হাসান হাফিজুর রহমানের রাজনৈতিক চেতনার উদ্ভাস

একজন কবির কাছ থেকে আমরা কী আশা করি? তাঁর কাছে একেকজন পাঠকের একেকরকম চাহিদা থাকে। তবে প্রাজ্ঞ পাঠকের প্রায় সবাই একজন কবির কাছে আশা করেন তাঁর মৌলিকতা, তাঁর কাব্যসৃষ্টির অভিনবত্ব। আজ থেকে অনেক বছর আগে, ১৮৮৬ সালে, কবি জেরাল্ড হপকিন্স (১৮৪৪-১৮৮৯) জানিয়েছিলেন,\

`Every true poet, I thought, must be original and originality a condition of poetic genius.’ যে কবি-প্রতিভার কথা হপকিন্স বলতে চেয়েছিলেন, হাসান হাফিজুর রহমানের কাব্যসমগ্রের মধ্যে তার একটি ধারাবাহিক প্রতিফলন দেখতে পাই।

মাত্র একান্ন বছরের পরমায়ু নিয়ে হাসান নিজেকে এক অবিশ^াস্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। আমাদের আরেকজন খ্যাতিমান কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ তাঁর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছিলেন, হাসান হলেন ‘একুশের সংকলনের সাহসী নির্মাতা, সাম্প্রতিক ঘটনার বিদগ্ধ ভাষ্যকার; প্রগতিশীল সাহিত্য আন্দোলনের নিবেদিত সংগঠক, সমকাল-গোষ্ঠীর মধ্যমণি কিংবা স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের সত্যভাষী গবেষক।’ অন্যদিকে, ধীমান অধ্যাপক-গবেষক রফিকউল্লাহ খানের মূল্যায়ন হচ্ছে, ‘‘একুশে ফেব্রুয়ারী’ সংকলন-সম্পাদনা বাঙালি জীবনের এক মহত্তম কীর্তি। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহ ও তার পরিণামের মধ্যে হাসান হাফিজুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের রক্তবীজ প্রত্যক্ষ করেছিলেন। ‘একুশে ফেব্রুয়ারী’ সংকলনের পেছনে তাঁর শ্রম, ত্যাগ ও নিষ্ঠার যে স্বাক্ষর বিধৃত, সমকালীন ইতিহাসে তা তুলনারহিত।’ এরই সঙ্গে তিনি যোগ করেছিলেন, ‘ষোলো খণ্ডে সমাপ্ত ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ : দলিলপত্র’ সম্পাদনা তাঁর জীবন ও কর্মের ধারাবাহিকতারই সাক্ষ্যবাহী। একুশে ফেব্রুয়ারি দিয়ে যার সূত্রপাত, মুক্তিযুদ্ধ দিয়ে তার সমাপ্তি। জীবনাদর্শের সঙ্গে কর্মযোগের এই সমন্বয় তাঁকে একক অনন্যতায় উদ্ভাসিত করে।’ আর সেই উদ্ভাসিত অনন্য ধারাবাহিকতার নজির সামনে এনে রফিকউল্লাহ খান আরো বলেছিলেন, ‘কর্মী ও মানুষ হিসেবে একজন সাহিত্যস্রষ্টার যে দায়বদ্ধতা, হাসান হাফিজুর রহমানের জীবন ও কর্মের মধ্য দিয়ে তার আদর্শরূপ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’

বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলন থেকে শুরু একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ  –  এই দীর্ঘ পথ-পরিক্রমার সার্বিক চেতনা সম্পর্কে হাসান নিজেও অত্যন্ত সচেতন ছিলেন। আর সে-কারণেই তাঁর পক্ষে এইভাবে বলা সম্ভব হয়েছিল, ‘যে মৌলিক চেতনা ভাষার অধিকার রক্ষায় আমাদের জাগ্রত করেছে তা স্বাধীনতা সংগ্রামেরও প্রেরণা। সেজন্যে বলতে পারি, চারিত্রগত দিক থেকে ভাষা এবং স্বাধীনতা সংগ্রাম এক জাতের মূল্যবোধের ফসল। দুটোই মৌলিক অধিকার রক্ষা বা আদায়ের সংকল্পে উদ্বুদ্ধ।’ হাসানের কবিতায় এবং তাঁর কাব্যচেতনায় সেই উদ্ভাসনের একটি সামগ্রিক চিত্র আমরা দেখতে পাই।

