ছোট গল্প

  • কষ্টে আছে আইজুদ্দিন

    আন্দালিব রাশদী ঢাকা শহরের দেয়ালের লিখন যদি বিপ্লব ছড়াতে পারে, স্বাধীনতার আগুন জ্বালাতে পারে, ফাঁসির দাবি জানাতে পারে, ভোট ভিক্ষা চাইতে পারে, সরকার উৎখাতের হুমকি দিতে পারে, জনৈক বাবুল মিয়া এবং অজ্ঞাত এক লাইলির মাঝখানে যোগচিহ্ন বসিয়ে তাদের ভালোবাসার ডঙ্কা বাজাতে পারে, নিরাপদ এমআর এবং ডিঅ্যান্ডসির গ্যারান্টি দিতে পারে, তাহলে তার কষ্টের কথা কেন শহরবাসীকে…

  • চালককে সরিয়ে দেওয়ার পর

    হামিদ কায়সার আমাদের বাসটা যখন যাত্রার প্রারম্ভ ধকল কাটিয়ে মাত্র চলতে শুরু করেছে, পেয়ে গেছে সবটুকু স্বতঃস্ফূর্ততা, তখনই লোকটির আগমন Ñ ছোটখাটো শরীর, জলপাই রঙের অদ্ভুুত বেমক্কা পোশাক পরনে Ñ চকিতে একবার মনে হচ্ছিল আরব-জোব্বা আরেকবার লাগছিল টেক্সাসীয় ওভারকোটের মতো, টাইট হয়ে লেগে আছে চিমসানো শরীরে, অ্যাশ কালারের বিশাল বোতামগুলো যেন তাকেও ছাপিয়ে যাচ্ছিল। মাথায়…

  • কী কথা তাহার সনে…

    কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর শান্তা আর সজল মিলে যে ওরা হয়, এই ওরা কি কখনো, কোনো একদিন, একদা বা কোনো এককালে বন্ধু ছিল? কী জানি থাকতেও পারে। শান্তা কখন থেকে তার ফেসবুক ফ্রেন্ড হয় তা সৌভিক সজল অনেক চেষ্টা করেও মনে করতে পারে না। নমিতা রহমানের কথাই তার মনে পড়ে – সে-ই বোধকরি তাকে এমন কিছু সাজেস্ট…

  • ঢেউটিন পাকা বারান্দা বদনা চিলমচি মাছালো পুকুর

    সালেহা চৌধুরী যখন ছেলেমেয়ে নিয়ে ভাবছে না আম্বুরি আর গফুর হঠাৎ করে জানা গেল আম্বুরি পোয়াতি। গত শীতে মরিবুজানের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে মাঠের মাঝখানে একটা বড় গাছে নানা অং-এর তেনা ঝুলে থাকতে দেখেছিল। Ñ এগলা কেংকা তেনা? প্রশ্ন করেছিল আম্বুরি। Ñ তোর মতো বানজা বেটিছোল যারা কোনোদিন পোয়াতি হবার পারে না, যার কেরে জরায়ুত তালাচাবি…

  • বসন্তদিনে

    মোস্তফা কামাল মেয়েটি দাঁড়িয়েছিল রাস্তার পাশে, হয়তো পার হওয়ার অপেক্ষায়। কেবলই কৈশোর পেরিয়েছে সে Ñ দেখে তেমনই মনে হচ্ছিল Ñ মুখজুড়ে এখনো কৈশোরের লাবণ্য ছড়ানো। চোখে কৌতূহল, হয়তো খানিকটা চপলতাও, ঠোঁটে মৃদু-মায়াময় হাসি। অথচ সিঁথিতে আঁকা গাঢ় সিঁদুর, আর কপালের লাল টকটকে টিপটি তার বিয়ের চিহ্নটিকেই প্রকাশ করছে যেন! এত অল্প বয়সে বিয়ে! চকিতে একবার…

  • একটি মৃত্যু – তার পরের অথবা আগের কথন

    নাসরীন জাহান বারান্দার সামনে থেকে আচমকা বাতাসে খাটিয়ার ওপর ঢেকে থাকা শাদা কাপড়টা কেঁপে মাথার কাছ থেকে মৃদু শব্দে সরে গেলে জেসমিনও ক্ষীণ নড়ে দৃষ্টি প্রসারিত করে। এক দুর্মর নিষিদ্ধ কৌতূহলে ভেতরটা চায় মুখটার এক ফালি হলেও দেখতে, যা এতক্ষণ তাকে কেউ দেখতে বলেনি, তার নিজেরও সাহস বা ইচ্ছে কোনোটাই হয়নি। বজ্রাহতের মতো কিছুদূরে বসে…

