August
-
কবিতা-কোলাজ
(শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের জন্য) পড়ো, কবিতা-কোলাজ। বোধের সাক্ষাৎকার নিচ্ছে রাত্রিদিন। সুগন্ধী আঠাদের বন্ধনরীতি বহুমাত্রিক। দৃশ্যেরা নগ্ন। ধাতুগুচ্ছ নীরব আর কথা বলা অনন্ত তিমির। শাদাকবিতা : সূর্যালোকেও কুয়াশা তোমার জানালায়, লালের কোলাজ : অন্য এক আলোর খোঁজে ক’জন পড়ছে মাও সে তুং, নীলকবিতা : বেদনাবাহিত ঝরনা। পদাবলিপাড়ে আসে না সমদর্শিতা। হাত কুড়ায় অপস্রিয়মাণের বর্ণনা। হলুদকবিতা :…
-
মশা ও মশারি
মটকা, সিন্দুক ও ড্রয়ার থেকে যে-মশারি টেনে আনো না কেন? সেই মশারি কি ছেঁড়া ও ফুটা? দেখে নাও! মশারির চারধার ভালোমতো গুছিয়ে গুঁজিয়ে দাও, না হলে মশা মশাই হয়ে মশারিতে ঢুকে পড়বে! যে-পোশাক পরেই ঘুমাও না কেন? মশা কামড়াবেই! যে-কক্ষেই থাকো না কেন? মশা কখনো লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না! একা শোও কিংবা প্রিয়জনের…
-
ইচ্ছা
খুব দ্রুত ভুলে যেতে হবে সব। খুব দ্রুত ভুলে যেতে হবে এই চিরচেনা পথ। এই আবীর মাখানো স্বপ্ন স্বপ্ন দিন। এই রাতভর জেগে থাকা। এই বইয়ের পাতায় ছড়িয়ে থাকা ঝকমকে বুকের কাঁপন। ভুলে যেতে হবে কোকিলের ডাক শুনে জানালায় উঁকি দেওয়া ভোর। ভুলে যেতে হবে নীল শাড়ি পরা মেয়েটির দেওয়া অকারণ প্রতিশ্রুতিগুলো। কে কাকে প্রশ্রয়…
-
সুবর্ণ প্রভাতে
বিবর্ণ বিস্বাদ আজ আমাদের প্রগাঢ় নিশ্বাস কালি আজ হয়ে গেছে দূরান্বয়ী নিবিড় কালিমা আমাদের সুঁচালো কলম আজ একান্ত বঙ্কিম রশিতে যায় না বাঁধা চিন্তাময় প্রান্তরের সীমা। কত যে স্বপ্ন আর রাশিরাশি ফলন্ত বাগান নিমেষে গুঁড়িয়ে দেয় বাত্যাহত অনাত্মীয় ঝড় টুনটুনি চিত হয়ে শুয়ে যেন দু-পায়ে ঠেকায় আকাশের ভেঙে-পড়া, সেই দশা দেখি অতঃপর। আকাশ পড়ে না…
-
পুঞ্জীভূত মেঘ
সব দেখাই দৃশ্য নয়, কোনো কোনো দেখা দৃশ্য হয়ে যায়। দৃশ্যের ভেতর দিয়ে দেখি, অনেক মানুষ ছিল দৃশ্যপটে পরে যারা নেই হয়ে গেছে। হেঁটে বেড়ানো চলিষ্ণু মানুষের কবরস্থান পুরোপুরি সুনসান, স্থির, খোদিত-না-খোদিত এপিটাফের বাগান! অনেক দৃশ্যের মধ্যে এই দৃশ্যও থেকে যেতে পারে, কেউ একজন এপিটাফ পড়তেই বাগানে আসে কবিতা ঘনিয়ে এলে ভারাক্রান্ত প্রেমিকের দীর্ঘশ্বাসগুলো জমে…
-
নিসর্গের চিঠি
শালুকচোখা রাত্রি মুখ ডুবিয়ে ছিল জোছনাজলে, ঝিঁঝিঁর কণ্ঠে মিশে যায় সেকালের মৌনতা। আমি হেঁটে যাই নিসর্গ-শালিকের ছায়ায়, চোখে পড়ে এক জলমগ্ন প্রণয়ের কাগজপোকা ছায়া নেই, তবু চেনা কুয়াশা ছুঁয়ে যায় গ্রীবাদেশ। অলক্ষে সরে যায় নিচু-গলায় নদী – তার ঠোঁটে লেগে থাকে অপরাহ্ণের ভেজাপ্রান্তর। চোখে এখন ঘুম নয়, শুধু মেঠোপথের আর্দ্রতা – অদেখা পাখির পায়ে জড়িয়ে…
-
তোমরা আমায় কাঁদতে বোলো না