দুই

হাসান হাফিজুর রহমানের অপ্রকাশিত কবিতার ভূমিকা লিখতে গিয়ে কবি শামসুর রাহমান বলেছিলেন, ‘আমরা যারা ছিলাম হাসান হাফিজুর রহমানের কাছের মানুষ, আমরা যারা তাঁর প্রীতি ও সহৃদয়তার পরিচয় পেয়েছি, পেয়েছি সেই সংবেদনশীল শিল্পী মানুষটির বন্ধুতা, আমাদের অস্তিত্বের একটি অত্যন্ত প্রিয় অংশ বিলীন হয়ে গেছে তাঁর আকস্মিক অকাল মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে।’ সেইসঙ্গে শামসুর রাহমান তাঁদের বন্ধুত্বের পুরনো দিনগুলোকে সামনে এনে লিখেছিলেন, ‘মনে পড়ে আমাদের প্রথম সাক্ষাতের দিনে হাসানই … আমার কবিতা তাঁর ভালো লাগে, এ কথা … আমাকে জানিয়েছিলেন রোদ ঝলমলে সদরঘাটের মোড়ে দাঁড়িয়ে।’ সেইটা জানতে পেরে নিজের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে রাহমান বলেছেন, ‘হাসানের তারিফে আমি যুগপৎ বিস্মিত ও উল্লসিত হয়েছিলাম। একজন নতুন লেখকের পক্ষে এ-ধরনের প্রশংসা কতটা উৎসাহ  –  উদ্দীপক তা শুধু নতুন লেখকরাই জানেন।’ আবার, আমরা এ-ও দেখতে পাই  –  কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ তাঁর একটি লেখায় হাসান হাফিজুর রহমানকে শুধুই কবি নন, সেইসঙ্গে একজন ‘কবি-নির্মাতা’ হিসেবে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন।

শুধু অন্যদের সাক্ষ্য নয়, হাসানের নিজের স্বীকারোক্তির মধ্যেও দেখতে পাই, এইসব বিষয় নানাভাবে উঠে এসেছে। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘বন্ধুদের কোনো ভূমিকা আমার সাহিত্যচিন্তায় তেমন পড়েনি। সহকর্মী ছিলাম। পরস্পরকে সাহায্য করেছি। বই প্রকাশ করেছি। আমার প্রধান ভূমিকা ছিল সাংস্কৃতিক সংগঠকের।’ সেই বিবেচনা থেকেই, খুবই যথাযথভাবে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পর্কে, শামসুর রাহমান  বলেছিলেন, ‘সহজেই তিনি যে-কোনো মানুষকে আপনজন বলে গ্রহণ করতে পারতেন। এ জন্যেই তিনি ছিলেন আমাদের মধ্যে সবচেয়ে লোকপ্রিয়। তাঁর ব্যবহারে এমন এক সহজ, সুন্দর মাধুর্য ছিলো যে, যিনি তাঁর সংস্পর্শে এসেছেন, তিনি তাঁকে ভালো না বেসে পারেননি।’ হাসান সম্পর্কে এরচেয়ে বড় সত্যি আর কিছুই হতে পারে না।

তিন

পুরনো দিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শামসুর রাহমান বলেছিলেন, ‘আমাদের আড্ডার প্রধান বিষয় ছিলো সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং রাজনীতি। … হাসান রাজনীতি সম্পর্কে কথা বলতে পছন্দ করতেন এবং তাঁর রাজনীতি  –  প্রীতি এবং তাঁর প্রগতিশীল চিন্তাধারাই তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছিলো “দাঙ্গার পাঁচটি গল্প” এবং “একুশে ফেব্রুয়ারী” নামক বিখ্যাত সংকলন দুটি প্রকাশ করতে।’ এসবের সঙ্গে কবি শামসুর রাহমান আরো বলেছিলেন, ‘দুটো সংকলনেরই অর্থ ও শ্রমের উৎস খোদ হাসান হাফিজুর রহমান, যিনি আমৃত্যু ছিলেন অসাধারণ উদ্যমী, নিষ্ঠাবান।’ অন্যদিকে, তাঁর নিজের রাজনৈতিক সচেতনতার ইতিহাস বিষয়ে হাসান জানিয়েছিলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সের ছাত্র থাকাকালে, ১৯৪৯ সালে মুসলিম লীগের ছাত্র সংগঠনের সাথে আকস্মিকভাবে জড়িয়ে পড়ি। ফুটবল খেলতাম। … ওদের ছাত্রফ্রন্ট থেকে এ.জি.এস. পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। নির্বাচনে জয়ী হই। … এরপর বন্ধু বাহাউদ্দিন চৌধুরী আমার কাছে একটি প্রশ্ন রেখেছিলেন  –  যা আমার জীবনের মোড় পাল্টে দেয় : ‘হাসান, শেষ পর্যন্ত তুমি মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে দাঁড়ালে?’