  • দলেবলে এবং বিলবোর্ডেও হুমায়ুন

    হুমায়ুন  মঞ্জু সরকার বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বাড়ির রাস্তা বত্রিশ নম্বরে ঢোকার মুখে ফুটপাতে নতুন এক বিলবোর্ড দেখে ভোরবেলা একটি কাক তার উপরে উঠে বসে। রাস্তার ধারে বড় বড় বিলবোর্ড ও আলো-ঝলকানো হরেকরকম বিজ্ঞাপন দেখে কাকটি অভ্যস্ত। কিন্তু এ-জিনিসটার ওপরে বসেও বুঝতে পারে না, কোত্থেকে এবং কেনই-বা এটা এখানে উঠেছে। মাথা নিচু করে বিলবোর্ডের বুক দেখে সে।…

  • অলীক রাতের গল্প

    জাকির তালুকদার আমাদের এলাকার বরকত আলীর বড়লোক বনে যাওয়ার কাহিনি আলাদা বয়ানের কোনো প্রয়োজন পড়ছে না এই কারণে যে, স্বাধীন সোনার বাংলায় যারা যারা বড়লোক হয়েছে, তাদের সবার গল্প প্রায় একই রকম। প্রত্যেকেরই একটা করে আলাদিনের জিন পাওয়ার ঘটনা রয়েছে। তবে বড়লোক হওয়ার পরে কেউ আর একরকম থাকে না। তাই তাদের প্রত্যেকের গল্প আলাদা আলাদা…

  • পোস্টমাস্টার ২০১০

    আনিসুল হক ৬২ বছর বয়সে ডাক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হোসেন সাহেব আবিষ্কার করলেন, বালিকা রতন আর বালিকা নেই, রমণী হয়ে গেছে। এটা আবিষ্কার করবার জন্য তাকে সেই অপরাহ্ণের জন্য অপেক্ষা করতে হলো, যখন তিনি দোরঘণ্টি বাজিয়ে নিজবাড়ির দরজা খোলার অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছিলেন, আর রতন স্নানঘরে ঝরনার নিচে দাঁড়িয়ে ভিজছিল, হঠাৎ কলবেল বেজে ওঠায় তড়িঘড়ি করে…

  • যুধিষ্ঠিরের সহোদর

    পূরবী বসু না, অবুঝ বালক সে নয়। হঠাৎ করে বা তাৎক্ষণিকভাবে মন-উচাটনের কারণে কোনো অনভিপ্রেত ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়বার মতো তরুণ বয়সও তার নেই। সে খুব ভালো করেই জানে নিজের অবস্থান। যথেষ্ট সজাগ প্রতিটি পদক্ষেপে। কর্মকাণ্ডে। সে জানে, তার চিন্তার কিংবা লেখার পরিধি এটা নয়, যেখানে কল্পনাকে সে আকাশের অন্য পাড়ে পৌঁছে দিতে পারে। পারে…

  • বেগম জাহানারার আব্র“

    ওয়াসি আহমেদ শেষ পর্যন্ত সতর্ক পাহারা সত্ত্বেও বেগম জাহানারা যখন খানিকটা সন্তর্পণেই চোখ বন্ধ করলেন, তখন কেউ জানুক না জানুক, তিনি জানতেন এক নাছোড় লজ্জার জ্বালাপোড়া থেকে রেহাই পেলেন। তখন সকাল। পর্দামোড়া জানালার কাচে কুয়াশাহীন শেষ ডিসেম্বরের কিছুটা স্থবির রোদ। পর্দার ফাঁক-ফোকর দিয়ে ঘরের ভেতরেও খণ্ড-বিখণ্ড আলো। বিছানায় টানটান শুয়ে বেগম জাহানারার মনে হলো, এই…

  • যাত্রার শেষ সীমানা

    রেজাউর রহমান ইবাদুরের যতদূর মনে পড়ে, তিনি অমার্জিত ও অশোভনভাবে, অসুন্দর ইঙ্গিত-তাড়িত হয়েই কথাগুলো বলে ফেলেছিলেন সুখনকে। আজ প্রায় ১০-১৫ বছর পর, সেই মুহূর্তকে চোখের সামনে তুলে ধরতে গেলে ইবাদুর নিশ্চিতভাবে দেখেন যে, তিনি ক্রুর-নিষ্ঠুর আক্রমণ করার জন্যই এভাবে কথাগুলো বলেছিলেন তাঁকে। তিনি বলেছিলেন, ‘সৃষ্টিকর্তা ছোট-বড় প্রতিটি প্রাণীর দেহাঙ্গিকের প্রতিটি অংশ, প্রত্যেকটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিশেষ প্রয়োজনে,…