে,

তিন এক্কে তিন

যেন গজদন্ত ঘুমোতে পারে আলো।

বাড়ি থেকে বাড়ি

চলো যাই বাড়ি থেকে বাড়ি,

আমরা যাবো সেখানে,

যেখানে সাগরের মাছ খায় ঘাস।

এ তো নয় কোনো আকাশ। এ যে কঠিন মাটি,

রয়েছে যেখানে ঝিল্লি। গান গায় যারা

ঘাসের সঙ্গে, যারা চলে দুলে,

মেঘের সঙ্গে, যারা চলে ডিঙিয়ে,

পাথর-ছোড়ার গুলতির সঙ্গে,

আর তরবারির মতন বায়ুর সঙ্গে।

আমি হতে চাই একটি বালক,

          শুধুই একটি বালক।

স্বচ্ছ আকাশ

স্বচ্ছ ঝর্ণা।

আহা, কমলাগুলো কিভাবে

ঝলমল করে!

          ঝর্ণা।

          আকাশ।

আহা, গম কী রূপ

কোমল!

আকাশ।

ঝর্ণা।

আহা, গম কী রূপ সবুজ।

তিনটে গাছকে তারা ধরাশায়ী করলো

সেখানে ছিল তিনজনা।

(দিনটি এসেছিল তার কুঠোরগুলোসমেত।)

সেখানে ছিল দুইজনা।

(প্রলেপমাখা রুপোর পাখা বুলিয়ে।)

সেখানে ছিল একজনা।

সেখানে কেউই ছিল না

(জল পড়েছিল নগ্ন হয়ে।)

শঙ্খ

তারা আমার জন্যে এনেছে এক শঙ্খ।

তার মধ্যে গান গায় এক

মানচিত্র-প্রমাণ সাগর।

আমার হৃদয় ভ’রে উঠছে জলে,

ছায়া এবং রুপোর ছোট্ট মাছে।

তারা আমার জন্যে এনেছে এক শঙ্খ

কোথায় চলেছো তুমি, জল?

কোথায় চলেছো তুমি, জল?

নদী বেয়ে, কলকল, চলেছি সাগর-পার।

কোথায় চলেছো তুমি, সাগর?

নদী বেয়ে সেই উৎস খুঁজতে ওপারের,

যেখানে শয্যা পাবো আয়েশের।

পপ্লার, এবং তুমি? তুমি করবে কি?

তোমাকে তো বলতে চাইনে …

কিছুই না। কম্পমান … আমি হবো।

কি আমি চাই, কি আমি চাই নে,

নদীর পারে আর সাগর-পারে?

(নিরুদ্দেশ চার পাখি

পপ্লার গাছে উড্ডীন।)

ভূ-দৃশ্য

জলপাই গাছের মাঠ

একটি পাখার মতন

খোলে আর বন্ধ হয়

জলপাই কুঞ্জের ওপরে

পড়ছে ঝুলে আকাশ

আর শীতল-উজ্জ্বল তারার

আঁধার কী এক বর্ষণ।

নল আর আধেক আলো

নদীর পাড়ে কাঁপছে।

ধূসর আকাশ দুলছে।

জলপাই বৃক্ষগুলো

চিৎকারে-চিৎকারে ফুঁসছে

এক ঝাঁক বন্দি পাখি

অন্ধকারে নাড়ে

তাদের দীর্ঘ-দীর্ঘ লেজ।

হলুদ গাধা

না-চাইতে হারিয়ে ফেলেছে তারা

তাদের বিয়ের আংটি।

হায়, সিসার তৈরি ছোট্ট আংটিটি তাদের।

হায়, তাদের ছোট্ট সিসার আংটি।

মানুষ্যশূন্য বিশাল আকাশ

বেলুনে চ’ড়ে পাখি ওড়ে।

গোল কাপ্তান সূর্য,

গায়ে একটি সাটিনের জামা।

তাদের দিকে তাকাও, কতো যে বৃদ্ধ তারা।

কতো যে বৃদ্ধ গিরগিটিরা।

আহা, কীভাবে তারা কাঁদছে

                   আর কাঁদছে,

হায়-হায়! কীভাবে কেঁদেই তারা যাচ্ছে।

ভূদৃশ্য

উদ্বাস্তু বিকেল

নিজে সেজেছিল শীতে।

তুষারঢাকা জানালার পেছনে

সকল শিশু দেখে

হলুদ গাছটি পাল্টে যায় পাখিতে।

বিকেল বেলাটি হাত-পা ছড়ায়

নদী-বরাবর।

আপেল-লজ্জা এক কাঁপে

ছোট্ট ছাদের ওপর।

তারারা

তারারা, হ্যাঁ;

