তপস্বী ও তরঙ্গিণী : পুরাণের আধুনিক নাট্য

‘নারী মাতা তাই প্রয়োজনীয়; কিন্তু প্রাণীর পক্ষে সর্পাঘাত যেমন, তপস্বীর পক্ষে নারী তেমন মারাত্মক।’ সাধনার ইতিহাসে মুনিদের নারীকেন্দ্রিক সাধনা স্খলনের কথা কে না জানে। মুনি বিভাণ্ডক নিজে অপ্সরী উর্বশী দ্বারা পতিত হলে রাগে-ক্ষোভে অভিমানে নিজের সন্তান ঋষ্যশৃঙ্গকে গড়ে তুলেছিলেন নারীচেতনহীনভাবে। কিন্তু এত সতর্কতার পরও নারী দ্বারা সেই ঋষ্যশৃঙ্গের স্খলনেরই দ্বান্দ্বিক অভিঘাতে বিভাণ্ডক বিপর্যস্ত হয়ে উঠছিলেন। সত্যি কী নারী সাধনার প্রতিবন্ধক? নারী-পুরুষীয় মানবিক টানাপড়েনের এমন এক দ্বান্দ্বিক সম্পর্কের কাহিনি দৃশ্যমান হয়ে উঠছিল সেদিন ৩০ আগস্ট বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূলমঞ্চে। দেড় ঘণ্টাধিক সময় এমন দ্বান্দ্বিক পটভূমি দর্শক পিনপতন নীরবতায় উপভোগ করেন। নাটকটির নাম তপস্বী ও তরঙ্গিণী। বুদ্ধদেব বসু-রচিত এ ধ্রুপদি নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন লিয়াকত আলী লাকী। নাটকটি প্রযোজনা করেছে লোকনাট্য দল। প্রদর্শনীর ওপর ভিত্তি করে নাটকটির নাট্যবৃত্ত, পৌরাণিক গল্পের আধুনিকায়ন, মঞ্চরীতি, অভিনয়, আলো-পোশাক, নান্দনিকতা ও দর্শক উপযোগিতাসহ নাট্যকলার নানা উপাদান নিয়ে এ আলোচনায় আমরা ব্যাপৃত থাকব।

১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠার লগ্ন থেকেই লোকনাট্য দল বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনে জনপ্রিয় নাট্য উপহার দিয়ে চলেছে। প্রতিনিয়ত নিরীক্ষার মধ্য দিয়েই তারা এগিয়ে যেতে ইচ্ছুক। লোকনাট্য দল গ্রুপ থিয়েটার ধারার নাট্যচর্চার পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের নাট্যচর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে নানা আয়োজন করে থাকে। তাদের কঞ্জুস নাটক বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এটির মঞ্চায়নের সংখ্যা সম্ভবত হাজার ছাড়িয়েছে। তাদের উল্লেখযোগ্য প্রযোজনা হলো – অন্ধ নগরীর চৌপাট রাজা, এ মিড সামার নাইটস ড্রিম, পদ্মানদীর মাঝি, সোনাই মাধব, মধুমালা, তাসের দেশ, সিদ্ধিদাতা, মাঝরাতের মানুষেরা প্রভৃতি। বুদ্ধদেব বসুর তপস্বী ও তরঙ্গিণী নাটকটি তারা শূন্য দশকের গোড়ার দিকে প্রযোজনায় নিয়ে আসে। কিন্তু কয়েকটি শো হওয়ার পর নানা প্রতিকূলতায় নাটকটির প্রদর্শনী বন্ধ হয়ে যায়। সে-নাটকটিই সম্প্রতি নতুন ডিজাইনে নতুন নাট্যকর্মীদের দ্বারা নতুনভাবে উপস্থাপন করছে নাট্যদলটি।

