বিধ্বস্ত জনপদের অশনি বার্তা

সময়ই জানে না সময়ের অভিঘাত। জীবন বলতে পারে না জীবনের সংঘাত। আমাদের চেনাজানা পরিবেশের মধ্যে কখন কী দুর্ঘটনা ঘটতে পারে তার অনুমান কল্পনাসাপেক্ষ। প্রায় এক বছর ধরে বিশ্বব্যাপী যে করোনা মহামারি তা কি কেউ কখনো কল্পনা করতে পেরেছিল। প্রকৃতির এমন অনাকাক্সিক্ষত সংঘাত-সংক্ষুব্ধতা সাজানো জীবনকে করে তুলেছে এলোমেলো। যখন বিশ্ব করোনা-আতঙ্কে ঘরে আবদ্ধ, তখনো থিয়েটারে এসেছে নতুন মাত্রা। সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে করোনার মতো মহামারির সংঘাতে মানবজীবনের সংকটাপন্ন জীবনকে থিয়েটারের দৃশ্যকল্পে রূপায়িত করেছে ঢাকা থিয়েটার। করোনার এ-বিপর্যস্ত সময়ে এই নাটক যেন আতঙ্কবিনাশী এক নতুন নাট্যযাত্রা। আনন জামান নাটকটির নামকরণ করেছেন একটি লৌকিক কিংবা অলৌকিক স্টিমার। বাঙালির ঐতিহ্যবাহী নাট্য-আঙ্গিকের সঙ্গে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিমূর্ত ধারার চিন্তনের মিশেলে গড়ে উঠেছে নাটকের শরীর। নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন ঢাকা থিয়েটারের সদস্য শহীদুজ্জামান সেলিম।

স্বাধীন বাংলাদেশে ঢাকা থিয়েটার প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই নতুন নতুন নানা ধারা-ধারণায় নাট্যামোদী দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। সংবাদ কার্টুন গতানুগতিক মঞ্চের বাইরে সামাজিক আন্দোলনের রূপ তৈরি করেছে। সংগীতনির্ভর মুনতাসীর নাট্যনিরীক্ষার মাধ্যমে সামাজিক পুঁজিবাদী সৌকর্যকে ভেঙে দিতে প্রয়াসী হয়েছে। ঢাকা থিয়েটার নাট্যজন সেলিম আল দীনকে নিয়ে ধীরে ধীরে প্রবেশ করেছে হাজার বছরের বাঙালির গৌরবান্বিত ঐতিহ্যের সূত্রে। বাঙালি নাট্য-সংস্কৃতির জাগরণে বিষয়, আঙ্গিক ও উপস্থাপনাসহ নানা বিষয় নিয়ে নিরীক্ষা করেছে। সাম্প্রতিক প্রযোজনাতেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। ঐতিহ্যের সঙ্গে বিশ্বজ্ঞানের মেলবন্ধনের সূত্রে যেন এক হয়ে উঠেছে। সমকালীন বিষয় নিয়ে শিল্পনির্মাণ সত্যি দুরূহ। চেনাজানা বিষয় বলে নানাজনের নানা অভিজ্ঞতা ও কল্পনা থাকে। ফলে নির্মিত নাট্যের বিষয় ও শিল্পমূল্য নিয়ে সৃষ্টি হয় নানা বিতর্ক। তবু তাঁদের দুঃসাহসী প্রযোজনা একটি লৌকিক কিংবা অলৌকিক স্টিমার। সমসাময়িক ‘করোনা’ মহামারি আতঙ্কের মতো জনপদবিনাশী কোনো রোগের আগমন ও তার প্রতিক্রিয়া এ-নাটকের পটভূমি। এটি ঢাকা থিয়েটারের ৪৯তম প্রযোজনা।

