শিরোনামহীন

প্রথম প্রজন্মের চিত্রশিল্পীদের মধ্যে আবহমান বাঙালির জীবন রূপায়ণ ও লোক-ঐতিহ্য কাইয়ুম চৌধুরীর তুলিতে প্রাণবন্ত, সজীব ও সৃজনের প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছিল। তাঁর পটে তিনি বাংলাদেশের মানুষ, নদী ও নিসর্গের নানা অনুষঙ্গকে বহুরূপে এবং বহুবর্ণে অঙ্কন করেছেন। কাইয়ুম চৌধুরী বিভিন্ন মাধ্যমে নিত্য কাজ করে এদেশের চিত্রশিল্পে এক অগ্রগণ্য চিত্রকরে পরিণত হয়েছিলেন।

ষাটের দশকে তাঁর চিত্রে বাঙালির জীবনসংগ্রাম ও শ্যামলী নিসর্গ আশ্চর্য দক্ষতার সঙ্গে তুলে ধরেছিলেন তিনি। এই সময় থেকে তাঁর চিত্র শেকড়সন্ধানী ও মৃত্তিকালগ্ন হয়ে ওঠে। তিনি নিজস্ব শৈলী ও চিত্রভাষা নির্মাণেও সমর্থ হন। প্রবহমান ঐতিহ্য ও ছন্দের সঙ্গে আধুনিক শৈলীর সম্মিলনে নিজেরসৃষ্টির উদ্যানকে তিনি করে তুলেছিলেন গহন ও সূক্ষ্ম।

যে-কোনো জাতীয় সংকট ও দুর্যোগে তাঁর শিল্প-সত্তা প্রবলভাবে আলোড়িত হয়েছে। তারই প্রতিফলন দেখা যায় তাঁর সৃষ্টিগুচ্ছে। বিশেষত মুক্তিযুদ্ধকে ভিত্তি করে তেলরং ও জলরঙে বেশকিছু উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন তিনি। ‘অগ্নিদগ্ধগ্রাম’ সিরিজে যে-ছবি অঙ্কন করেছেন তিনি শিল্পমূল্যে তা অসামান্য বলে বিবেচিত। মুদ্রণশিল্প ও প্রচ্ছদে তাঁর উদ্ভাবন তাঁকে এ ক্ষেত্রে শীর্ষ শিল্পীতে পরিণত করেছিল।

বেঙ্গল ফাউন্ডেশন-আয়োজিত তৃতীয় উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবে কাইয়ুম চৌধুরী ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর আকস্মিক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তাঁর মৃত্যুতে এদেশের চিত্রকলা, প্রচ্ছদ ও মুদ্রণ শিল্পজগতে যে-ক্ষতি হয়েছেতা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। প্রচ্ছদে ব্যবহৃত চিত্রটি ১৯৯২ সালে তেলরঙে আঁকা। ছবিটির সংগ্রাহক আবুল খায়ের।