তরুণ মজুমদার : স্বভাবতই স্বতন্ত্র

তরুণ মজুমদার মানে বাঙালিয়ানা। শুধু তাঁর চলচ্চিত্রে নয়, তাঁর জীবনযাপনেও, পাশাপাশি তরুণ মজুমদার মানে ভদ্রলোক বা ইংরেজিতে যাকে বলে পারফেক্ট জেন্টেলম্যান। তরুণ মজুমদার মানে যাঁর জীবনে কোনো কিছুর শর্তেই কোনো সমঝোতা নেই। তরুণ মজুমদের মানে অতিথিবৎসল একজন। এরকম আরো কত কথাই তো বলা যায় তাঁর সম্পর্কে। টালিগঞ্জের সিনেমা দুনিয়ায় এক ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্বের নাম তরুণ মজুমদার। সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে যাঁকে সবাই তনুদা বলেই জানত। তা তাঁর সঙ্গে আলাপটাও তো কম দিন হলো না। চল্লিশ বছর তো পেরোল। মানুষের ধর্ম মেনেই জীবনে তিনি অনেক পালটেছেন, যেমন পালটেছে তাঁর চলচ্চিত্র। কিন্তু নীতির জায়গায় রয়ে গেছেন সেই একই রকম আপসহীন। শিরদাঁড়া সোজা করে চলা মানুষ। চল্লিশ বছর আগে প্রথম আলাপে যেভাবে আপন করে নিয়েছিলেন, এই তো সেদিন যখন দেখা হলো সেই আন্তরিকতা। কোথাও কোনো খাদ নেই। ১৯৮২-তেও যা ২০২২-তেও তাই। নব্বই ছুঁয়েও ঝকঝকে স্মৃতি। তিনি সদা তরুণ। আজকাল পত্রিকার বিনোদন বিভাগে তখন সাংবাদিক হিসেবে সবে লেখালেখি শুরু করেছি। বিভাগীয় বস হলেন রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। আমাদের বিভাগে আশেপাশে রয়েছে সুনেত্রা ঘটক, অনিরুদ্ধ ধর, প্রবীর রায়, এইরকম আরো কয়েকজন। মুনমুন সেনও মাঝে মাঝে আসতেন। লেখালেখি করার সূত্রেই। আজকাল দৈনিক হিসেবে তখন আস্তে আস্তে দ্বিতীয় স্থানে ঢুকে পড়ছে। প্রচারে নয়, প্রভাবে প্রথম। আজকালের এটাই ছিল ব্র্যান্ড সেøাগান। বাংলায় প্রথম ‘পেজ থ্রি’ শুরু করল। সেখানেই  তরুণ মজুমদারের সাক্ষাৎকার যাবে ঠিক হলো। রঞ্জনদা ভার দিলেন আমাকেই। সেই প্রথম আমার টালিগঞ্জের স্টুডিওপাড়ায়

যাওয়া।

নিউ থিয়েটার্সের স্টুডিও; শেষপ্রান্তে  একতলায় তরুণদার অফিসঘর। মূল গেট দিয়ে ঢোকার মুখে জিজ্ঞেস করতেই দেখিয়ে দিলো। স্টুডিও চত্বরে তিনি সকলের তনুদা। আগেভাগে ফোনে সময় নেওয়া ছিল। অফিসঘরের দরজায় দাঁড়াতেই ভেতর থেকে ডাক এলো, ‘ভেতরে আসুন।’ এই হলেন তনুদা। সময়জ্ঞানে প্রখর। পরে দেখেছি শুটিং শিডিউলে সামান্য রদবদল হয় না। সবই পূর্বপরিকল্পিত। শিল্পীদের কল টাইমের এক ঘণ্টা আগে তিনি শুটিং স্পটে উপস্থিত থাকেন। শুটিংয়ে তিনি শুধু পরিচালক নন, একজন অভিভাবক। আর সেজন্যে তিনি নির্মাণ করতে পারেন বাংলা ছবির উত্তম-পরবর্তী নায়ক-নায়িকাদের। যেমন তাপস পাল বা দেবশ্রী রায়। এই রকম আরো আছেন। বুম্বা বা প্রসেনজিতের ক্ষেত্রেও তাঁর অপ্রত্যক্ষ অবদান আছে। তরুণ মজুমদার যখন আমারও তনুদা হয়ে গেছেন। আমিও তখন  মূলস্রোতের বাংলা সিনেমাকে অনেকটা চিনে ফেলেছি। অতিথিবৎসল শব্দটা তনুদা প্রসঙ্গে প্রথমে বলেছি। যেমন আউটডোর শুটিংয়ে। শিমুলতলায় পথভোলার শুটিং। কলকাতা থেকে যাচ্ছি আমি আর টুলুদা। মানে প্রবাদপ্রতিম আলোকচিত্রী টুলু দাস। যাঁকে অনেকে ডাবল স্টার ফটোগ্রাফার বলত। তিনি একাধারে ছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর অফিসিয়াল ফটোগ্রাফার এবং মহানায়ক উত্তমকুমারের ব্যক্তিগত আলোকচিত্রী। উত্তমকুমারের প্রসঙ্গ আসায় মনে পড়ল উত্তমকুমারের অনুপ্রেরণাতেই তরুণ মজুমদারের চলচ্চিত্র পরিচালক হয়ে ওঠা। সে-কথা তো প্রথমদিনের তনুদার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে জেনেছি। সেই নিউ থিয়েটার্সে। তরুণ মজুমদারের অফিসঘরে। সাদা ধুতি-পঞ্জাবি। আমন্ত্রণে আন্তরিকতা। আমার প্রথম প্রশ্নই ছিল, চলচ্চিত্র-পরিচালক হলেন কীভাবে? কোনো ভান নেই। সরাসরি জবাব, ‘উত্তম কুমার ছাড়া আমার  চলচ্চিত্র-পরিচালক হয়ে ওঠা হতো না। টেকনিশিয়ান্সই রয়ে যেতাম।’ সিনেমার প্রচার সচিব হিসেবেই চলচ্চিত্রের সঙ্গে যোগাযোগ তাঁর। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই কানন দেবীর সিনেমা প্রডাকশন্সের সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করতে শুরু করলেন। সেখানেই একদিন তরুণ মজুমদার জানান, ‘রাজলক্ষী শ্রীকান্ত ছবির আউটডোর শুটিং সবে প্যাক হয়েছে। শুটিংয়ের জন্যে অনেকগুলো গরুর গাড়ি এসেছিল, সেগুলো সব ফিরে যাচ্ছে। সূর্যাস্তের মধ্যে গরুর গাড়িগুলোর ফিরে যাওয়া দারুণ মনে হলো। কখন আপনমনে বলে ফেলেছি, এইরকম শট যদি একটা নেওয়া যেত। পেছন থেকে হঠাৎ গলা শোনা গেল, ‘আপনি নিজে ছবি পরিচালনা করছেন না কেন?’ ঘুরে দেখি উত্তমকুমার। তিনি আরো বললেন, ‘আপনি ছবি করলে আমি নায়ক হবো।’ স্বয়ং উত্তমকুমার বলেছেন এ-কথা। ভাবতেই পারি না। দিলীপকে বললাম সে-কথা। দিলীপ বলল, ও মিসেস সেন মানে সুচিত্রা সেনকে রাজি করাতে পারবে। ছবি করব ঠিক করলাম। শচীনকেও নিলাম। তৈরি হলো যাত্রিক গোষ্ঠী। প্রথম ছবি উত্তম-সুচিত্রাকে নিয়ে চাওয়া পাওয়া।’

আউটডোর শুটিং। শিমুলতলা পৌঁছাতে আমার আর টুলুদার বেশ রাত হয়ে গেল। প্রায় ১২টার কাছাকাছি। সবাই শুয়ে পড়েছে। হঠাৎ দেখি দূরে বারান্দায় দুজন মানুষ চেয়ারে বসে আছেন। কাছে যেতেই দুজনেই উঠে দাঁড়ালেন, ‘আরে আসুন, আপনাদের ঘর ঠিক করা আছে। মুখ-হাত-পা ধুয়ে চলে আসুন, একসঙ্গে খাব।’ এই হলেন তনুদা। আউটডোরে সকলকে তিনি আর সন্ধ্যাদি দেখেশুনে খাওয়াবেন, তারপর সবশেষে নিজেরা খাবেন। এই সংস্কৃতি তনুদার শুটিংয়ে সবসময় চালু ছিল। শেষের দিকে সন্ধ্যাদি পাশে ছিলেন না। একাই সামলাতেন তিনি। প্রথম ছবি সুপারহিট। তারপর পরপর ছবি সুপারহিট। প্রথম ছবির নায়ক-নায়িকা উত্তম-সুচিত্রা হলেও স্টার সিস্টেমের বাইরে গিয়ে ছবি করতে শুরু করলেন। প্রায় প্রতিটি ছবিই হিট। অনুপকুমারকে নায়ক করলেন। পলাতক। বাংলা সিনেমায় নিয়ে এলেন তৃতীয় ধারা বা মিডল রোড সিনেমা। রুচিসম্পন্ন জনপ্রিয় সিনেমা। পলাতকের পর থেকেই আর যাত্রিক নয়, একাই ছবি করা শুরু করলেন। জনপ্রিয় ছবির দুনিয়ায় এক অন্য স্রোত। বাংলা সিনেমায় রবীন্দ্রসংগীত প্রয়োগে নিয়ে এলেন প্রায় বিপ্লব। জনপ্রিয় হলেও একই বিষয়ে আটকে থাকেন না তিনি। বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে যান। বালিকা বধূ, দাদার কীর্তি, নিমন্ত্রণ থেকে সংসার সীমান্ত বা অমর গীতি। আরো পরপর অনেক রুচিশীল বিনোদন।

স্টুডিওর একতলার অফিসে প্রথম দেখা এক সম্পূর্ণ বাঙালির সঙ্গে। ৪২ বছর পরও তিনি একইভাবে বহন করছেন সেই বাঙালিয়ানা, সেই বাঙালির হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য। এটা কি শুধু তাঁর জীবনযাপনে? তাঁর সৃষ্টির ক্ষেত্রেও সমান সত্যি। প্রথম ছবি, অবশ্য একা নয়, গোষ্ঠীতে। যাত্রিক। ছবির নাম চাওয়া পাওয়া। হলিউডের রোমান হলিডে অনুপ্রাণিত। তবে বোঝার উপায় নেই। পুরো বাঙালি আবহাওয়ায় এনে ফেললেন তরুণ মজুমদাররা। এই দলবেঁধে ছবি তো পলাতক পর্যন্ত। তারপর থেকে তিনি একক। আর সেখানেও প্রধান সূত্র সেই বাঙালি সংস্কৃতিই। ইচ্ছে করলেই হয়তো করে ফেলতে পারতেন দু-চারটে আর্ট ফিল্ম। সেই সিনেমা-জ্ঞানটা জীবন দিয়েই অর্জন করেছিলেন তিনি। আর সেটা যে তাঁর করায়ত্ত ছিল তা তাঁর নানা ছবির গঠনশৈলী দেখলেই বোঝা যায়। তাঁর প্রতিটি ছবির মধ্যেই আছে সিনেমা সূত্রের নানা সম্ভাবনাময় বিস্তার। কিন্তু আজীবন তিনি বিশ^াস করেছেন চলচ্চিত্রের বিনোদনধর্মিতায়। এই বিশ^াসটা আরেকজনের ছিল। সেই মানুষটার নাম সত্যজিৎ রায়। তিনি বলতেন, ‘চলচ্চিত্রের এন্টারটেইনমেন্ট ভ্যালুকে আমি অস্বীকার করি না।’ তবে এটাও ঠিক, প্রয়োগভাবনায় দুজনে দুই ভিন্ন মেরুতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মনে রাখতে হবে, তরুণ মজুমদার যখন সিনেমা পরিচালনায় আসছেন তখন বাংলা সিনেমায় অমোঘভাবে চলছে উত্তম-সুচিত্রা নামক সোনার জুটির জাদুময় স্বপ্ন-অভিঘাত। আর তারই সমান্তরালে বাংলা সিনেমায় তৈরি হচ্ছে এক আন্তর্জাতিক ভাষা Ñ সত্যজিৎ ঋত্বিক মৃণালের হাত ধরে। এই দুইয়ের মাঝখান দিয়ে তরুণ মজুমদার বেছে নিলেন এক পথ Ñ যাকে বিকল্পভাবে বলা যেতেই পারে বাংলা সিনেমার মিডল রোড পথ। কিন্তু পরবর্তীকালে মুম্বাই সিনেমায় যে মিডল রোড সিনেমার দেখা আমরা পাই তার থেকে ভিন্নতর ছিল এই পথ। সরাসরি আলাদা। আর সেজন্যেই মনে হয় মিডল রোড চলচ্চিত্রের অভিধা পায়নি তনুবাবুরা। ঠিক কথা, দলবদ্ধভাবেই সিনেমা পরিচালনায় আসেন তরুণ মজুমদার। 