তারারা, না;

তারারা মেয়ে,

আমি তাকে দেখেছি, তাই …

আমার তারারা পরে

সবুজ পোশাক

আবৃত যা কুঁচিতে,

আর রুন্রুন্ ঘণ্টাতে।

তারারা, হ্যাঁ;

তারারা, না;

তারারা, মেয়ে,

আমি তাকে দেখেছি, তাই …

আমার তারারা ঝলসায়

মাটিতে-লুটানো তার রেশমি পোশাক

টাকশালের ওপর,

আর এ স্নানি ওল ঝাড়ু’র।

এ্যা-ই, পাগলাটে তারারা,

জলপাই গাছের

ছেলেদের জন্যে

তোর কোমর দোলা – না।

মঞ্চের রাজা

যদি তোমার মা চায় এক রাজাকে,

তাসের মঞ্চে রয়েছে চারজনা :

কাপের রাজা, ক্লাবের রাজা,

তরবারির রাজা, সোনার রাজা রে।

দৌড়াও, নচেৎ ধরবো,

দৌড়াও, নচেৎ পেটাবো,

চোখ রেখো, নচেৎ তোমাকে দেবো

মাটির পিঠে মুখ পুরে।

জলপাই গাছ হতে

আমি ফিরে আসি,

এসপার্তো ঘাস হতে

আমি সরে আসি,

আঙুরলতার অঙ্কুর হতে

তোমাকে অমন ভালোবাসার

অনুতাপে আমি ফিরে আসি।

অশ^ারোহীর গান

বাদামি ত্বকের মেয়ে কী অগ্নিময় আলো।

আমাকে ধার দাও তোমার ছাতাটি।

আমার মুখমণ্ডলকে তা করে তুলবে সবুজ

– লেবুর রস এবং চুন

তোমার কথাগুলো-গুঁড়ো মাছ –

চারদিকে সাঁতার কাটতে যাবে।

সমুদ্রের কমলা নেই।

আহা, ভালোবাসা।

সেভিইয়েরও নেই ভালোবাসা।

করিডোর

উঁচু করিডোরে

দুই ভদ্রলোক পায়চারি করছেন

                   {নতুন

                    আকাশ।

                    সুনীল

                    আকাশ।}

… দুই ভদ্রলোক পায়চারি করছেন

অতীতে তারা ছিলেন শুভ্র-বেশ খ্রিষ্টান সাধু

                   (মধ্য

                    আকাশ।

                    বেগুনি-লাল

                    আকাশ।)

… দুই ভদ্রলোক পায়চারি করছেন

অতীতে তাঁরা ছিলেন শিকারি

                   (পুরনো

                    আকাশ।

                    সোনালি

                    আকাশ।)

… দুই ভদ্রলোক পায়চারি করছেন

অতীতে তাঁরা ছিলেন …

রাত্রি।

স্মৃতি

চাঁদমহোদয়া তো বাইরে আসেননি।

তিনি বলয়টির চারধারে খেলছেন

এবং নিজেকে বিদ্রƒপ করছেন।

চাঁদ ইতস্তত ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

এক

ওই তারাটি, এতো রোমান্টিক

{ম্যাগ্নোলিয়াদের জন্যে,

গোলাপগুলোর জন্যে।}

ওই তারাটা, এতো রোমান্টিক,

বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গেছে।

ব্যালালিন,

(ছোট্ট ব্যাত্রাচি,

গান গাও তুমি তোমার

শান্ত কুটিরে।)

এতিমখানা

এবং বেচারা তারারা,

তাদের কোনো আলো নেই,

কী ব্যথা,

কী ব্যথা,

কী যন্ত্রণা।

এক দুর্বোধ্য নীলিমায়

তারা পরিত্যক্ত

কী ব্যথা,

কী ব্যথা,

কী যন্ত্রণা!

প্রথম পৃষ্ঠা

স্বচ্ছ ঝর্ণা।

স্বচ্ছ আকাশ।

আহা, পাখিরা কীভাবে

বড় হয়!