বুদ্ধদেব বসু বাংলা সাহিত্যে অবিস্মরণীয় নাম। আধুনিকতাবাদী ধারার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি ও সমালোচক। বুদ্ধদেব বসুর কালজয়ী সৃষ্টি তপস্বী ও তরঙ্গিণী নাটক। ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে রচিত এই নাটক প্রকাশের শুরু থেকেই নানা কারণে আলোচনার ঝড় তুলেছে। পুরাণের অতিপরিচিত কাহিনিকে বুদ্ধদেব বসু নিজের মতো সাজিয়ে তাতে সঞ্চারিত করেছেন আধুনিক মানুষের মানসিকতা ও দ্বন্দ্ববেদনা। আশ্রমের মানুষকে দাঁড় করিয়েছেন সাধারণ মানুষের জীবনসংকটে। চারটি অঙ্কের স্বল্প পরিসরে কাব্যগুণে অনন্য এই নাটক। নাটকের কাহিনিতে দেখা যায়, অঙ্গদেশের রাজা লোমপাদ অভিশাপে জড়ে পরিণত হয়ে পড়েছিল। অঙ্গদেশে বৃষ্টিপাত বন্ধ। ফসলের মাঠ পুড়তে থাকে, রাজ্যে মহামারি মড়ক দেখা দেয় এবং নারীরা বন্ধ্যা হয়ে পড়ে। গণনায় জানা যায়, গঙ্গার ধারে নিবিড় বনের মধ্যে ঋষ্যশৃঙ্গ নামে এক তরুণ ঋষি সাধনায় মগ্ন। সে ছিল নারী-পুরুষ চেতনহীন। তপোবনের সেই ঋষি ঋষ্যশৃঙ্গের কৌমার্য ভঙ্গ করতে পারলেই তবে রাজ্যে বৃষ্টি হবে। রাজ্য আবার উর্বর হয়ে উঠবে, অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে। সে-পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের সবচেয়ে সুন্দরী, কলাবিদ্যায় পারদর্শী তরঙ্গিণী নামে এক বারবণিতাকে ঋষ্যশৃঙ্গের কৌমার্য ভাঙতে তপোবনে পাঠানো হয়। ঋষ্যশৃঙ্গ তখন সাধনায় নিবিষ্ট। ব্রহ্মচর্যে সে অনড়। ঋষ্যশৃঙ্গের পিতা বিভাণ্ডক পুত্রকে এমন নির্মমভাবেই মোক্ষের দিকে নিচ্ছেন। পিতা বিভাণ্ডক সর্বদা সচেতন ছিলেন – বিশ্বামিত্রের মতো যেন পুত্রের সাধনার স্খলন না ঘটে। অবশেষে তরঙ্গিণী কীভাবে ভক্তি, প্রেম, ছলনা ও শৃঙ্গারের সাধনা দিয়ে ঋষি ঋষ্যশৃঙ্গের কৌমার্য ভাঙে এবং রাজপ্রাসাদে নিয়ে আসে সে-কাহিনিই এগিয়ে চলে নাটকে। নানা দ্বন্দ্ব, নানা সংঘাত, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রনীতির স্বার্থপরতা কীভাবে মনুষ্যত্ববোধের বিপরীতে মানবিক হৃদয়ক্ষরণে জর্জরিত করে তোলে তার চিত্রই ফুটে উঠতে থাকে।

লোকনাট্য দল-প্রযোজিত এই নাটকটি প্রসেনিয়াম ধারায় উপস্থাপিত। মঞ্চটি রাজবাড়ির কালারফুল সাজেশন। আলোর রঙিন ফিল্টারে রাজপ্রাসাদ জ্বলজ¦লে, দৃষ্টিনন্দন। অভিনয়ে স্থান হিসেবে আলোয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে রাজপ্রাসাদের দরজা ও উদ্যান সংলগ্ন পথ। নাটকটি শুরু হয় গ্রামবাসীর প্রার্থনার মধ্য দিয়ে। ঠিক যেন সফোক্লিসের ইডিপাস নাটক প্রথমের দৃশ্যের অবতারণা। দুজন রাজদূত বা রাজকর্মচারী এগিয়ে আসে। রাজ্যে পাপ ঢুকেছে। মেয়েরা প্রার্থনা করতে থাকে –

শস্যহীন মাঠ, বন্ধ্যা সধবারা, দিনের পরে দিন দীর্ণ,

শূন্য –

বৃষ্টি নেই! ….

অঙ্গরাজ! বলো, করেছি কোন পাপ, এ কোন অভিশাপ লাগলো!

জননী বসুমতী, ভুলো না আমরাও তোমারই গর্ভের পরিণাম।

হে দেব, ঐরেশ! মহান! মঘবান! এবার দয়া করো, বৃষ্টি দাও –

বৃষ্টি দাও!