কাহিনিটি শুরু হয় জাহাজঘাটের ডকইয়ার্ডকে কেন্দ্র করে। যেখানে ধীরে ধীরে লোকজন জমায়েত হচ্ছে। কারণ ওই শহরের প্রত্যেকটি মানুষই দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে আর মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছে। ব্যাধিটি ছোঁয়াচে। শহরের সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ এমনকি মন্ত্রীরাও ভয়ানক এ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েই চলছে। এ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে প্রথমে গায়ের চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। মাংসে পচন ধরে। শরীরের হাড় বের হয়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে। এমনই এক সময় সবাই শুনতে পায় পাশের নদীতে একটি জাহাজ আসবে। যারা এ-রোগে আক্রান্ত হয়নি এবং বাঁচতে চায় তাদের সেই জাহাজ নিয়ে যাবে দূরান্তের নিঃরোগ কোনো স্থানে। এজন্য লোকজন এসে জমায়েত হতে থাকে ডকইয়ার্ডে। আক্রান্ত কিংবা আক্রান্তহীন সবার যেন ভরসা ওই জাহাজ। এদিকে সেই ডকইয়ার্ডে তৈরি হয় নানা সিন্ডিকেট। যেসব সুস্থ লোকজন ডকইয়ার্ডে আছে তারা অন্যদের উঠতে দেয় না। সেখানে নানা পেশাজীবী মানুষের নানা অভিব্যক্তির প্রকাশ ঘটতে থাকে। একসময় তারা বুঝতে পারে, আমাদের পাপ, আমাদের অপরাধের জন্যই আমরা এ দুরারোধ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছি। রাজনীতিবিদরা নিজেদের এ পরিণতির জন্য নিজেদেরই দায়ী করে অনুশোচনা করতে থাকে। শুরু হয় যার যার জীবনের পাপকর্মবৃত্তির উপস্থাপন-অনুশোচনা। শুদ্ধাচারে জীবন বাঁচাতে ব্যাকুল হয়ে ওঠে ডকইয়ার্ডে জমায়েত মানুষগুলো। নিজেদের অসৎ প্রবণতা, পাপ, দুষ্কর্ম থেকে যেন শুদ্ধ মানুষে পরিবর্তিত হতে থাকে তারা। অপেক্ষা করতে থাকে আগন্তুক সে-জাহাজের জন্য। জাহাজ বা স্টিমার নিয়ে নানাজনে নানা কল্পনা করতে থাকে। দূরে পানির ঢেউ দেখে কেউ কেউ স্টিমার বলে ভ্রম করতে থাকে। কিংবা আকাশের মেঘকেও স্টিমার বলে কল্পনা করতে থাকে। সবার বিশ্বাস – আসবেই সে-জাহাজ সবাইকে উদ্ধার করতে এ-নগরীর অবক্ষয় থেকে। কিন্তু সেটা সত্যি জাহাজ বা স্টিমার কি না, বা আসবে কি না, কিংবা নিতান্ত কল্পনাপ্রসূত কি না – কেউ তা জানে না।

থিয়েটারের ইতিহাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ে সৃষ্টি হয় উদ্ভট বাস্তবতানির্ভর নানা নাটক। এ-অ্যাবসার্ড ধারা বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ফ্রান্সের চিত্রকলার ‘বিমূর্ত’ ধারাটি নতুন এক বৈশিষ্ট্যে প্রত্যুজ্জ্বল হয়ে ওঠে নাটকে। উদ্ভট বাস্তবতা, পরম্পরাহীন গল্প, কার্যকরহীন সংলাপ কিংবা পরিণামহীনতা সেসব নাটকের মূলে বিদ্যমান। কিন্তু সামগ্রিক বিমূর্ততার মধ্য দিয়ে কখনো কখনো অতিপ্রাকৃতিক বাস্তবতা ফুটে ওঠে। পাশ্চাত্যে ইউজিন আয়োনেস্কো, স্যামুয়েল বেকেট, জ্যঁ জেন এ-ধারায় অন্যতম নাট্য-রচয়িতা। স্যামুয়েল বেকেটের ওয়েটিং ফর গডো এখনো পৃথিবী চষে বেড়ায়। বাংলাদেশে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্, সাঈদ আহমেদ, পশ্চিমবঙ্গে মোহিত চট্টোপাধ্যায়, বাদল সরকার প্রমুখ এ-ধারায় নাট্যচর্চা করেছেন। আনন জামানের একটি লৌকিক কিংবা অলৌকিক স্টিমার নাটকের মধ্যেও যেন পরিণামহীন নানা উদ্ভট রূপই পরিলক্ষিত হয়। অস্তিত্বহীন মানবজীবন ও তার সংগ্রামই এ-নাটকের মূল প্রতিপাদ্য। বৃত্তহীন ঘটনবিন্যাসে বিমূর্তরূপী শিল্পনিরিখে কাব্যিকময়তায় অনবদ্যভাবে উপস্থাপিত হয় মানুষের বাঁচার সংগ্রাম। নাটকের শেষেও এক পরম্পরাহীন ঐক্যে পৌঁছানোর যেন অক্লান্ত চেষ্টা। নাটকের নামকরণের মধ্যেও একধরনের ব্যাজস্তুতিমূলক ভিন্ন ব্যঞ্জনা রয়েছে।