এখানেই ঘটনার শেষ নয়, এর রেশ হাসানের চেতনায় রয়ে যায় দীর্ঘদিন। হাসান বলেছিলেন, ‘তাঁর [বাহাউদ্দিন চৌধুরী] কাছ থেকেই কমিউনিজমের দীক্ষা আমি প্রথম পাই। সূক্ষ্ম অন্তর্দৃষ্টির সাহায্যে পাকিস্তানের অসারত্ব প্রমাণ করলেন তিনি। এতে আমি পুরোপুরি কনভিন্সড হয়ে গেলাম। বাহাউদ্দিনই প্রথম শ্রেণী-সংগ্রামের দীক্ষা দেন আমাকে।’ এর পরে যা  –  যা ঘটেছে, সে-সম্পর্কেও হাসান তাঁর পাঠকদের অকপটে জানিয়েছেন, ‘বি.এ. পড়ার সময় সব হলের নির্বাচনী ইস্তেহার আমিই লিখতাম। এ-সময়ই কমিউনিস্ট পার্টির সাথে জড়িত হই। সদস্য ছিলাম না। সাংস্কৃতিক ফ্রন্টে কাজ করতাম।’ এরই সূত্র ধরে তিনি আরো বলেছিলেন, ‘কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ হয় ১৯৫০ সালে। কোনো রাজনৈতিক কাজ করিনি। সাংস্কৃতিক পর্যায়ে কাজ করতাম। তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং-এ উপস্থিত ছিলাম। সেখানে জ্ঞান চক্রবর্তীর মতো ব্যক্তিও উপস্থিত ছিলেন।’

এ তো গেল সত্যের একদিক। এর আবার ভিন্ন  –  আরেকটি দিকও রয়েছে। হাসানই  সেটা বলেছেন, ‘কমিউনিস্ট পার্টির নীতির সাথে কোনওদিন আমার পুরোপুরি বনতো না। কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে তর্ক করেছি। ছাত্র ইউনিয়নের ভাগ হবার সময়ও আমি সেটা সমর্থন করতে পারিনি।’ একটা রাজনৈতিক সংগঠনের নীতি কিংবা মতাদর্শের সঙ্গে এই যে চিন্তার বনা  –  না  –  বনা, তার নেপথ্যের কারণগুলো পুরোপুরি বুঝে নিতে পাঠকদের তেমন  –  একটা অসুবিধা হয় না। হাসান হাফিজুর রহমান ছিলেন এমন একজন আত্মসচেতন কবি, যিনি আমৃত্যু আত্মজিজ্ঞাসাকে কখনো খারিজ করে দেননি।

এই আত্মজিজ্ঞাসা তাঁকে মতান্ধতার কবল থেকে নানাভাবে রক্ষা করেছে, যেটি কবি বিষ্ণু দে কিংবা বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো রাজনীতিসচেতন কবিদের মধ্যে বিভিন্ন চেহারায় আমরা দেখতে পাই। শামসুর রাহমান অত্যন্ত যৌক্তিকভাবেই বলেছিলেন, ‘হাসান হাফিজুর রহমান ছিলেন বরাবরই একজন দায়বদ্ধ লেখক। … এই দায়বদ্ধতা কখনো তাঁকে ত্যাগ করে যায়নি, বরং বিষ্ণু দে-র পরাক্রান্ত দৃষ্টান্তে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি দায়বদ্ধতার মধ্যেই কবিতার মুক্তি খুঁজেছেন।’ শুধু কবিতারই মুক্তি নয়, এর মধ্যে দিয়ে হাসান হাফিজুর রহমান যেন আত্মচেতনার যে  –  মেধাবী  –  বেদনা, তার মুক্তি খুঁজে পাবারও একটা পথ পেয়ে গিয়েছিলেন।

চার

একজন কবি হিসেবে হাসানের স্বকীয়তার বিষয়ে বলতে গিয়ে শামসুর রহমান জানিয়েছিলেন, ‘বিষ্ণু দে-র কবিতার বক্তব্য ও আঙ্গিক হাসানকে প্রভাবান্বিত করলেও তিনি কবিতায় নিজস্ব কণ্ঠস্বর ফুটিয়ে তুলেছেন উল্লেখযোগ্যভাবে, যা একজন প্রকৃত কবির কুললক্ষণ।’ সেই কুললক্ষণের পরিচয়, বলতে গেলে, হাসানের কাব্য-পরিক্রমার একেবারে শুরু থেকেই আমরা দেখতে পাই। হাসান নিজেও তাঁর সেই বিখ্যাত ‘অমর একুশে’ কবিতাটির জন্মবৃত্তান্ত সম্পর্কে জানিয়েছিলেন, ‘কবিতাটি রচনা করি স্বাভাবিক প্রেরণায়। তখন সবারই আবেগ ছিল। ভাষা-আন্দোলন তো ছিলো পাবলিক সেন্টিমেন্টের ব্যাপার। তার সাথে ব্যক্তিগত অনুভূতির সংযুক্তির ফলশ্রুতিই হলো ‘অমর একুশে’। মূলত দেশজ অনুভূতি, সেখানে সংযুক্ত হলো ব্যক্তির কমিটমেন্ট।’ এইভাবেই হাসানের কবিতায় প্রগতিচেতনার সঙ্গে মানবিক চেতনার সংযুক্তি ঘটেছে। ‘অমর একুশে’ কবিতাটি শুরু হয়েছে একেবারে ঘরোয়া অনুভূতিকে কেন্দ্র করে এভাবে –