বুদ্ধদেব বসু নাট্য নির্মাণের ক্ষেত্রে সমস্ত কিছুতেই ধ্রুপদি রূপের আবশ্যকতার কথা বলেছেন। লোকনাট্য দলের এই নাটকে রাজপ্রাসাদ নির্মাণে একটু রোমান্টিক কিংবা কৌতুককর আবহ আছে। বিশেষ করে প্রাসাদের ওপরের মাথার খাঁজগুলি। নির্দেশক ব্যাক ফিল্টার আলো দিয়ে যেন দৃশ্যসুখ তৈরি করেছেন। সমস্ত নাটকের আলো, পোশাক, সেট সবকিছুর মধ্যেই রঙের অন্ত্যমিল আছে। সাধারণ পোশাকের গ্রামের চরিত্রগুলির চলনও মঞ্চে খুব স্বচ্ছন্দ। পাখোয়াজ ও গ্রামবাসীর প্রার্থনার ঐকতানিক সুরে নাটকে কাহিনিতে প্রবেশ করে। তখন রাজকর্মচারীদের কথোপকথনে ফুটে উঠতে থাকে দেশের সংকটপূর্ণ নানা অবস্থা। রাজমন্ত্রী আসে, জ্যোতিষী আসে। এমন খরা-মরা থেকে বাঁচাতে হলে কী করতে হবে? অভিশাপ থেকে কীভাবে মুক্ত করা যায় দেশকে? রাজা লোমপাদ বুঝতে পেরেছে এক ব্রাহ্মণকে অসম্মান করেছিলেন বলেই আজ দেশের এমন দুর্দশা। অতএব ঋষ্যশৃঙ্গের কৌমার্য ভাঙাতে হবে। নাটকের দৃশ্যে রাজজ্যোতিষ সাদা ধুতি পরা। রাজকন্যা শান্তা আজকের দিনের নারীদের মতোই অধুনা ডিজাইনের শাড়ি পরেছে। রাজকন্যা শান্তা স্বয়ংবরা চায়, কিন্তু রাজমন্ত্রী চায় সে ঋষ্যশৃঙ্গকে বিয়ে করুক। তাই রাজমন্ত্রী কুচক্রের জাল বিস্তার করে। নিরানন্দ মঞ্চদৃশ্যও রাগ্রাশ্রিত সংগীত প্রক্ষেপণে দর্শকের হৃদয়কে উদ্দীপিত করে তোলে।

ঋষ্যশৃঙ্গের কৌমার্য কে ভাঙাবে? শতাধিক বারাঙ্গনাকে ডেকে পাঠালেও সবাই একে একে অস্বীকার করে এই কাজ করতে। শত উপঢৌকনেও কাউকে প্রলুব্ধ করা যায় না। শেষে চম্পানগরের গণিকাদের মধ্যে অন্যতম তরঙ্গিণীকে খবর দেওয়া হয়। রূপে, লাস্যে, ছলনায় তার নাকি তুলনা নেই। সে কলাবিদ্যায় বিদগ্ধ এবং মোহিনী রমণী। মা লোলাপাঙ্গী চার রূপধারী তরঙ্গিণীকে নিয়ে প্রবেশ করে। একজনের বহুরূপ। লোলাপাঙ্গীদের গায়ে বিভিন্ন অতি উজ্জ্বল রঙের শাড়ি পরা। লাল, হলুদ, বেগুনি ও নীল শাড়ি পরা সালংকারা চার রূপের এক তরঙ্গিণী। আর চার তরঙ্গিণীরই প্যাঁচানো শাড়ি এবং বিভিন্ন নৃত্যভঙ্গিমায় ক্রিয়ারত। চার তরঙ্গিণী চরিত্রে অভিনয় করেছেন মেহজাবিন মুমু, অনন্যা নিশি, শামীমা তুষ্টি ও ফারহানা মিলি। সমস্ত নাটকে তাঁরা এই একই ড্রেস পরে ছিলেন। ঘটনা, দৃশ্য কিংবা চরিত্রের আবেগ প্রকাশে তখন আবহসংগীত অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে। তরঙ্গিণীদের চলন, বচন, ছন্দ, লালিত্য আর আলো ও সংগীতের নিনাদে দৃশ্যটি অনবদ্য শিল্পসুরে ধরা দেয়। দর্শকের হৃদয়কে উদ্বেলিত করে তোলে। রাজমন্ত্রী জানায় –

গঙ্গার ওপারে, অঙ্গরাজ্যের সীমান্তে, এক নবযুবক তপস্যারত আছেন। জন্ম থেকে তিনি বনবাসী, জন্ম থেকে সংসর্গহীন। কখনো কোনো নারী তার চোখে পড়েনি, আর একমাত্র অন্য যে-পুরুষের সঙ্গে তিনি পরিচিত, তিনি তারই কঠিন নৈষ্ঠিক ঋষিতুল্য পিতা। পর্যটকদের মুখে শুনেছি, এই কিশোর তপস্বী এত দূর পর্যন্ত নিষ্পাপ যে আশ্রমে যদিও পশুপক্ষীর অভাব নেই, প্রাণীদের কীভাবে জন্ম হয় তাও তিনি জানেন না। কোনো বিশেষ কারণে তারই দেহে জাগাতে হবে মদনজ্বালা, কামাতুর অবস্থায় তাকে নিয়ে আসতে হবে রাজধানীতে – এই চম্পানগরে, তুমি ও তোমার সখীরা যার স্বর্ণমেখলা। – পারবে?

