জলের অক্ষরে লেখা

  পর্ব : ১২

ঋভু আর অবন্তি চলে যাওয়ার পর কেমন যেন খালি খালি লাগছিল বাসাটা, এই অসময়ে কী যে করা যায় বুঝতে পারছিল না অংশু। সাধারণত এরকম ভরসন্ধ্যায় বাসায় ফেরে না সে, ফেরে একটু দেরি করে। আর বৃহস্পতিবার রাত হলে তো কথাই নেই। এখন অবশ্য আবার বেরিয়ে পড়া যায়, অপলাকে নিয়ে রাতের বেলা বের হওয়া হয় না অনেকদিন, সেটিও করা যায়। কিন্তু ক্লান্ত লাগছে। অপলাও ব্যস্ত। বাচ্চারা বাসায় ফিরেছে, অন্য সবাইও। গল্পে মেতে উঠেছে অপলা, বাচ্চারা ব্যস্ত তাদের দাদুকে নিয়ে। তিন ভাইয়ের সাতটা বাচ্চা, বিভিন্ন বয়সের। যতক্ষণ বাসায় থাকে, কেউ না কেউ দাদুর সঙ্গে লেগে থাকেই। আর সন্ধ্যায়, পড়তে বসার আগ পর্যন্ত সময়টি তাদের আড্ডার সময় এবং সেই আড্ডার অনিবার্য সদস্য তাদের দাদু। নাতি-নাতনি নিয়ে বেশ আছে মা, একেবারে চাঁদের হাট বসেছে তাঁকে ঘিরে, ভাবলো অংশু। এও এক ভাগ্য। সারাজীবন ধরে একজন মানুষ কত সার্ভিস দেয় তার পরিবারকে, সমাজকে, দেশকে। শেষ বয়সে, যখন আর কিছুই দেওয়ার থাকে না, তখন আর তার গুরুত্ব থাকে না, একরকম পরিত্যক্তই হয়ে যায়। এটা ঠিক নয়, এটা অন্যায়। এই বয়সে বরং তাদের প্রয়োজন আরো বেশি মনোযোগ, যত্ন এবং আপনজনদের সঙ্গ। মা সেটা পাচ্ছে, সবাই পায় না। নাহ, আজকে আর বেরোবো না, বরং মায়ের সঙ্গে একটু গল্পসল্প করা যাক, ভাবলো অংশু। কাপড়চোপড় ছেড়ে, হাতমুখ ধুয়ে মায়ের রুমে গেল সে। দেখলো, মা বিছানায় বসা, তাকে ঘিরে ধরে নাতি-নাতনিরা কী নিয়ে যেন খুব জমিয়ে গল্প করছে। একটু-আধটু তর্ক-বিতর্কও হচ্ছে। তাকে দেখে একটু থমকে গেল সবাই। বাচ্চাদের গল্পে মুরুব্বি গোছের কেউ ঢুকে পড়লে একটু সমস্যা তো হয়ই।

মা জিজ্ঞেস করলেন – কিরে অংশু, কিছু বলবি?

না, মা। তোমাদের গল্প শুনতে এলাম।

এসব গল্প শুনে মজা পাবি না। তুই তো বড় হয়ে গেছিস।

তুমি বুঝি ছোট আছো?

তা একটু আছি। নইলে কি আর ওরা আমাকে গল্প শোনাতে আসতো?

হুম, তাও ঠিক। তা, আমি কি একটু বসার অনুমতি পাবো?

বসতে পারিস। কিন্তু কথা বলতে পারবি না। ঠিক আছে না দাদুমণিরা?

বাচ্চারা হুল্লোড় করে উঠলো।

আচ্ছা যাও, কথা বলবো না।

ঠিক আছে। বসে থাক তাহলে।

অংশু গিয়ে ইজিচেয়ারটায় বসলো। কিন্তু বাচ্চারা বোধহয় ঠিক স্বস্তি পাচ্ছে না, একটু আগে যে উচ্ছ্বাস ছিল সেটাও নেই। গল্পের টপিকও বোধহয় বদলে ফেলেছে, কেমন যেন খাপছাড়া। কেউ যেন মজা পাচ্ছে না এই গল্পে। আগের গল্পের মতো জমজমাট ভাবটাও নেই। এই ব্যাপারটা অংশু আগেও খেয়াল করেছে। বাচ্চারা, একজনই হোক আর সবাই মিলেই হোক, যে-ভঙ্গিতে তাদের দাদুর সঙ্গে গল্প করে, মনে হয়, তিনি যেন ওদেরই বয়সী; সেখানে বড় কেউ ঢুকে পড়লে ওরা অকস্মাৎ থেমে যায় কিংবা গল্পে ছন্দপতন ঘটে। ওদের জগৎটা আলাদা, বড়দের সেখানে প্রবেশাধিকার নেই, অংশগ্রহণের অনুমোদন নেই, অথচ বুড়ো মানুষদের সঙ্গে ওরা কত স্বচ্ছন্দ! বিশেষ করে সেই মানুষটি যদি দাদা-দাদি বা নানা-নানি হন। অংশু কেবল এই অদ্ভুত সম্পর্কটা দেখতেই মাঝেমধ্যে ওদের গল্পের মধ্যে ঢুকে পড়তে চায়। লাভ তেমন হয় না অবশ্য। তারচেয়ে বরং লুকিয়ে-চুরিয়ে এদের কার্যকলাপ দেখা আর কথাবার্তা শোনাই ভালো।

