রেজাউদ্দিন স্টালিন

  • অসীম অভিধান

    গভীর জল অতল কোনো মেয়ে,  কেউ ছিল না সুন্দরী তার চেয়ে। খুঁজতে তাকে গিয়েছে এক কবি, চিনতো না সে ঊষা কালের ছবি। জানতো না সে সূর্য কাকে বলে, সন্ধ্যা থাকে দূরে অস্তাচলে। সেই মেয়েটি রাজার মেয়ে নয়, কবির চোখে আনখ বিস্ময়। সেই মেয়েটি কাজের ফাঁকে ফাঁকে জানলা দিয়ে দেখতো ছেলেটাকে। জানতো না সে ছেলেটা শুধু…

  • জন্মদৃষ্টি

    ভ্রƒণগর্ভে যেখানে যাই চোখ ফেলে আসি পথের জন্মদাগ কোথায় লুকিয়ে আছে সব দেখতে পাই কখন সন্তের বেশে দস্যু হানা দেবে বন্ধুরা ঈর্ষায় শান দেয় কোন কামারশালায় পাথরের ঘোড়া ঘুমের দরোজা ভেঙে  কোন লগ্নে স্বপ্ন খেয়ে যায় মাতৃগর্ভে শুয়ে সব দেখতে পাই মেঘের তৈরি চোখ অশ্রুসূর্য প্রদক্ষিণ করে বন্ধু কিংবা শত্রু যারা কতটুকু জানে হয়তো জানার…

  • আশ্চর্য প্রয়াণ

    এইসব আশ্চর্য প্রয়াণ আমাদের ভাবিয়েছে – কষ্ট দিয়েছে একদিন স্মৃতি হবো আমাদের বৃক্ষগুলো তাকিয়ে দেখবে দুঃখ পাবে পোষা প্রাণীদের চোখে শোকসভা কত গান কীর্তি কবিতা ছবির ভেতরে চিরস্থায়ী হবে মৃত্যুর পর যারা নক্ষত্র হয় আর মৃত্যুর আগে যারা উভয়ের বিচারের ভার সূর্য নিয়েছে একদিন পৃথিবীতে শুধু আলো থাকে একদিন শুধু অন্ধকার কেউ কেউ বীরবাহু কি…

  • একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে

    ঠিকমতো কিছুই হয় না বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় দরোজার মুখে কুলুপ আঁটা হয় না জামার একটা বোতাম সাবানে খাওয়া প্যান্টের ভেতর থেকে শার্টের বিদ্রোহ  জুতোর ফিতে ক্ষুধার্ত বলে ঠিকমতো দাঁড়াতে পারে না চশমার জানালায় মেয়াদোত্তীর্ণ কাচ দ্বিখণ্ডিত  শ্বাসকষ্টে ঘড়ির কাঁটার নিশ্বাস নিভে আসছে সূর্য স্থির বলে কতদিন প্রিয়জনের সাথে দেখা হয় না  তাই বলে পৃথিবীর…

  • ডায়োজেনিসের লণ্ঠন

    আজব এক লণ্ঠন ঘুমায় রাতের বেলা জেগে ওঠে সূর্যের আলোয় আর ঘুরে বেড়ায় পৃথিবীময় মানুষের মুখের কাছে দাঁড়িয়ে কী যেন পরখ করে কেউ জিজ্ঞেস করলে বলে মানুষ খুঁজছি – পাগল দিনের বেলা কেউ লণ্ঠন জ্বালে এতো তেল আসে কোত্থেকে লণ্ঠন চলতে শুরু করে ব্রহ্মাণ্ড অবধি সকল দেয়াল ভেদ করে যায় প্রান্তবিন্দু লণ্ঠনের আঁচড়ে তৈরি হয়…

  • শিল্পকলা

    না – আমি চাই আরো কিছু ঠান্ডা কোনো কুয়ো ভরা জল পাতার স্পর্শে ঠোঁট যতটা প্রাঞ্জল  আমি চাই কলার ভেলায় ভেসে বহুদূর যেতে জানি বেহুলাও নেই – লখিন্দর  আমাদের যেতে হবে গাঙুড়ের   বুকে পায়ে হেঁটে চারদিকে বাজিকর প্রেমিক খর্বুটে ভয় নেই আমি তো সবুজ আর তুমি নীল জানো তো গাছের পাতারা সব আকণ্ঠ হলুদ  নদীর…