আম্মা তাঁর নামটি ধরে একবারও ডাকবে না তবে আর?

ঘূর্ণিঝড়ের মতো সেই নাম উন্মথিত মনের প্রান্তরে

ঘুরে ঘুরে জাগবে, ডাকবে

দুটি ঠোঁটের ভেতর থেকে মুক্তোর মতো গড়িয়ে এসে

একবারও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে না, সারাটি জীবনেও না, তবে

                                                          আর?

নিজের কাব্যপ্রবণতা সম্পর্কে হাসান যতই বলুন না কেন, ‘কবিতার কারুকার্যের ওপর আমি তেমন গুরুত্ব দিইনি, বক্তব্যকেই প্রাধান্য দিয়েছি।’ এই কবিতাটি বরং তার বিপরীত অবস্থাকেই আমাদের সামনে তুলে ধরে। এখানে অনেকটা ব্যাপ্তি নিয়ে কবির একটা বক্তব্য আছে ঠিকই, কিন্তু কবিতার শিল্পনৈপুণ্যেরও কোনো অভাব নেই। আর নেই বলেই দেশের সব মানুষের হয়ে এমন একটি দীর্ঘশ্বাস তিনি তাঁর কবিতায় যুক্ত করে দিতে পেরেছিলেন  –  ‘আবুল বরকত, সালাম, রফিকউদ্দিন, জব্বার/ কি আশ্চর্য, কি বিষণ্ন নাম! একসার জ্বলন্ত নাম।’ জীবনের প্রতি মমতা ও দায়বদ্ধতা থাকলেই কেবলমাত্র একজন কবির পক্ষে এইভাবে ব্যক্তিক ও সামষ্টিক একটা দীর্ঘশ্বাসকে কবিতায় শিল্পরূপ  দেওয়া সম্ভবপর হয়ে ওঠে। ব্রিটিশ কবি ও সমালোচক জেমস রিভস (১৯০৯  –  ১৯৭৮) বলেছিলেন, ‘We may say that poems are made of words, it is really truer to say that they are made of life.’ শব্দ দিয়েই কবিতা লেখা হয়, এটি সত্যি; কিন্তু তার চেয়েও বড় সত্যি এই যে, কবিতার সবচেয়ে বড় উপাদান হচ্ছে  –  জীবন, আরো নির্দিষ্টভাবে যদি বলা হয়, তাহলে বলতেই হয়, মানুষের গোটা জীবন। সেই জীবনের নানারকম অভিজ্ঞতা।

নিজের অভিজ্ঞতা থেকে হাসান হাফিজুর রহমান সেদিনের ঘটনাবলি সম্পর্কে আমাদের জানিয়েছিলেন, ‘১৯৫২  –  এর ভাষা আন্দোলনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ছেলেমেয়েই জড়িত ছিলো। সেনসেশন সবারই সমান ছিলো। যেহেতু আমি সাহিত্যিক ছিলাম, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলাম, সেজন্য কোনো কিছু করার অবকাশ আমার বেশি ছিলো।’ তারপরই বেশ  –  খানিকটা সবিস্তারে তিনি বলেছেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারীতে আমি এবং অলি আহাদ মধুর কেন্টিনে বসেছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, মেডিকেল কলেজের ওখানে ছেলেরা ইট-পাটকেল ছুঁড়ছে, তুমি ওখানে গিয়ে তাদের নিষেধ করো। নতুবা, গুলি চলতে পারে। আমি গিয়ে তাদের নিষেধ করলাম, কিন্তু কেউ আমার কথা শুনলো না।’ এর পরের ঘটনা অনেকটা যেন এক রোমাঞ্চ  –  জড়ানো। হাসান জানাচ্ছেন, ‘কতক্ষণ পর দেখলাম আমি নিজেও ইট মারতে শুরু করেছি। তারপর একটা টিয়ার গ্যাসের শেল এসে আমার পায়ের কাছে পড়লো। কিন্তু সেটা ফাটেনি। আমি সেটা ঘুরিয়ে উল্টোদিকে মারলাম। তিন  –  চার হাত দূরে সেটা পড়লো।’ এই যে একটা সম্পূর্ণ নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা, সেটিই যেন হাসানকে এইভাবে কবিতাটি লেখার প্রেরণা জুগিয়েছিল –