ষোলোকলায় পটীয়সী তরঙ্গিণী চতুর্থী চমকে ওঠে। ভাব প্রকাশের লালিত্যে যেন দর্শক হৃদয় কেঁপে কেঁপে ওঠে। অবশেষে মায়ের অনুরোধে রাজি হয়। দশ সহস্র স্বর্ণমুদ্রা – আর যান, শয্যা, আসন, বসন, স্বর্ণালংকার! আর সিংহলের মুক্তা, বিন্ধ্যাচলে মরকতমণি! এত কিছু। তরঙ্গিণী রওনা হয়। যদিও মূল নাটকে ষোলোজন সখীর কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু লোকনাট্য দলের এই নাটকে শুধু তরঙ্গিণীই রওনা হয়।

মঞ্চের আলো নিভে গিয়ে যখন পুনরায় জ্বলে ওঠে তখন দেখা যায় গভীর অরণ্য। মঞ্চের মাঝ দিয়ে রাইট-লেফট মধ্যমঞ্চ বরাবর পর্দা পড়ে। প্রাসাদের দৃশ্য ঢেকে যায়। নতুন পর্দায় বনবৃক্ষের ছবি। আলো প্রক্ষেপণের কৌশলে বৃক্ষ বনলতার আলো-আঁধারি মৃদু মধুর বনের নান্দনিক রূপ তখন। আবহসংগীত অরণ্যের গভীরতার সুরে আকুল করে তোলে। ঊষাকালে কুটির প্রাঙ্গণে কাঠের গুঁড়িতে ধ্যানাসনে বসে ঋষ্যশৃঙ্গ। ঋষ্যশৃঙ্গ কেবল ধ্যান সমাপ্ত করেছে। ঋষ্যশৃঙ্গ চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাসউদ সুমন। ভারী তাঁর কণ্ঠ; স্থিতধী তাঁর বয়ান। চরিত্র নির্মাণে সাবটেক্সট নিয়ে আরো ক্রিয়াশীল হলে তাঁর ঋষিতুল্য সাত্ত্বিকতায় আরো উদ্ভাসিত হয়ে ওঠার সম্ভাবনা ছিল। ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিকের নিনাদে মঞ্চ অনবদ্য ধ্যানগম্ভীর হয়ে ওঠে। ঋষ্যশৃঙ্গ বলতে থাকেন –

সূর্যদেব, প্রণাম। বায়ু, তুমি আমার বন্ধু। বৃক্ষ, বিহঙ্গ, বনলতা, আমি তোমাদের প্রণয়ী। তোমাদের সঙ্গে তোমাদের আশ্রয়ে বেঁচে আছি – আমি ধন্য। আমার জীবন, আমার প্রাণ – আমার চক্ষু, কর্ণ, ত্বক, তোমরাও আমার প্রিয়। তোদের নিয়ে আমাদের আশ্রয়ে আমার আত্ম আনন্দিত। …

ধুতিপরা সাদামাটা পোশাকের ঋষ্যশৃঙ্গ। চরিত্রের গেটআপে ঘটনার বিনির্মাণে সময়কালই প্রধান হয়ে উঠেছে। উজ্জ্বল তারুণ্যদীপ্ত মেকআপ বা প্রসাধন। ঋষ্যশৃঙ্গ একে একে বর্ণনা করতে থাকেন তাঁর প্রতিদিনের কর্মপ্রন্থাগুলি। শয্যাত্যাগ; প্রাতঃস্নান, প্রাণায়াম, ধ্যান, যোগাসন, মন্ত্রপাঠ, গাভীদোহন, সমিধসংগ্রহ, অগ্নিহোস্রে অগ্নিরক্ষা, যজ্ঞের আয়োজন, যজ্ঞপাত্র-মার্জনা নানা কিছু। দৃশ্যে ঋষ্যশৃঙ্গের ব্যবহারের দুটো দ্রব্য পাওয়া যায়। এরই মধ্যে বনের মাঝখানে ধ্বনিত হয় নারীর কমনীয় নিনাদ-সংগীত। এই মধুর ধ্বনিতে ঋষ্যশৃঙ্গ একসময় উতলা হয়ে ওঠেন। মনচঞ্চল ঋষ্যশৃঙ্গ যখন আরো চঞ্চল হয়ে ওঠেন তখন তরঙ্গিণী নৃত্যছন্দে ললিতভঙ্গিতে ধীর পদক্ষেপে প্রবেশ করে। এ দৃশ্যের তরঙ্গিণী মেহজাবিন মুমু। নৃত্যের মুদ্রার ছন্দে ছন্দে তাঁর চলন। কটাক্ষে তাঁর মদনবাণ। ফুলেল সজ্জা এবং হাতে তাঁর ফুলের ঝুড়ি। ঋষ্যশৃঙ্গ অবাক বিস্ময়ে অতিথিকে দেখতে থাকে। ঋষ্যশৃঙ্গ তরঙ্গিণীকে প্রশ্ন করেন –