কানন দেবীর ‘শ্রীমতী পিকচার্স’-এ সহকারী রূপে কাজ করতেন দিলীপ মুখোপাধ্যায় ও শচীন মুখোপাধ্যায়। তরুণ মজুমদাররা এই সহকারীদের দলে ছিলেন। তরুণ, দিলীপ ও শচীন – তিন বন্ধু মিলে তৈরি করলেন ‘যাত্রিক’ গোষ্ঠী। এর পেছনে অবশ্য উত্তম কুমারের যথেষ্ট অনুপ্রেরণা ছিল। তাঁরা ছবি করলে নিজে অভিনয় করবেন বলে কথা দেন উত্তমকুমার। রাজি হলেন সুচিত্রা সেনও। দরকারে টাকা দেবেন, সেই আশ^াসও দিলেন। তৈরি হলো যাত্রিকের প্রথম ছবি চাওয়া পাওয়া। ছবি সুপার ডুপার হিট। উত্তম-সুচিত্রা জুটির শেষ পরিপূর্ণ রোমান্টিক ছবি চাওয়া পাওয়া। যাত্রিকের দ্বিতীয় ছবি স্মৃতিটুকু থাক-এ দ্বৈত চরিত্রে সুচিত্রা সেন। তৃতীয় ছবি কাচের স্বর্গর সময়ও উত্তমকুমারকে হিরো ভাবা হলো। কিন্তু এক ব্যর্থ নায়কের চরিত্রে উত্তমকুমার কাজ করতে চাননি। নতুন হিরো খোঁজা শুরু হলো। শেষ অবধি তরুণ মজুমদার সহকর্মী পরিচালক দিলীপ মুখোপাধ্যায়কেই কাচের স্বর্গর হিরো করে দিলেন। ছবি হিট। এর আগেই অবশ্য দিলীপ মুখোপাধ্যায় স্মৃতিটুকু থাক সুচিত্রা সেনের বিপরীতে অভিনয় করেন। দিলীপ মুখোপাধ্যায় নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পরই ‘যাত্রিক’ গোষ্ঠীতে ভাঙন আসে। এ-অবস্থাতেই মনোজ বসুর ‘আংটি চাটুজ্জ্যের ভাই’ গল্প নিয়ে পরের ছবির চিত্রনাট্য লিখে ফেললেন তরুণ মজুমদার। নাম দিলেন পলাতক। তখনই ছবির নায়ক হিসেবে ভাবলেন অনুপকুমারকে। কানন দেবী-প্রযোজিত দেবত্র ছবি করার সময়ে থেকেই অনুপকুমারের সঙ্গে আলাপ হয় তরুণ মজুমদারের। কিন্তু গোষ্ঠীর বাকিরা চাইছিলেন, উত্তমকুমারই করুক পলাতকের হিরোর চরিত্র। কিন্তু তরুণ মজুমদার নিজের মতে স্থির রইলেন। অনুপকুমার  হিরো?  কলকাতার  প্রযোজক পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াল। শেষ অবধি মুম্বাইয়ের বিখ্যাত প্রযোজক ভি শান্তারাম পলাতক ছবি করতে এগিয়ে এলেন। তারপর তো ইতিহাস। তারকা প্রথাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তরুণ মজুমদার প্রমাণ করলেন, দর্শকের কাছে গল্পটা যদি ভালো করে বলা যায়, তারকা তেমন কোনো বিষয় নয়। ‘যাত্রিক’-এর নামে পলাতক তৈরি হলেও ছবিটি একাই পরিচালনা করেন তরুণ মজুমদার। 