বেশিক্ষণ বসলো না সে, ‘তোমরা গল্প করো, আমার খিদে পেয়েছে’ বলে উঠে এলো। খিদে অবশ্য পায়নি, কিছু একটা বলতে হয় তাই বলা। বেডরুমে এসে পিঠে বালিশ রেখে হেলান দিয়ে বসলো সে। অনেক দিন ধরেই একটা বিষয় নিয়ে ভাবছে অংশু, কিন্তু কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। আজকে মায়ের সঙ্গে বাচ্চাদের খুনসুটি দেখতে দেখতে ফের মনে হলো, পরিকল্পনাটা গুছিয়ে ফেলা দরকার। এখনো কাগজ-কলম নিয়ে বসেনি সে, মাথায় কেবল আইডিয়াটা আছে প্রায় বিমূর্ত অবস্থায়, পুরোটা এখনো ভেবে উঠতে পারেনি সে। 

ব্যাপারটা তার মাথায় এসেছে রাতের বেলায় শহরে ঘুরতে ঘুরতে। নতুন নয়, যখন থেকে রাতের বেলা একা একা বাইরে ঘোরার স্বাধীনতা পেয়েছে তখন থেকেই ফুটপাতে বা স্টেশনে, অফিস বা মসজিদের বারান্দায় ছিন্নমূলদের দেখে আসছে সে, যাদের এমনকি বস্তিতে একটা খুপড়ি ভাড়া করে থাকার সামর্থ্যও নেই। এত উন্নয়ন হয়েছে দেশের, তবু অসংখ্য ছিন্নমূল মানুষ ফুটপাত বা স্টেশনেই ঘুমিয়ে থাকে। অন্য কোথাও ঘুমাতে পারে না ওরা। অফিসগুলোর গেটে সার্বক্ষণিক পাহারাদার, এমনকি মসজিদও তালাবদ্ধ থাকে এখন। আগে দিনের বেলায়ও ওদের ফুটপাতের সংসার চোখে পড়তো, এখন আর দেখা যায় না, সম্ভবত পুলিশি তৎপরতার কারণে। নাগরিকদের চোখের সামনে তারা হয়তো ছিন্নমূলদের সংসার রাখতে চায় না। সেজন্যই দিনের বেলায় ওরা থাকে না। কিন্তু রাতে এই পাহারা ভেঙে পড়ে, ছিন্নমূলদের দখলে চলে যায় শহর। অংশু দেখেছে, সেখানে অনেক শিশু আছে, সেইসব শিশুর অনেকেই জানে না – কে তাদের মা-বাবা, কোথায় থাকে তারা। বৃদ্ধ মানুষও আছে, যারা নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে অথবা উচ্ছেদ হয়ে বাধ্য হয়ে একদা শহরে এসেছিল, খাদ্য এবং আশ্রয়ের সন্ধানে, কিন্তু শহর তাদের জায়গা দেয়নি। শিশু এবং বৃদ্ধ ছাড়াও বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষও প্রচুর। বর্ষায় আর শীতে এই মানুষগুলোর অবর্ণনীয় কষ্ট সে নিজের চোখেই দেখেছে। এদের জন্য কিছু করা যায় কি না, সেটিই সে ভাবছে বহুদিন ধরে। বিশেষ করে শিশু এবং বৃদ্ধদের জন্য। অনাথ আশ্রম বা বৃদ্ধাশ্রম জাতীয় কিছু নয়, তারচেয়ে উন্নত কিছু।