ওই পাহাড়ের ওপরে

এক ক্ষুদে সবুজ গাছ।

যে-মেষপালক আসে,

যে-মেষপালক যায়।

ঘুম-ঘুম জলপাই কুঞ্জ,

নেমে আসে তপ্ত সমতলে।

যে-মেষপালক আসে,

যে-মেষপালক যায়।

তোমাদের সাদা মেঘও নেই, কুকুরও নেই,

নেই ছড়ি, নেই প্রেম।

যে মেঘপালক আসে।

সোনার ছায়ার মতো

তুমি গমক্ষেতে হারাও।

যে-মেঘপালক যায়।

প্রজাপতি

হাওয়ার প্রজাপতি,

তুমি কতো সুন্দর;

হাওয়ার প্রজাপতি

চক্চকে আর সবুজ।

প্রদীপের আলো,

হাওয়ার প্রজাপতি,

ওখানেই থাকো, ওখানেই, ওখানেই। …

চাও না তুমি থামতে,

থামতে চাও না তুমি।

হাওয়ার প্রজাপতি

চক্চকে আর সবুজ।

প্রদীপের আলো,

হাওয়ার প্রজাপতি,

ওখানেই থাকো, ওখানেই। …

ওখানেই থাকো।

প্রজাপতি, তুমি কি ওখানেই?

নাগরদোলা

ছুটির দিনগুলো

চলে যাব চাকায়।

নাগরদোলায় আসে

এবং চলে যায়।

          নীল কর্পাস ক্রিস্টি

          শুভ্র ক্রিসমাস ইভ।

দিনগুলো তাদের চামড়া রেখে যায়

পেছনে, সাপের মতন,

ব্যতিক্রম শুধু

ছুটির দিনগুলোন।

এই দিনগুলো যেন

আমাদের বৃদ্ধা মায়েদের দিন;

তাদের বিকেলগুলো সারি-সারি

চক্মকে সিল্ক এবং সিকুইন।

          নীল কর্পাস ক্রিস্টি।

শুভ্র ক্রিসমাস ইভ।

নাগরদোলা ঘুরছে,

একটি তারা থেকে ঝুলছে।

পৃথিবীর পাঁচ ভাগ থেকে

একটি টিউলিপ ফুটছে।

চিতার ছদ্মবেশী

ছোট্ট ঘোড়ায় চড়ে

শিশুরা খাচ্ছে চাঁদ,

খাচ্ছে যেন চেরি।

          ছুটে চলো, মার্কো পোলো! ছুটে চলো।

আশ্চর্য এক চাকায় চড়ে

শিশুরা দিগন্ত দেখে,

গোটা পৃথিবীতে যা অপরিচিত, হায়।

          নীল কর্পাস ক্রিস্টি

শুভ্র ক্রিসমাস ইভ।

শাখায়-শাখায় ভাল্ঞ্জ নাচ

একটি পাতা ঝরলো

এবং দুটি

ইউরোপে চীনাগান

শান্ত নদীর ওপরকার

সেতুটি বেয়ে

পঙ্খিনী মেয়েটি যে যায়।

ফ্রককোট পরিহিত

ভদ্রলোকগণ তো

রক্ষণীরেলবিহীন

সে সেতুটির দিকে তাকায়।

পঙ্খিনী এবং রঙ্গিনী মেয়েটি

খুঁজে ফিরছে একটি বর।

ভদ্রলোকগণ তো বিবাহিতই

তুষার-সাদা বেশধারী

সুদেহী স্বর্ণকেশীদের সঙ্গে।

ঝিল্লিরা পশ্চিমে

গান গায়

(মেয়েটি সবুজ ঘাসের

ওপর দিয়ে হেঁটে যায়।)

ফুলের নিচে

ঝিল্লিরা গান গায়

(ভদ্রলোকগণ

উত্তর-বরাবর হেঁটে যায়।)

ফালতু গঞ্জল

মা,

আমাকে রুপো দিয়ে বানা না।

ছেলেরে,

ঠান্ডা হয়ে যাবি যে রে।

মা,

আমাকে জল দিয়ে বানা না।

ছেলেরে,

ঠান্ডা হয়ে যাবি যে রে।

মা,

আমাকে তোমার বালিশের ওপর

নকশি করে নাও না।

সেটা অবশ্যি

শুরু করতে পারি এখনই।

সেডিলের গীতিকা

ভোর আসে

কমলা গাছে।

ছোট্ট সোনালি মৌমাছি

মৌ ছাড়া আবার খুঁজছিল কি।

কোথায় যেতে পারে …

সেই মৌ রে?

মধু ছিল নীল, ফুলে,

ইসাবেলা

সেখানকারই

ওই যে ফুল রোজমেরি।

(মুরের জন্যে তো

ছোট্ট সোনার চেয়ার।

তার বউয়ের তরে

ও তো চুমকির তৈরি চেয়ার রে।)

ভোর আসে

কমলা গাছে।

গিরগিটিটি কাঁদছে

গিরগিটি ছেলেটি কাঁদছিল।

গিরগিটি মেয়েটি কাঁদছিল।

ছোট্ট সাদা অ্যাপ্রন-পরা

গিরগিটি ছেলেটি আর গিরগিটি মেয়েটি।