রণজিৎ গুহের সাধনা : উত্তর-ঔপনিবেশিক জ্ঞানকাণ্ডের নিরিখে

বই-প্রকাশের হিসাব ধরলে রণজিৎ গুহের (১৯২৩-২০২৩) লেখালেখির বয়স প্রায় ষাট বছর। এর মধ্যে অন্তত চল্লিশ বছর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন তাঁর লেখাপত্রের, বলা যায়, কেন্দ্রীয় বিষয়। ১৯৬৩ সালে প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর পয়লা কেতাব অ্যা রুল অব প্রপার্টি ফর বেঙ্গল। বিষয় চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের দার্শনিক ও দৃষ্টিভঙ্গিগত পটভূমি। ১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বা পার্মানেন্ট সেটেলমেন্ট ভারতে প্রলম্বিত ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের ‘পার্মানেন্ট’ ভিত্তি। স্বভাবতই উনিশ শতক থেকে শুরু করে বিশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত এ-বিষয়ে বিস্তর সন্দর্ভ লেখা হয়েছে। তার প্রায় প্রতিটিতেই ভূমি-ব্যবস্থাপনার প্রভাবশালী এ-কানুনের সমালোচনা ছিল। রণজিতের বইটির প্রথম স্বাতন্ত্র্য এই যে, ওই বন্দোবস্তের খুঁটিনাটি পর্যালোচনার বদলে এর দার্শনিক দিকটিই তাতে প্রাধান্য পেয়েছে। কিন্তু শুধু এই ফারাকের কারণে তাঁর বই গুরুত্বপূর্ণ হয়নি। কিংবা কেবল ঔপনিবেশিক শাসনের ভিত্তি-স্থানীয় একটা বিষয়ে বই লেখার কারণেই একে আমরা অন্য সন্দর্ভগুলির তুলনায়
উত্তর-ঔপনিবেশিক জ্ঞানকাণ্ডের দিক থেকে অধিকতর জুতসই ভাবছি, তা নয়। এ-বিষয়ক যে-কোনো রচনার, এমনকি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত রচনা ‘বঙ্গদেশের কৃষকে’রও, সমধর্মী তাৎপর্য আছে; এবং সে-অর্থে সবগুলি রচনাই কলোনিয়াল স্টাডিজের পর্যায়ভুক্ত হওয়ার যোগ্য।

প্রকৃতপক্ষে রণজিতের বইটির সঙ্গে পূর্ববর্তী রচনাগুলির একটা জ্ঞানতাত্ত্বিক ও পদ্ধতিগত ফারাক আছে। বিশ শতকের
ষাট-সত্তর-আশির দশকে কলোনিকে পড়ার নানা নতুন কায়দা-কানুন ও দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ ঘটেছিল। সত্তর ও আশির দশক যদিও ওই প্রণালি-পদ্ধতির স্বর্ণযুগ, কিন্তু ষাটের দশকেই রচিত হয়েছিল কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই। রণজিৎ গুহর প্রথম বইটিকে এ-ধারার প্রণালি-পদ্ধতির সঙ্গে মিলিয়ে পড়া যায়। অর্থাৎ বইটিতে লেখক শুধু কলোনিয়াল পর্বের বাস্তবতাই বিশ্লেষণ করেননি, নতুন সময়ে বিকশিত কলোনিকে পড়ার নতুন জ্ঞানতত্ত্ব এবং দৃষ্টিভঙ্গিও ব্যবহার করেছেন। রণজিৎ গুহের পরবর্তী প্রায় চার দশকের লেখালেখিতে নানা ধরনের রূপ-রূপান্তর থাকলেও উপনিবেশ-প্রসঙ্গ এবং অনুরূপ দৃষ্টিভঙ্গি তাতে প্রায় কেন্দ্রীয় বিষয় হিসেবে অক্ষুণ্ন থেকেছে।