প্রসেনিয়াম মঞ্চে উপস্থাপিত এ-নাটক ডকইয়ার্ডের অস্থিরতাকেই প্রকাশ করেছে। মঞ্চটি তিনটি ভাগে বিভক্ত। বাম পাশের যাত্রীদের   আগমনস্থল।   মধ্যমঞ্চ   জাহাজে  ওঠার পাটাতনস্থল। সামনে-পেছনে-পাশে জাহাজঘাটের নানা প্রতীকী চিহ্ন। পেছনে সায়াক্লোম পর্দায় ভাসমান সমুদ্রের জলতরঙ্গের প্রতীকী স্রোত। তার ঝোলানো এবং রশি দিয়ে নানাভাবে সীমারেখা তৈরি। সামগ্রিকভাবে মঞ্চনির্মাণে নানা প্রতীকী উপকরণের আশ্রয়ে জাহাজঘাটের শিল্পরূপ নির্মাণ করা হয়েছে। নাটকে অসংখ্য চরিত্রের সমাবেশ ঘটেছে। নাট্যকার নাটকের শুরুতে বন্দনা করেছেন ভিন্ন আঙ্গিকে –

যে ডকইয়ার্ডে

শহরটির গোপন ভবিতব্য দৃশ্যমান হবে

তার উদ্ভাসন হোক।

আলো আইসো

আলোর ভেতর ভুবন থেকে

জোনাক ডানার মিহি নীল আভায়

উজাল করো নাটঘর।

মঞ্চে ধীরে ধীরে ভাষ্যকার বা লেখক এগিয়ে আসেন। একটি শহর ডুবে যাওয়া থেকে মানুষদের উদ্ধারের দায় যেন ভাষ্যকার বা লেখকের। এক অজানা শঙ্কা প্রতিটি অভিনেতার ভাষা, চলন ও গতিতে। তাই তো লেখক আহ্বান করতে থাকেন অজানা ভবিতব্যকে। উদ্ভট এক আলো-আঁধারী পরিবেশ যেন ঘিরে রাখে দর্শকদের।

: আমি এক অভাজন শহরটির নিশ্চিত মৃত্যুর দায় বয়েছি বুকে সে ভুবন আর মেঘের মানচিত্র পাঠ করে দূর ভবিতব্য আর চরিত্র করছি আহ্বান।

: এ আহ্বান নিয়ম বিরুদ্ধ।

: তাই তো আঁধার এই নাটঘরে করছি আহ্বান।

অভিনেতারা অঙ্গসাজে প্রস্তুত। বাদকদল তাল তুলছে বাদনে। আবহ নির্মাণের সেট প্রপ্স সম্পন্ন হয়েছে। ওপর থেকে ফেলা হচ্ছে আলোর রোশনাই –