তার ধারণা, একজন বৃদ্ধ মানুষ – যার সামনে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো সম্ভাবনার দ্বার খোলা নেই, অবহেলা-অনাদরে বিপন্ন, অসুখ-বিসুখে বিপর্যস্ত – বেঁচে থাকতে চায় কি না, তার সত্যিকারের প্রমাণ পাওয়া যায় শিশুদের সান্নিধ্য সে উপভোগ করে কি না তা দেখে। যদি উপভোগ করে তাহলে বুঝতে হবে, বাঁচার আকাক্সক্ষা তার ফুরায়নি; যদি না করে, বুঝতে হবে জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে গেছে সে, বাঁচার ইচ্ছে আর অবশিষ্ট নেই। কিন্তু যাদের কেউ নেই, স্বজনরা যাদের ত্যাগ করেছে, তাদের শিশুদের সান্নিধ্য উপহার দেওয়ার উপায় কী? উপায় একটাই। এমন কিছু একটা গড়ে তোলা, যেখানে এই অসহায় শিশু এবং বৃদ্ধরা থাকবে পাশাপাশি, আপনজনের মতো। শিশুরা পড়াশোনা করবে সাধারণ স্কুলেই, আর দশটা বাচ্চার মতো, তবে বিশেষ শিক্ষার ব্যবস্থাও থাকবে তাদের জন্য। বসবাস করবে হোস্টেলে, পাশেই থাকবে বৃদ্ধদের থাকার ব্যবস্থা, ওরা দিনের বড় একটা সময় কাটাবে এইসব বৃদ্ধ মানুষের সঙ্গে। ঠিক যেমন নাতি-নাতনিরা তাদের আনন্দময় সময় কাটায় দাদা-দাদি বা নানা-নানির সান্নিধ্যে। পরস্পরের আত্মীয় নয় তারা, তবু আত্মীয় হয়ে উঠবে। অনাত্মীয়কেও যে ভালোবাসা যায়, কিংবা, অনাত্মীয়ের কাছ থেকেও যে ভালোবাসা পাওয়া যায়, সেটি শেখা হয়ে যাবে এভাবেই। ছোটখাটো একটা হাসপাতাল থাকবে, ডাক্তার আর নার্স থাকবে সার্বক্ষণিক। স্কুলের মতো কিছু একটা থাকবে, প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার জন্য নয়, জগতের বিবিধ আনন্দের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু এতসবকিছু করতে হলে দরকার বেশ বড়সড় একটা জায়গা। ঢাকায় এত বড় জায়গা পাওয়া যাবে না, গেলেও তার সামর্থ্যে কুলাবে না, যেতে হবে ঢাকার বাইরে,  কিনতে হবে কয়েক একর জমি, গড়ে তুলতে হবে নানা গাছপালার বাগান আর পশুপাখির অভয়ারণ্য। শিশুরা যেন নিসর্গের সান্নিধ্য পায়, গাছপালা চেনে, পশুপাখি এবং মানুষকে ভালোবাসতে শেখে সেই ব্যবস্থা থাকতে হবে। আধশোয়া হয়ে এইসব ভাবছিল অংশু। অনেক দিন ধরে ভেবেই চলেছে, কিন্তু সে জানে, কাজটা শুরু করলে জীবনযাপনকে পাল্টে ফেলতে হবে। অনেকখানি সময়, কিংবা বলা যায় বেশিরভাগ সময়, এই কাজেই ব্যয় করতে হবে। আধাআধি কোনো কাজ করার চেয়ে না করাই ভালো মনে হয় তার। নিজেকে এখনো সেই পরিবর্তিত জীবনের জন্য প্রস্তুত করতে পারেনি অংশু, অত টাকা-পয়সাও নেই, অথচ কাজটি সে করে যেতে চায়। দেখতে চায়, এই ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে ওরকম একটা পরিবেশে রাখলে, পড়াশোনার এবং অন্যান্য শিক্ষাদীক্ষার ব্যবস্থা করলে কী অবস্থা হয় তাদের। এদের মধ্যে থেকে কি কেউ বড় মানুষ হয়ে উঠবে না? উঠবে, তার দৃঢ় বিশ^াস, উঠবে। কাজটা শুরু করা দরকার, বয়স বেড়ে যাচ্ছে, এরপর হয়তো শারীরিক শক্তি-সামর্থ্যও থাকবে না। কিন্তু এখানকার সবকিছু সামলাবে কে? তার অফিস, কাজকর্ম, যোগাযোগ, সংসার?

নিঝুম হয়ে এইসব ভাবছিল অংশু। এইসময় অপলা ঢুকলো ঘরে। বললো, তুমি এখানে একা একা কী করছো? আমরা সবাই ড্রয়িংরুমে গল্প করছি, তুমিও এসো।

আমার ভালো লাগছে না। এখন না গেলাম।

অপলা পাশে এসে বসলো, মন খারাপ নাকি তোমার?

না, মন ঠিক আছে। অন্য একটা বিষয় নিয়ে ভাবছি।

কী বিষয়? আমাকে বলা যাবে?