কৃষাণ যেমন বর্ষার পলিসিক্ত মাঠে রোয়া ধানের চারাগুলো

রেখে আসে সোনালি শস্যের জন্মের আকাক্সক্ষায়

তেমনি আমার সরু সরু অনুভূতিগুলো জনতার গভীরে বুনে

                                                        এসেছি;

দেশ আমার, ইতিহাসের ধারা যে জ্ঞান আমাকে দিয়েছে

                                                          তারই

পবিত্র সন্তান একটি দিনে তোমার হৃদয়ের বিদীর্ণ আভাকে

দেখিয়েছ  –  বিদীর্ণ আভায় জ্বলেছিলে;

যে আভারই আকস্মিক স্পর্শে হয়তো

কহিতুর চূর্ণ চূর্ণ হয়ে ছড়িয়েছিল প্রাণপ্রার্থী প্রান্তরে প্রান্তরে।

দেশ আমার তোমার প্রাণের গভীর জলে স্নান করে এলাম।

‘অমর একুশে’ কবিতাটি একুশে ফেব্রুয়ারী (১৯৫৩) সংকলনে সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়। কবিতাটি হাসান লিখেছিলেন ‘১৯৫২-র মার্চ/ এপ্রিলের দিকে।’ ওই বছরের জুন মানে তিনি কুমিল্লা সাহিত্য সম্মেলনে কবিতাটি প্রথম জনসম্মুখে পাঠ করেন। হাসান আরো জানিয়েছিলেন, ‘প্রথম “একুশে ফেব্রুয়ারী” সম্পাদনার সময় আমার সাথে ছিলেন মোহাম্মদ সুলতান।’

এই সংকলন প্রকাশের ইতিহাস জানিয়ে মোহাম্মদ সুলতান পরবর্তী সময়ে লিখেছিলেন, ‘তেপান্ন সালের প্রথম দিকে হাসান প্রস্তাব দিল ৫২-এর উত্তাল ভাষা আন্দোলনের সময়ে আমাদের দেশের সুধী লেখক-সমাজ তুলি ও কলমের আঁচড়ে যা লিপিবদ্ধ করেছেন, পুস্তকাকারে তা প্রকাশ করা যায় কিনা!’ কিন্তু কাজটি সেদিন অতো সহজ ছিল না। কারণ, বিরোধীদের উপর ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক নিপীড়ন, হাসান-সুলতানদের আর্থিক অসচ্ছলতা ইত্যাদি। সুলতান আরো জানিয়েছিলেন, ‘তখনকার দিনে ৪ আনা বা এ-সময়ের ২৫ পয়সা চাঁদা দিলে (প্রগতিশীল সংগঠনকে) নিজেদের ধন্য মনে করতাম। চায়ের দাম ছিলো প্রতি কাপ দু-পয়সা। একটা পরোটা ৪ পয়সায় পাওয়া যেতো। ৫০ থেকে ৬০ পয়সার খাওয়া জোটাতে বড় লোকের ছেলেদের হিমশিম খেতে হত। আমরা যারা রাজনীতি করতাম, ৮ পয়সা থেকে ১২ পয়সায় খাবার পেলে রাজভোগ খাওয়া হতো মনে করতাম।’ সেই তখন কি না হাসানের স্বপ্নের সেই সংকলনটি প্রকাশ করতে খরচ হয়েছিল পাঁচশো টাকা।

প্রশ্ন তো উঠবেই, সেদিন এই টাকাটা জোগান দিয়েছিলেন কে? এ-বিষয়ে হাসান নিশ্চুপ থাকলেও সুলতানই এর রহস্য ‘ফাঁস’ করে দিয়েছিলেন! তিনি বলেছেন, ‘সমাধান করে দিল হাসান। বাড়িতে গিয়ে জমি বেচে সে টাকা নিয়ে আসবে। যা ইচ্ছা, যা চিন্তা, হাসান তাই করল। কথা দিলাম, বই বিক্রি করে তার টাকা ফেরত দেবো। বই আমরা ছেপেছিলাম, বইয়ের প্রচারও যথেষ্ট হয়েছিল। ক্রেতার ভীড়ও হয়েছিল। বইটার দাম রেখেছিলাম আড়াই টাকা।’ কিন্তু ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই অন্যদিকে মোড় নেয়। মোহাম্মদ সুলতান জানিয়েছিলেন, ‘১৯৫৩ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে বইটা বেরুল। আর সে বছরের ২০শে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বাজেয়াপ্ত হয়ে গেলো।’ তারপরের ঘটনা সম্পর্কে সুলতান মনে অনেক খেদ নিয়ে বলেছিলেন, ‘১৯৭৪ সালে (সংকলনটির) চতুর্থ সংস্করণ বের হয়েছে। এখনো হাসানকে ‘একুশে ফেব্রুয়ারী’-র প্রথম সংস্করণের একটি পয়সাও ফেরত দিতে পারিনি, বা দেইনি।’ হাসান নিজেও কখনো সেই টাকাটা আর ফেরত চাননি।