গুহর ২০০২ সালে প্রকাশিত বই হিস্ট্রি অ্যাট দ্য লিমিট অব ওয়ার্ল্ড-হিস্ট্রিকে সাধারণভাবে তাঁর বাঁকবদলকারী গ্রন্থ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই বইতেই তাঁর সুস্পষ্ট ঘোষণা আছে; আর তাঁর ভাষ্যকারেরাও এ-বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন না। ইতিহাসতত্ত্বের যে অন্দর তাঁর নিজের এবং সমমনাদের দীর্ঘদিনের সাধনায় সদর হয়ে উঠেছিল, তাকে প্রায় সম্পূর্ণত পরিহার করে তিনি এ-বই থেকেই নতুন পথ অবলম্বন করেন। সেই নতুন পথ তাঁর নিজের তৈরি নয়; তবে প্রতিষ্ঠিত পথেই তিনি নিজের চিহ্ন পরিয়ে দিতে পেরেছেন। আমাদের বর্তমান প্রসঙ্গের জন্য জরুরি তথ্য হলো, এ-বইয়ে হেগেলীয় ইতিহাসতত্ত্বের সমালোচনাপূর্বক প্রভাবশালী ইতিহাসতত্ত্বের বিপরীতে যে নতুন ধারাকে তিনি নিজের পরিবর্তিত আরাধ্য বলে ঘোষণা করেছিলেন, সে-সমালোচনাটা মুখ্যত কলোনিয়াল ডিসকোর্সেই সম্পন্ন হয়েছে। এদিক থেকে এ-বইকেও আমরা অন্তত অংশত পূর্বতন তালিকায় রাখতে পারি। কাজেই নিশ্চিতভাবেই কলোনিয়াল ডিসকোর্সে রণজিৎ গুহের বসতির বয়স অন্তত চার দশক।

দুই

কলোনির নানামাত্রিক রাজনৈতিক বিরোধিতা যে-কোনো কলোনিতেই পাওয়া যাবে। জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারা ও তৎপরতার বিকাশ এবং তার অনুকূলে রাজনৈতিক সক্রিয়তা দুনিয়াজুড়ে উপনিবেশিত জনগোষ্ঠীর প্রায় সাধারণ বাস্তবতা। কিন্তু
এ-বিরোধিতাই কলোনিকে অন্তর্গত বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে ব্যাখ্যা করার কোনো নিশ্চয়তা দেয় না। বস্তুত উল্টো ঘটনাই বরং বেশি ঘটে। উপনিবেশিত জনগোষ্ঠীর যে-অংশটা প্রধানত জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে শরিক হয়, তার মনোগঠন এবং সাংস্কৃতিক গড়ন উপনিবেশের বাস্তবতা দ্বারা এত প্রত্যক্ষভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় যে, উপনিবেশায়ন-প্রক্রিয়াকে আলাদা করে বুঝে ওঠার সুযোগই কমে যায়। তার কারণ, এই শ্রেণি বিকশিত হয় কলোনির জঠর থেকে – কলোনির প্রক্রিয়াগত বাস্তবতার ভেতর দিয়ে। রণজিৎ গুহ তাঁর বহু লেখায় ভারতবর্ষ ও বাংলা অঞ্চলের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে এই জটিলতার হদিস দিয়েছেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, উপনিবেশিত ভদ্রলোকশ্রেণি দেশের শাসনভার পাওয়ার জন্য আকুল হলেও এবং এক ধরনের দেশাত্মবোধে জারিত হয়ে সে-অনুপাতে আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিলেও কলোনির ভাবাদর্শিক ও প্রক্রিয়াগত উপাদানগুলি নিরাসক্ত ভঙ্গিতে বিশ্লেষণ করার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। যে-ধরনের দূরত্বে থাকলে কোনো কিছু সম্যকভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করা সম্ভব, নিজেরা ওই প্রক্রিয়ার ভেতরে থাকায় ভদ্রলোকেরা সাধারণভাবে সে-ধরনের দূরত্ব তৈরি করে উঠতে পারেন না।

বিশ শতকের ষাটের দশকে ঔপনিবেশিক প্রক্রিয়ার নানা অন্তর্নিহিত ব্যাকরণ উন্মোচিত হতে শুরু করে। কলোনির আর্থিক, প্রশাসনিক, সাংস্কৃতিক ও মনস্তাত্ত্বিক দিক নিয়ে বহু তাৎপর্যপূর্ণ গ্রন্থ রচিত হয়। এ-সময় পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে প্রাক্তন কলোনির বহুসংখ্যক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক যোগ দেন। বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের পাঠ্য গ্রন্থ আর পাঠপদ্ধতির মধ্যে তাঁরা ক্রমশ আবিষ্কার করতে থাকেন যে, পশ্চিমা আধিপত্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে প্রণীত বিবরণীগুলিতে উপনিবেশিত মানুষজন হয় প্রায় অনুপস্থিত, কিংবা ভুলভাবে উপস্থাপিত। তাঁদের এ-উপলব্ধির জ্ঞানগত ভিত্তিও ততদিনে পশ্চিমে বিকশিত হতে শুরু করেছে। কাঠামোবাদী চিন্তার পাশাপাশি রিপ্রেজেন্টেশনজনিত নানা সংকট তখন জ্ঞানজগতে ক্রমে প্রাধান্য পাচ্ছিল। ফলে ঔপনিবেশিক প্রক্রিয়াকে কাঠামোগতভাবে দেখা আর উপনিবেশিতকে উপস্থাপনের রাজনীতি সম্পর্কে সচেতন হওয়া জ্ঞানতাত্ত্বিকভাবেই তুলনামূলক সহজ হয়ে উঠছিল।