হে অপার্থিব মঞ্চ আলো

হে শহরটির দূরাগত ভবিতব্য।

নাটকটি যতটুকু থিয়েটার হিসেবে উল্লেখ্য তার চেয়ে পরিবেশনা বা পারফরম্যান্স হিসেবে অধিকতর আলোচনার ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে। কোনো একক চরিত্রের ক্রমবিকাশ এ-নাটকে লক্ষ করা যায় না। সামগ্রিকতার মধ্য দিয়ে এক অরৈখিক মানবতাবাদী ভাবকে ব্যক্ত করা হয়েছে। কোনো এক মহামারিতে নিমজ্জমান জনপদের মানুষের করুণ চিত্র এই নাটকের আলেখ্যভূমি। তবে বাঁচার তাগিদে কখনো কখনো সবাই এক আবার কখনো একে অপরের সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ। চরিত্রে চরিত্রে যেমন দ্বন্দ্ব লক্ষ করা যায় তেমনি গল্পের অন্তঃস্পন্দনেও দ্বন্দ্ব বিদ্যমান। অস্তিত্ববাদী দার্শনিক পটভূমিও এতে গভীরভাবে চিত্রিত।

নানা বৈচিত্র্যপূর্ণ চরিত্রের সমাগম ঘটেছে এ-নাটকে – ভদ্রলোক, আর্মি, যাত্রী, রাহিমূল, সাজোয়াল, লুৎফুল, জুলফি, বদর, গানম্যান, দস্তগীর, সাঁঝমান, জুনায়েদ, তরুণ, মনমিতা, আরশাদ, আহির, তাহির, মিহিনীল প্রভৃতি। একেকটি চরিত্র একেকভাবে বৈশিষ্ট্যে বিকাশ লাভ করেছে। একটি জনপদের বিধ্বস্ত জীবনবাস্তবতার রুদ্ধশ্বাস আকুতিই প্রতিটি চরিত্রের মাঝে। নাটকে দেখা যায় Ñ

সারা শহরের মানুষ এক অদ্ভুত রোগে পচে গলে যাচ্ছে। আর আপনি আছেন সিংহাসনের পায়া নিয়ে …

আর্মি : চেঁচাবেন না।

রাহিমূল : চেঁচাবো না, যেতে দাও।

আর্মি : যাবেন কোথায় স্যার?

রাহিমূল : সবাই তো যাচ্ছে। সারা শহরে মড়ক লেগে গেছে। বিল্ডিংয়ের ভেতরে – কার্নিশে – প্রাকারে, অফিসে, রাস্তায়, পার্কে, দরজায়, সিড়িতে সবর্ত্র অদ্ভুত রোগে গলিত-পতিত মানুষ। সবাই শহর ছেড়ে পালাচ্ছে।

আচ্ছা স্টীমার কী চলে গেছে?

আর্মি : স্যার ডকইয়ার্ডে উঠতে হলে আপনার বডি চেক করতে হবে। জানেন তো স্যার এই রোগের জার্ম থাকলে নিশ্চিত মৃত্যু। মানুষ থেকে মানুষে গসিপ যেমন দ্রুত ছড়ায় – তার চেয়ে বেশি গতি তার।

পুঁজিবাদের ক্ষমতা এখানে বিনষ্ট। যখন মহামারিতে একটি সভ্যতার সব বিনষ্ট হচ্ছে, তখন আর জাতপাতের মিথ্যা অহংকার থাকে না। মানুষই সত্য Ñ এমন জীবনালেখ্য ফুটে উঠেছে সমস্ত নাটকের পরিমণ্ডল ঘিরে। মৃত গলিত জীবন কারো কাম্য নয়। তাই স্বপ্ন দেখে অনাগত সম্ভাবনার। কিন্তু সেটা কি সম্ভব? তাই তো নাটকে ফুটে ওঠে অপূর্ণতার এক বিচ্ছেদী কণ্ঠস্বর। যাত্রীগণ অপেক্ষা করতে থাকে প্রথম থেকেই। অভিজাত শ্রেণি আবার নিম্ন শ্রেণিকে উঠতে দিতে নারাজ। কিন্তু যাদের মধ্যে মহামারি রোগের প্রকোপ শুরু হয়েছে তাদেরও আসতে দেয়। সমানের অনাগত জাহাজ আসবে কি না তাও জানে না। তাই তারা শিকল হাতে বসে থাকে। মুখে-মনে উদ্বেগ নিয়ে নিবিড় ভঙ্গিতে বসে থাকে। তারা চোখের সামনে বারবার অস্পষ্ট আলোয় দেখতে পায় জাহাজ আসছে। যে-জাহাজে চেপে তারা যাবে মুক্ত এক নতুন শহরের পানে।