পাঁচ

একটি রক্তাক্ত স্মৃতিকে সম্মিলিতভাবে নিজেদের চেতনায় ধারণ করার জন্যে, এ-রকম ত্যাগ স্বীকার করা, একমাত্র সেদিন হাসানের পক্ষেই সম্ভব হয়েছিল। তার কারণ হচ্ছে, হাসানের কবি-ব্যক্তিত্বের প্রখর আত্মচেতনা, যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল এক প্রগতিশীল রাজনৈতিক চেতনা। হাসানের নিজের কথায়, ‘আমার চেতনা এমন ধরনের জিনিস, যার সাথে বিশ্বভ্রমণের কোনো যোগ নেই। চেতনা দিয়েই আমি বিশ্বকে দেখি।’ এই ‘বিশ্ব’ মানে শুধু সবুজ প্রকৃতি নয়, বিশ্বের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষগুলোও তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে। তারপরও নিজের সমাজ সম্পর্কে এ-রকম মন্তব্য করতে হাসান দ্বিধা করেননি  –  ‘‘প্রসবে প্রসন্না, কিন্তু সন্তানে রুচি নেই’  –  এই হলো আমাদের সমাজের অবস্থা। আমার আফসোস এই যে, মানুষের প্রতিভার সীমানা এতো বেড়েছে, মানুষ চাঁদে যাচ্ছে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতি হচ্ছে কিন্তু মানুষের সীমাবদ্ধতা কাটছে না।’ তাঁর কবিতায় মানুষের এই সীমাবদ্ধতার সামনে দাঁড়িয়ে হাসানের অন্তহীন আফসোস নানাভাবে ঠিকরে উঠতে দেখি –

ভরত পাখিরা যেন

বহুদূরে চলে গেছে। শহরের পাশে  –  পাশে

ভুলেও দেয় না হানা, যেন কারাগারে রুচি নেই।

আমরাই শুধু নাকি

সমৃদ্ধির অলীক ভ্রান্তিতে স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে

একে একে বহু কিছু ভুলে গিয়ে মানুষের বাড়ানো সীমানা …

মানুষের বাড়ানো সীমানা অবশেষে

ছেড়ে যাবে মানুষেরই সুখের শরীর?

(‘মানুষের বাড়ানো সীমানা’, বজ্রেচেরা আঁধার আমার)

এই যে হাসানের আফসোস, তাঁর বেদনার সম্ভার  –  এক কথায় বলতে পারি, একজন কবির চৈতন্যের জাগরণ। এর উদ্ভব কবির ব্যক্তিগত জীবন-অভিজ্ঞতা থেকে। যে-অভিজ্ঞতার বিবরণ তিনি দিয়েছেন, তাতে দেখতে পাই, সে-সম্পর্কে বলেছেন, ‘তিনটা জায়গায় আমার ছোটকাল কেটেছে। যার ভিত্তি ছিল ঢাকা, নিজের বাড়ি ও অতঃপর মামাবাড়ি। … উল্লিখিত তিন স্তরে কোথাও নিষ্ঠুরতা পাইনি। সেখানে ছিল সহজ, স্বাভাবিক ও সুস্থ জীবনপ্রণালী, ন্যায়ের প্রতি আসক্তি, অন্যায়ের প্রতি অনীহা।’ আর তাতে করে তাঁর চেতনার আকাশ ক্রমাগত প্রসারিত হয়েছে। হাসান স্বীকার করেছেন, ‘এর ফলে একটা সেকিউলার মনোভঙ্গির সৃষ্টি হয় আমার মধ্যে। … ন্যায়-অন্যায় সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা গোড়া থেকেই সঞ্চারিত হয়েছিল আমার মধ্যে। পরিবেশ ও আবেষ্টনীলব্ধ এই … ধারণা আমার সাহিত্যেও প্রতিফলিত হয়েছে।’ আর কবিতায় সেই প্রতিফলনের ধাঁচটি এক চূড়ান্ত মাত্রায় গিয়ে যেন ঠেকেছে। হাসান তাঁর আমার ভেতরের বাঘ কাব্যের নাম-কবিতায় বলেছেন –