তাপস, আপনি কে? কোন পূণ্য আশ্রম আপনার তপোধাম? কোন কঠিন সাধনার ফলে আপনার এই হিরণ্যকান্তি? আপনি কি কোনো শাপভ্রষ্ট দেবতা? নাকি আমার কোনো অচেতন সুকৃতির ফলে স্বর্গ থেকে অবতীর্ণ হয়েছেন? কী দীপ্তি আপনার তপোপ্রভা, কী স্নিগ্ধ আপনার দৃষ্টিপাত, আপনার ভাষণ কী লাবণ্যঘন। আপনাকে দেখে আমি দুর্লভ চিত্তপ্রসাদ অনুভব করছি। আপনি আমার অভিবাদন গ্রহণ করুন।

নাটকের প্রধান দুটি চরিত্র ঋষ্যশৃঙ্গ ও তরঙ্গিণী। ঋষ্যশৃঙ্গ ও তরঙ্গিণী যেন প্রাণের জাগরণে জীবনকে ঠেলে দেওয়া মানব-মানবী। বুদ্ধদেব বসু নিজেই বলেছেন, ‘লোকে যাকে কাম নাম দিয়ে নিন্দে করে থাকে, দুজন মানুষ তারই প্রভাবে পুণ্যের পথে নিষ্ক্রান্ত হলো।’ পৌরাণিক উপাখ্যানে ঋষ্যশৃঙ্গের শিং, হরিণের পেটে জন্ম, দশরথকেন্দ্রিক নানা বৈশিষ্ট্য-ঘটনার উল্লেখ ও মতান্তর থাকলেও বুদ্ধদেব বসু মানবীয় একজন সাধকের দ্বন্দ্বকে যেমন দেখাতে চেয়েছেন নির্দেশক লিয়াকত আলী লাকীও একজন সাধকের সাধনার স্খলনকেই বড় করে দেখেছেন। পুরাণে ঋষ্যশৃঙ্গকে আশ্রম থেকে নিয়ে যাওয়ার পেছনে বারবণিতার উল্লেখ থাকলেও কোনো সুনির্দিষ্ট নাম পাওয়া কঠিন। বুদ্ধদেব বসু এখানে তরঙ্গিণী নামে অভিহিত করেছেন। তরঙ্গিণী বলে –

মুনিবর, আমি আপনার অভিবাদনের যোগ্য নই। আপনিই আমার অভিবাদ্য! আমি প্রার্থনা নিয়ে আপনার কাছে এসেছি; আমার ব্রতপালনে আপনার সহযোগ আমাকে দান করুন।

ঋষ্যশৃঙ্গ : ধীমান, আমি আপনাকে কী দান দিতে পারি? আমার মনে হচ্ছে আপনি চিন্ময় জ্যোতিঃপুঞ্জ, প্রতিভার দিব্যমূর্তি। যে মনস্বীরা তিমিরের পাড়ে আলোকময়কে দেখেছিলেন, আপনি যেন তাঁদেরই একজন। সুন্দর আপনার আনন, আপনার দেহ যেন নির্ধূম হোমানল, আপনার বাহু, গ্রীবা ও কটি যেন ঋকছন্দে আন্দোলিত। আনন্দ আপনার নয়নে, আনন্দ আপনার চরণ, আপনার ওষ্ঠাধারে বিশ্বকরুণার বিকিরণ। আপনি মুহূর্তকাল অপেক্ষা করুন, আমি আপনার জন্য পাদ্য অর্ঘ্য নিয়ে আসি।

ঋষ্যশৃঙ্গ তরঙ্গিণীর সাধনায় সংযোগ প্রদানে কার্পণ্য দেখান না। একে একে প্রস্ফুটিত হতে থাকে তরঙ্গিণীর সাধনার অঙ্গগুলি – প্রথম অঙ্গ মাল্যদান, দ্বিতীয় অঙ্গ আলিঙ্গন, তৃতীয় অঙ্গ চুম্বনদান। এভাবেই কৌমার্য ভঙ্গের দিকে এগোয়। প্রথম দিন ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর পিতা বিভাণ্ডক আশ্রমে ফিরে এসে পুত্রের সাধনা বিনষ্টের মনস্তাপে ভেঙে পড়েন। বিভাণ্ডক চরিত্রে আবু বকর বকশীর ভাবপ্রকাশ যেন আত্মদগ্ধতাকে আরো অনবদ্য করে তোলে। ঋষ্যশৃঙ্গকে বাধা দেন এবং বিভাণ্ডক বোঝান, এ হচ্ছে নারী; সর্পের মতো। ইতিহাসের বিশ্বামিত্রাসহ নিজের স্খলনকে তুলে ধরে নারী থেকে দূরে থাকা অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু ঋষ্যশৃঙ্গকে যে উতলা করেছে তা কী রোধ করা যায়। একসময় মিলন ঘটে। অভিনয়, আলো ও সংগীতের অপূর্ব সমন্বয়ে অনবদ্য হয়ে ওঠে দৃশ্য। ঋষ্যশৃঙ্গের কৌমার্য ভঙ্গ হয়। রাজ্যে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। অভিশাপ শেষ হয়ে যায়। কামোত্তেজিত ঋষ্যশৃঙ্গকে নিয়ে তরঙ্গিণী রওনা দেয় রাজদরবারের দিকে।