তুমি কিছুটা জানো। কিন্তু এখন পুরোটা বলা যাবে না। ডিনার দেবে কটায়?

দশটার দিকে। কেন, তোমার কি খিদে পেয়েছে?

না। সেজন্য না। ডিনারের পর তোমাকে নিয়ে বেরোতে চাচ্ছি।

নৈশভ্রমণ?

অংশু হাসলো, হ্যাঁ, ওরকমই কিছু।

আচ্ছা, ঠিক আছে। দশটা বাজতে বেশি দেরি নেই। আমি একটু গুছিয়ে ফেলি। তুমি ততক্ষণ ভাবতে থাকো, কী কী বলবে আমাকে।

ভাবতে হবে না। এমনিই বলা যাবে।

ওটা কথার কথা বলেছি। আমি যাই তাহলে?

যাও। ডিনার রেডি হলে ডেকো আমাকে।

আচ্ছা।

ডিনার দিতে হয় দুই ব্যাচে। প্রথম ব্যাচে বাচ্চারা বসে, পরের ব্যাচে বড়রা, মা কখনো নাতি-নাতনিদের সঙ্গে কখনো-বা ছেলেদের এবং বউদের সঙ্গে বসেন। গৃহকর্মীরাও একই সময়ে খেয়ে নেয়। গল্পসল্প আর খাওয়াদাওয়া মিলে কমপক্ষে এক ঘণ্টা লেগে যায়, কোনো-কোনোদিন তারচেয়ে বেশি। খাওয়ার পর সবকিছু গোছগাছ করার জন্য গৃহকর্মীদের সঙ্গে তিন বউই হাত লাগায়, বেশি সময় লাগে না। তবু, অংশু-অপলার বেরোতে বেরোতে প্রায় সাড়ে-এগারোটা বেজে গেল।

বেরোবার আগে সামান্য একটু সাজলো অপলা। চুল আঁচড়ে খোপা বাঁধলো আলতো করে। সবসময়ই এই দৃশ্যটি মুগ্ধ হয়ে দেখে অংশু। হাতের প্যাঁচে এরকম নিপুণ শিল্প ও রচনা করে কীভাবে, অনেকদিন ভেবেছে সে। চুল তো থাকে মাথার পেছনে, দেখা যায় না, দুই-হাত পেছনে নিয়ে চুলগুলোকে মুঠোয় ধরে কীভাবে যেন একটা প্যাঁচ দেয়, হয়ে যায় এলোখোঁপা। দেখে মনে হয়, এই খুলে গেল বলে, কিন্তু খোলে না। খোঁপা বাঁধার পর ঠোঁটে হালকা করে একটু লিপস্টিক দিলো অপলা, চোখে আলতো করে আইলাইনার বুলালো, কপালে দিলো ছোট্ট একটা টিপ, শাড়ি পাল্টে অংশুর পছন্দের একটা শাড়ি পরলো, এটুকুতেই অপরূপা হয়ে উঠলো ও। এমনিতেই অপলা খুব সুন্দর, আকর্ষণীয়; একটা অদ্ভুত কমনীয়তা জড়িয়ে ধরে রেখেছে ওর সর্বাঙ্গ; অল্প একটু সাজলেই একেবারে অপরূপা হয়ে ওঠে। অংশুর মন কেমন করে উঠলো, বাইরে যাওয়া বাদ দিয়ে অপলাকে নিয়ে বিছানায় যেতে ইচ্ছে হলো তার। না, এখন নয় – নিজেকে সামলালো সে। বিছানায় যাওয়ার জন্য সারা রাত তো পড়েই আছে, এখন বেরোনো যাক। কিন্তু অন্তত একটা চুমু না খেলে পাপ হবে ভেবে অপলাকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিলো সে, কানে কানে বললো, খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে মহারানী।

থ্যাংক ইউ মহারাজ। হেসে বললো অপলা।

মাকে বলে এসো।

বকা খাওয়াতে চাও?

খেলেই না হয় একটু। তুমি তো আমার ঢাল। তোমাকে বকা খাইয়ে নিজে নিরাপদ থাকি।

বুঝলাম, খুব বুদ্ধি তোমার!

অপলা গেল মায়ের ঘরে। বললো, মা, একটু বেরোচ্ছি।

এত রাতে আবার কই যাচ্ছো?

আপনার ছেলের সঙ্গে …

কী যে বদঅভ্যাস ছেলেটার! রাত-বিরাতে ঘুরতে বেরোয়। তুমিও লাই দিয়ে দিয়ে …

দিনে তো ওর সময় হয় না …

আচ্ছা, এসো। বেশি দেরি করো না।

আচ্ছা মা।

বেরোতে বেরোতে অংশু জানতে চাইলো, বেশি বকলো?