নিসর্গ, তুমি কেমন করে অনন্তকে খাও,

তুমি কেমন করে মহার্ঘকে খাও, আমি

দেখি, মানতে  –  মানতে মানতে পারিনে, চিৎকার করে উঠি, কান্নায় ফোঁপাই মাঝরাতে

শয্যা ছেড়ে পারি তো সমস্ত অলিন্দ

সমস্ত ফুটপাত পায়ে পায়ে ছিঁড়ে ছিঁড়ে

কোথাও ছুটে বেরিয়ে যাই সকল অসাধ্যের দুঃখ

মুছে দিয়ে।

শত দুঃখ-কষ্টের মধ্যেও তিনি একেবারে নিজের ধরনে, দুর্নিবারভাবে ‘তিমির হননের গান’ গান গাইতে চেয়েছেন। সে  –  কারণেই তাঁর এই উপলব্ধি পাঠকের অনুভূতিকেও ছুঁয়ে-ছুঁয়ে যায়  –  ‘প্রত্যেকের জীবনে হয়তো এমন মুহূর্ত আসে, যখন সে তার অস্তিত্ব নিয়ে দুঃখ পায়। আমি বলবো  –  না, নিষ্ফলা হতাশাই এই দুঃখ-বোধের একমাত্র সগোত্র। হয়তো এমনও হতে পারে, মনের কাছে এই অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্নের জন্ম হয়েছে, আরো বৃহত্তর এক জিজ্ঞাসা থেকে। জিজ্ঞাসা এই যে, আমি কী করব? কী আমার কাজ, এই যে খেয়ে-পরে আমি আছি, বেঁচে আছি দিনের দীপ্তিতে, রাত্রির সুপ্তিতে, এর কোন মুহূর্তের সঙ্গে আমি সংলগ্ন হবো?’ এই চেতনার উৎস তাঁর সচেতন রাজনৈতিক মন, কিন্তু তার বিকাশ একেবারেই নিজের দেশজ  –  আবেগকে অবলম্বন করে এগিয়ে গিয়েছে। হাসানের অকপট স্বীকারোক্তি, ‘আগা-গোড়া শহরে কাটিয়েছি, কিন্তু যুদ্ধোত্তর নগর  –  মানসিকতা আমার মধ্যে তেমন ছিলো না। দেশজ অনুভূতিটাই ছিলো মুখ্য।’ আর দেশজ অনুভূতিটা মুখ্য ছিল বলেই বিমুখ প্রান্তরের বাস্তবতা স্বীকার করেও তার থেকে একটা উত্তরণের স্বপ্ন দেখেছিলেন। এ-প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থটির “বিমুখ প্রান্তর” নাম আমার ভেতর থেকেই এসেছে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে মিলে গেল ‘দ্য ওয়েস্ট ল্যান্ড’  –  এর সাথে। বিমুখ প্রান্তর  –  মুখ ঘুরিয়ে আছে যে প্রান্তর, আর ওয়েস্ট ল্যান্ড-এ মরা মাটির কথা।’ আর সেই সূত্রটি ধরেই তিনি আরো বলেছিলেন, ‘অবক্ষয়ের কথা আমি বলিনি, আটকা পড়া জিনিসের মুক্তি চেয়েছি আমার কাব্যে। ওয়েস্ট ল্যান্ড  –  এ ডেকাডেন্স বা অবক্ষয়ের কথাই প্রাধান্য পেয়েছে, বিমুখ প্রান্তর-এ উত্তরণের কথা। এলিয়টের প্রস্থান ধর্মের দিকে, আমার গন্তব্য বাস্তবতার দিকে।’ হাসানের জীবনই তাঁকে এই কঠিন পথের সন্ধান দিয়ে তাঁকে সেদিকে নিয়ে গিয়েছিল।

ছয়

মুক্তিযুদ্ধে হাসান হাফিজুর রহমানের দুই ভাই শহিদ হয়েছিলেন। স্বাধীনতার পরে তিনি দৈনিক বাংলার সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ১৯৭৩ সালে ছাত্রদের মিছিলে পুলিশের হামলার ঘটনার প্রতিবাদের প্রতিক্রিয়ায় তিনিও শাস্তি পান। এরপর তাঁকে মস্কোতে বাংলাদেশ মিশনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এই ক্ষতটাই ধীরে-ধীরে হাসানকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘মস্কোতে গিয়ে আমি আউট অব প্লেস হয়ে গেলাম। তা কিছুটা শাস্তিমূলকও ছিলো আমার জন্যে। প্রকারান্তরে শেকড়শূন্য হয়ে গেলাম আমি। মস্কোতে গেলাম ইজি লাইফ-এর মধ্যে।’ এ-রকম স্বাধীন জীবন বাংলাদেশে হাসান কখনোই আশা করেননি। একটা বুক-ভরা হতাশা আর বেদনা নিয়ে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘আমার কর্মধারার সাথে কোনো সংগতি ছিলো না তার। … একেবারে সীমাবদ্ধ কাজের মধ্যে চলে গেলাম আমি। আমার কর্মময় ব্যাপ্ত জীবনকে সীমাবদ্ধ করে দেয়া হলো। রুটিনবদ্ধ এবং কর্মহীন জীবনে মস্কোতে পোষাতো না আমার।’ ১৯৮৩ সালের পহেলা এপ্রিল হাসানের অন্তিমযাত্রা। তাঁর একসময়ের প্রাণের দোসর মোহাম্মদ সুলতানও সেই বছরের ৩০শে ডিসেম্বর এক চিরন্তন  –  যাত্রায় কবির সহযাত্রী হলেন।