এই নাটকের প্রথম ও দ্বিতীয় অঙ্কের মধ্যে ঘটনার ব্যবধান একদিন। আবার এক বছরের ব্যবধান দ্বিতীয় ও তৃতীয় অঙ্কের মধ্যে। একই দিনের ঘটনা তৃতীয় ও চতুর্থ অঙ্কের দৃশ্যে। তৃতীয় অঙ্কের শুরুতেই মঞ্চের পর্দা উঠে যায়। আবার রাজপ্রাসাদের দৃশ্য মূর্ত হয়ে ওঠে। চার রূপধারী তরঙ্গিণী ললিত ভঙ্গিমায় রাজধানীতে প্রবেশ করছে। আশ্রমীয় সাদা পোশাকে ঋষ্যশৃঙ্গ। ঋষ্যশৃঙ্গ রাজগৃহে প্রবেশ করেন আর চার তরঙ্গিণী থাকে বাইরে দাঁড়িয়ে। ঋষ্যশৃঙ্গ যে রাজকুমারী শান্তার সম্পদ! ব্যাকলাইট, মিউজিক এবং অভিনয়ের অনবদ্যতায় বিরহের অপূর্ব এক মানসিক অভিঘাত তৈরি হয় তখন। এ যেন নিজের অর্জিত ধন অন্যজনকে উৎসর্গ করা। নির্দেশক অত্যন্ত আবেগঘন দৃশ্য নির্মাণে যচেষ্ট ছিলেন। ঘটনা, দৃশ্য কিংবা চরিত্রের আবেগ প্রকাশে সংগীতের কোনো জুড়ি নেই। সংগীতের নিনাদ আর চার তরঙ্গিণীর উদাসীন দৃষ্টিতে চেয়ে থাকা মানবিকবোধে প্রচণ্ড নাড়া দেয়।

ঋষ্যশৃঙ্গ যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত হন। রাজ্যে আনন্দঘন পরিবেশে চলতে থাকে রাজ্যশ্রী যজ্ঞ। রাজ্যের যত দুর্দশা সব শেষ হয়ে গেছে। ঋষ্যশৃঙ্গ বিয়ে করেছেন রাজকন্যা শান্তাকে। রাজকন্যা শান্তা চরিত্রে অভিনয় করেছেন মিতু রহমান। রামায়ণে শান্তা চরিত্রটি দশরথ-কৌশলার কন্যা, রাম-লক্ষ্মণের বোন ও লোমপাদের পালিত কন্যা। পৌরাণিক উপাখ্যানে ঋষ্যশৃঙ্গ ও শান্তার প্রেম-ভালোবাসা-সম্পর্ক নিয়ে নানা ঘটনা, নানা দ্বন্দ্বের প্রসঙ্গ আছে। কিন্তু বুদ্ধদেব বসু এই নাটকে শান্তা চরিত্রটি দিয়ে তরঙ্গিণী চরিত্রকেই বিকশিত করে তুলেছেন। নির্দেশক লিয়াকত আলী লাকী শান্তাকে অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ রমণী হিসেবেই দেখাতে চেয়েছেন। সে অন্য কাউকে ভালোবাসলেও ঋষ্যশৃঙ্গের সঙ্গে বিয়ে হয়ে গেলে সে ছিলেন পতিপ্রাণা। কোনো অশোভনতা তাকে স্পর্শ করেনি। এমনকি তরঙ্গিণীকেও প্রশ্রয় দিতে চায়নি। এই নাটকে আবার অংশুমান ভালোবাসে শান্তাকে। রাজপুত্র অংশুমান চরিত্রে অভিনয় করেছেন মুসা রুবেল। সংলাপ প্রক্ষেপণ, মডুলেশন ও আবেগের ঘনীভূত তারল্য তাঁর অভিনয়ে দেখা গেছে। আবার শান্তাও ভালোবেসেছে অংশুমানকে। কূটকৌশলে অংশুমান জেলে বন্দি থাকার অজ্ঞাতে শান্তা-ঋষ্যশৃঙ্গের বিয়ে হয়ে গেছে। ফলে বিবাহিত শান্তা ঋষ্যশৃঙ্গকেই মেনে নিয়েছে এবং সে পতিব্রতা।

