শাহানা মাহবুব

  • এই নগরে

    এ নগর থেকে একদিন বেরিয়ে যাবো আমি এখানে কেটেছে কত দীর্ঘ কালবেলা আর কত গ্রহণের কাল করবো পার এই ভণ্ডামি নষ্টামির শহরে! আর কত … বহুদিন পর আজ ভিজেছে নগর দূরের পথ অবধি! এমন বৃষ্টি এই ভাদরে! জল ঝাঁপিয়ে পড়ছে পাতার কোলে লাফিয়ে নামছে ফোঁটায় ফোঁটায় এতকিছু – তবু বৃষ্টিশেষে কেন নেমে আসে মৃত্যুর স্তব্ধতা…

  • আত্মপ্রতিকৃতি

    একজন বিমর্ষ কেউ দাঁড়িয়ে রয়েছে দরোজায় মুখে তার মহাকালের মৌনতা                 চোখে হিরণ¥য় বেদনার আলো – তবু সে বলে না কিছু তাকে খুলে দাও দরোজা – ডেকে নাও তাকে                            আসুক সে ঘরে, ছুঁয়ে থাকো তাকে – সে এক শাপভ্রষ্ট বালিকা মহাকাল সবকিছু থেকে নির্বাসিত করেছে তাকে দুঃখের শ্যাওলা জড়িয়ে রয়েছে তার রূপময় হৃদয়ে ভেনাসের…

  • মিথ্যেদিনের ছবি

    নদী এখন নদীর মতো নেই স্বচ্ছ জলে যায় না দেখা মুখ পদ্মপাতায় সাপ! ভারি উন্মুখ – ভালোবাসায় সে এক অভিশাপ গোলাপ নেবো? তাতেও কাঁটা            নয় তো সে নিষ্পাপ; তাহলে এক মেঘভাঙা রোদ্দুর আসবে বলে জানলা খুলে রাখি আলোয়-ছায়ায় মিথ্যে আঁকিবুকি তার আড়ালে তোমারি মুখ দেখি – অনন্য এক মধুর ছবি আঁকি; জানি আমি মিথ্যে…

  • সিঁড়ি

    একটা করে ভাঙছি সিঁড়ি উঠবো বলে পাহাড়-চুড়োয় তবু কেন নামছি নিচে – জীবন আমার এমনি ফুরোয় বুকের ভেতর কোন পিপাসা প্রাণটা যদি একটু জুড়োয় সাঁতরে গেলাম অথই নদী – ত্রস্ত দু-হাত ঝিনুক কুড়োয় ভাবনা আমার অনেককিছু পাই না খুঁজে কূলকিনারা এমনি আমি ছন্নছাড়া – মনটা কেমন পাগলপারা জীবন যেন সুতোছেঁড়া বেতাল ঘুড়ি, এলোমেলো বেড়ায় ঘুরে…

  • বর্ষ-আবাহন

    মহড়া চলছিল আগেই – বারোটা বাজতেই রাত আর রাত্রি থাকলো না স্নিগ্ধ-মোলায়েম – কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ ছিল আগের মতোই – স্কাইস্ক্রেপার পেরিয়ে সে থমকে দাঁড়ায় নগর-গলির আকাশে; আসছে নতুন বছর – উন্মত্ত মানুষ শব্দ আর বারুদের গ্রেনেড নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো সেই নতুনের ওপর; নতুনের কেতন গেল ছিঁড়ে – হল্লা-চিৎকারে মুহূর্তেই চরাচর উন্মত্ত – রাত টালমাটাল –…

  • নিভৃত মৃত্যু

    পুরোনো পাতার মতো নৈঃশব্দ্য পড়ছে ঝরে এই বসন্ত দুপুরে – তারপর অপরাহ্ণ এসে গেছে আকাশজুড়ে; জীবন-বিচ্ছিন্ন চমকিত শিলা গিয়েছে গড়িয়ে               বহুদূর অধঃপাতে, তাকে আর ফেরাবে কে? এইসব বিচ্ছিন্নতা, মুছে-যাওয়া নির্জন দিন       আনে শুধু বেদনাই আমার হৃদয়ে; অতল জলের সাঁতারে খাবি খেয়ে বাঁচে শুধু সাহসী নাবিক – অন্যদিকে আমি দেখি চমকিত জীবনের দ্যুতিময় বসন্তের…

  • পথ

    বিছানো রয়েছে পথ বহুদূর অবধি সর্পিল পাহাড়ের ঢাল বেয়ে গিয়েছে যে নদী তারই কোলঘেঁষে – প্রকৃতি ও মানবনিবাস                     গেছে বহুদূর অজানায় – তারপর নদী ও পাহাড়ের কোল তাকে         স্বপ্নের মতো করে নিয়েছে জড়িয়ে বহুদূর মেঘের ওপারে; আমরাও হেঁটেছি কত জীবনের অনিকেত পথ হারিয়েছে সেই দিন জ্যোৎস্নার মিথ্যে কুহকে! শৈশবের আলপথে হেঁটে হেঁটে কেটে গেছে  যেই…

  • করতলে রঙিন ঝিনুক

    রুগ্ণ রাতের দুঃস্বপ্ন থেকে পরিত্রাণ চেয়েছি শুধু গিয়েছি স্বপ্নের কাছে –    দুঃখময় পরিভ্রমণ শেষে যেমন যায় মেঘ             দিনের পরিক্রমায় রাত্রিকে ছাড়িয়ে; আত্মতুষ্ট ছিলাম না কখনো –                      দুঃখময় দিনপঞ্জি মেলে দেখি খুলে দেখি জীবনের খেরোখাতা – মেলাই গুণ-ভাগ আমার আক্ষেপগুলো তুলে রাখি                      জীবনের গোপন পকেটে, যতদিন বেঁচে আছি – ছায়াময় দিনে চোখ বেঁধে খেলে যাই কানামাছি…

  • পরাবর্ত কাল

    শাহানা মাহবুব    কী আছে বৃষ্টিতে! কী আছে মেঘের ভেতরে তার শব্দের ইন্দ্রজাল তুলে আনে কত কী যে কথা! আমরাও একদিন ভিজেছি বৃষ্টিতে                  সেই রূপকথা হারায় না কখনো নক্ষত্রভরা কিছু আকাঙ্ক্ষার রাত যদিও চলে গেছে বহুদূরে সেই পরাবর্ত কাল তবু দেখো ফিরে আসে বেদনার ধূসর সকাল; অপেক্ষার দুঃসহ দিন গেছে কত – গেছে কত রাত দুই…