আমি কি জানি সোনা নয় আমার চাই পরশপাথর

শুধু জানি খনিতে আছে রাশি রাশি সোনা, তাই –

খনির পাতালপুরী থেকে তোমাকে পেতে আমি

কত যে, কতবার যে জীবন দিই; আকরিক থেকে

শোধনে সাধনে তোমাকে তোমার সম্পন্ন মহিমায়

পেতে কত যে ঘাম ঝরাই, এভাবে ঘাম

রক্ত ঝরাতে ঝরাতে ঝরাতে ঝরাতে

এক স্বর্ণদেবীতে আমার বিশ্বাস ঠাঁই খোঁজে

আমি স্বর্ণা নামে তোমার পূজা দিই –

স্বর্ণা, তোমার সোনাজলে ধুয়ে দাও আমার সমস্ত লাঞ্ছনা

গ্লানি, বেদনা – সোনায় সোনায় ভরে তোল আমার

অথই অপূর্ণতা, সোনার অতলে তলিয়ে যাক আমার

সব বঞ্চনা, পরাজয়; এদিকে আমার স্বপ্ন কিংবা প্রার্থনার

মধ্যে তোমার মহিমায় জেগে ওঠে মাঠের পর মাঠ ভরা

সোনালি ধান, মাইলের পর মাইল গমের স্বর্ণফলন

মরা নদীর বিশাল বুক জুড়ে সর্ষের মেলা আর বনে বনে

সোনালুর সোনালি ফুলেল বান। বস্তুত যেখানেই

আমার চোখ যায় সেখানেই তোমার ভ্রুকুটিতে

এমন ধ্রুপদ আয়োজন – জগন্ময় তোমার এই 

অপার ঐশ^র্য আমি কী করে যে ধারণ করি! কিন্তু

এমন সব রূপকল্প বস্তুত তোমার রূপকে ঐশী ফাঁদ – মরীচিকা

ক্ষেতে ক্ষেতে কিষানের ফেলে যাওয়া শস্যের

এক-আধটি ছড়া কিংবা ইঁদুরের সঞ্চিত এক-আধ মুঠ দানা

ছাড়া কপালে আমার কিছুই জোটে না, মাঠে মাঠে সারাদিন

খোঁড়াখুঁড়ি করেও কালো মানুষের যেমন জোটে না

জঠর জ্বালা জুড়ানোর মতো সামান্য সোনাও, জোটে

স্বর্ণকেশীর তাচ্ছিল্য, অপমান, বঞ্চনা আমারও তাই

তোমাকে পাবার স্বপ্ন, সাধনায় এ আমার কেবল

বর্জ্য ঘাঁটাই, ঘেঁটে ঘেঁটে অপ্রাপ্তির অতল ভিতে

বঞ্চনার কালো পাহাড় গড়া, এই অসম্ভব সাধন –

তার যন্ত্রণা, গ্লানির প্রতিমাই তবে স্বর্ণা!

Published :


Comments

Leave a Reply