অন্যদিকে তরঙ্গিণী বিরহে প্রায় পাগল। তরঙ্গিণী একজন বারবণিতা হলেও ঋষ্যশৃঙ্গের পবিত্র দৃষ্টির কাছে সে হেরে যায়। তপস্বীর নিষ্পাপ কথাগুলি তাকে দহন করে বেড়ায়। সে আর পারে না বারবণিতাবৃত্তিতে ফেরত যেতে। আবার পারে না বহুগামিনী হতে। সতী-কুলস্ত্রীও সে হতে পারে। মানসিক বিভ্রম ঘটে তার। সে ধীরে ধীরে উন্মাদ হয়ে উঠতে থাকে। তাই একে একে ফিরিয়ে দেয় সমস্ত পুরুষের আবেদন। নাটকে চন্দ্রকেতু, বিভাণ্ডক, রাজমন্ত্রী, অংশুমান ও রাজকুমারী শান্তা প্রত্যেকেই জীবনের প্রাপ্তিটাকেই বড় করে দেখেছে। অন্যদিকে তপস্বী ও তরঙ্গিণী আপন বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। তরঙ্গিণীর মা লোলাপাঙ্গী এতে শঙ্কিত। তরঙ্গিণীর মুখে যেন অন্যজন কথা কয়। তরঙ্গিণী আত্মগ্লানি-আত্মদগ্ধতায় পীড়িত –

লোলাপাঙ্গী : চন্দ্রকেতু তোর একনিষ্ঠ উপাসক। অটল তার ধৈর্য, অটুট তার প্রতিজ্ঞা, প্রতিদিন বিফল হয়ে ফিরে যায়, প্রতিদিন নবীর উদ্যমে ফিরে আসে। তাকে – শুধু তাকেই – লুব্ধ করতে পারেনি রতিমঞ্জরি বা বাক্ষী বা অঞ্জনা। তরঙ্গিণী, সে তোর পতি হবার অযোগ্য নয়।

তরঙ্গিণী : চন্দ্রকেতু, আমি একশত চন্দ্রকেতুকে বিলিয়ে দিতে পারি জগতে যত বামাক্ষী আছে তাদের মধ্যে।

লোলাপাঙ্গী : সেই গরবে কি তুই নিজের জীবন নষ্ট করবি? তুই কি ভাবিস তুই এখনো কিশোরী আছিস? তোর যৌবন আর কদিন – তারপর? কে ফিরে তাকাবে তোর দিকে?

চন্দ্রকেতু চরিত্রে রুবেল শঙ্কর অত্যন্ত স্বচ্ছন্দ ভাবপ্রকাশের পরিচয় দিয়েছেন। নাট্যকার বুদ্ধদেব বসু লোলাপাঙ্গী চরিত্রকে কমিক উপস্থাপন করতে নারাজ। যদিও তার কথা কিছু হাস্যরসের জোগান দেয়। অপরদিকে মুনি বিভাণ্ডক রাজপ্রাসাদে পুত্র ঋষ্যশৃঙ্গকে ফেরত নিতে এলে ঋষ্যশৃঙ্গ ফেরত যেতে নারাজ। ততদিনে ঋষ্যশৃঙ্গ রাজকীয় সব নিয়মকানুনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। রঙিন পোশাক আরো কত কী। যদিও পুরাণে এই প্রসঙ্গে কাহিনির কিছু ভিন্নতা আছে। এদিকে, ঋষ্যশৃঙ্গ মনে মনে তরঙ্গিণীকেই খুঁজে বেড়ান। কিন্তু তিনি তো তরঙ্গিণীকে চেনেনই না। একসময় শান্তা, অংশুমান, লোলাপাঙ্গী, চন্দ্রকেতুসহ নানা বিষয় জটিল হয়ে উঠলে চিত্তবিভ্রম তরঙ্গিণীর (ফারহানা মিলি) সাক্ষাৎ পান –

আমার আর সহ্য হলো না। আমি তোমাকে এক একবার দেখতে এলাম। আমাকে তুমি চিনতে পারছো না? দ্যাখো – সেই বসন, সেই ভূষণ, সেই অঙ্গরাগ। আর একবার বলো ‘তুমি কি শাপভ্রষ্ট দেবতা?’ বলো ‘আনন্দ তোমার নয়নে, আনন্দ তোমার চরণে’ আর একবার দৃষ্টিপাত করো আমার দিকে। তোমার দৃষ্টি আজ অন্যরূপ কেন? তোমার অঙ্গে কেন বল্কল নেই? কেন তোমার চোখের কোলে ক্লান্তি? … সেদিন সেই রাত্রি দিনের সন্ধিক্ষণে – তুমি যখন প্রাতঃসূর্যকে প্রণাম করছিলে, আমি অন্তরালে দাঁড়িয়ে তোমাকে দেখছিলাম। তেমনি করে আর একবার আমাকে দেখতে দাও। আমি আমি পাদ্য অর্ঘ্য আনিনি, আনিনি কোনো ছলনা, কোনো অভিসন্ধি – আজ আমি শুধু নিজেকে নিয়ে এসেছি, শুধু আমি – সম্পূর্ণ একান্ত আমি। প্রিয় আমার, আমাকে তুমি নন্দিত করো।