আশ্চর্য হয়ে আমরা দেখতে পাই, মৃত্যুর ঠিক পূর্বে তাঁর শেষ লেখা কবিতায় হাসান বাংলার বাউলদের ধরনে বলেছিলেন Ñ

হাসান, এত তাড়া কিসের?

পরম গুরু যুগযুগান্তে ফোটায় মুকুল,

তার তো তাড়াহুড়ো নাই?

বললাম হেসে, তাঁর হাতে আছে যুগযুগান্ত,

আমার যে মোটেই সময় নাই।

সাত

গৌতম বুদ্ধ একবার অন্য-ব্যক্তিদের কাছে নিজেকে ‘জাগ্রত’ হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। এটাকে আমরা বলতে পারি, মানুষের চৈতন্যের জাগরণ। সেই জাগরণের সুবাদেই হাসান একসময় বিশ্বাস করতেন, ‘আমরা কবিকে বিশিষ্ট করে দেখি এইজন্যে যে, কল্পনা, প্রজ্ঞা, বোধ, অনুভব ও অবলোকনকে সঞ্জীবিত ও স্মরণ করে রাখার মত, উপভোগে আন্তরিক ও সংক্রমণশীল করার মত অভিব্যক্তি কেবল কবিরাই তৈরি করতে পারেন।’ আর হাসান হলেন সেই কবি, যিনি যাবতীয় বিশৃঙ্খলতার মধ্যেও সবার সঙ্গে, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বেঁচে থাকার আত্মবিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে কাব্যপরিক্রমা করতে চেয়েছিলেন। মানবজাতির একজন মহান শিক্ষক কমরেড মাও সে-তুঙ একবার বলেছিলেন, ‘আমাদের প্রয়োজন হলো উৎসাহী কিন্তু স্থিরচিত্ত মনোবৃত্তির, উত্তেজনাময় কিন্তু শৃঙ্খলাপূর্ণ কাজের।’

আজকের এই ‘খেই-হারানো’ যুগে বসবাস করেও, হাসান হাফিজুর রহমান তাঁর গোটা জীবন আর কাব্যকর্মের মধ্যে দিয়ে, মাওয়ের সেই কথাটিকে মান্যতা দিয়েছিলেন। সেইসঙ্গে নিজের জীবনের প্রতিও আস্থা রাখতে ভোলেননি। হাসান হাফিজুর রহমানের স্মৃতির প্রতি জানাই শ্রদ্ধা ও সালাম।

সহায়ক গ্রন্থ

১.        হাসান হাফিজুর রহমান রচনাবলী  –  ১, রফিকউল্লাহ খান  –  সম্পাদিত, ঢাকা : বাংলা একাডেমী, জুন ১৯৯৪।

২.       হাসান হাফিজুর রহমান রচনাবলী  –  ২, রফিকউল্লাহ খান  –  সম্পাদিত, ঢাকা : বাংলা একাডেমী, এপ্রিল ১৯৯৫।

৩.       হাসান হাফিজুর রহমান : জীবন ও সাহিত্য, রফিকউল্লাহ খান, ঢাকা : বাংলা একাডেমী, জুন ১৯৯৩।

৪.       হাসান হাফিজুর রহমান, খালেদ খালেদুর রহমান-সম্পাদিত, ঢাকা : জুন ১৯৮৩।

৫. হাসান হাফিজুর রহমান স্মারকগ্রন্থ, আনিসুজ্জামান ও বেলাল চৌধুরী-সম্পাদিত, ঢাকা : হাসান হাফিজুর রহমান সংসদ, জুন ২০০০।

Published :


Comments

One response to “হাসান হাফিজুর রহমানের রাজনৈতিক চেতনার উদ্ভাস”

  1. […] ফেব্রুয়ারির এক বছর পূর্তি উপলক্ষে। হাসান হাফিজুর রহমানের সম্পাদনায় ওই তারিখ শিরোনামেই […]

Leave a Reply