আরে না। মায়েরা একটু দুশ্চিন্তা করেই। আমার ছেলেমেয়েরা বাইরে থাকলে আমিও করি।

হুম। মা-বাবা হওয়া মানেই চিরদিনের জন্য দুশ্চিন্তার জোয়াল কাঁধে তুলে নেওয়া।

তবু কী আনন্দ! ওরা আমাদের ঘরে না এলে জীবনটা কেমন পানসে হয়ে যেত ভেবে দেখ।

ভাবতে পারি না। ওদেরকে ছাড়া জীবনকে ভাবতেই পারি না আমি।

গাড়ি চলছে ধীরে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে, এ বছর বৃষ্টি একটু বেশিই হলো, রাস্তাঘাট জনশূন্য, ইচ্ছে করলেই গতি বাড়ানো যায়, বাড়াচ্ছে না অংশু; সাধারণত নিজের প্রজেক্টগুলো দেখতে যায় সে, আজ বেশ কয়েকটা পার হয়ে এসেছে, একটাতেও দাঁড়ায়নি।

অপলা জিজ্ঞেস করলো, তোমার কী হয়েছে বলো তো?

কিছু হয়নি তো!

তাহলে কোথাও দাঁড়াচ্ছ না যে!

একটু রাস্তার আশেপাশে তাকাও অপলা, দেখ তো কিছু চোখে পড়ে কি না!

পড়বে না কেন? বেরোলেই চোখে পড়ে।

কী চোখে পড়ে?

এই যে ছিন্নমূল মানুষ আর বেওয়ারিশ কুকুর-বেড়াল ফুটপাতে শুয়ে আছে …

আজকে কিন্তু শোয়ার জায়গাও পাচ্ছে না।

হ্যাঁ, বৃষ্টিতে ভিজে আছে তো।

আগে শহরে কত যাত্রীছাউনি ছিল। এখন সেগুলোও নেই। থাকলে ওরা আশ্রয় নিতে পারত।

হুম।

আমি কাজটা শুরু করতে চাই অপলা।

কোন কাজ?

অংশু বলতে শুরু করলো। দেখা গেল, একা একা যতটা ভেবেছিল, বলতে গিয়ে তারচেয়ে আরো বিস্তারিতভাবে চিন্তা করা যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে অপলা খুঁটিনাটি প্রশ্ন করছে, সেদিকটা হয়তো অংশু ভাবেইনি, উত্তর দিতে গিয়ে আরো পরিষ্কার হচ্ছে। অংশুর মূল চিন্তা ছিল শিশুদের নিয়ে, কীভাবে তাদেরকে একটা স্বচ্ছন্দ জীবন দেওয়া যায়, পড়াশোনা শিখিয়ে কীভাবে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা যায়, অপরের প্রতি মনোযোগ-যত্ন-মমতা-ভালোবাসা কীভাবে তৈরি করা যায়, নিসর্গের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্কিত করা যায় – এইরকম। কিন্তু অপলা বৃদ্ধদের নিয়েই বেশি জিজ্ঞেস করলো। যাদের জীবনে স্বপ্ন বলে কিছু অবশিষ্ট নেই, তাদের আবার জীবনের স্রোতে ফিরিয়ে আনা যাবে কি না এই নিয়ে সংশয় তার। অংশু বললো, বৃদ্ধাশ্রমগুলোর প্রধান সমস্যা কী জানো? ওখানে কিন্তু যত্ন-আত্তির অভাব হয় না, কিন্তু অভাব হয় আনন্দের, অভাব সঙ্গের। ওখানে সবাই বৃদ্ধ এবং কোনো-না-কোনোভাবে তারা সবাই পরিত্যক্ত হওয়ার অনুভূতিতে ভোগে। তারা যখন নিজেদের মধ্যে আলাপ করে, তখন সেই দুঃখবোধটা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তাতে স্বস্তি মেলে না, শান্তি মেলে না, বরং পুরনো দুঃখ নতুন করে পেয়ে বসে তাদের। অথচ আশেপাশে যদি শিশুরা থাকে, হোক তারা অনাত্মীয়, তাদের আনন্দ-উচ্ছ্বাস, নির্মল হইহল্লা হয়তো তাদেরও আনন্দিত করে তুলবে। হ্যাঁ, সেরকম নাও হতে পারে, তবু এটা একটা সম্ভাবনা। শিশুদের সান্নিধ্য তো সকলেই ভালোবাসে। মোটামুটি কমন ফেনোমেনা এটা।