রণজিৎ গুহ নিঃসন্দেহে অ-পশ্চিমা তাত্ত্বিকদের অন্যতম, যাঁরা বেশ শুরুর দিকেই ওই নতুন জ্ঞানকাণ্ড, দৃষ্টিভঙ্গি ও অ্যাকাডেমিক চর্চায় শামিল হতে পেরেছিলেন। একজন ভারতবর্ষীয় ও বাঙালি হিসেবে তাঁর জন্য কাজটা মোটেই সহজ ছিল না। কারণ, বাংলা অঞ্চলে ঔপনিবেশিক শাসন খুব দীর্ঘমেয়াদি আর গভীর হওয়ায় একদিকে এ-শাসন অনেকাংশেই ‘স্বাভাবিক’ হয়ে উঠেছিল, অন্যদিকে এ-শাসনের প্রতি ভদ্রলোকসমাজের সম্মতিও ছিল প্রায় নজিরবিহীন। সম্ভবত দুটি বৈশিষ্ট্য তাঁকে দ্রুত এ-চর্চায় শামিল হতে সাহায্য করেছিল। ভারতবর্ষের কমিউনিস্ট আন্দোলনে সক্রিয় থাকার কালেই তাঁর মধ্যে ক্রিটিক্যাল দৃষ্টিভঙ্গির নানা লক্ষণ আমরা দেখতে পাই, যাকে নব্য-বামপন্থী ঝোঁক হিসেবে বর্ণনা করা চলে। দ্বিতীয়ত, প্রথম থেকেই তাঁর মধ্যে দেখা গেছে তত্ত্ব ও কাঠামো-প্রণয়ন-প্রবণতা, যা তাঁকে দ্রুত নতুন আবির্ভূত তাত্ত্বিক-প্রায়োগিক চর্চার সঙ্গে যুক্ত করে দিয়েছিল। কারণ যাই হোক, লেখালেখির বৈশিষ্ট্য আর প্রকাশকাল হিসাব করলে হয়তো বলা যাবে, গুহ এ-ধারার তাত্ত্বিকদের মধ্যে অগ্রগামীই ছিলেন।

তিন

তিনি যে সাবঅলটার্ন স্টাডিজ দলের তাত্ত্বিক নেতা হিসেবে আবির্ভূত হতে পেরেছিলেন, কিংবা বয়সে অনেক ছোট মেধাবী তরুণদলকে সে-দলের অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছিলেন, নতুন জ্ঞানকাণ্ড ও প্রণালি-পদ্ধতিতে দক্ষতা নিঃসন্দেহে তার অন্যতম প্রধান কারণ। সত্তরের দশকে কলকাতার অগ্রসর মহলে ঔপনিবেশিক ও উত্তর-ঔপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গির চর্চা জোরদার হয়েছিল। রামমোহন রায়ের দ্বিশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত ভি. সি. জোশি-সম্পাদিত রামমোহন রায় অ্যান্ড দ্য প্রসেস অব মডার্নাইজেশন ইন ইন্ডিয়া (১৯৭৫) বইটিকে এ-ধারার গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনা বলা যায়। দু-বছর বাদেই বেরিয়েছিল অশোক সেনের ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর অ্যান্ড হিজ ইলিউসিভ মাইলস্টোনস (১৯৭৭)। বলার কথাটা হলো, কলোনিয়াল সমাজে জনগোষ্ঠীর যে ধরনের রূপ-রূপান্তর ঘটে থাকে, তাকে সম্যক গুরুত্ব দিয়ে নিকট-ইতিহাস পর্যালোচনার একটা আবহ তখন কলকাতায় বিদ্যমান ছিল। রণজিৎ গুহের আকাক্সক্ষার সঙ্গে তরুণতর তাত্ত্বিকদের যে মণিকাঞ্চনযোগের কারণে সাবঅলটার্ন স্টাডিজের মতো অত্যন্ত সফল স্কুল সম্ভবপর হয়েছিল, তার পেছনে ওই আবহ নিশ্চয়ই অনুকূল ভূমিকা পালন করেছিল।