ঋষ্যশৃঙ্গ মানবিক দ্বন্দ্বে মুষড়ে পড়েন। শান্তার কৌমার্য ফিরিয়ে দিয়ে, চন্দ্রকেতুকে বিস্মৃতির বর দিয়ে ঋষ্যশৃঙ্গ পা বাড়ান অনিমেষ মুক্তির পথে। তিনি কী ফিরে যাবেন আশ্রমে? তরঙ্গিণী আশ্রমে ফেরা কিংবা সহযাত্রার অনুনয় করলেও সবকিছু ছেড়ে ঋষ্যশৃঙ্গ এক অজানা জীবনেই পা বাড়ান –

তরঙ্গিণী : আমাকে তোমার সঙ্গে নাও। আমি নদী থেকে জল নিয়ে আসবো, কুড়িয়ে আনবো সমিধকাষ্ঠ, অগ্নিহোত্র অনির্বাণ রাখবো। আমি আর কিছু চাই না, শুধু দিনরাতে একবার – একবার তোমাকে চোখে দেখতে চাই। সে আমার তপস্যা। সেই আমার স্বর্গ।

ঋষ্যশৃঙ্গ : হয়তো আমার সমিধকাষ্ঠের আর প্রয়োজন হবে না। অগ্নিহোত্রের আর প্রয়োজন হবে না। মেধা নয়, শাস্ত্রপাঠ নয়, অনুষ্ঠ নয় Ñ আমাকে হতে হবে রিক্ত, ডুবতে হবে শূন্যতায়।

নাটকের অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করছেন – ইয়াসমীন আলী, স্বদেশ রঞ্জন দাশগুপ্ত, মাশরুবা যূথি। আবহসংগীত ও পোশাক পরিকল্পনা করেছেন ইয়াসমীন আলী। মঞ্চ পরিকল্পনা করেছেন আলী আহমেদ মুকুল। আলোক পরিকল্পনা করেছেন জুনায়েদ ইউসুফ।

নাটকটির মধ্যে এমন রোমান্টিসিজম ও মানবীয় আবেদন আছে যা দর্শকের হৃদয়ের অতলকে সহজেই স্পর্শ করে। নিদের্শক ছয়টি দৃশ্যে নাটকটি নির্মাণ করেছেন। পাণ্ডুলিপিও অনেকটা সম্পাদনা করেছেন। নাট্যগ্রন্থে বিবৃত অনেক সংলাপ ফেলে দিয়ে নিজের মতো করে উপস্থাপন করেছেন। দৃশ্য নির্মাণে সাজেস্টিক নানা ইমেজ ব্যবহার করেছেন। প্রপস নাটকটির সময়কাল ও পরিবেশকে জীবন্ত করে তুলেছে। স্থান-কাল পরিবেশ ও আবেগ সৃষ্টিতে আলো, মঞ্চ ও সংগীত গুরুত্ববহ হয়ে উঠেছে। রং, অভিনয়রূপ, দৃশ্য-আবহে যে নান্দনিকতার স্পন্দ তা যেন কাব্যিকতাকে আহ্বান করেছে। বুদ্ধদেব বসু তাঁর নাটকের ধ্রুপদি অবয়ব ঠিক রাখতে বিশেষ কিছু নির্দেশ দিয়েছিলেন নাট্যপাণ্ডুলিপির পরিশিষ্টে। নির্দেশক লিয়াকত আলী লাকী ধ্রুপদি ঘরানার কাঠিন্য ভেঙে নাটকটিকে কিছুটা বিনোদনমুখী করতে প্রয়াসী। তা সেট নির্মাণ, সংগীত ও চরিত্রাভিনয়ের মধ্যেই লক্ষ করা যায়। পরিশেষে ঋষ্যশৃঙ্গের শেষ সংলাপ দিয়ে আলোচনাটি শেষ করা যায় – ‘কেউ কি কোথাও ফিরে যেতে পারে, তরঙ্গিণী? আমরা যখনই যেখানে যাই, সেই দেশই নূতন, সে জীবনই নূতন।’ এক বিয়োগান্তক অনুভবের মধ্য দিয়ে নাটক শেষ হয়। কিন্তু হৃদয়কে দগ্ধ করতে থাকে তপস্বী ও তরঙ্গিণীর মানবিক সংঘাতগুলি।