বলতে বলতে অংশুর মনে হলো, একা একা না ভেবে বরং আলাপ করলে পরিকল্পনাটা আরো ভালোভাবে করা যাবে। অপলার সঙ্গে আজকে যতটা কথা হলো ততটা এর আগে বলা হয়নি। কেবল আবছাভাবে এরকম একটা স্বপ্নের কথা সে জানিয়েছিল। এরপর একসঙ্গে দুজন বসতে হবে, কাগজ-কলম নিয়েই, লিখে ফেলতে হবে সম্ভাব্য সবগুলো বিষয়। পরিকল্পনাটা একটু গোছানো হলে না হয় আলাপ করা যাবে ঋভু বা সুসান বা আর কোনো বন্ধুর সঙ্গে, যদিও সে আপাতত আর কাউকেই চাইছে না সঙ্গে। একাই দাঁড় করাতে চাইছে প্রতিষ্ঠানটা। শুরুতেই কেউ হস্তক্ষেপ করলে সে যেমনটি করতে চায় তেমনটি হবে না। কিন্তু পারবে তো সে এতখানি সময় দিতে, এত টাকা জোগাড় করতে, এই শহুরে জীবনের মায়া কাটিয়ে অনেকটা সময় ওখানে গিয়ে থাকতে? সে জিজ্ঞেসও করলো অপলাকে, তোমার কী মনে হয়, পারবো আমি?

অপলা হাত রাখলো অংশুর হাতে, আলতো করে চাপ দিয়ে বললো, অবশ্যই পারবে।

এত কনফিডেন্ট হচ্ছো কীভাবে?

তোমার জন্য মা-বাবার দোয়া আছে, অনেক মানুষের শুভকামনা আছে। একটা কথা আছে না, যারা অনেকের আশীষ নিয়ে পথে নামে, তারা কখনো ব্যর্থ হয় না, গন্তব্যে তারা পৌঁছে যায়ই!

আমাকে তো অনেকখানি সময় ওখানে দিতে হবে, একা একা থাকতে পারবে?

একা থাকবো কেন? আমিও তো যাবো তোমার সঙ্গে। কিছু কাজ আমিও তো করতে চাই।

ছেলেমেয়েরা? ওরা থাকতে পারবে?

তা পারবে। ওদের দাদু আছেন না? চাচা-চাচিরা আছে না? তাছাড়া আমরা তো আর সবসময় ওখানে থাকবো না।

আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকবো।

অনেক টাকাও তো খরচ হবে।

তা তো হবেই।

কিন্তু এটা তো কোনো লাভজনক প্রতিষ্ঠান হবে না, ফেরত আসবে না কিছুই …

তাতে কী?

তোমার মনে হবে না যে, তোমাদের অধিকারবঞ্চিত করে…

না, মনে হবে না।

আমাদের যেটুকু আছে সেটুকু তো যথেষ্ট, নাকি?

হ্যাঁ, অবশ্যই।

ছেলেমেয়েদের জন্য অনেক কিছু রেখে যেতে চাই না। তাহলে ওদের কিছু করার থাকবে না।

হ্যাঁ। যা আছে, তাতেই চলবে ওদের।

বেশি থাকলে কী হয় তা তো ঋভুকে দেখলেই বোঝা যায়। ওর বাবা-মা ওকে একদম পঙ্গু বানিয়ে গেছেন।

বাবা-মায়ের দোষ কী? ঋভু ভাইয়ের স্বভাবটাই এরকম।

এরকম তো ছিল না। যখনই টাকা-পয়সা হাতে এলো তখন থেকেই জীবনের সবকিছু থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলল।

ওটা টাকা-পয়সার জন্য নাও হতে পারে। কেউ কেউ তো ওরকম হয়ই। জীবনবিমুখ টাইপের।

সেটাই তো বললাম। একেবারে জীবনবিমুখ। কিছুই করতে চায় না। কিছু করতে নাকি ওর ভালোও লাগে না। টাকা-পয়সাও খরচ করে না। ও কিন্তু কৃপণ টাইপের না, তবু খরচ করে না। চাকরি করে, তাতেও মন নেই। যে বেতন পায় তাতেই চলে যায়। খরচ তো তেমন কিছু নেই। কোটি কোটি টাকা ব্যাংকে পড়ে আছে। এর কোনো মানে আছে?

থাকুক না যেমন ইচ্ছে। ওসব নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর দরকার কী?।

বন্ধু বলেই মাথা ঘামাই। ওর মতো আমি যদি পৈতৃক-সূত্রে এত ধনসম্পদ পেতাম, কী যে করে ফেলতাম …

তা নাও হতে পারতো। তুমিও হয়তো উনার মতোই হতে। কিছু করতে ইচ্ছে করতো না।

সে-সম্ভাবনাও অবশ্য উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

বাদ দাও উনার কথা। আমরা নিজেদের কথা বলছিলাম, তাই বলি।  

হ্যাঁ সেটাই। আচ্ছা, আমি যেটুকু করেছি তাতে তুমি সন্তুষ্ট? নাকি তোমার কোনো অপ্রাপ্তির দুঃখ আছে?