কথাটা একটু খুলে বলা দরকার। ভারতবর্ষের বিপুল অধিকাংশ মানুষকে ভদ্রলোক জনগোষ্ঠী কিংবা রাষ্ট্র যে যথার্থ ও কার্যকর কায়দায় সম্বোধন করতে পারে না, তা নিঃসন্দেহে সাবঅলটার্ন স্টাডিজের অন্যতম প্রধান দার্শনিক প্রশ্ন। নিম্নবর্ণের সঙ্গে ভাষার এ-ফারাক তৃতীয় বিশ্বের এক গোড়ার গলদ। ভারতবর্ষ এদিক থেকে আরো এক কাঠি সরস। ঘোরতর বর্ণপ্রথা ভারতীয় রাষ্ট্র ও জনগোষ্ঠীর জন্য এ-সংকটকে দুনিয়ার অন্য যে-কোনো এলাকা থেকে আলাদা করেছে। তার সঙ্গে ভয়াবহ দারিদ্র্য তো আছেই। কিন্তু এসব সত্ত্বেও পুরনো দুনিয়ায় উচ্চ ও নিম্নবর্গের মধ্যে ভাষিক দূরত্বটা এতটা জল-অচল ছিল না যে, তা যোগাযোগকে অসম্ভব করে দেবে। যে ফারাক আগেও ছিল, তাকে দুস্তর করে তুলেছে কলোনিয়াল শাসন। কারণ, কলোনির ভদ্রলোকসমাজ সম্পূর্ণ নতুন ভাব ও স্বভাবে, শিক্ষায় ও সংস্কৃতিতে, এবং সামগ্রিকভাবে উৎপাদন ও বণ্টনে বিপুল অধিকাংশ মানুষ থেকে আগের যে-কোনো সময়ের চেয়ে আলাদা হয়ে গেছে। নিম্নবর্গের ভাষায় তার অধিগম্যতা না থাকায় তাদের বাস্তবতা ও সংগ্রাম বিশ্লেষণের জন্য নতুন তত্ত্বকাঠামো প্রস্তাব করতে হয়। কাজেই প্রত্যক্ষ উল্লেখ তুলনামূলক কম থাকলেও সাবঅলটার্ন স্টাডিজ বৃহত্তর অর্থে উত্তর-ঔপনিবেশিক জ্ঞানকাণ্ডেরই অন্তর্গত।

রণজিৎ গুহের ধ্রুপদী গ্রন্থ এলেমেন্টারি আসপেক্টস অব পিজেন্ট ইনসার্জেন্সি ইন কলোনিয়াল ইন্ডিয়া এই নিরিখে পাঠ করা চলে। তত্ত্বায়ন, তথ্য-উপাত্তের নিপুণ গ্রন্থনা আর ইতিহাসপাঠের কাঠামোগত প্রস্তাবের উপস্থিতিতে এ এক ঈর্ষণীয় রচনা। রণজিৎ দেখিয়েছেন, ঔপনিবেশিক ভারতে সংঘটিত প্রান্তিক মানুষের অসংখ্য বিদ্রোহকে জাতীয়তাবাদী বা শ্রেণি রাজনীতির কাঠামোয় পাঠ করা এক গুরুতর তত্ত্বীয় বিভ্রান্তি। বরং এ-আন্দোলনগুলির নিজস্ব কাঠামো ছিল, চৈতন্য ছিল, ছিল রাজনৈতিকতা। ঔপনিবেশিক শাসনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে তারা নিজস্ব কায়দায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল। তাদের সামনে ওই শাসনের প্রত্যক্ষ প্রতিনিধি তথা নিপীড়ক হিসেবে উপস্থিত ছিল জমিদার, ঔপনিবেশিক প্রশাসন ও মহাজন শ্রেণি। কাজেই এ প্রত্যক্ষ নিপীড়কদের বিরুদ্ধেই প্রধানত তাদের ভাষা ও ভঙ্গি কার্যকর হয়েছিল। কতগুলি ক্যাটাগরি বা বর্গ প্রস্তাব করে রণজিৎ গুহ নৈপুণ্যের সঙ্গে এসব বিদ্রোহের স্বরূপ উন্মোচন করেছেন। তাতে ঔপনিবেশিক সমাজে বিপুল নিম্নবর্গের অবস্থা ও অবস্থানেরও প্রতিবেদন প্রণীত হয়েছে।

সাবঅলটার্ন স্টাডিজের আলোচনায় তুলনামূলক কম গুরুত্ব পেলেও এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, এই ইতিহাসতত্ত্বের ভিত্তি হিসেবে ঔপনিবেশিক ও উত্তর-ঔপনিবেশিক তত্ত্বপ্রস্থান খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