পলাতকের পর তরুণ মজুমদার ‘যাত্রিক’ থেকে বেরিয়ে এসে ‘আলোর পিপাসা’ দিয়ে স্বাধীনভাবে একা ছবি পরিচালনা শুরু করেন। ১৯৬৫ সালেই দুটো ছবি বসন্ত চৌধুরী, সন্ধ্যা রায়, অনুপকুমারকে নিয়ে আলোর পিপাসা এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও সন্ধ্যা রায়কে নিয়ে একটুকু বাসা। বাংলা ছবিতে এক অন্য হাওয়া নিয়ে এলেন তিনি। সিনেমা বিনোদনে অন্য সংজ্ঞা আনলেন। একদিকে সত্যজিৎ ঋত্বিক মৃণাল, অন্যদিকে উত্তম-সুচিত্রার দেখানো পথে রোমান্টিক ছবি Ñ এই দুইয়ের মাঝে এক তৃতীয় পথ দেখালেন তিনি বাংলা ছবিকে, যা সুস্থ রুচিতে ছবি করেও বাণ্যিজিক হিট। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এবং রবীন্দ্রসংগীতকে ব্যবহার করে বাংলা সিনেমার গানের বাণিজ্যিক আবহাওয়াকেই বদলে দিলেন তরুণ মজুমদার। সেই সময় একদিকে উত্তম-সুচিত্রার তুমুল  জনপ্রিয়তা, সেই অর্থে তাদের সোনার সময় আর অন্যদিকে সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণালের ছবির অন্যধারার গভীর চিন্তন। তারই মধ্যে তরুণ মজুমদার এককভাবে জনপ্রিয়তাসূত্রে স্বভাবসিদ্ধভাবে স্বতন্ত্র। গভীর বিষয়কেও  সরলভাবে পরিবেশন করতে পারেন সিনেমায় – সারল্যই তাঁর জনপ্রিয়তার প্রাণভোমরা এবং বৈচিত্র্য তাঁর বিষয় নির্বাচনে। ঊনষাট বছর ধরে তরুণ মজুমদারের বিভিন্ন ছবিতে উঠে এসেছে পারিবারিক জীবনের নানা উপাদান। বাল্যপ্রেম তাঁর ছবির এক বড় তুরুপের তাস। বালিকা বধূ, শ্রীমান পৃথ্বীরাজ, দাদার কীর্তি যার হাতের কাছের উদাহরণ। একক নয়, সমগ্র পরিবার হয়ে ওঠে তাঁর ছবির বিষয়। প্রান্তিক মানুষেরাও ফিরে ফিরে আসে তাঁর ছবিতে, সম্পর্কের নানা টানাপড়েনে।

তরুণ মজুমদারের উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে গণদেবতা, কাঁচের স্বর্গ, যদি জানতেম, পলাতক, দাদার কীর্তি, শহর থেকে দূরে, মেঘমুক্তি, খেলার পুতুল, অমর গীতি, ভালোবাসা ভালোবাসা, পথভোলা, আগমন, আলোর পিপাসা, একটুকু বাসা, বালিকা বধূ, নিমন্ত্রণ, কুহেলি, শ্রীমান পৃথ্বীরাজ, ঠগিনি, ফুলেশ্বরী, পরশমণি, আপন আমার আপন, সজনী গো সজনী, কথা ছিল, আলো, ভালোবাসার অনেক নাম, চাঁদের বাড়ি, ভালোবাসার বাড়ি। তরুণ মজুমদার তাঁর ২০টি চলচ্চিত্রে অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়কে এবং আটটি চলচ্চিত্রে তাপস পালকে নিয়েছিলেন। তরুণ মজুমদারের ছবিগুলির দিকে তাকালেই বোঝা যায়, কীভাবে নিজেকে পালটেছেন তিনি। কিন্তু কোনো কারণেই বিকৃত রুচির সঙ্গে সমঝোতা করেননি। বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে গেছেন, কিন্তু এন্টারটেইনমেন্টকে অস্বীকার করেননি কখনোই। প্রায় সাত দশক ধরে ছবি করেছেন তিনি। বাংলা ছবিতে রেখে গেছেন এক স্বতন্ত্র সুস্থ বিনোদনের ধারা।