আহমাদ মোস্তফা কামাল

  • জলের অক্ষরে লেখা

    জলের অক্ষরে লেখা

      পর্ব : ১২ ঋভু আর অবন্তি চলে যাওয়ার পর কেমন যেন খালি খালি লাগছিল বাসাটা, এই অসময়ে কী যে করা যায় বুঝতে পারছিল না অংশু। সাধারণত এরকম ভরসন্ধ্যায় বাসায় ফেরে না সে, ফেরে একটু দেরি করে। আর বৃহস্পতিবার রাত হলে তো কথাই নেই। এখন অবশ্য আবার বেরিয়ে পড়া যায়, অপলাকে নিয়ে রাতের বেলা বের হওয়া…

  • জলের অক্ষরে লেখা

    জলের অক্ষরে লেখা

    পর্ব : ১১ অবন্তিকে বিদায় দিয়ে ফের বেডরুমে এলো ঋভু। বিছানাটা এলোমেলো হয়ে আছে। মুচকি একটু হাসলো সে, অনেক ঝড় বয়ে গেছে বেচারা বিছানার ওপর দিয়ে, বহুদিন পর। থাকুক, ওভাবেই থাকুক আজকে। ঘর জুড়ে একটা সুগন্ধ, অবন্তির শরীরের গন্ধ, থাকুক ওটাও। সে এলোমেলো বিছানাতেই সুগন্ধির ভেতরে ঘুমাবে আজ। কিন্তু এখন তো ঘুম আসবে না, কী…

  • জলের অক্ষরে লেখা

    জলের অক্ষরে লেখা

    পর্ব : ৬ অবন্তিকে পৌঁছে দিয়ে ফেরার সময় অংশুর ইচ্ছে করছিল আরো কিছুক্ষণ পথে পথে ঘুরে বেড়াতে। শহরের নানা প্রান্তে তার নকশায় নানা স্থাপনা তৈরি হয়েছে। মাঝে মাঝে সে একাই বেরোয় সেসব দেখতে, সাধারণত মাঝরাতে, যখন কেউ থাকে না আশেপাশে। কখনো-বা অপলাও সঙ্গে থাকে। একেকটা ভবন বা স্থাপনা সে অনেকক্ষণ ধরে দেখে। ভাবে, যা সে…

  • জলের অক্ষরে লেখা

    জলের অক্ষরে লেখা

    পর্ব : ৫ ডিনারের পর অবন্তি যখন গভীর মনোযোগ দিয়ে ঋভুর সংগ্রহ করা ছবিগুলো দেখছিল আর ঋভু গিয়ে ওর পাশে দাঁড়িয়েছিল, অংশু দূরে দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্যটির দিকে কতক্ষণ মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে ছিল। ঋভু ফিসফিস করে কথা বলছিল আর অবন্তি কান নামিয়ে এনেছিল ওর কাছে। কী সুন্দর একটা দৃশ্য, কী দারুণ মানানসই একটা জুটি! কেন যে…

  • তাঁর স্নেহসিক্ত কণ্ঠস্বর

    তাঁর স্নেহসিক্ত কণ্ঠস্বর

    হাসনাতভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল সম্ভবত ১৯৯৫ সালের শেষে অথবা ১৯৯৬ সালের শুরুর দিকে। তখন তিনি দৈনিক সংবাদের সাহিত্য সম্পাদক আর আমি বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণ লেখক। সংবাদের সাহিত্য সাময়িকী তখন ভীষণ আলোচিত, আকর্ষণীয়, সুপরিকল্পিত, সুসম্পাদিত, অভিজাত সাহিত্যপাতা। সংবাদপত্র হিসেবে দৈনিকটির ততটা জনপ্রিয়তা না থাকলেও সাহিত্যামোদী পাঠকরা বৃহস্পতিবারের সাময়িকীর জন্য অপেক্ষা করতেন এবং অতি অবশ্যই সংগ্রহ করতেন।…

  • পাতাদের সংসার

    পাতাদের সংসার

    অনেকদিন আগে পথিক এ-বাড়িতে প্রথম এসেছিল নিতান্তই খেয়ালের বশে। তখন তার ছিল হাঁটার ‘ব্যারাম’, অন্তত লোকে তাই বলতো। শহরময় অবিরাম হেঁটে বেড়াতো সে, মনে হতো যেন নিজের নামকরণের সার্থকতা প্রতিপন্ন করতে চাইছে – পাঁচ-দশ মিনিটের বেশি বসতো না কোথাও, যেন উদ্ভ্রান্তের মতো খুঁজে বেড়াচ্ছে কোনো কিছু, এমনই ছিল তার হাঁটার ভঙ্গি। আসলে কী খুঁজতো সে?…