চার

তত্ত্বায়ন রণজিৎ গুহের কাজের মর্মগত বৈশিষ্ট্য, আর সে-তত্ত্বায়নের মধ্যে ক্রিটিক্যাল বা পর্যালোচনাধর্মী দৃষ্টিভঙ্গিই সাধারণভাবে তাঁর কাজে প্রধান হয়ে ওঠে। ১৯৬৩ সালের বই এ রুল অব প্রপার্টি ফর বেঙ্গল-এ তিনি প্রধানত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পেছনে ক্রিয়াশীল তত্ত্বেরই অনুসন্ধান করেছেন। এ-বন্দোবস্ত চালুর আগে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে যে দীর্ঘ
তর্ক-বিতর্ক হয়েছিল, আর সে-বিতর্কের ভিত্তি হিসেবে ফিজিওক্র্যাটদের সামন্ততন্ত্র-বিরোধী দর্শনের যে ব্যবহার হয়েছিল, তার তত্ত্বতালাশ করে গুহ দেখিয়েছেন, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় ইউরোপের সবচেয়ে প্রাগ্রসর রীতি-নীতি অনুসরণ করতে চেয়েছিল। যে-ধরনের ব্যবস্থার ফলে ইংল্যান্ডের কৃষিতে ধনতন্ত্রের আবির্ভাব ত্বরান্বিত হয়েছিল, সে-ধরনের নীতিই ছিল উদ্যোক্তাদের আকাক্সক্ষা। কিন্তু ভারতীয় কলোনিয়াল শাসনের পরিপ্রেক্ষিতে, বিশেষত স্থানীয় ভূমি-ব্যবস্থাপনা ও
কৃষি-প্রকৃতি সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞানের অভাবে ফল হলো প্রায় বিপরীত। আধুনিকতা ও পুঁজিবাদের বিকাশের পরিবর্তে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে বাংলা অঞ্চলে জন্ম নিল তুলনামূলক ‘পশ্চাৎপদ’ এক নয়া সামন্ততন্ত্র, যা বিপুল কৃষকের জন্য অধিকতর নিপীড়নের কারণ হয়ে উঠেছিল। এর অন্যসব সামাজিক পরিণতিও ছিল ‘পশ্চাৎপদ’। রণজিৎ গুহ তাঁর এ-সন্দর্ভে এই বৈপরীত্যের কার্যকারণ অনুসন্ধান করেছেন। দৃষ্টিভঙ্গির নতুনত্বে, পর্যালোচনামূলক প্রণালি-পদ্ধতির যোজনায় এবং কলোনিয়াল শাসনের কাঠামোগত নানা বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্কের প্রদর্শনীতে বইটি ঔপনিবেশিক ও উত্তর-ঔপনিবেশিক চর্চার এলাকায় এক ধ্রুপদী গ্রন্থ হিসেবে গৃহীত হয়েছে।

‘নীল দর্পণ : দি ইমেজ অব অ্যা পিজেন্ট রিভোল্ট ইন অ্যা লিবারেল মিরর’ নামের দীর্ঘ প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ সালে। উপনিবেশিত ভারতে আধিপত্য আর অধীনতার যে ব্যাকরণ গুহ বহুদিন ধরে খুঁজেছেন, এ-লেখায় তার চমৎকার প্রতিফলন ঘটেছে। প্রথমেই তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, এ-নাটকের এরকম প্রবাদপ্রতিম খ্যাতির কারণ কী? এর সঙ্গে মধুসূদন দত্ত, শিবনাথ শাস্ত্রী, বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র এবং এরকম আরো বহুজনের নাম এত গভীরভাবে জড়ালো কেন? গুহের উত্তর খুবই ‘ক্রিটিক্যাল’ : এটা ছিল নাগরিক লিবারেলদের মুখ-বাঁচানোর প্রকল্প। ঘোরতর কলোনিয়াল শাসনে নানা ধরনের অধীনতার মধ্যে যে-জীবন তারা যাপন করছিল, নীল-দর্পণের ছদ্ম-বিদ্রোহ তাতে একটা ইজ্জত-রক্ষাকারী আব্রু তৈরি করে। কিন্তু আদতে এ-নাটক মোটেই কলোনিয়াল শাসনের বিরোধিতা নয়।

