ছোট গল্প

  • আমাদের বাসায় ওরা থাকে

    আমাদের বাসায় ওরা থাকে

    উনিশশো স্কয়ার ফুটের এই বিশাল বাসাটায় আমি আর আমার স্বামী ওয়াহাব থাকি কেবল। বেশিরভাগ সময় আমরা কেউই থাকি না। থাকে শুধু কতগুলি ধুলোপড়া ফার্নিচার। ঢাকা শহরে যেহেতু আমরা দুজনই ছাপোষা কাজের লোক, কেরানিগিরি করে খাই, তাই বাসায় থাকার বিলাসিতাটা একেবারে নেই বললেই চলে। ওয়াহাব একটা বেসরকারি ব্যাংকের এভিপি। আমি একটি করপোরেট হাউজের মানবসম্পদ উন্নয়ন তথা…

  • সুরুচি মজুমদারের গান

    সুরুচি মজুমদারের গান

    শেষ ফাল্গুনের আশ্চর্য সুন্দর সকালবেলা। শীত প্রায় ফুরিয়ে এসেছে কলকাতা শহরে। সকালের ঝকঝকে রোদের সরু রেখা জানালা গলে বিছানায় এসে পড়েছে। রোদের রং সোনালি মধুর মতো। হেমন্ত তাঁর সবচেয়ে প্রিয় ঋতু, কিন্তু ফাল্গুনের আলো-হাওয়ার মাধুরী তাঁকে মুগ্ধ করে। ঘুমের আমেজে পাশ ফিরে নিবিড় হয়ে বালিশটাকে আঁকড়ে ধরেছেন আর তখনই ঘুমটা কেচে গেল জীবনানন্দ দাশের। ছুটির…

  • সুলতানপুরীর মনের কথা

    সুলতানপুরীর মনের কথা

    মোস্তফা সুলতানপুরীর মনের কথা সবাই বুঝতে পারে।  ঘটনাটা উল্টোও হতে পারতো।  এমন হতে পারতো যে, সুলতানপুরী সকলের মনের কথা বুঝতে পারে এবং সে-সুবাদে সে-দেশের একজন নামজাদা আলেম পির হিসেবে পরিচিত হয়েছে।  সুলতানপুরীর বাপের স্বপ্ন তাই ছিল। না হলে সরকারি ব্যাংকের ছাপোষা দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারী, যার নাম মোফাজ্জল রহমান, সে কেন তার ছেলের নাম রাখতে যাবে মোস্তফা সুলতানপুরী। কারণ…

  • জলের গভীরে

    জলের গভীরে

    অনেকদিন হলো মন্মথপুরে কোনো উত্তেজনার ছোঁয়া নেই, সব হাওয়া। উত্তেজনা বলতে অন্য কিছু নয়, প্রেম-ভালোবাসা তো নয়ই, এখানে উত্তেজনার অপর নাম মারামারি-কাটাকাটি। এটা সবাই জানে। মাস ছয়েক আগেও ব্যক্তি আর গোষ্ঠী বিবাদে জর্জর হতো মন্মথপুর। যখন-তখন তুলকালাম বেধে যেত এলাকায়। রাস্তায় উষ্ণ রক্তের ভেতর গড়াগড়ি খেয়ে গোঙাত রামদার কোপ খাওয়া কিংবা টেঁটাবিদ্ধ মানুষজন, কেউ ভয়ে…

  • অমৃতকথা

    অমৃতকথা

    আমাদের বাড়ির ছাদের থেকে বোসবাড়ির ছাদটা এখনো দেখা যায়। চিলেকোঠার দেয়ালে সেই লোহার ঘোরানো সিঁড়ি। জংপড়া, ঝরঝরে। উঠে গেছে একেবারে চিলছাদে। তার ওপরে তো আর কিছু নেই। কেবল আকাশ। ওই সিঁড়িতে নিধু বসে থাকে। সকালে, বিকেলে। সূর্য ডুবে গেলে মাঝে মাঝে চিলছাদে ওঠে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। গোধূলির রং মাখে। তারপর অন্ধকার …     পাড়াতে নিধুদের বাড়িটা…

  • ডলি কাকির নতুন চটি

    ডলি কাকির নতুন চটি

    অবশেষে চটি এলো বাড়িতে। কাকিকে চটিয়ে তবেই এলো। ঝগড়া হলো, মান-অভিমান হলো, কাকি ও কাকা দুই বিছানাতে ঘুমালো পর্যন্ত। অনেক জল গড়ানোর পর মোক্ষম সময়ে চটি জোড়া এলো। কাকি যেদিন বিয়েতে যাবে তার ঠিক আগের দিন। ডলি রানি পোদ্দার। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। পারে না, তবু টেনে টেনে সময় পার করছে এখন। সেই কবে ঢুকেছে স্কুলে।…