  • দাগ

    দাগ

    এই বিদেশ-বিভুঁইয়ে হঠাৎ দেখা হয়ে গেল তাদের। পাঁচতারা হোটেলের দীর্ঘ ও প্রশস্ত করিডোর, একপাশে সারিবাঁধা রুম, অন্যপাশটা খোলা। করিডোর না বলে ব্যালকনি বলাই ভালো। সেখানে রেলিংয়ে দুই হাত রেখে দাঁড়িয়ে ছিল সে। দূরে তাকিয়ে ছিল, অনেক দূরে, কী ভাবছিল জানে না কেউই। এই করিডোর ধরেই সিঁড়িতে যেতে হয়, কিংবা লিফটে। শায়লাও যাচ্ছিল। ডিনারের সময় হয়ে…

  • সেইসব পলায়নের গল্প 

    সেইসব পলায়নের গল্প 

    দশ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে পান আপনি? – এরকম একটা প্রশ্ন করা হয়েছিল আমাকে, ইন্টারভিউ বোর্ডে, অনেক বছর আগে। আমি তখন তরুণ ছিলাম, প্রথমবারের মতো চাকরির চেষ্টা করতে গিয়ে মুখোমুখি হয়েছিলাম সেই ইন্টারভিউ বোর্ডের। সেখানে যারা ছিলেন সবাই মিলে যেন পণ করেছিলেন – কোনো অবস্থাতেই হাসবেন না। গম্ভীর-ভীতিকর সেই পরিবেশে প্রশ্নটি ছিল আমার কাছে…

  • খেলা

    খেলা

    আহমাদ মোস্তফা কামাল কোত্থেকে উদয় হলেন তিনি, কেউ জানে না। হ্যাঁ, উদয় হলেনই বলতে হবে, কারণ দুদিন আগেও যার অসিত্মত্ব সম্পর্কে কারো কিছু জানা ছিল না, সেই তিনিই হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো আবির্ভূত হয়ে অদ্ভুত-অচিন্তনীয় সব কর্মকা–র মাধ্যমে শহরবাসীকে হতবুদ্ধি-বিমূঢ়-বিস্মিত করে তুললেন এবং অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সবাইকে জানিয়ে দিতে সমর্থ হলেন যে, যা ইচ্ছা তাই…

  • স্মৃতি

    আহমাদ মোস্তফা কামাল মা নেই, মায়ের স্পর্শ যেন লেগে আছে এখনো, এই ঘরে। মুনীর ঘুরে-ঘুরে দ্যাখে – যে-চেয়ারে মা বসতেন, যে-বিছানায় ঘুমাতেন, সেগুলোতে আলতো করে হাত বুলায়, যেন মাকেই ছুঁয়ে-ছুঁয়ে দেখছে সে, এভাবে। মায়ের তসবি, জায়নামাজ, পানের বাটা, রুমাল, তোয়ালে সব রয়ে গেছে তেমনই, যেমনভাবে তিনি রেখে গিয়েছিলেন। দেখে মনে হয়, মা গেছেন পাশের ঘরে,…

  • সাক্ষ্য

    আহমাদ মোস্তফা কামাল ওমন, কাঁদো কেন? ও চোখ, কেন এত ভিজে ওঠো? – নিজেই নিজের মন আর চোখকে জিজ্ঞেস করেন আজিজুল হক। আর না করেইবা উপায় কী, ওরা যে কাজই করতে দিচ্ছে না, কোনো শাসনও মানছে না। অথচ দ্রুত কাজটি করে ফেলতে হবে, এই কবর তৈরি করার কাজটি, মুর্দাকে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি দাফন করার তাগিদ দিয়ে…

  • আর কি হবে মানবজনম

    আহমাদ মোস্তফা কামাল শহরের ব্যস্ত এবং পুরনো এক মার্কেটের প্রবেশপথের পাশে ছোট্ট একটা দোকান, আর সেখানেই দিনরাত উজার করে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে অনিমেষ। ছোট দোকান হলে কী হবে, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে একেবারে ঠাসা। এমন কোনো জিনিস নেই যা সংসারের দৈনন্দিন কাজে লাগে অথচ এখানে পাওয়া যায় না, তবে দোকানটি বিখ্যাত তাদের নিজস্ব বেকারির তৈরি খাদ্যসামগ্রীর…