একদম না। একেবারেই দুঃখটুঃখ নেই। তুমি আমাকে বোঝো না?

বুঝি। না বুঝলে কি আর এসব ভাবতে পারতাম!

মানুষ এক জীবনে যা করে, তুমি তারচেয়ে বেশিই করেছ। শূন্য থেকে শুরু করে অনেককিছু। শুধু আমার না, কারো কোনো অতৃপ্তি নেই।  

তুমি তা জানো কীভাবে? অন্যদের থাকতেও তো পারে।

সবার সঙ্গে তো আমিই কথা বলি। আমার দেবর-ননদরা তোমাকে দেবতার মতো মান্য করে। বলে, তোমার মতো হওয়া সম্ভব না, কোনো মানুষই এতটা পারে না। মাও বলে, তোমার মতো সন্তানের মা হতে পারাটা গৌরবের।

থাক আর বলো না, ফুলতে ফুলতে আকাশে উড়ে যেতে পারি।

আমার কাছে সেফটিপিন আছে, ফুটো করে বাতাস বের করে দেবো।

হাহাহা … একেবারে যোগ্য বউ আমার।

হতেই হবে। শোনো, এখন বাসার পথ ধরি, চলো।

আরে না। চলো ঋভুর বাসায় একবার হানা দিই। দেখি গাধাটা কী করছে।

এত রাতে ওখানে যাবে? হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে।

আরে না। ও এত তাড়াতাড়ি ঘুমায় না। আর ঘুমালেই কী, ডেকে তুলবো!

তুমি যে কী না! কোনো মায়াদয়া নেই।

মানে?

একজন ঘুমন্ত মানুষকে ডেকে তুলবে!

ওরে আমার সোনারে। ঋভুর জন্য দেখি মায়া উথলে উঠছে। ঘটনা কী?

অংশুর কণ্ঠে স্পষ্ট ইয়ার্কি। কিন্তু ওকে ইয়ার্কি-যুদ্ধে জিততে দেওয়া যাবে না আজকে। অপলাও তাই ছাড়লো না, বললো, ঘটনা আবার কী? তুমিই না বলো, ঋভু ভাই আমার প্রেমিক।

ভুল বলি নাকি? ও তো তোমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।

থাক থাক আর বলো না।

ঠিক আছে বলবো না। কিন্তু এই মধ্যরাতে প্রেমিকের কথা ভাবা হচ্ছে, এত সহজে ছাড় পাবি? বাসায় গিয়ে তোকে দেখাবো মজা।

আচ্ছা, আমিও মজা দেখার জন্য মুখিয়ে আছি। দুষ্টুমির হাসি হেসে বললো অপলা।

এখনই যাই বাসার দিকে?

না না, ঋভুভাইকে একটু দেখেই যাই। নইলে মজা জমবে না।

তাহলে আমিও অবন্তিকে একটু দেখে আসি।

যাও, না করেছে কে!  

অপলা দেখলো, গাড়ি সত্যিই গুলশানের দিকে যাচ্ছে। মানে ঋভুর বাসার দিকে। কিন্তু একটু দূরে থাকতেই গাড়ি থামাল অংশু।

কী হলো? জিজ্ঞেস করলো অপলা।

দেখ। ঋভুর বাসার দিকে ইঙ্গিত করলো অংশু।

অপলা দেখলো, মেইন গেটটা খোলা। অবন্তির গাড়িটা বাইরে দাঁড়ানো। একটু পরই দেখা গেল, অবন্তি এসে গাড়িতে উঠল। পিছে পিছে ঋভুও এলো, একটু ঝুঁকে ড্রাইভারকে কী যেন বললো। তারপর গাড়ি চলতে শুরু করলো। অপলা জানালা দিয়ে মুখ বের করে হাত নাড়লো, ঋভুও হাত নেড়ে বিদায় জানালো, তারপর ধীরপায়ে ঢুকলো গেটের ভেতরে। গেট বন্ধ হয়ে গেল।

অপলা আর অংশু পরস্পরের দিকে তাকিয়ে মুচকি অর্থপূর্ণ হাসি হাসলো।

কিছু একটা বোধহয় হচ্ছে, নাকি বলো? – বললো অংশু।

হুম। তাই তো মনে হচ্ছে।

ওরা আমাদের বাসা থেকে বেরিয়েছে সেই সন্ধ্যার পর। অবন্তি এতক্ষণ এখানেই ছিল। ভাবতেও পারিনি।

বিকেলে যখন বাসায় এসে হাজির হলো তখন আমিও ভাবতে পারিনি যে, দুজন একসঙ্গে আসবে।

এখনো আমাকে কিছু বলেনি। দেখা যাক। কিছু হলে তো ভালোই হয়।

হ্যাঁ। এতদিনে সেই সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।

চলো বাসায় ফিরি।

যাবে না ঋভুভাইয়ের বাসায়?

