ম্যারিনা নাসরীন
-
আকন্দ ফুল
আমার মা ফৌজিয়া খাতুনের খুব বাজে একটা অভ্যাস আছে। গভীর রাতে আমার মাথা হয়ে যায় তার চারণভূমি। তিনি সেখানে কিছু একটা খুঁজে বেড়ান। সেটা উঁকুন হতে পারে বা খুশকি। ঘটনা এক-দুই দিনের নয়, প্রতিদিনের। এখন রাত বারোটা পেরিয়ে গেছে, আমার মা বাঁ হাতে হারিকেন উঁচু করে ধরে ডানহাতে আমার চুলে বিলি কাটছেন। মাঝেমধ্যে তিনি হারিকেনের…
-
অমানিশার কালে
হাশেম মিয়া এমনভাবে রিকশা টানছে যেন হাড্ডিসার রুগ্ণ কোনো গরু জোয়াল-কাঁধে চৈত্রের ভূমি কর্ষণ করছে। অথচ ভিআইপি এই সড়ক যেমন মসৃণ, তেমন তেলের মতো ঝাঁ-চকচকে। ইয়াসমিন উদ্বিগ্ন স্বরে বলে, ‘ও আব্বা আইজ কি তুমার শইলডা খারাপ? এবায় চালাইতেছ যে? দিরং হইব তো!’ ‘খারাপ না রে বেডি। তর ওজন বাড়তাছে মনে লয়! হা-হা-হা-হা …’ রাত বারোটা…
-
দরবার
মুখোমুখি সিটে বসা ভদ্রমহিলার কপালের ভাঁজে চরম বিরক্তি। ঈশানের দিকে তিনি ঘন ঘন অগ্নিদৃষ্টি হানছেন। দাঁতে দাঁত পিষছেন, ‘উফ! মানুষের কমনসেন্সের এত অভাব!’ ফোনে ঈশানের লাগাতার কথা বলাই ভদ্রমহিলার বিরক্তির কারণ। কিন্তু কিছু করার নেই। কমনসেন্সের চাইতে বাড়িতে লাগাতার যোগাযোগ রাখাটা এখন অধিক জরুরি। রজব আলীর ছুরির আঘাতে বাবা হাসপাতালে অথচ তার অবস্থা সম্পর্কে স্পষ্ট…
-
আমার বন্ধু হেলাল
লোকটি যে হেলাল, সে-বিষয়ে আমার মোটেই সন্দেহ ছিল না। কারণ পৃথিবীর আর কারো পক্ষেই এমন অভিনব কায়দায় বিড়ি টানা সম্ভব নয়। হেলাল আমার বন্ধু, আমার মন্দ স্বভাবের গুরু। ময়মনসিংহে এসে হাওড়ের চাকার সঙ্গে যখন পথের সংঘর্ষ বন্ধ হলো রাত তখন প্রায় পৌনে ২টা। এই একটি জায়গায় এসে প্রতিবারই আমার মনে হয়, এই মুহূর্তে ফুসফুসে ধোঁয়া…
-
রিবন
ম্যারিনা নাসরীন এক নভেম্বর মাসের একুশ তারিখ বিয়ের দিন ধার্য হয়েছে। হাতে আছে মাত্র দু-মাস। পল্টনে আড়াই কামরার ভাড়া করা বাসায় শফিকের সঙ্গে নাদিয়ার যুগলজীবন সেদিনই শুরু হবে। আড়াই কামরা বলতে দু-বেড আর ড্রইং কাম ডাইনিং। বিয়ের এক মাস আগে শফিক মেস ছেড়ে এই বাসায় এসে উঠবে, তেমনটাই ঠিক হয়েছে। নাদিয়ার কথা, নতুন সংসারের প্রতিটি…
-
চিরকুট
ছোট্ট জংশনটিতে গালিব ছাড়া আরো যারা নামল তাদের বেশিরভাগ শ্রমিক শ্রেণির। সম্ভবত আশেপাশে বড় কোনো ফ্যাক্টরি রয়েছে। জংশনটি খুব একটা বদলায়নি আর বদলালেও সেসব খেয়াল করে না গালিব। রিকশা না নিয়ে হেঁটে হনহন করে বাড়ির পথ ধরে। ছোট ছোট চায়ের দোকানে আড্ডা দেওয়া যুবকদের কেউ কেউ অবাক হয়ে চেয়ে থাকে গালিবের দিকে। প্রায় ছয় ফুট…
-
সফেদ আলীর মৃত্যু-সংক্রান্ত জটিলতা
ভয়টা মনের মধ্যে তখনই সেঁধিয়ে গিয়েছিল, যখন দিন থাকতে মালোপাড়া থেকে সফেদ আলীর ফেরা হলো না। মালোপাড়ার কোলঘেঁষে প্রায় কোয়ার্টার মাইলব্যাপী শুধু বাঁশ আর বাঁশ। বাঁশঝাড়ের ঘনত্বের কারণে সূর্য ডোবার আগেভাগে এদিকটায় অন্ধকার নেমে আসে। আর এখন তো রাতের একপ্রহর পেরিয়ে গেছে। শালা মনের সুখে রাত-বিরেতে কেউ এদিকে আসে? কিন্তু সুভাষ মালো আনিয়ে ছাড়ল। এই…