  • অধরা

    অধরা

    ঘোড়াটি ছোট-ছোট কদমে হাঁটছে। শান্তÍ স্থির শরীরে যে-কোনো আনাড়ি লোকও সওয়ার হতে পারবে। ঘোড়ার মালিক সে উদ্দেশ্যে পায়ে শিকল পরায়নি। বড় কদম যেন ফেলতে না পারে তার জন্যই বরং এ-ব্যবস্থা। কালবৈশাখীতে বিধ্বস্ত পার্ক। পার্কে ঘোড়াটির সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাঁটছে আবিদ, অদ্ভুত রহস্যে ঘেরা জীবনের পথ। বাসায় ফিরে দেখে অধমরা এক ইঁদুরের বাচ্চা। কুঁকড়ে পড়ে আছে…

  • ভাসানযাত্রা

    ভাসানযাত্রা

    প্রথম প্রথম কথাটায় তেমন গুরুত্ব ছিল না। যাদের সে বলেছিল তাদের কাছে, এমনকি নিজের কথার গুরুত্ব তার নিজের কাছেও ছিল না। ভেবেছে একটা দেখা, আর পাঁচটা স্বপ্নেরই মতো। সে-ই তো কত দিন আগে একবার এসেছিল মা। হাঁটতে হাঁটতে মা মিলিয়ে যাচ্ছিল শীতের দুপুরে, মাঠের ওদিকে। সেই স্বপ্নে মায়ের বয়স কত কম! অতসী দিবাকরের কাছে মায়ের…

  • ঊষর দিন ধূসর রাত

    ঊষর দিন ধূসর রাত

    গোলাপি বাড়িটার ওপর দুপুরের রোদ আছড়ে পড়ছে। যদিও আশেপাশে বিস্তর দালান-কোঠা, তাদের উঁচা-উঁচা মাথায় বিচিত্র রঙের প্রলেপ – কিন্তু রোদ্দুরের মায়ার-খেলা আজ ওই বাড়িকেই ঘিরে। ধবধবে আলোর ঝরনাধারায় ব্যালকনির গ্রিল, আভা-আঁধারির আবছায়া জমে থাকা থাইগ্লাসের দরজা – এমনকি জানালার কার্নিশগুলিও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। বেশ খানিকটা কৌতূহল নিয়ে শেফালি বাড়িটার দিকে তাকিয়ে থাকে। তাকিয়ে তাকিয়ে হয়তো…

  • অহল্যা

    অহল্যা

    ‘প্রেসক্রিপশন ঠিকঠাক ফলো করছেন তো সিস্টার?’ ঘরে ঢুকেই বিতস্তার দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা করলেন ডক্টর সেন। ‘হ্যাঁ স্যার। আপনার অ্যাডভাইসমতোই সমস্ত কিছু করা হচ্ছে।’ ‘দেখবেন পেশেন্টের ট্রিটমেন্টের ব্যাপারে যেন বিন্দুমাত্র গাফিলতি না থাকে।’ ‘বিপাশা ঠিকঠাক কেয়ার নিচ্ছে তো?’ ‘হ্যাঁ স্যার, আপনি কোনোরকম চিন্তা করবেন না।’ ডক্টর সেন একনজর পেশেন্টের দিকে তাকালেন। রোগীর ভেতর বিন্দুমাত্র চাঞ্চল্য লক্ষ…

  • গহিনে প্রলয়

    গহিনে প্রলয়

    কেন যেন হঠাৎ চমকে ওঠে খাদিজা। ঘুম ভেঙে যায়। কিন্তু এখন তো ঘুম ভেঙে যাওয়ার কথা নয়। খাদিজা কিছুই বুঝতে পারে না। বুকের ভেতর থেকে অজানা ভয়ের আবহ ধীরে ধীরে তার চেতনাকে যেন আচ্ছন্ন করে দিতে থাকে। চারদিকে গভীর রাতের নিকষ কালো অন্ধকার যেন সবকিছু জুড়ে একটা কালো চাদর বিছিয়ে রেখেছে। ঘুমভাঙা পাখপাখালিরও কোনো শব্দ…

  • চোখ

    চোখ

    আজ চারদিন হয় আকাশ ইস্পাহানী আই হসপিটালে ভর্তি হয়েছে। ভিজিটর আওয়ারে সকল পেশেন্টের আত্মীয়স্বজন আসে। আকাশের কাছে কেউ আসে না। এসময় বেডে থাকতে তার অস্বস্তি লাগে। সে বারান্দায় চেয়ারে বসে দূরের আকাশ দেখে। দূর আকাশে তাকিয়ে থাকে সত্যি, আসলে সে কিছুই দেখতে পায় না। দশ-বারো হাত দূরের দৃশ্যও সে স্পষ্ট দেখতে পায় না। ঝাপসা, কুয়াশাঘেরা।…