রণজিৎ গুহ দেখিয়েছেন, নীল-দর্পণ নাটকের লেখক ও পাত্র-পাত্রী এবং এর প্রশংসাকারীরা উপনিবেশিত জনসমাজে বিকশিত ‘উদারনৈতিক মানবতাবাদী’ ঘরানার। ইংরেজি শিক্ষাবাহিত এ-দৃষ্টিভঙ্গি নবীনমাধবের উচ্চারণে খুব স্পষ্ট; আর বিন্দুমাধব তো রীতিমতো পাশ-করা ভদ্রলোক। বিপরীতে নীলচাষীদের একাংশ উদারনীতি ও শিক্ষার বিরোধী। বে-ইনসাফির জন্য এরাই দায়ী, সরকার নয়। কারণ সরকারি আইনে এ-নিপীড়নের রক্ষাকবচ আছে। পুরো উনিশ শতক জুড়ে বাঙালি ভদ্রলোক-সমাজের সরকারের কাছে অন্যতম প্রধান ফরিয়াদ ছিল, এই আইনের সুরক্ষা যেন তারা পায়। নবীনমাধব ও তার পরিবার স্পষ্টতই আইন মেনে চলে, আইনের ওপর ভরসাও রাখে। পক্ষান্তরে উডসহ নীলচাষিদের একাংশ আইনবিরোধী। বস্তুত এটাই কলোনিয়াল ভারতের বিখ্যাত ‘ছোট ইংরেজ-বড় ইংরেজ’ তত্ত্ব। এর মধ্য দিয়ে কলোনিয়াল নিপীড়নকে ‘ছোট ইংরেজে’র জিম্মায় দিয়ে ভদ্রলোক-সমাজ কল্পিত ‘বড় ইংরেজে’র সহবতে মশগুল থাকতে পেরেছে।

মুশকিল হলো, রণজিৎ গুহ দেখিয়েছেন, এই দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রচার অল্প কিছু ভুল-ত্রুটিসহ ঔপনিবেশিক শাসনকে শুধু রেয়াতই দেয় না, বৈধতাও জোগায়। লেখক ও চরিত্রগুলির দৃষ্টিতে নীলচাষিদের জন্য বরাদ্দকৃত ঘৃণার বিপরীতে জমা হয় রাজের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। গুহের মতে, তা-ই স্বাভাবিক। কারণ, এর লেখক দীনবন্ধু মিত্র নিজেই, এবং সমকালীন বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়, এ-দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্বপূর্ণ পোষক। দীনবন্ধুর অন্য লেখাপত্রও পরিষ্কার সাক্ষ্য দেয়, তিনি ব্রিটিশ শাসনের অনুগতই শুধু নন, মনে করেন, এ-শাসনেই ভারতের কল্যাণ নিহিত। মুসলমানরা বিদেশি, আর ওই বিদেশি দুরাচারদের হাত থেকে ব্রিটিশরাই ভারতকে বাঁচিয়েছে – এই জ্ঞানেও তাঁর ইমান খুবই পাকা। গুহ লিখেছেন, এ-ধরনের ‘কম্যুনাল’, ‘প্যারোকিয়াল’ ও ‘লয়ালিস্ট’ লেখক যে আমাদের জাতীয়তাবাদের প্রকাশ হয়ে উঠল, তা ওই জাতীয়তাবাদকেই চিনিয়ে দেয়। আদতে এটা এক গভীর-ব্যাপক রাজানুগত্যের নাটক, যা পেটি-বুর্জোয়া বিপ্লবপনার মেনিফেস্টো হয়ে উঠেছে।

কিন্তু রণজিৎ গুহের প্রশ্নটি আসলে এরচেয়েও গভীর। ভদ্রলোক-সমাজ তার নিজের চিত্রায়ণ যেভাবে ইচ্ছা করুক, কিন্তু তাদের এরকম দৃষ্টিভঙ্গিতে অঙ্কিত কৃষকসহ অন্য নিম্নবর্গের মানুষ যদি হয়ে ওঠে নিম্নবর্গের প্রতিনিধি, তাহলে তার জ্ঞানতাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক ক্ষতি তো বিপুল। বাংলা সাহিত্যে নীল-দর্পণের তোরাপের পরিচিতি কৃষক-সমাজের এক তুরীয় প্রতিনিধি হিসেবে। কিন্তু রণজিৎ গুহ দেখিয়েছেন, তোরাপ তার ভাষা, উচ্চারণ, ভঙ্গি সব অর্থেই এক ভদ্রলোকি নির্মাণ। ‘তোরাপ ইজ অ্যা স্যুডো পিজেন্ট অ্যান্ড স্যুডো র‌্যাবেল’।