  • সমকালীন ও নান্দনিক দ্রোহী শব্দাবলি

    আহমেদ বাসার তরুণ কবি। তারুণ্যের স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ আর সবকিছু তছনছ করে দেওয়ার একটা প্রবল মনোভঙ্গি তাঁর কাব্যচিন্তায় তীব্রভাবে ক্রিয়াশীল। জীবন ও জগৎকে ভিন্নভাবে দেখার অদম্য আকাক্সক্ষা আহমেদ বাসারকে এই সময়ের মধ্যেই চিহ্নিত করতে সহায়ক হয়েছে। তিনি বাংলা বর্ণের নানা অভিঘাত আত্মস্থ করে শব্দের গায়ে নতুন পোশাক পরাতে সচেষ্ট। বয়ঃসন্ধিতে কবি হওয়া আর পূর্ণজীবনে কবি হওয়ার…

  • অন্য অসম্ভবে

    পোড়াতে চাও হৃদয় ভরানদী আগুন নেই কীভাবে তবু জ্বালো একদা ছিলে চারু শিল্পামোদী এখন কেনো বাতাসে নুন ঢালো এখন কেন পাথর এতো প্রিয় গাছের প্রেমে তখন ছিলে গোপী পারলে সেই পাতার খোঁজ নিও যেমন নিতে কদাচ যদ্যপি আগুন এতো সস্তা কবে হলো যখন খুশি পোড়াও মনভূমি নদীর চোখ করলে ছলো ছলো প্রার্থনায় বসতে কেন তুমি…

  • ঘাসমানুষ

    আমার ভ্রƒর মধ্যে একটা শীতকাল চোখের মধ্যে নীরবতার তাঁবু বুক বরফের পম্পেই শীতবস্ত্রের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ঘাসমানুষ উষ্ণতা অধরা পণ্য হাজার হাজার আলোর কণা জোড়া দেয়া এক সেতু জুডাস যিশুর কপালে চুমু দিলে যেটুকু উষ্ণতা তার চেয়ে বেশি কিছু নয় আমরা বাঁচি সব ঋতুর অপেক্ষায় আর ভাবি অতীত ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা অতীতে নেই থাকবো…

  • ‘বিদ্রোহী’ – শতাব্দীর কণ্ঠস্বর

    ‘বিদ্রোহী’ – শতাব্দীর কণ্ঠস্বর

    একশ বছর মহাকালের হিসাবে কম সময়; কিন্তু মানবেতিহাসের অঙ্কে এক শতাব্দী। এই একশ বছর নেড়ে দেখলে আমরা পাব প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, জাতিগত দাঙ্গা, দেশভাগ, ভাষা-আন্দোলন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম। এই একশ বছরে দুজন কবি আমাদের সংস্কৃতিজগতে দারুণভাবে আলোচিত ও প্রভাবদায়ী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। নজরুল ইসলাম ১৯২০ সালে অতর্কিতে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা…

  • কেউ জানে না

    বৃষ্টি কেন হয়, বৃষ্টি কেন পড়ে কেন যে পাতা নড়ে মেঘের কাছে জানতে চাই তার বৃষ্টিকথা কী আছে বাকি আর গাছের কিছু বলার আছে বাকি হাওয়ার সাথে এতো যে মাখামাখি বৃষ্টি এলে বজ্র কেন বাজে মন লেগে যায় উদাস হওয়ার কাজে বাড়িগুলো আনন্দে স্নান সারে জানালা খোঁজে হারিয়েছিল যারে কেন যে মেঘ জলদি করে ডাকে…

  • কতদূর ইথাকা

    অনেকদূর হেঁটে এসে পেছনে তাকালে আর বাড়ি দেখা যায় না দৃষ্টির সূর্যপথ উঠে যায় মেঘবৃক্ষে পেছনে কার বাড়ি চণ্ডীদাসের নাকি কাহ্নপার জ্ঞানদাস একবার বিদ্যাপতির নিমন্ত্রণে এসে পথ হারিয়ে বহুদিন আলাউলের অতিথি ছিলেন আর কালিদাসের আমন্ত্রণ সত্ত্বেও যেতে পারেননি মোহাম্মাদ সগীর সবকিছু অচেনা অপরিচিত গাছের দেহ সবুজ পাতারা কালো নদীর পানি হলুদ পাখির ডানা নীল আর…