নাহ। ও বুঝে ফেলবে যে আমরা দেখে ফেলেছি। হয়তো বিব্রত হবে। থাক।

আচ্ছা, ঠিক আছে।

ফিরতেও বেশি সময় লাগলো না। ফেরার পথেও

ইয়ার্কি-যুদ্ধ চললো, কেউ কাউকে হারাতে পারলো না।

ঘণ্টা-দুয়েকের মতো তারা বাইরে ছিল, গাড়ি থেকে নামেওনি। তবু মনে হলো, দারুণ একটা সময় কাটলো। মনটা একেবারে হালকা হয়ে গেছে, ফুরফুরে লাগছে দুজনেরই।

সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। তারাও বেডরুমে চলে এলো। অংশুকে দরজা বন্ধ করতে দেখেই অপলা বুঝে গেল, আজকে সত্যিই ভূত চেপেছে ওর মাথায়। হ্যাঁ, তাই। দরজা বন্ধ করে, বাতি নিভিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলো অংশু।

অপলা বললো, একটু দাঁড়াও। শাড়িটা বদলে আসি।

আরে না। আমিই শাড়ি খুলবো তোর।

কী পাগলামি হচ্ছে!

পাগলামির দেখেছিস কী? কেবল তো শুরু।

পাঁজাকোলা করে বিছানায় নিতে নিতে অংশু বললো, বললাম না আজকে মজা দেখাবো!

হুম। আমিও তো মজা দেখতে চাইলাম।

শাড়ি-ব্লাউজ খুলে ফেললো অংশু। বললো, আজকে দেখাবো তোর প্রেমিকের চেয়ে আমি কত সুপুরুষ।

বুঝবো কী করে? প্রেমিকের সঙ্গে তো কখনো এসব করিনি।

করতে চাস? বুকে মুখ ঘষতে ঘষতে কুট করে একটা কামড় দিয়ে বললো ঋভু।

উফ! ডাকাত একটা! কামড় দিচ্ছে!

বল, করতে চাস?

হ্যাঁ, চাই তো!  হাসতে হাসতে বললো অপলা। আজকে হারা যাবে না।

তাহলে দেখ। এই যে, এইভাবে তোর প্রেমিক ঢুকে যাবে তোর ভেতরে!

তুমি একটা শয়তান। ডাকাত। গুন্ডা।

তুমুল উত্তেজনায় ভেসে গেল দুজন। দুজনের সম্মিলিত শীৎকারে, সø্যাংয়ে, দ্রুত লয়ের শ^াসে ভরে উঠলো রাতের বাতাস।

তৃপ্তি আর আনন্দের মিলন শেষে ঋভু বললো, মজা পেয়েছিস?

হ্যাঁ, পেয়েছি। তুমি তো আমার সুপুরুষ নায়ক। বন্ধুকে নিয়ে বউয়ের সঙ্গে এরকম মজা করে কোনো পুরুষ, জীবনেও শুনিনি। বরং উল্টোটাই দেখেছি।

উল্টোটা মানে?

মানে, বউয়ের দিকে কেউ তাকালে হিংসায় জ¦লেপুড়ে যেতে দেখেছি।

হাহাহা … ওরা গাধার দল। জীবনকে উপভোগ করতে জানে না।

আমার সৌভাগ্য, আমি অন্যরকম একজনকে পেয়েছি। এবার ঘুমিয়ে পড়ো। অনেক ক্লান্ত লাগছে তোমাকে।

সত্যিই কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লো অংশু। আর অপলা অপলক তাকিয়ে রইলো ওর মুখের দিকে। ঘুমালে কী যে সরল লাগে ওর মুখটা! দেখে মনে হচ্ছে, সদ্য যৌবনে পা দেওয়া নির্মল এক মানুষ। কে বলবে, একসঙ্গে এত ধরনের চিন্তা করতে পারে ও! নিজের পেশা, পরিবার, বন্ধুবান্ধব,

সমাজ-মানুষ, আজকে তার সঙ্গে যুক্ত হলো নতুন পরিকল্পনা। সত্যিই, একজন মানুষ চাইলে কত কিছুই না করতে পারে! ভালো লাগছে অপলার। সত্যিই নিজেকে দারুণ সুখী আর সৌভাগ্যবান এক মানুষ মনে হচ্ছে। (চলবে)