নির্দেশক শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘করোনাকাল যখন ভয়াবহ রকমের ছিল তখন অনলাইনে আমরা নাটকটির রিহার্সাল শুরু করি। মূলত ওই সময়েই সিদ্ধান্ত নিই ঢাকা থিয়েটারের জন্য নতুন নাটকটি করার। তারপর করোনার প্রকোপ কিছুটা কমে এলে আমরা প্র্যাকটিক্যালি পল্টনে রিহার্সাল করতে থাকি। তার ফসল হিসেবেই এ-নাটক।’ (উদ্ধৃত, সাক্ষাৎকার) সমসময়কে ধারণ করলেও নাট্যকার আনন জামান অনেক আগেই নাটকটি রচনা করেছেন। হয়তো নাট্যকার তাঁর অবচেতন মনে এমন ভবিষ্যতের শঙ্কা দেখছিলেন। নাটকটি দেখতে দেখতে স্যামুয়েল বেকেটের ওয়েটিং ফর গডো এবং সেলিম আল দীনের নিমজ্জন নাটকের দৃশ্যকল্পের কথা বারবার মনে পড়ছিল। নাটকটিকে পুরোদস্তুর সার্থক অ্যাবসার্ড বলা যাবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও নাটকটিতে অ্যাবসার্ডিটির নানা উপকরণ-উপাদানের শক্ত গাঁথুনিকে অস্বীকার করার উপায় নেই। নাটকটি কোনো একক কাহিনি নির্দেশ না করলেও জীবনের এক অন্তঃসুরকে চিহ্নিত করে। কোনো এক জনপদের সামগ্রিকতাকে নির্দেশ করে। নির্দেশকও নানা উপকরণ-উপাদানে সমাজের সামগ্রিকতার রূপ রূপায়ণকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। নির্দেশক শহীদুজ্জামান সেলিম কোনো একক চরিত্র বিকাশের পথে না হেঁটে কোনো জনপদের শঙ্কা-জীবন-রাজনীতি সবকিছুর অদ্বৈত রূপকল্প তুলে ধরতে প্রয়াসী ছিলেন। আজকের বাস্তবতায় এ-নাট্যের উপযোগিতা বলে শেষ করার মতো নয়। বিশ্ব আজ করোনা-আতঙ্কে নিমজ্জমান। এ-কাহিনি যেন এই সময়ের দলিলকেই উপস্থাপন করে। সরলরৈখিক ঘটনাবিন্যাস এবং প্রসেনিয়াম মঞ্চে উপস্থাপিত হলেও ঐতিহ্যবাহী বাংলা নাট্যরীতির উপস্থাপন নাটকের পরতে পরতে। পোশাকও বাস্তবমুখী ধারায় প্রত্যুজ্জ্বল আবেগকে ধারণ করেছে। আবহ সংগীতের নিনাদও মানবিকতাকে উসকে দিয়েছে। উপস্থাপনাটি বর্ণনাত্মক রীতির হলেও চরিত্রাভিনয়ের প্রাধান্য রয়েছে। অভিনয়ে আবেগ ও বাচনিক প্রক্ষেপণ কিছুটা অস্পষ্ট লাগলেও সাত্ত্বিক দৃঢ়তায় যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে পরিবেশ। ডকইয়ার্ডের নানা প্রতীকী ব্যঞ্জনায় মঞ্চটি সজ্জিত। এই করোনা মহামারিতে মানবজীবন যেন তাই। নাটকটির মঞ্চপরিকল্পনা করেছেন আফজাল হোসেন, পোশাক – রোজী সিদ্দিকী, আলো – ওয়াসিম আহমেদ এবং আবহসংগীত – রাহুল আনন্দ। আমরা নাটকটির উত্তরোত্তর মঞ্চসাফল্য কামনা করছি।