আমি নদীর কাছে রেখে এসেছি প্রেমময় অশ্রুজল, পাহাড়ের ওই ঝর্ণার কাছে ফেলে এসেছি বেদনার ক্রন্দন! বৃষ্টির জলে ধুয়ে নিয়েছি অব্যক্ত যন্ত্রণা, আমি যামিনীর কাছে দিয়ে এসেছি সমস্ত অঙ্গীকার। অনলের কাছে বিসর্জন দিয়েছি অভিশপ্ত অহংকার, আমার কোনো প্রেম নেই, কষ্ট নেই, হিংসা নেই! তোমরা আমায় কাঁদতে বোলো না। আমি দিশাহীন এক অনন্ত পথের যাত্রী, শিখা অনির্বাণের…
-
কফিনের নীরবতা
কফিন – শব্দহীনতার চাদর মুড়ে পোশাক চেটে খায় বিষাক্ত অমাবস্যা। আলোর শ্বাস নেই। কারাগারের শিলালিপিতে জমে থাকা কান্নার মতো বয়ে চলে একটি নদী – স্রোতহীন, স্মৃতিবহ। ধূসর ছায়া ঘষে ঘষে ঘুম পাড়ায় অতীত। মৃত বিবেক ধরে রাখা তামাটে এক দেহ – হেঁটে চলে দোদুল্যমান গুমোট কফিন হয়ে। তারপর – বুক চিরে উঠে আসে একটি পলেস্তারা-মাখানো…
-
শুধু মুখেই বলেন
আপনি শুধু মুখেই বলেন বৃষ্টি এলেই ভিজবেন হিজল, জারুল, সোনালু, কৃষ্ণচূড়ার সাথে সবুজ মাঠ, বৃষ্টি জমা জল, গোড়ালি ডুবিয়ে প্রিয় উপন্যাসের নায়িকা যেন – ভিজবেন, মন উড়িয়ে। সারাটা দুপুর, সারাটা বিকেল, সন্ধ্যা – রাতভর ভিজলো একটা শহর ওই দূর কোনো গ্রামের একলা একা তালগাছটার মতন আপনি শুধু মুখেই বলেন বৃষ্টি এলেই ভিজবেন…
-
আত্মজা
কাঠগোলাপের শুভ্র উচ্ছ্বাসে নিজেকে ছড়িয়ে দাও। দীর্ঘশ^াস, সংকট, জরাজীর্ণ ব্যথা শূন্যে উড়িয়ে দাও। তুমি বেরিয়ে এসো বন্ধনমুক্ত বিহঙ্গের পাখায় ভর করে। পাণিতে সন্ধ্যাবাতি আলোকবর্তিকাসম, দেখাও পথ আঁধারে ঢেকে যাওয়া গ্রহটিকে। দেহসৌষ্ঠবে বুনোফুলের সৌরভ, কণ্ঠে বজ্রনিনাদ, বেজে যাক রণতূর্য, আহবের ডঙ্কাধ্বনি ছড়িয়ে পড়ুক দিকে-দিকে। ঘুঙুরে, চুড়িতে, অলংকারে, আভরণে প্রতিধ্বনিত হোক প্রতিবাদ। অন্যায়, বৈষম্য, লাঞ্ছনার আবেষ্টনী ছত্রখান…
-

অগ্রন্থিত তিনটি অনুবাদ কবিতা
সংগ্রহ ও ভূমিকা : মুহিত হাসান বিদেশি কবিতার অনুবাদেও সিদ্ধহস্ত ছিলেন কবি শহীদ কাদরী ((১৪ আগস্ট ১৯৪২-২৮ আগস্ট ২০১৬) । ভিনভাষার খুব বেশি কবিতার অনুবাদ তাঁর কাছ থেকে পাওয়া যায়নি, এ কথা সত্য। কিন্তু যে অল্প হলেও যে-কটি কবিতার অনুবাদ তিনি করেছেন, তাতেই কাব্যানুবাদক হিসেবে কাদরীর দক্ষতা ও গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বর্তমান সংকলকের সম্পাদনায়…
-

ফনেচাচা : দ্বিতীয় পর্ব
আমাদের গ্রামে কোনো শিক্ষালয় ছিল না। তাই বাবাকে (শওকত ওসমান) ছোটবেলায় কাদামাটি ভেঙে পাশের গ্রাম নন্দনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেতে হতো। নন্দনপুর আমাদের ঘর থেকে পাঁচ-ছয় কিলোমিটার তো হবেই। সম্ভবত ১৯২৬ সালে আমাদের পাড়ার অদূরে পুবদিকে স্থাপিত হয় সবলসিংহপুর জুনিয়র মাদ্রাসা, অর্থাৎ প্রথম থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি। বাবা তাঁর লেখাপড়ার শেষের দিকে এই সুযোগ পেয়েছিলেন। আমাদের এই…