অ্যান ইন্ডিয়ান হিস্টোরিওগ্রাফি অব ইন্ডিয়া : অ্যা নাইন্টিনথ-সেঞ্চুরি এজেন্ডা অ্যান্ড ইটস ইমপ্লিকেশন বেরিয়েছিল ১৯৮৮ সালে। বইটি কলকাতায় দেওয়া তিনটি বক্তৃতার সংকলন। রণজিতের বর্ণাঢ্য লেখক-জীবনের খুব উল্লেখযোগ্য বই না হলেও ইতিহাসতাত্ত্বিক হিসেবে তাঁর প্রবণতা ও দৃষ্টিভঙ্গিকে তা খুব নিখুঁতভাবে চিহ্নিত করে। বইয়ের প্রথমেই তিনি ব্রিটিশ-ভারতের ইতিহাসের সূচনা-বছর হিসেবে শনাক্ত করেন ১৭৬৫ সালকে। উনিশ শতকে ব্রিটিশরা যখন গুছিয়ে বসেছিল, আর জন্ম দিয়েছিল খুব গোছানো এক অনুগত ভদ্রলোকশ্রেণির – আমাদের প্রভাবশালী ইতিহাসে সাধারণত তখন থেকেই আলোচনার প্রবণতা দেখা যায়। ফলে রেনেসাঁস বা আলোকায়নের গল্পটি জমে ভালো। রণজিৎ গুহ ব্রিটিশ শাসনের মূল ভিত্তিগুলি পড়তে চান আরো আগে থেকে, যাতে ব্রিটিশ শাসনের ইতিহাসকে উপনিবেশায়ন-প্রক্রিয়া হিসেবে পড়তে সুবিধা হয়। তিনি লক্ষ করেছেন, আমাদের ইতিহাস সাধারণভাবে উপনিবেশায়ন-প্রক্রিয়াকে ঠিকমতো ঠাহর করতে পারে না; কারণ, এ-ইতিহাস প্রধানত লিখেছেন তাঁরাই যাঁদের জন্ম ওই প্রক্রিয়ার মধ্যেই।

তাঁর মতে, ব্রিটিশদের প্রাচ্যবিদ্যার চর্চা আসলে শাসকপক্ষের অপূর্ণতা, এবং তার পূর্ণকরণ প্রকল্প, অন্যদিকে স্থানীয়দের জন্য আয়োজিত শিক্ষা-কার্যক্রমকে আধুনিকতা, সংস্কৃতি, সভ্যতা ইত্যাদি যে-নামেই ডাকা হোক না কেন, তা প্রত্যক্ষভাবে ঔপনিবেশিক ক্ষমতা-সম্পর্কের সঙ্গে জড়িত। যাঁরা ভারতবর্ষের ইতিহাস লিখেছেন, তাঁরা শিক্ষা-সংস্কৃতির দিক থেকে
ক্ষমতা-সম্পর্কের সঙ্গে এতটাই একাকার যে, ভারতবর্ষের নিজস্ব ইতিহাসের এজেন্ডা তাতে থাকার প্রশ্নই আসে না। উনিশ শতকের গোড়ায় রামরাম বসু, রাজিবলোচন মুখোপাধ্যায় কিংবা মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার পুরনো বিশ্বাস ও ভাষা-কাঠামোয় ইতিহাস লিখেছেন। কিন্তু শিগগির এ-ভাষা ও ইতিহাসদৃষ্টি পরিবর্তিত হয়ে যায়। জেমস মিল ও জে. সি. মার্শম্যানের মতো ব্রিটিশ ঐতিহাসিকদের ছাঁচই আদর্শ বলে গণ্য হতে থাকে। এর মধ্যেই রজনীকান্ত গুপ্ত সিপাহী যুদ্ধের ইতিহাস (১৮৮০) লিখেছেন, অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় লিখেছেন সিরাজুদ্দৌলা (১৮৯৮)। দুটিই, রণজিতের মতে, প্রশংসনীয় কাজ হলেও
তথ্য-উপাত্তের দিক থেকে ব্যাপকভাবে ব্রিটিশ উৎসের ওপর নির্ভরশীল। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৮০ নাগাদ কয়েকটি প্রবন্ধে নিজস্ব ইতিহাসের আবেদন জানান। কিন্তু তাঁর উদ্যোগে একদিকে কলোনিয়াল বিশ্বদৃষ্টির প্রবল প্রতাপ, অন্যদিকে  উপনিবেশ-পূর্ব ভারত বিষয়ে কলোনিয়াল জ্ঞানের প্রভাবেই ‘অপর’ নির্ধারণে তাঁর বিরাট গোলমাল। কাজেই উনিশ শতক জুড়ে ভারতীয় মূলধারার ইতিহাস আদতে ভারতীয় ‘এজেন্ডা’র সাক্ষাৎই পায়নি। বইটিতে রণজিৎ গুহের প্রধান দাবিকে এভাবে প্রকাশ করা যায় : যাকে বলে ‘ক্রিটিক অব কলোনিয়াল পাওয়ার’, ব্রিটিশ-ভারতের ইতিহাসচর্চায় তা সর্বত্রই অনুপস্থিত। তিনি নিজে এই অনুপস্থিতির স্বরূপ নির্ধারণের পাশাপাশি সংক্ষেপে প্রশ্নটিও উত্থাপন করেছেন।

ডমিন্যান্স উইদাউট হেজিমনি : হিস্ট্রি অ্যান্ড পাওয়ার ইন কলোনিয়াল ইন্ডিয়া (১৯৯৭) ঔপনিবেশিক ক্ষমতাকে আরো বিশেষভাবে পরীক্ষার আওতায় এনেছে। সংগত কারণেই ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র জনগোষ্ঠীর সম্মতির ভিত্তিতে পরিচালিত হয় না, বা হতে পারে না। ফলে তার ভিত্তি হয় আধিপত্য। তার ভিত্তি হয় নিপীড়ন। সভ্য ও গণতান্ত্রিক কেন্দ্র যখন পরিচালনা করে ঔপনিবেশিক ক্ষমতা, তখন কেন্দ্রের বিপরীত অবস্থা তৈরি হয় কলোনিতে। রণজিৎ গুহ এ-অবস্থাকে বর্ণনা করেছেন ‘ডমিন্যান্স উইদাউট হেজিমনি’ হিসেবে। মুশকিল হলো, দেশ স্বাধীন হলেই এ-সমস্যার সমাধান হয় না। কারণ, যে উপনিবেশিত ভদ্রলোকশ্রেণি নতুন আবির্ভূত দেশটির শাসনক্ষমতার ভাগীদার হয়, বিপুল অধিকাংশ সাবঅলটার্নদের কোনো একক হেজিমনিক প্রকল্পে, তা সে স্বদেশিয়ানাই হোক বা জাতীয়তাবাদ, অঙ্গীভূত করা তার পক্ষে সম্ভব হয় না। ফলে নতুন নামে ও প্রকরণে বস্তুত পুরনো ‘ডমিন্যান্সে’র পুনরাবৃত্তি ঘটে।

এ-বইয়ে রণজিৎ গুহ ভারতবর্ষের খুব অন্তরঙ্গ অভিজ্ঞতা ও বাস্তবতার সাপেক্ষে ঔপনিবেশিক শাসনের মর্মগত রূপরেখা প্রণয়ন করেছেন। একে সম্পর্কিত করেছেন ইতিহাসতত্ত্বের সঙ্গে, যা তাঁর সবসময়ের প্রধান প্রকল্প। তদুপরি ইতিহাসের প্রকল্পকে রাজনীতি ও জনমানুষের প্রকল্পের সঙ্গে একীভূত করে নতুন ইতিহাসতত্ত্বের সম্ভাবনাও ঘোষণা করেছেন।

পাঁচ

কলোনিয়াল ভারতের কেন্দ্র হিসেবে কলকাতায় শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের দারুণ বিকাশ ঘটেছিল। এ-কারণে বাঙালি ভদ্রলোক জনগোষ্ঠীর মধ্যে কলোনিয়াল শাসনের প্রতি সহমর্মিতার হার তুলনামূলক অনেক বেশি। কিন্তু কলোনিয়াল শাসনের যেসব কাঠামোগত পরিণতি উপনিবেশিত জনগোষ্ঠীকে ভোগ করতে হয়, বাংলা অঞ্চলে তার পরিমাণও বেশি বই কম নয়। সেসবের পর্যালোচনা আমাদের অঞ্চলে সংগত কারণেই প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম।

রণজিৎ গুহ কাজটা শুরু করেছিলেন অন্যদের চেয়ে আগে। আর দীর্ঘদিন নানা সন্দর্ভে ঔপনিবেশিক শাসনের বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ করে প্রধানত বি-উপনিবেশায়িত একটি ইতিহাসতত্ত্ব নির্মাণের কাজ করেছেন। তত্ত্ব-প্রণয়নের প্রবণতা ও কুশলতা থাকায় এক্ষেত্রে তাঁর সাফল্যও বেশ চড়া। ভারতীয় উপমহাদেশের বিশেষ ইতিহাস অবলম্বন করেই তিনি নানা সার্বিক সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। সে-কারণেই দুনিয়ার আরো নানা প্রান্তে তাঁর কাজ সুফলদায়ক হয়েছে।